07/07/2025
এগারো মহরম - যে দিন আমরা ভুলে যাই
দশ মহরম যত সামনে আসছে, কারবালার ময়দানের স্মৃতি সারা বিশ্বে সতেজ হয়ে উঠছে। ইমাম হুসাইনের শাহাদাত, সাহাবিদের ত্যাগ, আলী আসগর এর লাশ, আব্বাস এর বাহু, আকবরের যুবক, সবকিছুই যেন চোখের সামনে নড়ছে। রাস্তায় রাস্তায় শোক, শোক, সমাবেশ ও মিছিল। মহরমের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
অথচ দশ মহরমের সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথে মনে হয় সব দুঃখ,সব স্মৃতি,সব কিছু বাক্সে বন্দী। এগারো মহরমের দিন এলো... কিন্তু আমরা ভুলে যাই।
আমরা ভুলে যাই যে আসল সমস্যা এখন শুরু হয়।
দশ মহরম এ আহল বাইত তাদের প্রিয়জনদের লাশ পর্যন্ত কবর দেয়নি যে ইয়াজিদি সেনাবাহিনী তাদের তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে। আগুনের আলিঙ্গন, শিশুদের আর্তনাদ, নারীদের আর্তনাদ, আর অত্যাচারী বর্বরতা।
ইমাম সাজ্জাদ অসুস্থতায় শিকলে বন্ধি ছিলেন, যার হাতে হাতকড়া, পায়ে বেড়ি, আর হৃদয়ে ছিল পাহাড় সমান শোক।
আলী কন্যা জয়নব, যিনি গতকাল পর্যন্ত মনের শান্তি নিয়ে তার ভাইয়ের তাঁবুতে বসে ছিলেন, তিনি আজ কাফেলার প্রধান ছিলেন।
কার চরিত্র কারবালার পর নতুন কারবালা হয়ে গেল। যাদের পর্দা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যারা বেহারামের আগে আনা হয়েছে, আর যারা ইয়াজিদ বলেছে। আদালতে বয়ান দিলেন অত্যাচারের ভিত্তি কাঁপিয়ে দিল।
এগারো মহরম সেই দিন যেদিন আহলে বাইতদের বন্দী করা হয়েছিল এই অবস্থায় যে তাদের গায়ে ক্ষত, অন্তরে দাগ, চোখে শহীদ ছবি।
এই কাফেলা কারবালা থেকে কোফা এবং তারপর সিরিয়া থেকে রওয়ানা হয়েছে। পথিমধ্যে গালাগালি, পাথর, আর দর্শক। রাস্তায় তাকিয়ে থাকা, এবং অপমান। কিন্তু আমরা কজন এই মুহূর্ত গুলো মনে রাখি?
ভাবতে হবে আমাদের কষ্ট কি দশ মহরমের মধ্যে সীমাবদ্ধ? আমরা কি মহরমের একাদশ ভুলে গেছি? কারবালা কি শুধু একদিনের ঘটনা নাকি ধারাবাহিক বার্তা? কেননা আমরা যদি এগারো মহরম ভুলে যাই, তাহলে বুঝে নিও আমরা কারবালার মূল বার্তা হারিয়ে ফেলেছি।
কারবালা আমাদের শুধু কাঁদতে বলে না, বরং বুঝতে, শিখতে, এবং দাঁড়াতে বলে। এগারো মহরম মনে করিয়ে দেয় জুলুমের পর ধৈর্য, আর ধৈর্য ধরে থাকা অপরিহার্য। এই দিনটি জয়নব এর সাহস, ইমাম সাজ্জাদ এর ধৈর্য এবং আহল বায়তের মর্যাদা। আজকের দিনটা।
আসুন, এ বছর দশ মহরম পর্যন্ত শুধু থেমে না থাকি,একাদশ মহরমের দুর্দশার কথা স্মরণ করি।
আপনার সন্তানদের বলুন যে কারবালার পরে কারবালা ছিল। এবং কুদসিয়ার মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই যারা শুধুমাত্র যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করেনি, কিন্তু কারাগারেও ছিল। আল্লাহর দ্বীনের জন্য কষ্ট সহ্য করলাম।
মনে রেখো, কারবালা শেষ হয়নি... সে মহরমের প্রতি একাদশেই আবার শুরু হয়।