19/11/2021
মোদী কি ভারতীয় রাজনীতির 'বাজিগর' হতে পারবেন?
শাহরুখ খানের সেই বিখ্যাত সিনেমা। যে সিনেমার নাম ছিল বাজিগর। গোদা বাংলায় বাজি যে জিতে নেয়। সিনেমায় শাহরুখের মুখে একটি সংলাপ ছিল, "হার কে জিতনে ওয়ালে কো বাজিগর ক্যাহতে হ্যায়।" মানে হেরে গিয়েও যে জিতে যায়, তাকেই বাজিগর বলে।
এবার আশা করছি বুঝতে পারছেন যে এই লেখার শিরোনাম কেন এমন দিলাম। প্রধানমন্ত্রী আজ (১৯.১১.২০২১) সকালে যে 'বিস্ফোরণ' ঘটিয়েছেন, সেটাকে অনেকেই তাঁর হার বলে মনে করছেন। কংগ্রেস-তৃণমূলের মতো বিরোধীরা তো কয়েকধাপ এগিয়ে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণাকে নরেন্দ্র মোদীর 'অহঙ্কারের পতন' বলে মনে করছে।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=106112011894032&id=106086391896594
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি তিনি হার মেনে নিলেন? প্রশ্ন উঠবেই। কারণ, তিনি ভারতবাসীকে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনিই আত্ম-নির্ভর হতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনিই গত সাত বছরে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে বারবার তাঁকে 'অকুতোভয়' তকমা দিয়েছে। যিনি নোটবন্দি করলেন, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নিলেন, তিনি আচমকা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর তো দিতেই হবে।
দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখলাম, তাতে বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা অসন্তুষ্ট। তাঁদের কাছে মোদী মানেই 'মিস্টার ৫৬ ইঞ্চি'। হার স্বীকার করে নেওয়া মোদীকে তাঁরা দেখতে নারাজ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের উত্তর দিতে তো হবেই।
কিন্তু উত্তর কে দেবেন? প্রধানমন্ত্রী নিজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন না। তাঁর দলের নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে 'স্টেটসম্যান' বানিয়ে কাজ সেরেছেন। মুখে সবার কুলুপ। সাত সকালের শক বোধহয় কেউ নিতে পারেননি। বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা দিল্লির নির্দেশের অপেক্ষায় মিডিয়ার সঙ্গে লুকোচুরি করেছেন দিনভর।
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মোদী অবশ্য ভাঙব তবু মচকাবো না মোডে ছিলেন। মিনিট তিনেক ধরে বুঝিয়েছেন এই তিন কৃষি কেন দেশের জন্য উপকারি হতে পারত। তার পর দুম করে প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন।
আইন যদি ভালোই হবে তবে বাতিল হল না কেন? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। শুধু অধুনা বিজেপি হওয়া এক নেতা দেখলাম মোদীর এই পদক্ষেপকে বাঘের শিকার ধরার সঙ্গে তুলনা করেছেন। বাঘের মতোই দু'পা এগোতে আপাতত এক পা পিছিয়ে গেলেন মোদী। তাঁর অন্তত তেমনই দাবি।
সেই কারণেই শিরনামে প্রশ্ন তুলেছি, মোদীই ভারতীয় রাজনীতির বাজিগর কি না!
কারণ, কোথায় যেন মনে হচ্ছে এই সিদ্ধান্তে মুখ পুড়বে, সমালোচনা হবে, রাজনৈতিক খিল্লি হবে, সেটা জানা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদির একার নয়। এমনকি এই সিদ্ধান্ত মোদি সরকার একা নেয়নি৷ বরং এই সিদ্ধান্তের পিছনে গেরুয়া থিঙ্কট্যাঙ্কের ছায়া দেখা যাচ্ছে। হয়তো নাগপুর থেকেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=106572905181276&id=106086391896594
কারণ, সামনে অনেক পথ বাকি। ইস্তেহারে থাকা বা গেরুয়া শিবির যে ইস্যুগুলি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরব, সেগুলির অনেক কিছু পূরণ হয়নি। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চাইলে সরকারে থাকা জরুরি।
ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম মিথ হল উত্তর প্রদেশ যার, দিল্লি তার। উত্তর প্রদেশ হারালে দিল্লি অনেক দূর হয়ে যায়। তাছাড়া ২০২৪ সালে যে আসনগুলিতে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপিকে সরাসরি লড়াই করতে হবে, তার বেশিরভাগই হিন্দি বলয়ে। যেখানকার কৃষকরা এই আইনকে পছন্দ করছিল না। আর রাকেশ টিকায়েতদের নাছোড় মনোভাব আরও সমস্যা তৈরি করছিল।
ফলে দীর্ঘমেয়াদী ফলের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই আপাতভাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু এই হার কি ভোটের ময়দানে জয় এনে দেবে? এই প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে মোদীও শাহরুখের মতো বলতে পারবেন, হার কে জিতনে ওয়ালে কো বাজিগর ক্যাহতে হ্যায়।"
কিন্তু যদি তা না হয়…!!