03/31/2024
প্রসঙ্গ বুয়েটের সাময়িক পরিস্থিতি:
আজকে অনেক মিশ্র অনুভূতি কাজ করতেসে। ঠিক ছয় বছর আগে এই দিনে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন জীবন শুরু করি। খুব ছোটবেলা থেকে অনেকটা সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা আমাদের পরিবার। আমার বুয়েটের প্রতি মুগ্ধতা জেগেছিলো বুয়েটে মাদুর পেতে ইফতার এর অনুষ্ঠান দেখে। আমার বড়ভাই বুয়েটে থাকার সুবাদে ক্লাস নাইনেই আমি দেখেছিলাম সেই ইফতার আয়োজন। সেখানে এত মানুষের আয়োজন, ভ্রাতৃত্ববোধ, আতিথিয়েতা দেখে প্রেমে পড়ে যাই বুয়েটের।এরপর থেকেই আমি প্রত্যেকটা বইয়ের পাতায় লিখা শুরু করি বুয়েটে মাদুর পেতে ইফতার এ অবকাশ থাকবে, অনেকটা নেশার মত হয়ে গিয়েছিল যে বুয়েটে পড়তেই হবে। এরপর সব পরীক্ষা পেরিয়ে বুয়েটে ভর্তি হলাম। ক্লাস শুরু হবে ৩১ শে মার্চ। হলে সিট পেয়েছি, এসেই দেখি রুম বন্টন কে কোথায় করবে তা রাজনীতির ভাইয়েরা করে দিয়েছেন, কি সুন্দর অতিথিয়েতা না!(আসলেই হাস্যকর)....আমি সহ বেশ কয়েকজন লাইব্রেরি রুমে উঠলাম, আর কিছু ছাত্ররা আমাদের আশেপাশের রুমে উঠলো। প্রথম কয়েকদিন কিছুটা শিথীল থাকলেও আস্তে আস্তে ক্রমশ তা ভয়াবহ রূপে পরিণত হয়ে গেল। ফোনে কথা বলা যাবে না কোরিডোর এ। হাফ প্যান্ট, ফুল হাতা শার্ট পড়লে হাতা উঠানো যাবেনা, ডাইনিং এ খেতে গেলে কিছু অযাচিত নিয়ম পালন করতে হবে। এগুলো ছিল প্রথম দিককার ঘটনা। একটা বিষয় বলা উচিত যে নতুন ২০জন ছাত্র এর জন্য এক পাশের ওয়াশরুম বরাদ্দ আর প্রভাবশালীদের এক রুমের চারজন মানুষের জন্য এক পাশের ওয়াশরুম বরাদ্দ ছিল। আজকে দেখলাম অনেকেই ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা তুলতেসে, কিন্তু সেসময় যে ছেলে টা মিছিলে যেতে চাইতো না, সে যদি কথা অমান্য করতো রাতে হয়তো তাকে ছাদে বা সেই ক্ষমতাসীন দের রুমে পাওয়া যাইতো মাইর খাওয়া অবস্থায়। আর এসবের বিচার বুয়েটের স্যার রা এড়ায় যাইতো। এখনো মনে পড়ে স্যারকে এক ছাত্র বলছিলো স্যার আমাদের কিছু সমস্যা আছে, স্যার সমাধান করে দেন, স্যার বলতেসিলো আগে ক্ষমতাবান ঐ ছাত্রকে বলে আসো! সে যাইহোক, ডাইনিং এর খাবার এর অবস্থা নাজেহাল, বা খাওয়ার অযোগ্য করে তোলা, মিছিল না করলে মারধর ছিল নিত্য নিয়মে। আরেকটা বিষয়, আমি প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এ এই ক্ষমতাসীন লোকদের হাতে মার খাই খুবই উদ্ভট এবং সামান্য একটা স্ট্যাটাস এর জন্য, ফেসবুকে আমি ইন এ রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিসিলাম। তাদের কথা আমি কেন দিলাম এইটা, তারা বড় হয়ে এখনো দিতে পারিনি আমি কেন দিলাম!.... তো এইটা নিয়ে যখন আমাকে মার দেয়া হইসিলো আমি ডিরেক্ট বাসায় বলে দিসিলাম, যার জন্য ওদের কিছু কথা শুনতে হইসিলো ওদের উপরমহল থেকে, এরপর থেকে আমাকে টার্গেট করে রাখসিলো আবার মারবে। একটা কথা বলি ক্ষমতা যে মানুষকে অন্ধ করে দেয় তার উদাহরণ শত শত এইসন হিংস্র নরপশুদের মাঝে। ক্ষমতার জন্য কোরাম করে হলে হলে দ্বন্দ লাগানো ছিল এর একটা উদাহরণ। আমি আমার এক বন্ধুকে শুধু মার খাওয়া থেকে বাচাইতে গেছিলাম, এইটা কে কেন্দ্র করে আমাকে সারা রাত ছাদে নিয়ে পেটানো হইসিলো। আমার আরেক বন্ধু একটা মার খেয়ে যদি না চিল্লাইতো আল্লাহ জানে সেদিন আমাকে ওরা ছাড়তো কিনা। আমার এখনো মনে পড়ে আবরার ফাহাদের মামলার এক আসামী #সকাল, আমার শার্টের কলার ধরে বলসিলো যে ছাদ থেকে ফেলে দিবো আর বলে দিবো সুইসাইড কেস। একটা মানুষ কতটা ক্ষমতা পেলে এসব কাজ করতে পারে আর বলতে পারে! আমার ই ব্যাচমেট বলছিলো যে এই পশু নাকি এলাকায় খুব শান্ত একটা মানুষ, সবাই ভালো হিসেবে জানে। আমার প্রশ্ন এদের মধ্যে এত পরিবর্তন কিভাবে আসলো? আমি আমার বন্ধুকেই দেখেছি এই পরিবর্তন আনতে। শুরুর দিকে বলেছিলাম যে হলে লাইব্রেরিতে সিট পেয়েছিলাম। সেখানে থাকা প্রত্যেক টা মানুষের সাথে আমি দুই তিনমাস একি রুমে দেখেছি, তাদের মধ্যে যে ক্ষমতার লোভে পাল্টে যাওয়া খুব কাছে থেকে দেখেছি আমি। আমরা সবাই মিলে প্রথম টার্ম ব্রেকে সিলেট যাই। সেখান থেকেই আমার সাথে আবরার ফাহাদের সাথে বন্ধুত্ব টা হয়। আর আমার বুয়েটের প্রথম জীবনের পড়ালেখার গুরু ছিলো #তোহা, এই ছেলেটা এত মেধাবী ছিলো। ওর পড়ালেখা করা লাগতো না, অল্প কিছুক্ষণ বই পড়ে কেমনে কেমনে সব বলে দিতো। বুয়েটের লেভেল ১ টার্ম ১ থেকেই ওর কাছে আমি আর অন্তিম পড়াশুনার তালিম নিতাম। সেই ছেলেটাও আস্তে আস্তে বদলাইতে থাকলো, আমি লেভেল ২ টার্ম ১ পর্যন্ত ওর রুমমেট ছিলাম। ওর এহেন পরিবর্তন, পড়ালেখা বাদ দিয়ে এমন ভাবনা বেশ বেঢক লেগেছিল সেদিন। বুঝতে পারিনি এরা সবাই এমন ছক কষছে। আচ্ছা কেও কি বলতে পারেন কেন এমন পরিবর্তন? কেন এত লোভ? কেন সব এত ক্ষমতার অপব্যবহার? এতসব যখন অন্যায় অত্যাচার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিচ্ছে তার চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে আমার বন্ধু,ব্যাচমেট কে মেরে ফেলা হয়। সেদিন ও সেই #সকাল একটা মানুষ হত্যা করে সকালের নাস্তা বিনা অনুশোচনাতে, ক্যান্টিনে করে যাচ্ছিলো। আমার সেদিন মন থেকে বের হয়ে গেছিলো আল্লাহ তুমি এর বিচার কইরো। এরপর আল্লাহ ঠিক ই বিচার করে দিসেন সব। সেদিনের পর থেকে আর আমরা পিছু হটতে চাই নি। একটু শান্তিতে থাকার জন্য, সুন্দর একটা স্বপ্ন নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য এই ক্ষমতাহীন ক্যাম্পাস চেয়েছি। এরপর থেকে যে কেউ স্বচক্ষে দেখতে পারবে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে স্বাধীনতা, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ উদ্যমতা কতটা বেড়ে গেছে। আর এরপর হল থেকে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লাগে কারা সবচে বেশি ভালো খাওয়াবে যেটা কিনা আগে চলে যেত ক্ষমতাবানদের পকেটে। আমার এখনো আফসোস হয়, আমি আমার বন্ধুকে বাচাতে পারিনাই ক্ষমতার আগ্রাসন থেকে, আমি শুধু আবরার ফাহাদকে হারাই নাই, আমি আমার পুরো বন্ধুমহল হারাইসি এই জন্য। আমার এখনো মনে হয় আমি তোহাকে যদি আটকাইতে পারতাম বন্ধু যাইস না এসবে। বিশ্বাস করেন এই ঘটনাগুলার পর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই স্বপ্ন সেই মাদুর পেতে ইফতার কিছুই পাইনি। আমার সব বন্ধু হারাইসি আমি এই একটা কারণে। ক্ষমতার আগ্রাসন কে জীবনে ঠাই দিলে সব হারায় যায়।
তাই জুনিয়রদের বলবো আমাদের একত্র হইতে সময় লাগাতে এমন ক্ষতি হইসে, নিজেরা এমন ক্ষতি হইতে দিস না কখনো। সৎসাহস নিয়ে সৎযুক্তিতে কথা বলবি। কোন ক্ষমতার আগ্রাসনে নিজেদের জীবনের সুন্দর ভবিষৎ কে কলুষিত করিস না।