01/08/2022
গোলাপি যুবক
---দীপক কুমার দাস
ক্ষতবিক্ষত প্রেম নিয়ে বুকে
আকাশের তারা হয়ে জ্বলে থাকবে,তবু---
কাঙ্খিত নারীর কাছে প্রেম আর চাইবে না কোনোদিন!
ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বারেবার বলবে না আর;
বলবে না ভালোবেসে তুমি আমি আমরা,দু'জন দু'জনার!!
তখন শ্রাবনের বৃষ্টি ভেজা নরম সকাল।
সমস্ত ঘুম ঠেলে আবারও প্রস্তুত এক নতুন পৃথিবী;
সাধে-স্বপ্নে-ইচ্ছায় এক নতুন আলো---আমাদের পরমায়ু!
অনেক স্বপ্ন,অনেক প্রত্যাশা আর কর্মের ভিতর
সুখ আর সমৃদ্ধি কুড়িয়ে নিতে যখন সমস্ত সচলতা,
তখনই সমস্ত তুচ্ছ করে শিলিংয়ের পর
ঝুলতে থাকে বছর তেইশের যুবক,---নীরব---নিথর!!
চারপাশে প্রাণের অনেক উন্মাদনা ঘিরে
বড়ো সাধ করে ধরেছিল কোনো এক যুবতীর হাত!
তারই মুখের উপর সে রেখেছিল জীবনের সমস্ত স্বাদ;
অনেক আবেগ ছিল,প্রেম ছিল,আশা ছিল বুকে---
সংসার সুখে!
তবু সে পাইনি খুঁজে,তাকে দেয়নি সে মুখ সমস্ত সুখ;
জীবনের সমস্ত স্বাদ---অসীম অগাধ!
এক অদ্ভুত রুঢ়তায় প্রেয়সীর কাছে সে হয়েছিল পর;
শিলিংয়ে তাই ঝুলেছে দেহ---নীরব---নিথর!!
মা-বোন কিংবা পিতার মুখের উপর
তারও তো মায়া ছিল কিছু,
জীবনের প্রতিও তো ছিল কিছু টান!
ছিল না কী?সব ছিল।
কিংবা জোনাকির আলো তার ভরেনি কী বুক!
রামধনু রং তার চোখের উপর রাখেনি কী হাত;
নরম ধানের গন্ধ কিংবা অঘ্রাণের শিষে তার
ভরেনি কী মন?
কিংবা বৃষ্টিতে সে কোনোদিনও করেনি কী স্নান?
সবুজ ঘাসের উপর সে কী হাঁটেনি কোনোদিন?
সে কী দেখেনি বাঁচার জন্য মানুষের স্বার্থের লড়াই!
কিংবা চাষার মতো জল কাদা মাখেনি কী গায়?
পৌষের নরম রৌদ্র গায়ে মেখে
সে কী মধ্যাহ্নের আহার করেনি কোনোদিন;
নাকি তার ছিল না সে সাধ?
সব ছিল তার।তবু বুকের ভিতর
দীর্ঘ প্রেমের অপরিণতি কিংবা প্রেমিকার উপেক্ষা তার
সমস্ত হয়েছে তুচ্ছ---জীবনকে দিয়েছে শুধু দীর্ঘ অবসাদ;
তাই মন তার গলায় গামছা দিয়ে নিঝুম অন্ধকার ঘর
বেছে নিয়ে ঝুলেছে দেহ---নীরব---নিথর!!
লাশ কাটা ঘরে তার অনেক হয়েছে খোঁজ দেহের ভিতর।
তবু বুকের ভিতর কে নিয়েছে খোঁজ,তার আসল খবর?
রিপোর্ট হয়েছে লেখা আত্মহত্যা তার;
তবু যদি জীবনের সব হয় খুন!
পরিকল্পিত হত্যা হয় প্রেমিকার হাতে---নিঃসঙ্গ রাতে!
কিংবা কোথায় হয়েছে লেখা হৃদয়ের ক্ষত---
অসহায়ের মতো হায় নিয়েছে সে যত!
অনেক চোখের জল কোথায় হয়েছে লেখা,
কিংবা ভালোবেসে হৃদয়ের ঘরে যত জমে থাকা ব্যথা!
তাই হৃদয়ের সমস্ত সব অলিখিত থেকে যায় বলে
কতশত প্রাণ হায় শিলিংয়েই ঝোলে---ঘর থেকে ঘর;
সমস্ত আড়াল করে---নীরব---নিথর!!
দেখি গোধূলির আলোয়
সেই করুন প্রেমের শব চিতাভস্ম হয়!
ধীরে অন্ধকার নামে,মানুষের কোলাহল কমে আসে ক্রমে!
নিশাচর ডানা মেলে উড়ে যায়;শ্রাবণের চাঁদ ওঠে,
ভেজা চারপাশ চিকচিক করে,
চিতার আগুন নিভে আসে ধীরে---ঝিঁঝিঁ ডাকে;
ফুরায় তার জীবনের সব লেনদেন---ঘটে চির অবসর;
জনশূন্য শ্মশানভূমি নীরব---নিথর!
নীরব;নীরব---নিথর!!