14/10/2025
রিপন মিয়া এখন কয় টাকা কামায়? আগে কয় টাকা কামাইতো? কেনো তার পেছনে টিভি চ্যানেল এভাবে লাগলো?
রিপন মিয়ার মতো সহজ,সরল ও ভালো মনের মানুষ আমি দেখি নাই।
রিপন মিয়া সবার সামনে আসতে চায় না৷ কারণ, সে জীবনে কমিউনিকেশন কারো সাথে করে নাই৷ সেটার জন্য তার মন খারাপ হয়। রিপনকে এসব বিষয়ে গাইড করে বিনয়ী আরেকটা ছেলে৷ ওর সাথেও আমার সম্পর্ক নাই ব্যক্তিগতভাবে। কিন্তু, কাজের জন্য চিনি। আমি আরো অনেক ইনফ্লুয়েন্সারদের চিনি ও জানি তাদের ব্যবহার, তাদের ভেতরের অবস্থা জানি৷ সব হিসেব করে, রিপন মিয়া সলিড মানুষ।
এইবার বলি,
এতো কথা কেনো বলতেছি। যেখানে আমি এতো বছরেও নিজের এজেন্সির কথা সেভাবে বলি নাই সেখানে রিপন মিয়ার জন্য স্বার্থ কিসের।
স্বার্থ একটা আছে। শেষে বুঝবেন..
রিপন মিয়ার বাসায় পারিবারিক সমস্যা আছে৷ আমার মনে হয়, দুনিয়ার সবার পারিবারিক, ব্যক্তিগত সমস্যা আছে। সেটা কেবল পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু, রিপন মিয়ার টা কেনো ইস্যু বানানো হলো?
নিউজ চ্যানেল ভিউ ব্যবসা ভালো করে জানে৷ তারা জানে কার বাসায় কে কি খাচ্ছে তা নিয়ে করলে ভিউজ হবে।
নিউজে যেভাবে রসকষ মিশিয়ে বলা হলো, সে বিদেশ যায়, সে ফাইভ স্টার হোটেলে থাকে, ফাইভ স্টার হোটেলে খায়, ভালো রেস্টুরেন্টে খায় আর বাবা মাকে দেখে না।
এইবার বলি,
বাংলাদেশের যত ইনফ্লুয়েন্সারদের লাইফ এতো জাকজমকভাবে দ্যাখেন তা কি আসলেই সত্যি?
আসলে হইলো, সত্যি না৷
এই যে রিপন মিয়া এতো জায়গায় যায় সেখান থেকে এক টাকাও সে পায় না। তাকে দাওয়াত করা হয় বা গেলে তার বিনিময়ে একটা স্টাটাস বা স্টোরি দিতে হয়৷ সেরকমই বাংলাদেশের বেশিরভাগ ইনফ্লুয়েন্সার।
পাশাপাশি এইবার আসি সে একটা টিনসেট বিল্ডিং দিলো ক্যামনে?
টিকটকার থেকে শুরু করে অন্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ইনকাম করে ঠিক সেভাবে হারিয়ে যায়। রিপন মিয়ার মনিটাইজেশন ছিলো কয়েক মাস। সেখান থেকে কিছু মাস কিছু এমাউন্ট আসে সেটা দিয়ে একটা থাকার মতো জায়গা যেনো আজীবনের জন্য হয় সেটা তার ম্যানেজার বুদ্ধি দেয় এবং বাড়ির কাজ ধরে।
কিন্তু সেই টিনসেট বিল্ডিং কি সোশ্যাল মিডিয়ার টাকায় হয়ে গেছে?
উত্তর, না।
ওইখানের সিমেন্ট, ইট, রড সব ব্রান্ড থেকে দেওয়া হয়েছে। এখানেও টাকা তাকে দেওয়া হয় নাই। বিনিময়ে সে ব্রান্ডের জন্য ভিডিও বানিয়েছে।
এই যে নিউজে দেখালো বিদেশ গেছে,
সেটা কিন্তু তাকে স্পন্সর করা হয়েছে। এই যে স্পন্সর আসে সেটাও সে বুঝে না৷ জানেও না৷ সে সহজ মনে গেছে।এসব কিছু ম্যানেজার সামলায়।
আরো বলি,
মাঝেমধ্যে রিপন মিয়া ঢাকা আসলে কোথায় থাকবে সেজন্য কমিউনিকেশন করে আমার সাথে তার ম্যানেজার। থাকার জায়গা নাই সেজন্য।
যা দ্যাখেন তা যেমন তা না।
ভিডিওতে রাজকীয় জীবনযাপন দেখলেই টাকা পয়সার মালিক অনেক তেমন না।
আর,
এইবার আসি চ্যানেল কেনো এই কাজ করলো।
রিপন মিয়ার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য কি পরিমাণ যে সাংবাদিকদের চাপ যায় তা সম্পর্কে আমি অবগত। কিন্তু, রিপন মিয়া যেহেতু সেভাবে কথা গুছিয়ে বলতে পারে না তাই তাকে তার ম্যানেজার না করে দিছে। সেজন্য পুরো একটা মহল ক্ষেপে যায়।
এইবার আসি আমার স্বার্থে,
২০২৫ বইমেলায় আমার নতুন বই বের হয়। সেই বইয়ের প্রচারণা নিয়ে ক্যাম্পেইন প্ল্যান করি। এটা মোটামুটি অনেক ইনফ্লুয়েন্সার জানে৷
সেখানে সবাইকে টাকা দিতে হতো অবশ্যই। কেউ টাকা ছাড়া আসতো না৷ কিন্তু, রিপন মিয়ার সাথে আমার কোনোদিন সাক্ষাৎ হয় নাই এবং কথাও হয় নাই তখন।
আমি যখন রিপন মিয়াকে চাইলাম যে, সে বইয়ের প্রচারণা করবে তখন ম্যানেজার রে বললাম, কত দিতে হবে ভাইয়া?
রিপন মিয়া পাশ থেকে বললো,
বই পড়তে পারি না আমার যে কত খারাপ লাগে। আমি বইয়ের লাইগা কিছু করমু ওইডা তো আমার ক্যামন ভালো লাগতাছে৷ আমি ভাই নিজের টাকা দিয়া আমু। ঢাকা আইসা মানুষ রে কমু, আমি তো পড়াশোনা করতে পারি নাই, আপনারা পড়াশোনা ছাইড়েন না।
আবারো কোড করি তার কথা,
"আমি তো পড়াশোনা করতে পারি নাই, আপনারা পড়াশোনা ছাইড়েন না।"
এই যে এতো এতো শিক্ষিত সবাইকে দাওয়াত করেছিলাম, কেউ একজন এই কথা বলার সাহস অবধি করে নাই৷ আমি চাই না সেটা কেউ করুক। প্রফেশনাল থাকুক।
কিন্তু,
ভেতরে তো কিছু থাকতে হয়। আর ভেতরে যে আছে কিছু ওইটা রিপন মিয়া..
আমি তারে এভাবেই চিনি....
আর গ্রামের কন্ডিশনে পারিবারিক দরিদ্র ফ্যামিলির গল্প আমরা সবাই জানি। গ্রামের সবাই ভাবে দুনিয়া ঘুইড়া বেড়ায় আর টাকা দেয় না ক্যান পরিবাররে। রিপন মিয়ার মা,বাবা যেভাবে ভয় পেয়েছে ক্যামেরা দেখে আর আশপাশের মানুষ যেভাবে তাদের ভুলভাল বুঝিয়েছে। কিন্তু, দুনিয়া ঘুইরা রিপন মিয়া আসলে কয় টাকা পায়?
বাড়িটা হইলো ক্যামনে?
এগুলো তো জানার কথা৷
আর নিউজ চ্যানেল যেভাবে যা করেছে দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার নাই। খুব খারাপ করেছে। খুবই৷
সমালোচনা করেন। কিন্তু, মানুষ রে না জাইনা মানুষ নিয়া কটু কথা বইলেন না।
আর রিপন মিয়ার বউ আছে এইটা সে অনেক ইন্টারভিউ তে বলেছে অনেক সুন্দর করে।
আর ভিডিও দিলাম এইটা হইলো,
রিপন মিয়া, মা-বাপ সবাই কিভাবে কান্না করছে। রিপন মিয়ার মা বুঝতেই পারে নাই একটা মানুষ ক্যামেরা নিয়ে এসে এইভাবে পুরো দেশের সামনে তারে ছেলেরে শেষ কইরা দিবে।
ভিডিওয়ে মা-ছেলে কি বলছে ওইটা শুনেন।
আমার শুধু খারাপ লাগছে। মানুষ কতটা জঘন্য হতে পারে। শুধু ভিউয়ের জন্য পারিবারিক কাহিনি এমনভাবে তুলে ধরে।
সবাই ভালো থাকুন। নিজের পরিবারের যত্ন নিন ধন্যবাদ.!!
কাইকর/কাইকর