Bhorer Abdar

Bhorer Abdar Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Bhorer Abdar, Magazine, Sacramento, CA.

06/10/2021

আলো


রোজকার অভ্যাসের মত মোহনা এ সময় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ওই দূরের তিনকোণিয়া পার্কের মাঝে পুকুরের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। নিস্তব্ধ পার্কে হাওয়ায় পাতা দোলা শব্দ ছাড়া হয়তো দু একটা কুকুর ঘেউ করে ডেকে ওঠে মাঝে মধ্যে। মধ্য গগনে স্টিলের থালার মত উজ্বল পূর্ণ চাঁদমামা তার রূপালী আলোর ঘোমটায় ঢেকে রাখে চারপাশের প্রকৃতি। সন্ধ্যেকে সরিয়ে রাত্রি নামে। ঘনত্ব বাড়ে রূপালী আলোর। মোহনার ভালো লাগে এই আলোর স্নিগ্ধতা। এসময় বিট্টু ঘুমিয়ে পড়ে। মোহনার ছোট ছেলে। আর বড় মেয়ে দিশা ডাইনিং রুমে মোবাইলে গেমস খেলে। গতবছর তথা এবছর লকডাউন এর জন্য অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। স্কুলের ঝুট-ঝামেলা থেকে একটু নিশ্চিন্ত মোহনা। অমরেশ বাড়ি ফেরে একটু রাত করে। এখন রোজ অফিস যেতে হয় না। সপ্তাহে তিন দিন। অল্প সময়ে অফিস বলে কাজের চাপটাও বেশি। সহকর্মীরাও রোজ আসে না। পার্সোনাল গাড়ি থাকার জন্য দু’জনকে ড্রপ করে বাড়ি ফিরতে একটু রাতই হয় অমরেশের। এই ফাঁকতালে মোহনা পুকুরের জলে চাঁদ আর মেঘের আলোছায়ার লুকোচুরিতে মজে থাকে।
মান্ধাতার আমলের টেলিফোন বাজার মতো ক্রিংক্রিং মোবাইলটা বেজে ওঠে। অমরেশ ফিরেছে। অতিথি বা বন্ধুদের মতো কলিং বেল বাজিয়ে ফ্ল্যাটে ঢোকা অমরেশ পছন্দ করে না। মোহনা তার শ্বাশুড়ী মাকেও দেখেছে এই অভ্যেস পালন করতে। ফ্ল্যাট বাড়িতে এমনিতেই একটু চোখাচোখি চলে। জুতোর সেলফিটা যদি এক ইঞ্চি সরে যায় তবে পাশের জন্য হাইকোর্ট দেখাতে ছাড়ে না।
বিদিশা গেমস খেলতে খেলতে আড়চোখে অমরেশের জুতোর দিকে তাকায়। কালো বুটের উপর ছিটছিট কাদা লেগে। মোবাইলটা পস করে অমরেশের দিকে তাকিয়ে বলে, “পাপা তোমার জুতোয় কাদা লেগে বৃষ্টি হয়েছিল” অমরেশ ক্লান্তভাবে হেসে বলে, “অনুসূয়া আন্টির বাড়ির সামনে কাদা জমেছিল ভুল করে পা দিয়ে ফেলেছিলাম” “ওফ পাপা তুমি একটু সাবধানে হাঁটতেও পারো না”। কিচেন থেকে মোহনা মেয়ের জ্যাঠামো শুনে বলে, “বাবা অফিস থেকে ফিরেছে এখন বিরক্ত করো না তুমি খেতে এসো”। বিদিশা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মোবাইলটা সোফার ওপর রেখে উঠে যায়।
অমরেশ একদৃষ্টে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে মেল টাইপ করছিল। মোহনা চশমাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “প্লাস আছে এবার মাইনাস পাওয়ার হবে ডাক্তারবাবু লাইট জ্বেলে ল্যাপটপে কাজ করতে বলেছেন বয়সটাও পঁয়তাল্লিশ পেরিয়েছে”। টাইপ করতে করতে অমরেশ বলল, “বাদ দাও ডাক্তাররাই আঙুলের ডগায় সিগারেট গুঁজে জ্ঞান দেয় সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয় আফটার অল আমাদের শরীর অসুস্থ না হলে ওদের চলবে কি করে”। মোহনা অমরেশ এর পাশে বসে বলে, “আর কতক্ষণ”। “প্লিজ মাই ডিয়ার আরেকটু আজ মিস্টার লাখোটিয়া কে রিপোর্টটা পাঠাতে হবে তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি আসছি”। মোহনা মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে পেল্লাই একটা হাই তুলে বললো, “দূর তোমাকে আমার জানা আছে সবে তন্দ্রা আসবে আর তুমি ঘরে ঢুকে লাইট জ্বেলে সিগারেট ধরিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেবে”। অমরেশ একটু জোরে হেসে ওঠে। মোহনা অমরেশের মুখে হাত চাপা দিয়ে বলে, “আস্তে বিট্টু উঠে পরবে তখন আরেক বিপদ বারবে”। অমরেশ মোহনার কাঁধে হাত রেখে বলে, “আজ মনে হচ্ছে ম্যাডাম পুরো মুডে আছে” “দুর খালি বাজে কথা”। মোহনা উঠে গিয়ে এক ঢোক জল খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকায় রাত্রি সাড়ে বারোটা। অমরেশ খুব মনোযোগ দিয়ে মেলের শেষ কটা লাইন চেক করল। তারপর মেলটা সেন্ড করে দিয়ে মোহনাকে বলল, “মোহ তোমাকে তো একটা গুড নিউজ দেওয়াই হয়নি”। মোহনা একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “কাল সকালে বলোনা খুব ঘুম পাচ্ছে”। অমরেশও ছাড়ার পাত্র নয় “প্লিজ একটু বসি না কাল তো অফিস নেই, দিশাও স্কুল যাবে না, গল্পটা কি ভালো জমেছে তুমি খিচুড়ি পাকিয়ে দিচ্ছো”। মোহনা দেখল আর কোন উপায় নেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, “বল” “রবিবার অনুসূয়া আর মিষ্টার সান্যাল একটা পার্টি থ্রো করেছে, অনলি কাপেল”। মোহনা চমকে উঠে বলল, “এই লকডাউনে পার্টি”। অমরেশ মোহনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আরে বাবা বিশাল একটা কিছু নয় মাত্র চল্লিশ জন, নো ককটেল, জাস্ট একটা গেট টুগেদার, আরেকটু ডান্স গতবার ওদের অ্যানিভার্সারির খাওয়া-দাওয়া বাকি ছিল না সস্তায় সেরে দিচ্ছে”। মোহনা বলল, “দিশা আর বিট্টু কাদের কাছে থাকবে”। এবার পেল্লাই একটা হাই তুলে বলল অমরেশ, “ফাস্ট ফ্লোরে টম আঙ্কেলের কাছে রেখে যাব সন্ধ্যেবেলা মাত্র তিন ঘন্টার তো ব্যাপার”। বাধা দিয়ে মোহনা বলল, “না না উনি বয়স্ক মানুষ আমি মাকে আসতে বলি তুমি শনিবার গিয়ে মাকে নিয়ে এসো”।এ প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া ছাড়া অমরেশ আর কিছু খুঁজে পেল না।
অনুসূয়া কোল্ড্রিংসের গ্লাসটা হাতে নিয়ে মোহনার সামনে এসে বলল, “মোহ তুমি একা একা বসে বোর হচ্ছ কেন, কাম অ্যান্ড জয়েন উইথ আস, লেটস ইঞ্জয়, কেউ আছে মিউজিক টা একটু জোরে দাও”। অনুসূয়া মোহনাকে হাত ধরে টানতে টানতে ছাদের মাঝখানে নিয়ে এসে কোমর দুলিয়ে নাচতে আরম্ভ করল। মোহনা এসবে খুব একটা অভ্যস্ত নয়। সে ছোটবেলায় কোনদিনই ব্যাকরণ মেনে নাচ শেখেনি। মোহনার বেতালা নাচের ধরন দেখে দূর থেকে অমরেশ ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসছিল। অমরেশের এসব অভ্যাস আছে। সে প্রায়ই এরকম গেট টুগেদার পার্টিতে এ্যাটেণ্ড করে। এগুলো কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে স্টেটাস মেন্টেনের একটা অঙ্গ। ধীরে ধীরে সময় একটু গড়াতেই পার্টির আমেজ গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো। খোলা আকাশের নিচে অনুসূয়াদের ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদ নিয়ন আলোয় গমগম করতে লাগলো। একবার করে মিউজিক চেঞ্জ হচ্ছে আর নাচের বহর বদলাচ্ছে। মিস্টার সান্যাল অমরেশ কে বলল, “আমি অনুসূয়াকে বলেছিলাম একটু ওয়াইন রাখতে এসব গেট টুগেদারে এক সিপ না নিলে ঠিক আমেজ আসে না” “আপনি ঠিকই বলেছেন মিস্টার সান্যাল তবে এই সিচুয়েশনে না নেওয়াই ভালো এক্ সিপ কখন এক বোতল চেঞ্জ হয়ে যাবে কেউ বলতে পারবে না” “ও তবে আপনিও ইনডাইরেক্টলি অনুসূয়ার দলে”। বলে দুজনে হা হা করে হেসে উঠল। কিছুক্ষণ পর মিসেস ত্রিপাঠী এসে হাজির হল বড্ড ঢলানি মেয়ে। সবসময় ওভার রিয়েক্ট করে। মুখভর্তি মেকআপ করে খুকি সেজে আসে। এদিকে বয়স ঘড়ির পেন্ডুলামের মত চোখের কোলে ঝুলে রয়েছে। অনেক দিন আগে এনাকে লক্ষ্য করেছিল মোহনা। নাচতে নাচতে বারবার ঢলে পড়ছিল অমরেশের গায়ে। এমনকি এক প্যাক মদ ফেলে দিয়েছিল জামার ওপর। সেই থেকে মুখটা ভালো করে মনে রেখেছে মোহনা।
আর মোহনার ভালো লাগছে না। বড় আনচান করছে মনটা। কতক্ষণে সে বাড়ি ফিরবে। কেউ যেন অপেক্ষা করে আছে তার জন্য। কেউ যেন ডাকছে তাকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের স্রোতের মতো বাড়ছে হৃদস্পন্দন। একবার চেয়ারে থেকে উঠছে একবার বসছে সে। একটা ফিস বাটারফ্লাই নিয়ে এক কামড় খেয়ে প্লেটে নামিয়ে রাখল মোহনা। বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে ওঠে মোহনার কপালে। বার দুয়েক টিসু পেপার দিয়ে মুখ মোছা মোহনা। এই বেগতিক অবস্থা দেখে একটা ওয়েটের মোহনাকে জিজ্ঞেস করল, “একটু জল খাবেন ম্যাডাম আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে”। মোহনা “না ঠিক আছে” বলে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। রজনী তখন উত্তাল। অমরেশ তখন পার্টিতে মশগুল এসময় ওকে বার করা সম্ভব নয়। আর কিছুতেই নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারছে না মোহনা। অমলেশের প্যান্টের পকেট থেকে গাড়ির চাবিটা ছিনিয়ে নিয়ে পার্কিং থেকে গাড়ি স্টার্ট করে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটল মোহনা। পিছনে অমরেশ চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছে “ওকে কেউ আটকান স্টীয়ারিং-এ ওর হাত সেট নয়”। ততক্ষণে মোহনা দু কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গেছে।
তিনকোনিয়া পার্কের মাঝে পুকুরের জলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদটা। পাতা দোলা হাওয়াও বইছে না আজ। সেও মনে হয় অপেক্ষা করে আছে কারো জন্য। মোহনা ব্যালকনির রেলিং ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিল। তারপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো দেওয়ালে। এতক্ষণে হৃদপিণ্ড গতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। শান্ত চোখে একফালি দৃষ্টিতে পুকুরের দিকে তাকাল মোহনা। অগোছালো চুলের কিছু অংশ কপালের ঘামে লেপ্টে। উপরের ঠোঁট কিঞ্চিত কাঁপছে মোহনার। শাড়ির আঁচলের খানিক অংশ মার্বেল স্পর্শ করে ঝুলে আছে। চাঁদের রূপালী আলোয় আপ্লুত মোহনার ব্যালকনি। অমরেশ বহুবার বহু সাজে দেখেছে মোহনাকে। কিন্তু এই মৃদু রূপালী আলোয় আপ্লুত মোহনার সৌন্দর্য কোনদিন দেখেনি অমরেশ। মোহনা অমরেশের হাতে হাত রাখে। অমরেশ বুকে টেনে জাপ্টে ধরে মোহনাকে। চোখ ভেজে দুজনের।

কৃষ্ণেন্দু সামন্ত
১০ই জুন ২০২১ ।।

05/06/2021

আমি প্রেমে পড়েছি

আমি প্রেমে পড়েছি,
স্বচ্ছ ভোরের নির্ভেজাল চকচকে শিশির বিন্দুটার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
আবছা কুয়াশার ওপারে ঘুমিয়ে থাকা শান্ত শহরটার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
নীল দিগন্তের অন্তহীন ক্যানভাসে বেপরোয়া মেঘটার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
সমুদ্রের ঢেউয়ে বয়ে আনা বাদামী রঙের ঝিনুকটার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
পাহাড়ের কোল ঘেঁসে উঠে আসা রক্তিম সূর্যটার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
বেলাশেষে শীতের আঙিনায় অপেক্ষারত বসন্তের।

আমি প্রেমে পড়েছি,
সন্ধ্যারতির সময় উলুধ্বনি মাখানো শঙ্খধ্বনির।
আমি প্রেমে পড়েছি,
কাশফুলের বন পেরিয়ে, ধানক্ষেতের আঁকাবাঁকা রাস্তায়
শহুরে কায়দায় সাইকেল চালানো ডানপিটে ছেলেটার।
আমি প্রেমে পড়েছি
বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা লাজুক চোখে
তাকানো না প্রেমে পড়া মেয়েটার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
কালবৈশাখীর পর আম্রমুকুলের বাতাস ভরা সৌরভের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
মোহনার বাঁকে মিলিয়ে যাওয়া নদীর সাথে উপনদীর খরস্রোতার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
মিষ্টির দোকানে ক্ষুধার্থ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অর্ধনগ্ন ছেলেটার।

আমি প্রেমে পড়েছি,
ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষির মধ্যে সৃষ্টি হওয়া নতুন সম্পর্কের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
জামরুল গাছের ডালে বাবুই পাখির বাসায় জোনাকির আলোর।
আমি প্রেমে পড়েছি,
সাঁঝবেলায় রবীন্দ্র-সংগীতের সুরে তাল মিলিয়ে কিশোরীর নৃত্যের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
দাপুটে ভালোবাসার কাছে নিরব নির্মোহ প্রেমিকের ধৈর্যের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
শৈশবে দাদুর পিঠে চড়ে টাট্টু ঘোড়া টাট্টু ঘোড়া খেলার।
আমি প্রেমে পড়েছি,
দীপাবলির রাতে ফুলঝুরি হাতে আতশবাজি প্রদর্শনের।

আমি প্রেমে পড়েছি,
মায়ের রান্না কলায়ের ডাল পোস্তর সাথে মুড়িঘন্টের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
হেডমাস্টার মশায়ের ভুল শুধরে দেওয়ার বেত্রাঘাতের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
কানামাছি খেলতে খেলতে বন্ধুর সাথে মনোমালিন্যের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
বিজয় দশমীর দিনে তোমাকে লুকিয়ে আলিঙ্গনের।
আমি প্রেমে পড়েছি,
ভালোবাসার গভীরে জেগে থাকা নিটোল অমরত্বের।


কৃষ্ণেন্দু সামন্ত
৭ই মে ২০২১

04/04/2021

বসন্ত উৎসব

আজি সোনালী প্রভাতে আনন্দে মাতোয়ারা
অলিতে-গলিতে, শহরে-গ্রামে রঙের ফোয়ারা।
লাল, সবুজ, হলুদ, গেরুয়া কত রঙে রং
বুড়ো-জোয়ান, কচি-কাচা রং মেখে সাজবে সং।
আকাশের কার্নিশে উঁকি দেয় রামধনু
অবগুণ্ঠনের মাঝে আবীরে রাঙা ফর্সা তনু।
রঙের আবরণে পরিচিত মুখ যেন ছদ্দবেশী
দমকা হাওয়ায় গাছের পাতাগুলো এলোকেশী।
প্রভেদ ভুলে ধনী-দরিদ্র বিতরনে ব্যস্ত মিষ্টান্ন
বসন্ত উৎসবে আজ দেবতাও বুঝি বড় প্রসন্ন।
আমি-তুমি, তুমি-আমি চলে রং নিয়ে লুকোচুরি
বাচ্চা ছেলেটা পিচকারী' হাতে করছে হুড়োহুড়ি।
শান্তিপুরি সাদা পাঞ্জাবিতে নানা রঙের আলপনা
মটকা ভাঙ্গার উত্তেজনা কি করা যায় কল্পনা।
ধোঁয়ার মতো ভাসছে আবীর আনন্দ কি যে মনে
হোলি হে, হোলি হে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।



কৃষ্ণেন্দু সামন্ত
৪ঠা এপ্রিল ২০২১

03/12/2021

দুই পক্ষ

তখন সেকেন্ড ইয়ার ম্যাথামেটিক্স ক্লসের পরেই টিফিন
সেদিন ক্যান্টিনে যায়নি খেতে ঘুগনি রুটি
আমি গতকাল অ্যাবসেন্টের লিখছি নোটস
আমার সঙ্গী কয়েকটা খালি বেঞ্চ আর
মাথার ওপর মরচে পড়া ধুলোমাখা চলন্ত পাখা।
কলেজের চটা ওঠা দেওয়ালে দুটো টিকটিকি
একটা আরশোলাকে করেছে ধাওয়া
ওকে ধরেই সারবে মধ্যাহ্নভোজন।
সামনের ব্ল্যাকবোর্ড অনিমেষদা
মানে অনিমেষে স্যার বুঝিয়েছেন কেমিস্ট্রির ফর্মুলা
কলেজে পড়ছি অনেকটা বড় হয়েছি
ইয়ার্কি ঠাট্টা স্যারকে দাদা বললে
মহাভারত কি আর অশুদ্ধ হবে। যাইহোক,
এই পঁচিশ মিনিটে নোট লেখা করতে হবে শেষ
হঠাৎ পেছন থেকে এসে “সুলেখা”
চোর-পুলিশ খেলা ধাপ্পা দেওয়ার মতো
আমার পিঠে ওর বুক দিয়ে চাপ দিয়ে
কানের কাছে ঠোঁট এনে বলল,
“কিরে কি করছিস,
আমি চিকেন চাউমিন বানিয়ে এনেছি খাবি”
জীবনে এই প্রথম অন্য স্বাদ
নিমেষের মধ্যে বাড়ল আমার রক্ত সঞ্চালন
হারিয়ে যাচ্ছি এক অন্তহীন প্রান্তে
কি যে অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না
যেন মাখনের মধ্যে গলে যাচ্ছে ছুঁচ
খাতার ওপর ঘসছি ফাউন্টেন পেনের নিব
মনের অন্দরমহলে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
বসন্ত উৎসবের গান।
কানের পর্দা লাল হচ্ছে আমার
মোবাইলের স্ক্রিনে নিজের চোখ দুটো বড় আবেগি
ইচ্ছে করছে সুলেখাকে বুকে জড়িয়ে আদর করি
দিল না একটু সময়
সামনে এসে দাঁড়ালো বসলো পাশে কাঁধে হাত রেখে
চোখে চোখ রাখলাম ওর
আমার বাঁধভাঙ ধৈর্যকে অতিক্রম করে যাচ্ছে
ওর চোখের কোন থেকে ভেসে আসা অপেক্ষার দৃষ্টি
হঠাত বলল, “হাতটা ধুয়ে আয়
আঙ্গুলের ডগায় তো কালি লেগে,
চামচ আমার কাছে একটাই আছে”
এরপর কয়েকটা বছর গেছে কেটে
কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেছে অনেক দিন।

অরিন্দম, “সেদিন চামচ আমার কাছে দুটো ছিল
আমি ইচ্ছে করে বলেছিলাম একটা”।
তুই তো বলতে পারতি আমায়
ওই এঁটো চামচে আমাকে খাইয়ে দেয়,
আমি জানি তুই আমাকে খুব ভালবাসতি,
শুধু তোর মুখে একবার শুনতে চেয়েছিলাম।
ক্লাসরুম তো ফাঁকা ছিল রে
যেমন আমার চোখে চোখ রেখে ছিলি
পারতি না আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে।
পারতি না হুগলি সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে
চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডাকতে।
পারতি না দিনের শেষে রক্তিম আলোয়
চিবুক তুলে আমায় প্রপোজ করতে।
পারতি না তোর হিয়ার অন্দরমহলে
এই কিশোরীর স্বপ্নগুলোকে সাজিয়ে রাখতে।
সে অপেক্ষায় আমিও দিন গুনেছি অনেক
তোরা ছেলেরা এত ভীতু কেন রে
শুধু চোখে চোখ রেখে বলবে ভালোবাসি তোমায়
তাতেও ঠোঁট কাপে
না হয় কণ্ঠস্বর কাঁপিয়ে বলতি।

জানিস, অরিন্দম বিয়ে করেছি নিজের অমতে
টেকো বর পয়সা প্রচুর
রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে দিন কাটছে
ঝি চাকর দের সাথে।
সবকিছু থেকেও যেন বড় অভাব ভালোবাসার
আমার তিনি ফেরেন কানারাতে
বেহুঁশ হয়ে ভর দিয়ে চাকরের কাঁধে
দুটো মনের কথা বলার উপায় নেই
সারা শরীরে, পোশাকে বিলিতি মদের গন্ধ
কোন প্রশ্নের উত্তরে খালি মাথা নেড়ে হ্যাঁ
টেরই পাই না কখন যে প্যারালাইসিস রোগীর মত
পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।

তবে একটা খুশির খবর
পা ভারী হচ্ছে, মাঝে মাঝে মাথা ঘোরে আমার
পেটের মধ্যে কে যেন সুরসুরি দেয়
মনে হয় আরেকটা অরিন্দম আসছে
আমার জীবনে ।



কৃষ্ণেন্দু সামন্ত
১০ই মার্চ 2021

02/16/2021

একটু অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে

এ কোন যমুনা


কাল ছত্রিশে পা দেবো
কাল থেকে আমার অবসর জীবন শুরু
দর কমে গেছে আমার
এখন আমি চটা ওঠা দেওয়ালে
পুরনো ক্যালেন্ডারের মত ঝুলে থাকি এক কোণে।
আজ তাই বিশ্রাম নিচ্ছি
মনে পড়ছে প্রথম দিনের কথা
ষোল বছরের বারোয়ানার মেদহীন কিশোরী
জীবন নিয়ে চৌকাট পেরিয়ে
দুতলার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে
চিকচিকে সোনালী চুড়িদার পরা পৌড় মাসীর কোলে
এনে ফেলে দিয়েছিল বটুদা, বলেছিল,
“সেলাইয়ের চাকরি দেবে
তারপর বিয়ে করে গ্রামে নিয়ে গিয়ে ঘর বাঁধবে”
সত্যিই প্রতিশ্রুতি যেন ঝালমুড়ির ছেঁড়া ঠোঙার
ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা কয়েকটা মুড়ির টুকরো।
তখন বুঝিনি প্রণাম করেছিলাম মাসিকে
মাসি আমার গালে চুমু খেয়ে
বুকটা টিপে ধরে বলেছিলো,
“সাবাস বটু এতো জোয়ারের পালতোলা নৌকো
আমারই রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে
বাবুরা তো কোলে নিয়ে একে ফিষ্টি করবে”।
মিহি আতর আর হুইস্কির গন্ধ মিশ্রিত ঠোঁটের কাছে
আমার ঠোঁটে এনে বলেছিল মাসি,
“এখানে সবাই রানী হয়ে থাকে
শুধু সুখের পায়রা ডানা মেলে
আর ফোয়ারার মতো টাকা ওড়ে
বুঝলি রে যমুনা,
আজ থেকে তোর নাম যমুনা”।

মানতে চায়নি মানতে পারিনি
আপনারাই বলুন কেউ কি মানতে পারে,
শুধু নিরুপায় হয়ে মেনে নিতে হয়েছিল
এই অভিশপ্ত জীবন।
আমি জানলার কাঁচ দিয়ে দেখতাম
মাথায় লালনীল ঝুটি বেঁধে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে
গলায় বোতল ঝুলিয়ে সবাই স্কুল যেত।
আমারও খুব ইচ্ছে করত
হায়রে ইচ্ছে, ইচ্ছের কাঁধে ভর দিয়ে
আমার চোখ ঘুমে ঢুলে পড়তো
সারারাত যে আমি মধু বিলোতাম।
কেউ আসতো বিয়ের আগে কাঠারিতে শান দিতে।
কেউ আসতে সারাদিনের ক্লান্তি মেটানোর জন্য
আমার শরীরটাকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করতে
কি যে ব্যাথা হতো, কি যে কষ্ট হতো
বলে বোঝাতে পারব না।
ফর্সা চামড়ার রং লালচে থেকে নীল
নীল থেকে কালশিটে পড়ে যেত।
বালিশ টাকে চেপে ধরে
দমবন্ধ করে সহ্য করতাম।
উন্মুক্ত দ্বারের পেলব গভীরতায়
কখনো পূর্ণিমার চাঁদের আলো
আবার কখনোবা আমাবস্যার আধার।
কখনো চোরাবালির মধ্যে ধারালো কাঁচের টুকরো
দিয়ে উন্মত্ত অস্থিরতা বয়ে যেত।
সে যমুনা তো ইচ্ছে মতো বয়ে যেত
কিন্তু এ যমুনার নিজের পরিধির মধ্যে
বয়ে যাওয়ার অধিকার টুকুও ছিল না।

শীত যায় বসন্ত যায়
দুর্গাপূজা আসে ভাইফোঁটা যায়।
ধীরে ধীরে বয়স অপরাহ্নে পা বাড়ায়
মনের স্বপ্ন মনের বাসনা লজ্জাবতী লতার মতো
নুয়ে অপেক্ষা করে মনের মানুষের জন্য।
আমারও ইচ্ছে করে
আমারও তো আত্মা চায়।

সে এক দীপাবলীর ঝলমলে রাত
বাইরে আতশবাজির গন্ধের সাথে
লারেলাপ্পা হিন্দি গানের সাজ
তিন বন্ধুর সাথে আরও একজন
এল আমায় নিয়ে পুতুল খেলতে
কি লাজুক রে বাবা
ভাসা ভাসা চোখ দুটোর গভীরে
মমতার প্রদীপ জ্বলছে
চিকনসরু গোঁপের ওপর ফর্সা লম্বাটে মুখটা
যেন প্যান্ডেলের আসনে বসানো কার্তিক
এসব জায়গায় লজ্জা করলে কি চলে
সময়ের মধ্যে কাজ করো বেরিয়ে যাও
ফেলো কড়ি মাখো তেল।
আমার নাম ধরে ডাকতে গিয়ে
ওর ঠোট কেঁপে গেল
ও যমুনার স্রোতে ভাসবে কি করে
বন্ধুরা তো এনতার খিস্তি করছে,
“তোর জন্য আমাদের মান-সম্মান জলে গেল
কোথায় মজা নিবি তা না”।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষ হলো
আমি পোশাক বদলে অন্য ঘরে এলাম
যুবকটি আড়াল আমাকে পাঁচশ দিয়ে বলল,
“জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ হয় না
আমারও ইচ্ছে করছিল, কিন্তু
আমি ভালোবাসতে জানি
অত্যাচার করতে পারিনা
আর হয়তো দেখা হবে না
ভালো থেকো ।

কৃষ্ণেন্দু সামন্ত ।।

09/24/2020

ভাঙ্গন

( আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই অল্পবিস্তর ঘটে থাকে )

অতই সোজা একজন ভেঙে যাওয়া মানুষের ভালোবাসা পাওয়া।
সে কেন ভালোবাসবে তোমায়?
সে কেন ক্ষতবিক্ষত মনের ফাটলটা জুড়িয়ে নেবে
তোমার স্পর্শে, তোমার বিশ্বাসে, তোমার শিহরণে, তোমার ভালোবাসায়?
তুমি কি আদৌ তার কেউ হও বা হতে?
তোমারও কি সেই জঠরেই জন্ম যেখানে সে নমাস-নদিন শুধু অপেক্ষা করেছিল
পৃথিবীর আলো দেখার জন্য।
তুমিও কি সেই কোলেই মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলে
যেখানে সে ভিজে কাঁথায় শুয়ে সর্দি-কাশিতে ভুগতে ভুগতে
অপেক্ষা করত মায়ের যত্নের।
জানি তোমার ভালোবাসা আর এই সম্পর্কের সত্তাটা এক নয়।
সেও একদিন রক্তের সম্পর্ক কে দূরে সরিয়ে
তোমারি মতো একজন অপরিচিতা কে মনের ক্যানভাসে রং তুলি দিয়ে এঁকেছিল।
অপেক্ষা করেছিল অন্তরীপের মত একটা ছোট্ট নির্জন দ্বীপে আলো জ্বালিয়ে।
ভালোবাসার দরজা খুলে অনুভূতি দিয়ে সাজিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিল তোমায়।
কবিতার ভাষায় ছন্দের অণু-পরমাণুর দিয়ে গদ্যের শহরে
স্বচ্ছ নীল নদীর মত বয়ে চলা তোমার খরস্রোতা কে।
দিবা-রাত্রি চব্বিশঘন্টাই আড়ালে-আবডালে, ব্যথা-বেদনায়, ঘাত-প্রতিঘাতে
নিজেকে ভিখীরির মত বিলিয়ে দিয়ে শুধু ভালোবেসে ছিল তোমায়।
শুধু পেতে চেয়েছিল তোমার নিষ্পাপ মনের ভালোবাসা।
ফিরে তাকাও নি তুমি,
সোজা পথে হেঁটে ছিলে কোন নতুন গন্ধের খোঁজে।
প্রাধান্য দিয়েছিলে বিচ্ছেদকেই।
বিশ্বাসটাকে ভেঙ্গে দিয়েছিলে একটা “না” শব্দ দিয়ে।
তাই তো বলছি,
আর ভাঙতে পারবো না আর ভাঙতে ভালোও লাগে না।
আর তাছাড়া
ভেঙে যাওয়ার পর আর নতুন করে কিছু জোড়া লাগে না।
কারণ জোর করে কোনো কিছুই জোড়া লাগানো যায় না।
যা গেছে তা গেছেই।
যা তাকে দিয়েছি তা অন্য কাউকে দিতে পারবো না।
ফিরে পাওয়াটা শুধুমাত্র আশা করে থাকাই মাত্র।।

কৃষ্ণেন্দু সামন্ত।।

একটু অন্য স্বাদে একটু অন্য সাজে, আশা রাখি সাড়া পাব, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।              তোমার সঙ্গে তুমি সুর চেয়েছিলে, আ...
06/20/2020

একটু অন্য স্বাদে একটু অন্য সাজে, আশা রাখি সাড়া পাব, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে।

তোমার সঙ্গে

তুমি সুর চেয়েছিলে, আমি কথা দিলাম
তুমি নিজের মতো করে গান বেঁধে নিও
আমাকেও একটু শোনার সুযোগ দিও।

তুমি মেঘ চেয়েছিলে, আমি বৃষ্টি দিলাম
তুমি বৃষ্টি ভেজা চোখে আকাশ দেখো
মেঘের আড়ালে নাহয় আমাকে লুকিয়ে রেখো।

তুমি সময় চেয়েছিলে, আমি বর্তমান দিলাম
তুমি মন দিয়ে মনের কাজ গুছিয়ে নিও
কাজের ফাঁকে আমাকেও একটু সময় দিও।

তুমি আরশি চেয়েছিলে, আমি প্রতিবিম্ব দিলাম
তুমি নিজেকে নিজের মতো সাজিয়ে নিও
আমাকেও একটু দেখার সুযোগ দিও।

তুমি বন্ধুত্ব চেয়েছিলে, আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম
তুমি আমার হাতটা চেপে ধরে রেখো
আমার সাথে পা মিলিয়ে গোটা শহরটা দেখো।

তুমি প্রেম চেয়েছিলে, আমি অনুভূতি দিলাম
তুমি সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাকে ভালোবেসো
আজীবন আমাকে তোমার সঙ্গে রেখো।


কৃষ্ণেন্দু সামন্ত।।

একটু অন্য স্বাদে আরো একটা প্রচেষ্টা ,আশা করছি ভালো লাগবে।                          আমার সম্বন্ধ  ভাবিনি তোমার সঙ্গে প্রথ...
06/03/2020

একটু অন্য স্বাদে আরো একটা প্রচেষ্টা ,আশা করছি ভালো লাগবে।

আমার সম্বন্ধ

ভাবিনি তোমার সঙ্গে প্রথম দেখাই হবে শেষ দেখা।
ভোররাতের ঠুনকো শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
অন্ধকারে হাতড়ে জলের বোতলটা বার করে
দু-ঘোট জলে গলা ভিজিয়ে চোখ বুজতে চাইলাম,
আর ঘুম এলো না।
উলুধ্বনি মাখানো গায়েহলুদের রঙিন স্বপ্নে
রাঙিয়ে গেল ঘুমে ভেজা চোখ।
এ স্বপ্ন কোন মেয়েই না দেখে,
আজ যে তুমি আমাকে দেখতে আসবে।
আনন্দে অস্থির মন আকাশ-পাতাল করে দিল এক।
কোনদিন প্রেম করিনি, প্রেম করতে বড় ইচ্ছে করে।
শুনেছি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে নাকি সাহস লাগে।
আমার ভাগ্যটাই খারাপ, ছিলাম আমি ঘরবন্দি।
সুযোগই পাইনি কোনদিন, তবে এবার স্বপ্ন সত্যি হবে।
ফেসবুকে তোমার পেজে তোমার ছবিটা জুম করলাম।
এখন তো আর ফটো দেওয়া-নেওয়া হয় না
সেই মান্ধাতা আমলের কাকি-খুড়িদের মত।
ওই যে ছোট কাকার ছেলে, যার নাম বিলে।
টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, চ্যাট, আমায় শিখিয়েছিলে।
নইলে আমি ফাইব পাস বিদ্যায় এসবের কিই বা বুঝি
আজ সন্ধ্যার পর সামনাসামনি দেখবো তোমায়,
ইচ্ছেপূরণ হবে আমার।
জানলার ফ্রেমে বাইরে আকাশ পরিষ্কার হচ্ছে।
নিস্তব্ধ ভোরকে সরিয়ে দখল নিচ্ছে সুরেলা সকাল।

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান, সময়ের ঘড়ি উপস্থিত।
বুক করছে দুরুদুরু, ঠোঁটে লেগে পৌষী শীতের কাঁপুনি।
অবস্থা আমার কোশ্চেন পেপার হাতে নেওয়ার ছাত্রের মতো।
আমি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকছি,
চোখে পড়ল তোমার নীল জামা।
নীল রংটায় কেমন যেন হারিয়ে যাওয়া যায়,
নীল দিগন্তে পাখিরা যেমন স্বাধীনভাবে হারিয়ে যায়।
তুমি জানলে কি করে আমার পছন্দের রং নীল?
যাক পছন্দটা তো দুজনের মিলে গেল।
শাড়ির আঁচলটা মিলে তোমার উল্টোদিকে
বসলাম মাথা নিচু করে জড়োসড়ো হয়ে।
মুখ তোল মা লজ্জা কিসের, এখন তো মেয়েরা ….
এই প্রশ্নের ঝড় উঠলো
সেলাই ফোড়াই জানা আছে, সন্ধ্যেবেলা শাঁখ বাজানো,
রুটি কিন্তু গোল হওয়া চাই, সরষে ইলিশে কাঁচা তেল,
বাড়িতে শাড়ি পড়ে থাকতে হবে, নাইটি এক্কেবারে নয়।
বরের সাথে রোমান্স ছাড়াও, শ্বশুর সেবাও যেন হয়।
তোমার শ্যাম বর্ণ মুখের ট্রিম করা দাড়ির আড়ালে,
ঠোঁটের কোনে ওই যে লুচির তরকারী লেগেছিল।
আমার খুব ইচ্ছে করছিল আঁচল দিয়ে মুছে দিই।
কিন্তু, এখনো তো দূরত্বের ব্যবধান অনেকটাই তাই..
মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে তোমার মা বললেন,
“দাদা আপনি যে বলেছিলেন মেয়ে পরিষ্কার এত কয়লা”।
নিমেষে বাবার চোখ বিবর্ণ হয়েছিল,
নিথর বনানীর মত শুকিয়ে গিয়েছিল মায়ের গলাও।
তবে পুড়িয়ে দিলেই পারতেন
দোল খেলার মত মাখামাখি করলেন কেন?
মনের থেকে যে রঙের দাম বেশি,
শিখলাম আপনার কাছে।
আপনিওতো একজন মেয়ে ওরফে মা।
আপনার আইবুড়ো জীবনে সম্বন্ধ আসে নি।
তখন রঙের প্রশ্ন ওঠেনি,
নাকি ফর্সাদের সাতখুন মাপ।
ছোট মুখে বড় কথা বলব, দেখব কেমন লাগে।
যাক গে আপনার আর দোষ কোথায়।
সবই আমার কপাল, সবই আমার ভাগ্য।
যদি রামধনুর রঙে নিজেকে ধুয়ে নিতে পারতাম,
সব রঙের প্রশ্ন ঢাকা পড়ে যেত মেঘের কোণে।

কৃষ্ণেন্দু সামন্ত ।।

Address

Sacramento, CA

Telephone

+19163966393

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bhorer Abdar posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category