01/09/2025
জেনারেল এমএজি ওসমানীর নাম এবার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালে একবার এই পুরস্কারটা যে তাকে দেয়া হয়েছিল, সে কথা এনজিও সরকার ভুলে গিয়েছিল। পরে তাদেরকে কেউ জানায় যে তিনি এই পুরস্কার একবার পেয়ে গেছেন। মেট্রিক ফেইল অপদেষ্টা ফারুকি পোস্ট দিয়ে জানায় তাকে পুনরায় পুরস্কারটা দেয়া হবে না।
কিন্তু ওসমানীর নাম ঘোষণার পর লিগ সরকার ও শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করে ফেসবুকে বেশকিছু পোস্ট দেখলাম। শেখ হাসিনা ও আওয়ামি লিগ নাকি ওসমানীকে মূল্যায়ন করেনি, সবজায়গায় একজনের (বঙ্গবন্ধু) নাম বসিয়ে রেখেছে, হ্যান ত্যান। তার প্রেক্ষিতে এই লেখা।
জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় এমএজি ওসমানী। তিনি মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধানও। মুক্তিযুদ্ধে তার অসাধারণ ভূমিকার জন্য তিনি সবসময় শ্রদ্ধার জায়গায় ছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর আওয়ামি লিগ তাকে মন্ত্রী বানায়। তেহাত্তরের নির্বাচনে এমপি হন, এরপর আবারও মন্ত্রী। প্রতিবারই একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুহত্যার পর খুনি মুশতাক সরকারের সাথে যোগ দেন ওসমানী, হোন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা। সেই থেকেই মূলত তার সাথে আওয়ামি লিগের দূরত্ব তৈরি হয়। যদিও তিনি তার আগেই আওয়ামি লিগ থেকে সরে এসেছিলেন। কিন্তু আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এসে কখনোই তাকে অসম্মান করেনি; বরং নানাভাবে সম্মানিত করেছে।
সিলেটের একমাত্র সরকারি মেডিকেল কলেজের নাম এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শিশুপার্কের নাম ওসমানী শিশু উদ্যান। এছাড়া আছে ওসমানী জাদুঘরসহ নানা স্থাপনা। সিলেটে ওসমানীর পৈত্রিক বাড়ি দয়ামীর নামক জায়গায়। তার স্মরণে দয়ামীরকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০০১ সালের শুরুর দিকে ওসমানীনগর নামে থানা গঠিত হয়, যেটা ছিল আওয়ামি লিগের সময়। সেই ওসমানীনগর থানাকে উপজেলায় রূপান্তরের দাবি ওঠে। বিএনপি ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত সে দাবিকে অগ্রাহ্য করে। আওয়ামি লিগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এলে আবারও দাবি ওঠে। ২০১৪ সালে অবশেষে ওসমানীনগর উপজেলা গঠিত হয়। এখন এটি একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা।
সিলেটে বিএনপি, এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতও অভিযোগ করে ওসমানীকে আওয়ামি লিগ মূল্যায়ন করেনি। অথচ ওসমানী বঙ্গবন্ধুহত্যার পর খুনি সরকারে যোগ দেয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনা কোনো প্রতিশোধ নেননি। ওসমানীর নাম কোনো জায়গা থেকে থেকে মুছে দেননি, উলটো তার নামে উপজেলা ও থানা অনুমোদন দিয়েছেন। এখন ১৯৮৫ সালে পাওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার নতুন করে নাম ঘোষণা করেও মেট্রিক ফেইল অপদেষ্টা ফারুকি এটা নিয়েও রাজনীতি করছে। এখানেও দোষ আওয়ামি লিগ আর শেখ হাসিনার!
বছরদুয়েক আগে আমি একবার ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নে ওসমানী সাহেবের পৈতৃক বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। কোথাও ওসমানী সাহেবের নামটা পর্যন্ত নেই। উনি বিয়ে করেননি, চিরকুমার ছিলেন। কিন্তু ওনার ভাইয়েরা পৈত্রিক বাড়িতে একটা নেমপ্লেট পর্যন্ত লাগায়নি। এটা নিয়ে স্থানীয় অনেক আওয়ামি লিগ ও বিএনপি-নেতার সাথে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছে ওনার ভাইয়ের পরিবার বাড়িটাকে দখলে রাখার জন্য ওনার নাম মুছে দিয়েছে! সত্যমিথ্যা জানি না, যাচাই করার সময় ছিল না। বাড়ি দেখে গিয়েছিলাম দয়ামীরে ওসমানী গণপাঠাগার ও মিলনায়তন দেখতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম উদ্বোধন করেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী হিসেবে। ওটাও যে লিগের আমলে হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ ছিল না।
এই যখন অবস্থা, বিএনপি-জামায়াতের মতো ইউনুস সরকারও বঙ্গবন্ধুকে 'ছোট' করতে সেই একই পথ বেছে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া নাকি আর কারও নামে দেশে কিছু করেননি শেখ হাসিনা। এগুলো যে কতটা মিথ্যাচার তা এক ওসমানীকে দিয়েই প্রমাণিত। অন্যান্যদের কথা লিখলে পোস্টটা একটা বিশাল আকার ধারণ করবে।
বঙ্গবন্ধু হিমালয় ছিলেন। কখনো জিয়া, কখনো ওসমানী, কখনো ভাসানীকে দিয়ে ওনাকে মুছে দেয়া যায়নি আগেও, এখনও যাবে না। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে মুছতে হলে বাংলাদেশ, বাঙালিকে মুছে দিতে হবে। রিসেট বাটন দিয়ে তো চেষ্টা করছেন। আরও করতে থাকুন, আর দেখেন আপনারা যা ভালো মনে করেন!
-সুদীপ্ত সুজয়