
13/08/2025
হরেকৃষ্ণ🙏
আসুন আমরা জানি মৃত্যুর পর মানুষের কি হয়?
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মানুষের মৃত্যুর পর শরীর ও আত্মার পথ আলাদা হয়ে যায়।
১. শরীরের অবস্থা
মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে দেহ জড় পদার্থে পরিণত হয়—পঞ্চভূতে (মাটি, জল, আগুন, বায়ু, আকাশ) মিলিয়ে যায়।
গীতায় (২.২২) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—
> যেমন মানুষ পুরোনো কাপড় ত্যাগ করে নতুন কাপড় পরে, তেমনি আত্মা পুরোনো দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহণ করে।
২. আত্মার যাত্রা
আত্মা কখনো মরে না, কেবল দেহ ত্যাগ করে। মৃত্যুর পরে আত্মা তার কর্মফল ও সংস্কার অনুযায়ী পরবর্তী গন্তব্যে যায়।
সৎকর্ম বেশি থাকলে — দেবলোক বা উচ্চতর জন্মলাভ।
পাপকর্ম বেশি থাকলে — নরক বা দুঃখজনক জন্মলাভ।
ভক্তি ও ঈশ্বরস্মরণে মৃত্যু হলে — মুক্তি পেয়ে ভগবানের ধামে প্রবেশ।
৩. যমদূত ও যাত্রা
গারুড় পুরাণে বর্ণিত আছে— মৃত্যুর পরে যমদূত আত্মাকে নিয়ে যমপুরীতে যান, সেখানে কর্মফল নির্ধারণ হয়। তবে ভগবান নামস্মরণে মৃত্যুবরণ করলে বিষ্ণুদূত এসে ভক্তকে নিয়ে যান, যমদূতের কোনো অধিকার থাকে না।
৪. নতুন জন্ম বা মুক্তি
যদি কর্মফল শেষ না হয়, আত্মা আবার জন্ম নিয়ে জীবনের চক্রে প্রবেশ করে (পুনর্জন্ম)।
যদি ঈশ্বরচরণে আত্মা সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে, তবে জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পেয়ে মোক্ষ লাভ হয়।
মৃত্যু-পরবর্তী আত্মার যাত্রা গারুড় পুরাণ ও ভাগবত অনুসারে দিনভিত্তিক সম্পূর্ণ বি— মৃত্যুর পর প্রথম দিন থেকে ১৩ দিন পর্যন্ত কী কী ঘটে। রাধে রাধে 🌸🙏
গারুড় পুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবতের ভিত্তিতে মানুষের মৃত্যুর পর আত্মার প্রথম ১৩ দিনের যাত্রা বিস্তারিত ।
এটি মূলত হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা।
*******
_____________________
#মৃত্যুর পর ১৩ দিনের আত্মার যাত্রা
১ম দিন: (মৃত্যুর মুহূর্ত)
মৃত্যুর সাথে সাথে আত্মা দেহ ত্যাগ করে।
যারা ভক্ত, তারা নামস্মরণে থাকলে বিষ্ণুদূত এসে নিয়ে যান।
সাধারণ মানুষ বা যারা ভগবানের চেতনায় নেই, তাদের আত্মা প্রায়শই বিভ্রান্ত ও হতবাক অবস্থায় থাকে।
যমদূত আত্মাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন (যদি পাপকর্ম থাকে)।
২য়–৩য় দিন :
আত্মা তার চারপাশ দেখে, প্রিয়জনদের কান্না শুনতে পায় কিন্তু কিছুই বলতে বা স্পর্শ করতে পারে না।
আত্মা তখনও বুঝতে চেষ্টা করে যে সে শরীর ছেড়ে গেছে।
বাড়িতে শাস্ত্র অনুযায়ী শৌচ পালন হয়।
৪র্থ দিন :
গারুড় পুরাণে বলা হয়েছে—এই সময় আত্মাকে এক বিশেষ সূক্ষ্ম দেহ (যাত্রাদেহ) দেওয়া হয়।
সে যমপুরীর পথে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়।
যাত্রা শুরুর আগে আত্মা তার আগের জীবনের কাজগুলো স্মরণ করে।
৫ম–৯ম দিন :
আত্মার সামনে যমপুরীর পথে নদী, অরণ্য, পাহাড়, কণ্টকাকীর্ণ পথ আসে।
ভালো কর্ম করলে পথ সহজ হয়, পাপ করলে পথ কষ্টকর হয়।
আত্মার জন্য বাড়িতে প্রতিদিন পিণ্ডদান ও জলদান করলে পথের কষ্ট কমে।
১০ম দিন
আত্মা যমপুরীর নিকটে পৌঁছায়।
বাড়িতে এই দিনে দশক্রিয়া হয় — শাস্ত্র মতে, দেহের অবশিষ্ট সূক্ষ্ম সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
১১তম–১২তম দিন :
আত্মাকে যমরাজের সভায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে চিত্রগুপ্ত তার কর্মফল লিপি পাঠ করেন।
সৎকর্ম, পাপকর্ম ও ভক্তি অনুসারে পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারণ হয় —
দেবলোক
নরক
পুনর্জন্ম
বা মুক্তি।
১৩তম দিন :
গৃহে শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদান হয়।
এটি আত্মার জন্য শেষ বিদায় ও পথের আশীর্বাদ।
এর পর আত্মা নির্ধারিত স্থানে চলে যায়।
ভক্ত আত্মা সরাসরি ভগবানের ধামে পৌঁছে যায়।
💡 বিশেষ কথা:
গারুড় পুরাণ বলছে, মৃত্যুর পর প্রথম ১৩ দিন আত্মার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ — কারণ তখন পরিবার যদি নামকীর্তন, ভগবৎ স্মরণ, গীতা পাঠ, ও পিণ্ডদান করে, আত্মার যাত্রা শান্ত ও কল্যাণময় হয়।
সংগৃহীত
゚ #