Soheli Patrika

  • Home
  • Soheli Patrika

Soheli Patrika লেখে শুধুই বাঙালি মেয়েরা কিন্ত পড়ে সব?

25/10/2024

Eye of the Arches, Arches National Park in Utah, USA.
Photo by: [IG]

Kalpana Mitraচিনু বাড়ীতে এলে, বাড়ীটা একদম পাল্টে যায়, মনে হয় একটা স্বচ্ছ মিষ্টি বাতাস সারা বাড়ী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবা...
22/09/2024

Kalpana Mitra

চিনু বাড়ীতে এলে, বাড়ীটা একদম পাল্টে যায়, মনে হয় একটা স্বচ্ছ মিষ্টি বাতাস সারা বাড়ী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই এতো খুশী খুশী থাকে বলার নয়। সবার সঙ্গে চিনুর খুব ভালো সম্পর্ক। বাড়ীর একদম টপ্ লেভেল থেকে একেবারে একবছরের টিয়াটা পর্যন্ত চিনুর ভক্ত। যখনই শুনি চিনুর আসার কথা, তখন থেকেই সবাই উদগ্ৰীব হয়ে থাকি কবে আসবে সে দিনটা।
চিনু এ বাড়ীতে সেজ ছেলের ছেলে। চিনুর ঠাকুরদার বাড়ী এটা। যদিও তিনি আজ নেই। আরও কিছুদিন থাকলে ভালো হতো, তিনিও খুব মজাদার লোক ছিলেন। নাতি ঠাকুরদা জমতো ভালো! ঠাকুমা আছেন। শরীর স্বাস্থ্য ভালোই। কোনো রোগ ব্যাধি নেই। অবশ্য বয়সটা এমন কিছু বেশীও নয়। প্রচুর কাজ করতে পারেন! আশ্চর্য্য হয়ে যেতে হয়! বাড়ীর বউরা পর্যন্ত ওনার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না।
এই বাড়ীর সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক দিনের। আমার বাবার সঙ্গে এই বাড়ীর সেজ ছেলে পীযূষকাকু আর ছোট ছেলে প্রতাপ কাকুর বন্ধুত্ব ছিল, আর এ ছাড়া তখনকার দিনে পাড়ায় সবাই সবাইয়ের বাড়ী যাতায়াত করতো, ফলে সব বাড়ীর খবর সবাই বেশ জানতো। যেমন এই দত্ত বাড়ীতে দাদু আর দিদার সঙ্গে বেশ জমাটি গল্পগুজব হোতো। বড়ছেলে মনুজেঠু আর জেঠিমা কি যে ভালো মানুষ ছিল, বলার নয়। মেজছেলে শানুজেঠু একটু পাগলাটে টাইপের ছিল, কিন্তু ভীষণ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিল। মেজজেঠিমা ওসবের পাত্তা দিত না, নিজের মতো করে বেশ ভালো ভাবেই থাকতো।
কিন্তু হঠাৎ একদিন ওদের বাড়ী থেকে কান্নার আওয়াজ শুনে পাড়াশুদ্ধ দৌড়ে গেলাম ওদের বাড়ী! গিয়ে যা শুনলাম তাতে আমাদের প্রাণ উড়ে যাবার জোগাড়! পীযূষ কাকুর এ্যক্সিডেন্ট হয়েছে! অন্যমনস্ক ভাবে রাস্তা পেরোনোর সময় পেছন থেকে একটা মোটরগাড়ী এসে ধাক্কা মারে আর পীযূষ কাকু ছিটকে অনেক দূরে গিয়ে পড়েছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে শেষ! তখন মোবাইলের যুগ নয়, পকেটে একটা কাগজ পেয়েছিল, তাতে পীযূষ কাকুর শ্বশুরবাড়ীর ফোন নম্বর ছিল। পুলিশ ঐ নম্বরে ফোন করে, সব কথা জানায়, ওরা গিয়ে দেখে এ বাড়ীতে ফোন করে। পাড়ার লোকেরা সবাই ছুটে গেল, কিন্তু যা হবার তাতো হয়েই গেল! এরপর সব নিয়ম মেনে কাজকর্ম সারা হোলো। সে বছর আমার হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষা। টেস্ট চলছিল, কিন্তু এই সময়ে কি পড়াশোনা করা যায়! পীযূষকাকুর ছেলে চিনু তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। ও একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছে! কাকিমা কেঁদে কেঁদে পাগলের মতো অবস্থা!
দিন তো থেমে থাকে না, কাকিমা চিনুকে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে গেল। বললো, যার জন্যে এ বাড়ীতে আসা, সেই যখন নেই, আমি থেকে কি করবো! বাড়ীর সকলে চেয়েছিল, কাকিমা যেন এখানেই থাকে সবার সঙ্গে, যেমন আগে ছিল। কিন্তু কাকিমা আর তার বাপের বাড়ীতে সবাই চেয়েছিল, ওরা ওখানে থাক। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।
এ ফ্যামিলি টা আমার খুব ভালো লাগে। সবার সঙ্গে সবার কতো মিলমিশ। বেশীরভাগ বাড়ীতে প্রথমতঃ এতোজন একসঙ্গে থাকে না, আর থাকলেও বনিবনা নেই। কিন্তু এ বাড়ীতে অন্য রকম।
মাঝে অনেক গুলো বছর কেটে গেছে, আমি এখন একটা এন জিও তে কাজ করি, বাড়ীতে বাবা মা দাদা বৌদি আর ছোট্ট সোহম। আমাদের বাড়ীতেও বেশ একটা শান্তি বিরাজ করে। সবাই মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করি। বাবা মা, দুজনেরই বয়স হয়েছে। আমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে অনেকবার বলেছে, কিন্তু আমি রাজি নই। ঐ বিয়ে নামক অদ্ভূত ব্যাপারটাকে আমি এড়িয়ে যেতে ভালো বাসি।
দত্ত বাড়ীতে আমার যাওয়া আসা লেগেই থাকে। এখন অবশ্য দিদার অনেকটাই বয়স হয়েছে, তাতে কি? ছটা নারকোল ফাটিয়ে কুরিয়ে নাড়ু বানাতে অসুবিধে নেই তো! আমরা অবাক হয়ে যাই!
চিনু এবাড়ীতে প্রায়ই আসে। সেজ কাকিমা খুব একটা নয়, ঐ বিজয়ার পর আর নববর্ষের পর প্রণাম করতে আসে। মাঝে মাঝে দেখা হয় আমার সঙ্গে। কিন্তু চিনুর কথা আলাদা! ও এলে একে ডেকে ওকে ডেকে হৈহৈ করে দিন রাত কাবার করে দেয়। এখন ও জামশেদপুরে কাজ করে। তবে ছুটি পেলেই এখানে চলে আসে। এ বাড়ীর ওপর ওর একটা টান আছে। এলেই ওরা যে ঘরটায় থাকতো, সে ঘরটাতেই থাকে। ও ঘরে দেয়ালে পীযূষকাকুর একটা বড় ফটো টাঙানো আছে। সেটার সামনে ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি অনেকবার! মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়!
প্রায় দু বছর কেটে গেল, ওবাড়ীর দিদা মারা গেল। অবশ্য শেষের দিকে ভুগছিল কিছুদিন ধরে। বৌরাই সেবা যত্ন করে গেছে দিনের পর দিন। তাদেরও তো বয়স হয়েছে, তবুও। শুনেছি, মারা যাবার দুদিন আগে সব ছেলে বৌদের ডেকে গয়নাগাটি ভাগ করে দিয়েছে, সেজ কাকিমা কে ডাকা হয়েছিল কিন্তু আসতে পারে নি, বাতের ব্যথার জন্য।
সেদিনই হঠাৎ সন্ধ্যেবেলা বাড়ীর ছোট নাতি এসে আমাকে বলল
_ ঠাকুমা তোমাকে ডাকছে পিসি। অবস্থা ভালো নয়। আমি দৌড়ে গেলাম, তার আগে আমার বাবা মা দুজনেই চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। ইদানিং দাদাও একটা না একটা অসুখে ভোগে, সবসময় মনে একটা আতঙ্ক কাজ করে।
ঘরে ঢুকে দেখি,ঘর ভর্তি বাড়ীর লোকজন! বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো! সবাইকে সরিয়ে খাটের কাছে গিয়ে বললাম
_ দিদা আমি এসেছি, বলে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি, কান্নায় ভেঙে পড়লাম, কেন মনে হতে লাগলো এভাবেই সব ভালোবাসার মানুষ গুলো একে একে চলে যাচ্ছে, বড়ই একা হয়ে যাচ্ছি। এবাড়ীর সঙ্গে আজকের যোগাযোগ! সেই কবে থেকে .....
দিদা কাঁপা কাঁপা হাতটা আমার মাথায় রেখে ক্ষীণ স্বরে বলল
_ কাঁদিস না মা, এটাই তো জগতের নিয়ম, যেআসবে, সে একদিন সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাবে। এর জন্য মন খারাপ করলে চলে?
বড়ো বৌমা আমাকে ঐ হাঁসুলি হারটা দাও তো মা।
কি সুন্দর দেখতে গয়নাটা! সেটা হাতে নিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল, এই নে সোনা, এটা তোকে দিলাম, সবাই কে তো দিয়েছি, এটা তোর। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, জিজ্ঞেস করলাম
_ আমি তো দিদা এ বাড়ীর কেউ নই, পাড়ার মেয়ে। আমাকে এতো দামি গয়না দিচ্ছো? এ নিয়ে আমি কি করবো দিদা! তুমিই তো চলে যাচ্ছো, আর এ নিয়ে আমি কি করবো বলো!
আমার কথা মনে রাখবি। মনে করবি শুধু রক্তের সম্পর্ক থাকলেই কি সম্পর্ক হয় রে! সম্পর্ক হচ্ছে মনের মিল! যে যার মনের ভাষা বুঝতে পারে, তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় গভীর। তুই ছিলি আমার সেই রকম সম্পর্কের মেয়ে, বুঝলি?
আমি ভাবলাম কথা গুলো দিদা নিজে মুখে বলছে, কিন্তু না, দিদা একটু আগেই চোখ বুজেছে, এ জগতের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে সেই তারাদের দেশে!
সত্যিই তো সম্পর্ক এমন একটা বাঁধন যেটা কোনো কিছু দিয়েই খোলা যায় না, যতদিন না কেউ একে অপরের থেকে ছিন্ন করতে চায়।
কদিন ধরে মনটা বড্ডো ভারাক্রান্ত হয়ে আছে! কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। ও বাড়ীতে বেশ অনেক দিন যাওয়া হয় নি। সেদিন হঠাৎই রাস্তায় চিনুর সঙ্গে দেখা! বললাম
_ ভালো আছিস তো?
_ হ্যাঁ বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। অনেকক্ষণ ধরে ওর চলে যাওয়াটা দেখলাম! এটাও একটা সম্পর্ক ছিল!!!! আজ হঠাৎ ..... এটাও জগতের নিয়ম! মানতে পারলে ভালো, আর না হলে চুপচাপ সয়ে যাও।
( দত্ত বাড়ী) ।

Soheli Patrika April 2024 -
15/04/2024

Soheli Patrika April 2024 -

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Soheli Patrika posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Soheli Patrika:

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share