17/08/2025
ইরানে গোপন ইভানজেলিকাল সেক্ট ও কালো জাদুর নেটওয়ার্ক: রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় (VAJA) এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে এমন এক নেটওয়ার্ক চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করেছে, যারা নিজেদের Evangelical sect (ইভানজেলিকাল সেক্ট) নামে পরিচয় দিচ্ছিল। এখানে ইভানজেলিকাল খ্রিস্টান বলতে বোঝানো হয় এমন এক গোষ্ঠীকে, যারা বাইবেলের কিছু ভবিষ্যদ্বাণীকে চরমপন্থী ব্যাখ্যায় গ্রহণ করে এবং রাজনৈতিক-সামরিক বাস্তবতায় তার বাস্তবায়ন চায়। এরা বিশ্বাস করে, একটি মহাযুদ্ধ—যা “Battle of Armageddon” নামে পরিচিত—তা-ই বিশ্বপরিসরের চূড়ান্ত লড়াই, যেখানে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চায়।
ইরানি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই গোষ্ঠীর সদস্যরা শুধু ধর্মীয় চরমপন্থায় সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তারা তেহরানে ব্যাপক সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের ইভানজেলিকাল নেটওয়ার্কগুলো প্রায়শই নিজেদেরকে Zionist Jews (সায়োনিস্ট ইহুদি)-দের অনুগত হিসেবে দেখে এবং বাস্তবে তাদের কৌশল ও স্বার্থ পূরণেই নিয়োজিত থাকে।
পূর্বের অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:
২০১৮ সালে ইরানে ১১৪ জন ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক সেক্ট (Sect – ছোট ধর্মীয় গোষ্ঠী বা মতবাদী সম্প্রদায়) এবং কাল্ট (Cult – গোপন আচার-অনুষ্ঠাননির্ভর গোষ্ঠী) ধ্বংস করা হয়েছে, যারা বিদেশি অর্থায়ন ও নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছিল।
এছাড়া, ইরান দাবি করছে যে, ইহুদি মরমীবাদী চর্চা—Kabbalah (কাব্বালা – ইহুদি রহস্যবাদ, যেখানে সংখ্যাতত্ত্ব ও প্রতীকী আচারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়)—এবং অন্যান্য কালো জাদুর অনুশীলনকারীরা নির্জন এলাকায় সক্রিয় ছিল। সাম্প্রতিক ১২ দিনের আক্রমণ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন শহরে জিন ডাকার তাবিজ, অশুভ প্রতীক, রক্তচিহ্নিত কাগজপত্র ইত্যাদি উদ্ধার করে।
নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও মানসিক প্রভাব:
এই ধরনের সেক্ট ও কাল্টগুলো মূলত মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ কৌশল ব্যবহার করে অনুসারী সংগ্রহ করে। ভীতিনির্ভর প্রচার, আচারমূলক গান, সম্মোহনী সমাবেশ—এসবই তাদের নিয়মিত অস্ত্র। অনেক ক্ষেত্রে প্রতীকী বস্তু—যেমন উল্টানো ক্রস, রক্তচিহ্নিত লিখন, অভিশপ্ত তাবিজ—ব্যবহার করে তারা দুর্বল মানসিকতার মানুষকে বশে আনে। এমনকি পশু বলি দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করার নজিরও পাওয়া গেছে।
ডিজিটাল পরিসরে ছায়াযুদ্ধ:
আধুনিক যুগে এই নেটওয়ার্কগুলো শুধু সরাসরি সমাবেশে নয়, বরং এনক্রিপ্টেড অনলাইন ফোরাম-এর মাধ্যমেও কার্যক্রম চালায়। সেখানে তারা কালো জাদুর কৌশল শেখায়, গোপন সংকেতের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করে এবং সন্ত্রাসী পরিকল্পনা সমন্বয় করে। কোডেড ভাষা, প্রতীকী নকশা (sigils), আর সংখ্যাগত সিকোয়েন্সের মাধ্যমে নজরদারি এড়ানোই ছিল তাদের লক্ষ্য।
-----
ইরানে সম্প্রতি উদঘাটিত এই ঘটনা শুধু একটি দেশের নিরাপত্তা সমস্যাই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজের জন্যও একটি সতর্ক সংকেত। ধর্মীয় চরমপন্থা, কালো জাদু, এবং ডিজিটাল পরিসরে সংগঠিত গোপন নেটওয়ার্ক—এই তিনের সমন্বয় বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থার সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শুধু গ্রেপ্তারেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি, ভ্রান্ত মতাদর্শের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। যেখানে কিছু মুসলিম দেশে প্রগতিশীলতার নামে ধর্মকেই ছুড়ে ফেলা হচ্ছে সেখানে শত্রুরা লিটারেরি কালো যাদুতে বিশ্বাস করে এগিয়ে যাচ্ছে। আসলেই এই যুদ্ধটা বিভিন্ন লেয়ারে হচ্ছে একদম আধ্যাত্মিকতা থেকে শুরু করে যুদ্ধের ময়দান পর্যন্ত এই যুদ্ধ বিস্তৃত। আমাদের সবাইকেই এই ব্যপারগুলোতে সাবধান থাকতে হবে কারণ এরা সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর...