10/08/2025
সূরা ২. আল-বাকারা
আয়াত নং ১৫৩
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۳﴾
তাফসীরে আহসানুল-বায়ান
(১৫৩) হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।[1]
[1] মানুষের দু’টি অবস্থা হয়, আরাম ও স্বস্তি এবং কষ্ট ও অস্বস্তি। আরাম ও স্বস্তির সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং কষ্ট ও অস্বস্তির সময় ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনার তাকীদ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, ‘‘মু’মিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর ক্ষতিকর কোন কিছু হলে, সে ধৈর্য ধারণ করে। এই উভয় অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর।’’ (মুসলিম ২৯৯৯নং) ধৈর্য দু’প্রকারের। প্রথম হল, হারাম ও পাপ কাজ ত্যাগ করা ও তা থেকে দূরে থাকার উপর এবং লোভনীয় (অবৈধ) জিনিস বর্জন ও সাময়িক সুখ ত্যাগ করার উপর ধৈর্য ধারণ করা। দ্বিতীয় হল, আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করতে গিয়ে যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তা ধৈর্য ও সংযমের সাথে সহ্য করা। কেউ কেউ সবর ও ধৈর্যের ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন, আল্লাহর পছন্দনীয় কর্মসমূহ সম্পাদন করা; তাতে দেহ ও আত্মায় যতই কষ্ট অনুভব হোক না কেন। আর আল্লাহর অপছন্দনীয় কর্মসমূহ থেকে দূরে থাকা; তাতে প্রবৃত্তি ও কামনা তাকে সেদিকে যতই আকৃষ্ট করুক না কেন। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে জাকারিয়া
১৫৩. হে ঈমানদারগণ! তোমরা সাহায্য চাও সবর(১) ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবরকারীদের সাথে আছেন(২)।
(১) ‘সবর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম অবলম্বন ও নফস্ এর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় ‘সবর’-এর তিনটি শাখা রয়েছে। (এক) নফসকে হারাম এবং না-জায়েয বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা (দুই) ইবাদাত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং (তিন) যেকোন বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ যেসব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয়, সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা। [ইবনে কাসীর]। ‘সবর’-এর উপরোক্ত তিনটি শাখাই প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। সাধারণ মানুষের ধারণা সাধারণতঃ তৃতীয় শাখাকেই সবর হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথম দুটি শাখা এ ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে মোটেও লক্ষ্য করা হয় না। এমনকি এ দু’টি বিষয়ও যে ‘সবর’-এর অন্তর্ভুক্ত এ ধারণাও যেন অনেকের নেই। কুরআন হাদীসের পরিভাষায় ধৈর্যধারণকারী বা সাবের সে সমস্ত লোককেই বলা হয়, যারা উপরোক্ত তিন প্রকারেই সবর অবলম্বন করে। (২) সালাত এবং ‘সবর’-এর মাধ্যমে যাবতীয় সংকটের প্রতিকার হওয়ার কারণ এই যে, এ দু'পস্থায়ই আল্লাহ্ তা'আলার প্রকৃত সান্নিধ্য লাভ হয়। আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন বাক্যের দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সালাত আদায়কারী এবং সবরকারীগণের আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ হয়। মহান আল্লাহ আরশের উপর থেকেও তাঁর বান্দাদের সাথে থাকার অর্থ দুটি। প্রথম. সাধারন অর্থে সাথে থাকা। যা সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর তা হচ্ছে, সবাই মহান আল্লাহর জ্ঞানের ভিতরে থাকা। মহান আল্লাহর যত সৃষ্টি সবার যাবতীয় অবস্থা তাঁর গোচরিভূত। তিনি ভাল করেই জানেন কে কোথায় কোন অবস্থায় কোন কাজে লিপ্ত। দ্বিতীয় প্রকার সাথে থাকা বিশেষ অর্থে। যা কেবলমাত্র তাঁর নেককার, সবরকারী, ইহসানকারী, মুত্তাকীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর সেটি হচ্ছে, সাহায্য-সহযোগিতা করা। মহান আল্লাহর পক্ষে কারও সাথে থাকার অর্থ কখনো এটা হতে পারে না যে, তিনি তার সাথে চলাফেরা করছেন বা কোন কিছুর ভিতরে প্রবেশ করে আছেন। অথবা তার সাথে লেগে আছেন। কারণ; মহান আল্লাহ তাঁর আরশের উপর রয়েছেন। তিনি স্রষ্টা হিসেবে সৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।