05/22/2025
গল্প: “শেষ সন্ধ্যার আলো”
বিয়ের দিন নন্দিনীর মুখে লাজুক হাসি ছিল, চোখে ছিল স্বপ্নের দীপ্তি। লাল টুকটুকে শাড়িতে সে যেন কোনো গল্পের রাজকন্যা। মা সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন,
“সুখে থাকিস মা, কোনোদিন যদি কষ্ট হয়, মন খুলে কথা বলবি।”
কিন্তু মা জানতেন না, সেই কষ্টটা এমন হবে, যা মেয়ে বলতেই পারবে না—কারণ তার কণ্ঠটা ধীরে ধীরে নিভে যাবে।
নন্দিনীর স্বামী, অর্ণব, শহরের চাকুরিজীবী। চোখে মুখে আধুনিকতার ছোঁয়া, কিন্তু মনটা পরিবারপ্রেমে আঁটকে ছিল।
শ্বশুর-শাশুড়ি প্রথমে হাসিমুখে গ্রহণ করলেও, কিছুদিন পরই শুরু হয় ছোট ছোট খোঁটা, কথার কাঁটা, কাজের দোষ।
“তোর মা কি তোকে কিছু শিখিয়ে দেয়নি?”
“খালি পড়ালিখা জানিস, সংসার করতে জানিস না!”
নন্দিনী প্রথমদিকে সহ্য করত। মনে মনে ভাবত, হয়তো সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সময় শুধু নষ্ট করল, মন ভাঙল, স্বপ্ন পুড়িয়ে দিল।
একদিন নন্দিনী চুপ করে বারান্দার কোণে বসে কাঁদছিল, পেছন থেকে শাশুড়ির গলা—
“এত কান্না কিসের? কান্না করে কেউ সংসার চালাতে পারে?”
স্বামী অর্ণব—সব দেখেও কিছু বলেনি। মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে, যেন কিচ্ছু হয়নি।
কিছুদিন পর জানা গেল, নন্দিনী মা হতে চলেছে। একটিবারের জন্যও শ্বশুরবাড়িতে খুশির ছোঁয়া এল না। বরং কাজের চাপ বাড়ল—“এই তো এখনি পেট বড় হয়নি, কাজ করতে তো পারিস।”
এক সন্ধ্যায়, নন্দিনী অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিল রান্নাঘরে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সে চলে গিয়েছিল… চিরতরে।
তার ছোট হাতব্যাগ থেকে একটা ছেঁড়া কাগজ পাওয়া গিয়েছিল। মায়ের নামে লেখা তার শেষ বার্তা:
⸻
“মা,
তুই বলেছিলি সুখে থাকিস। আমি চেষ্টা করেছিলাম, মা। কিন্তু এখানে সুখ বলে কিছু নেই। আমি কেবল এক গৃহস্থালির যন্ত্র ছিলাম। ভালোবাসা পাইনি, মমতা পাইনি, মানুষ হিসেবে গ্রহণও পাইনি।
তুই শুধু দোয়া করিস, যেন পরের জন্মে আবার তোর কোলেই আসি—সেই মেয়েটি হয়ে, যে তোর আঁচল ধরে হাঁটতে শিখেছিল।”
⸻
তার মৃত্যুর পরে চারপাশের লোকজন মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে, সমাজ কেবল বলেছে, “বউটি একটু দুর্বল ছিল।”
কিন্তু মা আজও প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘরের কোণায় বসে, একটা ছবি জড়িয়ে রাখেন বুকে—নন্দিনীর ছবি।
আর বারবার বলেন,
“তুই বলেছিলি, আবার আসবি—আমি অপেক্ষা করছি মা।”
⸻
✨ এই গল্পটা শুধু নন্দিনীর না—এটা হাজার হাজার নীরব কণ্ঠের গল্প।
নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। আপনার সাহস কারও জীবন বদলে দিতে