19/05/2025
একটি কঠোর সত্য শুনবেন?
প্রতিটি ফ্রেন্ড সার্কেলে একটা চরিত্র থাকে, যে খুব শান্ত, খুব সাদাসিধে, নিজের মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না।
সে থাকে সব সময়, কিন্তু তার উপস্থিতি যেন কারও চোখে পড়ে না ঠিকমতো।
কলেজে থাকা সেই ছেলেটাকে মনে আছে?
যে সবসময় হাসিমুখে থাকত, সবাইকে সাহায্য করত, নিজের কষ্ট আড়াল রেখে অন্যের দুঃখে কান দিত?
একদিন সবাই মিলে ট্যুরের প্ল্যান করল — কেউ তাকে জানাল না।
সেই রাত্তিরে ফেসবুকে ছবিগুলো দেখে তার বুকের মধ্যে কোথাও যেন হালকা একটা চাপ লেগেছিল।
তাও কিছু বলেনি।
শুধু চুপচাপ একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল —
"তোরা ঘুরতে গেছিস, আমায় ছাড়াই?"
উত্তরে এসেছিল একটা হাসির ইমোজি আর এক লাইন —
"তুই তো এমনিতেই আগ্রহী না, তাই ভাবলাম বললাম না।"
সেই মেয়েটা — স্কুলে সবার জন্মদিন মনে রাখত, একেকজনকে চুপচাপ ছোট ছোট চিঠি দিত,
আজ সবার জন্মদিনে দল বেঁধে প্ল্যান হয়, কেক কাটা হয়, কিন্তু ওর জন্মদিনটা যেন ক্যালেন্ডারেই থাকে না।
সেই বছর নিজের জন্মদিনে অফিস শেষে বাড়ি ফিরে কেক কেটেছিল একাই।
মা পাশে ছিল — তবু কোথাও যেন একরাশ নিঃসঙ্গতা জমে ছিল চোখের কোনে।
এমন আরও কত নামহীন চরিত্র!
পাড়ার সেই ছেলেটা, যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শুধু “SEEN” করে থাকে —
মেসেজ লেখে না, তবু মনে মনে ভাবে, “আমায় যদি একবার আলাদা করে কেউ ডাকত…”
খেলার মাঠেও থাকে এমন এক চরিত্র।
যখন পাড়ার ছেলেরা ক্রিকেট খেলে, তখন তাকে ১২তম প্লেয়ার বানানো হয়!
মাঠে থাকার পরেও সে যেন মাঠের মধ্যে নেই।
সেই বন্ধুকে ব্যাট, বল, কিছুই ধরতে দেওয়া হয় না।
মাঠে তার উপস্থিতি কেবল “এক্সট্রা” হিসেবে।
তাকে খেলার জন্য ডাকা হয় না, শুধু জলের বোতল, বল খুঁজে আনতে।
সে মনেপ্রাণে চাইতো, “আজ না হয় থাক, কাল নিশ্চই ডাকবে…”
কিন্তু প্রতিদিন সে শুধু বাইরে থেকে দেখে,
যেন মাঠ তার জন্য নয়, শুধুই তার আশেপাশে থাকা।
সে শুধু মাঠে থেকে যায়, নিঃশব্দে, অদৃশ্য হয়ে।
এই বন্ধুরা কিছু চায় না।
তারা শুধু চায়, অন্তত একটা জায়গা —
যেখানে তাদেরও “বন্ধু” হিসেবে ভাবা হবে।
তারা জানে না কীভাবে নিজেদের জাহির করতে হয়,
তারা চুপ করে ভালোবাসে — নিঃশব্দে পাশে থাকে —
আর তার ফলেই অনেক সময় ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়।
বন্ধুত্বটা কবে যেন একটা বৃত্ত হয়ে যায় —
একটা গোল কাঁচের ঘড়ি, যার কাঁটাগুলো ঘুরতেই থাকে —
কিন্তু কিছু মুহূর্ত ঠিক সময়ের বাইরে থেকে যায়।
তুমি যদি মাঝখানে না থাকো, তবে তুমি শুধুই একটা 'ঘড়ির বাইরের ছায়া' —
নামহীন, দাগহীন, অনুভবহীন।
আর এই ছায়ারা ধীরে ধীরে মাটি হয়ে যায় —
যারা পায়ের নিচে থাকে, কিন্তু কেউ মাথা নিচু করে দেখে না।
তারা কথা বলে না, চিৎকারও না —
শুধু নিঃশব্দে পাথরের মতো জমে যায় নিজের মধ্যে।
তাদের চোখে থাকে না জল, শুধু ধুলোর মতো জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস —
যা বাতাসে উড়ে যায়, কোনো এক ব্যস্ত বিকেলের ভিড়ে হারিয়ে যায়।
এই নামহীন চরিত্ররা ঠিক যেন আকাশের সেই তারা ,
যারা আলো দেয়, কিন্তু শহরের আলোয় হারিয়ে যায়,
যেন বলে ওঠে ,
“আমি আছি, শুধু কেউ দেখতে পায় না!"