05/28/2025
সম্প্রতি গুলতেকিন খানের একটি লেখার মাধ্যমে তার জীবনের এক বেদনাদায়ক অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারলাম—নবজাত সন্তান হারানোর দুঃখ, যা একজন নারীর হৃদয় ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। গুলতেকিন খানকে আমি গভীর শ্রদ্ধা করি। কারণ তিনি কেবল একজন গুণী লেখকের স্ত্রী নন, একজন সংগ্রামী নারী, একজন মা এবং একজন আত্মমর্যাদাশীল মানুষ হিসেবে নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছেন।
তাঁর জীবনের কিছু বাস্তবতা এতটা নির্মম, যা ভেবে আজও শিউরে উঠতে হয়। কিশোরী বয়সে তিনি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন একজন মধ্যবিত্ত লেখককে—যিনি বয়সে অনেক বড়। প্রেমে অন্ধ বিশ্বাস, নিঃস্বার্থ স্নেহ ও অগাধ ভরসা নিয়ে শুরু করেছিলেন দাম্পত্য জীবন। কিন্তু সেই জীবন পরিণত হয় একতরফা আত্মত্যাগের নীরব কাহিনিতে।
একজন পুরুষ, যিনি স্ত্রীকে পরীক্ষার ঠিক আগে বিদেশে নিয়ে যান, যিনি একের পর এক সন্তান ধারণে স্ত্রীর কষ্টকে উপেক্ষা করেন, যিনি সংসারের সব দায়িত্ব স্ত্রীকে চাপিয়ে দিয়ে নিজে কেবল নিজের আরাম আর প্রতিভার যত্ন নেন—তাঁকে কি সত্যি ভালোবাসা প্রয়োজন?
গুলতেকিন হয়তো ভেবেছিলেন, ভালোবাসা মানেই নিঃস্বার্থ হওয়া, মানিয়ে চলা, নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। কিন্তু সময় প্রমাণ করেছে, একতরফা ভালোবাসার শেষে শুধু থাকে অপূর্ণতা, অভিমান আর দুঃখের ভার।
নারীরা খুব সহজেই "তুমি আগে", "তোমার জন্য" ভাবনায় নিজেদের হারিয়ে ফেলে। সন্তান, স্বামী, পরিবার—সবার জন্য নিঃশেষ হয়ে দিতে দিতে নিজেকে ভুলে যায়। অথচ, নিজের স্বপ্ন, নিজের পরিচয়, নিজের ভালোবাসাও তো সমান জরুরি।
গুলতেকিনের সবচেয়ে বড় বিজয় ছিল নিজের ভাঙাচোরা জীবন থেকে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলা। লেখক যখন তাকে ছেড়ে যান, তিনি ভেঙে পড়েননি। তার মতো গৌরবময় প্রস্থান আর আত্মসম্মানবোধ সত্যিই অনন্য। তিনি প্রমাণ করেছেন, আত্মমর্যাদা কখনও হারায় না—শুধু হয়তো সময় চায় মাথা তুলে দাঁড়াতে।
এই ঘটনা আমাদের একটা বার্তা দেয়—⁉️
কাউকে এতটা ভালোবাসবেন না যে নিজের অস্তিত্বটাই মুছে যায়।
ভালোবাসুন, নিঃস্বার্থ হোন, কিন্তু নিজেকে হারাবেন না। সংসার, সম্পর্ক, সন্তান—সবকিছুই দরকার, কিন্তু নিজের প্রতিভা, নিজের আত্মশক্তি আর নিজের পরিচয় তার চেয়ে কম নয়।
প্রত্যেক নারীর উচিত, গুলতেকিনের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনের প্রধান চরিত্র হয়ে ওঠা। আর সেই শিক্ষা হলো—ভালোবাসুন, ত্যাগ করুন, কিন্তু নিজেকে ভুলে নয়।
শ্রদ্ধা গুলতেকিন খানকে, আর ভালোবাসা সব নারীকে যারা বেঁচে থাকেন নিজেদের হারিয়ে।