08/04/2025
| | বাঙালি: সম্ভাবনার জাতি, ব্যর্থতার ইতিহাস | |
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতিগোষ্ঠীগুলোর একটি বাঙালি।
৩০ কোটিরও বেশি মানুষ, যাদের রয়েছে অনন্য এক ভাষা, সঙ্গীত, সাহিত্য আর দার্শনিক ঐতিহ্য।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায়, জিবনানন্দ দাশ, অমর্ত্য সেন—এই নামগুলো শুধু বাঙালির নয়, গোটা বিশ্বের সম্পদ।
তবু প্রশ্ন জাগে—এত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও কেন বাঙালি জাতি বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্ব দিতে পারেনি?
কেন আমরা এখনও উন্নয়নের মাপকাঠিতে পিছিয়ে, যখন আরও কম প্রস্তুত জাতিগুলো অনেক এগিয়ে গেছে?
⸻
১. ঐক্যের অভাব: মুহূর্তের পরেই ভাঙন
বাঙালি জাতি মাঝে মাঝে ইতিহাস সৃষ্টি করে—ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান।
কিন্তু এই ঐক্য থাকে ক্ষণিকের।
একটি লক্ষ্য অর্জনের পরই বিভাজন শুরু হয়—রাজনীতি, মতাদর্শ, ব্যক্তিগত স্বার্থে টুকরো টুকরো হয়ে যাই।
দীর্ঘমেয়াদী কোনো জাতীয় কৌশল তাই টিকেই না।
⸻
২. মেধাপলায়ন বনাম মধ্যম মান উদযাপন
ষাট-সত্তরের দশক থেকেই মেধাবী বাঙালিরা দেশ ছেড়ে গেছেন ইউরোপ-আমেরিকায়।
ডাক্তার, বিজ্ঞানী, গবেষক, আইটি পেশাজীবী—যাদের দিয়ে জাতি এগোতে পারত, তারা বিদেশে সফল হয়েছেন।
দেশে থেকে গেছেন যারা—তাদের অনেকেই যোগ্যতার বদলে সম্পর্ক বা প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছেন।
ফল: গড়পড়তা মানের শাসন, উদ্ভাবনের অভাব, আর mediocrity উদযাপন।
⸻
৩. আত্মপ্রচার বনাম বাস্তব অর্জন
বাঙালির শক্তি আবেগে, শব্দে, শিল্পে।
আমরা গান করি, কবিতা লিখি, বক্তৃতা দিই, নিজেদের অতীত নিয়ে গর্ব করি।
কিন্তু প্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বিজ্ঞান বা বৈশ্বিক অর্থনীতির মঞ্চে আমাদের অবস্থান দুর্বল।
কারণ আমরা বাস্তব অর্জনের চেয়ে আবেগী পরিচয়ে বেশি জোর দিয়েছি।
⸻
৪. ভাঙা রাষ্ট্রযন্ত্র, ভাঙা বিশ্বাস
বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ—দুই ভৌগোলিক সীমানায় বিভক্ত বাঙালি জাতি একই সমস্যায় ভুগছে।
অকার্যকর প্রতিষ্ঠান, সর্বব্যাপী দুর্নীতি, স্বল্পদৃষ্টির রাজনীতি আর দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার অভাব।
জনগণও প্রায়শই স্বল্পমেয়াদী স্বার্থে বিভক্ত হয়ে যায়,
যার ফলে কোনো বড় জাতীয় পুনর্জাগরণ সম্ভব হয় না।
⸻
৫. বাঙালির বৈশ্বিক পরিচয়: অনেক ছোট, অনেক খণ্ডিত
ভারতের গুজরাটি বা দক্ষিণ ভারতের তামিলরা বিশ্ব অর্থনীতি ও প্রবাসে একক শক্তি তৈরি করেছে।
চীনারা ছড়িয়ে থেকেও নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তি গড়ে তুলেছে।
কিন্তু বাঙালি?
বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হলেও কোনো একক পরিচয় বা ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারেনি।
বিদেশে বাঙালির পরিচয় প্রায়শই খণ্ডিত, প্রবাসজীবনের সংগ্রামে সীমাবদ্ধ,
কোনো একক ব্র্যান্ড বা শক্তি তৈরি হয়নি।
⸻
তাহলে প্রশ্ন: দায় কার?
👉 আমরা কি অলস?
👉 নাকি একসাথে থাকতে অক্ষম?
👉 নাকি আমরা মধ্যম মান উদযাপন করতে করতে উৎকর্ষের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছি?
সম্ভবত সবগুলোই কিছুটা সত্য।
⸻
এখনো সম্ভাবনা আছে
৩০ কোটি মানুষের ভেতরে যে শক্তি আছে, তা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়—
👉 শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন বিনিয়োগ
👉 টেকনোলজি ও শিল্পে দক্ষতা
👉 রাজনৈতিক ভাঙন থেকে বের হয়ে দীর্ঘমেয়াদী জাতীয় কৌশল
👉 বিশ্বজুড়ে বাঙালিদের একক ব্র্যান্ড গড়ে তোলা
তাহলে আবারও বাঙালি নেতৃত্ব দিতে পারে।
ইতিহাসের গৌরব আমাদের আছে—এখন দরকার ভবিষ্যতের অর্জন।