Sumiya Islam Jannaty-সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি

  • Home
  • Sumiya Islam Jannaty-সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি

Sumiya Islam Jannaty-সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি এলোমেলো শব্দ কুড়িয়ে একটি সুন্দর বাক্যে রূপান্তরিত করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
আমার প্রথম ইবুক,
"যে প্রেম এসেছিল নীরবে নিভৃতে"
https://link.boitoi.com.bd/4e8K

আমার এ পর্যন্ত লেখা সবগুলো গল্পের লিংক একসাথে দেওেয়া হল।🕊১| #জীবন_যেখানে_যেমন https://www.facebook.com/102384359289127/...
18/08/2025

আমার এ পর্যন্ত লেখা সবগুলো গল্পের লিংক একসাথে দেওেয়া হল।🕊

১| #জীবন_যেখানে_যেমন
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/117080321152864/?app=fbl

২| #পবিত্র_সম্পর্ক , ৩| #অনুভবের_অনুরিমা
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/130217516505811/?app=fbl (দুটোর লিংক একসাথে)

৪| #প্রাপ্তি
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/154915044036058/?app=fbl

৬| #দুঃখগুলো_নির্বাসিত_হোক
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/178744244986471/?app=fbl

৭| #প্রণয়_হাওয়া_লাগলো_মনে
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/192771536917075/?app=fbl

৮| #তুমি_আমার_অনেক_শখের
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=242186531973570&id=100085466744300&mibextid=Nif5oz

৯| #স্বর্ণভার_সুখ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=305974458928110&id=100085466744300&mibextid=Nif5oz

১০| #প্রেমদণ্ড
https://www.facebook.com/share/p/7artccmDf7EaC2Tw/?mibextid=oFDknk

১১| #রাগে_অনুরাগে
https://www.facebook.com/share/p/16wTRbYAEt/

১২| #সুখের_আশায়_চেয়ে_থাকি
https://www.facebook.com/share/p/162otsY2ey/

১৩| #প্রণয়ের_প্রদীপ্ত_প্রহর
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=728881509970734&id=100085466744300&mibextid=Nif5oz

অনুগল্প
১|
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=245610268297863&id=100085466744300&mibextid=Nif5oz
২|
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=272848685574021&id=100085466744300&mibextid=Nif5oz
৩|
https://www.facebook.com/share/p/1CJ1kTpCNE/
৪|
https://www.facebook.com/share/p/16SCmJGFnx/

___________________🕊🕊🕊🕊_______________
ইনশা আল্লাহ চলবে..
~১৮.০৮.২০২৫🍃

আমার প্রথম লেখা গল্পটি পড়েছেন তো? অনেকেই বলেছে, ওটা প্রথম লেখা মনেই হয় না। যাইহোক, পড়ুন...আমার প্রথম লেখা ধারাবাহিক গল্প...
18/08/2025

আমার প্রথম লেখা গল্পটি পড়েছেন তো? অনেকেই বলেছে, ওটা প্রথম লেখা মনেই হয় না।
যাইহোক, পড়ুন...
আমার প্রথম লেখা ধারাবাহিক গল্প #জীবন_যেখানে_যেমন একসাথে সবগুলো পর্বের লিংক দেওেয়া হলো।

১ম পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/103342992526597/

২য় পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/104154432445453/

৩য় পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/104836492377247/

৪র্থ পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/105539762306920/

৫ম পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/106364555557774/

৬ষ্ঠ পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/107199365474293/

বোনাস পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/107733848754178/

৭ম পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/110790208448542/

৮ম পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/114038968123666/

৯ম পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/114462021414694/

১০ম পর্ব,
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/115461877981375/

আপনাদের জাওয়াদ আর মালিহাকে পড়তে ইচ্ছে করে?  #দুঃখগুলো_নির্বাসিত_হোক গল্পটি ওদের নিয়ে আমার প্রথম লেখা। আর  #রাগে_অনুরাগে ...
17/08/2025

আপনাদের জাওয়াদ আর মালিহাকে পড়তে ইচ্ছে করে?
#দুঃখগুলো_নির্বাসিত_হোক গল্পটি ওদের নিয়ে আমার প্রথম লেখা। আর #রাগে_অনুরাগে দ্বিতীয়বার লেখা ওই জুটি নিয়েই। যাহোক, আজ পড়ুন..

#দুঃখগুলো_নির্বাসিত_হোক সব পর্বের লিংক একসাথে।

১.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/171477025713193/?app=fbl
২.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/171996962327866/?app=fbl
৩.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/172525712274991/?app=fbl
৪.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/173067475554148/?app=fbl
৫.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/173579942169568/?app=fbl
৬.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/174342365426659/?app=fbl
৭.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/174893518704877/?app=fbl
৮.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/175300015330894/?app=fbl
৯.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/176000668594162/?app=fbl
১০.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/176314001896162/?app=fbl
১১.
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/176881411839421/?app=fbl
১২. শেষ
https://www.facebook.com/102384359289127/posts/178292455031650/?app=fbl
🕊🕊🍃🍃

16/08/2025

একাউন্টে এক প্লেট ফুচকার দাম জমিয়ে রাখুন। কিছুমিছু আসছে ইন শা আল্লাহ।🕊🍃

নিস্তব্ধতা ঘুচিয়ে সারফারাজ ই প্রথম কথা বলল। শুধালো, কিছু  ভাবলেন?"প্রতিত্তোরে অন্বেষা বলল, "কি বিষয়ে?""নিজেকে নিয়ে।"থমকা...
18/07/2025

নিস্তব্ধতা ঘুচিয়ে সারফারাজ ই প্রথম কথা বলল। শুধালো, কিছু ভাবলেন?"

প্রতিত্তোরে অন্বেষা বলল, "কি বিষয়ে?"

"নিজেকে নিয়ে।"

থমকালো অন্বেষা। একটু ভাবলোও। কিন্তু বলার মতো কিছু পেল না। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললো, "না। তবে যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম ভেবেছিলাম মাথা গোজার একটা ঠাঁই পেলে পড়াশোনা শুরু করব। নিজের পায়ে দাড়াবো। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল।"

শক্ত কথা ভালো লাগলো না সারফারাজের। সে চায় এতটা দূরত্ব না থাকুক। বললো, "এখন কি অন‍্যের পায়ে ভর করে দাড়িয়ে আছেন তাহলে?"

সারফারাজের রশিকতায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো অন্বেষা। ফলে দুলে উঠলো তার চিকন শরীর। পরক্ষণেই বললো, "খালি চোখে দেখলে মনে হবে আমি নিজের পায়ে ভর করে দাড়িয়ে আছে। চলছি, ফিরছি। আদৌ কি তাই? আমি তো অন‍্যের দয়াতেই বেঁচে আছি। চাচার আশ্রয়ে থেকেছি এতদিন। এখন আপনার। আমার নিজের বলে কি আছে বলতে পারবেন?"

সারফারাজ জবাব দিল না অন্বেষার একটি কথারও। সে এক সিড়ি দূরত্ব রেখে এগিয়ে এলো অন্বেষার দিকে। চা খাওয়া শেষে মগটা একটু দূরে ঠেলে দিলো। ক্লিপে আটকানো অন্বেষা লম্বা চুলগুলো খুলে দিলো। ক্লিপটা সিনেম‍্যাটিক স্টাইলে ছুড়ে ফেলে দিল দূরে কোথাও। ঘন একগুচ্ছ কালো চুল অন্বেষার পিঠময় ছড়িয়ে পড়লো। বাতাসে লাগামহীন দুলতে লাগলো চুলগুলো। সারফারাজের চোখেমুখে এসেও বিরক্ত করতে লাগলো। কিন্তু না! বিরক্ত নয় বরং মুগ্ধতা ঘিরে ধরলো ছেলেটিকে। একটি মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগছে। হাতে কিছু চুল নিয়ে শুধালো, "চুলে এত সুন্দর ঘ্রাণ কিসের? মেয়ে মানুষের চুলে বুঝি এরকম ঘ্রাণ থাকে?"

যে প্রেম এসেছিল নিরবে নিভৃতে---- ই বইয়ের টুকরাংশ।
পুরোটা পড়ুন 👇
https://link.boitoi.com.bd/4e8K

07/06/2025

ঈদ মোবারক।💚🖤

 #সুখের_আশায়_চেয়ে_থাকি (১৫)তখন বর্ষাকাল। পরপর দুটো বছর কেঁটে গিয়েছে। আকাশ কাঁপিয়ে ভারি বর্ষণের দিনগুলোতে জীবনে নতুন শুরু...
06/06/2025

#সুখের_আশায়_চেয়ে_থাকি (১৫)

তখন বর্ষাকাল। পরপর দুটো বছর কেঁটে গিয়েছে। আকাশ কাঁপিয়ে ভারি বর্ষণের দিনগুলোতে জীবনে নতুন শুরুর শুভক্ষণ নির্ধারণ করা হলো। গাছগাছালি বৃষ্টির পানি পেয়ে নতুন করে সজীব হতে শুরু করেছে। আসমান থেকে মেঘেদের ঘর্ষণে প্রকৃতিতে তীব্র আলোর ঝলকানি দিয়ে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। ঘন আধারিতেও চারিপাশ অল্প সময়ের জন্য আলোকিত হয়ে ওঠে। সেই আলোর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রয় এক দ্বিধাগ্রস্ত রমনী। জীবনের ছন্দ তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে যাবে? নাকি ছন্দের পতন ঘটিয়ে নতুন ছন্দের আর্বিভাব ঘটাবে? কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।

পাতার গায়ে বৃষ্টির ফোটা পড়লে যেমন কেঁপে ওঠে। তেমনই ফোনের মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশন বেজে ওঠার শব্দ কানে যেতেই কেঁপে ওঠে নাজনীন। নিশ্চয় ওই মানুষটির ম‍্যাসেজ! মনে হতেই লজ্জায়, অস্বস্তিতে নুয়ে পড়ে মেয়েটি। পাগল ছেলেটি দুই বছরেও তার পিছু ছাড়লো না। নাজনীন জানালা থেকে সরে আসে। ফোন হাতে নেয়।

শীঘ্রই তাদের বিয়ে হতে চলেছে। শ্রাবণের মাঝামাঝিতে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দু পক্ষের আলাপ আলোচনা হয়েছে। দুই পরিবার মিলে সব আয়োজন এই বৃষ্টিমুখর পরিবেশেই সেরে ফেলবেন।

নাজনীনের মনে এখনো ছবির মত স্পষ্ট ভেসে ওঠে প্রথম পরিচয় হবার সময়। মানুষটার সাথে দেখা হলো। কিন্তু কথা হলো না। চেনা জানা কিছুই হলো না। সে তখন ভাঙা মন নিয়ে নিজেকে জোড়াবার চেষ্টায় নিজেকে নিয়ে বড্ড বেশি মগ্ন। তার প্রতি অন‍্যকারো মুগ্ধ দৃষ্টি মেয়েটির নজর কাড়তে পারেনি। সেই সমুদ্রপাড়ে পরিচয় হওয়া পরিবার থেকে আসা হঠাৎ বিবাহ প্রস্তাব, ভাবির বুদ্ধিতে মায়ের সে প্রস্তাব নাকচ করা, কুরিয়ারে তার নামে পার্সেল আসা। সবই তো হলো পরপর, হঠাৎ, হঠাৎ! সেসব ফেলে এসেছে আরও দুই বছর আগে। স্নাতক শেষ হয়েছে। মাস্টার্সে সবে ভর্তি হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। চেহারায় ভারিক্কি ভাব, ব‍্যবহারের কখনও কাঠিন‍্যতা, কখনও বা নরম সরল। কিছুদিন একটি কিন্টার গার্ডেনে চাকরি করেছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করেছে, এ জীবনে ধৈর্য নামক গুণটি আয়ত্ব করা খুবই জরুরী। নচেৎ মাথা খারাপ পাগল হওয়া ছাড়া গতি নেই।

তবে রুমানের সাথে তার মৌখিক আলাপ হয়নি। আর না হয়েছে ফোনালাপ। পার্সেল থেকে ফেসবুক বন্ধু অব্দি গড়িয়েছে। মেসেঞ্জারে ছেলেটির কালেভদ্রে ম‍্যাসেজ আসে। কিন্তু ভয়েসে কথা বলা হয়ে ওঠে না। এ পাশের যুবতী মেয়েটি সে আস্কারা রোমান নামের যুবগ ছেলেটিকে কখনও দেয় না। আর না রোমান সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সে তো কেবল সময় গুনতে থাকে। আর কতদিন হলে মনের মধ্যে যত্ন করে রাখা প্রিয়তমা তার বুকের সাথে লেপ্টে থাকবে!

এবার অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। রোমানের মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা ভালোবাসাগুলো ডালপালা গজিয়ে বিরাট মহিরুহে রূপ নিয়েছে। অন‍্যদিকে নাজনীন মেয়েটি পড়ে রয় দ্বিধা দন্দের বেড়াজালে। জীবনে যে পুরুষকে মনে, শরীরে ঠাই দিয়েছিল, সেই পুরুষ তাকে নির্মমভাবে ঠকিয়েছে। তৃতীয় ব‍্যাক্তির আবির্ভাব ঘটিয়ে বুঝিয়েছিল, তুমি আমার কেউ নও। তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই। জীবনে এত বড় প্রতারণার স্বীকার হওয়া মেয়েটির অন‍্য পুরুষকে নিজের জীবনে জড়াতে জড়তা থাকবেই। ভয়ে, ভীতিতে আড়ষ্টতা আসবেই। ঠকার যন্ত্রণা সেই জানে, যে ঠকেছে। মনের কষ্ট, দহন মন ছাড়িয়ে মস্তিষ্ক, সমস্ত শরীরের ছেয়ে যায়। তীব্র থেকে তীব্রতর হয় সে কষ্ট। সেই কষ্ট জীবনে দ্বিতীয়বার নাজনীন কখনও চাইবে না। তার জায়গায় অন‍্য কেউ হলেও চাইতো না। তাইতো অপেক্ষা নামক আগুনে রোমানকে পুড়িয়ে আসল সোনা কিনা যাচাই করতে চাইছে। দুই বছরে ছেলেটির একগুয়েমি, ভদ্রতা, নম্রতায়, ভালোবেসে অপরপক্ষ‍্যের কোনরূপ প্রতিক্রিয়া না পেয়েও পাগলের মত ভালোবাসা নাজনীনের হৃদয় ছুয়েছে। তাই তো পরিণয়ে সম্মতি জানিয়েছে নিরবে। এখন দেখার পালা পাগল ছেলেটি তাকে কতটুকু ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে!

ম‍্যাসেজে রোমান লিখেছে, "স্নিগ্ধতা, কোন রঙের পোশাক পড়বেন বিয়েতে?"

নাজনীন ম‍্যাসেজের রিপ্লাই দিতে একটু সময় নিলো। গালে আঙুল ঠেকিয়ে ভাবতে লাগলো। মিনিট খানিক পরে মনে কাঙ্খীত উত্তর আসতেই জবাব দিলো, "সাদা।"

ওপাশের মানুষটা হয়তো কিঞ্চিত অবাক হলো। সাদা কোন বিয়ের পোশাক হতে পারে? তবুও নিজের অবাকতা নিজের কাছে রেখে পুনরায় ম‍্যাসেজ করলো, "শাড়ি, ল‍্যাহেঙ্গা না গাউন?"

এবারে নাজীনের জবাব দিতে সময় লাগলো না, "শাড়ি।"

ওপাশ থেকে ম‍্যাসেজ এলো, "একটা প্রশ্ন করতে পারি স্নিগ্ধতা?"

"নিশ্চয়।"

"বিয়ের শাড়ি সাদা ই কেন? অন‍্য রঙ কেন নয়। যাস্ট কৌতূহল থেকে জানতে চাওয়া।"

"মেঘেদের রঙ সাদা। বর্ষার কদম সাদা। বর্ষার বৃষ্টি সাদা। আমার মনে হয় যে মানুষটিকে জীবনে জড়াতে চলেছি তার মনটাও সাদা। তাহলে সাদা রঙ কেন নির্বাচন করব না?"

"স্নিগ্ধতা, আপনি জানেন কী? যার মন সুন্দর, কেবল সেই অন‍্যের মনকে সাদা আখ্যায়িত করতে পারে। আপনাকে আরও একটি কথা জানিয়ে রাখি, সাদা রঙ আমার ভীষণ পছন্দের। এভাবে মিলে যাবে ভাবিনি।"

"মিলে যাওয়ার জন্য তাহলে আমাকে ধন্যবাদ জানান।"

"ধন‍্যবাদ তো আপনাকে সবসময় জানাতেই হয় মিস। আমাকে এতটা সহ‍্য করার জন্য। বাকিটা জীবন আপনার পাশে থাকার সম্মতি জানানোর জন্য। আর কত কির জন্য যে জানাতে ইচ্ছে হয়।"

পাগল লোকটার পাগলাটে অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ নীজনীনকে ভেতরে ভেতরে অস্থির করে তোলে। মুখে লেপ্টে থাকে নিঃশব্দ লাজুক হাসি।

অন‍্যদিকে রাজনের জীবনে চলছে ঘোর অমানিশার প্রহর। স্ত্রী নিয়ে গ্রামের চাষাভূসার কাজ করে দিনাতিপাত করছে। সকালে একটু গুড় আর এক মুঠ মুড়ি খেয়ে কাধে কোদাল চাপিয়ে মাঠে যায়। মাথার ওপর রোদ উঠে আসতেই পিয়ালি স্টিলের থালায় ভাত, তরকারি বেড়ে ওপরে আরেকটি থালা দিয়ে ঢেকে গামছা দিয়ে বেধে নিয়ে যায়। মাঠের আইলের সবুজ ঘাসের ওপর বসে দিন মজুরের মত সে খাবার গাপুসগুপুস গিলে রাজন।

তাদের এ অবস্থা একদিনে হয়নি। ভেতরে ঘটে গিয়েছে অনেক কাহিনী। পায়ের হওয়া ক্ষত নিয়ে বহু ভুগতে হয়েছে। ভাগ‍্য সহায় না হলে অল্প আঘাতেও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। রাজনকে দেওেয়া পিয়ালির সেই পায়ের আঘাতে হওয়া ক্ষতর যন্ত্রণা দিনকে দিন বেড়েই চলেছিল। উন্নত চিকিৎসা, ওষুধপত্র, ভেষজগুণ সমৃদ্ধ ওষুধ। কোনটাই তার ক্ষত নিরাময়ে কাজে আসেনি। দিনের পর দিন অফিস কামাইয়ে একসময় চাকরিটা হাতছাড়া হয়। হাতে টাকা পয়সা যা ছিল সে বছর খেয়ে পড়ে দিব‍্যি চলেছিল। এরপর নিজেদের পেটের দায়ে, বাসা ভাড়া বাবদ বিরাট অংকের ঋণ জমলো। দূর্গন্ধে অতিষ্ট হলেও বাসা আর বদলাতে পারেনি। পরবর্তীতে বড় বাসার ভাড়া ঠিকঠাক পরিশোধ না করতে পারায় ছোট্ট টিনসেডের খুপচি ঘরে আশ্রয় নিতে হয়। বাসার সব জিনিসপত্র বিক্রি করতে করতে ঠেকেছিল শুধুমাত্র একটি তোষক আর কিছু হাড়ি, বাসনকোসন। পায়ের ক্ষতে একসময় পোকা ধরে গেল। পোকারা কিলবিল করত পায়ের মধ্যে। দুটো আঙুল কেটে বাদ দিতে হয়েছে। পাওনাদাররা রোজ বাড়ি বয়ে কথা শুনিয়ে যেত। হুমকি দিত, পয়সা পরিশোধ না করলে জেলে পুড়বে। এরমধ্যে বোঝার ওপর শাকের আটি হয়ে নেমে আসে আরেক দুঃসংবাদ। পিয়ালি কখনও মা হতে পারবেনা। তার সন্তান ধারণের সেই নারীটিই তো নেই। এ‍্যাবোর্শন করার সময় নারীটি কেটে ফেলা হয়েছিল। এ সংবাদ রাজনকে একেবারে নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল। শারীরিক মানসিক উভয় দিক থেকেই সে ভেঙ্গে পড়লো। সিদ্ধান্ত নিল, শহুরে জীবন ছেড়ে শেষ ভরসা হিসাবে গ্রামে ফিরবে।পিয়ালিকে সাফ সাফ জানিয়ে দিল, "তোমাকে বিয়ের মোহরানা দিয়ে ছাড়ানোর দিন আমার নাই। আমি নিজেই পথের ফকির। তোমার পথ তুমি দেখ নাও। যে কটা দিন আয়ু আছে মা ভাইদের পায়ের তলায় কাটিয়ে দিতে চাই। ওরা লাথি দিয়ে ফেলতে চাইলেও আঙুল ধরে ঝুলে থাকবো। রাজন কে অবাক করে দিয়ে পিয়ালি থেকে গেল। তাকে ছাড়লো না। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাড়ির পথ ধরে।

মা হলে হরেক যন্ত্রণা। মা ভালোটা সন্তানটাকে যেমন বুকে আগলে রাখে। তেমনই খারাপটাকেও পায়ে ফেলতে পারে না। আমতা আমতা করে মায়ের কাছে ঠাই হলো তাদের। ভাইয়ের নিরব রইলো। তার আগমনে তাদের মধ্যে কোন হেলদোল দেখা গেল না। ভাইয়ের বউয়ের মুখ ঝামটা দিয়ে পিছন দেখিয়ে চলে গেল।

তারপর থেকেই শুরু হয় রাজনের ভরাক্রান্ত হৃদয়ের যাত্রা।সেই সঙ্গে পেটে দু মুঠো ভাত দেওয়ার জন্য অসুস্থ শরীরে সকাল সন্ধা সংগ্রাম।

গ্রামবাসিরা কেউই ভালো চোখে দেখে না তাদের। প্রথমে আড়ালে আবডালে কানাকানি হলেও এখন মুখের ওপর ছোট করে কথা বলতেও বাধে না তাদের। তাদের অভাবগ্রস্ত জীবন, অসুখে জর্জরিত শরীর কারো মনে তাদের জন্য সহমর্মিতা জন্মে না। মুখ বাকিয়ে লোকে বলে, "ঠিকই আছে। যখন শক্তি আছিলো, ভালা বউডা ছাইড়া আরেক বেডি ধরছে। মানুষরে দুঃখ দিলে এমনই হয়। ওর আরও খারাপ হওয়া উচিত। এসব কথা ঠিকই রাজন পিয়ালির কানে আসে। তারা একে অন‍্যের দিকে তাকিয়ে রয় নিরব, নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে। আল্লাহর দেওেয়া বিচারের এক চুল ছাড় হয় না। এ বোধদ্বয় তাদের ভেতরে ভেতরে নিঃশেষ করে তোলে।

ফসলে দেওেয়া কিটনাশকের বোতলটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে রাজন। কোনদিন হয়তো এর স্বাদ মুখে গ্রহন করবে। পিয়ালির আশার শব্দ পেয়ে লুকিয়ে ফেলে মাটির ভারে।
____________________________
দিনের শুরুতে নরম রোদের আনাগোনা দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে উজ্জ্বলতা বাড়ার পরিবর্তে আকাশ কালো হতে শুরু করলো। নাজনীন মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে, "শ্রাবন দিনের বিয়েতে বৃষ্টিরা না নামলে হয়? ওরাও যে বিশেষ নিমন্ত্রিত অতিথি।

জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদেই তাদের বিয়েটি হলো। বিয়ের শেষে ইমাম সাহেবের খুতবা ও খেজুর বিতরণের মধ্যে দিয়ে বিয়ের একপাক্ষিক কাজ শেষ হলো। কবুল বলার সময়ে, রুমান একবার দুবার নয় বারবার কবুল শব্দটি উচ্চারণ করে ফেললো। হাসির হুল্লোড় পড়লো তাতে।

কান্নার নোনাপানির সাথে কবুল উচ্চারিত হলো নাজনীনের কন্ঠনালি দিয়ে। কাঁপা হাতে সই করলো রেজিস্ট্রি খাতায়। জীবনকে জড়ালো আরেকটি মানুষের সাথে। দ্বিতীয়বার জীবনের নতুন শুরু হলো।

দু হাত ভর্তি মেহেদী আর সাদা রঙের সুন্দর শাড়িতে নাজনীনকে রূপকথার কোন এক অপরূপা রাজকন‍্যার মতো লাগছে। মাথার সাদা দোপাট্টায় সৌন্দর্য যেন ঠিকরে পড়ছে রুমের দেয়ালগুলোতে।

বিয়ের কাজ সমাধা হতেই, বর কনেকে একত্র করা হলো। সাদা রঙের পাঞ্জাবীতে রোমানের সৌন্দর্য চোখে পড়ার মত। ছেলেটিকে ভিষন স্নিগ্ধ লাগছে। পাশাপাশি দুটো মানুষ। নতুন জীবন যাদের শুরু হলো শুধুই তাদের ঘিরে। কেউ কারো সঙ্গে কথা বললো না। রুমান নিঃশব্দে নাজনীনের একটি হাত শুধু মুঠোয় বন্দি করলো।

মাইমুনা বেগম আজ মহা ব‍্যাস্ত। মূলত, কান্না লুকাতে তিনি ব‍্যাস্ততার ভান করছেন। চোখ ঘুরিয়ে মেয়ে এবং জামাইকে দেখছেন। আর মনে মনে দোয়া করছেন, "এবার যেন মেয়েটি সুখী হয়।"

বিদায় বেলাটা ছেলেপক্ষের যতটা আনন্দের। মেয়ে এবং মেয়ে পক্ষের তেমনই কষ্টের, যন্ত্রণার। রোমানের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি। অন‍্যদিকে নাজনীনের চোখ ভর্তি পানি।

ভাইয়ের এক বছরের মেয়েটি ঝাপিয়ে ফুফুর কোলে উঠে পড়লো। ভারি সাজ পোশাকেও নাজনীন তাকে জড়িয়ে ধরলো। বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো কিছুক্ষণ।

মা, বাবা, ভাই, ভাবির সাথে আলিঙ্গন, ভরসা বাক‍্যর মধ‍্য দিয়ে রোমান বউ নিয়ে উঠলো গাড়িতে। গাড়ির চাকাগুলো সচল হতেই নাজনীন খোলা জানালায় মুখ বাড়িয়ে পিছন ঘুরে তাকায়। পিছে চোখভরা পানি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার স্বজনেরা।

সাদা রঙের একটি দোতলা বাড়ির সামনে গাড়ি এসে থামে। রোমানের হাত ধরে শশুরের ভিটায় পা পড়ে নাজনীনের। রুকাইয়া দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের নামে অভিযোগ করে বললো, "শুধুমাত্র বৃষ্টির জন্য মা আমায় যেতে দিলো না। কোন মানে হয় বলো মিষ্টি ভাবি?"

"মিষ্টি ভাবি" ডাকটা কানে পৌছাতেই নাজনীনের মনটা ভালোলাগার আবেশে ছেয়ে উঠলো। এক হাত বাড়িয়ে রুকাইয়াকে কাছে টেনে নিলো।

বৃষ্টির দিনে বাড়িতে একটু কাদা জড়াবেই। তার ওপর সেটা যদি হয় বিয়ে বাড়ি! কিন্তু নাজনীনের সদ‍্য হওয়া শাশুড়ি মা ভীষণ খুতখুতে স্বভাবের মানুষ। তাই সাদা টাইলসে কাদার ছাপ পড়তে না পড়তেই এক নারী মুখ সেটি বারবার পরিষ্কার করে চলেছেন। অন‍্যদিকে কিচেন থেকে ভেসে আসছে খাবারের ঘ্রাণ। বাড়ির ভেতরের আশপাশটাও সাদা নকল ফুলে সেজে উঠেছে। বউমাকে দেখে শাশুড়িমা জড়িয়ে ধরলেন। আসতে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলেন। নাজনীন নম্রতার সাথে উত্তর দিলো। শাশুড়ি, বউমা কথা বলায় ব‍্যাস্ত হয়ে পড়লো। এরপর একে একে আত্মীয়স্বজনের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলল নাজনীন।

রুমানের সাথে নাজনীনের দেখা হলো বাসর ঘরে। হলুদ সাদা মোমবাতি আর ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে বাসর ঘর। তার মধ্যে সাদা জামদানি গায়ে জড়িয়ে হাটু ভাজ করে বসে আছে এক মানব পুতুল। সাদা বর্ণে সাদা শাড়ি, হালকা কাজের সোনার গহনায় সেজে উঠেছে এক অপূর্ব নারী মুখ। মুখে কোন প্রসাধনীর ছোঁয়া নেই। আপাদমস্তক প্রাকৃতিক সুন্দরী।

রোমান নব বিবাহিত স্ত্রীকে দেখে সম্মোহনী চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুসময়। ঘোর কাটতেই ধীর পায়ে এগিয়ে গেল নাজনীনের কাছে। হাত ধরে হাটা ধরলো ছাদের দিকে। নাজনীন পুতুলের মত পিছন চলে।

বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির তালে রুমুঝুমু শব্দ তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে রোমানের পায়ের তালে তাল মিলিয়ে হাঁটছে তার নববধূ।

এ বাড়ির ছাদে একটি ছোট রুম আছে। যেটা রোমান বড় হবার পর থেকে নিজের ব‍্যাক্তিগত লাইব্রেরি ও অবসর জ্ঞাপনের স্থান হিসাবে ব‍্যবহার করে আসছে। রোমান নাজনীনকে নিয়ে সেখানে গেল না। রাতের খোলা ছাদে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে নববধূকে নিয়ে দাড়াল রেলিং ধরে। বৃষ্টির বড় বড় ফোটা তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টির ফোটার তালে হালকা কেঁপে উঠছে নাজনীন। রোমান নাজনীনের হাত ছেড়ে তার দিকে ঘোরায়। সময় ব‍্যায় না করেই নাজনীনের সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে। নাজনীনের দিকে একগুচ্ছ কদমফুলের তোরা ধরে বলতে শুরু করে, "এই কদম ফোটা ঘন বরষার নিঝুম রাত সাক্ষী রেখে বলতে চাই, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসতে চাই। তোমার প্রতি হওয়া মুগ্ধতা, মায়াকে প্রতি মুহুর্তে বাড়াতে চাই। তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে রাখতে চাই। তোমার হাতদুটো আজীবন শক্ত করে ধরে রাখতে চাই। হুটহাট তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই। আমার এই এত এত চাওয়াকে কি পূর্ণতা দেওেয়া যায় মিস রোমান সিকদার?"

এত মোহনীয় আবেগমাখা আবদার। এ আদুরে ভালোবাসা মাখা আবদার কি নাজনীনের প্রতাখ‍্যানের সাহস আছে? না আদৌ সম্ভব? নাজনীনের চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে। এ কান্না দুঃখের নয়। তীব্র সুখের। হাত বাড়িয়ে কদমগুচ্ছ রোমানের থেকে নিয়ে তাকে দাড়াতে বললো। রোমানের বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো, "আপনার আবদার প্রত‍্যাখানে সাধ‍্য আমার নেই। আমি কি সুখের আশায় চেয়ে থাকতে পারি আপনার দিকে?"

রোমান নাজনীনের মুখের চোখ বেয়ে পড়া পানি ও বৃষ্টির পানির স্রোত দু হাতে মুছে দিয়ে বললো, "নিশ্চয় আমার প্রিয়তমা। আমার সুখও তাতে। যেখানে তুমি সুখি। আমিও যে তোমার দিকে তাকিয়ে রই সুখের আশায়।"

এরপরের ঘটনাটা উষ্ণ। দুজন দুজনার খুব কাছাকাছি আসে। ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়।

হঠাৎ করে বিদ‍্যুৎ চলে যাওয়ায় ছাদের এক কোনায় টিমটিমে জ্বলা লাইটটাও নিভে গেল। প্রগাঢ় আধারে তলিয়ে গেল ভিজতে থাকা দুজন নর নারী। প্রকৃতি তাদের একান্ত কিছু সময় উপহার দিতে চাই। যে সময়ের সাক্ষী কেউ না হোক। শুধুই দুজন দুজনার।
_________________সমাপ্ত____________

লেখনীতে~সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি

[গল্পটি কেমন লাগলো জানাবেন। আমি দুঃখিত গল্পটি নিয়মিত না দিতে পারায়। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং মার্জিত ভাষায় ধরিয়ে দিবেন।]

 #সুখের_আশায়_চেয়ে_থাকি (১৩+১৪)"ফাহমিদা!""জি আম্মা!"বউমাকে ডেকেও বলার মত কথা সাজিয়ে উঠতে পারেন না মাইমুনা বেগম। ইতস্তত বো...
31/05/2025

#সুখের_আশায়_চেয়ে_থাকি (১৩+১৪)

"ফাহমিদা!"

"জি আম্মা!"

বউমাকে ডেকেও বলার মত কথা সাজিয়ে উঠতে পারেন না মাইমুনা বেগম। ইতস্তত বোধ করেন।

ফাহমিদা শাশুড়ি মায়ের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

জড়তা কাটিয়ে মাইমুনা বেগম বলেন, "কি দিয়ে শুরু করব বুঝতে পারছিনা। আসলে, নাজনীনের জন্য ভালো একটি বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। ওর সামনে একথা কিভাবে তুলব বুঝতে পারছিনা। ও যদি বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে না নেয়।"

"বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে না নেওয়াটা কি অযৌক্তিক হবে ওর জন্য? বলুন?"

মাইমুনা বেগম জবাবে কিছুই বলতে পারেন না।

শাশুড়ি মায়ের নিরবতার পিঠে ফাহমিদা বলে, "আপনি এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন? কিছুদিন হলো একটি ঝামেলা থেকে বেরিয়ে মেয়েটি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। পড়াশোনায় মন দিয়েছে। এর মধ্যে এসব কথা তোলার কি খুব দরকার আছে? শুনেছি, আগের বিয়েটি আপনারা নিজের মনমতো দিয়েছেন। এবারেও একই কাজ কেন করতে চাইছেন? আমার মনে হয়, ওকে ওর মত থাকতেন দিন। পড়াশোনা করুক। নিজের পায়ে দাড়াক। এরপর ও যা ভালো বুঝবে করবে। এত তাড়াহুড়োর কিছু আছে বলে মনে হয় না।"

"কিন্তু, বউমা ওরা খুব আগ্রহ করছিল।"

"এখানে অনাগ্রহের তো কিছু নেই আম্মা। আমাদের নাজনীন মা শা আল্লাহ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন তার নম্র ভদ্র আচরণ। পছন্দ হওয়ার মতোই মেয়ে। আপনাকে পূনরায় কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, মেয়ে পড়ছে। পড়াশোনা শেষ না হলে কথা আগাতে পারছিনা। বুঝতে পেরেছেন?"

বউমার কথার প্রতিত্তোরে মাইমুনা বেগম সুবোধ বালিকাটির ন‍্যায় মাথা কাত করে সম্মতি জানায়।

মা এবং ভাবির কথোপকথন কান এড়ায় না নাজনীনের। সে সবই শুনেছে। উঠানের এক কোনায় দাড়িয়ে তারা যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে ব‍্যাস্ত, তখনই নাজনীন ঘর থেকে বেড়িয়ে উঠানে আসতে নিচ্ছিল। সব কথায় তার কান ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌছায়। ভাবির বুদ্ধিমত্তার সাথে দেওেয়া উত্তরগুলো ওর খুবই পছন্দ হয়। মনে মনে তাকে না ধন্যবাদ জানাতে ভুল করে না। কারো চোখ পড়ার আগেই দরজার কাছে থেকে সরে যায় নাজনীন। পা চালিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে।

এরপর মাইমুনা বেগম আর সে বিষয়ে নিজের ভাবনা চিন্তা বন্ধ রাখেন। ফাহমিদা তো ঠিকই বলেছে। সে তাড়াহুড়ো ই করছিল বটে।

দিন দুয়েক পরে মাইমুনা বেগমের কাছে আবার কল আসে। বান্ধবী ফোন করেছে। কুশল বিনিময় শেষে জিজ্ঞাসা করে, "সে বিষয়ে কথা বলেছেন বাড়িতে?"

মাইমুনা বেগম প্রথমে কি বলবেন বুঝতে না পারলেও, পরক্ষণেই নিজেকে বোঝালেন। কথা ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই। ভনিতা না রেখে প্রতিত্তোরে বললেন, "আপা, আমি এত তাড়াতাড়ি কিছু করতে চাইছি না। মেয়ে আমার সবে একটি ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়েছে। পড়াশোনায় মন দিয়েছে। আপাতত ওর পড়াশোনা শেষ না হওয়া অব্দি কিছু ভাবতে পারছিনা।"

ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের স্পষ্ট শব্দ নাজনীনের কানে লাগে। মায়ের থেকে একটু দূরে বসেই অপেক্ষা করছিল ভালো কিছুর জবাব আসার। কিন্তু সে তো জানে না, দূর্লভ বস্তু যেমন খুব সহজে পাওয়া যায় না। তেমনিই খুব করে চাওয়া মানুষটিকে খুব সহজে জীবনে পাওয়া যায় না। সৃষ্টিকর্তার এখানে বান্দার পাথে অপেক্ষা নামক খেলা খেলতে মন চায়। মহামহিম রব দেখতে চান উমুক বান্দার জন্য ওই বান্দাটি আদৌ উপযুক্ত কিনা! দীর্ঘ অপেক্ষার অঙ্গারে বান্দাকে পুড়িয়ে খাটি সোনা কিনা খতিয়ে দেখেন।
এখন দেখা যাক, অপেক্ষার দীর্ঘ সময়টুকু ধৈর্যের সাথে পাড় করতে পারে কিনা! না, অকালেই ঝরে অন‍্যতে মন দেয়।
______________________________

রাজনের দিনকাল ভয়াবহ রকমের খারাপ যাচ্ছে। পিয়ালির ছুড়ে মারা ফ্রাই প‍্যানের আঘাতে হওয়া পায়ের ক্ষত রাজনের আজও শুকায়নি। অল্প একটু স্থানে যন্ত্রনা দায়ক ক্ষত হয়ে দাড়িয়েছে। চিকিৎসা নিয়েও জ্বালাপোড়া নিরাময় হচ্ছে না। অন‍্যদিকে হাওয়া ছাড়লেই তীব্র দূর্গন্ধে বাসায় টেকাও শুধু মুশকিল ই নয় মহা মুশকিল। বাসা বদলানো প্রয়োজন। পায়ের যন্ত্রনায় নিয়মিত অফিস করাও কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে তার জন্য। বর্তমানে ছুটিতে বাসায় দিন কাটাচ্ছে সে।

বেশ কিছুদিন যাবত বাসায় থাকার কারণে পিয়ালির দিকে নজর পড়ছে রাজনের। কৈ পেট তো ফোলা ফোলা লাগে না? এতদিনে প্রেগনেন্সির সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে থাকার কত। শারীরিক, মানসিক উভয় দিকেই পরিবর্তন হওয়ার কথা। অথচ পিয়ালি দিব‍্যি হেটে চলে বেড়াচ্ছে। কোন পরিবর্তন নেই।

এক দুপুরে খেতে বসে রাজন প্রশ্নটা করেই ফেললো, "পিয়ালি, তোমার এখন কয় মাস চলে?"

"কি?"

"বুঝতে পারছোনা?"

"না।"

পিয়ালির এই 'না' শব্দটি রাজনকে অনেকগুলো রহস‍্যের মুখোমুখি এনে দাড় করায়। মুহূর্তেই কপালে শিরা ফুলে ওঠে। মুখের স্পষ্ট রাগের চিহ্ন ফুটে ওঠে। খাওয়া থামিয়ে সটান দাড়িয়ে পড়ে। বিপরীত পাশে বসা পিয়ালির চুলের গোছা ধরে টেনে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে। চুলের গোছা থেকে হাত সরিয়ে মুখ চেপে ধরে। রাগান্বিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে, "আমার সাথে এই নাটকটি কেন করলি? আমাকে কেন বলেছিলি? তুই তিন মাসে গর্ভবতী।"

হঠাৎ আক্রমনের কারণ বুঝে উঠতে পারছিল না পিয়ালি। রাজনের প্রশ্নে উত্তর খুজে পায় না। থতমত খেয়ে যায়। অপরদিকে রাজনের হাতের চাপে মুখের চোয়াল ভেঙে আসার জোগাড় মেয়েটির। যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। ইশারায় ছাড়তে বলে। না মুখ না ছাড়লে কথা বলবে কি করে?

রাজনের শক্ত হাতের বন্ধন থেকে ছাড়া পেতেই পিয়ালি হাফ ছেড়ে বাঁচে। বড় বড় করে ঘন শ্বাস নেয়। কিন্তু রাজন প্রশ্ন থেকে এক চুলও নড়ে না। ফের জিজ্ঞাসা করে, "কেন এমন করলি বল? কেন মিথ‍্যাচার করলি আমার সাথে?"

পিয়ালির নতমুখে জবাব দেয়, "তাহলে কি বিয়ে করতে আমায়?"

"সেটা পরের প্রশ্ন। মিথ্যা বলে এত নাটক কেন করলি? কি ক্ষতি করেছি আমি তোর? কেন আমার সাজানো সংসার নষ্ট করলি?"

"নষ্ট আমি করিনি। করেছো তুমি।"

"কিহ! আমি করেছি?"

রাজন যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেনা। এ কথা আদৌ সত্য? সে নিজের সংসার নষ্ট করেছে? অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে পিয়ালির দিকে তাকায়।

পিয়ালি হাসে। এ হাসির পিছনের গল্প অনেক। বলে, "কিছু হলেই আমার উপর হাত উঠাও। তোমার প্রাক্তন স্ত্রী তো পারলে আমাকে মে""রেই ফেলে। সব দোষ কি শুধুই আমার? তোমার এক চুল দোষ ও কি নেই?"

রাজন প্রতিত্তোরে কিছুই বলে না। বলবেই বা কি? নিজেকে এ প্রশ্নের কাঠগড়ায় আগে কখনও যে দাড় করায়নি। রাজন তবুও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে প্রতিত্তোরে বলে, "দোষ? আমি করেছি?"

"নিজেকে প্রশ্ন করে দেখ। দোষ তোমার কি একটুও নেই?"

রাজন এবার কিছুই বলে না। নিরব নিথর হয়ে দাড়িয়ে রই।

থামে থাকে না পিয়ালি। সে বলতে শুরু করে, "আমি নিতান্তই দারিদ্র্যঘেষা পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়ে। অনেকগুলো ভাইবোনের মধ্যে আমি তৃতীয় জন। আমার চাষাভূষা বাবা এতগুলো ছেলেমেয়ে প্রতি পালনে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলেন। কোনরকম এসএসসির পরে গার্মেন্টসে ঢুকলাম। প্রতিবেশি এক চাচার মাধ্যমে। বছর খানিক চাকরির বয়স পেড়লো। শহরে অভস্থ হতে লাগলাম। এক পর্যায়ে তোমার সাথে দেখা। আমি ওয়ার্কার হিসাবে চাইব, উপর মহলকে হাতে রাখতে। যেন আমি সুযোগ সুবিধা অন‍্যদের থেকে বেশি পাই। এবং স‍্যার, ম‍্যামদের নেক নজরে থাকি। প্রায়শই বিভিন্ন রকমের খাবার বানিয়ে আনতাম। তার মধ্যে তুমিই বেশি খুশি হতে। খাবারের প্রশংসা করতে। তোমার সাথে আমার সখ‍্যতা বাড়তে লাগলো। আমার তোমাকে মনে ধরলো। ধরবে না ই বা কেন? তুমি শিক্ষিত, দেখতে ভালো। আমার থেকে উচু পজিশনে। আর কি চাই? কিন্তু তোমাকে এ কথা জানাব কি করে? উচু নিচুর একটা তফাত আছে না। সাজগোজ বাড়ালাম। প্রথম নজরে পড়লাম। তুমিও এগিয়ে আসলে। প্রেম হলো। একসময় ঘনিষ্ঠতা বাড়লো। একদিন জানতে পারলাম তুমি বিবাহিত। অথচ, এ কথা তুমি আমাকে আগে বলোনি। আমার সুন্দর, উন্নত জীবন চাই। দারিদ্র্যের জীবন আর চাই না। হাপিয়ে উঠেছি। এজন্য তোমাকে চাই। তাতে তোমার জীবনে যে থাকে থাকুক। তুমি কিন্তু আমার থেকে সুখ খুজতে ভুলতে না। ঘরে যে তখন তোমার অত সুন্দর স্ত্রী, তাও তোমার মধ্যে আমি অন‍্যরকম মাদকতা টের পেতাম আমার ছোয়ায়। অথচ, সৌন্দর্যের বিচার করলে, আমি তার ধারেকাছেও নেই। অস্তিত্ব সংকটে তোমার আরও আষ্টেপৃষ্ঠে আকড়ে ধরলাম। সত্যি আমি কন্সিভ করেছিলাম। তোমাকে দেখানো রিপোর্ট মিথ্যা ছিল না। কিন্তু তোমাকে পুরোপুরি ভরসা করে উঠতে পারছিলাম না। তাই কিছুদিনের মধ্যে এ‍্যাবোর্শন করা হয়েছিল। তবে ততদিনে তুমি আমার ওপর পুরোপুরি ঝুকে গেলে। স্ত্রী ছাড়তে দ্বিধা করলে না। তোমার স্ত্রী যেদিন তোমার ছেড়ে গেল, সেদিন ও ফ্লাটে আমি গিয়েছিলাম। সে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমার মন বলে উঠলো, কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে দেখ তো। কেমন লাগে ওর! প্রেগনেন্সির রিপোর্ট দেখালাম। আরও ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বললাম। তোমার স্ত্রী প্রথমে শান্ত থাকলেও পরে রূপ নিলো সাক্ষাৎ বাঘিনী। সেদিনও সে আমায় মে""রেছিল জানো? তারপর তো গেলোই। আমাদের বিয়ে হলো। সত্যি বলতে, সুখ আর হলো না। কেমন অশান্তি অসুখ লেগেই থাকে। বিলাস বহুল জীবন কাটাতে তোমাকে বেছে নেওয়া। যেই তুমি এক সময় আমাকে পেলে সব ভুলে যেতে, আমার ছোয়ায় উন্মাদ হয়ে যেতে। সেই তুমি গায়ে হাত তোলো আমার! আমি অবাক হয় জানো? আগের তুমি আর এখনের তুমির মধ্যে বিরাট ব‍্যবধান। অনেক কথা তো বললাম। এখন বলো? এখানে কি তোমার একটুও দোষ নেই? তোমার স্ত্রীকে ছাড়তে না চাইলে আমি জোর করে ছাড়াতে পারতাম? যত ভিডিও ফুটেজ থাকুক না কেন। তার চেয়েও বড় কথা তাকে প্রকৃত অর্থে চাইলে তুমি আমার শরীরে ডুবে যেতে পারতে? তুমি বিবাহিত এ কথায় বা কেন বলোনি? প্রথমে তো অজান্তে তোমার জীবনে এসেছি। শুরুতে সব জানানোর পর যদি সম্পর্ক আগাতাম বা শুরু করতাম তাহলে তুমি বলতে পারতে সব দোষ আমার। আমি জেনে বুঝে এসেছি। আসলেই কি তাই? দোষ যদি করে থাকি তবে তুমি আমি দুজনেই করেছি। এ কথা যত তাড়াতাড়ি স্বীকার করবে তোমার জন্য ভালো।"

পিয়ালি দীর্ঘ ব‍ক্তব‍্য শেষে টি টেবিলের ওপর রাখা পানি ভর্তি জগ মুখে ধরেই ঢকঢক করে পানি খেল। হাপিয়ে গিয়েছে সে।

অন‍্যদিকে রাজন, বিকারগ্রস্ত রোগীর ন‍্যায় দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি ঝাপসা, এলোমেলো। এভাবে কখনও ভাবেনি সে। পিয়ালি সে কিছুই বললো না। আর না পিয়ালি তাকে কিছু বললো।

রাজন পায়ের ক্ষতর জন্য সোজাসুজি হাটতে পারে না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। মস্তিষ্ক জট পাকিয়ে আছে। এ মুহূর্তে কিছুই ভাবতে পারছেনা। হিসাবে গড়মিল লেগেছে। মনের মধ্যে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। মনে হয় সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে তবে নিভবে।
___________________________

নাজনীন নিজেকে নিয়ে বড় বেশি ব‍্যাস্ত। পরিক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। নাহিদ গিয়ে কেন্দ্রে দিয়ে আসে। পরিক্ষা শেষে আবার নিয়ে আসে। চারিদিকে বিপদ ফাঁদ পেতে থাকে। পরিবেশ অনিরাপদ। এরমধ্যে বোনকে একা পাঠাতে তার মন সায় দেয় না।

যোগাযোগ চলে দুই পরিবারের মধ্যে। এখনো মুখোমুখি দেখা হয়নি তাদের। মাইমুনা বেগমের সাথে ছেলের মায়ের কথা হয়। কথার ফাঁকফোকরে নাজনীনের খবর নেওয়া হয়। ওপাশ থেকে একজন আগ্রহ নিয়ে সে গল্প শোনে।

একদিন বিকেল বেলায়, ফাহমিদা বিকেলের চা নাস্তার আয়োজন করছিল। বারান্দার এক কোনে বেতের তিনটি মোড়া পেতে রাখা। একটি গোল টি টেবিল। খালি জায়গায় কয়েকটা ইনডোর প্লান্ট। সেখানে প্রায়শই আড্ডা জমে বাড়ির তিন মানবির। এ সময়টা বাড়িতে পুরুষ লোক থাকে না। তারা থাকে কর্মস্থলে।

আসরের পরের সময়টা বেলা হু হু করে পড়তে শুরু করে। এই দেখা যায় বারান্দার এক কোনায় এক ফালি চকচকে হলদে রোদ। পরক্ষণেই দেখা যায় চারিপাশ আচ্ছন্ন হয়ে আসছে আধারিতে। সেদিনের চিত্রপট ভিন্ন ছিল। জৈষ্ঠ্যের ভ‍্যাপসা গরম দিনে দুপুর পরে শুরু হলো কালবৈশাখির তান্ডব। আকাশ ঘন কালো হয়ে এলো। মুহুর্তে শান্ত প্রকৃত রূপ নিল ভয়াবহতায়। সেদিন তার নাহিদ এবং আজমল শেখের দোকানে ফেরা হয় না। খাবার পরে ঝুম বৃষ্টির শীতলতায় গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়েন।

বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে মাইমুনা বেগম ব‍্যাস্ত হয়ে পড়েন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে। বৃষ্টির পানিতে রান্না হয় খুব সুন্দর ও স্বাদু। বড় বড় ড্রামে পানি জমিয়ে রাখেন।

বসার ঘরে হাওয়ার তালে পর্দা দুলে উঠছে। মাইমুনা বেগম সব পানি সেকে, আসরের নামাজ পড়ে সোফায় বসেন। আসেন আজমল শেখ ও। নাজনীন আসরের নামাজ শেষে সোজা কিচেনে চলে যায়। ভাবিকে নাস্তা বানানোর কাজে সাহায্য করে।

বিকালের নাস্তায় তৈরী করা হয়, আলু পুড়ি, চিকেন পাকোড়া আর ঘন দুধ চা।

ফাহমিদা পুরি ভাজতে ভাজতে বললো, "তুমি পাকোড়া গুলো ভেজে ফেল না বোন। আমার চিকেনে গন্ধ লাগছে। কেমন গা গুলিয়ে আসছে।"

নাজনীন ফাহমিদার দিকে সর্তক দৃষ্টিতে তাকায়। মনের মধ্যে অন‍্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়। আগ বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করে না। থাক না। সত্যি হলে, সেই বলবে।

বিকালের নাস্তার সাথে দারুণ আড্ডা জমে উঠেছে। আকাশ কালো করে বাইরে পড়ছে মুশুলধারে বৃষ্টি। ঘরের মধ‍্যখানে পরিবারের কয়েকটি প্রাণি মিলে নিজেদের আলাপ আলোচনায় মশগুল। পারিবারিক আড্ডা পৃথিবীর অন‍্যতম সুন্দর দৃশ‍্যের একটি। বড় বড় চুমুকে আজমল শেখ চা শেষ করেন। মেয়ের উদ্দেশ্য বলেন, "তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে মা? পরিক্ষা শুরু হয়েছে শুনলাম। কেমন হচ্ছে?"

নিজের গম্ভীর, দাপটের সাথে চলা বাবার মুখ থেকে মা নামক আদুরে সম্বোধনে নাজনীনের মন খুশিতে নেচে ওঠে। জীবনের চরম বাস্তবতায় ঘেরা সময়ে সে পরিবারের প্রত‍্যেকটি সদস্যকে পেয়েছে বন্ধু রূপে। পাছে সে কষ্ট না পায় সেদিকে দৃষ্টি তাদের সদা জাগ্রত। ভালোলাগায় মন ছেয়ে থাকে। বাবার প্রশ্নের প্রতিত্তোরে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলে, হঠাৎ করেই নাকমুখ চেপে ফাহমিদা তড়িঘড়ি করে স্থান ত‍্যাগ করে। ব‍্যাসিনে গিয়ে এ অব্দি পেটে পড়া খাবারের বিসর্জন ঘটে। নাজনীনের আর কিছুই বলা হয়ে ওঠে না।

সদ‍্য ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেতে বসেছিল নাহিদ। স্ত্রীর অদ্ভুত কান্ডে বড় বড় চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সে ঘটনা বুঝতে অপারগ।

ফাহমিদা খাদ‍্যের বিসর্জন দিয়ে, চোখমুখ ধুয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ডায়নিংয়ের একটি চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। এমন সময় নাজনীন এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে হাজির হয়। ফাহমিদা বিনা বাক‍্যে ঢকঢক করে গিলে নেয়।

নাজনীন শুধায়, "টেস্ট করিয়েছেন?"

বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় ফাহমিদা। দুদিকে মাথা ঝাকায়।

নাজনীন আবারও বলে, "আগামীকাল টেস্ট করাবেন। আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?"

"না।"

"আসলেই?"

"হুম।"

নাজনীন হেসে ফেলে। বলে, "এইযে খাবারে গন্ধ লাগা, হটাৎ করে ব"""মি হওয়া। এসব কিসের লক্ষণ জানেন না?"

ফাহমিদার ফোলা গালদুটো হালকা গোলাপি আকার ধারণ করে। নাজনীনের কথায় বেচারি ভারি লজ্জা পায়।

"ভাইয়া জানেন?" নাজনীন প্রশ্ন করে।

"না।"

"তাহলে সবাইকে গিয়ে বলি?"

ফাহমিদা নাজনীনের হাত টেনে ধরে। লাজ রাঙা মুখের লাজুক কন্ঠে বলে, "এখন না। আগে শিওর হই।"

"আচ্ছা।"
_______________________________

নাজনীনের ডিগ্রীর আর একটি বছর আছে। তৃতীয় বর্ষে উঠেছে। টুকটাক পড়াশোনা, মাঝেমধ্যে ক্লাসে গেলে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেওেয়া, ফুচকা খাওয়া, আইসক্রিম খাওয়া। এসবের মধ‍্যেই দিন কাটছিল। তারমধ‍্যে ফাহমিদা গর্ভবতী। ভাবির একটু আধটু যত্ন, দেখভাল। আসন্ন নবজাতকের জন্য ছোট ছোট খাতা সেলাই।

হঠাৎ করেই একদিন নাজনীনের নামে পার্সেল আসে। কুরিয়ার থেকে কল করে তাকে জানানো হয়, অনুগ্রহ করে পার্সেলটি রিসিভ করতে।

একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে কুরিয়ার অফিস ফিরে। বেশ ভারি একটি পার্সেল। চোখমুখে কৌতুহল উপচে পড়ছে।

বাড়ি ফিরে সর্বপ্রথম পার্সেলটি আনবক্স করে। আবিষ্কার করে কালজয়ী লেখকদের লেখা কিছু বই। এবং সাদা কাগজে নীল কলমের আচরে ফুটিয়ে তোলা একটা চিঠি। অথবা চিরকুট ও বলা যেতে পারে।

এ বয়সে আবেগ থাকে। মনের কোনে নানা অনুভূতি জন্ম নেয়। অজ্ঞাত পরিচয়হীন মানুষের থেকে উপহার পেয়ে নাজনীনের ও তেমনটিই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা তাকে চিনিয়েছে কঠোরতা।

নাজনীন চিরকুটটা হাতে নিল। তাতে লেখা ছিল,

◆◆◆◆
নিস্তব্ধতা,
আপনাকে দেখেছিলাম সমুদ্রে পাড়ে। নিরব, সরল, কোমল একটি মুখশ্রী। যে মুখে লেপ্টে ছিল স্নিগ্ধতার আবেশ। জানেন, আমি মোহিত হয়ে পড়েছিলাম। আপনার নিরবতাকে ভিষন পছন্দ হয়েছিল। আপনার নম্রতা, সভ‍্যতায় আমি অভিভূত হলাম। এরপর জানতে পারলাম আপনার পরিবারের সাথে আমার বাবা মায়ের সখ‍্যতা তৈরি হয়েছে। আমার বোনটিও আপনার আশপাশ ঘুরঘুর করে। আমার তখন মনে হয়েছিল এরচেয়ে খুশির যেন আর কিছুই হয় না। ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয় আমি কে? আমি জানি, আপনার যে মন মানসিকতা তাতে আমার হাবিজাবি লেখা পড়ার ধৈর্য্য এবং সময়টা আপনার নাও হতে পারবে। তবুও আমার অবচেতন মন চাইছে, আপনি পড়বেন। আমার বাবা মায়েরও আপনাকে পছন্দ হলো। এদিকে আপনাতে মন দিয়ে আমি ভেতরে ভেতরে কুপোকাত। ওনারা বিষয়টিকে জোর দিলেন। এ অব্দি আমি চুপ ছিলাম। আপনার পরিবারের কাছে প্রস্তাব রাখতেই জানতে পারলার অপ্রত্যাশিত কিছু কথা। আপনার জিবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এ কথা আমি জানামাত্রই আমার শুধু মনে হয়েছে, এই মানুষটিকে কি করে ঠকানো যায়? এই মানুষটি যে জীবনে একবার পেয়েছে তার তো মাথায় করে রাখা উচিত। ঠকানো, কষ্ট দেওেয়া এসব তো বহু দূরের কথা। আমি আপনাতে হারিয়েছি। এ কথা দুনিয়ার সব সত‍্যর মধ্যে একটি। আমার ছোট্ট জীবনে আপনাকে চিরসঙ্গী হিসাবে চাই এটিও তেমনই সত্যি। আমি জানিনা আমার রব কপালে কি লিখে রেখেছেন। আপনার মা জানিয়েছেন আপনার পড়াশোনা শেষে ভেবে দেখবেন। আমি জানিনা আদৌ কি হবে না হবে। আপনার অব্দি কথা পৌছেছে কিনা তাও জানিনা। আমি আপনার প্রহর গুনছি। বিগত মাসগুলোতে আপনার প্রতি শুধু আমার অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। আমি রাশভারী মানুষ। অথচ আমার সারাক্ষণ মনে হয় আপনাকে পেলে আমি অনেক গল্প করব। মনের মধ্যে কত কথা জমিয়ে রেখেছি। অথচ, লিখতে গিয়ে শব্দ খুজে পাচ্ছিনা। জানিনা কেমন আছেন। আপনার মত শান্ত শীতল মানুষকে দেওয়ার মত বই ছাড়া অন‍্য কোন কিছুকে বেস্ট মনে হয়নি। আমি আপনার হ‍্যাঁ উত্তরের আশায় পথ চেয়ে আছি। প্রতিনিয়ত সৃষ্টিকর্তা দরবারের দোয়া করছি, ওই মন ভাঙা মানুষটাকে তুমি আমার করে দাও। আমি আজীবন তাকে যত্নে ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখব। জীবনে কখনও যদি কাউকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে ইচ্ছা হয়, তবে সেই সুযোগটি আমাকে দিলে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার ফোন নাম্বারটি দিয়ে রাখলাম। অনুগ্রহ করে কখনও যদি আপনার কন্ঠস্বর শোনান।


ইতি
রোমান
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

একবার নয়। কয়েকবার চিঠিটি পড়লো নাজনীন। তার মন ভাঙাচোরা মানুষকে নিয়ে কেউ অনুভূতি সাজাতে পারে এ ও কি বিশ্বাসযোগ্য? নিজের বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। এ জীবনে তার জন্য কেউ এতটা আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এ ও কি বিশ্বাস করতে হবে তাকে?

কারো থেকে উপহার পেলে তাকেও কিছু দিতে হয়। এটাই নিয়ম। নাজনীন দুটো বইয়ের সঙ্গে চিরকটুট লিখে দিলে। খুব সংক্ষেপে তাতে লিখলো,

◆◆কদম ফোটা ঘন বরষায় ছাতা হীন ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার বড় ইচ্ছে। এ জীবনে এক পশলা রহমতের বৃষ্টির ন‍্যায় সচ্ছ, নিরেট, খাদহীন ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু চাওয়ার নেই।"

ইন শা আল্লাহ চলবে......

লেখনীতে~সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Sumiya Islam Jannaty-সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share