04/17/2025
মেশিনের বাতাস পায়ুপথে ঢুকিয়ে শিশু শ্রমিক কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকদের হত্যা-কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা নয়, এটি ঠান্ডা মাথার নিষ্ঠুর খেলা, বর্বরতা এবং বিকৃত আনন্দের পৈশাচিক চর্চা।
১৫ এপ্রিল, ২০২৫-রাজধানীর মিরপুরের বাউনিয়াবাদ এলাকায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে আবু বক্কর নামক এক শিশুকে হত্যা করে মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ের দোকানের কর্মচারীরা।
এই প্রথম নয়। এর আগে, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ সালে বগুড়ার কাহালু উপজেলায় একটি পাটকল কারখানায় হাওয়া যন্ত্রের (কমপ্রেসর) সাহায্যে পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে ১২ বছর বয়সী মো. আলাল নামক এক শিশুশ্রমিককে হত্যা করা হয়।
৩ আগস্ট ২০১৫-খুলনায় মোটরসাইকেলের চাকায় হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসর মেশিনের নল পায়ুপথে ঢুকিয়ে শিশুশ্রমিক রাকিবকে (১২) হত্যা করা হয়। তবে ২০১৭ তে, রাকিব হত্যা করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামি মো. শরীফ ও মিন্টুর দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পূর্ণ রায় প্রকাশ করে আদালত।
২৫ জুলাই ২০২৬-বন্দরনগর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি সুতা তৈরির কারখানায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে কারখানার কর্মীরা সাগর বর্মণ (১০) নামের এক শিশুকে হত্যা করা হয়।
২৪ মে, ২০১৭-লক্ষ্মীপুরে ১২ বছরের শিশু শ্রমিক মিলন হোসেনকে, মটর সাইকেলে হাওয়া দেওয়ার কমপ্রেসর মেশিন দিয়ে পায়ু পথে, তার পেটে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, শিশু শ্রমিক মিলনের পেটে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়ায় পেটের নাড়ি ভুঁড়ি ছিঁড়ে যাওয়া ও ফুসফুস ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। এরপরের ঘটনা অজানা।
৯ ডিসেম্বর, ২০১৮-আড়াইহাজারে পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে আজহারুল ইসলাম সুমন (২৮) নামে এক শ্রমিককে হত্যা করেছে তার সহকর্মীরা।
এপ্রিল ২, ২০২২-গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার অপু দেওয়ান নামক ১৪ বছর বয়সী এক শিশু শ্রমিককে পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযোগে রাজু নামক (১৫) একজনকে আটক করে পুলিশ।
শিশুশ্রমের মূলে রয়েছে দারিদ্রতা। দারিদ্র্যই শিশুদের স্কুলের পরিবর্তে কারখানা বা গ্যারেজে পাঠায়। খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয়,এই মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব পরিবারগুলোকে বাধ্য করে শিশুদের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে। ফলে, অল্প বয়সেই শিশুরা এমন স্থানে কাজ করতে বাধ্য হয়, যেখানে নিরাপত্তা, সম্মান বা ন্যূনতম মানবাধিকার নেই।
এই বর্বর আচরণের পিছনে অপরাধীদের মধ্যেও রয়েছে শিক্ষার অভাব। সহানুভূতি, মানবিকতা, সহনশীলতা—এইসব গুণ শিক্ষা থেকে আসে। কিন্তু যারা নিজেরাও বড় হয়েছে সহিংস পরিবেশে, কোনো ধরনের নৈতিক শিক্ষা ছাড়াই, তাদের কাছে সহকর্মী শিশু শ্রমিকও কেবল "মজা" করার একটি যন্ত্র। শিশুরা যখন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তারা কেবল নির্যাতনের শিকারই হয় না, বড় হয়ে তারাই অন্যদের নির্যাতন করে। এ যেন এক নিষ্ঠুর চক্র।
এই বর্বরতা যখন বারবার ঘটে, তখন এটি আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকে না; এটি আমাদের সমাজের বিবেকের বিপর্যয়কে স্পষ্ট করে। কেন এই হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি? কেন এত নিষ্ঠুরতার পরও কোনো জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে উঠছে না?
আমার এই প্রতিবাদ শুধু হত্যার বিরুদ্ধে নয়, এটি একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার বিরুদ্ধে, যে ব্যর্থতা শিশুদের হাতে-কলমে কাজ শিখতে পাঠায়, কিন্তু জীবন বাঁচাতে পারে না।