COMMUNIST.TV

COMMUNIST.TV আমরা নিরপেক্ষ নয়, বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ?

প্রধানমন্ত্রী বললেন, "আপনি ভাতা নেন, একলা এভাবে কতদিন চলবেন.."রমা বললেন, "ছেলে দিয়েছি, স্বামী দিয়েছি, সম্ভ্রম দিয়েছি। তা...
08/22/2022

প্রধানমন্ত্রী বললেন, "আপনি ভাতা নেন, একলা এভাবে কতদিন চলবেন.."
রমা বললেন, "ছেলে দিয়েছি, স্বামী দিয়েছি, সম্ভ্রম দিয়েছি। তার তো ক্ষতিপূরণ হবে না। ভাতা নিয়ে কি করব!?"
ধর্ষিতা হওয়ায় যুদ্ধের পর ওঁকে একঘরে করে দেয়া হয়। অথচ তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর।

নিজের হাতে বই লিখতেন, সে বই ছাপাতেন, ফেরিওয়ালার মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই ফেরি করতেন, পয়সা যা হতো তাই দিয়ে একলা মানুষটার জীবন চলতো। এই মানুষটির বাড়ি আদতে একটি খড়ের চালার কুঁড়েঘর। যার আশপাশের বাসিন্দা কুকুর, বেড়াল, কাক, পেঁচা।

জুতো পরতেন না রমা। লোকজন জিজ্ঞেস করলে বলতেন, "এই মাটিতে আমার ছেলেরা ঘুমায়, জুতো পরে ওদের বুকের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে হাঁটব কি করে !"

এই রমা আমাদের যুদ্ধজননী। ৪৫ টা বছর যিনি খালি পায়ে রৌদ্রতপ্ত পিচঢালা পথে হেঁটে বেড়িয়েছেন। নিজের চোখের সামনে সন্তানদের মৃত্যু দেখেছেন যিনি, যিনি দুচোখে দেখেছেন পাকিস্তানের দোসররা মানুষের ঘরবাড়ি দাউদাউ করে জ্বালিয়ে দিতে।

এদেশ থেকে তাঁর নেয়ার কিচ্ছু নেই, দেবার ছিল। দিয়ে গেছেন। মৃত্যুতে তাঁর লজ্জায় ডুবিয়ে দিয়ে গেছেন গোটা জাতিকে ।

ভেবেছিলেন বই বেচা পয়সায় একটা অনাথ আশ্রম করবেন, সে আশা আর পূর্ণ হলো কই!

এমন কতো রমা চৌধুরী এখনো যুদ্ধ করেন, এখনো খালি পায়ে হেঁটে বেড়ান, কত আজাদের মা সাফিয়া বেগমরা ভাত খান না শতবছর, কত জাহানারা ইমাম আগলে রাখেন রুমিদের মেডেল-ট্রফি।

এঁদের যুদ্ধের কাছে বারবার হেরে যায় বাংলাদেশ, সে হারায় দুঃখ নেই, আছে লজ্জা, আছে গর্ব, আছে প্রেরণা।

মাটিতেই তো ছিলেন আজীবন। কবরে থাকতে অসুবিধে হবে না মায়ের। স্রষ্টা আমাদের মতো নির্মম নন।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমার এই সোনার বাংলাদেশ। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব বীর শহিদদের । যেখানে থাকুন ভালো থাকুন।।

08/08/2022
08/08/2022

পাঁচ বছরে এত সম্পত্তি কী করে? হাইকোর্টের নজরে ১৯ নেতা মন্ত্রী!!

08/08/2022
07/06/2022

আমি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলাম। আমার দায়িত্বকালীন সময়টা ছিল ১৯৯৩/৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। প্রায় ৮-৯ বছর সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকার কারণে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, মৈত্রী, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টনে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাত কথাবার্তা হতো। অনেকের ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, তাদের প্রেম-ভালবাসা, আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থাও জানতাম। তেমনি আমারটাও অনেক জানতেন। বিভিন্ন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সাথে প্রায়ই আমারা দুপুরে/অপরাহ্নে মধুর পাশে আমতলায় বা আইবিএ’র ক্যান্টেনে আড্ডা দিতাম। রাতে খাবারের সময় বিভিন্ন হলের গেটে-গেস্ট রুমে অনেকের সাথে দেখা হতো কথা/গল্প হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভিসি স্যারের অফিসেও আমাদের নিয়মিত দেখা হতো। সেখান থেকে আমরা পয়সা ছাড়া ফোনও করতাম। তখনও সেভাবে মোবাইল ফোনের চল হয়নি।

সংগঠনের নেতৃত্বে থাকাকালীন সময়ে- ছাত্রলীগের মূল দায়িত্বে যাদের পেয়েছি, তারা হলেন, এনামুল হক শামীম, ইসহাক আলী খান পান্না, অজয় কর খোকন, লিয়াকত শিকদার, বাহাদুর ব্যাপারী ছাত্রদলের শহিদুদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবীবুন নবী সোহেলে, সাহাবুদ্দিন লাল্টু, মুনীর হোসেন, মোশাররফ হোসেনসহ অনেকে। সঙ্গত কারণে এখানে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের নাম উল্লেখ করছি না। এই ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ বাসায় কেউ কেউ হলে থাকতেন। কারোই ব্যক্তিগত গাড়ী ছিল না। রিক্সা বা সিএনজিতে মধুতে আসতেন। তাদের সাথে অনেক দিন একসাথে বা পাশাপাশি বসে বা একসাথে আইবিএ’র ক্যান্টিনে দুপুরে খেয়েছি, টিএসসি ছোলামুড়ি খেয়েছি, পকেটের অবস্থা একটু ভাল হলে ডাসে লাচ্ছা-সিঙ্গারা খেয়েছি। এদের কারো জীবনযাপনে অনেক জৌলুস ছিল না, দেখিনি।

কথাগুলো বলছি এ কারণে যে, আজ দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ছাত্রলীগের পদবাণিজ্য নিয়ে একটা রিপোর্ট দেখে স্তম্ভিত হলাম। শিরোনাম, "ছাত্রলীগের পদ কোটি টাকা" (লিংক কমান্টবক্সে)। বিষয়টা আগে কিছু কিছু শুনেছি, কিছু রিপোর্ট পড়েছি কিন্তু বিষয়টা এতটা খোলামেলা ও প্রাতিষ্ঠানিক হয়েছে ভাবতে পারিনি। থানা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-জেলার পদ পেতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। আর এসব তদবিরে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের-এমপি-মন্ত্রীরাও আছেন!! ভাবা যায়??

ছাত্রলীগের নেতাদের ব্যক্তিগত একাধিক গাড়ী, নিজেদের থাকার দামী এপার্টমেন্ট, ব্র্যান্ডের দামী পোষাক, ঘড়ি-চশমা, মোবাইল, দামী হোটেলের খাবার, এক কথায় বিলাশ বহুল জীবনযাপন, আমার কল্পনাকেও হার মানায়। আমাদের ভাবনা অতদূর যায় না, কারণ আমাদের পকেটে ২০-৫০-১০০ টাকা থাকলেই অনেক মনে হতো। ৫০০-১০০০ টাকা চাঁদা পেলে অনেক মনে হতো। টিএসসি থেকে হেঁটে পল্টন, মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট যেতাম। সেখানে এমন অবস্থা তো বিষ্ময় জাগাবেই।

সময়ে সবকিছুর কতটা পরিবর্তন হয় সেটা ভাবতেই অবাক লাগে, বিষ্ময় জাগে। এরাই আবার নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক দাবী করে! বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী যদি এরা পড়ে থাকে- তাহলে বলবো, এরা মহা প্রতারক ও মোনাফেক। ক্ষমতাসীনরা ছাত্র রাজনীতিকে কতটা কুৎসিত ও নেতৃত্বকে কতটা অর্থলোভী ও বিকারগ্রস্থ করেছে তা ভাবতেই সীমাহীন বিস্মিত হই। এটাই যদি হয় হালের ছাত্রলীগের রাজনীতি, তাহলে তাকে ছাত্রলীগের সেই গৌরব না দিয়ে--- একে বলা হোক মাফিয়া সিন্ডিকেট!

Monjure Khoda Torik
সাবেক সভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

07/06/2022

দেশ হতে হবে মধ্যম আয়ের মানুষের
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
(০৬ জুলাই, ২০১৫ ইং)

বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন একটি স্বল্প উন্নত ‘নিম্ন-আয়ের দেশ’ থেকে ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশে’ পরিণত হয়েছে। একটি দেশের মোট জাতীয় আয়ের (Gross National Income-জিএনআই) ভিত্তিতে মাথাপিছু জিএনআই (মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়)-এর পরিমাণ যা হয়, তা হিসেব করে বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশের আয়-স্তরের শ্রেণিকরণ করে থাকে। কোনো দেশকে ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশ’ হিসেবে পরিগণিত হতে হলে সে দেশের মাথাপিছু জিএনআইয়ের পরিমাণ ১,০৪৫ থেকে ৪,১২৫ ডলারের মধ্যে হতে হয়। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব অনুসারে বাংলাদেশ বর্তমানে এই আয়-স্তরে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের ২০১৫ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যানুসারে, ২০০৫-০৬ কে ভিত্তি বছর হিসেবে গণ্য করে, চলতি মূল্যে মাথাপিছু জিএনআইয়ের পরিমাণ বর্তমানে হলো ১,৩১৪ ডলার (অর্থাত্ ১,০২,০২৬ টাকা)। এই সংখ্যাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে যে—তাজিকিস্তান, মিয়ানমার ও কেনিয়াসহ বাংলাদেশ এখন ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশে’ উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু জিএনআই আরো চারগুণ বাড়াতে পারা পর্যন্ত বাংলাদেশ ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশ’ হিসেবেই থাকবে। তারপর মাথাপিছু আয় ১২,৭৩৫ ডলার হওয়া পর্যন্ত এদেশ উচ্চ মধ্যম-আয়ের দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। সে পর্যন্ত যেতে পারাটা অবশ্য অনেক দূরের কথা! কিন্তু তারপরেও, এই ‘মধ্যম-আয়’ স্তরের একেবারে তলানীতে থাকলেও, বাংলাদেশ যে ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশের’ তালিকায় তার নাম ওঠাতে সক্ষম হয়েছে, সেটিই বা কম কি! এজন্য বাংলাদেশ বাহবা পাওয়ার দাবি করতে পারে বৈকি। সেজন্য শুরুতেই উচ্চারণ করছি—বাহবা বাহবা, বেশ বেশ—বাংলাদেশ!

তবে এই শুভবার্তার মাঝেও কিছু ‘কিন্তু’ আছে। ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশ’ তো না হয় বুঝলাম! কিন্তু গুরুতর প্রশ্ন হলো—এই ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশের’ অধিবাসী নাগরিকদের মধ্যে কয়জনের আয়-উপার্জন ‘নিম্ন মধ্যম-স্তর’, অর্থাত্ বছরে ১ লাখ টাকা বা ১৩শ’ ডলারের সীমায় পৌঁছেছে? কিম্বা অন্যভাবে, পারিবারিক আয় রূপে হিসেবটি দেখলে, কথাটি কি দাঁড়ায়? কথা দাঁড়ায় যে, একটি পরিবারে ৫ জন সদস্য আছে বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে, ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের পরিবার’ বলে গণ্য হতে হলে সেই পরিবারের (মাথাপিছু ১ লাখ টাকা করে ৫ জনের) বছরে ৫ লাখ টাকা আয় হতে হবে। কথা হলো, দেশের কয়টি পরিবারের বছরের আয় ৫ লাখ টাকার (মাসে ৪০ হাজার টাকার) উপরে? বস্তুত দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ও পরিবারের আয়-উপার্জন এর থেকে বহু কম।

একটি গার্মেন্ট শ্রমিক পরিবারের অবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা এক্ষেত্রে কি চিত্র দেখতে পাই? সেখানে যদি স্বামী ও স্ত্রী দু’জনকেই উপার্জনক্ষম কর্মরত শ্রমিক বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতাসহ তাদের ৫ জনের একটি পরিবারকে ‘নিম্ন মধ্যম-আয়’ স্তরের বলে বিবেচনা করতে হলে তাদের দু’জনের প্রতিজনের মাসিক মজুরি ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করে হওয়াটা অপরিহার্য। কিন্তু তারা অনেকেই তার চার ভাগের এক ভাগ মজুরিও পায় না। এ হলো গার্মেন্ট শ্রমিকদের ক্ষেত্রে অবস্থা। কর্মহীন বেকার মানুষদের তো ন্যূনতম কোনো আয়-উপার্জন নেই বলেই ধরা যায়। অথচ হিসেব কষে দেখানো হচ্ছে যে তাদেরও পরিবার পিছু (৫ সদস্যের পরিবার ধরে) আয় হলো ৪০ হাজার টাকা। এতো এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার! তাহলে ‘মাথাপিছু আয়ের’ এমন অবিশ্বাস্য হিসেবটি রচিত হলো কিভাবে? এখানেই সংখ্যাতত্ত্বের কারসাজি! বাংলাদেশের জনৈক এক ধনকুবেরের সম্পদের পরিমাণ নাকি ১ লাখ কোটি টাকা। একথা দুদক জানিয়েছে। এরকম অথবা এমনকি এর চেয়ে বড় ধনকুবের যে দেশে আরো অনেক রয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে যদি এরকম ১৫/২০ জন ধনকুবের থাকে এবং দেশের অবশিষ্ট ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮০ জনের (৯৯.৯৯%-এর) আয় যদি স্রেফ শূন্যও হয় তাহলেও, বাস্তবে না হলেও, পরিসংখ্যানের হিসেবে বাংলাদেশে ‘মাথাপিছু’ সম্পদের পরিমাণ হবে ১ লাখ টাকা। এভাবে কোনো আয় ছাড়াই, শুধু সংখ্যাতত্ত্বের ‘ম্যাজিকের’ বদৌলতে প্রত্যেকের ‘মাথাপিছু আয়’ বছরে ১ লাখ টাকা বলে পরিগণিত হবে। সংখ্যাতত্ত্বের এই ‘ম্যাজিক’ খাটিয়েই, বাংলাদেশে ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের’ মানুষ কয়জন আছে বা নেই সে হিসেব ব্যতিরেকেই, তার পক্ষে বিশ্ব ব্যাংক প্রদত্ত ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের’ দেশের তকমা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

এদেশে মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) ও মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদন (জিডিপি) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির ফসল জমা হয়েছে প্রধানত মুষ্টিমেয় ধনকুবেরদের হাতে। একথা সর্বজনস্বীকৃত যে জাতীয় আয় ও জাতীয় উত্পাদনের এই প্রবৃদ্ধির মূল নায়ক হলো প্রধানত সমাজের তিন অংশের মানুষ। তারা হলো—ক) দেশের কয়েক কোটি কৃষক ও ক্ষেতমজুর খ) গার্মেন্টস-এর অর্ধ কোটি বস্ত্র-বালিকাসহ মুটে-মজুর-মেহনতি মানুষ গ) প্রায় ১ কোটি প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষ যারা বিদেশে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। এর সাথে রয়েছে মধ্যস্তরের ‘বাজেট ফেল্-এ’ কাতর মানুষরা। দেশের সম্পদ বাড়াচ্ছে প্রধানত এরাই (যারা দেশের ৯৯ শতাংশ)। অথচ তাদের সৃষ্ট সম্পদের প্রায় সবটা জমা হচ্ছে মুষ্টিমেয় ধনবানদের (১ শতাংশের) হাতে। এ সম্পদের সবটা আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের হস্তগত হচ্ছে না। অবৈধ পথে বেপরোয়া লুটপাটের ধারায় তারা একেকজন এভাবে লক্ষ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছে।

এসব লুটপাটের খবর গোপন করার চেষ্টা সত্ত্বেও তার কিছু কিছু প্রকাশ হয়ে পড়ছে। কিছুদিন আগে হলমার্ক, ডেসটিনি, যুবক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের লুটপাটের কাহিনি উন্মোচিত হয়েছে। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক প্রভৃতিতে যে তুলনাহীন লুটপাট চলছে তার বিবরণ দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, কারা এসব লুটপাট করেছে তা অজানা নয়। কিন্তু এসবের সাথে ‘নিজেদের’ দলীয় লোকদের সম্পৃক্ততার কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

কি বিপুল পরিমাণে লুটপাট চলছে তার ধারণা পাওয়া যায় পত্র-পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত কয়েকটি রিপোর্ট থেকে। জানা গেছে যে, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা টাকার পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে তা ৪০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো। অর্থাত্ ৪ বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ হলো কেবল নগদ অর্থের হিসেব। এর বাইরে সুইস ব্যাংকের ভল্টে যেসব মহামূল্যবান অলংকারাদিসহ অন্য জিনিসপত্র রাখা আছে তার হিসেব জানা যায়নি। নাগরিকত্বের পরিচয় গোপন রেখেও অনেক বাংলাদেশি সেখানে টাকা গচ্ছিত রেখেছে। সে অর্থের পরিমাণও জানা নেই। মোট কথা, সুইস ব্যাংকে কতিপয় বাংলাদেশি নাগরিকের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

সুদীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য বিখ্যাত স্থান হলো সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ব্যাংক আছে ২৮৩টি। বিশ্বের বড় বড় ধনীরা অর্থ পাচার করে এদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তা জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তায় তা গচ্ছিত রাখে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। আমানতকারীর নাম-ঠিকানা তো গোপন রাখা হতোই। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সুইস ব্যাংক জমা টাকা সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন্ দেশের কত টাকা জমা আছে সেই তথ্য তারা আজকাল প্রকাশ করছে। তবে আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। ফলে পাচারকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে না। পাচারকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

এদিকে মালয়েশিয়ার সরকারের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে সেদেশের ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম অবস্থানে আছে চীন। এদিকে, নিজেদের স্ত্রীদের নামে কানাডায় দামি সব বাড়ি-ঘর কিনে বিপুল সম্পদ দেশ থেকে স্থানান্তর করেছে বিত্তবানরা। টরেন্টো শহরের একটি এলাকা এখন ‘বেগম পাড়া’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের ধনকুবেরদের টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ উন্নত দেশগুলোতে।

অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে বিত্তবানদের দ্বারা নানাভাবে হস্তগত আয় ও বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা পুঁজি পাচারের অনুকূল পটভূমি রচনা করে। দেশে দৃশ্যমান ও হিসেব বহির্ভূত উভয় ধরনের আয় বাড়ছে, কিন্তু বিনিয়োগ একই পরিমাণে বাড়ছে না। বৈধ-অবৈধ পথে একশ্রেণির লুটেরার হাতে জমা হওয়া এই টাকার একটি বড় অংশ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পণ্য আমদানির নামে ঋণপত্রের মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। কম দামে বা কম পণ্য এনে তার দেনা শোধ করা হচ্ছে বেশি দামে বা বেশি পণ্য দেখিয়ে। রফতানি পণ্যের একটি অংশের মূল্য দেশে আসছে না। ওই টাকাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। নগদ ডলারে বা স্বর্ণের মাধ্যমেও দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। এছাড়া চিকিত্সা ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ, লেখাপড়ার খরচ এসব মাধ্যমেও টাকা পাচার হচ্ছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমেও টাকা পাচারের ঘটনা ধরা পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনা আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব টাকা দেশে বিনিয়োগ হয় না। ফলে তা দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্যতেও সরাসরি কোনোভাবে অবদান রাখে না।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক যুগে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ১৩ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা দিয়ে ৬টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। আলোচ্য সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৯০৩ কোটি ডলার, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাত্ যে পরিমাণ এফডিআই দেশে এসেছে তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে। উল্লিখিত সময়কালে প্রতি বছর গড়ে ১৬৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার বা ১৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে। অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাওয়া এই টাকার সবটা কোনো সময়ই জিএনআই অথবা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, তার যেটুকু হিসেবে অন্তর্ভুক্ত, পাচার হওয়ার কারণে তার সবটা দেশের আর্থিক শক্তি হিসেবে যুক্ত হয় না। বাংলাদেশ যদি কাগজে-কলমে ‘নিম্ন মধ্যম-আয়ের দেশ’ হয়েও থাকে, বাস্তবে সে হিসেবে অন্তর্ভুক্ত টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাচার হয়ে যাওয়ার কারণে তা আর ‘দেশের সম্পদ’ বলে বিবেচনাযোগ্য থাকে না। এসব কারণে শুধু সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব দিয়ে দেশের আর্থিক শক্তি সামর্থ্যের প্রকৃত স্তর নির্ধারণ করার চেষ্টা অবধারিতভাবে ত্রুটিপূর্ণ হয়।

অন্যদিকে, বিদেশের কাছে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ ঋণ রয়েছে। বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ হলো মাথাপিছু ৪০০ ডলারের বেশি। এই ঋণ ফেরত দিতে হবে। ফলে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ থেকে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণকে বিয়োগ করলে মাথাপিছু প্রকৃত আয় (ঋণের বোঝা মুক্ত) দাঁড়ায় ৯১৪ ডলারে। কেবল পরিসংখ্যান ও সংখ্যাতত্ত্বের চোখ দিয়ে বিবেচনা করলে পাচার হওয়া টাকা, বিদেশি ঋণের বোঝা ইত্যাদি বিষয় হিসেবের বাইরে থেকে যাওয়ার বিপদ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া সম্পদের অসম বণ্টনের অভিঘাত ও ফলাফল ‘মাথাপিছু’ হিসেবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় না। ‘কেউ থাকে দশতলায়, কেউ থাকে গাছতলায়’—এরূপ বাস্তবতায় ‘মাথাপিছু’ হিসেব থেকে উন্নয়নের প্রকৃত মাত্রা নির্ধারণ করার চেষ্টা একটি প্রতারণামূলক প্রয়াস, কিম্বা কম করে বললে, একটি গুরুতর ভ্রান্তি বৈ অন্য কিছু নয়।

‘দেশ’ যদি মধ্যম-আয়ের স্তরে উন্নীত হতে পারে তবে ‘দেশের মানুষের’ জীবন কেন সাথে সাথে মধ্যম-আয়ের স্তরে উন্নীত হলো না—এ প্রশ্নের জবাব জানতে হবে। এর জবাব রয়েছে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মৌলিক গলদের মধ্যে। আমাদের কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য যদি হয় কেবল দেশকে ‘মধ্যম-আয়ের দেশ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, তাহলে তার দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া সমৃদ্ধি ও জনকল্যাণের গণআকাঙ্ক্ষাকে রূপায়ন করা সম্ভব হবে না। ‘মধ্যম-আয়ের মানুষের দেশ’ প্রতিষ্ঠাকে আমাদের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে অগ্রসর হলেই কেবল সেই গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সেজন্য যা অপরিহার্য তা হলো, দেশের বর্তমান ‘তেলে মাথায় তেল দেয়া’ ও ‘লুটপাটের’ অর্থনৈতিক-সামাজিক নীতি-দর্শনকে মুক্তিযুদ্ধের সমতাভিত্তিক প্রগতিবাদী উন্নয়নের চেতনা-ধারায় পুনর্বিন্যস্ত করা।

(০৬ জুলাই, ২০১৫ ইং)

Address

California City, CA
90821

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when COMMUNIST.TV posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share