20/12/2025
পট্ঠান পাঠে ২৪ প্রকার পচ্চযো বা প্রত্যয় কি?
১। হেতু প্রত্যয়ঃ
লোভ-দ্বেষ-মোহ আর অলোভ- অদ্বেষ,
অমোহ সহিত হয় হেতুর বিশেষ।
শিকর বৃক্ষকে যথা প্রতিষ্ঠে ভূমিতে,
চিত্তকেও আলম্বনে রাখে দৃঢ় মতে।
সেকারণে এই ছয় হেতু ধর্মী হয়,
প্রত্যয় এ সহযোগে উপকারী কয়।
হেতু ও প্রত্যয় বিনা নাহি কোন কাজ,
কার্য্য ও কারণে বদ্ধ ত্রি-লোক সমাজ।
২। আলম্বন প্রত্যয়ঃ
রুপ-শব্দ-গন্ধ-রস-স্প্রষ্টব্য ও ধর্ম,
ষড়বিধ আলম্বন জান তার মর্ম।
এই সব আলম্বনে চিত্ত চৈতসিক,
সদা যেন ঝুলি থাকে এই কথা ঠিক।
আলম্বন প্রত্যয়েই সদা জাত হয়,
চিত্ত-চৈতসিক এই জ্ঞানীগণ কয়।
৩। অধিপতি প্রত্যয়ঃ
আলম্বন সহজাত দুই অধিপতি,
ষড়বিধ আলম্বন প্রথমাধিপতি।
ছন্দ, বীর্য্য, চিত্ত আর মীমাংসাধিপতি,
দ্বিতীয় অধিপতি গণ্য রাখ এই স্মৃতি।
আধিপত্য করে বলে এই নামে তারে,
সকলে ভাষন করে ক্ষমতাটি হেরে।
৪। অনন্তর প্রত্যয়ঃ
নিরুদ্ধে একটি চিত্ত অন্য চিত্ত জাত,
অনন্তর চিত্ত নামে পূর্ব্ব চিত্ত খ্যাত।
ভবাঙ্গ চিত্তের সহ আবর্ত্তন চিত্ত,
অনন্তর ভাবে যথা হয় সম্বন্ধিত।
একটি চিত্তের সহ অন্যটি চিত্তের,
সম্বন্ধ করে বলে জান এই ফের।
৫। সমনন্তর প্রত্যয়ঃ
অনন্তর আসন্নেই এ সমনন্তর,
উভয়ে প্রভেদ কিন্তু হয়না বিস্তর।
কাছাকাছি দুই হয় উপসর্গ ভেদ,
দেশনা বিলাসে বলে নাহিক প্রভেদ।
৬। সহজাত প্রত্যয়ঃ
আলোক উত্তাপ যথা সূর্য্য সহজাত,
ইহার সহিত তথা অন্য প্রত্যয় জাত।
বিজ্ঞান সঞ্জাত হয় চিত্তে সেইক্ষণে,
বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার জাত সেই ক্ষণে।
চারটি অপরুপ স্কন্ধ যথা সহজাত,
জন্ম ক্ষণে নাম-রূপ তথা সহজাত।
৭। অন্যান্য প্রত্যয়ঃ
পরস্পরে অবলম্বি ত্রি-দন্ড যেমন,
সদা থাকে স্থিরভাবে একটি পতন।
যদি হয় কোনকালে, অপর দুইটি,
নিশ্চয় পড়িয়া থাকে এই কথা খাঁটি।
তেমন অরূপ- স্কন্ধ, রূপ-স্কন্ধ মাঝে,
চারটি অরূপ ও চারিভূত এ যে।
প্রতিসন্ধি ক্ষণে নাম রূপ পরস্পরে,
অপতন কারনেই সহায়তা করে।
একটি অভাবে কিন্তু অন্যটি কখন,
নাহি হয় জাত তাই অন্যােন্য কথন।
৮। নিশ্রয় প্রত্যয়ঃ
নিশ্রয় আশ্রয় হয় একার্থ বাচক,
ভূমি যথা উদ্ভিদের হয় সহায়ক।
নৌকার আশ্রয়ে যথা নদী তীর্ণ হয়,
তথা নৌকা আরোহীর একান্ত নিশ্রয়।
চক্ষু হয় পুর্ব জাত, পরে চক্ষু বিজ্ঞান,
তাই চক্ষু পূর্বজাত, নিশ্চয় বাখান।
সহজাত চিত্ত আরও চৈতসিকগুলি,
একে অন্যের নিশ্রয় জানহ সকলি।
৯। উপনিশ্রয়ঃ
বলবান নিশ্রয়ই হয় উপনিশ্রয়,
প্রধান উপায় ইহা সর্বদাই কয়।
'উপ' এই উপসর্গ প্রধান কারণে,
হয়েছে যোজিত ইহা, জান একমনে।
দান-শীল-ভাবনাদি করি সম্পাদন,
শ্রদ্ধাভরে স্মরে থাকে প্রসাদ কারণ।
প্রত্যবেক্ষণ চিত্তের গৌরবালম্বন,
নামেই কথিত ইহা নিশ্রয় ভাষন।
কুশল বা অকুশল হেতু বহুবিধ,
উপনিশ্রয় কারণে হয়েছে বিবিধ।
১০। পূর্বজাত প্রত্যয়ঃ
পূর্বক্ষণে রূপ- ধর্ম হইয়া উৎপন্ন,
বর্তমান ক্ষণে ইহা বহুধা বিভিন্ন।
সহায়তা করে সদা, এসব কারণে,
পূর্ব্ব জাত প্রত্যয় এ জান একমনে।
১১। পশ্চাজাত প্রত্যয়ঃ
পশ্চাৎজাত চিত্ত আরও চৈতসিক হয়,
পূর্বজাত রূপ-কায় হতে সমুদয়।
উপ্তবীজে অঙ্কুরিত করিতে বর্ধিত,
পরবর্তী বারি যথা সহায় নিয়ত।
প্রতি সন্ধি চিত্ত সহজাত এ শরীরে,
পরবর্তী চিত্ত আর চৈতসিক করে।
বর্ধন -পোষন তথা চ্যুতি চিত্ত কাল,
সর্বদা সাহায্য করে পিছু নিত্য কাল।
১২। আসেবন প্রত্যয়ঃ
পুনঃপুনঃ সেবা হেতু আসবেন বলে,
নিয়ত পতনে যথা, সদ্য ফল ফলে।
বীর্য-সহকারে কাজ করিতে নিয়ত,
সুফল ফলিবে ধ্রুব, একথা নিশ্চিত।
পুনঃপুনঃ সুচরিত করিলে সাধন,
বুদ্ধত্ব লভিতে পারে, শ্রেষ্ঠ আসেবন।
১৩। কর্ম প্রত্যয়ঃ
চেতনা বলেতে হয় কর্মের প্রত্যয়,
সহজাত-নানাক্ষণিক দুই পরিচয়।
ঊননব্বই চিত্তের সমস্ত চেতনা,
সহজাত নামে ইহা জানহ বর্ণনা।
প্রচ্ছন্ন নিব্বাণ কাল চিত্তের প্রবাহে,
নানা ক্ষণিক কর্ম অহরহঃ রহে।
১৪। বিপাক প্রত্যয়ঃ
পরিপক্ষ কর্মফল হইবে যখন,
বিপাক অবস্থা তাকে বলেন তখন।
চেতনা চারিটি হয় কার্য্য ও কারণে,
জবনে ইহার শক্তি নিয়ত প্রদানে।
প্রথম অবস্থা হয় চিত্ত জাত হলে,
দ্বিতীয় অবস্থা বলে জবনের কালে।
মরণ-আসন্ন কালে তৃতীয় কথিত,
চতুর্থতঃ ফলদানে চারটি ভাষিত।
১৫। আহার প্রত্যয়ঃ
কবলীকৃত আহারে রূপাহার বলে,
স্পর্শ, চেতনা, বিজ্ঞানে অরূপাহার বলে।
চিত্ত আর চৈতসিক এই দুই হতে,
প্রত্যয় উৎপন্ন হয় যথা ধর্মমতে।
১৬। ইন্দ্রিয় প্রত্যয়ঃ
ইন্দ্রিয় প্রত্যয়ধর্মী বিংশতি প্রকার,
জনন, ধারন, পালন শকতি তাহার।
অনন্তর প্রত্যয়েতে উৎপাদন গুণ,
পশ্চাজাত প্রত্যয়েতে ধারনের গুণ।
জীবিত ইন্দ্রিয়ে আছে গুণ পালনের,
আধিপত্য করে বলে নাম ইন্দ্রিয়ের।
১৭। ধ্যান প্রত্যয়ঃ
ধ্যানের কারনে যোগী চিত্ত স্থির করে,
যে ধ্যেয় বিষয়ে চিত্ত রাখে শক্ত করে।
কুশল ধ্যানাঙ্গ বিনা দানাদি ভাবনা,
কেহই করিতে নারে, কর বিচারণা।
একাগ্রতা যতবাড়ে শক্তি বাড়ে তত,
সকৃত্য সাধনে ইহা অতীব অদ্ভুত।
১৮। মার্গ প্রত্যয়ঃ
ধ্যানে করে আলম্বনে চিত্তকে সরল,
দৃঢ়ভাবে রাখে সদা অর্পণায় কেবল।
মার্গ করে চেতনাকে লোকোত্তর গামী,
গঠনে-বর্ধনে সদা হয়ে দ্রুতগামী।
১৯। সম্প্রযুক্ত প্রত্যয়ঃ
একবাস্ত একালম্বন একোৎপত্তিক্ষণ,
একক্ষণে নিরোধই সম্প্রযুক্ত ক'ন।
২০। বিপ্রযুক্ত প্রত্যয়ঃ
রূপারূপ একবাস্তু এক আলম্বন,
রূপারূপ প্রত্যয় হয় না করি গ্রহণ।
২১। অাস্থি প্রত্যয়ঃ
প্রত্যয়োৎপন্ন ধর্ম মাঝে থাকি বিদ্যমান,
উৎপত্তি-স্থিতি-ভঙ্গে থাকে বর্দ্ধমান।
২২। নাস্তি-প্রত্যয়ঃ
অবিদ্যমান থাকি ইহা দেয় অবকাশ,
প্রত্যয় উৎপন্ন ধর্মে নাস্তিতে বিকাশ।
বিগত-অবিগত শব্দদ্বয়ে শ্বাশত-উচ্ছেদ,
প্রতিষেধক বিগতাবিগত ইহাই বিভেদ।