Rakhi Dey Dutta

Rakhi Dey Dutta প্রকৃতির কোলে মন ভালো থাকে❤️.....

শব্দের পিঠে শব্দ সাজিয়ে অনুভূতি দিয়ে গল্প বোনার চেষ্টা করি,সময় সুযোগ পেলে পরিবারসহ প্রকৃতির কোলে বেড়িয়ে পড়ি(গল্পকথা,ভ্রমণকথা,ফটোগ্রাফি,জীবন উপলব্ধির কথা..) গল্প পড়তে ও প্রকৃতি ভালোবাসলে পেজটিতে স্বাগত জানাই...

21/06/2025

চোখের একটু গুরুতর সমস্যার কারণে নিয়মিত পোস্ট করতে পারিনি। সমস্যা ঠিক হলে নিয়মিত গল্প পোস্ট করব।সকলে ভালো থাকবেন।

 #সংঘাত  #গল্প গোটা চারেক ফর্ম বিলি হয়েছে মাত্র ! হাতের কাছে রাখা নীল রঙের ফাইলটা টেবিলের একপাশে সরিয়ে রাখে মধুমিতা।বা...
07/06/2025

#সংঘাত #গল্প গোটা চারেক ফর্ম বিলি হয়েছে মাত্র ! হাতের কাছে রাখা নীল রঙের ফাইলটা টেবিলের একপাশে সরিয়ে রাখে মধুমিতা।বাতাসে বেশ শীতের আমেজ।গায়ে জলপাই রঙা শালটা ভালো করে জড়িয়ে নেয়।জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে।দিগন্ত বিস্তৃত সদ্য ফোঁটা সরষে ফুলেদের পাঁপড়িরা হাতছানি দিয়ে যেন ডাকছে।এসময় গ্রাম বাংলার প্রকৃতির রূপ মনটা ভালো করে দেয়!চেয়ার ছেড়ে মধুমিতা উঠতে যাবে এমন সময় সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা একটি দু- আড়াই বছর বয়সী শিশুকে কোলে নিয়ে এবং প্রায় চার বছর বয়সী অপর একটি শিশুর হাত ধরে তার দিকে ক্রমশঃ এগিয়ে আসছে।

নদীয়া জেলার অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুনগর। তারই একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে জলঙ্গী নদী।চারপাশে সবুজ শ্যামল শোভাসমৃদ্ধ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কিন্তু গ্রামের মানুষদের জীবন আজও দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও কুসংস্কারে ডুবে আছে ।সেই গ্রামের একপ্রান্তে একটি হাইস্কুল।ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মেরে কেটে সাড়ে তিনশ জন।শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী মিলে মোট বারো জন।তারমধ্যে মধুমিতা একজন।খুব বেশি দিন হয়নি সে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেছে এই স্কুলে। চারপাশের পরিবেশ এখনও সম্পুর্ণ বুঝে উঠতে পারিনি। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ।সমস্ত ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষা শেষের দিকে।একইসঙ্গে চলছে নতুন ছাত্রছাত্রীদের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ফর্ম বিতরণ।মধুমিতার আজ পরীক্ষা হলের ডিউটির পরিবর্তে ফর্ম বিতরণের দায়িত্ব পড়েছে।স্কুলের একমাত্র শিক্ষাকর্মী সুভাষ অন্য কাজের দায়িত্বে রয়েছে। অফিসঘরের একপাশে বসে মধুমিতা এই কাজ করছে।

ফর্ম নিতে আসা মহিলাটির আপাদমস্তক খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে মধুমিতা।বয়স মোটামুটি চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ হবে।গায়ের রং বেশ কালো। সামনের দাঁত দুটি ঈষৎ উঁচু।চোখ দুটি কোটরাগত।পরণে পুরনো সস্তা সুতির ছাপা শাড়ি।শরীর রুগ্ন।দেখে বোঝাই যায় সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ট! মুখমন্ডল লাবণ্যহীন ও রুক্ষ।মহিলাটির সঙ্গে আসা শিশু দুটির চেহারাও সেই রুগ্ন কিন্তু মুখমন্ডল দুটি সরলতাপূর্ন।দেখে ভারী মায়া হয় মধুমিতার। মহিলাটি কিছু বলার পূর্বেই মধুমিতা ওনাকে প্রশ্ন করে "কিছু বলবেন ?"উনি তৎক্ষণাৎ কোল থেকে শিশুটিকে মেঝেতে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে বলেন "আমার মেয়েকে কিলাস ফাইভে ভর্তি করব বলে ফরম নিতে আসছি .." মধুমিতা তৎক্ষণাৎ ফাইল থেকে একটি ফর্ম বের করে দেয় এবং কৌতূহলবশত ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করে "আপনার কটা ছেলে মেয়ে ?" প্রশ্ন শুনে তিনি ক্ষণিক ঘাবড়ে গিয়ে পরক্ষণে মুখটা কাঁচুমাঁচু করে বলেন "আমার.র.র...পাঁচ ছেলে- মেয়ে.." জবাব শুনে মধুমিতা হতভম্ব।এখনকার দিনে পাঁচ পাঁচটা সন্তান! নিজেকে সামলে নিয়ে সে জিজ্ঞাসা করে " আপনার স্বামী কি করেন ?"
--"সে তো ক্ষেতে কাজ করে মেডাম ।"
--"আপনার বাচ্চারা ঠিকমতো পেট পুরে খেতে পায় ?"
--"কি করে খাবে গো !ওদের বাবার একার আয়ের ওই কয়ডা টাকায় এতগুলো ছেলে মেয়ে নিয়ে কি চলে ! কোনোরকম আধপেটা খেয়ে বাঁচি মেডাম.."
--"আপনি জানেন না এখনকার দিনে দুটোর বেশি সন্তান নেওয়া উচিৎ নয়.. তাহলে এতগুলো সন্তান..মানুষের মতো মানুষ করবেন কীকরে ?আপনি পড়তে লিখতে পারেন ?"
মধুমিতার একটানা করে যাওয়া প্রশ্নে এবার উনি বিরক্ত হয়ে বলেন "সবই আমার কপাল মেডাম !"
এরপর কথা বাড়ায় না মধুমিতা।সে বলে "ঠিক আছে আজ আপনি যান..ফর্ম ফিল আপ করে কাল পরশু জমা দিয়ে যাবেন..আপনার মেয়েকে ঠিক সময়ে ভর্তি করে নেব.."
উনি প্রস্থান করতেই মধুমিতা মনে মনে নিজেকে বলে "কোন যুগে আছি !এত বিজ্ঞাপন !এত প্রচার !পরিবার পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে ..প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে আজও কত অশিক্ষার প্রভাব! এ যে দিনের আলোতেও গভীর অন্ধকার.." ফর্ম নেওয়ার জন্য সেই মুহূর্তে তখনও কেউ আসেনি। মধুমিতা ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোনটি বের করে বাড়িতে ফোন করতে যাবে এমন সময় বাইরে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পায় । স্কুলের অপর এক শিক্ষিকা সুতপা দোতলার একটি পরীক্ষা হলে ছিল। সে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে মধুমিতাকে বলে "এই মধুমিতা চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম..চল তো ..বাইরে গিয়ে দেখি.. মিড ডে মিলের রান্নাঘরের দিকেই মনে হচ্ছে.."মধুমিতা সুতপার কথা শুনে তার সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে দেখে,মিড ডে মিলের রাঁধুনি দিদিরা দলবেঁধে কথা কাটাকাটি করছে।লক্ষী, অন্নপূর্ণা,পূর্ণিমা ও সরস্বতী সকলে দাঁড়িয়ে একদিকে।উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে প্রতিমা। সরস্বতী প্রতিমার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলছে "যেদিনই ডিম রান্না হয় তুই সেদিনই ডিম চুরি করিস..আমরা বুঝি..কিন্তু ধরতে পারি না..আজ হাতেনাতে ধরেছি..চল হেডস্যারের ঘরে.."
এসব দেখে মধুমিতা ওদের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে"কি হয়েছে? তোমরা সকলে প্রতিমাদিকে এসব বলছ কেন?"
লক্ষীদি গর্জে বলে উঠল "ঠিকই বলছি .. ও ডিম চুরি করে..ওকে আজ ধরেছি..ওর ব্যাগ থেকে ডিমসেদ্ধ পেয়েছি.."অবস্থা বেগতিক দেখে মধুমিতা বলে, "আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা যাও.. প্রতিমাদি থাকুক..স্যার অফিসিয়াল কাজের জন্য ব্যস্ত আছেন..আজ তো আসেননি ..আমরা বিষয়টা আগামীকাল জানাব।"একথা শুনে সকলে রান্নাঘরে যেতেই তারা দুজনে প্রতিমাকে স্টাফরুমে নিয়ে আসে।সুতপা জিজ্ঞাসা করে "প্রতিমাদি তুমি শেষপর্যন্ত বাচ্চাদের মুখের ডিমসেদ্ধ চুরি করলে !"
--"আমি তো ভালো না দিদিমণি.."
সুতপা বলে "আমরা কি বলেছি তুমি খারাপ !"
--"তোমরা কেউ বলোনি গো.. আমিই বলছি ..বয়স কচি ছিল.. বুঝতি পারিনি..বাবা-মা ,ভাই -বোন সবাইকে ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলুম মনের মানুষের হাত ধরে..বিয়ে করলাম.. সংসার পাতলাম দুজনে..দুটো বাচ্চাও জন্মালো..প্রায় পাঁচ বছর ধরে সংসারটা কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে চললো..মাঠে খেটে যা রোজগার করত সেই সামান্য কটাকাতে সংসার ঠিকমত চলত না..আধপেটা খেতুম..কাজ খোঁজার নাম করে সে যে একদিন কুথায় চলে গেল !আর ফিরল না গো..কুনো খোঁজখবরটা জানি না..মাথা গুঁজার ঠাঁইটুকু আছে তাই রক্কে..একা হাতে দুডো বাচ্চা নিয়ে আমার যে কি কষ্ট ..সে আমিই জানি!"
সুতপা বলে ওঠে "তাই বলে স্কুলের বাচ্চাদের ডিম চুরি করবে!"
--"কি করব ..হয়ত অভাবে স্বভাব নষ্ট! গ্রামের সকলরে বলে কয়ে গ্রাম প্রধানের দয়ায় এই কাজটা পেয়েছিলুম...পাড়া পতিবেশির উপর বাচ্চা দুটোরে ছেড়ে আসি..আমি তো আগে মা..তারপর তো স্কুলের রাঁধুনি..পেটের ছেলেমেয়ের জন্য দুটো ডিমসেদ্ধ যদি নিয়ে অন্যায় করেছি .. আমি খারাপ..আমাকে যা খুশি শাস্তি দিতি পারেন.."একনাগাড়ে কথাগুলি বলে কেঁদে ফেলে প্রতিমা ।এসব কথা শুনে মধুমিতা ও সুতপা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। প্রতিমা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে বলে "আমি চুরি করেছি ঠিকই কিন্তু তারজন্য আমার কোনো দুক্ক নেই দিদিমণি..আমি সবার আগে মা..স্কুলের ছেলেমেয়েরাও আমার ছেলেমেয়ের মতো কিন্তু আমার পেটের ওই বাচ্চা দুটো সবার আগে..ওরা না খেতে পেলে বড় হবেটা কি করে ?ওরা তো কোনো দোষ করিনি..স্যার আসুক আমাকে যা শাস্তি দেবে মাথা পেতি নিবো ..আমার বাচ্চা দুটোর জন্য আমি সব করতে পারি.."প্রতিমার কথা শুনে দুজনই কিছুক্ষণ স্তব্ধ রইল। ততক্ষণে বাকি শিক্ষক- শিক্ষিকারাও পরীক্ষা হল থেকে নেমে এসেছে,কি ঘটেছে তা জানার জন্য। প্রতিমাকে সুতপা বলে "ঠিক আছে.. তুমি এখন রান্নার ওখানে যাও.." প্রতিমা যেতেই মধুমিতা সুতপাকে বলে "সুতপাদি...নীতিবোধ ও কঠিন বাস্তবের এরকম সংঘাত স্বপ্নেও যে কোনোদিন কল্পনা করিনি .."(সৃজন সাহিত্য পত্র ' প্রয়াস 'এ পূর্ব প্রকাশিত)
---------
Rakhi Dey Dutta

 #নেমপ্লেট  #গল্প ( শেষ অংশ)অরিত্রা যেতেই মোহনা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।লিভিং রুম খুঁটে খুঁটে দেখতে শুরু করে।একটু ঘুরে ত...
03/06/2025

#নেমপ্লেট #গল্প ( শেষ অংশ)অরিত্রা যেতেই মোহনা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।লিভিং রুম খুঁটে খুঁটে দেখতে শুরু করে।একটু ঘুরে তাকাতে রুমের একদিকের ঝকঝকে হালকা কমলা রঙের দেওয়ালে অরিত্রার আপাত সুখী বিবাহিত জীবনের কিছু মুহূর্ত ফ্রেমবন্দিরত অবস্থায় চোখ পড়ে।সবই একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের একসঙ্গে বাইরে বেড়ানোর দৃশ্য।তারমধ্যে একটি ছবিতে কৌস্তভ অরিত্রার গালে চুম্বনরত।মোহনা চোখ সরিয়ে নেয়।সোফায় গিয়ে বসে।ইতিমধ্যে অরিত্রা চা ও স্ন্যাক্স নিয়ে আসে।দুই বান্ধবী ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দেয়।মোহনা কিছু বলার পূর্বেই অরিত্রা মোহনাকে জিজ্ঞাসা করে, "আমার জীবনের গল্প অনেক শুনলি। এবার বল তো তুই বিয়ে করিসনি কেন ?"
মোহনা উচ্ছসিত হয়ে বলে,"কে বলেছে আমি বিয়ে করিনি!"
অরিত্রা ভ্রু যুগল ঈষৎ কুঞ্চিত করে বলে "মানে !"
মোহনা তারপর ম্লান হেসে বলে,"আমি ডিভোর্সী রে।"
অরিত্রা কৌতূহল সহকারে বলে," তুই এসব কি বলছিস ?"
মোহনা তার হাত থেকে চায়ের কাপটা নামিয়ে বলে "হ্যাঁ রে।তোর অনিকেতকে মনে আছে?"
"অনিকেত মানে কলেজের অনিকেতদা ! মনে আবার থাকবে না।কলেজে তোর পেছনে ঘুর ঘুর করে বেড়াত ।"
"হ্যাঁ সেই অনিকেত ! কলেজ ছাড়ার পর যখন ইউনিভার্সিটি ভর্তি হলাম। অনিকেতও আমার পিছু পিছু সেখানে গিয়ে ভর্তি হল।এরপর ওকে আর না করতে পারিনি।টানা প্রেমের জোয়ারে ভেসে বেরিয়েছি। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস অফ্ করে প্রায়ই শহরের অলিগলি ঘুরে দিন কাটে।এরইমধ্যে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরির চেষ্টা করলাম দুজনে।অবশেষে আমার স্কুলে হল । ও নেট পরীক্ষা দিয়ে কলেজের চাকরির ইন্টাভিউ দিল।"একটানা কথাগুলি বলতে বলতে মোহনা টেবিল থেকে জলের গ্লাস হাতে নেয়। কথার মাঝে অরিত্রাকে বলে "দ্বারা একটু জল খেয়ে নিই।"
অরিত্রা বলে "ঠিক আছে।"
জল খেয়ে সে পুনরায় বলতে শুরু করে,"আমি যে বছর স্কুলে চাকরি পেলাম,তারপর দুবছর পর ও কলেজে অধ্যাপনার চাকরিটা পেল।"
অরিত্রা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে "বাহ্ দারুণ ব্যাপার তো !"
মোহনা বলে ওঠে "আগে পুরোটা শোন।"
অরিত্রা উচ্ছ্বাস সংযত করে বলে "বল।শুনছি।"
মোহনা বলতে শুরু করে,"আমাদের দুজনের কাস্ট আলাদা হওয়ায় দুই বাড়িতে প্রথমে আপত্তি উঠলেও পরে আমাদের চাপে মেনে নেয়। দিনক্ষণ দেখে তারপর কলাতলায়।বিয়ে করার পর আবেগে ভাসলাম।খাওয়া দাওয়া বেড়ানো সবই চলল টানা এক দু বছর।"
অরিত্রা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,"তাহলে এমন কি ঘটল যে সম্পর্কটা ডিভোর্স পর্যন্ত গড়ালো!"
মোহনা একটু মৃদু হেসে পুনরায় বলতে শুরু করে," "তুই জানিস আমি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।আধুনিক মানসিকতার মেয়ে।"
অরিত্রা বলে,"হ্যাঁ জানতাম তো।"
মোহনা বলে,"সেখানে কিনা আমাকে নিয়মের বেড়াজালে অহেতুক বন্দী করার চেষ্টা !টিপিক্যাল কনজারভেটিভ ব্রাহ্মণ ফ্যামিলি।বিয়ের পর প্রথম প্রথম কিছু না বললেও একবছর কাটতে না কাটতেই শুরু হল বৌমা যখন তখন বাড়ির বাইরে বেরোবে না,বৌমা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে,বৌমা তুমি কোন বাড়ির বউ ভুলে যেয়ো না..আমি জাস্ট নিতে পারছিলাম না।নিজের ছেলের বেলা সব ছাড় !"
অরিত্রা বলে ওঠে,"অনিকেতদা কিছু বলত না মাসিমা মেসোমশাইকে !"
মোহনা এবার একটু গলার জোর বাড়িয়ে বলে "ওখানেই তো সমস্যার শুরু ।বিয়ের আগে ছিল গদগদ প্রেমিক।আর বিয়ের পর বুঝলাম আস্ত একটা হিপোক্রেট ।জেনেশুনে ওরকম ও ওর ঐ গোঁড়া মানসিকতাসম্পন্ন ফ্যামিলিতে নিয়ে গেল।কথায় কথায় বলতে শুরু করল মোহনা তুমি এখন বাড়ির বউ।তুমি চাকরি করলেও আমার বাবা মায়ের একটা এক্সপেক্টেশন আছে ।তারা যেভাবে তোমাকে চাইছে মানিয়ে নাও।অনিকেতের কথা শুনে মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু সব সীমা অতিক্রম করল যখন বিয়ের চারবছর পরও আমাদের কোনো বেবি হল না।জানিস কিছুতেই কনসিভ করতে পারছিলাম না।আমাকে কলকাতার বড় বড় গাইনোকোলজিস্ট এর কাছে ট্রিটমেন্টের জন্য নিয়ে গেল।কত রকম টেস্ট চলল !আলটিমেটলি রেজাল্ট এল আমার সব রিপোর্ট নরম্যাল।"
অরিত্র উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে বসে, "তাহলে কি সমস্যা অনিকেতদার ছিল !" রাখী দে দত্ত
মোহনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলে ওঠে,"একদম।ওর সমস্যা ছিল।বাবা হওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ।আমার রিপোর্ট নরম্যাল হওয়ায় আমার সন্দেহ হয়েছিল।আমি জোর করে ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই তারপর বিষয়টা বুঝতে পারি। এই ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আসতেই অনিকেত আমার সঙ্গে কেমন খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল।তার সঙ্গে ওর মা - বাবা।আমাকে প্রায় শাসানির সুরে বলে কিনা,দেখো বৌমা আমাদের ভদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার। পাড়ায় সম্মান আছে।অনিকেতের সমস্যার ব্যাপারটা রাষ্ট্র করলে ওর মানসম্মান ধূলায় মিশে যাবে,তাই তোমাকে কেউ বাচ্চা নেওয়ার বিষয় কিছু জিজ্ঞাসা করলে মুখ বুজে থাকবে।"
অরিত্রা সবটা শুনে অবাক।কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করে "তুই তারপর কি করলি ?"
মোহনা বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে মোহনাকে বলে,"আমি কি দমে যাওয়ার পাত্রী।বলে বসি আমি মুখ বুজে থাকব কেন!"অনিকেতের মা আমার কথা শুনেই তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলেন, "কেমন মেয়ে তুমি !নিজের স্বামীর জন্য এটুকু পারবে না ।এই না তোমাদের ভালোবাসার বিয়ে।"
এসব কথা শুনে আমিও সটান বলে দিই,"সমস্যাটা আমার থাকলে তোমাদের ছেলে চুপ থাকত বা তোমরা বিষয়টা মেনে নিতে!" অনিকেতের মা বলে,"সে পুরুষমানুষ সে কেন দোষ নেবে।"আমিও তখন রেগে গিয়ে অনিকেতের মাকে বলি "ও আচ্ছা বুঝেছি! যত দায় বাড়ির বউমাদের!সে যতই শিক্ষিতা চাকুরিরতা হোক না কেন!আসলে মেয়েমানুষ তো.."
অরিত্রা যত শুনছে ততই তার চোখ বড় হয়েছে।সে পুনরায় মোহনাকে বলে "তারপর কি করলি ?"
মোহনা জানায়,"সেখানে তখন অনিকেতও উপস্থিত ছিল।আমি জোর গলায় অনিকেতকে জিজ্ঞাসা করলাম। তুমিও একই কথা বলবে তো !
অনিকেত কোনো উত্তর দেয়নি।তারপর আমিও সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করিনি।" এরপর চুপ করে যায় মোহনা। অরিত্রা সোফা ছেড়ে উঠে মোহনার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।মোহনার কাঁধে দুইহাত রাখে।মোহনা পেছনদিকে মাথা ঘুরিয়ে অরিত্রাকে বলে,"জানিস তো অরিত্রা মফঃস্বল শহরের আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষিতা বিবাহিতা মেয়েদের মানসিক দ্বন্দ্ব অনেক বেশি।মন থেকে না পারে তারা সমাজ সংসারের গতানুগতিক আচার নিয়মকানুন মানতে ,না পারে তারা সম্পূর্ণ এড়াতে।একরকম দোআঁশলা জীবন !অথচ কি আশ্চর্য সুখী থাকার অভিনয় তারা দিব্যি করে যেতে পারে !আমি সেই সুখী থাকার অভিনয় করতে পারিনি। অনিকেতের সঙ্গে কথা বলে মিউচুয়াল ডিভোর্সের জন্য অ্যাপ্লাই করি। চাকুরীরতা সন্তানহীনা।খোরপোষের বিষয় নেই। ডিভোর্সটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।"
মোহনার কথা শুনে অরিত্রা ম্লান গলায় বলে, "অনিকেতদা এত ভালোবাসত তোকে ! এত সহজে তোকে ডিভোর্স দিতে রাজি হয়ে গেল!"
মোহনা তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে,"রাজি হবে না আবার ! বাবা মায়ের দুগ্ধ পোষ্য শিশু দুধের দাঁত না পড়তেই আমাকে জীবনসঙ্গী বানিয়েছিল।"
অরিত্রা মোহনাকে জিজ্ঞাসা করে "তুই আর ছাদনাতলায় গেলি না !"
মোহনা উচ্চ স্বরে হেসে বলে,"ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়।দাম্পত্যের নামে দিনের পর দিন গুমরে মরেছি অনিকেত ও তার ফ্যামিলির জন্য।জীবনের সবচাইতে জঘন্য সিদ্ধান্ত ছিল।একবার যখন মুক্তি পেয়েছি দ্বিতীয়বার সে ভুল করি !জীবনে ভালো থাকার অধিকার সকলের রয়েছে।তার সঙ্গে আর কোনো আপোষ নয় অরিত্রা।নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি নিজের কাছেই থাকুক।মা না হলে নারীজীবন বৃথা ,ওই কনসেপ্টে আমি একদম বিশ্বাসী নই।একজন টিচার হিসেবে স্কুলের কত ছেলেমেয়েকে সন্তান রূপে পেয়েছি।ওদের আদর - স্নেহে ভরিয়ে দিই।এতেই এখন মনের আনন্দ খুঁজে পাই।"
অরিত্রা মোহনার কাঁধ থেকে হাত দুটি সরায়।ধীর পায়ে এগিয়ে সোফায় নিজের জায়গাতে গিয়ে বসে।তারপর চিন্তান্বিত কণ্ঠে বলে,"তবু শেষ বয়সে একা থাকবি !"
মোহনা আবার স্বমহিমায় বলতে শুরু করে,"দেখ অরিত্রা আমাদের সোসাইটিতে আজও ডিভোর্স নিয়ে ছুতমার্গ রয়েছে। বিশেষত মধ্যবিত্ত পরিবারে একছাদের নীচে কোনো বিবাহিতা মেয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের মাঝে নিজেকে মেলে ধরতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে মরলেও কেউ একা জীবন কাটানোর কথা কল্পনা করতে পারে না।কারণ একটাই লোকে কি বলব !আর তুই আমাকে জানিস আমি কোনোদিনই সমাজের একপেশে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা বিশেষ করিনি।" রাখী দে দত্ত
অরিত্রা বলে,"তোকে খুব ভালো করেই জানি!"
মোহনা বেশ জোরালো গলায় বলে,"শোন অরিত্রা আমাদের মেয়েদের নিজস্ব একটা আইডেন্টিটি থাকা ভীষণ দরকার এবং স্বাধীনতাও দরকার যা আমার এখন আছে।তাই বলে আমি আমার নীতিবোধ ও মূল্যবোধের সীমানা লঙ্ঘন করি না।আর কি চাই জীবনে !শেষজীবনে কাউকে প্রয়োজন নেই।বরং তোর জন্য একটু করুণা হচ্ছে !একজন স্বাধীনচেতা এডুকেটেড মেয়ে সে কিনা গোটা জীবনটা কিচেনে তেলমশলার হিসাব নিয়ে কাটিয়ে দিচ্ছে !"
মোহনার কথা শুনে অরিত্রা এবার আমতা আমতা করে বলে,"ঠিক তা নয় মোহনা।আমি যে গুছিয়ে সংসার করতে ভালোবাসি।"
মোহনা অরিত্রার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,"কম্প্রোমাইজ করে ?"
মাথা নীচু করে অরিত্রা। অরিত্রাকে চুপ করে থাকতে দেখে মোহনা বলে,"তোকে আজ আর জ্বালাবো না।তোর কাঁচের ঘরে আমি ঢিল মারতে চায় না।এবার উঠব। কৌস্তভদা ও ডোডোর সঙ্গে অন্য একদিন এসে দেখা করব।"
মোহনা তার নীরবতা ভেঙে বলে,"আরেকটু সময় থেকে যা।"
মোহনা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,"নারে অনেক্ষণ সময় নিলাম।এখন থেকে কলেজ স্ট্রিট যাবো।কিছু বই কিনব।তারপর সোজা বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরব।আজ আসি রে।"
মোহনাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয় অরিত্রা।তারপর বলে, "আবার আসিস ।"
মোহনা হেসে বলে,"চেষ্টা করব।"

মোহনা চলে যেতেই অরিত্র সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এরমধ্যে ডোডো স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসে। ডোডোকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অরিত্রাও এসময় বিছানায় একটু গড়িয়ে নেয়।আজ তার ঘুম আসছে না। কিছুক্ষণ পর বিছানা ছেড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

অরিত্রা চিন্তিত তার আইডেন্টিটি নিয়ে।মোহনার ভাবনা কি সত্যি ! মোহনা কি আদৌ ভালো আছে !নাকি তার সুখে ভরা সংসার দেখে মোহনার মনে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে ! মোহনার ডিভোর্স নিয়ে আলোচনা করার সময় ওর চোখের কোণ মুহূর্তের জন্য হলেও সজল হয়ে উঠেছিল। অরিত্রার দৃষ্টি এড়ায়নি।পরক্ষণে অরিত্রা চিন্তা করে তার মতো শিক্ষিতা মেয়ের এহেন সুখী সংসারী জীবন ডিভোর্সী মোহনা মেনে নিতে পারছে না! অরিত্রার সবকিছু যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে! সে আসলে কে !অম্লান বসুর মেয়ে !কৌস্তভ রায়ের স্ত্রী ! ডোডোর মা ! সত্যিই তো কৌস্তভ তার নাম বাড়ির নেমপ্লেটে রাখার প্রয়োজন অনুভব করেনি!মানসিক দ্বন্দ্ব ক্রমশঃ ঘনীভূত হচ্ছে অরিত্রার মনে।(পত্রিকায় প্রকাশিত)©® রাখী দে দত্ত
***ছবি AI
----------

Rakhi Dey Dutta

গল্পের প্রথম অংশের লিংক👇 https://www.facebook.com/share/p/1ANgZdm79Q/

শুভ সকাল...তালগাছ বহু পায়ে দাঁড়িয়ে...শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাওড়া..        Rakhi Dey Dutta
03/06/2025

শুভ সকাল...তালগাছ বহু পায়ে দাঁড়িয়ে...

শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাওড়া..






Rakhi Dey Dutta

 #নেমপ্লেট  #গল্প( প্রথম অংশ) ডানা মোড়া হলুদ পাখিদের মতো শেষ বিকেলের নরম আলোর দিকে চেয়ে অরিত্রা।এসময়টা তার বড় প্রিয়...
02/06/2025

#নেমপ্লেট #গল্প( প্রথম অংশ) ডানা মোড়া হলুদ পাখিদের মতো শেষ বিকেলের নরম আলোর দিকে চেয়ে অরিত্রা।এসময়টা তার বড় প্রিয়।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রোজকার জীবনকে নেড়েচেড়ে নেয় সে।আজ তার মনে ঝড় উঠেছে।সত্যিই তো ওর আইডেন্টিটি কি !মোহনা কি তাহলে ঠিক বলেছে?সেই প্রশ্নটা তাকে বার বার কুরে কুরে খাচ্ছে।

ঘটনাচক্রে দুইদিন আগে শহরের একটি অভিজাত শপিংমলে মোহনার সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয় অরিত্রার। দীর্ঘ বারো বছর পর।কথাবার্তা হয়নি বিশেষ।ব্যস্ত ছিল অরিত্রা।তবে দীর্ঘদিন পর স্কুল ও কলেজজীবনের বান্ধবীকে পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ঠিকানা জানিয়ে বাড়িতে আসার অনুরোধ করে আসে।

সকালে মোহনা এসেছিল।ওদের লিভিং রুমে প্রবেশ করতেই সে একঝলক দেখে বলেছিল,"তোর রুচির প্রসংশা করতে হয় অরিত্রা।এত সুন্দর করে সাজিয়েছিস ! এত মেইনটেইন করিস কি করে ?" আলতো হাসে অরিত্রা মোহনাকে সোফাতে বসতে বলে।তারপর বেশ গর্ব সহকারে জানায় ,"আসলে সকালবেলা কৌস্তভ অফিস চলে যায়।ডোডোও থাকে স্কুলে।একজন দিদি এসে বাসন ধোয়া ও ঘর মোছার কাজ সেরে চলে যান।এরপর সারাদিন বাড়িতে একা একা থাকি।রান্নাবান্না ঘর গোছানো এসব নিয়ে সময় কাটে ।আর কি !"
মোহনা তার ভ্রুযুগল ঈষৎ কুঁচকে বলে,
"তুই তাহলে কিছুই করছিস না! ইংলিশে এম. এ. টা ফালতু করেছিলি !এককথায় এখন এডুকেটেড হাউজওয়াইফ!"
মোহনার মুখ থেকে এরকম কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না অরিত্রা।নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,"হ্যাঁ ওই আর কি।এই তুই এসে অবধি আমার কথা অনেক শুনলি মোহনা।এবার তুই বল তো এখন কি করছিস ?"
মোহনা মৃদু হেসে বলে,"আমি এখন একটা হাইস্কুলে চাকরি করছি।সোজা কথায় ছাপোষা টিচার।"
অরিত্রা শুনে খুশি হয়ে বলে,"বাহ্ খুব ভালো!
আর মাসি ও মেসোমশাই কেমন আছেন?"
অরিত্রার প্রশ্নে মোহনা বিষন্ন কন্ঠে বলে,
"বাবা নেই রে অরিত্রা।গত দুইবছর আগে হঠাৎ সেরিব্রাল অ্যাটাক।সময় দেয়নি।"
অরিত্রা শুনে করুণ কণ্ঠে বলে ওঠে,
"ও আই এম সো সরি !জানতাম না রে !"
মোহনা তখন উত্তর দেয় "আরে! তুই কি করে জানবি।দীর্ঘ বারো বছর পর যেখানে আমাদের দেখা।
জানিস রমিতা, সৃজনী, ঋত্বিকা ওদের কাছে তোর কন্ট্যাক্ট নম্বর চেয়েছিলাম।কেউ দিতে পারিনি। এমন কি ফেসবুকেও খুঁজে পায়নি।"
অরিত্রা তখন বলে,"দিতে পারবে কি করে ।আমার সঙ্গে কারোর সেভাবে কোনো যোগযোগ নেই।হঠাৎ করে আমার বিয়েটা হয়ে যায়।তোরা তো কেউ কাছে ছিলিস না !ক্যারিয়ার তৈরির জন্য যে যার মতো ছুটছিস।তাছাড়া আমি ফেসবুকে নেই।তবে হোয়াটস্অ্যাপে আছি।"রাখী দে দত্ত
অরিত্রার কথায় মোহনা এবার করুণ মুখ করে বলে,
"বুঝলাম।তবে সবই ঠিক ছিল।কিন্তু তুই এত শিক্ষিত হয়েও ওনলি হাউজওয়াইফ !মানতে পারছি না।চাকরি করেও সংসার করতে পারতিস!"
মোহনার কোথায় অরিত্রা একটু ইতস্তত বোধ করে।তারপর ম্লান স্বরে বলে,"কৌস্তভ রাজি ছিল না।তারপর ডোডো এসে গেল।"
মোহনা অরিত্রার মুখের উপর একটু কড়া ভাবে জিজ্ঞাসা করে "তোর কি নিজের কোনো ইচ্ছা ছিল না ?"
মোহনার চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না অরিত্রা।সহজ সরল মনে মোহনাকে বলে দেয় "কৌস্তভ বলেছে ওর ভালো মাইনের চাকরি।বাড়ি গাড়ি সবই রয়েছে।আমাদের মতো বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে আর কি চায়।আমি যেন ডোডোকে ঠিক ভাবে মানুষ করি ।তাহলে আমার কি দরকার চাকরি করার!"
মোহনা অরিত্রার মুখমন্ডলে অসহায়তা লক্ষ্য করে। সে জিজ্ঞাসা করে,"তোরও কি একই মত ছিল ?আমার কাছে লুকাস না ।তোর বাড়িতে ঢোকার সময় নেমপ্লেটে 'মায়ের আশীর্বাদ ' এর নীচে শুধু কৌস্তভদার নাম দেখলাম।যতদূর দেখে বুঝেছি বাড়িটা নতুন তৈরি।তাহলে নেমপ্লেটে তোর নাম নেই কেন ?"
অরিত্রা প্রমাদ গোনে।মোহনা সরাসরি এরকম একটা প্রশ্ন করবে বুঝতে পারিনি।সে মনে মনে তখন বলে কেন যে সেদিন শপিংমলে দেখা হয়েছিল ! অরিত্রাকে চুপ করে থাকতে দেখে মোহনা জিজ্ঞাসা করে,
"কিরে সত্যিটা বল !"
অরিত্রা মুখ কাচুমাচু করে বলে "তাতে কি হয়েছে।নেমপ্লেটে নাম নেই বলে কি এই বাড়িতে আমার অধিকার নেই!"
মোহনা তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে,"বিষয়টা অধিকারের প্রশ্ন নয় ,সম্মানের।তুই সত্যি করে বল তো তোর এই সংসারে তোর ইচ্ছা অনুযায়ী কি কি হয়!হয়ত বিশেষ কিছু রান্নার পদ আর সোফার কুশন দরজা জানালার রঙিন পর্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ।"
অরিত্রা বিস্ময় প্রকাশ করে বলে,"কি যে বলছিস মোহনা!"
অরিত্রার কথা শুনে মোহনা বলে ওঠে,"ঠিকই বলছি।সংসারে তোর ইচ্ছামত কিছু হয়! না পুরোটাই কৌস্তভদার ইচ্ছায় !তোর মনের খবর রাখে সে।আসলে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে খুব কম পুরুষ মানুষ আছে যারা মাংসপিন্ড অপেক্ষা মেয়েদের হৃদয়টা ছুঁতে চায়।পেতে চায়।তুই জোর গলায় বলতে পারবি কৌস্তুভদা তোকে সেই সম্মানটা দেয়!তোর মন বোঝে! ইম্পসিবল !আমাদের সোসাইটিতে বেশিরভাগ সব স্বামীদের ইচ্ছেপুতুল!"
পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায়, অরিত্রা প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বলে,"এসে অবধি বকবক করে যাচ্ছিস।একটু বস আমি সরবত করে আনি।"
মোহনা বলে "না না সরবত খাব না তুই বরং একটু চা করে নিয়ে আয়।আর একটা কথা আমাদের আলোচনার টপিক কিন্তু চেঞ্জ হবে না।"
অরিত্রা মৃদু হেসে কিচেনের দিকে পা বাড়ায়।( পত্রিকায় প্রকাশিত)©® রাখী দে দত্ত
***ছবি AI
Rakhi Dey Dutta

গল্পের শেষ অংশ লিংক👇
https://www.facebook.com/share/p/1A5WCtgdKi/

শুভ সকাল.. "নীল আকাশের নীচে এই পৃথিবী আর পৃথিবীর পরে ওই নীল আকাশ..."হরনগর,নদীয়া...
02/06/2025

শুভ সকাল.. "নীল আকাশের নীচে এই পৃথিবী আর পৃথিবীর পরে ওই নীল আকাশ..."

হরনগর,নদীয়া...





শুভ সকাল...মাথা তুলে রয়েছে বন পাহাড়..আলো দিয়ে মোড়া.. অনেক দূর থেকে বাতাস বেয়ে ভেসে আসে মেঘেদের ডাক..গন্ডোলা,কাশ্মীর..  ...
01/06/2025

শুভ সকাল...মাথা তুলে রয়েছে বন পাহাড়..আলো দিয়ে মোড়া.. অনেক দূর থেকে বাতাস বেয়ে ভেসে আসে মেঘেদের ডাক..

গন্ডোলা,কাশ্মীর..









Rakhi Dey Dutta

শুভ সকাল... ভাঙাচোরা অতীত যেখানে আলো ছায়া মেঘ বৃষ্টি খেলা করে এখন....কালিকাপুর রাজবাড়ী,পূর্ব বর্ধমান..
31/05/2025

শুভ সকাল... ভাঙাচোরা অতীত যেখানে আলো ছায়া মেঘ বৃষ্টি খেলা করে এখন....

কালিকাপুর রাজবাড়ী,পূর্ব বর্ধমান..



 #লোভ  #গল্প চারদিকে কেমন যেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতা!ঘরের এককোণে খাটের একপাশে হেলান দিয়ে জানালার পাশে বসে শোভনা।গোধূলি লগ্নে...
30/05/2025

#লোভ #গল্প চারদিকে কেমন যেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতা!ঘরের এককোণে খাটের একপাশে হেলান দিয়ে জানালার পাশে বসে শোভনা।গোধূলি লগ্নে লাল আবীর রঙে আঁকা পশ্চিম আকাশ পানে চেয়ে।তার খোঁজ সেভাবে কেউ রাখে না।সংসারে সে শুধুমাত্র বোঝা।শোভনার জীবনে ভালোবাসা বলতে উন্মুক্ত আকাশ।

"অন্ধকার হয়ে এসেছে..আলোটা এখনও জ্বালাওনি পিসি।"
--"আকাশ দেখতে দেখতে হারিয়ে গেছুলুম রে.."
--"বাবা! তোমার ঘরে মশাদের কি দাপট! ঢুকতে না ঢুকতেই কামড়ে দিল।এই মশার কামড়েও তোমার হুঁশ ফেরেনি.."
--"তোর হাকডাক শুনে এই যে হুঁশ ফিরল..."
--"আমি এদিক পানে না এলে..অন্ধকারে বসে বসে মশাদের কামড় খেতে ?"
--"আমি জানি তো!কেউ আসুক আর নাই আসুক তুই আসবি .."
--"সংসারের পাঁচটা কাজের মধ্যে থাকি..ভুলেও তো যেতে পারি.."
--"যেদিন ভুলবি সেদিন বুঝব এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই রে.."
--"কি যে বলো পিসি ! "
শোভনা তার ছোটোভাই শোভনের বিরক্তি ভরা কণ্ঠস্বর শুনতে পাই,"আশা ! এই আশা !কোথায় গেলি ?" রাখী দে দত্ত

আশা মৃদু কন্ঠে শোভনাকে বলে "ওই তোমার গুণধর ভাই অফিস থেকে এল বুঝি..আমি আবার পরে আসব ক্ষণ..চা হলে তোমার জন্য চা পাঠিয়ে দিচ্ছি.."
শোভনা উদ্বেগপূর্ণ কন্ঠে বলে,"তুই তাড়াতাড়ি যা ..নইলে শোভন চিৎকার করতে থাকবে.."

রায় বাড়ির বড় মেয়ে শোভনা।তার মা ও বাবা ছোটবেলায় একটি দুর্ঘটনায় গত হন।জ্যাঠা-কাকাদের সংসারে ছোট দুটি ভাইকে আগলে মানুষ করতে গিয়ে নিজেকে ভালো রাখতে বেমালুম ভুলে গেছে।জীবনে বসন্ত যখন উঁকি দিয়েছিল তখন সে গুরুত্ব দেয়নি।দুই ভাইয়ের এখন পরিপূর্ণ সংসার।জ্যাঠা ও কাকাদের পরিবারও পৃথক।যতদিন শক্ত সমর্থ ছিল ভাইদের সংসারে তাও একটু দর ছিল। কিন্তু বয়সের ভারে গত কয়েক বছর ধরে বাতের ব্যথায় হাঁটাচলার সমস্যায় কাবু হয়ে পড়াতে সংসারের বাস্তবতা তার চোখ দুটি খুলে দিয়েছে।বাড়ির পুরনো পরিচারক নবীনের সোমত্ত মেয়ে আশা একমাত্র তার ভরসা।শোভনা ও আশার সম্পর্কের রসায়নটা বাকি পাঁচজনদের থেকে একটু আলাদা।আশাকে কখনও পরিচারিকা হিসেবে দেখেনি শোভনা।মা মরা মেয়েটা তার বাবার সঙ্গে এই বাড়িতে আসত।তখন থেকেই শোভনার স্নেহ ও ভালোবাসায় আবদ্ধ।আশাও শোভনা পিসি বলতে অজ্ঞান। পারস্পরিক সম্পর্কের বোঝাপড়াটা বেশ গভীর।সেখানে নিজের রক্তের দুইভাই ও ভ্রাতৃবধূদের বড় স্বার্থপর মনে হয় শোভনার।আসলে একটা বয়সের পর শোভনা কমবেশি উপলব্ধি করেছে রক্তের সম্পর্ক থেকে মনের সম্পর্ক বড় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।নিজের বড় ভ্ৰাতৃবধূ সুলতা বরাবরই দূরত্ব বজায় রেখেছে। বাঁধনটাই তাই চিরকাল আলগা।ছোট ভ্রাতৃবধূ মৌসুমি তাও একটু সৌজন্যতা বজায় রেখে চলে।ভাইপো ও ভাইঝিরা সব বড় হয়ে গেছে। নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত।পিসির প্রয়োজন ফুরিয়েছে।শোভনা পিসি বলে তাদের কেউ আছে সেটাই বোঝা দায়। চাওয়া পাওয়ার সংসারে এখন সে ব্রাত্য।বাতের সমস্যায় সেভাবে হাঁটতে চলতে না পারায় অধিকাংশ সময় দোতলায় এককোণে নিজের ঘরে কাটে।প্রয়োজন ছাড়া কাউকে সেভাবে ধারেকাছে ঘেঁষতে দেখা যায়না।তার সকল দায়িত্ব স্বেচ্ছায় হাসিমুখে পালন করে কেবল আশা।মাঝে মাঝে নিজের উপর খুব রাগ হয় কেন তার এই রোগ হয়েছে !নীরবে অশ্রু ঝরায়।আশা একাই বা কত খেয়াল রাখবে!বড় ভাই সুবোধ তো অসংবেদনশীল ছিল কিন্তু ছোটভাই শোভনও এতটা স্বার্থপর হবে বুঝতে পারিনি শোভনা।আশাকে পর্যন্ত কথা শোনায় "দিনরাত সংসারের কাজ ফেলে রেখে দিদির ঘরে গিয়ে বসে থাকিস কেন? সে নয় বাতের রুগী তুইও কি !" শোভনা প্রতিনিয়ত মনে মনে আক্ষেপ জানায় "অনেক হল এই অবহেলার জীবন.." রাখী দে দত্ত

"পিসি.. চা নাও ..সঙ্গে বেগুনি ভেজে এনেছি.." আশার কণ্ঠস্বর শুনে ভাবনার তাল কাটে।সে আশাকে প্রচ্ছন্ন বকুনির সুরে বলে, "তুই আবার সংসারের কাজ ফেলে এখন বসিস না ..ওরা রাগ করবে.." আশা ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর দেয়, "বাদ দাও তো তোমার ভাই আর ভাই বউদের কথা..যে দিদি নিজে সংসার না করে মায়ের মতো করে কোলে পিঠে মানুষ করল..তার যখন বয়স হয়েছে ...বাতে পঙ্গু হয়েছে..কাজে লাগছে না বলে কোনো যত্ন নেই.. সহানুভূতি নেই..তাদের জন্য ভাবনা!তোমার কি ওদের উপর রাগ হয় না পিসি?" শোভনা আশার মুখ চেপে ধরে বলে,"চুপ কর মুখপুড়ি..কেউ শুনতে পেলে কাজটা হারাবি..তাছাড়া এখন আমাকে আর কোনো কিছুই স্পর্শ করে না.." আশা ঝাঁঝিয়ে বলে,
"অত সহজ! আমাকে ছাড়া যাদের একমুহুর্ত চলে না তারা আবার বাদ দেবে আমাকে..পিসি আজ ছোট মুখে একটা বড় কথা বলব !তুমি বিয়ে করনি কেন গো?তোমার সংসার করার কথা মনে হয়নি কেন?"
শোভনার মুখ বিষাদে ম্লান হয়ে ওঠে।আশা নিজেকে সামলে নিয়ে শোভনার মুখপানে চেয়ে বলে "ভুল কিছু জিজ্ঞাসা করলাম পিসি!"শোভনা মৃদু কণ্ঠে উত্তর দেয়,"না আশা ভুল কিছু বলিসনি..এখন তুই কাজে যা.."

আশা প্রস্থান করতেই শোভনার চোখ দুটি হতে উষ্ণ প্রস্রবণধারা নামে।সেদিন যদি সেও স্বার্থপর হতে পারত তারও একটি ভরা সংসার থাকত! মা বলে কেউ ডাকার থাকত!দীর্ঘশ্বাস পড়ে শোভনার।তারপর আনমনে বলে," মানুষটা বড় একা..আমাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা আজও তাকে কুড়ে কুড়ে খায়!" শোভনা পাড়ি দেয় তার অতীত জীবনে।একই পাড়ায় থাকত সেই মানুষটি।ভাইদের স্কুলে দিতে যাওয়ার সময় রোজ পিছু নিত আর বলত,"শোভনা তোমার ভাইদের কোনো অসুবিধা হবে না..আমরা দুজনে মিলে দেখাশোনা করব.."
--"তা হয়না বিনয়দা.. মাসিমা তোমাকে যার সঙ্গে বিয়ে দেবেন তাকে মেনে নিও..এ জন্মে বোধহয় আমাদের একসঙ্গে ঘর বাঁধা নেই.."একথা বলে কাঁদতে কাঁদতে এসে মনের দুয়ারে খিল দিয়েছিল শোভনা।তারপর মায়ের কথায় অন্যত্র বিবাহ করতে বাধ্য হয় বিনয়।বিনয় কিন্তু শোভনাকে বলেছিল,"তোমাকে ছাড়া কাউকে কোনোদিন ভালোবাসতে পারব না..."
যে ভাইদের জন্য শোভনা এত করেছে !সেই সংসার কি দিয়েছে তাকে! ত্যাগ করে কখনও জাহির করতে নেই কিন্তু প্রত্যাশা কি থাকে না! সেও যে রক্তমাংসের মানুষ!দেরীতে হলেও টের পেয়েছে ।ভালোভাবে বাঁচার অধিকার তারও ছিল।সুন্দর করে নিজের একটা সংসার সেও করতে পারত !শোভনা ভাবে "সত্যি জীবন বড় অদ্ভুত ! যে সম্পর্কগুলো ধরে সে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছে সেখান থেকেই তত বেশি অবহেলা পেয়েছে.." আশার কথায় হঠাৎ নতুন করে তার বাঁচার সাধ জাগে।নতুন করে সংসার গড়ার স্বপ্ন জাগে।তার বিনয় তো বিপত্নীক!শরীরে সমস্যা এলেও মনে যে আজও বসন্তের রঙিন হাতছানি।শোভনা জানালা দিয়ে বাইরে নক্ষত্রখচিত আকাশপানে চায়।ভালো থাকার লোভ তার মনের দরজায় নাড়া দেয়( সৃজন সাহিত্য পত্র প্রয়াস নববর্ষ সংখ্যায় প্রকাশিত)। পূর্ব প্রকাশিত ©® রাখী দে দত্ত
**ছবি AI অ্যাপ দ্বারা নির্মিত

-------
Rakhi Dey Dutta

শুভ সকাল... "আকাশে ছড়ানো নীল একঝাঁক গাঙচিল মন আজ পাখা মেলে দেখছে.. সোনালি রোদের বুকে খুশিতে পাখিরা যেন নতুন কবিতা এক লি...
30/05/2025

শুভ সকাল... "আকাশে ছড়ানো নীল একঝাঁক গাঙচিল মন আজ পাখা মেলে দেখছে.. সোনালি রোদের বুকে খুশিতে পাখিরা যেন নতুন কবিতা এক লিখছে..."

লক্ষী সায়র,বীরভূম









Rakhi Dey Dutta

 #গল্প  #যাঁতাকল নদীর তীরে এসে বসে সুব্রত।ওপারে পশ্চিম আকাশে লাল গোলাকার বলটা ক্রমশঃ দিগন্তে মিশছে।চারপাশে বাঁশঝাড় ও জঙ...
29/05/2025

#গল্প #যাঁতাকল নদীর তীরে এসে বসে সুব্রত।ওপারে পশ্চিম আকাশে লাল গোলাকার বলটা ক্রমশঃ দিগন্তে মিশছে।চারপাশে বাঁশঝাড় ও জঙ্গল।বেশ নিঝুম পরিবেশ।মাঝে মাঝে ঘরে ফেরা পাখিদের ডাক শোনা যাচ্ছে।এদিকটা মানুষজন সেরকম ঘেঁষে না। সাঁঝবেলা তো একেবারেই টিকি খুঁজে পাওয়া যায় না। পাছে শেয়াল এসে ধরে।সুব্রতর সে ভয় আছে।কিন্তু আজ সে অন্য মতলবে এসেছে।
"সুব্রত তোর বউ রে কয়ে দে, এই বাড়ি থাকতি হলি তোর বউ রে আমার সকল কথা শুনি চলতি হবই।"
-"মা..দিদি আর তুমি শুধু বসে থাকবে আর আমার বউ তোমার নাতিরে সামলাবে আবার সংসারের সব কাজও করবে !"
-"কি বললি মেনিমুখো বউভেড়ুয়া ছেলে।থাকিস নিজের বাপের ঘরে খাস বাপের সম্পত্তি আর বউয়ের হয়ে কথা কস।কথা না শুনলি বাড়ি থেকে বার করে দেবো।"
সুব্রত চুপ হয়ে যায় মায়ের মুখের ভাষায়।তার বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে সে তার পুরনো মাকে আর খুঁজে পাই না।সুব্রত মনে মনে ভাবে সে তো যেরকম ছিল সেরকমই আছে।'মা পাল্টে গেলে ক্যান!'কারণ খুঁজে না পেয়ে সুব্রত মাথা নীচু করে। সুব্রতর মা একনাগাড়ে গলা উঁচিয়ে সুব্রত ও তার বউকে শাপ শাপান্ত করতে থাকে। রাখী দে দত্ত
আরামডাঙ্গা গ্রাম।নাম যেমন পরিবেশও তেমন।সবুজ ঘেরা প্রকৃতি। একপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চূর্ণী নদী।টলটলে জল। গ্রামের প্রকৃতির আচরণের সাথে তাল মিলিয়ে চলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা।কমবেশি সকলের জমিজমা রয়েছে।চাষবাসই অধিকাংশ মানুষের পেশা।রোদ,বৃষ্টি, ঝড়,বর্ষা সবকিছুর সাথেই গ্রামের জীবনযাত্রার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।ঋতু বদলের সাথে সাথে যেভাবে গ্রামের রূপ লাবণ্য বদলে যায় সেভাবেই বদলে গেছে সুব্রতর জীবন। সুব্রতর পড়াশোনার দৌড় খুব বেশি ছিল না।সে বরাবর উদাসীন প্রকৃতির।অগত্যা নিজেদের জমিতেই চাষাবাদ করে।সুব্রতর বাবা কয়েক বছর পূর্বে গত হয়েছেন।বাড়িতে মা,দিদি ,বৌ ও ছেলে রয়েছে।এক দাদা আছে।বিয়ের পর তার মায়ের মুখরা স্বভাবের জন্য স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে কর্ম সূত্রে ।প্রথম প্রথম গ্রামে এলেও এখন আর এমুখো হয় না। সুব্রতদের অর্থনৈতিক অবস্থা নেহাত মন্দ নয়।ঘরের চাল ডাল ও উপরি উপার্জন রয়েছে। সংসারের কর্ত্রী তার মা।মায়ের বাধ্য ছেলে সে অথচ স্ত্রীকেও সে ভালোবাসে।সুব্রত কিছুতেই বুঝতে পারে না তার স্ত্রীর প্রতি মায়ের এত বিদ্বেষ কেন!সে তো মাকে ভালোবাসে অথচ মা তাকে সর্বদা বউয়ের চামচা বলে।ওদিকে বউয়ের কাছে গেলেও ভালোবাসা অপেক্ষা কাঁটার খোঁচা অধিক, "তুমি কেমন পুরুষমানুষ।মায়ের আঁচলে বাঁধা।নিজের বউটারে রক্কা করতি পারো না।মায়ের নামে বাড়ি জমি বলে অত দেমাগ।আমারে বেশি জ্বালালে আমি কিন্তু তোমার ঘর ছাড়ব।তখন বুঝবা ।রোজ রোজ তোমার ঝগড়ুটে মায়ের কথা শুনতি পারব না।" রাখী দে দত্ত
একটানা কথাগুলো কানে বাজছে সুব্রতর। বুকপকেট থেকে বিড়ির প্যাকেট ও দেশলাই নামায়।একটা বিড়ি বের করে।দেশলাই দিয়ে বিড়ি ধরায়।সুখটান দেয় কয়েকবার। ধোঁয়ারা গোল পাকায়।সুব্রতর মনে গোল বেঁধে আছে। কার শুনবে ! মা না বউয়ের ! আধ খাওয়া জ্বলন্ত বিড়িটা টান মেরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় পাশের ঝোপে।মুখে বলে "নিকুচি করেছে সংসারের।আমাকে নিয়ে যত দড়ি টানাটানি। কেউ আমার মন বোঝে না।এই যাঁতাকলে আর পিষব না।" পরক্ষণেই নিজে নিজে বলে,"আমি মরবই বা কেন !ছেলেটা তো কোনো দোষ করেনি।ওরে ভালো মানুষ করে গড়ে তুলতি হবে.." এরপর সব চিন্তা ফুৎকার দিয়ে একনিমেষে উড়িয়ে দেয় সুব্রত।তারপর গান ধরে "জীবনপুরের পথিক রে ভাই..." দিনশেষের আবছা অন্ধকারে গ্রামের মেঠো পথ ধরে সুব্রত ক্রমশঃ বাড়ির পানে এগিয়ে যায় ।(পূর্ব প্রকাশিত)©® রাখী দে দত্ত

------
***ছবি AI অ্যাপ দ্বারা নির্মিত।

শুভ সকাল..."মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে,আঁধার করে আসে.."হরনগর,নদীয়া...          Rakhi Dey Dutta
29/05/2025

শুভ সকাল..."মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে,আঁধার করে আসে.."
হরনগর,নদীয়া...







Rakhi Dey Dutta

Address

Krishnagar

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Rakhi Dey Dutta posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share