Bá Long 113

Bá Long 113 NHÓM BÁ LONG: NHẮN LÀ VÀO, CHÀO LÀ CẤP, KHÔNG PHÍ, KHÔNG MUA BÁN

18/10/2023

NGÁO cũng được, miễn sao giúp được anh em thì bảo tôi ĐIÊN cũng được

18/10/2023

Không có ti.ề.n NHỤC lắm các ông ạ, nghe mà thấm
Nhóm không thu phí, không nhận lộc
Tham gia ae cứ nhắn là tôi duyệt

18/10/2023

Chỉ vì vài đồng bạc lẻ mà em Thư Ký dám làm chuyện ấy
Nhắc lại nhóm tôi không thu phí, không nhận lộc
Anh em muốn tham gia cứ nhắn tin thẳng cho tôi

18/10/2023

Chủ Tịch tuyển được em Thư Ký hết nước chấm
Sân chơi không mua bán, không phí lộc
Anh em tham gia cứ nhắn tin là được duyệt

17/10/2023

Quá đau lòng, chỉ vì niềm tin đặt không đúng chỗ mà vợ con ra nông nỗi này
Nhóm không mua bán, không phí lộc
Anh em cứ nhắn là được duyệt

17/10/2023

Thanh niên liều lĩnh tất tay và nhận ngay cái kết đắng
Sân chơi không phí, không lộc, nhắn là vào
Nhóm vẫn đang mở cửa chào đón ae tham gia

17/10/2023

Thư ký xinh - ngon nhưng suy nghĩ quá chán làm Chủ Tịch thất vọng
Nhóm tuyệt đối nói không với thu phí, nhận lộc
Anh em muốn tham gia cứ nhắn là được duyệt

ĐIỀU MÀ MỌI NGƯỜI NÊN BIẾT VỀ TÔI (Bá Long)1. BÁ LONG LÀ AI???👉Bá Long tôi nay cũng ngoài ba mươi, đã trải qua 20 năm lă...
17/10/2023

ĐIỀU MÀ MỌI NGƯỜI NÊN BIẾT VỀ TÔI (Bá Long)
1. BÁ LONG LÀ AI???
👉Bá Long tôi nay cũng ngoài ba mươi, đã trải qua 20 năm lăn lộn ngoài xã hội, nếm đủ mùi đời. Cũng từng như anh em sống như thiêu thân rơi vào vòng xoáy mê muội của cuộc đời, không suy nghĩ, không phương hướng , không tương lai.
Mọi thứ dường như mất hết khi không 1 ai giúp đỡ. Đời này có thật sự quá khắc nghiệt...
👉Tôi đã từng mặc kệ đời. Nhưng tôi nhận ra rằng " Tự ngã tự đứng lên. Dám làm thì dám chịu". Quan trọng là bản thân có bản lĩnh hay không?
2. QUYẾT ĐỊNH CỦA BẢN THÂN:
👉Từ 1 con người không có gì trong tay. Sau ngần ấy năm lầm đường lạc lối và tự đứng lên trên đôi chân của mình thì kết quả cuối cùng cũng như mong đợi. Mọi thứ ngày hôm nay tôi đều có đủ: T.iền tài, địa vị xã hội, gia đình hạnh phúc, công việc kinh doanh thuận lợi, anh em luôn hết lòng vì mình. Đó là điều tôi cảm thấy hạnh phúc và xứng đáng.
👉Đam mê s.ố h.ọc từ thời đầu. Nên tôi thật sự thấu hiểu và đồng cảm với anh em, những con người muốn tìm kiếm cơ hội cải thiện thu nhập, giúp đỡ gia đình, trang trải cuộc sống. Tôi không dám tự nhận mình là người tài giỏi, nhưng với những điều tôi đã từng trải qua, có phương pháp, có kinh nghiệm sống để chia sẻ cho anh em, giúp anh em vững vàng tâm lí trong mọi cuộc chơi, bản thân không phải trả giá quá đắt vì những sai lầm không đáng có.
- Ở đời sống với nhau vì cái tình, anh em đến với tôi mà thay đổi suy nghĩ tích cực là điều đáng quý đáng trân trọng với Bá Long tôi.
📌THAM GIA CỘNG ĐỒNG NHÓM S.Ố BÁ LONG (MIỄN PHÍ)
ĐỦ TIN TƯỞNG AE NHẮN CHO TÔI, TÔI SẼ CHIA SẺ CÙNG ANH EM PHƯƠNG PHÁP TÔI CÓ.

30/06/2022

আসসালমুআলাইকুম 💝

😔বাঁশ কাকে বলে শুনেন😔কালকে এক বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়ে বাসায় আসতে প্রচুর লেট হয়েছিল।বাসায় আসার পর😑আম্মুঃ কিরে কই ছিলি?🙄...
30/06/2022

😔বাঁশ কাকে বলে শুনেন😔

কালকে এক বন্ধুর সাথে ঘুরতে গিয়ে
বাসায় আসতে প্রচুর লেট হয়েছিল।

বাসায় আসার পর😑

আম্মুঃ কিরে কই ছিলি?🙄

আমিঃ এইতো এক ফ্রেন্ডের বাসায়।😔
আব্বুঃ ছেলেটা এই মাত্র বাসায় আসলো খেতে দাও😎

তখন আম্মু আমাকে খেতে দিয়ে ভিলেন স্টাইলে এক এক করে 12 টা ফ্রেন্ড এর বাসায় ফোন দিলেন 😱😱

তার মধ্য ৫ জনই বললো হ্যা আন্টি ও ত এখানেই ছিলো 😊

২ জন বললো হ্যা আন্টি ও ত একটু আগেই বেরিয়ে গেল 🙂

৩ জন বললো অ্যান্টি ও তো এখানেই আছে পড়তেছে ফোন দেই 😍

১জন বললো টয়লেটে গেছে আন্টি 😁😁

আর একজন ত বেশি পাকনামী কইরা আমার কন্ঠ নকল করেই বললো হ্যা আম্মু কিছু বলবা 🤗🤗

এখন আমি বাম কানে কম শুনি😭😭
😑😑😑

©

❤️ভালোবাসা একটি ১৯ বছরের মেয়েতার প্রেমিকের কাছে গিয়ে বলল,,,মেয়ে: আমার ২০ তম জন্মদিনে তুমি আমাকে কি উপহার দিবে?ছেলেটা ম...
30/06/2022

❤️ভালোবাসা

একটি ১৯ বছরের মেয়ে
তার প্রেমিকের কাছে গিয়ে বলল,,,
মেয়ে: আমার ২০ তম জন্মদিনে তুমি আমাকে কি উপহার দিবে?

ছেলেটা মুচকি হেসে বললেন,,,
ছেলে: এখনও তো অনেক সময় আছে,
আর সময় হলেই তুমি তোমার জন্মদিনের উপহার পেয়ে যাবে!

বেশ কিছুদিন যাবার পর,
একদিন হঠাৎ করেই মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে যায়!
বাসার সবাই বেশ অস্থির হয়ে পড়ে!
কিছুই বুঝে উঠতে পাচ্ছিলো না কেও,
কি হয়েছে মেয়েটার?
তারপর সবাই মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে ডাক্তার অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর, তার পরিবার কে বলল,,,
মেয়েটির হার্টে একটি ফুটো ধরা পড়েছে,
এখন যদি খুব তাড়াতাড়ি হার্ট পরিবর্তন না করা যায়,
তাহলে হয়তো মেয়েটাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না!

সবাই এই কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।
মেয়েটির মা বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা।
মেয়েটির প্রেমিক নিলয়,,
তার বিষয়ে ডাক্তার এর কাছে থেকে সব কিছু শুনে বলল এ কিছুতেই হতে দিবে না সে।

তারপর নিলয় মেয়েটির রুমে গেলো,
দেখল তার ভালোবাসার মানুষটি বিছানায় শুয়ে আছে!
নিলয় কাছে যেতেই মেয়েটি বলল,,,

মেয়ে: নিলয় আমি মনে হয় আর বাঁচব না!
মেয়েটির চোখের পানি মুছে দিলো নিলয়!
আর বলল, কে বলছে তুমি বাঁচবে না? তুমি খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে।

মেয়ে: তুমি কি করে জানলে?ডাক্তার তো বলেছে আমার হার্টে একটি ছিদ্র আছে, আর আমাকে বাঁচানো সম্ভব না!
নিলয়: ধুর পাগলী!
তোমার কিচ্ছু হবে না,দেখো তুমি ভালো হয়ে যাবে!

এভাবে বেশ কিছুদিন যাবার পর মেয়েটি সম্পুর্ন সুস্থ্য হয়ে উঠে এবং বাসায় ফিরে যায়!
বাড়িতে ফিরেই সে নিলয় কে খুঁজতে থাকে! না পেয়ে,
নিলয় এর বাড়িতে চলে যায়।
নিল বাড়িতে কেউ নেই অবশেষে নিলয় এর ছোটো বোন এর দেখা পেলো মেয়েটি,,,,

মেয়েটি: কিরে তোমার ভাইয়া কোথায়?
নিলয় এর বোন কথা না বলেই হাত দিয়ে ইশারা করে নিলয় এর রুমটি দেখিয়ে বলে উঠলো টেবিল এর উপরে আপনার জন্য একটা চিরকুট রাখা
আছে!

মেয়েটি কথাটা শুনে দৌড়ে নিলয় এর রুমে গিয়ে চিরকুট হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করল!

প্রিয় তমা,,,
আমি জানি যেদিন তুমি এ চিরকুট পাবে,
সেদিন তুমি সম্পূর্ন সুস্থ হয়ে যাবে।
সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে আগের মত করে।
যেমনটা আমি তোমাকে বলেছিলাম।
আমি বলেছিলাম না তোমার কিচ্ছু হবে না।
দেখছ তাই হয়েছে।

তুমি আমার কাছে তোমার ২০ তম জন্মদিনে উপহার
চেয়েছিলে না।
অনেক ভেবেছি কিন্তু তোমাকে কি উপহার দিব ভেবে পাচ্ছিলাম না?
তোমার অসুস্থতায় কথা যখন ডাক্তার বলল,
আর যখন বলল একটি হার্ট খুজছিল,
তখন মনে হল তোমার জন্য এর চাইতে ভালো আর কোনো উপহার হয়না!

আমার হার্টই ছিল একমাত্র শ্রেষ্ঠ উপহার!
যা আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম।
মন খারাপ করো না? আমি আকাশের ঐ উপর
থেকে তোমাকে দেখবো!😥😥😥

রাতে বউয়ের সাথে তুমুল ঝগরা করেছি !!ওকে... বলেছি... "তুমি যদি মানুষের বাচ্চা হওতাহলেআমার সাথে কথা বলবে না"ব্যাস,কাজ হয়ে...
30/06/2022

রাতে বউয়ের সাথে তুমুল ঝগরা করেছি !!
ওকে... বলেছি... "তুমি যদি মানুষের বাচ্চা হও
তাহলে
আমার সাথে কথা বলবে না"
ব্যাস,কাজ হয়েছে, আর কথা বলে না। খালি
রাগে ফোলে। সারারাত নাক টেনে কান্না
করছে...
না নিজে ঘুমাচ্ছে না আমাকে ঘুমাতে
দিচ্ছে।

সকালে খেতে বসে দেখি আজব কান্ড,আমার
খাওয়ার পাশে খাতা কলম রাখা।
বললাম এগুলা কি..?
বউ তার খাতায় কি জানি লেখলো।
তারপর আমাকে দেখালো,
আমি পড়লাম। লেখা আছে..."আমি মানুষের
বাচ্চা,
তাই কোনোও কথা নাই" আজব কাহিনি। যাই
হোক...... সে নিজে আমাকে মাংস দিলো ৩
পিস।
আমি খাতায় লিখলাম, "২ পিস দাও"
খাওয়ার
মাঝে লিখলাম,"পানি দাও"।

রাতে ঘুমানোর আগে আমি শুয়ে আছি।
সে গুন গুন
করে গান গাইছে আর চুল আঁচড়াচ্ছে।
কি চমৎকার দৃশ্য
আমি খাতায় খস খস করে লিখলাম "প্রিয় জানু,
আগামিকাল
সকাল ৮ টায়
আমার অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে।
প্লিজ সকাল ৭ টায় ডেকে দিও।
চিঠি টা
বউয়ের হাতে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে
গেলাম।

ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা ৩৫।
চিৎকার
দিয়ে উঠে বসছি। এইটা কি......? পাশ ফিরে
দেখি বউ
নাই।
বউয়ের এর জায়গায় একটা চিঠি।
তারাতাড়ি
করে খুলে দেখি, একটা লেখা-- ওগো শুনছো
সকাল সাড়ে ৭টা বাজে প্লিজ উঠো
তোমার
দেরি হয়ে যাচ্ছে!!!

ভালোবাসি_প্রিয়পর্ব_১৭সুলতানা_সিমাঅনুভবেঃ রাশেদ আহমেদ অভিভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করবে শুনেও দিহান খুশি হতে পারল না। বরং কো...
30/06/2022

ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব_১৭
সুলতানা_সিমা
অনুভবেঃ রাশেদ আহমেদ অভি

ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করবে শুনেও দিহান খুশি হতে পারল না। বরং কোনো এক অজানা কারণে তার মন খারাপ হয়ে গেল। যে তন্দ্রাকে বিয়ে করার জন্য পরিবারের সবাইকে বলেছিল এ সম্পর্ক মেনে না নিলে সে সুইসাইড করবে আজ তার সাথে বিয়ে হচ্ছে শুনে সে অখুশি। ছোট একটা নিশ্বাস ছেড়ে দিহান তার চাচ্চুকে বলল"

_কাল মানে একটু বেশি তারাতাড়ি হয়ে গেল না?
_তারা তো তুমি আমাদের দিয়েছ এতদিন। তোমার পাগলামির জন্য একটা খুনির পরিবার থেকে বিয়ে আনতে হচ্ছে।
_মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে আমি আগে নিজের পায়ে দাঁড়াব তারপর বিয়ে করব।
_তুমি যেমন আমাদের পছন্দের বা মতামতের প্রয়োজন মনে করনি। আমরাও করছিনা। তোমার পাগলামি দেখে আমরা হ্যাঁ বলেছি মন থেকে নয়।
[একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ] যাইহোক আমি উনাকে কথা দিয়ে দিয়েছি কালই এনগেজমেন্ট হবে। যার যাকে ইনভাইট করার করে নাও। আমি ডেট পিছাতে পারব না।

কথাটা বলেই দিহানের বড় চাচ্চু সোফা ছেড়ে উঠে চলে গেলেন উপরে। দিহানের বাবা ও তার ছোট চাচ্চুরা উপরে চলে গেলেন। উনাদের পিছু পিছু উনাদের স্ত্রীরা যেতে লাগলেন দিহান বলল"

_দাঁড়াও সবাই।" দিহানের বড় মা লুপার মা ও তার মা দাঁড়িয়ে গেলেন। সবাই তার দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকালেন। দিহানের মা বললেন"
_ কি হয়েছে? কিছু বলবি?
_হুম।" দিহান ছোট করে হুম বলে লুপার দিকে তাকাল লুপা এসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে দিহানের দিকে তাকাল। দিহান ইশারায় ভরষা দিল। লুপা সবাইকে একে একে সবকিছু খুলে বলল। সবাই লুপার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

লুপা নীলের উপর বিরক্ত হয়ে সে চিল্লাচ্ছিল আর সেজন্যই নীল মুখ চেপে ধরছিল ধস্তাধস্তিতে খাটে পড়ে যায় আর সেই দৃশ্য তারা দেখে। এই ছোট একটা কারণে সবাই নীলকে এভাবে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিল। দিহানের বড় মায়ের চোখ থেকে টুপ করে এক ফুটা জল গড়িয়ে পরল। উনার কানে বেজে উঠল "আমি কিছু করিনি আন্টি বিশ্বাস করুন"। উনি নীলকে থাপ্পড় দিয়েছিলেন সেই দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠল। থাপ্পড়ের শব্দ এসে কানে বিকট শব্দে বাজল। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে দিলেন। শাওন নীলকে তিনি নিজের ছেলের মতো ভাবেন আলাদা একটা টান অনুভব করেন তাদের জন্য। আর তিনি কিনা এভাবে নীলকে মারলেন? কথা শুনালেন? চোখের পানিটা মুছে দিহানকে বললেন"

_নীলকে একটা ফোন দে। ওকে বল আমি ওকে ডাকছি।
_ওর ফোন বন্ধ বড় মা আর শাওন ও ফোন তুলছে না।"

দিহানের মা বললেন"আমরা সবাই মিলে নীলদের বাসায় যাই চল। মাত্র তো রাত আটটা বাজে। এখন যদি যাই বারোটা বাজার আগে চলে আসতে পারব। কাল দিহানের এনগেজমেন্ট আর নীল যদি না থাকে তাহলে শুধু দিহান নয় আমাদের সবারই খারাপ লাগবে।
_হুম সেটাই করি চল।[লুপার মা]

ইশি দিশা লুপা দিয়া রুহান ও দিহানের বাবা চাচ্চুরা বাদে সবাই বেরিয়ে গেল নীলদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। নীলেকে সাথে না নিয়ে কেউই বাসায় ফিরবেনা।

___________

জিহান মাত্র বাসায় ফিরেছে। আজকাল বাসায় তার মোটেও ভালো লাগেনা ভালো লাগবেই বা কি করে। বাসায় আসলে তাকে এমন একটা মানুষের সম্মুখীন হতে হয় যার জন্য তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে পেতে গিয়ে হারালো।

বন্ধুর বার্থডে পার্টিতে একটু বেশিই গিলে ফেলছিল। মাতাল হয়ে পরেছিল একটা রুমে। পরেছিল নাকি অন্যকিছু করছিল সে কিছুতেই মনে করতে পারেনা। তার শুধু মনে হয় সে ঘুমিয়ে ছিল। যখন চোখ খুলে তখন তাকিয়ে দেখে সে একটা মেয়েকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটাকে এমন ভাবে ধরে ঘুমাচ্ছে যেন মেয়েটা একটা কোল বালিশ।

গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে তার গায়ে কোনো জামা নেই। শুধু তাই নয় মেয়েটার গায়েও কোনো জামা নেই বললেই চলে ছোট ছোট দুটো জামা আছে শুধু গায়ে। জিহান এমন দৃশ্য দেখে তৎক্ষনাৎ ছিটকে দূরে সরে গেছিল। মেয়েটা বাকা ঠোঁটে হেসে উঠে বলেছিল"

_গুড মর্নিং মাই লাভ। "জিহান শুকনো দুকয়েক ঢোক গিলে বলল"
_ক ক কে আপনি।
_লারা। তবে অনেকজন লাইলি বলেও ডাকে তুমি চাইলে সেটাও ডাকতে পারো।
_এ এ এ এখানে কি ক ক করেন আপনি।
_এখানে কি করি? (একটু এগিয়ে জিহানের বুকে আঙুল স্লাইড করতে করতে) এখন তো কিছু করছিনা। যা করার তো আগে তুমি করলে।" জিহান আঁতকে উঠল। জ্বিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বলল"

_ক ক কি ক ক করেছি আমি?" লারা ফোন বের করে জিহানের সামনে একটা ভিডিও তুলে ধরল। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জিহান তার সামনে বসা মেয়েটাকে পাগলের মতো কিস করছে।

ভিডিওটা দেখে জিহানের দুনিয়া ওখানেই থমকে যায়। এই ভিডিও সোস্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সেদিন লারা তাকে বিয়ে করে।

জিহান ভেবেছিল লারার সাথে সে অন্যায় করেছে তাই লারা তাকে তাকে বিয়ে করতে এই ভয় দেখিয়েছে। কিন্তু এখন মনে হয় লারা তাকে বিয়ে করেছে এর পিছনে কোনো বড়সড় কারণ আছে। লারাকে বেশ সুবিধার মেয়ে বলে মনে হয়না তার কাছে তাই সে বিয়ে হয়েছে থেকে লারার থেকে আলাদা থাকে। এমনকি কোনো প্রয়োজন ছাড়া সে লারার সাথে কথাই বলেনা। আবার যখন বলে তখন খুব খারাপ ভাষা ব্যবহার করে।

_কবে আসলেন?" লারার কথায় ভাবাচ্ছেদ হয় জিহানের কপাল কুঁচকে লারার দিকে তাকায়। লারা একটা লাল শাড়ি পড়েছে লাল ব্লাউজ লাল চুড়ি। লাল রংটা তার অনেক প্রিয়। ছেলেদের নাকি লাল পড়তে নেই তাই সে তার পছন্দের রং দিয়ে তার জিএফ ঝিনুককে রাঙিয়ে রাখতো। লাল রংয়ে ঝিনুককে তার কাছে পরিদের মতো লাগতো। লারাকেও অনেক সুন্দর লাগছে লম্বা চুল গুলা অর্ধেক সামনে এনে রাখছে অর্ধেক পিঠ ছড়ানো। লারার ঠোঁটের পাশে একটা তিল যেটা তার গুলাকার ঠোঁটের সুন্দর্যটা আরও বারিয়ে দিছে। চোখের ঘন পাপড়ি গুলা চোখ দুটো টানাটানা করে রাখছে। জিহানের কপালের কুঁচকানো বিলিন হয়ে যায়। চোখে এক রাশ মুগ্ধতা নেমে আসে। লারা মেয়েটা এতো সুন্দর তার জানা ছিলনা হয়তো এভাবে খেয়াল করে দেখেনি বলেই সে জানতো না।

জিহানের এভাবে তাকানো দেখে লারা ইতস্তত হয়ে যায়। আচঁলে আঙুল পেছাতে পেছাতে এদিক ওদিক তাকায় আর আঁড়চোখে জিহানের দিকে তাকায়। এক সময় গলাটা একটু ঝেড়ে বলে উঠল"

_এভাবেই তাকিয়ে থাকবেন?

জিহান তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নেয়। একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। লারা আবারও বলে"

_আমি জিজ্ঞেস করছিলাম কবে আসলেন?
_একটু আগে। [বিরক্তি স্বরে]
_আপনার বাসা থেকে ফোন দিছিল আমাদের কাল যেতে বলল আপনার কোন ভাইয়ের নাকি এনগেজমেন্ট।
_কই আমাকে তো কেউ ফোন দেয়নি।
_আপনার ফোনটা বন্ধ আমিও দেয়েছি অনেকবার ফোন যায়নি।" জিহান পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল আসলেই তার ফোন বন্ধ। লারা আবার বলল"

_আমি উনাদের বলেছি কাল আমরা যাব। আমার লাগেজ গুছিয়ে নিছি। আপনার টা আমি গুছিয়ে দিব নাকি আপনি গুছাবেন?

লারার কথা শুনে জিহানের রাগ উঠে যায়। ধমকের স্বরে বলে "
_আমি বলেছি আমি যাবো? আর আমার অনুমতি ছাড়া তুমি তাদের যাবে বললে কেন?
_আপনার নিজের বাড়িতেই তো যাচ্ছি তাইনা? আপনার যেতে কোনো আগ্রহ নাই কেন?
_কারণ আমি আমার ফ্যামিলিকে সেফটি রাখতে চাই। কী মনে কর আমি বুঝিনা কিছু? আমাকে বিয়ে করার পেছনে যে অনেক বড় একটা কারণ আছে সেটা আমি খুব ভাল করে জানি। হতেও তো পারে তুমি আমার পরিবারের কাউকে মেরে দিলে?

_আপনি কিন্তু আমাকে ভুল বুঝছেন আপনি যা ভাবছেন আসলে তা নয়। বিশ্বাস করুন।
_তোমার মতো একটা প্রস্টিটিউটকে আমি বিশ্বাস করব? [লারার মুখ চেপে ধরে ] তুমি কাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছ জান? সি আই ডি পুলিশ জিহানকে। আমার মা একজন লইয়ার। অত সহজে তোমাকে ছেড়ে দিবনা আমরা। আগে খুঁজে বের করে নেই বিয়ে কেন করছ তারপর দেখবে কি শাস্তি দেই।

চলবে......।

29/06/2022

যেদিন_তুমি_এসেছিলে
(পর্ব_১২_১৩)
মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
ঘুনে পোঁকার অত্যাচার দেখেনি এমন মানুষ বোধ হয় বিরল। আবার নাও হতে পারে! কাঠের ওপর সে কি নিদারুণ অত্যাচার তার! আহনাফেরও এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে একটা অদৃশ্য ঘুনে পোঁকা একটু একটু করে তার মস্তিষ্ক কুটকুট করে কাটছে। কাকে সে মিস করছে সেটা সে জানে না। এটা নিয়ে অবশ্য তার কোনো সমস্যাও নেই। সবকিছু জানতে নেই। যা জানতে নেই তা কেন মস্তিষ্কে তল্পিতল্পা নিয়ে বসে থাকবে? সে তো এই অত্যাচার নিতেই পারছে না।

সে মন ও মস্তিষ্ককে এই অসভ্য কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে ধরেই নিল, বাবা-মাকে সে মিস করছে। নতুবা সেই ব্যক্তিটা শুধুই তার মা। নিশ্চয়ই মায়ের জন্য মন এমন করছে! মাকে কি একটা ফোন করবে? কয়টা বাজে এখন? বাংলাদেশ থেকে ফিরে যে শুয়েছে; ঘুম তো আসেনি। শুধু উদ্ভট সব চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে।

আলস্য ভঙ্গিতে বিছানা ছাড়ে। ঘুম ঠিকঠাকভাবে না হওয়াতে মাথা ঝিমঝিম করছে। জানালার কাছে এগিয়ে গিয়ে আলগোছে পর্দাটা।সরায়। একফালি সোনালী রোদ্দুর এসে পড়ে জানালার কপাটে। আহনাফ জানালার কাচগুলোও খুলে ফেলে। মিষ্টি রোদ গায়ে মাখলে হয়তো ভালো লাগবে। সে হেলতে-দুলতে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। মাথায় পানি দেয়। তবে অস্থিরতা কমে না। এমন হলে তো এত স্ট্রং মানুষটাও অসুস্থ হয়ে পড়বে।

বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে হোয়াটসএপে যায়। তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে মায়ের নাম্বারে ডায়াল করে।

রিং হওয়ার সাথে সাথেই আমেনা বেগম ফোন রিসিভ করলেন। হয়তো ফোন তার হাতেই ছিল। তিনি ফোনের স্ক্রিনে ছেলের মুখটি দেখে আনন্দিত হন।

মাকে দেখে আহনাফেরও ভালো লাগে। সে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে,'কেমন আছো মা?'

'আলহামদুলিল্লাহ্‌ বাবু। তুই কেমন আছিস?'

'আমিও আলহামদুলিল্লাহ্‌। শুধু মাথাটা একটু ব্যথা করছে।'

'সেকি! কখন থেকে?'

'বাড়ি ফিরে একটু শুয়েছিলাম। ঘুম হচ্ছে না। আবার এত জার্নি করলাম! সম্ভবত এজন্যই। একটু আগে থেকে মাথা ব্যথাটা অনুভব করলাম।'

'দেখেছিস যেতে না যেতেই আরো অসুস্থ হয়ে গেছিস! কত করে বললাম আর কয়টা দিন থাক। শুনলিই না আমার কথা। এখন তোর টেক কেয়ার কে করবে বল তো?'

'রিল্যাক্স আম্মাজান! একটু মাথা ব্যথাই তো? ঠিক হয়ে যাবে। তুমি অত চিন্তা কোরো না তো। তাছাড়া ক্যাথিওন তো আছেই।'

'সবসময় পাগলামি! বিড়াল করবে তোর দেখাশোনা?'

মায়ের রাগ দেখে আহনাফ হেসে ফেলে। বালিশে মাথা রেখে বলে,'কী যে বলো! ক্যাথিওন মানুষের চেয়ে কম না। অনেক ভালোবাসে আমায়। বুঝেছ?'

'আমার অত বুঝে কাজ নেই। তুই মেডিসিন নে এক্ষুণী। কড়া লিকারের চা খা।'

'সব হবে। তুমি এত ব্যস্ত হইয়ো না তো। বাড়ির সবাই কেমন আছে বলো?'

'সবাই ভালো। কিন্তু তোকে ছাড়া বাড়িটা বড্ড ফাঁকা লাগছে বাবু!'

'মন খারাপ করে না আমার সোনা মা। আমি আবার আসব। একটা কথা বলি?'

'তুই অনুমতি নিচ্ছিস কেন? বল না কী বলবি? খুব কষ্ট হচ্ছে বাবু?'

'না। তুমি আসবে আমার কাছে? কিছুদিন থাকবে?'

আমেনা বেগম চুপ করে থাকেন। নিষ্পলকভাবে দেখেন ছেলেকে। মৌনতা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করেন,'তোর কি মন খারাপ?'

'মন খারাপ' শব্দটি মনে মনে আওড়াতে থাকে আহনাফ। তার কি সত্যিই মন খারাপ? কাউকে মিস করলে কি মন খারাপ লাগে? হবে হয়তো! মায়ের সাথে কথা বলে শান্তি তো লাগছে; তবে কেন যেন মনে হচ্ছে মিস করা মানুষটি মা ব্যতীতও অন্য কেউ।

মাকে নিশ্চিন্তে রাখতে বলল,'আরে নাহ্! তোমাকে আমার কাছে রাখতে ইচ্ছে করে তাই বললাম। তুমি বাবার সাথে কথা বলে রেখো। এখন আমি রাখছি কেমন?'

'আচ্ছা। মনে করে মেডিসিন নিস কিন্তু। আর ফোন দিস রাতে।'

'ঠিক আছে। আল্লাহ্ হাফেজ।'

ফোন রেখে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে শুয়ে থাকে আহনাফ। পরক্ষণে মনে পড়ে ক্যাথিওনের কথা। ফিরে এসে সে সাথে সাথেই ক্যাথিওনকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। খাটেই তো ছিল। এখন কোথায় গেল? সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে পাওয়া গেল সোফার চিপায়। আহনাফ ধরতে গেলেই দৌঁড়ে পালাচ্ছে।

আহনাফ দাঁড়িয়ে পড়ে। কোমরে হাত রেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,'তোর আবার কী হলো? রাগ করেছিস?'

ক্যাথিওন আবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। জীবজন্তুর কথা বলার ভাষা নেই; হয়তো আছে তবে মনুষ্যজাতির সেই ভাষা বোধগম্য নয়। তবে ওদের চোখের ভাষাই যা বলার, যা বোঝানোর বুঝিয়ে দেয়। এই মুহূর্তে ক্যাথিওনের চোখের ভাষাও বলছে সে ভীষণ অভিমান করেছে আহনাফের ওপর।

আহনাফ সরল হেসে সোফায় বসে বলে,'তোর এত অভিমান আসে কোত্থেকে রে? তোকে কি ঐ বাড়িতে খেতে দেয়নি?'

বাড়ির কলিংবেলটা বেজে ওঠে তখন। আহনাফ উঠে যায় দরজা খুলতে। হলুদ গাউন পরে পাশের ফ্ল্যাটের সেই বাচ্চা মেয়েটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। সোনালী সিল্কি চুলগুলো ঘাড়ের ওপর ছড়ানো। চোখগুলো বাদামী। মুখে সবসময়কার মতো মিষ্টি হাসি। দেখে মনে হচ্ছে হলুদ পরী একটা! ওর হাতে ছোটো চায়ের ফ্লাক্স আর দু'পিস স্যান্ডউইচ।

মেয়েটির নাম হানি। সে সুন্দর করে হেসে স্পষ্ট ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল,'কেমন আছো আঙ্কেল?'

উত্তরে আহনাফও হেসে ইংরেজিতে বলল,'আলহামদুলিল্লাহ্‌,ভালো মামনি। তুমি কেমন আছো?'

'ভালো। মা তোমার জন্য খাবারগুলো পাঠিয়েছে।'

আহনাফ ওর হাত থেকে খাবারগুলো নিয়ে বলল,'ভেতরে আসো।'

হানিকে নিয়ে ভেতরে যায় আহনাফ। ক্যাথিওন দৌঁড়ে আসে হানিকে দেখে। হানি ও'কে কোলে নিয়ে আদর করে। আহনাফ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে,'বাপরে! ক্যাথি দেখছি হানির ভক্ত হয়ে গেছে।'

হানি হেসে বলল,'জানো আঙ্কেল, ক্যাথি তোমার ওপর ভীষণ রাগ করেছে।'

আহনাফ ফ্লাক্স থেকে কাপে চা ঢালে। এক চুমুক দিয়ে বলে,'হ্যাঁ, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। আমার কাছে আসছেই না।'

'তুমি এত দেরি করলে কেন এবার?'

'এক্সিডেন্ট হয়েছিল। তাই লেট।'

হানি আঁৎকে ওঠে। ছোটো মানুষ তাই সবকিছুতেই বেশি ভয় পায়। আহনাফ আশ্বস্ত করে বলল, এখন সে সুস্থ এবং ভালো আছে।
________
গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলে এখন যে যার পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। সকলেরই ভালো একটা রেজাল্ট চাই। সারা বছর বাউণ্ডুলেপোনা করলেও পরীক্ষার সময় সব সিরিয়াসনেস এসে প্রত্যেকের মাঝে ভর করে। যদিও অর্ষা এবং আহিল এর ব্যতিক্রম। ওদের সিট পাশাপাশি পড়লেও আশঙ্কা থেকেই যায়। যদি কড়া গার্ড পড়ে? তাহলে তো সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এজন্য পাশ মার্ক তুলতে যতটুকু না পড়লেই নয় ততটুকু পড়া নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নিচ্ছে বাকিরা।

অর্ষার চিন্তা-ভাবনা অবশ্য আরেকটু ভিন্ন। তার শুধু পাশ নয়; অবশ্যই ভালো একটা রেজাল্ট চাই। একমাত্র ভালো রেজাল্ট, ভালো একটা চাকরীই পারে তাকে মুক্ত, স্বাধীন একটা জীবন দিতে। তাই সে পুরোদমে নিজের পড়াগুলো কমপ্লিট করছে। মাঝেসাঝে আমেনা বেগম আহিল এবং অর্ষার রুমে গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। রেণু সময়মতো নাস্তা, চা, পানি এগুলো ঘরেই দিয়ে যাচ্ছে।

পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসে। প্রিপারেশন ভালো হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর নার্ভাসনেস কাজ করছে অর্ষার। এটা তো নতুন নয়। প্রতিবারই বোর্ড পরীক্ষার সময় তার এমন অনুভূতি হয়। নার্ভাস থাকলেও প্রথম পরীক্ষাটা বেশ ভালো হয় গ্যাঞ্জাম পার্টির।

এক্সাম শেষে হল থেকে বের হয়ে আশিক তো শার্টের কলার উঁচিয়ে বলে,'মামা! যা পরীক্ষা দিছি এবার বুঝলি? আমারে আর ঠেকায় কে?'

অর্ষা চোখগুলো বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করে,'গোল্ডেন আসবে তো?'

আশিক মুখ ঝামটা মেরে ধমকের সুরে বলে,'আমি অর্ষা নাকি? আমি আশিক।'

'গোল্ডেনের ওপরেও কি আরো ভালো রেজাল্ট আছে?' জানতে চাইল লামিয়া।

আশিক বলল,'নিচে আছে। আমি বলতে চাইছি, পরীক্ষা ভালো দিছি। আমার পাশ কেউ আটকাইতে পারবে না।'

জুঁই দুম করে ওর পিঠে একটা কিল বসিয়ে বলল,'ধুর! আজাইরা।'

আশিক মিথ্যে চোখ রাঙিয়ে বলল,'দেখ জুঁই, তোর কুইকুই আগে সহ্য করছি। কিন্তু এখন করব না। অন্যের গার্লফ্রেন্ড আমারে টাচ করুক এটা আমার পছন্দ না বুঝছিস?'

জুঁই তো উত্তরে মুখে কিছু বলল না। তবে উরাধুরা আরো কয়েকটা কিল, ঘুষি পিঠে বসিয়ে দিলো। অর্ষা জুঁইকে থামিয়ে বলল,'আহা! বেচারাকে আর মারিস না।'

আশিক কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,'একমাত্র তুই-ই আমাদের ছেলেদের কষ্ট বুঝিস অর্ষা। লাভ ইউ দোস্ত!'

আশিকের এই কথায় আহিল হেসে বলে,'কী বললি? অর্ষা আমাদের কষ্ট বোঝে? হাসালি!'

আহিলের মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। শেষ হওয়ার পূর্বেই অর্ষার হাতের কয়েক ঘা ওর পিঠে পড়ল। ব্যথায় নাকমুখ কুঁচকে ফেলে সে।

দিদার মিটিমিটি হেসে বলে,'কেন যে মামু সব জায়গায় মুখ খুলতে যাও!'

পর্ব_১৩

________________
গুমোট অন্ধকার আকাশ। সারি সারি কালো মেঘের ছড়াছড়িতে নীল-শুভ্র আকাশের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে গেছে। ভারী বর্ষণের প্রস্তুতি বোঝা যাচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছে অন্যদিকে কেমন যেন একটু কষ্টও লাগছে। কলেজ লাইফটাকে ভীষণ মিস করবে অর্ষা। মিস করবে তার প্রিয় গ্যাঞ্জাম পার্টিকে। ভার্সিটিতে কি সবাই একসাথেই পড়তে পারবে? হয়তো সেটা হবে না। কে যে কোথায় চলে যাবে কে জানে!

থাইগ্লাসে বিন্দু বিন্দু জল এসে জমা হয়েছে। আনমনে ব্যাগ গোছাচ্ছিল অর্ষা। দৃষ্টি জানালার দিকে যেতেই এক সাইড খুলে দেয়। বড়ো বড়ো ফোঁটায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। ভেতর থেকে ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার। জানালাটা লাগিয়ে দিয়ে আবারও কাপড় গোছানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আজই সে নিজেদের বাসায় চলে যাবে। রুহুল আমিন অর্ষাকে নিতে এসেছে মিনিট পাঁচেক হবে। বসার ঘরে বসে আমেনা বেগমের সাথে গল্প করছে এখন।

ব্যাগ গুছিয়ে অর্ষা নিজে রেডি হতে যায়। হিজাব বাঁধতে গিয়ে আয়নায় নিজেকে একবার পরখ করে নেয়। সময়গুলো কীভাবে যেন পানির স্রোতের মতো বয়ে গেল। সে একটু টেরও পেল না। ভালো সময়গুলো বোধ হয় এমনই হয়। বেশিক্ষণ থাকলেও মনে হয়, অনেক কম! আরেকটু সময় থাকলে ভালো হতো। এসব ভাবতে ভাবতেই তার ঠোঁট হালকা প্রসারিত হয়। আচমকা খেয়াল করে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহিল।

অর্ষা মৃদু হেসে বলল,'ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।'

'বসার ঘরে তোর ভাইকে দেখলাম। তুইও রেডি হচ্ছিস। চলে যাবি নাকি আজই?'

হিজাবে পিন সেট করতে করতে অর্ষা প্রত্যুত্তর করল,'হুম।'

'আশ্চর্য! মাত্র গতকাল পরীক্ষা শেষ হলো। আর আজই চলে যাচ্ছিস? কাল তো বললিও না আমায়।'

'আরে আমিই তো জানতাম না। একটু আগে ভাইয়া এসে বলল রেডি হতে।'

'এসেছে ভালো হয়েছে। দুপুরে খেয়ে-দেয়ে চলে যাবে। তুই কোথাও যাবি না। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলছি।'

'মানে কী?'

'মানে তুই আরো কয়েকটা দিন এই বাড়িতেই থাকবি। গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলে মিলে আমরা ঘুরতে যাব।'

কথা শেষ করে আহিল বসার ঘরের দিকেই যাচ্ছিল; অর্ষা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পিছু ডেকে বলল,'শোন, শোন!'

আহিল দাঁড়ায়। পিছু ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

অর্ষা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে,'বাড়িতে ভাবির অনেক কষ্ট হয়ে যায়। তিয়াস তো ছোটো। ও'কে সামলানো আবার বাড়ির কাজ! বুঝিসই তো।'

আহিল বিরক্ত হয়ে বলে,'তুই বাড়ির কাজের লোক নাকি?'

'এ কথা বলছিস কেন? ওটা আমারও তো বাড়ি।'

'তোকে বাড়ির লোক বলে তো গণ্য করে না তারা।'

'তুই এত ক্ষ্যাপা কেন আমার পরিবারের ওপর?'

'উত্তরটাও তোর খুব ভালো করেই জানা আছে।'

'যা হোক, তুই ভাইয়াকে কিছু বলিস না। অনেকদিনই তো থাকলাম। আর কত? তাছাড়া ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারেও কোনো সমস্যা নেই। কবে, কোথায় যাবি আমাকে জানিয়ে দিস তাহলেই তো হলো।'

'তার মানে তুই যাবিই?'

অর্ষা অসহায় দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। আহিলও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শান্তকণ্ঠে বলল,'ঠিক আছে। সাবধানে যাস।'

অর্ষার ঠোঁট প্রসারিত হলো। আহিল যে রাগ করেনি এটাই অনেক! সে খুশি হয়ে বলল,'থ্যাঙ্কিউ দোস্ত।'

প্রত্যুত্তরে আহিল হালকা হেসে ড্রয়িংরুমে চলে যায়। অর্ষারও তৈরি হওয়া শেষ। তাই সে ব্যাগ নিয়ে বসার ঘরে যায়।

রুহুল আমিনের উদ্দেশ্যে বলে,'ভাইয়া চলো।'

রুহুল উত্তর দেওয়ার আগেই আমেনা বেগম বললেন,'চলো আবার কী? সকালে না খেয়েই যাবে নাকি?'

'এখন ক্ষুধা নেই আন্টি।' বলল অর্ষা।

'আমি সেসব শুনছি না। খেয়ে তারপরই যেতে হবে। রুহুল তুমিও আসো।'

অগত্যা অর্ষা ও রুহুলকে খেতে বসতে হলো। জহির চৌধুরী আরো আগেই অফিসে চলে গেছেন। আমেনা বেগমও তার সাথেই সকালের নাস্তা করে নিয়েছেন। এখন শুধু অর্ষা, আহিল আর রুহুল খাচ্ছে। রেণুও আরো সকালেই খেয়ে নিয়েছে। খেতে খেতে আমেনা বেগম আর রুহুল গল্প করছে। অর্ষা এবং আহিল নিশ্চুপ হয়ে খাচ্ছিল আর ওদের গল্প শুনছিল।

খাওয়ার পাট চুকিয়ে অর্ষা বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠে বসে। অনেকদিন এখানে থাকায় মায়া জন্মে গেছে বিধায় এখন বেশ খারাপও লাগছে। বাড়িতে পৌঁছে ভেতরে যেতেই তিয়াস 'ফুপি, ফুপি' বলে দৌঁড়ে আসে।

অর্ষা হাত বাড়িয়ে তিয়াসকে কোলে তুলে নেয়। গালে, মুখে চুমু দিয়ে আদর করে। তিয়াসও অর্ষার গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে। দেখে মনে হচ্ছে কত শান্তশিষ্ট! কিন্তু তিয়াস ভীষণ চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে।

কুসুম বারান্দায় বসে সিলিন্ডারে গ্যাসের চুলায় রান্না করছিল। তিয়াসকে কোলে নিয়েই অর্ষা কুসুমের কাছে যায়। জিজ্ঞেস করে,'কেমন আছো ভাবি?'

কুসুমের মুখ অন্ধকার। সে চোখমুখ কালো করেই বলল,'ভালো।'

একটু থেমে ফের বললেন,'আসলি কেন? ওখানেই পার্মানেন্টলি থেকে যেতি। নবাব-নন্দিনী হয়ে গেছিস না তুই!'

অর্ষা মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকা। বাড়ি ফেরার যেই আনন্দটুকু সাথে করে নিয়ে এসেছিল, তা এখন কুসুমের তিরস্কারে নষ্ট হয়ে গেছে।

তিয়াস ওর মায়ের রাগের প্রতিবাদ করে বলল,'ফুপিলে বকবা না। মালব তোমালে।'

অর্ষার প্রতি ছেলের এত দরদও কুসুমের সহ্য হয় না। রুহুল এই পর্যায়ে কুসুমকে মৃদু ধমক দিয়ে বলল,'থামবে তুমি?'

এরপর অর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল,'তিয়াসকে আমার কোলে দে। তুই ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হ।'

অর্ষা কোনো বাক্যব্যয় করল না। তিয়াসকে ভাইয়ের কাছে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে ভেতরে চলে গেল। কুসুম বেশ জোরে জোরেই অর্ষাকে শুনিয়ে রুহুলকে বলছিল,'এতদিন তো পরীক্ষা শেষ হোক, শেষ হোক বলে বোনকে আহ্লাদ দিয়ে রেখেছিলে। এখন তো পরীক্ষা শেষ। আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে পারব না বলে দিলাম। এবার নিজের রাস্তা নিজেকে দেখতে বলো। হয় চাকুরীবাকরি কিছু করতে বলো; নয়তো বিয়েশাদী দিয়ে দাও। অনেক করেছে আরাম-আয়েশ।'

রুহুল কিছু বলেছে কিনা অর্ষা শোনেনি। তবে কুসুমের কথা শুনেই তার চোখ ফেটে অশ্রু নির্গত হয়। ভাই-ভাবির সংসারে বুঝি সে এত বেশি হয়ে গেছে? হাতের উলটোপিঠে চোখ মুছে নেয় সে। কুসুম না বললেও সে চাকরী করত এবার। কারও গলগ্রহ হয়ে থাকার ইচ্ছে তারও নেই।

ফ্রেশ হয়ে অর্ষা বারান্দায় আসে ফের। কুসুমকে বলে,'তুমি ওঠো। আমি রান্না করছি।'

কুসুম কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকে। এরপর উঠে চলে যায় ঘরে। তিয়াসকে সাথে নিতে চেয়েছিল কিন্তু তিয়াস যায়নি। রান্না করতে করতে তিয়াসের সাথে দুষ্টুমি করছিল অর্ষা। তিয়াসের সুড়সুড়ি অনেক বেশি। একটু সুড়সুড়ি দিলেই খিলখিল করে হেসে ওঠে। অর্ধেক রান্না কুসুমই করে ফেলেছিল। তাই অর্ষার রান্না শেষ করতে বেশি সময় লাগল না। ভাত, তরকারি সব ঘরে রেখে এসে বারান্দা আর উঠান সুন্দর করে ঝাড়ু দিলো। এরপর তিয়াসকে গোসল করিয়ে, মাথায় তেল, শরীরে লোশন দিয়ে খাইয়ে দিয়েছিল। কুসুমের কাছে দিয়ে আসার পরও তিয়াস থাকবে না। আজ ছাড়ছেই না সে অর্ষাকে। কুসুম বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ষার দৃষ্টি অসহায়।

কুসুম ছেলের রাগ অর্ষাকে দেখাল। জোরে ধমক দিয়ে বলল,'কাঁদাচ্ছিস কেন? দেখছিস থাকতে চাচ্ছে না এখানে, তবুও জোর করছিস। এখন ওর ঘুমানোর সময়। ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাস।'

অর্ষা কিছু বলল না। তিয়াসকে কোলে করে বাইরে বেরিয়ে এলো। তিয়াসের মাথা ওর কাঁধে রেখে পিঠে হালকা চাপড় দিতে দিতে ছড়া বলছে অর্ষা। বারান্দায় আর উঠানে হাঁটাহাঁটি করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে। সেই সময়ে লামিয়া আর জুঁই এসে বাড়িতে উপস্থিত হয়।

ওরা চেঁচাবেই তার আগেই অর্ষা ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে ইশারায় চুপ করতে বলল। ফিসফিস করে বলল,'তিয়াস ঘুমাচ্ছে।'

ওরা-ও সাবধান হয়ে যায়। ফিসফিস করেই বলল,'বাড়িতে যে চলে আসবি জানাসনি কেন?'

'আমিই জানতাম না।'

'ছাই! আহিলও বাসায় নেই। ঐ বাড়িতে গিয়ে তোদের না পেয়ে ভাবলাম, পালিয়ে গেলি নাকি আবার! পরে রেণু আপু বলল তুই চলে এসেছিস। আর আহিল কোথায় গেছে জানে না। ফোন দিলাম কোনো রেসপন্স নাই।' কথাগুলো বলল জুঁই।

অর্ষা মৃদু ধমকেরসুরে বলল,'থা'প্পড় খাবি। পালাব কেন আমরা? আমাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক নাই।'

'আরে ভাই! মজা করছি। রাগ করিস না জানু।'

লামিয়া অর্ষার এক হাত ধরে বলল,'বাদ দে তো এসব। জরুরী একটা খবর দিতে এসেছি। কাল আমরা গ্যাঞ্জাম পার্টি মিলে ঘুরতে যাচ্ছি। সাথে নিহাল আর সুবাস ভাইয়াও যাবে।'

'তোরা কাপলরা যাবি যা। মাঝখান থেকে আমাদের কেন কাবাব মে হাড্ডি বানাচ্ছিস?'

লামিয়া মুখটা একটুখানি করে বলল,'এটা কোনো কথা বললি বোকারানী? এর আগেও তো আমরা রেস্টুরেন্টে কত দেখা করেছি। আমি কি তোদের চেয়ে ও'কে বেশি সময় দিয়েছি বল? প্লিজ! তুই না করিস না। তুই বেঁকে গেলে গ্যাঞ্জাম পার্টির বাকি কেউই যাবে না।'

লামিয়ার সাথে জুঁইও অনুরোধ করে বলল,'প্লিজ! প্লিজ! সোনাপাখি না করিস না।'

ওদের বাচ্চামো দেখে অর্ষা হেসে ফেলে। বলে,'আচ্ছা ঠিক আছে যাব।'

ওরা খুশি হয়ে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে। তিয়াস নড়েচড়ে উঠতেই অর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,'তুই সকালে রেডি হয়ে থাকিস। আমরা দশটায় মাইক্রো নিয়ে আসব। তোকে বাড়ি থেকেই পিক করব।'

'আচ্ছা।'

'এখন তাহলে যাই। কাল দেখা হবে।'

'বসবি না?'

'না রে। নিহালের সাথে দেখা করতে হবে।'

অর্ষা হেসে বলল,'আচ্ছা। সাবধানে যাস।'
রাতে ঘুমানোর সময় কেয়াকে চাকরীর ব্যাপারে বলল অর্ষা। কেয়া কাৎ হয়ে শুয়ে বলল,'একটা শো-রুমে লোক নেবে একজন। কিন্তু সমস্যা হলো মালিকের বউ খুব দজ্জাল স্বভাবের।'

অর্ষা হেসে বলে,'তাতে কী? কাজ ঠিকঠাকভাবে করলেই তো হলো।'

'পারবি তুই?'

'পারতে হবে।'

'আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে গিয়ে কথা বলব। এখন ঘুমা।'

'আচ্ছা।'

সকালে ভোরের দিকেই অর্ষার ঘুম ভাঙে। ফজরের নামাজ পড়ে চুলায় ভাত বসিয়ে দেয়। তরকারি কেটে বারান্দা, উঠান সব ঝাড়ু দেয়। রান্নাবান্না শেষ করে থালাবাসন ধুয়ে ফেলে। এই বাড়িতে কেউ তেমন চা খায় না বলে, সকালে চা বানানোর বাড়তি ঝামেলাটা নেই। কেয়া আর রুহুল খেয়ে-দেয়ে কাজে চলে যায়। কুসুম নিজের ঘরেই খায়। অর্ষাও খেয়ে-দেয়ে সবকিছু গোছগাছ করে রাখে ঘুরতে যাবে বলে। যাওয়ার সময় তো বলে গেছিল দশটার দিকে আসবে। এখনো হাতে সময় আছে তাই ময়লা কিছু কাপড়-চোপড় সাবান দিয়ে ভিজিয়ে ধুয়ে শুকাতে দেয়। কাপড় ধুতে গিয়ে নিজেও অনেকটা ভিজে গেছে তাই গোসলটাও সেরে ফেলে। কখন ফিরবে আজ তারও তো ঠিক নেই।

বোরকা পরে হিজাব বাঁধছিল তখন তিয়াসকে কোলে নিয়ে কুসুম আসে ঘরে। জিজ্ঞেস করে,'রেডি হচ্ছিস যে? কোথাও যাচ্ছিস?'

'তোমাকে কাল বললাম না? সবাই মিলে ঘুরতে যাব।'

কুসুম একটুখানি সময় চুপ করে থেকে বলল,'যাওয়া লাগবে না আজ ঘুরতে। কেয়া ফোন করেছিল। শো-রুমের মালিকের সাথে কথা বলেছে। তারা আজই যেতে বলেছে।'

অর্ষা আহত হয়। বিমর্ষ হয়ে বলে,'ভাবি কাল থেকে যাই প্লিজ? ওরা অনেক আশা নিয়ে আসবে। আমি না গেলে নিরাশ হবে।'

কুসুমের মেজাজ গরম হয়। সে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে,'তোর মামার বাড়ি নাকি ঐটা যে যখন মন চায় তখন যাবি! চাকরী কি তোর চেহারা দেখে দেবে? আজ না গেলে যখন অন্য কাউকে নিয়ে নেবে তখন? আবার বসে থাকবি নতুন চাকরীর জন্য। বসে বসে গিলবি। ঐ আশা বাদ দে। আর তোর বন্ধুরা যে নিরাশ হবে বললি, ওদের নিরাশ হওয়ায় আমার কী? ওরা তোকে খাওয়ায়? নাকি পড়ায়?'

অর্ষার বলার মতো কিছুই নেই। আবার চাইলে হয়তো অনেক কিছুই বলতে পারে। কিন্তু যাদের আশ্রয়ে থাকছে, খাচ্ছে তাদের মুখের ওপর বলবেই বা কী? এ কথাও তো সত্য, চাকরীটা তার খুবই প্রয়োজন!

কুসুম কড়াকণ্ঠে বলল,'কোনো রকম কান্নাকাটি ছাড়া এখনই যাবি।' বলে বিশ টাকার নোট গুঁজে দিলো হাতে।

অর্ষা তাই করল। হিজাব বাঁধা শেষ করে কেয়ার শো-রুমে চলে গেল। পথিমধ্যে হাতের উলটোপিঠে এতক্ষণ যাবৎ লুকিয়ে রাখা অশ্রু কণাগুলো মুছে নিল।
________
আহনাফ জগিং করে বাড়িতে ফিরে এসে ক্যাথিওনকে গার্ডেনে পায়। লেজ গুটিয়ে বসে ছিল। আহনাফকে দেখেই দৌঁড়ে কাছে চলে যায়। ক্যাথিকে কোলে তুলে মাথা চুলকে দেয় আহনাফ।

ভেতরে গিয়ে ক্যাথিকে ড্রয়িংরুমে রেখে গোসল করে রেডি হয়ে আসে। ডাইনিংরুমে গিয়ে ক্যাথিকে ওর খাবার দিয়ে নিজের খাবার খেয়ে নেয় আহনাফ। বাইরে যাওয়ার আগে ক্যাথিকে আদর করে বলে,'দুষ্টুমি করবি না। বাসার কোনো জিনিস কিন্তু এলোমেলো করবি না বলে দিলাম।'

ক্যাথি চোখ দুটো পিটপিট করে তাকাল। এর অর্থ হচ্ছে সে আহনাফের কথা রাখবে। আহনাফও হেসে দরজা বাইরে থেকে লক করে অফিসে চলে যায়। সুইজারল্যান্ড এসেছে অনেকদিন। কিন্তু মনটা মনে হয় সেই বাংলাদেশেই রেখেছে। এর আগে তো অনেকবার তাকে বাংলাদেশে যেতে হয়েছে; আবার দরকার শেষে সুইজারল্যান্ডে ফিরেও আসতে হয়েছে। কখনো তো এমন হয়নি।

অফিসে গিয়ে সে মাকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে অফিসের কাজে মনোনিবেশ করে।
দুপুরের লাঞ্চ টাইমে বাংলাদেশ থেকে হোয়াটসএপে ভিডিয়ো কল করে ইমরান।

আহনাফ খেতে খেতেই বাম হাতে ফোন রিসিভ করে বলে,'কী অবস্থা? হঠাৎ কী মনে করে?'

ওপাশ থেকে ইমরান বলল,'খাচ্ছিস নাকি? পরে ফোন করব?'

'আরে না। সমস্যা নাই বল।'

'কেমন আছিস?'

'আল্লাহ্ রেখেছে ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। তোর কী খবর বল?'

'আমিও আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। ফোন করেছি একটা দরকারে।'

'তা আমি জানি। নয়তো গার্লফ্রেন্ডকে কল না দিয়ে কি ইমরান আমায় কল করে?' কথা শেষ করে আহনাফ মুচকি হাসে।

ইমরানও হেসে বলে,'লজ্জা দিস না তো!'

'আচ্ছা বল কী দরকার?'

'আগামীকাল গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন। তো ও'কে ড্রেস থেকে শুরু করে কসমেটিক্স, জুতা সব গিফ্ট করতে চাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হলো, এসবে মানে মেয়েদের জিনিস-পত্র কেনায় আমি খুব আনাড়ি। তুই তো আফরিন আর আন্টির জন্য সবসময় নিজেই পছন্দ করে সবকিছু কিনিস। তোর পছন্দও একদম চোখ ধাঁধানোর মতো। তাই ভাবলাম, তুই-ই পারবি আমায় সাহায্য করতে।'

আহনাফ হেসে বলল,'বাপ্রে! গার্লফ্রেন্ডের ড্রেস,কসমেটিক্স পছন্দ করে দেওয়ার জন্য সুদূর বাংলাদেশ থেকে সুইজারল্যান্ডে বন্ধুকে ফোন করছিস? ভাই তোর নাম তো গিনিস বুকে দেওয়া উচিত।'

'পিঞ্চ মারিস না সবসময়? যখন নিজের কেউ আসবে তখন বুঝবি বুঝলি!'

'অত বুঝে কাজ নেই। কী পছন্দ করতে হবে দেখা।'

'ওয়েট। আমি শো-রুমেই আছি। দেখাচ্ছি।' বলে ব্যাক ক্যামেরা অন করে ইমরান।

কাউন্টারে গিয়ে ওউনারকে বলে,'আমি জুয়েলারি, কসমেটিক্স এসব দেখতাম। এদিকের সেলসম্যান কোথায়?'

ওউনার ইমরানকে হাসিমুখে বলল,'ডেকে দিচ্ছি।'
এরপর সে ঘাড় ঘুরিয়ে একটা ছেলেকে ডেকে বলল,'নতুন মেয়েটা কোথায়? ও'কে ডাক।'

ছেলেটি এখান থেকেই নাম ধরে ডাকে,'অর্ষা, অর্ষা। ম্যাডাম তোমাকে ডাকছে।'

অর্ষা নামটি শুনে চকিতে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায় আহনাফ। খাওয়া শেষ করে নিজের কেবিনের দিকে যাচ্ছিল বলে দৃষ্টি ছিল পথের দিকে। এবার সে স্ক্রিনেই দৃষ্টি রাখে। দেখতে পায় ঝাড়ু হাতেই অর্ষা তড়িঘড়ি করে এদিকে আসছিল। এবং এটা সেই অর্ষা, নাম শুনে যার কথা আহনাফের প্রথম মনে এসেছিল। কিন্তু মেয়েটা এখানে কেন? তাও ঝাড়ু দিচ্ছে!

সে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। ছেলেটি অর্ষার হাত থেকে ঝাড়ুটি রেখে ফিসফিস করে কিছু বলল। অর্ষাকে একটু ভীত-ই দেখাল। সে কাউন্টারে আসতেই ওউনার রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,'উনি কী দেখবে দেখাও।'

অর্ষা হাসার চেষ্টা করে কসমেটিক্সের সাইডে গেল। ঘেমে চেহারার অবস্থা খারাপ। হাত দিয়ে বারবার ঘাম মুছেও কোনো লাভ হচ্ছে। অর্ষা যতটা সম্ভব হাসার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করল,'কী লাগবে স্যার?'

সেলসম্যানের প্রথম কাজটাই হচ্ছে হাসি-খুশি থাকা সর্বদা। যত কষ্টই হোক, খারাপ লাগুক না কেন কাস্টমারের সামনে একদম সেসব প্রকাশ করা যাবে না। সবসময় হাসির মুখোশ লাগিয়ে রাখতে হবে। কাস্টমারদের কথা বলে কনভেস করতে হবে।

ইমরান হেডফোন লাগিয়ে ছিল বিধায় আহনাফের কথা অর্ষা শুনতে পাবে না। ইমরান বলল,'সব ব্যান্ডের লিপস্টিক, মেকআপ করতে যা যা প্রয়োজন সেগুলো দেখান।'

অর্ষা একে একে সব বের করে সামনে ডেস্কের ওপর রাখছিল। আহনাফ তখনো নির্নিমেষ দৃষ্টিতে ঘর্মাক্ত চেহারার অর্ষার শুকিয়ে যাওয়া মুখটি দেখছিল। মেয়েটার প্রতি একটা সফট্ কর্ণার বোধ হয় রয়েছে তার!

চলবে...

Address

69 Suong Nguyet Anh Street , Ben Thanh Ward, Dist. 1,
Ho Chi Minh City
1000

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bá Long 113 posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Bá Long 113:

Share