25/04/2025
আমার স্ত্রী মারা গেছে আমি নিজেও জানিনা 😢
আমি সিফাত আমার বউয়ের নাম ইভা। সত্য ঘটনা। দয়া করে কেউ বাজে মন্তব্য করে কষ্ট বাড়াবেননা।
ইভা একজন রিক্সা চালকের মেয়ে। আমার বাবা ডাক্তার প্রেমের বিয়ে আমাদের। আমি এবং ইভা একই সাথে মাস্টার্স শেষ করেছি। তার আগে থেকে সম্পর্ক। প্রথম যেদিন বাবা মাকে বলি আমি ইভাকে বিয়ে করতে চাই তোমরা বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও তখন মা বলে বিয়ের প্রস্তাব তো দূরের কথা ঐ রিক্সা ওয়ালার মেয়ের আমার বাড়িতে কোনো জাইগা নেই। আচ্ছা রিক্সা চালকরাকি মানুষ না? ৭ বছরের সম্পর্ক আমাদের বিয়েতো করতেই হবে। অবশেষে একাই কোর্টে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে এলাম ইভাকে। আমার মা মেনে নেবেনা, ঘরে ঢুকতে দেবেনা, আমার দাদী বিয়েতে রাজি বলেই কোনো মতে বাড়ি ঢুকতে পারলাম। বাবা মাকে থামালো। পরের দিন সকালে একসাথে খাবার টেবিলে মা ইভাকে আমাদের সাথে বসে খেতে দিলোনা। দাদী মায়ের কথার প্রতিবাদ করলে মা দাদীর সাথে খারাপ আচরণ করলো ফলে দাদী চুপ হয়ে গেলো। ইভা যখন একসাথে খেতেই পারবেনা তাই আমিও না খেয়ে উঠে গেলাম আর দুজনের খাবার রুমে নিয়ে গেলাম। তখনি মা চিৎকার করতে লাগলো দেখ দেখ পেটে আমি রাখলাম আর এখুনি গোলামি করছে বউয়ের। দুধ, কলা দিয়ে কালসাপরে পুষেছি আমি। বিয়ের ৫ মাস পর আমি একটি যব পেলাম। বিয়ের ৫ মাসে আমার সামনে মা ইভাকে কতইনা বাজে কথা বলেছে, বেচারি কখনো একটা কথাও বলেনি। আমার যবটা হল ঢাকার বাইরে চিটাগং। আমাকে সেখানেই থাকতে হবে মাসে ২ বার বাড়ি আসতে পারতাম। বউকে নিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি । ফোনে কথা বললে ইভা আমাকে বুঝতেই দিতোনা মা ওর ওপর কত অ**ত্যা***চার করে। আমি বাড়ি এলে দাদী সব বলতো আমাকে।
এভাবেই চললো বিয়ের ২ বছর। বেতন বাড়ছেনা, নিজেই কোনো মতে অচেনা জাইগায় থাকি বউকে কিভাবে নিয়ে যাবো। ১ বছর আগে ইভার বাবাও মারা গেছে, ওর মা ওর ১২ বছর বয়সেই মারা গেছেন। ওর এখন আমি ছাড়া কেউ নেই।
আমার মা ইভার সাথে আমাকে ডিভোর্স দেয়াতে চাই, কতইনা বাহানা তার৷ কিন্তু আমি ওকে ডিভোর্স কখনোই দেবোনা। ভেবে রেখেছি বেতনটা বাড়লেই বাচ্চা নেবো।
ওহ বলতে ভুলে গেছি আমার একটি বোন আছে ওর নাম রোজা। তার বিয়ে পড়িয়ে রেখেছে তুলে নিয়ে যায়নি।
মাঝে মধ্যে রাতেই দেখতাম রাত ১/২ টায় ইভার ফোন ওয়েটিং, আমি ইভাকে পরে জিগ্যেস করি রেগে যে কার সাথে কথা বলছিলে এতো রাতে? ইভা বলতো রোজার ফোন নষ্ট তাই আমার ফোন নিয়ে রোজা ওর বরের সাথে কথা বলছে। এভাবে টানা ১২দিন ওয়েটিং পেলাম, রোজ ইভা বলে রোজা কথা বলছে, আমি এই ১২ দিনে রোজাকে কখনো জিগ্যেস করিনি যে আসলেই কি রোজা ইভার ফোনে কথা বলছে কিনা, কারণ আমি ইভাকে বিশ্বাস করি৷
হঠাৎ একদিন মা বললো বাবা তুই সারারাত এভাবে বউয়ের সাথে কথা বলিসনা, শরীর খারাপ হবে, সকালে অফিসে যাবি কিভাবে সারারাত জাগলে? আমি বললাম কই আমিতো রাতে ইভার সাথে তেমন কথা বলিনা। মা বললো কি বলিস তোর বউতো সারারাত কার সাথে কথা বলে আমি নিজে শুনছি। আমি মা কে বললাম ইভাতো বললো ইভার ফোনে রোজা ওর বরের সাথে কথা বলে, রোজার ফোন নাকি নষ্ট? রোজা তখন বলে কই ভাইয়া আমার ফোনতো নষ্ট না আর আমি কখনোই ভাবির ফোন নিয়ে কারো সাথে কথা বলিনি৷ আমি বাড়ি আসি -ইভাকে বললে, ইভা কেদে আমার পায়ে ধরে বলে বিশ্বাস করো আমি মিথ্যা বলছিনা আমি কারো সাথে কথা বলিনি, আমার ফোনে রোজায় কথা বলছিলো এতোদিন। আমাকে রোজা বলেছিল ওর ফোন নষ্ট। তোমার মা বোন মিথ্যা বলছে। হাজার হলেও আমি মায়ের ছেলে মা বোনের কথা বিশ্বাস করে ইভাকে চড়**** মারি। মা বলে ওহ আমার ছেলেকে দিয়ে তোমার মন ভরেনা কয়টা লাগে তোমার? কারসাথে সারারাত কথা বলে আমার মেয়ের নাম করো?
এভাবেই দূরত্ব তৈরী হয় মা বোনের কথায় ইভার সাথে ।
মা এটাও বলে রোজ বিকেলে নাকি ইভা বাইরে যেতো সন্ধ্যায় ফিরতো।
অবশেষে ডিভোর্স হয়ে যায়। দাদীও আটকাতে পারেনা। আমি চিটাগং চলে যায়। ডিভোর্সের আগে একবারো ভাবিনি ইভার তো আমি ছাড়া কেউ নেই ইভা কোথায় যাবে আমি ছাড়া? ডিভোর্সের পর বাবা মা
দাদী বোন সবাই মিলে চিটাগং চলে আসে আমার কাছে, সেখানেই একটি বড় বাসা ভাড়া নেয় বাবা,বাসা ভাড়ার টাকা বাবাই দেয় কারণ আমার বেতন তেমন বাড়েনি এখনো। বাবারা আমার কাছে চলে আসে কারণ যেন আমি কখনো আগের জাইগায় ফিরে গিয়ে ইভার সৃতি মনে না পড়ে, কারণ ইভাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসতাম। আমি ভেবেছিলাম ইভা আমাকে ধোকা দিয়ে পরোকিয়া করছে এবং প্রমাণ আমার মা বোন। ডিভোর্সের ৭ মাস হল আমি ঢাকা যায়নি, ইভা কোথায় আছে কেমন আছে কোনো খোঁজ নেয়নি, আমি আমার সব পুরোনো সিম বদলে নতুন সিমনি৷ সব পুরোনো বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দি, কারণ আমার বন্ধুরা ইভারো বন্ধু ছিলো যেহেতু আমরা সবাই একই ভার্সিটির ছিলাম।
ডিভোর্সের ৭ মাস পর ছুটিতে আমি একটি কাজে ঢাকায় যায় এবং ইভার এক বান্ধবীর সাথে আমার দেখা হয়, জানতে পারি ইভা ডিভোর্সের ১০ দিন পর ওর বাড়িতে গলায় দ**ড়ি দিয়ে মারা যায় 😢 এই ১০ দিনে ও আমাকে অনেক খুঁজেছে শেষ কথা বলতে চেয়েছে পারেনি৷ মারা যাওয়ার আগের দিন ইভা ওর বান্ধবীর কাছে গিয়ে একটি বক্স দিয়ে আসে এবং তা খুলতে মানা করে বলে যে সিফাতের সাথে কখনো তোর দেখা হলে এটা দিস। ওর বান্ধবী ওর মৃত্যুর পর আমার সাথে অনেক যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনি, কারণ আমি সিম বদলেছি। আমার বোনের নাম্বার কোনো ভাবে জোগার করে,আমার বোনো আমার ভার্সিটির ছিলো। আমার বোন রোজাকে বলে ইভা মারা গেছে যেন আমার নাম্বার টা দেয়। আমার বোন আমাকে এসব কিছুই বলেনি কখনো।
ইভার ওর বান্ধবীকে দেয়া বক্সটা খুলে দেখি। ২ টা মোটা ডায়েরী । ডায়েরী লিখা ইভা সেদিন থেকে শুরু করেছিলো যেদিন আমি যবের জন্য প্রথম চিটাগং আসি। ২ বছরে ইভা যখন যখন আমাকে মিস করেছে সবকিছু লিখেছে। সেখানে ডেট, টাইম সহ ঐদিন গুলোর কথাও লিখা ছিলো যেদিন গুলোই ইভার ফোন রোজা নিয়ে কথা বলছিলোঃ সিফাত জানো তোমাকে অনেক মিস করছি তোমার সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে কিন্তু ফোনটা রোজা নিয়ে ওর জামাইয়ের সাথে কথা বলছে কি প্রেম! কখন ফোনটা নিয়ে গেছে কথায় শেষ হয়না ওদের৷
মৃত্যুর আগেও অনেক কিছু ইভা লিখেছেঃ আমি কখনো ভাবিনি তুমি আমাকে তোমার মা বোনদের কথায় অবিশ্বাস করবে, আমি কখনো কোনো পুরুষের সাথে কথা বলিনি, সব মিথ্যা বলেছে তারা আমাকে তোমার জীবন থেকে সরানোর জন্য। কত বললাম বিশ্বাস করলেনা। তুমি ছাড়া আমার জীবনে আর কেউ নেই তাই কাকে নিয়ে বাঁচবো বলো? অনেক ভালোবাসি তোমাকে। একদিন তুমি হয়তো সব জানবে আমাকে দেয়া তোমার মা বোনের সব অপবাদ মিথ্যা। আর সেদিন আফসোস করবে। কোনো বদদোয়া করছিনা তোমায় সুখে থাকো। আরো অনেক কিছু লিখেছিলো😢
এরপর বাড়ি ফিরে রোজা কে বলি ইভা মারা গেছে তুই বলিসনি কেন? রোজা বলেঃ নষ্টা মেয়ে মানুষের কথা কেন বলবো? রোজাকে সেদিন অনেক মে**রে***ছিলাম। সত্য জানার জন্য মায়ের সাথে অনেক চিৎ**কার করি মারা যাওয়ার হু***ম**কি দি এরপর মা বলে হ্যা ইভাবে দেয়া সব অপবাদ মিথ্যা কেননা সে কখনো একটা রিক্সা ওয়ালার মেয়ের সাথে তার একমাএ ছেলের বিয়ে মানতে পারবেনা। সবাই বলেনা ছেলের মারা খারাপ হয়না, ভাই আমি একজন ছেলে হয়ে বলছি ছেলের মা বোনদের কথা বিশ্বাস করার আগে প্রমাণ নেবেন। এরা আমার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছে। শাশুড়ীরা কখনো বউকে মেয়ে ভাবতে পারেনা এটায় সত্য। বউরা যতই ভালো হোক।
Aroma ভাই দয়া করে আমার গল্পটি শেয়ার করবেন। আপনারা সবার গল্প শেয়ার করেন দেখে আমি আজ আমার কষ্টের কথা শেয়ার করলাম। আপনাদের দুজনকে আমার ভীষণ ভালোলাগে দোয়া ও শুভকামনা ভাই❤️ আপনার এই হতভাগা ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন৷
জীবন কাহিনী - সিফাত (সত্য ঘটনা)
© Afsanah Khan