10/08/2025
মাইয়্যাত কবরে রেখে তালক্বীন করা সুন্নাত।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে:
যখন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কবরে তালক্বীন দেওয়া হয় তখন মুনকার ও নকীর ফেরেশতাদ্বয় পরস্পর পরস্পরের হাতে ধরে বলেন যে, তাকে প্রশ্ন করে কি হবে, তাকে তো সব শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলো আমরা চলে যাই। অর্থাৎ তালক্বীনের কারণে সে সওয়াল-জাওয়াব থেকে নাযাত পায় অথবা তার জবাব দিতে সহায়ক হয়। (সুবহানাল্লাহ্)।
(দলীলসমূহঃ- ত্বাষ্কানী মুজামুল কবীর, বুলুগুল মারাম, ফিকাহুস সুনান, কবীরি, নূরুচ্ছুদুর, আরকানে আরবায়া, ফতওয়ায়ে রশিদীয়া, ইত্যাদি।)
তালক্বীনের ব্যাপারে পবিত্র হাদীস শরীফে প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
اذ مات احدکم من اخوانکم فسویتم التراب علی قبرہ فلیقم احدکم علی رأس قبرہٖ ثم لیقل یا فلان بن فلانۃ فانہ یسمعہ ثم یقول یا فلان بن فلانۃ فانہ یستوی قاعدًا ثم یقول یا فلان بن فلانۃ فانہ یقول ارشدنا یرحمک اللہ ولکن لاتشعرون فلیقل اذکر ما خرجت علیہ من الدنیا شھادۃ ان لّا الٰہ الا اللہ وان محمدًا عبدہٗ ورسولہٗ وانک رضیت باللّٰہ ربًا وّبالاسلام دینًا وّبمحمّدٍ نبیًا وّبالقراٰن اماما فان منکرا و نکیرًا یأخذ کل واحد منھما بیدصاحبہ ویقول انطلق بنا ماقعدنا عند من لقن حجتہ۔ وقال رجل یارسول اللہ فان لم یعرف امہ قال فینسبہ الی امہ حواء یقول یا فلان بن حوٓاء (رواہ الطّبرانی)
অর্থাৎ- তোমাদের কোন মুসলমান ভাই ইন্তেকাল করলে তাকে কবরস্থ করে উপরে মাটি ঠিকঠাক করে দিয়ে তোমাদের কেউ যেন তার শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে এভাবে আহবান করে বলে, হে অমুকের সন্তান অমুক! তখন মৃত লোকটি ঐ আওয়াজ শুনতে পাবে। একই ভাবে দ্বিতীয়বার ডাক দিবে তখন সে সোজা হয়ে বসবে। তারপর আবার ডাক দিলে সে কবরের ভিতর থেকে বলবে আমাকে কিছু উপদেশ দিন; আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে রহম করুন। নবীজি এরশাদ করেন- যদিও তোমরা সে আওয়াজ শুনতে পারবে না। অতঃপর শিয়রের কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তি যেন বলে- তুমি দুনিয়া হতে যে কালেমায়ে শাহাদাত নিয়ে বিদায় নিয়েছ তা স্মরণ করো। আর স্মরণ করো এ কথা যে, আমি রব হিসেবে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামের উপরে রাজি; নবী হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সন্তুষ্ট এবং পথ প্রদর্শক হিসেবে পবিত্র কুরআনের উপর সন্তুষ্ট।
নবীজি এরশাদ করেন- তালক্বীনের পর মুনকার-নাকীর ফেরেশ্তাদ্বয় বলাবলি করে চলো যাই। যাকে নাজাতের দলিল শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার কাছে বসে থেকে লাভ নেই। জনৈক সাহাবী আরজ করলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যদি মৃত ব্যক্তির মায়ের নাম জানা না থাকে তবে, কার পুত্র বলবো? হুজূর বললেন- সকলের মা হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামার দিকেই সম্পর্ক করে বলবে হে হাওয়ার পুত্র অমুক! -[তাবরানী]
সুতরাং, দাফনের পর যিয়ারত করবে আর যিয়ারতের পর একজন পরহেজগার আলেমে দ্বীন উপরোক্ত নিয়মে কবর তালক্বীন করবেন। এটা মুস্তাহাব ও পূণ্যময়।
[শারহুস্ সুদূর, কৃত: ইমাম সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও রদ্দুল মুহতার, কৃত: ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি]
উল্লেখ্য থাকে যে, উপরোক্ত নিয়ম ছাড়া ফিকহ ফতোয়ার কিতাবে তালক্বীন করার সময় অন্য ইবারত দিয়েও তালক্বীনের নিয়মসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং উক্ত নিয়ম সমূহের যে কোন নিয়মেও তালক্বীন করা যাবে। [বাহারে শরিয়ত]।