08/03/2025
👉🏻👉🏻
কেরারআনে কারীমের আলোকে সালাম ।
সূরা আল-আন‘আমের ৫৪ নম্বর আয়াতে মুমিনদের জন্য এক চমৎকার নির্দেশনা রয়েছে।
আসুন, প্রথমে আয়াতটি দেখি:
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۖ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ ۖ أَنَّهُ مَنْ عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
"আর যখন তোমার কাছে তারা আসে, যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তখন তুমি বল, ‘সালামুন আলাইকুম!’। তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর রহমত (দয়া) লিখে নিয়েছেন (কাতাবা) যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশত কোনো মন্দ কাজ করে, তারপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তবে নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৬:৫৪)
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই আয়াতের তাৎপর্য:
এই আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়:
১. সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ: আল্লাহ সু. তা‘আলা তাঁর রাসূল-কে সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যখনই কোনো বিশ্বাসী (মুমিন) তাঁর কাছে আসবে, তখন তিনি যেন তাদেরকে "সালামুন আলাইকুম" বলে অভ্যর্থনা জানান।
২. নবী (সা.)-এর মাধ্যমে অনুশীলন: "সালামুন আলা মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে" - এই কথার ভাবার্থ হলো, এই সালামের অনুশীলন নবী করীম (সা.)-এর মাধ্যমেই কওমের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে এই শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি তা পালন করে দেখিয়েছেন। এটি তাঁর কওমের জন্য একটি অনুসরণীয় আদর্শ ।
৩. দুনিয়াতেই সালামের অনুশীলন: এই আয়াতটি পরকালের কোনো পুরস্কারের কথা বলছে না, বরং দুনিয়ার জীবনে মুমিনদের পারস্পরিক আচরণের কথা বলছে। এটি নির্দেশ করে যে, মুসলিম সমাজে একে অপরকে সালাম দেওয়া (সালামুন আলাইকুম) একটি অবশ্য পালনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ রীতি।
৪. সালাম শুধু একটি সম্ভাষণ নয়: আয়াতটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সালাম দেওয়ার পরেই আল্লাহ তাঁর রহমত ও ক্ষমার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মাধ্যমে সালামকে আল্লাহর রহমতের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। যখন একজন মুমিন আরেকজন মুমিনকে এভাবে সালাম দেয়, তখন সে কেবল "সালামুন আলাইকুম" বলে না, বরং তাকে আল্লাহর বিশাল রহমত ও ক্ষমার কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি একটি দোয়া এবং শুভকামনা।
৫. সকল বিশ্বাসীর জন্য প্রযোজ্য: আয়াতে বলা হয়েছে "যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে", অর্থাৎ সকল বিশ্বাসী এই অভ্যর্থনার যোগ্য, সে পূর্বে কোনো ভুল বা পাপ করুক না কেন। যতক্ষণ সে ঈমানের উপর আছে, তাকে সালাম ও সম্মান জানানো ইসলামের নির্দেশ।
সুতরাং, সূরা আল-আন‘আমের ৫৪ নম্বর আয়াতটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে দেওয়া নির্দেশের মাধ্যমে পৃথিবীতে সকল বিশ্বাসীর জন্য "সালামুন আলাইকুম" বা পারস্পরিক শান্তি কামনার অনুশীলনকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বিকৃত অভিবাদন:
আর যখন তারা আপনার কাছে আসে, তখন তারা আপনাকে এমনভাবে অভিবাদন জানায়, যেভাবে আল্লাহ আপনাকে অভিবাদন জানাননি .... সূরা আল-মুজাদালাহ (৫৮), আয়াত ৮।
সালামুন আলাইকুম ! -এর ব্যবহার
১. মুমিনদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ: ‘সালামুন আলাইকুম’!
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۖ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ...
আর যখন তোমার কাছে তারা আসে যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনে, তখন তুমি বলো, "সালামুন আলাইকুম" (তোমাদের উপর শান্তি)। তোমাদের রব তাঁর নিজের উপর রহমত (দয়া) লিখে নিয়েছেন... -সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৬:৫৪
তাৎপর্য: এই আয়াতটি 'সালাম'-এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি মৌলিক নির্দেশ। এখানে আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূল (সা.আ.)-কে সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছেন যেন তিনি ঈমানদারদের 'সালামুন আলাইকুম' বলে সম্ভাষণ জানান। এটি শুধু একটি সম্ভাষণ নয়, বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর অনুসারীদের জন্য রহমত ও ক্ষমার এক ঐশী ঘোষণা। এই সালামের মাধ্যমে মুমিনদের স্বাগত জানানো এবং তাদের প্রতি আল্লাহর দয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধকে গভীর করে।
২. মৃত্যুর সময় মালাইকা/ ফেরেশতাদের ‘সালামুন আলাইকুম’!
الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ ۙ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
"ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়, তারা বলে, "সালামুন আলাইকুম" (তোমাদের উপর শান্তি)। তোমরা যা করতে, তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করো" –সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩২
তাৎপর্য: এই আয়াতটি একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে—মৃত্যুর সময়—আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা শান্তির সুসংবাদ। ফেরেশতাদের মুখে "সালামুন আলাইকুম" শোনা প্রমাণ করে যে, ঐ ব্যক্তির পার্থিব জীবনের সমাপ্তি ঘটছে শান্তির সাথে এবং তার জন্য অপেক্ষা করছে অনন্ত পুরস্কার। এই সালাম ভয়কে দূর করে প্রশান্তি নিয়ে আসে এবং পরকালের যাত্রাকে সহজ করে দেয়।
৩. জান্নাতে প্রবেশের সময় ফেরেশতাদের অভ্যর্থনা: ‘সালামুন আলাইকুম’!..وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ
"...এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদের বলবে, "সালামুন আলাইকুম তিবতুম" (তোমাদের প্রতি শান্তি), তোমরা সুখী হও এবং স্থায়ীভাবে এখানে প্রবেশ করো" – সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩৯:৭৩
তাৎপর্য: এটি হলো চূড়ান্ত সাফল্যের মুহূর্তে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ সম্মান। দুনিয়ার সমস্ত পরীক্ষা শেষে জান্নাতের দরজায় ফেরেশতাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা "সালামুন আলাইকুম" একজন মুমিনের জন্য পরম পাওয়া। এই সালাম শুধু একটি স্বাগত সম্ভাষণ নয়, বরং এটি একটি ঘোষণা যে, এখন থেকে তার জীবনে আর কোনো দুঃখ, কষ্ট বা ভয় থাকবে না—কেবলই শান্তি আর শান্তি।
4. 'আ'রাফের অধিবাসী'-দের ‘সালামুন আলাইকুম’!
"আর তাদের (জান্নাতী ও জাহান্নামীদের) উভয়ের মাঝে থাকবে একটি পর্দা (হিজাব) এবং আ‘রাফে (উঁচু স্থানে) থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে, ‘সালামুন আলাইকুম’ । তারা (আ'রাফবাসীরা) তখনো সেখানে (জান্নাতে) প্রবেশ করেনি, কিন্তু তারা আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করে"- সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ৪৬।
5. জাহেলদেরকে ‘সালামুন আলাইকুম’!:
আর যখন তারা নিরর্থক কথা শুনে, তারা তা থেকে বিমুখ থাকে এবং তারা বলে, আমাদের কর্মসমূহ আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্মসমূহ তোমাদের জন্য। ‘সালামুন আলাইকুম’! (তোমাদের প্রতি সালাম)। আমরা মূর্খদেরকে অন্বেষণ করি না। সূরা আল ক্বাসাস ২৮:৫৫
・ 。゚☆: *.☽ .* :☆゚.
সালামের উত্তর:
সালামের উত্তর দেওয়ার নিয়ম: কেউ সালাম দিলে তাকে আরও উত্তমভাবে বা অন্তত সমপর্যায়ে তার উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
"আর যখন তোমাদেরকে কোনো সম্ভাষণ করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ করবে অথবা ওটাই প্রত্যুত্তর করবে।" – সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮৬
অতএব উত্তরে বলা যায়- সালামুন আলাইকুম (৬:৫৪)
অথবা
সালামুন আলাইকুম তিবতুম (৩৯:৭৩)
অথবা
সালামুন আলাইকুম তিবতুম মুবারাকাতান ত্বায়্যিবাহ!
অর্থ: আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আপনারা পবিত্র, বরকতময় ও উত্তম জীবন যাপন করুন!(৩৯:৭৩+২৪:৬১)।
・ 。゚☆: *.☽ .* :☆゚.
বিকৃত অভিবাদন:
সূরা আল-মুজাদালাহ (৫৮), আয়াত ৮:
আপনি কি তাদের দেখেননি, যাদের গোপন পরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা যা নিষিদ্ধ তা-ই আবার করে? তারা পাপ, সীমালঙ্ঘন এবং রাসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করে। আর যখন তারা আপনার কাছে আসে, তখন তারা আপনাকে এমনভাবে অভিবাদন জানায়, যেভাবে আল্লাহ আপনাকে অভিবাদন জানাননি .... সূরা আল-মুজাদালাহ (৫৮), আয়াত ৮।
তাহলে আল্লাহর শেখানো অভিবাদন কোনটি?
আল্লাহ তা'আলা যে অভিবাদন শিখিয়েছেন, তা হলো শান্তির দোয়া। যেমন:
আর যারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারা যখন তোমার কাছে আসে তখন তুমি বলো!
‘সালামুন আলাইকুম’। তোমাদের রব ‘অনুগ্রহকে’ তাঁর নিজের জন্য লিখে নিয়েছেন... আল-আনাম ৬:৫৪
সুতরাং, "আল্লাহ আপনাকে যেভাবে অভিবাদন জানাননি" বলতে সেই বিকৃত ও বিদ্বেষপূর্ণ অভিবাদনকে বোঝানো হয়েছে, যা বিকৃতি করে তারা উচ্চারণ করে বলা হতো।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
1. সঠিক অভিবাদন: মুসলিমদের অভিবাদন হলো "সালামুন আলাইকুম"। এটি শুধু একটি প্রথা নয়, বরং অন্যের জন্য শান্তি, রহমত ও বরকতের দোয়া।
2. কপটতা থেকে সতর্কতা: আল্লাহ অন্তরের খবর রাখেন। যারা বাইরে একরকম আর ভেতরে আরেকরকম আচরণ করে, তাদের ষড়যন্ত্র আল্লাহ প্রকাশ করে দেন।
3. বিদ্বেষের জবাবে প্রজ্ঞা: শত্রুর বিদ্বেষপূর্ণ কথার জবাবে উত্তেজিত না হয়ে ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সাথে উত্তর দেওয়া ।
4. আল্লাহর উপর আস্থা: মুনাফিকরা ভাবত, তাদের এই ধৃষ্টতার জন্য কেন তাৎক্ষণিক শাস্তি আসছে না। আল্লাহ তাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, দুনিয়াতে অবকাশ দিলেও পরকালে তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট।
সুতরাং, এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, আমাদের অভিবাদন হতে হবে আন্তরিক, শুভকামনাপূর্ণ এবং আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতিতে, কোনো প্রকার বিকৃতি বা বিদ্বেষ ছাড়া।
・ 。゚☆: *.☽ .* :☆゚.
ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম:
"অতঃপর যখন তোমরা কোনো ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম জানাবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বরকতময় ও পবিত্র অভিবাদন (মুবারাকাতান ত্বায়্যিবাহ!)। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পারো" -২৪:৬১
অজ্ঞদের এড়িয়ে চলতে ‘সালাম’:
কোরআন শিখিয়েছে যে, জাহিল বা অজ্ঞ ব্যক্তিরা যখন তর্ক করতে আসে, তখন তাদের সাথে বিবাদে না জড়িয়ে শান্তি কামনা করে ('সালাম' বলে) সেখান থেকে সরে আসা উত্তম।
"যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের (অশালীনভাবে) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, 'সালাম (শান্তি)'।" – সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩
৪. জান্নাতের ভাষা ও পরিবেশ: কেবলই ‘সালামান সালাম’
জান্নাত বা স্বর্গকে কোরআনে 'দারুস সালাম' বা 'শান্তির নীড়' বলা হয়েছে। জান্নাতের পরিবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিময়, যেখানে কোনো অপ্রয়োজনীয়, অশালীন বা দুঃখজনক কথা থাকবে না।
"তারা সেখানে কোনো অসার বা পাপবাক্য শুনবে না। কেবল শুনবে এক বাক্য— ‘সালামান সালাম’ । – সূরা আল-ওয়াকি'আহ, আয়াত: ২৫-২৬
রব্বির রহীমের পক্ষ থেকে সালাম- আয়াত ৩৬:৫৮ (৩৩:৪৪)
জান্নাতবাসীদের সালাম- আয়াত ১০:১০
ঐশী সম্মাননা (Divine Honor): আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘সালাম’
কোরআনে যখন আল্লাহ নিজে কারো প্রতি 'সালাম' প্রেরণ করেন, তার অর্থ সাধারণ অভিবাদন থেকে অনেক গভীর। এটি হলো:
ঐশী সম্মাননা (Divine Honor): আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ সম্মান।
নিরাপত্তার নিশ্চয়তা (Guarantee of Security): তাঁদেরকে পার্থিব বিপদ এবং পরকালীন শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখার ঘোষণা।
সন্তুষ্টির প্রকাশ (Expression of Pleasure): তাঁদের কাজ ও আনুগত্যের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ।
・ 。゚☆: *.☽ .* :☆゚.
আল-কোরআনে আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবী-রাসূল এবং নির্বাচিত বান্দাদের প্রতি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে সরাসরি 'সালাম' বা শান্তি প্রেরণ করেছেন। এই 'সালাম' তাঁদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি, নিরাপত্তা এবং ভালোবাসার এক ঐশী ঘোষণা।
➥ সালামুন আলা: নূহ (৩৭:৭৯), ইবরাহীম (৩৭:১০৯), মূসা ও হারুন (৩৭:১২০), ইলয়িাস (ইল-ইয়াসনি) (৩৭:১৩০), ঈসা (১৯:৩৩) এবং সকল রাসূলগণ (৩৭:১৮১)
➥ ইয়াহইয়া: সালামুন আলাইহে- (১৯:১৫) তাৎর্পয: এটি তাঁর জন্য জন্ম থকেে পুনরুত্থান র্পযন্ত র্সবাত্মক ঐশী নরিাপত্তার এক অনন্য ঘোষণা।
➥ সালামুন আলা ইববাহীমের পিতাকে বিদায়ী সালাম (Farewell Salam):
সালামুন আলাইকা (সূরা মারইয়াম, ১৯:৪৭)
・ 。゚☆: *.☽ .* :☆゚.
❖ মনোনীত বান্দাদের প্রতি "সালাম":
قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسَلَامٌ عَلَىٰ عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفَىٰ ۗ آللَّهُ خَيْرٌ أَمَّا يُشْرِكُونَ
সালা-মুন 'আলা- 'ইবা-দিহিল্লাযী নাসত্বফা: আল্লাহর সকল মনোনীত বান্দাদের প্রতি সালাম
(এবং শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর সেই বান্দাদের প্রতি যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন)-আয়াত: ২৭:৫৯
❖ অভিবাদন বা সম্ভাষণ হিসেবে "সালাম"
এটি সালামের সবচেয়ে পরিচিত ব্যবহার। কোরআনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এই অভিবাদনের উল্লেখ রয়েছে:
ফেরেশতাদের সম্ভাষণ: ফেরেশতারা নবী-রাসূল এবং পুণ্যবান বান্দাদের "সালাম" দিয়ে সম্ভাষণ করেছেন।
যেমন, ইব্রাহিম (আঃ)-এর কাছে ফেরেশতারা এসে বলেছিলেন: "তারা বলল, ‘সালাম’। তিনিও বললেন, ‘সালাম’।" (৫১:২৫)
জান্নাতিদের সম্ভাষণ: জান্নাতে প্রবেশের সময় এবং জান্নাতের ভেতরে একে অপরকে "সালাম" বলে স্বাগত জানানো হবে। এটি হবে জান্নাতের ভাষা।
"তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’ (শান্তি)।" (সূরা ইব্রাহিম, ১৪:২৩)
"সেখানে তারা ‘সালাম’, ‘সালাম’ ধ্বনি ব্যতীত কোনো অসার বাক্য শুনবে না।" (সূরা আল-ওয়াকিয়াহ, ৫৬:২৫-২৬)
মুমিনদের পারস্পরিক সম্ভাষণ: আল্লাহ মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা ঘরে প্রবেশের সময় এবং একে অপরের সাথে সাক্ষাতের সময় সালাম বিনিময় করে।
"সুতরাং তোমরা যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম জানাবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।" (সূরা আন-নূর, ২৪:৬১)
❖ আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হিসেবে "আস-সালাম"
আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর (আসমাউল হুসনা) মধ্যে একটি হলো "আস-সালাম" (السلام), যার অর্থ শান্তিদাতা, শান্তির উৎস, বা যিনি নিজে যাবতীয় ত্রুটি থেকে মুক্ত ও শান্তিময়।
"তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, মহাপবিত্র, শান্তিদাতা (আস-সালাম), নিরাপত্তাবিধানকারী, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল এবং অতীব মহিমান্বিত।" (৫৯:২৩)
এই নামের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, পৃথিবীর যাবতীয় শান্তি ও নিরাপত্তা একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। তিনিই সকল অশান্তি ও ত্রুটি থেকে মুক্ত।
❖ জান্নাতের নাম বা বর্ণনা হিসেবে "সালাম"
জান্নাতকে "দারুস সালাম" (دار السلام) বা "শান্তির নীড়" বলা হয়েছে। কারণ সেখানে কোনো অশান্তি, হিংসা, বিদ্বেষ, ভয় বা দুঃখ থাকবে না। থাকবে কেবল অফুরন্ত শান্তি।
"আল্লাহ শান্তির আবাসের (দারুস সালাম) দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।" (সূরা ইউনুস, ১০:২৫)
❖ একটি অবস্থা বা গুণ হিসেবে "সালাম"
"সালাম" শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি অবস্থা বা গুণ। যেমন, মহিমান্বিত কদরের রাতকে "সালাম" বা শান্তিময় বলা হয়েছে।
"শান্তিই শান্তি (সালামুন হিয়া), তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।" (সূরা আল-কদর, ৯৭:৫)
এর অর্থ হলো, এই রাতটি যাবতীয় অকল্যাণ থেকে মুক্ত এবং কেবলই শান্তি ও বরকতময়।
❖ অজ্ঞদের উপেক্ষা করার পদ্ধতি হিসেবে "সালাম"
কোরআন শিক্ষা দেয় যে, অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা যখন তর্কে লিপ্ত হতে চায়, তখন তাদের সাথে বিবাদে না জড়িয়ে "সালাম" বলে সরে আসা উচিত। এখানে "সালাম" অর্থ বিদায়ী সম্ভাষণ বা শান্তি কামনা করে আলোচনা শেষ করা।
"রহমানের বান্দা তো তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’।" (সূরা আল-ফুরকান, ২৫:৬৩)
❖ হিদায়েত অনুসারীদের প্রতি সালাম:
وَالسَّلَامُ عَلَىٰ مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَىٰ
ওয়াস-সালা-মু 'আলা- মানিত-তাবা'আল হুদা-
"এবং শান্তি তার উপর, যে হেদায়েত (আল্লাহর পথ নির্দেশ) অনুসরণ করে।" সূরা ত্ব-হা, আয়াত: 20:৪৭
এই বাক্যটি সালামুন আলা মূসা এবং সালামুন আলা হারুন যখন ফেরাউনের দরবারে যান, তখন তাঁদের বক্তব্যের শেষ অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এখানে কেন "সালামুন আলাইকুম" বলা হলো না?
এটিই এই বাক্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১. সম্বোধনের প্রকৃতি: "সালামুন আলাইকুম" হলো একটি সরাসরি দোয়া বা অভিবাদন, যা আয়াতে বিশ^াসী মুসলিম/ মুমিনদের মধ্যে বিনিময় করা হয়। এটি যাকে বলা হচ্ছে, তার জন্য কল্যাণ কামনা করা।
২. ফেরাউনের অবস্থান: ফেরাউন ছিল একজন কাফির, অত্যাচারী, সীমালঙ্ঘনকারী এবং নিজেকে প্রভু দাবিদার। এমন একজন বিদ্রোহীকে সরাসরি শান্তির দোয়া করা বা তার জন্য কল্যাণ কামনা করা সঙ্গত ছিল না। কারণ সে শান্তির পথে ছিল না, বরং অশান্তি ও জুলুমের প্রতীক ছিল।
৩. এটি একটি নীতিগত ঘোষণা, অভিবাদন নয়: "ওয়াসসালামু 'আলা মানিত্তাবা'আল হুদা" কোনো ব্যক্তিগত সম্ভাষণ নয়। এটি একটি শর্তযুক্ত নীতিগত ঘোষণা (Conditional Declaration of Principle)। এর মাধ্যমে মূসা (সা.আ.) বলছেন:
* শান্তি কোনো সস্তা জিনিস নয় যে, যে কাউকে দিয়ে দেওয়া হবে।
* প্রকৃত শান্তি পাওয়ার একটিই শর্ত—আর তা হলো আল্লাহর দেখানো হেদায়েতকে অনুসরণ করা।
এই ঘোষণার অন্তর্নিহিত বার্তা
এই একটি বাক্যের মাধ্যমে ফেরাউনকে দুটি বার্তা একসাথে দেওয়া হয়েছে:
একটি আমন্ত্রণ (Invitation): তাকে পরোক্ষভাবে বলা হচ্ছে, "হে ফেরাউন, শান্তি পাওয়ার দরজা তোমার জন্যও খোলা আছে। যদি তুমি অহংকার ত্যাগ করে আমাদের আনা এই হেদায়েত গ্রহণ করো, তাহলে তুমিও এই শান্তির অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।"
একটি সতর্কবাণী (Warning): তাকে এটাও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, "কিন্তু যদি তুমি এই হেদায়েতকে প্রত্যাখ্যান করো, তাহলে তুমি শান্তির বাইরে থাকবে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে আল্লাহর আযাব ও ধ্বংস।"
উপসংহার
কেবলমাত্র আল-কোরআনের আয়াতগুলোর দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট হয় যে, 'সালাম' কোনো সাধারণ সম্ভাষণ নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। এটি আল্লাহর গুণ, তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত নিরাপত্তা, ফেরেশতাদের পবিত্র সম্ভাষণ, সামাজিক সম্প্রীতির মাধ্যম, সংঘাত এড়িয়ে চলার উপায় এবং জান্নাতের চিরন্তন ভাষা।
সুতরাং, যখন একজন মুসলিম আরেকজনকে বলে "সালামুন আলাইকুম" (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক), তখন সে আল্লাহর একটি সরাসরি নির্দেশ পালন করে, আল্লাহর রহমত কামনা করে এবং একটি শান্তিময় পরিবেশ তৈরির ঐশী বিধানের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করে। কোরআনের দৃষ্টিতে 'সালাম' হলো এমন এক শক্তিশালী ঐশী বিধান, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং পরকালীন জীবনেও শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
..ওয়াল্লাহু ইয়া'লামু ওয়া আন্তুম লা তা'লামুন
"...আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।" (আয়াত ২:২১৬, ২:২৩১, ৩:৬৬)
"সদাকাল্লাহু ওয়া রাসূলুহ" (আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছেন’) সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২২
আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন!
Cp:
ভাবনা-অনুধাবন: সংগ্রহ, সংকলন ও বিন্যাস - মতিউর রহমান খান