11/09/2025
ট্রেনিং সেন্টারে আমার রুম মেট ছিল ১১জন এর মধ্যে সৈকত ছিল সবার থেকে আলাদা, আমরা আড্ডা দিতাম রাতে গান বাজনা করতাম আর সৈকত একা একা বাহিরে গিয়ে পড়া লেখা করতো। সবার সাথে কম কথা বলতো এটা নিয়ে আমরা সবাই ওর সাথে হিংসা করতাম। ওর জিনিস পত্র ফেলে দিতাম বাহিরে এবং বলতাম যে সৈকত একটা মানুষিক প্রতিবন্ধী ওর চাকরি হলো কিভাবে ইত্যাদি।
সামনে ঈদ ছুটিতে বাসায় যাবো কত আনন্দ করতাম ক্যান্টিন থেকে সেনাবাহিনীর গেঞ্জি ঘড়ি এগুলো কিনতাম বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের গিফট করবো কিন্তু সৈকত ক্যান্টিনে যেতো না খুব কিপ্টা ছিল।
ঈদের ছুটিতে যাওয়া আগের দিন যখন স্টাফ আসলো রুমে বাসের ছিট প্লান করার জন্য কার বাসা কোন জেলায় এটা ঠিক করে টিকিট দিচ্ছিলো।
আমরা ঠিকানা দিয়ে টিকিট এবং লিভ কার্ড হাতে পেলাম,
তার পর যখন সৈকতের ঠিকানা জিগ্গেস করলো তখন ও চুপ করে রইলো কোন কিছু বলে না এটা দেখে স্টাফ রেগে গিয়ে ওরে ধমকের সুরে বললো কিরে রিক্রুটের বাচ্চা কথা কানে যায় না.. বাড়ির ঠিকানা বল তার পর ও বললো স্টাফজ্বি আমি বাসায় যাবো না... এটা শুনে তো আমরা সবাই অবাক! স্টাফ বললো কি হয়েছে কেন বাসায় যাবে না.? সৈকত বললো স্টাফজ্বি আমি এতিম, বাবা মা মারা যাওয়ার পর নানির কাছে বড় হয়েছি
তার পর স্টাফ বললো তাহলে নানীর কাছে যাও, সৈকত বলে নানী নেই ট্রেনিং সেন্টারে আসার ৭ দিন আগে উনি মারা গিয়েছেন এখন আমার কেউ নেই..!
এটা শোনার পর সবাই চুপ হয়ে গেল, আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম তুই আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। বাকি ৯ জন একই কথা বললো যে তাদের বাড়িতে যেতে কেউ ছেড়ে দিতে রাজি না। সবাই ওরে নিয়ে টানাটানি করছে দেখে, স্টাফ খুব খুশি হলো এবং বললো দাড়া আমি লটারি করে দিচ্ছি যার নাম উঠবে ও তার বাসায় যাবে.. লটারিতে আমি জিতে গেলাম ওকে নিয়ে আমার বাসায় গেলাম এবং ২ ঈদেই আমার বাসায় যায় আমার মা ওকে নিজের ছেলের মতো যত্ন করে বরং আমার থেকে বেশিই আদর করে ও আসলে।
গত ৩ দিন ওর কোন খোঁজ নেই প্রতিদিন আমার মা কে ও কল দেয় হঠাৎ করে ৩ দিন কল না দেওয়ার কারণে আমি ওর ইউনিটে যোগাযোগ করলাম অতঃপর সৈকত আর নেই আইপিএফটি দিতে গিয়ে মারা গেছে এই খবর এখনো পর্যন্ত আমি আমার মা কে জানাতে পারিনি। শুধু মনে মনে বললাম আল্লাহ ছেলেটার জীবনে সুখ পাইলো না আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন।আমীন।
FB হতে সংগৃহিত।