06/18/2024
#কবির_প্রতি_বিনম্র_শ্রদ্ধা
মারা গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি #অসীম_সাহা। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি জানান, মাঝখানে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অসীম সাহা মোটামুটি সুস্থই ছিলেন। অল্প কয়েকদিন আগেই আমার সঙ্গে দেখা হয়। আজ শুনি তিনি আর নেই।
চলতি বছরের শুরুর দিকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন কবি অসীম সাহা। চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, বিষণ্ণতায় ভুগছেন কবি। এছাড়া পারকিনসন (হাত কাঁপা রোগ), কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিস রোগেও ভুগছিলেন তিনি।
কবি অসীম সাহার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। পিতৃপুরুষের ভিটে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার তেওতা গ্রাম হলেও দার্শনিক পিতা অখিল বন্ধু সাহার কলেজের চাকরি-সূত্রে ১৯৪৮ সাল থেকে মাদারীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস। ১৯৬৫-তে মাধ্যমিক পাশ করার পর মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭-তে উচ্চমাধ্যমিক, ১৯৬৯-এ স্নাতক পাশ করে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি। ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা হবার কথা থাকলেও অসহযোগ আন্দোলন এবং পরে ২৬ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার ফলে সে-পরীক্ষা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
অসীম সাহার লেখালেখি জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে ঢাকার পত্রিকায় ছোটদের জন্য লেখালেখির মুদ্রণ শুরু। সেই থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতা, গান প্রভৃতি রচনায় সিদ্ধহস্ত কবি অসীম সাহা এখনও অব্যাহতভাবে লিখে চলেছেন। সাহিত্যের সকল বিষয়ে তুখোড় এই লেখক ঋদ্ধতায় বিশ্বাসী বলে অতিপ্রজ হওয়ার দিকে তাঁর মনোযোগ কম। তাই এত বছরেও তাঁর বইয়ের সংখ্যা মাত্র ৩০টি। এ-পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর উল্লখযোগ্য বইগুলোর কয়েকটি হচ্ছে : পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায় (১৯৮২), কালো পালকের নিচে (১৯৮৬), পুনরুদ্ধার (১৯৯২), উদ্বাস্তু (১৯৯৪), মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি (২০০১), অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব (২০০৬), মুহূর্তের কবিতা (২০০৬), Refujee and the festval of death in darkness (2010, সৌর-রামায়ণ (২০১১), অক্টাভিও পাস ও ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা (অনুবাদ) (২০১১), কবর খুঁড়ছে ইমাম (২০১১), প্রেমপদাবলি (২০১১), পুরনো দিনের ঘাসফুল (২০১২) (কবিতা)। প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা (১৯৭৬), অগ্নিপুরুষ ডিরোজিও (১৯৯০), উদাসীন দিন (উপন্যাস) (১৯৯২), শ্মশানঘাটের মাটি গল্প) (১৯৯৫), কিলের চোটে কাঁঠাল পাকে (২০০২), শেয়ালের ডিগবাজি (২০০৭), হেনরি ডিরোজিও (২০১০) প্রভৃতি।
ষাটের দশকের কবিদের অন্যতম প্রধান এ-পর্যন্ত আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩), ময়মনসিংহ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফোরাম সম্মাননা (২০০৯), সাতক্ষীরা জাতীয় কবিতা পরিষদ কবিসম্মাননা (২০১০), কবিতাবাংলা কবিসম্মাননা (২০১০), বিন্দুবিসর্গ কবিসম্মাননা (২০১১), শৃন্বন্তু কবিসম্মাননা (কোলকাতা) (২০১১), দিকচিহ্ন কবিসম্মাননা (২০১১), কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর কবিসম্মাননা (২০১১) এবং কবিতায় সামগ্রিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (২০১১), শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার (২০১২) এবং কবিতালাপ পুরস্কার (২০১২) ও ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক (২০১৯) লাভ করেছেন।
উল্লেখ্য, কবি অসীম সাহা একজন তরুণ লেখক হিসেবে আমাকে খুব পছন্দ করতেন। আমার একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন তিনি। আমিও তাকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখেছি। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইল।