03/04/2025
ঐতিহ্যবাহী গোদাগাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:-
গোদাগাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। এটি গোদাগাড়ী সদরসহ আশেপাশের অঞ্চলের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে আসছে।
প্রতিষ্ঠার সূচনা ও প্রেক্ষাপট:-
১৯৬২ সালের প্রথমার্ধে একদল সমাজ সচেতন ও সংস্কৃতিমনা তরুণ গোদাগাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাঁদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট এখলাস হোসেন, শ্রী পরেশ নাথ ভকত, মোঃ আব্দুল হান্নান, শ্রী মদন মোহনসহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন। প্রথমদিকে এটি শুধুমাত্র একটি ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল তরুণদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া চর্চা বৃদ্ধি করা। পরবর্তীতে এর সঙ্গে একটি লাইব্রেরী সংযুক্ত করা হয়। যা জ্ঞানার্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে।
প্রথম দিকের চ্যালেঞ্জ ও স্থান পরিবর্তন:-
প্রাথমিকভাবে, ক্লাবের কার্যক্রম গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের একটি ঘরে পরিচালিত হতো। তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব ইয়াহিয়া মিয়া এবং নীরেন্দ্র নাথ মজুমদার (হারুবাবু) ক্লাবটির কার্যক্রম চালাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে কিছুদিন পর স্থান সংকুলানের কারণে ছাত্রদের ইউনিয়ন পরিষদের অফিস ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে, লাইব্রেরীর কার্যক্রম বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে এটি জনাব মোঃ আব্দুল হান্নানের বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। এরপর শ্রী পরেশ নাথ ভকতের বাড়ি, তারপর ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বাড়িতে এবং একপর্যায়ে গোদাগাড়ী আ: ফ: জি: পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাবটির কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। তবে ক্লাবের নিজস্ব ভবন ও জমির অভাবে এটি দীর্ঘদিন ভাসমান অবস্থায় ছিল।
ক্লাবের নিজস্ব জমি অর্জন ও স্থায়ী ভবন নির্মাণ:-
এই সংকট নিরসনে (সাবেক মেম্বার) মৃত : এলতাস হোসেন ও অ্যাডভোকেট এখলাস হোসেন এর মা অলফের বেগমকে রাজি করিয়ে তাঁদের ওয়ারিশান জমি ক্লাবের নামে দান করেন। এরপর থেকে ক্লাবটি তার নিজস্ব জমিতে স্থায়ীভাবে কার্যক্রম শুরু করে। উল্লেখ্য, অলফের বেগম ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলামের মা।
গোদাগাড়ীর অন্যতম কৃতী সন্তান ও এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাঁর বড় ভাই বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি জনাব এনামুল হক, ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অবদান:-
গোদাগাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক রাষ্ট্রীয় প্রগ্রামসহ সমাজসেবামূলক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
এর মধ্যে অন্যতম:-
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাট্যচর্চা: বিভিন্ন সময়ে ক্লাব ও গোদাগাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নাটক, কবিতা আবৃত্তি, সংগীতানুষ্ঠান ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আরও উল্লেখ্য একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি সহ মহান স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সাফল্যের সহিত অংশগ্রহন করে থাকে।
ক্রীড়া কার্যক্রম:-
স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন আসছে এই ক্লাব। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টনসহ অন্যান্য খেলাধুলার আয়োজন করে তরুণদের উৎসাহিত করা হয়।
শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চা:-
এই ক্লাবের লাইব্রেরীতে রয়েছে প্রায় ৫,০০০ বই, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
সমাজসেবামূলক কার্যক্রম:-
বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রাণ বিতরণ, সচেতনতা কার্যক্রম ও সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:-
বর্তমানে গোদাগাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব তার কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করতে নতুনভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। লাইব্রেরীর বই সংগ্রহ বৃদ্ধি, ডিজিটাল পাঠাগার স্থাপন, স্থানীয় তরুণদের জন্য কর্মশালা আয়োজন এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গোদাগাড়ী পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড ক্লাব শুধুমাত্র একটি পাঠাগার বা ক্লাব নয়, এটি গোদাগাড়ী অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসেবার এক উজ্জ্বল বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে। ইন্সাআল্লাহ ভবিষ্যতে এটি আরও সমৃদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
সংগ্রহীত ও কিছু শব্দ সংযোজিত