21/09/2025
"আমি জন্মেছিলাম এক বিষন্ন বর্ষায়,
কিন্তু আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত ।
আমি জন্মেছিলাম এক আষাঢ় সকালে,
কিন্তু ভালোবাসি চৈত্রের বিকেল ।
আমি জন্মেছিলাম দিনের শুরুতে,
কিন্তু ভালোবাসি নিঃশব্দ নির্জন নিশি ।
আমি জন্মেছিলাম ছায়াসুনিবিড় গ্রামে,
ভালোবাসি বৃক্ষহীন রৌদ্রদগ্ধ ঢাকা ।
জন্মের সময় আমি খুব কেঁদেছিলাম,
এখন আমার সবকিছুতেই হাসি পায় ।।
আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম,
এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি...''
নির্মলেন্দু গুণের এই কবিতাটা আমার সাথে খুব যায়। আমি বরাবরই হিসাবি, কিন্তু আমার কাছের মানুষদের জন্য উল্টো! আমি বরাবরই নিজের বেলায় খুবই কৃপণ, এই যেমন মুখে বলেছিলাম, নিজের জীবনের প্রথম ইনকাম হাতে পেয়ে কি কি করব! অথচ যা করেছিলাম, যেটুকু সামর্থে ছিলো, সবই কাছের মানুষদের খুশি দেখাতেই বরাদ্দ ছিলো। তারা কি চেয়েছিলো? না! আমার মন চেয়েছিলো! আমি তাদের থেকে যা পাই, যে ভালোবাসায় আমি সিক্ত, খোদাতালার কত কৃপা, তার তুলনায় এসব কিছুইনা!
আমি ক্ষুদ্র মানুষ, তাও নিজের শখের জিনিস, কীভাবে কীভাবে দিয়ে দিই, কখন যে হাতছাড়া করে ফেলি, বুঝিও না! কিন্তু ঐ যে নিজের জন্য পছন্দ করে রাখা সেই লাল পাঁড়ের শাড়িটা আর কোনোদিন কেনা হলোনা! জীবনে কোনো ধার রাখতে পারলাম না, যা কিছু দিয়ে শোধ করা যায়, তারও বেশি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে গেলাম, যাচ্ছিও!
স্বপ্ন দেখলাম অনেক বড় হবো, কিন্তু একদিন হুট করে শুনলাম, আর কয়েক মুহূর্ত গেলে নাকি পৃথিবীর মায়া শেষ!!
তারপর চার দেয়ালের ঠান্ডা ঘরে চোখের উপর বৃত্তাকার আলো ধুপ করে জ্বলে উঠতেই মনে হলো কাছের মানুষগুলোর কথা। মনে হলো না, কালকের ভোরের আলোটা কেমন হবে, বৃষ্টিতে ভেজা গাছের পাতার রং, কৃষ্ণচূড়ার বিকাল, পরিক্ষায় প্রথম হওয়া, নিজের জন্য একটা ঘর, নামের আগে ড. বসানোর আগ্রহ... মনেই পড়ল না! নিজের কোনো স্মৃতি চোখে ভাসলোই না। শুধু ভাসল, মায়ের ভয়ার্ত চোখ! বাবার অগোছালো কথাবার্তা! আর প্রিয় মানুষের হাসি!
তারপর থেকে আরো কিছু ভাবিনা, এখন সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি সৃষ্টিকর্তার হাতে, জীবনের এই বিশ-পঁচিশের জার্নিতে এত রোলার কোস্টারের উঠা-নামাতে মেনে নিয়েছি, 'লাইফ ইজ আনপ্রেডিকটাবল',তাও সেটা আবারও নিজের বেলাতেই...আর ঐ যে বললাম 'কাছের মানুষ' তাদেঁর জন্য থাকুক, পৃথিবীর সব সুখ!
আমি কি কাঁদছি! নাকি হরমোন ওলটপালট! কে জানে!
#আমারকথা