অল্প স্বল্প গল্প Olpo Solpo Golpo

অল্প স্বল্প গল্প Olpo Solpo Golpo গন্তব্য: ষড়যন্ত্র ও রহস্যের জগৎ। মিশন: সত্য উদ্ঘাটন। স্নায়ুর চাপ নিতে প্রস্তুত থাকলেই সঙ্গী হবেন।

মনোযোগ দিন। একটা জরুরি ব্রিফিং আছে।ভূতের অশরীরী জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। এবার আমরা নামছি বাস্তবতার কঠিন মাটিতে, য...
10/14/2025

মনোযোগ দিন। একটা জরুরি ব্রিফিং আছে।
ভূতের অশরীরী জগৎ থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। এবার আমরা নামছি বাস্তবতার কঠিন মাটিতে, যেখানে প্রতিটি মোড়ে অপেক্ষা করছে ষড়যন্ত্র, প্রতিটি সংকেতের আড়ালে লুকিয়ে আছে রক্তের গন্ধ আর স্নায়ুর খেলা। থাকছে দুর্ধর্ষ অ্যাডভেঞ্চার আর শ্বাসরুদ্ধকর তদন্ত।

তবে একটা কৌশলগত পরিবর্তন এসেছে। ইউটিউব বা ফেসবুকের পাবলিক চ্যানেলে নয়, মূল অ্যাসেট—অর্থাৎ প্রতিটি গল্প—প্রকাশিত হবে সরাসরি লেখকের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে। আমাদের ভূমিকা? আমরা কেবল সিগন্যালটা রিলে করবো আপনাদের কাছে। সংযোগকারী হিসেবে কাজ করবো মাত্র।

এবার আপনাদের পালা। যারা স্নায়ুর চাপ নিতে প্রস্তুত, কেবল তারাই এই মিশনের অংশীদার। পড়ুন। আর ছড়িয়ে দিন বিশ্বস্ত কমরেডদের মাঝে। আড্ডা আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আপনারাই।

কিন্তু আসল লক্ষ্যটা আরও বড়। যদি চান এই ফাইলগুলো স্রেফ ডিজিটাল সিগন্যাল হয়ে না থেকে, বইয়ের শক্ত মলাটে একটা স্থায়ী ডকুমেন্টে পরিণত হোক তবে আপনাদের সাড়া জাগাতে হবে। এই বার্তা ছড়িয়ে দিন দাবানলের মতো দেশের প্রতিটি প্রান্তে, দেশের বাইরে থাকা প্রতিটি এজেন্টের কাছে।

মনে রাখবেন, যত বেশি এজেন্টের হাতে ফাইল পৌঁছাবে, বই প্রকাশের সম্ভাবনাও ততই নিশ্চিত হবে।

আপাতত এটুকুই।

#কল্যাণপুরেরকুয়াশা #রহস্যগল্প

আমার ছেলে আমার কথামতো চলে বলে আপনি আপনার মেয়ের বিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে দিবেন না। এই কথা কি সত্য?জি সত্য। আপনি কি জানেন আমা...
12/25/2024

আমার ছেলে আমার কথামতো চলে বলে আপনি আপনার মেয়ের বিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে দিবেন না। এই কথা কি সত্য?

জি সত্য।

আপনি কি জানেন আমার ছেলে রাহিল একজন ইঞ্জিনিয়ার। সে খুব ভালো চাকরি করে। ছাত্র জীবনে সে কখনো দ্বিতীয় হয়নি। এবং তার এসব অর্জনের পেছনে আমার অবদান মুখ্য ছিলো।

জি আমি জানি। দেখুন আপনার এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। আমার মেয়ে মুন্নী অত্যন্ত ভালো মেয়ে। তার পড়াশুনার রেজাল্টও ভালো। আমার মেয়ে আপনার ছেলেকে অনেক ভালোবাসে। সে আমাকে বলেছে যে সে বিয়ে করলে রাহিলকেই করবে। কিন্তু এই বিয়েতে আমি রাজি নই, আমি শুধুমাত্র আমার মতামত দিয়েছি। আমি মনে করি একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে কিংবা মেয়ে তার নিজের বুদ্ধি, বিবেচনা থেকে চলবে, অন্য কারো কথায় নয়।

আপনি কি চান যে আমার ছেলে আপনার মেয়ের কথা শুনে চলুক। বিয়ের পর সে কেন বউ এর কথা বাদ দিয়ে মায়ের কথা শুনবে তাতেই আপনার আপত্তি?

দেখুন আসলে আপনি ব্যাপারটাকে যেভাবে দেখছেন আমি ব্যাপারটাকে সেভাবে দেখি না। আমি আপনাকে একটা গল্প বলতে চাই যদি আপনার সময় থাকে।

বলুন আপনার গল্প।

একটা মেয়ের ত্রিশ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। মেয়েটার যখন বিয়ে হয় সংসার নিয়ে মেয়েটার অনেক স্বপ্ন ছিলো। সে জীবনে কতবার চড়ুইভাতি খেলেছে। তার একটা ছোট ঘর হবে। সেই ঘরটাকে সে তার স্বপ্ন দিয়ে সাজাবে। তার যে জীবনসঙ্গী হবে। তার সঙ্গে সারারাত গল্প করবে, খুনসুটি করবে। বৃষ্টির দিন মেয়েটা তার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজবে। ছেলেটা বেলি ফুলের মালা এনে মেয়েটার খোঁপায় পরিয়ে দিবে। তারা দুজন শহরের রাস্তায় হাঁটবে। নদীর ধারে বসে থাকবে। কোন কোন রাত তারা শুধু গল্প করে কাটিয়ে দিবে। কখনো দুইজন শুধু হাত ধরে বসে থাকবে। তাদের সন্তান হবে। তারা একসঙ্গে পার্কে যাবে। ছেলে, মেয়েরা যখন দৌড়াদৌড়ি করবে তখন তারা ভাববে তারা কত সুখী।

আচ্ছা।

মেয়েটা জানতো ছেলেটা ভীষণ মেধাবী চিকিৎসক। জীবনে সে কোনদিন দ্বিতীয় হয়নি। খুব উঁচু বংশের ছেলে। মেয়েটা যখন ছেলেটার ঘরে বউ হয়ে এলো তার স্বপ্নের সঙ্গে জীবন মিললো না। তার সেই অতি ব্যস্ত স্বামীর তার জন্য সময় নেই। তিনি এসেই মায়ের সঙ্গে গল্প করতে বসে যেতেন। তারা দুজন কখনো ঘুরতে যেতে পারতো না। কেননা তার মা বলতো জীবনে এত ঘুরে কি হবে? আমি আর তোর বাবা কি ঘুরেছি? তাদের রাত জেগে গল্প করা হতো না। মা শুধু ছেলের বউ এর দোষ ধরতো। ছেলেটা এসে বউটাকে কথা শুনাতো। অভিযোগের পর অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকলো। মেয়েটা তার সব স্বপ্ন বাদ দিলো। তার পূর্ণিমা দেখার স্বপ্ন, বেলি ফুলের স্বপ্ন। এমনকি নিজের বাসায় নিজের বাবা, মা-কে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর স্বপ্ন। ছেলেটা সমাজের চোখে খুব আদর্শ ছেলে। মায়ের কথা শুনা ছেলে। সে যে শুধু মায়ের কথা শুনতো তাই নয় তার বোনের কথাও শুনতো। বোন বলতো ভাইয়া ভাবি কিন্তু এই কাজটা ঠিক করেনি। অমনি ছেলেটা এসে নিজের বউকে দুইটা কথা শুনিয়ে যেতো। মেয়েটার সন্তানেরা কি করবে, কোথায় ভর্তি হবে, কোন টিচারের কাছে পড়বে সবকিছু ঠিক করে দিতো মা, বোন। মেয়েটা শুধুমাত্র একজন বউ ছিলো কিন্তু সংসারে তার কোন ভূমিকা ছিল না। তার কোন সম্মান ছিলো না। সবাই বলতো আপনার স্বামী কি মেধাবী মানুষ। কি দারুণ পরিবারে আপনার বিয়ে হয়েছে। আর মেয়েটার কাছে বাস্তবতা ছিলো পুরাই উল্টা। তার জীবনের সব স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু জীবনটা কোনভাবে কাটিয়ে দেয়া।

একদিন মেয়েটার ডাক্তার স্বামী মারা গেলেন। মেয়েটা পড়লো চরম বিপদে। শাশুড়ি, ননদ সব দূরে সরে গেলো। মেয়েটা তার দুই মেয়েকে নিয়ে তার জীবন-যুদ্ধ চালিয়ে গেলো।

কিন্তু এর মাধ্যমে আপনি কি বুঝাতে চান?

দেখুন একটা ছেলে তার মায়ের কথা শুনবে, বোনের কথা শুনবে এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু একটা ছেলে যখন কোন দায়িত্বে যাবে, স্বামী হবে, বাবা হবে তখন তার নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। বড় হওয়া কাকে বলে। বড় হওয়া মানে নিজের ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা। নিজের বুঝার ক্ষমতা। সে যদি সাবালক হওয়ার পরও তার নিজের বিচার বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা না থাকে। সে যদি অন্যের কথা শুনে প্রভাবিত হয়, অন্যের উপর নির্ভরশীল হয় তবে সে যতই মেধাবী হউক না কেন। কাউকে সুখী করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এই ধরনের মানুষের মানুষ চেনার ক্ষমতা কিংবা বিচার বুদ্ধির ক্ষমতা থাকে না। আসলে এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন মানুষকে বড় হওয়া, স্বামী হওয়া কিংবা বাবা হওয়া এই ব্যাপারগুলো শিখানো হয়না। আপনি বয়সে বড় হতেই পারেন, মেধাবী ও হতে পারেন কিন্তু একজন মানবিক, চিন্তাশীল এবং বিবেকবান নাও হতে পারেন।

এই গল্পের মেয়েটা কে? আপনি?

জী। আমি সেই মেয়ে। যার খুব উঁচু বংশে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু এই উঁচু বংশ, মেধাবী স্বামী, দারুণ পরিবার, কোনকিছুই আমাকে সারাজীবন কোন সুখ স্মৃতি দেয়নি। বরং আমাকে সাগরের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে আমার হাতে ছেড়ে দিয়েছে। তাই তখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি জীবনে আমার সন্তানদের এমনভাবে বড় করবো যেন তাদের নিজেদের বিবেক বুদ্ধি হয়। তারা যেন শুধু বয়সে বড় না হয়। মননে, চিন্তায় বড় হয়। তাই যেদিন আমি শুনেছি আপনার ছেলে আপনার কথা মতো চলে সেদিন আমি আমার মেয়েকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছি। যে ছেলে এত বড় হয়েও নিজের বিচার বুদ্ধি অনুযায়ী চলতে শিখেনি তার কাছে খুব বেশি আশা করার কিছু নেই। আমি, আপনি মা হতে পারি। কিন্তু আমাদেরও ভুল হতে পারে। আমরা ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে নিজের বিচার বুদ্ধি থাকতে হবে।

আপনার মেয়ে কি বললো?

সে বললো সে আপনার ছেলেকেই বিয়ে করবে। কেননা আপনার ছেলে তাকে বলেছে সে পরিবর্তিত হবে।

তাহলে আর সমস্যা কি?

পরিবর্তন কি এত সহজ। এতে সাধনার দরকার হয়। জীবনবোধ উপলব্ধির দরকার হয়। এটা অর্জন মানুষ সারা জীবনে পারে না, সে কিভাবে কয়দিনে পারবে?

তাহলে আপনি আপনার মেয়েকে কি শিখালেন?

ঐ যে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছি। আমার কথায় সে প্রভাবিত হয়নি। সে নিজেই তার নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাকে তাই বলেছি। তোমার যেটা ভাল লাগবে তুমি তাই করবে। আমি শুধুমাত্র আমার অপিনিয়ন দিয়েছি।

জি আপনার মেয়ে তার সিদ্ধান্ত আমার ছেলেকে জানিয়ে দিয়েছে। এই বিয়েতে সে রাজি নয়। তাই আমি কৌতূহল-বশত জানতে আসলাম। এত পরিবার আমার ছেলের পেছনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারা এমন কোন পাগল?

জি আমরা আসলেই পাগল। মাথায় সমস্যা আছে। তবে এইভাবেই আমাদের ভাবতে ভাল লাগে। পাগল হওয়া মন্দ নয়।

🌱সমাপ্ত

⛔জীবন-গল্প
🖊️Mohammad Aminul Islam

নুপুরের চুল গুলো বড়ো। চুলায় আগুন দিতে গিয়ে সেই চুল পুড়ে একাকার। কোন ফাঁকে, কোন উদাসীনতায় শখের চুলগুলোতে আগুন ধরে গেল সেই...
12/25/2024

নুপুরের চুল গুলো বড়ো। চুলায় আগুন দিতে গিয়ে সেই চুল পুড়ে একাকার। কোন ফাঁকে, কোন উদাসীনতায় শখের চুলগুলোতে আগুন ধরে গেল সেই হদিস সে পেল না। চিৎকার-চেঁচামেচিটা শুরু করল তার পিসি শাশুড়ি। জলভর্তি জগে চুল গুলো ডুবিয়ে দিয়ে নুপুরকে বাঁচালো। নুপুরের মুখটা লাল। ভয়ে লাল হয়ে গিয়েছে। হট্টগোলের শব্দে নুপুরের শাশুড়ি ছুটে এলো। মুধুবালা দেবী বউয়ের এমন বোকামোতে ভীষণ খ্যাপে গেল। ভয়ংকর চেঁচিয়ে বলল,
‘ওমা ওমা ওমা, বউ, তুমি কি দেখে কাজ করো না? চুলে আগুন লাগিয়ে দিছো! শরীর পুড়লে তো তোমার বাপের বাড়ির মানুষ বলতো আমরা আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলছি। এমন সর্বনাশ করো না আমাদের।’

নুপুর অনুরাগশূন্য নয়নে তাকিয়ে রইল দূরে। উন্মনা কণ্ঠে বলল,
‘সর্বনাশ করবো না, মা। চিন্তা করবেন না। আমি আমার বাদে কারো সর্বনাশ করিনি কখনো।’
মুধুবালা দেবী পুত্রবধূর এহেন উদাসীনতায় বিরক্ত হলো। সেই বিরক্তি ছুটে গেল চোখেমুখে মি সা ই লের গতিতে,
‘কেমন ধরণের কথা বলো এসব! তোমার কথা শুনলে মানুষ বলবো তুমি কত দুঃখেই না আছো। তোমারে কত যন্ত্রণাই না আমরা দেই। দুঃখের পাহাড় বুকে।’

নুপুর হাসল, ‘পাহাড় নেই বলছেন?’

মুধুবালা দেবী কিছুটা থতমত খেলো। কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘হয়েছে, আর সর্বনাশ করতে হবে না। যাও ঘরে। বাকি রান্না ঠাকুরঝি শেষ করবে।’

‘হাঁটুর চুল পুড়ে পিঠে চলে এলো। আমার কত শখের চুল ছিল আপনি তো জানতেন তাই না? তবুও আপনার কোনো হাপিত্যেশ নেই। কেবল আমার শরীর পুড়ে গেলে তার দায়ভার আপনাদের ঘাড়ে পড়বে বলে সব চিন্তা। আর অন্তর যে পুড়ে ছাই সে বেলা? অন্তরের ফোসকা দেখা যায় না বলে তার দায় অস্বীকার করে ফেলেন তাই না?’
প্রশ্ন করে হাসল নুপুর। মুধুবালা দেবী ছেলের বউয়ের প্রশ্নে বিব্রতবোধ করল। কথা আগানোর শব্দ না পেয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করল। নুপুর পিসিমার দিকে একবার তাকিয়ে ছুটে ঘরে চলে এলো। এত মন খারাপ নিয়ে আসলে বাঁচা যায় না।

কুমার ঘরে বসে ল্যাপটপে আঙুল চালাচ্ছে ব্যস্ত গতিতে। তার প্রচন্ড ধ্যান ল্যাপটপের স্ক্রিনে। কানে ইয়ারফোন। গান শুনছিল বোধহয়। হুট করে ঘরে কারো পায়ের অস্তিত্ব পেতেই মাথা তুলল। চোখ তুলতেই বিক্ষিপ্ত নারী চরিত্র নুপুরকে দেখতে পেল। মুখ চোখে মেয়েটার আতঙ্ক। কুমার ভ্রু নাচালো, ‘কী হয়েছে? ভূত দেখলেন না-কি দিনে-দুপুরে?’

নুপুর বাঁকা চোখে তাকাল। কুমারকে দেখলে তার মন খারাপ হুর হুর করে বাড়ে সবসময়। আজও ব্যতিক্রম হলো না। মন খারাপ বাড়লো নিমিষেই। ব্যাকুলতা নিয়ে শুধাল, ‘ল্যাপটপে কী করছিলেন? প্রাক্তনের ছবি দেখছিলেন?’
কুমার প্রকৃতপক্ষে কাজ করছিল। নিত্যান্তই, একদম গোপনে মাঝেসাঝে সে প্রাক্তনের আইডি সার্চ করে ঘাটে। তা জানে নুপুর। তাই বলে সবসময় আইডিতে পড়ে থাকবে এমন ভাবাটা কি উচিত? মোটেও নয়। কুমারের কিঞ্চিৎ রাগ হলো তাই। রাগ ধরে রেখেই বলল,
‘হ্যাঁ।’

নুপুরের ব্যাকুলতা মুষড়ে পড়ল। আহত চোখে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। কুমার মুখ ঘুরিয়ে আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ নিবদ্ধ করল। নুপুর আনমনে কি যেন ভাবল তারপর আসক্তিহীন গলায় বলল,
‘আপনার আমার মাঝে সবচেয়ে বেশি পছন্দের জিনিস কী? আমার চুলগুলো তাইনা?’

হুট করে নুপুরের এমন প্রশ্নের মানে বুঝলো না কুমার। তাই তাকিয়ে রইল অবাক নয়নে। সংশয় নিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ।’

কুমারের হ্যাঁ বলতে দেরি কিন্তু নুপুরের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে দেরি হলো না। সে ছুটে গিয়ে ড্রয়ার থেকে কেঁচি বের করেই ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেললো পুড়ে যাওয়া চুল গুলো। চোখের পলকে পুড়ে গিয়ে অবশিষ্ট থাকা পিঠ সমান চুল গুলো ছোটো হয়ে কাঁধ সমান হলো। কুমার তাকিয়ে রইল বোকার মত। বুঝে উঠতে পারলো না হুট করে কি হয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে আবছা স্বরে বলল,
‘কী করলেন!’

নুপুর হেসে তাচ্ছিল্য করে জবাব দিল, ‘যে আমার যাতনার খোঁজ রাখে না তার পছন্দের জিনিস আমি কেন রাখবো?’

‘কিন্তু চুল গুলো তো আপনারও পছন্দের ছিল।’
‘না তো! কে বলেছে আমার পছন্দ ছিল?’

কুমার দু'কদম এগিয়ে এসে অবাক নিয়ে বলল, ‘পছন্দ ছিল না? তবে যত্ন করতেন কেন?’
‘আপনার জন্য। ভেবেছিলাম চুলের উছিলায়ও যদি আপনার একটু করুণা পাই!’

‘তাহলে আজ করুণার আশা ছাড়লেন কেন?’

‘চুল গুলো পুড়ে গেছে চুলার আগুন লেগে। অথচ আপনি খোঁজ রাখলে তো! পুরো দুনিয়া ভুলে আপনি তো এক প্রাক্তনেই নিমজ্জিত। বর্তমান দেখার আর সময় কই?’

কুমার যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। চুলে আগুন লেগে গিয়েছিল ঘটনাটা তো সে জানতোই না! তাই বলে মেয়েটা চুলগুলো কেটে ফেলবে? এত রাগ তার!

‘চুলে আগুন ধরেছিল তাই বলে চুল সবগুলোই কেটে ফেলবেন!’

‘চুলে আগুন ধরেছে সেটা তো বাহ্যিক। চুলে আগুন ধরাতে চুল কাটিনি। আসলে মনে আগুন ধরাতে চুলটা কেটেছি।’

‘মনেও আগুন ধরে?’

‘আপনার মতন স্বামী পেলে ধরেই।’

‘আমার মতন স্বামী পেয়ে আপনার অনেক দুঃখ তাই না?’

‘তা আর বলতে! যার জীবনে অতীত বড়ো তার জীবনে কখনোই তো আমি আসতে চাইনি।’

‘আমি কি কখনো আপনার সামনে অতীতকে এত বেশিই প্রাধান্য দিয়েছিলাম? কেন তাহলে অভিযোগ?’

কথার ঘাত-প্রতিঘাতে আর এগুলো না নুপুর। কেবল চুল গুলো ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বিবশ কণ্ঠে বললো,
‘কাকে প্রাধান্য দিবেন আর কাকে দিবেন না তা যদিও আপনার ব্যাপার তবুও আপনি আমায় বাদে আর কাউকে প্রাধান্য দিলে আমার খারাপ লাগে। নিজেকে ছোটো লাগে।’

আর কথা বাড়লো না। তার আগেই নুপুর ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি ডেঙ্গিয়ে ছাদে চলে গেল। আকাশ মেঘলা। গমগমে ধ্বনিতে ডাকছে অনবরত। চারপাশ মুখরিত সেই ডাকে। ক্ষণে ক্ষণে রুপোলি আলোয় বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
নুপুরের মনে হল মনের সাথে আকাশের একটি সাদৃশ্য রয়েছে। মনের তালে তালে পরিবর্তন হয় তার রঙ। এই যে আজ নুপুরের মন ভালো নেই তেমনি মন ভালো নেই আকাশের। হয়তো এই বিশাল আকাশটা নুপুরের সঙ্গী হতে চায়।

আকাশ চিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়তে লাগল। নুপুর দু’হাত মেলে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
'বৃষ্টি তুমি মুছে দিও তার দুঃখ, যে আমায় ভালোবাসতে পারেনি কভু।'

কথা শেষ হতেই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া নুপুর অনুভব করল তার পায়ে কারো হাতের ছোঁয়া। বেশ চমকে গেল সে। ভড়কে গিয়ে চোখ নামাতেই দেখল পায়ের কাছটায় বসে আছে কুমার। সাদা পাঞ্জাবি শরীরে। মিনিট খানেক আগেও তো লোকটার শরীরে গেঞ্জি ছিল। হুট করে পাঞ্জাবি পরল কেন?
তাছাড়া এখানে, পায়ের কাছেই বা করছে কী?

নুপুরের মনের প্রশ্নের উত্তর মিলে গেল তৎক্ষণাৎ। বৃষ্টির জলে ধুয়েমুছে যাওয়া আলতার দিকে চোখ যেতেই চক্ষু তার ছানাবড়া হয়ে গেল। স্তম্ভিত কণ্ঠে বলল, ‘করছেন কী! আমাকে আলতা দিয়ে দিচ্ছেন কেন? পাঞ্জাবিই-বা পরেছেন কেন?’

কুমার জবাব দিল না। এক মনে আলতা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। আলতার কৌটাটা রাখল রঙচটা রেলিং-এ। তার এক হাতের মুঠোয় থাকা অনেকক্ষণ যাবত চেপে রাখা, চুপসে যাওয়া কাঠগোলাপটা নুপুরের কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
‘তেমন কিছুই করছি না। একটি মেয়ের অভিযোগ আমি নাকি তার কোনো কথাই জানি না, মানি না, রাখি না। তাই মেয়েটিকে জানাতে এলাম— তার বৃষ্টিস্নানের কথা আমি জানি। আলতা পায়ে দিয়ে, পাঞ্জাবি পরা পুরুষের সাথে শখের বৃষ্টিস্নানের আকাঙ্ক্ষার কথা আমি জানি। তাইতো আলতা নিয়ে ছুটে এলাম কত দ্রুত। মেয়েটি কি এবার মানবে— আমি তাকে ভালোবাসি? একটু মানবে কি?’

দূরে বজ্রপাত হলো। কেঁপে উঠলো নুপুরের দেহ। শাড়ি ভিজে লেপটে গেছে শরীরে। বৃষ্টির জল ভীষণ ঠান্ডা লাগছে যেন হুট করেই। এতক্ষণ লাগেনি। না-কি মনের আগুন নিভে যাওয়ায় এত ঠান্ডা লাগছে চারপাশ?
কুমার হাসলো অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা নুপুরকে দেখে। আলগোছে নিজের হাতের মুঠোয় তার হাত টেনে নিতে নিতে বলল,
‘আর প্রাক্তনের ছবি দেখবো না কানে ধরলাম। এবার চুলগুলোর যত্ন কেবল নিজের জন্য নিবেন কেমন? কারণ আমি আপনায় ভালোবাসি। কেবল চুলগুলোকে নয়, পুরো আপনাকেই ভালোবাসি।’

[সমাপ্ত]

#বৃষ্টিস্নান
কলমে: মম সাহা

Address

Schenectady, NY

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অল্প স্বল্প গল্প Olpo Solpo Golpo posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অল্প স্বল্প গল্প Olpo Solpo Golpo:

Share