27/06/2025
রথযাত্রা - ২০২৫
জয় জগন্নাথ,।🚩❣️🙏
সকলকে রক্ষা করো প্রভু।🚩❣️🙏
🚩❣️🌹🙏
আজ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে রথযাত্রার অনুষ্ঠান পালন করা হচ্ছে। বিশেষত পূর্ব ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরী জেলার শ্রী জগন্নাথ মন্দির হতে প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরেও মহাসমারোহে রথযাত্রার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। এই বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী শহর দীঘায় নব নির্মিত শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে প্রথমবার রথযাত্রা উপলক্ষে পুজোর আচার অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করে, মহাসমারোহে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। আজ হিন্দুদের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান রথযাত্রা নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে।
“রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।”
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই পঙক্তিগুলোর বাঙালি পাঠকেরা পরিচিত? বিশ্বকবি যে রথযাত্রার কথা কবিতায় লিখেছেন, সেই রথযাত্রার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসে আছে কল্পকাহিনী আর পুরাণের মিশেল, আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর আচার-প্রথার বর্ণনা। সেইসব ইতিহাস আর প্রথাসিদ্ধ ঘটনার বর্ণনা নিয়ে প্রতিবছর হয় রথযাত্রার আয়োজন। রথ যাত্রা, এই দুটি শব্দের, মধ্যে ‘রথ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষ, যুদ্ধযান বা কোনোপ্রকার যানবাহন অথবা চাকাযুক্ত ঘোড়ায় টানা হালকা যাত্রীবাহী গাড়ি। আর "যাত্রা" শব্দের অূর্থ গমন, অর্থাৎ কোথাও যাওয়ার ব্যাপারটা নির্দেশ করে। রথের গাড়িতে দুটি বা চারটি চাকা থাকতে পারে। সাধারণত অভিজাত শ্রেণীর ঘোড়ার গাড়িকে রথ বলা হয়। পৌরাণিক কাহিনীতে রথের ব্যবহার দেখা যায় যুদ্ধক্ষেত্রে। মহাভারতে বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সেনানায়করা রথে চড়ে নিজেরা যুদ্ধ করেছেন এবং সেনাবাহিনীকে পরিচালনা করেছেন।
তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথ শব্দের অর্থ কিন্তু ভিন্ন, গুরুত্ব এবং শ্রদ্ধার দিক থেকেও বেশ আস্থা ও সমীহ অর্জন করে। তাদের কাছে রথ একটি কাঠের তৈরি পবিত্র যান, যাতে চড়ে স্বয়ং ভগবান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। ভগবানের এই রথারোহণই ‘রথ যাত্রা’ নামে পরিচিত। এই পবিত্র উৎসবটি প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে উদযাপিত হয়ে থাকে। রথের নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, যেগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের নাম। প্রথমেই জানিয়ে রাখি জগন্নাথ এবং বিষ্ণু, শ্রী কৃষ্ণেরই দুই রূপ। বলরাম বা বলভদ্র, শ্রী কৃষ্ণ বা জগন্নাথ এবং সুভদ্রাদেবী এই তিনজন একে অপরের ভাইবোন। পুরাণে এমনটাই বর্ণিত যে, তাদের তিন ভাইবোনের ঘনিষ্ঠ এবং স্নেহপরায়ণ সম্পর্কের জন্যই তাঁরা পূজনীয়। রথযাত্রাও তাদেরকে কেন্দ্র করেই। এইবার তাহলে ভগবানের নতুন রূপের আবির্ভাব, ইতিহাস, লোকবিশ্বাস সম্পর্কে পৌরাণিক ধ্যান ধারণা নিয়ে লেখা যাক৷
🚩❣️🌹🙏
পুরীতে রথযাত্রার উৎসব :
স্কন্ধপুরাণে সরাসরিভাবে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার অনুষ্ঠানের কথা পাওয়া যায়। সেখানে ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র মাহাত্ম্য’ কথাটি উল্লেখ করে মহর্ষি জৈমিনি রথের আকার, সাজসজ্জা, পরিমাপ ইত্যাদির বর্ণনা দিয়েছেন। ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র’ বা ‘শ্রীক্ষেত্র’ বলতে আসলে পুরীকেই বোঝায়। পুরীতেই যেহেতু জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপিত, তাই এই মন্দিরকে পবিত্রতম স্থান বলে মনে করা হয় এবং এর অন্যতম আকর্ষণ পবিত্র রথযাত্রা অনুষ্ঠান। প্রতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন পুরীর রাজা। বর্তমানে রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরা ক্রমে পুরীর রাজপরিবার আজও আছে। সেই রাজপরিবারের নিয়ম অনুসারে, যিনি রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন, তিনিই পুরীর রাজা। প্রতিবছর রথযাত্রার অনুষ্ঠানে সূচনায়, পুরীর রাজা শ্রীজগন্নাথ, শ্রী বলরাম ও দেবী সুভদ্রার পর পর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন এবং সোনার ঝাড়ু ও সুগন্ধী জল দিয়ে রথের সম্মুখভাগ ঝাঁট দেন। তারপরই পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে, শুরু হয় শ্রী জগন্নাথদেবের পবিত্র রথযাত্রা। তিন দেবদেবীর জন্য আলাদা আলাদা তিনটি রথ। রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় দিকটিও হলো অপূর্ব ভাবে সাজানো গোছানো এই রথ তিনটি। এই তিনটি রথ যাত্রার কিছু নিয়ম রয়েছে এবং রথের আকার, রঙেও ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন-
প্রথমে যাত্রা শুরু করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ। এই রথের নাম তালধ্বজ। রথটির চৌদ্দটি চাকা থাকে। উচ্চতা চুয়াল্লিশ ফুট। রথের আবরণের রঙ নীল।
তারপর যাত্রা করে বোন, দেবী সুভদ্রার রথ। রথের নাম দর্পদলন। উচ্চতা প্রায় তেতাল্লিশ ফুট। এই রথের মোট বারোটি চাকা থাকে। যেহেতু রথটির ধ্বজায় বা পতাকায় পদ্মচিহ্ন আঁকা রয়েছে, তাই রথটিকে পদ্মধ্বজও বলা হয়ে থাকে। রথের আবরণের রঙ লাল। সর্বশেষে থাকে শ্রীকৃষ্ণের আরেক রূপ শ্রী জগন্নাথদেবের রথ, রথটির নাম নন্দীঘোষ। পতাকায় কপিরাজ হনুমানের মূর্তি আঁকা রয়েছে তাই এই রথের আরো একটি নাম কপিধ্বজ। রথটির উচ্চতা পঁয়তাল্লিশ ফুট। এতে ষোলোটি চাকা থাকে। রথটির আবরণের রঙ হলুদ।
তিনটি রথের আবরণীর রঙ আলাদা হলেও প্রতিটি রথের উপরিভাগটি লাল রঙেরই হয়ে থাকে। রথ তিনটি সমুদ্রোপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির হতে প্রায় তিন মাইল দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরে, পৌরাণিক মতে, শ্রী জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সেখানে সাতদিন থাকার পর আবার উল্টো রথে পুরীর শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে রথ ফিরে আসে। বর্তমানে রথযাত্রায় তিনটি রথ ব্যবহৃত হয়। তবে রথ যাত্রার ইতিহাস অনুসারে, আজ হতে আনুমানিক ৭৪০ হতে ৭৪৩ বছর পূর্বে, ঐ সময়ে রথযাত্রার যাত্রাপথ দুটি ভাগে বিভক্ত ছিলো। আর সেই দুটি ভাগে তিনটি-তিনটি করে মোট ছ’টি রথ ব্যবহৃত হতো। কেননা, সেইসময় জগন্নাথ মন্দির থেকে গুণ্ডিচা আসার পথটির মাঝখান দিয়ে বয়ে যেতো এক প্রশস্ত বলাগুণ্ডি নালা। তাই জগন্নাথ মন্দির থেকে তিনটি রথ বলাগুণ্ডি নালার পার পর্যন্ত এলে পরে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তি রথ থেকে নামিয়ে নালা পার করে অপর পাড়ে অপেক্ষমাণ অন্য তিনটি রথে বসিয়ে ফের যাত্রা শুরু হতো। ১২৮২ খ্রিস্টাব্দে, রাজা কেশরী নরসিংহ পুরীর রাজ্যভার গ্রহণের পর তাঁর রাজত্বকালের কোনো এক সময়ে এই বলাগুণ্ডি নালা বুজিয়ে দেন। সেই থেকে পুরীর রথযাত্রায় তিনটি রথের ব্যবহার শুরু হয়। রথের সময় শক্ষ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূন্নার্থীরা রথযাত্রায় অংশ নিতে দেশ-বিদেশ হতে আসেন শ্রীক্ষেত্র পুরীতে। শাস্ত্রে রয়েছে, “রথস্থ বাম নং দৃষ্টাপুনর্জন্ম ন বিদ্যতে”৷ অর্থাৎ রথের উপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথকে দর্শন করলে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না৷ তাই রথের দড়ি টানাকেও পুণ্যের কাজ হিসাবে গণ্য করেন ধর্মপ্রাণ হিন্দু পুণ্যার্থীরা। ভক্তদের বিবৃতি অনুযায়ী রথ যাত্রায়কিছু মজার এবং আশ্চর্য করা ঘটনা ও তথ্য রয়েছে। যেমন-
পুরীতে, রথের সময় এমন কোনো বছর নেই, যে রথের দিন বৃষ্টি হয়নি।
কোনো রকম আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াই রথ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সময়ের এত উন্নত প্রযুক্তির বিন্দুমাত্র সহায়তা নেওয়া হয় না রথ নির্মাণে।
রথ নির্মাণের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য মাপগুলো হাতে নেওয়া হয়, কোনো গজ ফিতের সাহায্যে নয়। কোনো প্রকার পেরেক, নাট বল্টু, ধাতু- কিছুর ব্যবহার নেই এখানে।
প্রায় চৌদ্দশ’ কর্মী রথ নির্মাণ করেন। এখানে কাউকে আলাদা করে নিয়োগ করতে হয় না, কেননা সেই আদিকাল থেকে বংশপরম্পরায় যারা রথ তৈরি করে আসছিলেন, তারা আজও রথ তৈরি করে যাচ্ছে।
রথ তিনটির ভেতরেতে বলরাম, সুভদ্রা এবং জগন্নাথের মূর্তি থাকে, যা নিমকাঠ দিয়ে তৈরি এবং প্রায় ২০৮ কেজি সোনা দিয়ে সজ্জিত।
রথ নির্মাণে যে সমস্ত কাঠ ব্যবহার করা হয়, তার উৎস হলো পুরীর কাছেই দাশপাল্লা ও রানাপুর নামের দুটি জঙ্গল। যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার দ্বিগুণ পরিমাণ গাছ প্রতি বছর রোপণও করা হয় জঙ্গলে।
পুরীর রথ প্রতি বছর রথযাত্রা অনুষ্ঠানের সমাপ্তির পর কেন ভাঙা হয়, আর কেনই বা পরবর্তী বছরে নতুন করে তৈরি হয়, জানেন কি ?
ইচ্ছা করলেই তো অতীতের উড়িষ্যার রাজা তিনটি সোনার স্থায়ী রথ বানিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু রাজা সেটা তো করেন নি। প্রতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন রথ তৈরি শুরু হয় আর শেষ হয় রথযাত্রা উৎসবের আগের দিন ।
পৌরাণিক মতে,জগন্নাথের রথ ২০৬ টি কাঠ দিয়ে তৈরী, যা মানব দেহের ২০৬ টি হাড়ের অনুরুপ. রথের ১৬ টি চাকা= ৫ টি জ্ঞ্যানেন্দ্রিয়, ৫ টি কর্মেন্দ্রিয়, ও ৬ রিপুর প্রতীক. রথের রশি হলো মন, বুদ্ধি রথের সারথি, রথের রথি স্বয়ং ঈশ্বর। অর্থাৎ ঈশ্বর নিজের ইচ্ছায় এই শরীরকে চালিত করেন, মানুষের ইচ্ছায় কিছু হয় না। রথের প্রতিটি অংশ অত্যন্ত পবিত্র, এতে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর বাসস্থান, তাই রথের দড়ি স্পর্শ করলে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়. জগন্নাথ দেবের রথের নাম, পূর্বেই জানিয়েছে নন্দিঘোষ, এই রথের দড়ির নাম শঙ্খচুড় নাগিনী, বড় ভাই বলরামের রথের নাম তালধ্বজ, এই রথের দড়ির নাম বাসুকি নাগ, ও বোন শুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন, এই রথের দড়ির নাম স্বর্নচুড় নাগিন। পুরীর রথ চলার সময় রাস্তায় তিনটি দাগ পড়ে, যা আমাদের তিন পবিত্র নদী গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর প্রতীক। উল্টো রথের পর জগন্নাথ এই রথ থেকে একবার নেমে গেলে আর ওই রথে ওঠেন না, তখন এই রথ ভেঙ্গে কাঠ পুড়িয়ে ভোগ রান্নার কাজে লাগানো হয়.
আমি সেই কিশোর বয়স হতে বর্তমান দিন পর্যন্ত, বহুবার পুরীতে গিয়েছি, শ্রী জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ দেবের দর্শন পেয়েছি, এবং একবার তো দোলের পূর্ণিমার পূর্ণ তিথিতে, প্রভুর অপূর্ব রাজবেশের দর্শন পেয়েছি। সেই রাজবেশের ঝলমলে ঝকঝকে অপরূপ সৌন্দর্যতা আজো আমার মনের মনিকোঠায়, স্মৃতির সারণিতে সজীব হয়ে রক্ষিত হয়ে রয়েছে। বর্তমান দিনও কয়েক বছর পরপর বারেবার পুরীর জগন্নাথ ধামে যেতে মন চায়।🚩 🙏🏼
পুরীধাম ভারতের পবিত্র চার ধামের একটি, হিন্দু ধর্মালম্বী পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস জগন্নাথ দেবের অভ্যন্তরে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের হৃদয় অর্থাৎ হৃৎপিন্ডটি থাকে।🚩❣️🙏
এই হলো পবিত্র রথযাত্রাকে ঘিরে সকল লোকবিশ্বাস বা পুরাণে বর্ণিত পবিত্র গাথা। পুরী ছাড়াও বিশ্বের অনেক হিন্দু এলাকাতেই রথ উৎসব পালন করা হয়। যেমন, নিউ ইয়র্ক, টরেন্টো, সহ বাংলাদেশেও রথ উদযাপন হতে দেখা যায়। যেমন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ধুমধাম করে পালিত হয় রথযাত্রার অনুষ্ঠান। যার মধ্যে বিখ্যাত হলো সাভারের ধামরাইয়ে যশোমাধবের রথযাত্রা। বাংলাদেশের, বংশী আর কাকিলা নদীর মোহনায় কয়েকশত বছরের পুরনো রাজা যশোপালের ঐতিহাসিক রথযাত্রা বিখ্যাত।ধামরাই রথ ১৬৭৩ সাল থেকে জাঁকজমক পূর্ণভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। এছাড়া, টাংঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ইত্যাদি জেলাতেও বড় করে পালিত হয় রথযাত্রা। এতে অংশ নেয় ধারেকাছের গ্রাম, উপজেলার হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এবং উপভোগ করতে আসেন সকল ধর্মের মানুষই। রথকে কেন্দ্র করে চমৎকার মেলা বসে পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। রথের মেলায়,শুকনো খাবার, যেমন- খই, মুড়ি-মুড়কি, চিরা ভাজা, জিলাপী, মালপোয়া ইত্যাদি মিষ্টিজাতীয় দ্রব্য নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। শুধু এগুলোই নয়, হাতে তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, কাপরের পুতুল, বাচ্চাদের খেলনা, তৈজসপত্র, কাঠের ঠাকুরঘর আরও নানা রকম সামগ্রীও পাওয়া যায় রথের মেলায়।
🚩❣️🌹🙏
রথযাত্রার সমাপ্তি পর, শ্রী জগন্নাথ দেব, শ্রী বলভদ্র দেব, দেবী সুভদ্রার ব্যবহৃত রথ ও পুণ্য সামগ্রী কি হয় সেটাও পাঠক পার্টি টা দে জানিয়ে রাখি।
পুরান কাল হতে পুরী ধামের শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দিরে অধিষ্ঠিত শ্রী জগন্নাথ দেব, দেবী সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবের পুজো ও রথযাত্রার উৎসব সংক্রান্ত আচার অনুষ্ঠান এবং শ্রীজগন্নাথ দেব, শ্রীবলভদ্র দেব ও দেবী সুভদ্রার ব্যবহৃত পূর্ণ সামগ্রী উড়িষ্যা ও বাংলা তথা ভারতের ভক্ত জনেদের নিকট অতীব পবিত্র পূর্ণ সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
🚩❣️🌹🙏
রথ যাত্রার অনুষ্ঠান সমাপ্তির পর,এই পুরনো পূর্ণ সামগ্রী ব্যাবহার সংক্রান্ত বিষয়ে আমি অনেক গুলো মতামত জেনেছি, যেমন, বহু মান্যগন্য পুরীর সেবায়েতরা বলেন, রথযাত্রা শেষ হয়ে গেলে, সেই রথ ভেঙে রথের কাঠগুলো দিয়ে সারাবছর জগন্নাথ দেবের রন্ধনশালায় রান্নার জন্য ও রত যাত্রার উৎসব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
দ্ধিতীয় মতামত হলো, পুরোনো রথের কাঠগুলো দিয়ে খেলনা বানিয়ে পুরীর বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করা হয়।
🚩❣️🌹🙏
অন্য একটি মতামত হলো, রথযাত্রা শেষ হয়ে যাওয়ার পর, রথ তিনটি নিলাম হয়ে যায় । তারপর ভেঙে দেওয়া রথের ঐ কাঠ খুব শ্রদ্ধার সাথে উড়িষ্যা বাসীরা কিনে বাড়ি নিয়ে যান । উড়িষ্যা বাসীরা অনেকে সংস্কারবশত বিভিন্ন রকম ইচ্ছা পোষণ করে এই কাঠ নিয়ে । কোনো ব্যাক্তি জীবিত কালে নিজের ছেলেকে বলে যান, আমি মারা গেলে আমাকে যেন জগন্নাথের রথের কাষ্ঠ দ্ধারা ভস্মীভুত করা হয় , কেউ আবার ছেলের পৈতে বা বিবাহের অনুষ্ঠানের রান্না ঐ রথের কাঠ দিয়ে হওয়াটাকে খুব শুভ বলে মনে করেন,কেউ নতুন বাড়ির দালান কড়িবড়গা রথের কাঠ দিয়ে বানানোটা বাড়ির পক্ষে মঙ্গলজনক মনে করেন। এইসব বিভিন্ন কারণে পুরোনো রথের কাঠ খুব তাড়াতাড়ি নিলামে শেষ হয়ে যায় ।
🚩❣️🌹🙏
বন্ধুরা,পুরীর রথ নিয়ে উপরিউক্ত বিষয়ে কারো কোনো ভিন্ন মতামত জানা থাকলে, অবশ্যই জানাবেন। ভিন্ন মতামত জানার আগ্ৰহে অপেক্ষায় রইলাম। পুরীর পবিত্র রথ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার লেখায় কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে থাকলে আমাকে মার্জনা করবেন।
🚩❣️🌹🙏
জয় জগন্নাথ,।🚩❣️🙏
সকলকে রক্ষা করো প্রভু।।🚩❣️🙏