23/03/2023
"একটি অপার্থিব সকালের গল্প"
প্রতিদিনের মতোই এলার্ম এর বিকট আওয়াজ এ ঘুম ভাঙলো। আমার খুব পছন্দের একটা গান দিয়েছি এলার্ম এ। কিন্তু সকালের এতো সুন্দর ঘুমটা যে সাউন্ড এ শেষ হয়, তা শুনতে বিকট ই লাগে।
কিন্তু আজকে মেজাজটা খারাপ লাগছেনা ঘুম ভাঙাতে। কেমন যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে মনের ভিতর। মনে হচ্ছে আজকের দিনটা অন্য সব দিনের মতো না।
এই সব অদ্ভুত ভাবনা চিন্তা পাত্তা না দিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে। নাস্তা বাইরে কোথাও করে নিবো ভেবে শুধু হাতমুখ ধুয়েই বের হয়ে গেলাম।
আকাশ একদম কালো। এই ভয়াবহ গরমেও একটু ঠান্ডা লাগছে আজকে। অঝোরে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। মনটাই ভালো হয়ে গেলো। কিন্তু একটু টেনশন ও হচ্ছে। ইদানিং একটা সমস্যা শুরু হয়েছে। যখনি বৃষ্টি হবে হবে ভাব অথবা বৃষ্টি হচ্ছে, এমন সময় কোনো রিকশাওলাই রাজি হবেনা আপনাকে নিতে। খালি যাবে, তাও আপনাকে নিবেনা। মনে হবে যেন আপনি ওর শত্রু!
আমিও যথারীতি তাঁদের বন্ধু হতে পারলাম না। একটা বন্ধ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। কাকভেজা হতে ইচ্ছে করছেনা একটুও। ৩টা খালি রিকশা চলে গেলো। এই রাস্তায় এই সময় কোন সি এন জি ও আসবেনা। তাই দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। কিছুটা ডুবেও গেলাম বৃষ্টির শব্দে।
হঠাৎ একটা খুব সুন্দর পারফিউম এর গন্ধে আমার সম্ভিত ফিরে আসলো। পাশে তাকিয়ে আমার আক্কেলগুড়ুম হবার অবস্থা। এই রকম সুন্দর মুখ আমি কখনও দেখিনি এখন পর্যন্ত। 'মায়াবতী' শব্দটা হয়তো হুমায়ূন আহমেদ এইরকম কাউকে দেখেই প্রথম ব্যবহার করেছিল। আমি মেয়েটার নাম সাথে সাথে 'মায়া' রেখে দিলাম।
একটা সাদা ধবধবে ড্রেস পড়েছে। গলায় রুবী পাথরের হালকা পেস্ট রঙের একটা মালা। দেখে মনে হচ্ছে এই জামাটার জন্যই এই গলার অলংকারটা বানানো হয়েছে। আর এই দুটো জিনিসই যদি এই অপ্সরীর মতো দেখতে মেয়েটা না পড়তো, তাহলে আর কাউকেই এতো ভালো লাগতোনা।
কিন্তু মায়া খুব বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। এত সকালে হয়তো এত বৃষ্টির আশা করেনি। কিংবা এই মেজাজ খারাপের আরও ২/৩ টা কারণ হতে পারে:
১. খুব সুন্দর করে সেজেছে সে, কিন্তু বৃষ্টির পানিতে চুলটা একটু এলোমেলো হয়ে গেছে।
২. হালকা নীল রঙের ছাতাটা মনে হয় বাতাসে ভেঙে গেছে।
৩. এই পয়েন্ট টা হয়তো আমার মেজাজ খারাপের সাথে মিলে গেছে।
আমি আস্তে আস্তে বললাম, "রিক্সা পাওয়াটা খুব কঠিন হবে।" কিন্তু মায়া মনে হয় শুনতে পায়নি। এইরকম প্রায়ই হয় আমার সাথে। খুব সাহস নিয়ে কথা বলতে গেলে দেখা যায় ঐ সময়ই এতো আস্তে বলে ফেলি যে কেউ শুনতে পায়না। কি হতো, মায়া যদি আমার কথাটা শুনতে পেতো!!
আমার এখন সবকিছুই ভালো লাগছিলো। মায়া আর আমি একদম পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। আমার মনে হচ্ছে, আমি ওর পাশে এভাবে দাঁড়িয়ে জীবন পার করে দিতে পারবো। নিজের ভাগ্যকে খুব বাহবা দিতে মন চাইলো। এই জন্যই হয়তো সকালে উঠেই অন্যরকম লাগছিলো!
কিন্তু ভাগ্য হয়তো অন্য কিছু চিন্তা করে রেখেছিলো আমার জন্য। মাটি ফুঁড়ে মনে হয় একটা রিক্সা চলে আসলো।
'কোথায় যাবেন আপা' শুনে মনে হলো, ও যেন মেয়েটিকে নিতেই এসেছে। আমি যে পাশে দাঁড়িয়ে আছি ওর চোখেই পড়েনি।
মায়া রিক্সায় উঠে ওড়না টা ঠিক করে বসেছে। এইতো রিক্সা চলতে শুরু করলো। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ধুর!!
'আপনি কোন দিকে যাবেন?' শুনে চমকে তাকিয়ে দেখি মায়া রিক্সা থেকে মাথাটা অল্প একটু বের করে আমাকেই বলছে। একটা কথা আছে না, টাশ্কি খাওয়া? আমার ঐ অবস্থাই হলো। এর সাথে প্রচন্ড ভালো লাগাটাও কাজ করছিলো।
এইতো, সেন্ট্রাল রোড পর্যন্ত গেলেই হবে। বলেই মনে হলো এই অদ্ভুত মেয়েটাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। ও নতুন কেউ না। যেন প্রতিদিন কথা হয় আমাদের। এত আপন করে কথা কেউ বলে?
"এই বৃষ্টিতে মনে হয়না আপাতত আর কোনো রিক্সা পাবেন। আমার পাশে বসতে কোন প্রবলেম নাই তো?" আমি বাধ্য ছেলের মতো পাশে গিয়ে বসলাম। একটা বার ভদ্রতার খাতিরেও বললাম না যে থাক, আপনি একাই যান। আমাকে দেখলে মনে হবে, আমার জন্মই হয়েছে ওর কথা শুনার জন্য!
আমার জীবনে এত সুখের দিন কখনোই আসেনি। এইরকম একজন চোখ ধাঁধানো সুন্দর মানুষ আমার পাশে বসে আছে। তার উপর বাইরে বৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় আজকে সব আয়োজন আমার জন্যই করেছে।
অনেক্ষন ধরে একসাথে বসে আছি। কিছু একটা বলা দরকার। সাধারণ ধন্যবাদ টাও দেয়া হয়নি তাকে। যেই কথাটা বলতে যাবো, ঠিক তখনি বেরসিক মোবাইল এ বেজে উঠলো, 'প্রেমে পড়া বারণ'।
আমার ঘুম ভেঙে গেলো। এই গানটাই তো আমার এলার্ম। স্বপ্ন ছিলো এটা? স্বপ্নে রঙ দেখা যায়? স্বপ্নে গন্ধও পাওয়া যায়?
ঠিক একইভাবে একই পোশাক পরে নাস্তা না খেয়েই ঘর থেকে বের হলাম। অদ্ভুত হলেও সত্যি, ঝুম বৃষ্টি বাইরে। যেখানটাতে গিয়ে দাঁড়াবো ঠিক করেছি, একদম সাদা ড্রেস পরে কে যেন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।
বৃষ্টির জন্য সব ঘোলা লাগছে। কিন্তু আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, এটা মায়া ♥️
সমাপ্ত
শিহাব শাওন
উইনিপেগ, কানাডা❤️
Please follow my page!
Ahmmed