19/06/2025
বিষয়: দেশ টিভির বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রকৃত ঘটনার ব্যাখ্যা।
সম্প্রতি দেশ টিভি সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে মিরপুর কেন্দ্রিক কিছু ঘটনা নিয়ে যে ধরনের বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে ব্যক্তির সম্মানহানি, সামাজিক বিভ্রান্তি এবং জনমনে ভুল বার্তা প্রেরণের অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতিমালারও পরিপন্থী।
আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, উল্লিখিত ঘটনাবলী বিকৃত, মনগড়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তব ঘটনাপ্রবাহ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিচে প্রতিটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হলো:
---
ঘটনা ১: ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মিরপুর শাহআলী থানার সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার বাড়ীতে হামলা প্রসঙ্গে।
উক্ত রাতে ধানমন্ডি-৩২ এলাকায় ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার বাড়ী ভাঙ্গচুরের ঘটনার পর সারাদেশেই বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিস্টদের কাছে নির্যাতিত উত্তেজিত জনতা বিভিন্ন আওয়ামীলীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙ্গচুর করে, উক্ত সময়ে বৈষম্যবিরোধী শাহআলী থানার কয়েকজন সদস্য আমাদের অবহিত করে যে, মিরপুর শাহআলী থানার আলোচিত সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা যিনি জুলাই হত্যাকান্ডের একাধিক মামলার আসামি তার বাসায় স্থানীয় ছাত্র জনতা হামলা করে, এরই প্রেক্ষিতে আমরা মিরপুর ৭ থানার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রফিক মিঠু-আহবায়ক, শাহআলী থানা’ ‘জামিল তাজ-আহবায়ক, পল্লবী থানা’, ‘তাহমিনা শারমিন জুথি-আহবায়ক, রুপনগর থানা’, ‘মিজান ফরাজি-আহবায়ক, দারুসসালাম থানা”, ‘তাহসিন আকন্দ-যুগ্ম আহবায়ক, কাফরুল থানা’, ‘ফারহান ইশরাক জায়েদ-মূখ্য সংগটক, মিরপুর থানা’ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই যেন মিরপুরে কোনোরুপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়।
আমাদের পৌঁছানোর পূর্বেই উক্ত স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে। আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি এবং একই সময় দ্রুত থানা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে ফোনকলে না পেয়ে দ্রুত রিফাতুল হক শাওন সহ কয়েকজন স্বশরীরে শাহআলী থানায় গিয়ে পুলিশকে অবহিত করে, পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা ফিরে আসি।
কিন্তু ২দিন পর আওয়ামীলীগের দুষ্কৃতিকারীরা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ গুলো থেকে এই হামলা কে কেন্দ্র করে আমাদের নাম জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করে, বিষয়টি নিয়ে সময় টিভি, যমুনা টিভি সহ বেশ কিছু গণমাধ্যম তদন্ত করে, সত্যতা যাচাই পূর্বক রিপোর্ট প্রকাশ করে যা আমাদের বক্তব্যের প্রমাণস্বরূপ, যেখানে আমাদের কোনোপ্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
আমাদের ভূমিকাটি ছিল মব কন্ট্রোল এবং আইন সহায়ক, কোনোভাবেই উসকানিমূলক বা সহিংসতামূলক নয়।
ঘটনা ২: কথিত ব্যাবসায়ীকে টর্চার সেলে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে।
যে ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ তোলা হয়েছে উক্ত ঘটনাটিতে মারধরের সাথে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। শাহআলীর থানার সদস্য সচীব পারভেজের নানা মো: আমজাদ সাহেব ও গোলাম মোস্তফা সাহেব জনৈক আমিরুল নামক এক আওয়ামী ঠিকাদারের কাছ থেকে সাব টেন্ডার নিয়ে রাজবাড়ীর একটি রাস্তার কাজ করে ২০২৩ সালের জানুয়ারী তে। সেই কাজের প্রায় ২ কোটি টাকা পারভেজের নানা আমিরুল সাহেবের কাছে পেতো, গত ২ বছর যাবৎ সে আওয়ামী প্রভাব দেখিয়ে টাকা পরিশোধ করছিলো না, যার কারনে পারভেজের নানা জনাব আমজাদ সাহেব হয়রানীর স্বীকার হয়ে আসছিলো, উনি নিজেও এই কাজের টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন নিয়ে কাজ সম্পন্ন করে, সেই পাওয়ানাদাররাও তাকে প্রতিনিয়ত প্রেশার দিয়ে যাচ্ছিলো, সে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পারভেজ আমাদের কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাই, যেটা বৈষম্যবিরোধীর কোনো ব্যানারে না, নিজেদের ব্যাক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে আমরা এ ব্যাপারে সমাধানের জন্য দুই পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসি।
পরবর্তীতে আমরা কথোপকথনের এক পর্যায়ে জানতে পারি উক্ত ব্যাক্তি আমিরুল সাহেব পল্লবী থানা বৈবিছার আহ্বায়ক জামিল তাজ এর দূরসম্পর্কের আত্মীয়। বিষয়টা আমাদেরই ২ সহযোদ্ধার পারিবারিক ইস্যু হয়ে যাওয়ায় আমরা উক্ত বিষয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে সমাধান করে নিতে বলি, উনারা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে কিছুদিন সময় নেয় আমিরুল সাহেব টাকা পরিশোধ করার জন্য এবং জামিন হিসেবে ২টি চেক এবং একটি স্ট্যাম্প সই করে পাওনাদার আমজাদ সাহেবকে বুঝিয়ে দেন। এই সমাধানের পর আমরা এটা বলে দেই যদি উনি সময়মত টাকা পরিশোধে ব্যার্থ হোন তাহলে পাওনাদার আমজাদ সাহেব যেন আইনের আশ্রয় নিয়ে ব্যাপারটা সুরাহা করে। এসব কিছুর কথোপকথন ভিডিও স্টেটমেন্ট আকারে প্রমান স্বরুপ আছে আমাদের কাছে। আমরা সেখানে শুধুমাত্র উপস্থিত ছিলাম ব্যাক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে, পারভেজের পরিবারিক ইস্যু তাই।
উল্লেখ্য, উক্ত ব্যক্তির সাথে কথাবার্তার সময় পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ এর ফোন আসায় এবং পরবর্তীতে তার হোয়াটসঅ্যাপে আওয়ামীলীগের অনেকের সাথে নিয়মিত বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্য আদান প্রদান, আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সভা সমাবেশ মিছিলের আলাপচারিতা, বিএনপি, এনসিপি, বৈষম্য বিরোধী কে নিয়ে গুজব রঠানো, আসিফ, নাহিদ, সারজিস, হাসনাত দের নিয়ে ভুয়া ফটোকার্ড আদান-প্রদানের প্রমান পাওয়া গেলে ওইসময়ে উত্তেজিত হয়ে শাহআলী থানার আহ্বায়ক রফিক মিঠু তাকে আঘাত করে বসে, আমরা সকলে তৎক্ষনাৎ তাকে শান্ত করি, তখন ঘটনাস্থলে তাজ কে নিয়ে আসার পর তাজ আমিরুল সাহেবকে তার নানা হিসেবে দাবী করে, আমিরুল সাহেব তার নাতি কে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে যে তাকে মারধর করা হয়েছে, মূলত এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্যেই বৈবিছা পল্লবী থানার আহবায়ক জামিল তাজ এর সাথে প্রাথমিকভাবে ভুল বোঝাবুঝি হয় এবং তারই প্রেক্ষিতে তাজ উক্ত ভিডিওটি ধারন করেছিলো তার মোবাইলে।
পরবর্তীতে ২পক্ষ কে নিয়ে বসে আমরা আলোচনা করে পুরো বিষয়টিকে সমাধান করি এবং রফিক মিঠু তাজের নানার সাথে হীন কৃতকর্মের জন্য উনার কাছে ক্ষমা চায়। পুরো ঘটনা ওখানেই সুন্দর ভাবে সমাধান করে বিষয়টা শেষ করা হয়। এখানে মারামারির সাথে আমাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতাই ছিলো না। রফিক মিঠু এই ঘটনার পর ভিকটিমের কাছে বারবার মাফ চেয়েছে। এটা সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত রাগ কন্ট্রোল করতে না পারা থেকে করা। এখানে আমাদের এ ধরনের কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিলো না।
তাজের করা সে ভিডিও টা কে কোনোভাবে কালেক্ট করে দেশ টিভি সেটাকে পুজি করে মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাজ এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরো ঘটনার স্ট্যাটমেন্টও দিয়েছে।
এই ইস্যু কে দেশ টিভির রিপোর্টে বানিয়ে দিয়েছে চাঁদাবাজি ইস্যু! অথচ ঘটনাটা ছিলো সম্পূর্ণ পারিবারিক। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা তথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভিডিও প্রকাশ করে বিষয়টিকে ‘চাঁদাবাজি’ হিসেবে প্রচার করায় আমরা অত্যন্ত বিস্মিত ও মর্মাহত।
ঘটনা ৩: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি কে ভয় ভীতি দেখিয়ে কথিত তদবির সংক্রান্ত অভিযোগ।
দেশ টিভির উক্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাননীয় মহাপরিচালকের সাথে আমাদের সাক্ষাত, তদবির সংক্রান্ত ব্যাপারে ভয় ভীতি প্রদর্শন, নাহিদের ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে ফায়দা নেওয়া এই মর্মে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। আমরা ডিজি মহোদয়ের সাথে কখনোই দেখা করিনি, উনাকে চিনিওনা এবং কোনো প্রকার ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত তদবিরেও জড়িত ছিলাম না। প্রয়োজনে যে কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিক আমাদের ছবি নিয়ে তাকে দেখান সে যদি বলে আমাদের কেউ তার কাছে গিয়েছে বা কোনো তদবিরের ব্যাপারে তার কার্যালয়ে দেখেছে কিনা? আদতে উনার সাথে আমাদের কখনোই দেখা সাক্ষাৎ বা পরিচিতিও হয়নি।
উল্লেখ্য, আমরা কেবল একবারই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছিলাম সেটাও গতবছর। জুলাই অভ্যুথানের পর প্রাথমিকের শিক্ষকরা শাহবাগ সহ সারাদেশে কয়েকটি দাবীর প্রেক্ষিতে কয়েকদিনের আন্দোলন শেষে মিরপুর অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয় ঘেরাও করে অনশনে বসেন, সেসময়ে তৎকালীন ডিজি মহোদয় মিরপুরের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরকে ডাকেন এবং অনশনরত শিক্ষক দের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করতে সহযোগিতা চান, ওই একবারই আমরা শিক্ষা অধিদপ্তরে গিয়েছিলাম, ওই ডিজি মহোদয় অনেক আগেই বদলি হয়ে গেছে।
---
ব্যক্তিগত সম্পদ, আর্থিক অবস্থা ও চরিত্র হননের অপচেষ্টা।
কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে আমাদের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বাস্তবতা হলো, আমাদের আগের মতই সাধারণ জীবনযাপন অব্যাহত রয়েছে। আমাদের ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে আমরা স্বচ্ছতা প্রমাণ করেছি।
অতিরিক্তভাবে, আমাদের পুরোনো কিছু ছবি ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে আমাদেরকে জড়ানো হয়েছে, যা চরিত্রহননের একটি কৌশলমাত্র, জুলাই আন্দোলনে আমাদের কি ভুমিকা সেটা মিরপুরের সকলেই জানে।
এছাড়া ছোটখাটো দুই একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে আমরা পুলিশের সাথে থানার ভেতরে কথা বলছি। একটা স্বাধীন দেশের নাগরিকের কি পুলিশের সাথে কথা বলা অপরাধ? যেখানে আমরা গনঅভ্যুত্থানে মিরপুরের বেশ কয়েকটা হত্যা মামলার চাক্ষুষ সাক্ষী সেখানে থানার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলাটা কোন তদবীরের পর্যায়ে পরে সেটা আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
---
উপসংহার ও দাবি
আমরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছি—আমরা কেউই ‘ত্রাস’ সৃষ্টি করছি না; বরং মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়ে সম্মানহানির শিকার হচ্ছি। মিরপুর এলাকার গণঅভ্যুত্থান, আন্দোলন এবং সামাজিক উদ্যোগগুলোর পেছনে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকা বহুজনের জানা।