
10/07/2025
#পর্ব ১৪
#চেরি ফুল
#অদিতি
ভার্সিটির এডমিশন টেস্টের কিছু ফরমালিটিস এর জন্য কালই নোজোমি কে একবার টোকিও যেতে হবে। সকালের ট্রেনের টিকেট বুক করে নিলো সে।
শাওয়ার থেকে বের হয়েই নোজোমির মেসেজ পেলো। মেসেজ টা পরেই হালকা একটু হেসে বের হয়ে গেলো নাজওয়ান।
কি ব্যাপার ম্যাডাম? সকাল সকাল জরুরী তলব??
তলব!!
মনে হচ্ছে এই কঠিন বাংলা শব্দ টা নোজোমি বুঝতে পারে নি। না মানে আসতে বললেন তাই আর কি।
আসলে একটা কথা জানাতে আসতে বলছি। আমি একটু টোকিও (শহরের নাম)যাচ্ছি আগামী কাল কিছু কাজে। নানুপু এখনো পুরো পুরি সুস্থ্য হয় নি। আপনি একটু এই দিক টা খেয়াল রাখবেন প্লিজ। নানুপু প্রতিদিন ই সকালে হাঁটতে বের হয় ৮ টার দিকে আপনি ও ক্লাস করতে উঠেন যদি একটু ব্যালকনি দিয়ে চেক করতেন কয়েকটা দিন যে নানুপু প্রতিদিন বের হচ্ছে কি না।
ওরে এতো কমপ্লিকেটেড করার তো কিছু নেই রে বাবা।দরকার হলে আমি প্রতিদিন গিয়ে দিদুন কে দেখে আসবো।
দিদুন??
না মানে আপনার নানুপু কে আর কি।
"আরিগাতো"
কিন্তু আপনি কয়দিনের জন্য যাচ্ছেন?? আর ফিরবেন কবে??মন খারাপ করে বলে উঠে নাজওয়ান।
সঠিক বলতে পারছি না।তবে তারাতারি ফিরার চেষ্টা করবো।
আচ্ছা।
নুজুর ও বাসায় কিছু কাজ ছিলো আর নাজওয়ান ও ক্লাস করছিলো অনলাইনে তাই খুব একটা সময় না নিয়ে যে যার মতো বাসায় চলে যায়।
নুজু কয়েকটা দিন থাকবে না ভেবেই নাজওয়ানের কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। এই এক মাসে মেয়ে টা তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
নুজু কে তো জিজ্ঞেশ করতেই ভুলে গেছে যে কাল কখন যাবে তাহলে নাজওয়ান তাঁকে ড্রপ করতে যেতে পারতো।ভেবেই নোজোমি কে একটা ম্যাসেজ দেয়।
"কাল কখন যাচ্ছেন?? If You Don't Mind আমি কাল আপনাকে ড্রপ করে আসি??ট্রেনে যাচ্ছেন নাকি এয়ারে?
সাথেই সাথেই রিপ্লাই দেয় নোজোমি "আমার ডোমেসটিক এয়ারে সমস্যা হয় তাই ট্রেনেই যাবো।
আপনার কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না আমি চলে যেতে পারবো।
আমি কি বলছি আমার কষ্ট হবে?আমি নিজ থেকেই যেতে চাচ্ছি।
আচ্ছা।
নোজোমি কে ট্রেন স্টেশন ছাড়তে আসছে নাজওয়ান। তেমন কিছু নেয় নি জাস্ট ব্যাক প্যাক টা নিয়েই চলে আসছে। নাজওয়ানের কেমন যেনো একটা শূন্যতা কাজ করতে লাগলো।এই পর্যন্ত প্রায় অনেক বার ই জিজ্ঞেষ করে ফেলছে"কবে ফিরছেন"।
প্রতিবারের ই নোজোমির এক ই উত্তর "চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি ফেরার"।
ট্রেন ছাড়ার আর ৫ মিনিট বাকি নোজোমি ও বিদায় নিয়ে ভিতরে চলে গেছে। নাজওয়ান তখনও বাহিরে দাঁড়ায় আছে। হঠাৎ করে নোজোমির কল পেয়ে সাথে সাথে উঠায়।
মন খারাপ করে আবার ও বলে কবে ফিরছেন??
চার দিনের মধ্যেই চলে আসবো। নানুপুর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন! প্লিজ।
রাখবো? আর আমার??
আপনার?
না কিছু না ট্রেন ছাড়ছে?
হুম। ফোন রেখে দিতে হবে পাশে একটা "ওবাচান"(বয়স্ক মহিলা) বসছে। উনি অলরেডি বিরক্ত হওয়া শুরু করে দিসে।
উফফ আচ্ছা বলেই কল রেখে দেয় নাজওয়ান।
নানুপু কে কল দিয়ে জানায় দিয়েই ফোন ব্যাগে রেখে সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।কারণ কাল রাতে ও নুজুর ঘুম হয় নি।
একটু আগে ও এই জায়গা টা নোজোমির সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো আর এখন মেয়ে টা প্রায় কয়েক কিলোমিটারদূরে তাঁর থেকে।মন খারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরে আসে নাজওয়ান।
নোজোমি কে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে না তাঁর মানে মেয়ে টা ঘুমাচ্ছে হয়তো।ভেবেই আর মেসেজ দেয় না নাজওয়ান।
ফুরফুরা মন নিয়ে নাজওয়ানের রুমে ডুকে নাহিদ।কি মামা সকাল সকাল কই গেছিলি?? আচ্ছা শুন না সামনেই তো পার্ট টাইম জব শুরু হয়ে যাবে আমাদের।আর এক মাস হয়ে গেলো কোথাও একটু ঘুরতে গেলাম না। চল না কোথাও ঘুরে আসি আমরা সবাই মিলে।এক দমে কথা গুলি বলে ধপ করে নাজওয়ানের খাটে বসে পড়ে নাহিদ।
এই ছেলের এক সমস্যা কথা বলতে নিলে আর থামার নাম নেই। দাড়ি কমা ছাড়া নন স্টপ সব কথা বলেই থামবে।
কোথায় গেছিলো সেই উত্তর না দিয়ে নাজওয়ান বলে উঠলো-কোথায় যেতে চাস? জায়গা বের কর ঘুরে আসি।ওদের ও জিজ্ঞেশ কর কই যেতে চায়।
জনি আর রাহাত কে নিয়ে চাপ নেই মামা ওদের যদি পাহাড়ের গুহায় নিয়ে ও ছেড়ে দেই ঐখানেই ওরা জামাই বৌ জামাই বৌ খেলা শুরু করে দিবো।কিন্তু সমস্যা আমার রূম মেট সিয়াম কে নিয়ে এই শালা একটা জামেলা বাঁধাবেই সেটা মাস্ট।
তাহলে বাদ দে। ও কে নিয়ে গেলে এমনেই আমার মেজাস খারাপ থাকবে।
এইভাবে বাদ তো দেয়া যায় না মামা। আফতার অল একসাথে থাকি।আচ্ছা দাড়া ও রুমেই আছে আমি জিগ্গেস করে আসি।বলেই নাহিদ সিয়াম কে জিজ্ঞেস করতে যায়।
সিয়াম আমরা কোথাও একটা ঘুড়তে যেতে চাচ্ছি।
তো যা। গা ছাড়া ভাব করে সিয়াম উত্তর দেয়।
তুই যাবি না?নাহিদ ব্রু উঠিয়ে আবার ও প্রশ্ন করে।
কই যাবি তোরা? এই আসে পাসের শপিং মলে না হলে বড় জোর ওই নামবা(একটা জায়গার নাম)। কথা গুলি অনেক তাচ্ছিল্য করে বলছিলো সিয়াম।
সিয়ামের কথা শুনেই রাগে ফুঁসতে থাকে নাহিদ।আর আসার সময় বলে আসে হ্যাঁ যেই জায়গায় ই যাই না কেনো নম্র ভদ্র জায়গায় যাবো।তোর মতো নাইট ক্লাব আর বারে গিয়ে পড়ে থাকবো না।
নাজওয়ানের রুমে গিয়েই খাটের উপর ধপ করে বসে নাহিদ।
মনে করে কি ওই শালা নিজে রে??
ল্যাপটপ এর দিকে তাঁকিয়ে ই নাহিদের কথা গুলি শুনতেছিল নাজওয়ান। সে এতক্ষণ রুমে বসে সিয়ামের খোচা দেয়া কথা গুলি সব শুনছে।
ল্যাপটপের দিকে তাঁকিয়েই বলে ওই বাস্টার টা কে কেন বলতে গেলি? ওরে যদি আমাদের সাথে কোথাও নেয়ার প্ল্যান করিস তাহলে সেইখান থেকে আমাকে বাদ দিয়ে নিস।কারণ ক্লাসের ও একটা ব্যাপার আছে। নাজওয়ান যার তাঁর সাথে টুর শেয়ার করে না।
আরেহ না ওরে আর কে অ্যাড করবে কিন্তু মামা আমরা চার জন ই যাবো।তুই বেস্ট একটা প্লেস বের করবি।নাহিদের কথা গুলি নাজওয়ানের কাছে বাচ্চা দের আবদারের মতো মনে হচ্ছিলো।
হালকা করে হেসে উত্তর দিলো আচ্ছা। আমি দেখতেছি কোথায় যাওয়া যায়।
নাজওয়ান অনেক খুঁজে কয়েকটা প্লেস ঠিক করে। সব কিছু ঠিক করে রাতে নিজের রুমে জনি রাহাত আর নাহিদ কে ডাকে।
জনি এসেই বলে মামা খালি মুখে আড্ডা ভালো লাগবো না। দাড়া কিছু নিয়ে আসি বলেই নিজের রুমে গিয়ে দেশ থেকে আনা ঝুড়া পিঠা নিয়ে বসে।
শোন আমরা কাল যাচ্ছি ।যেহুতু ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ সারাদিন আমরা "Wakayama" একটা বিচ এ ঘুরবো ।আর রাতে এসে নামবা তে কাউন্ট ডাউন দেখবো। ডান??
সবাই এক সাথে বলে উঠলো ডান।
একটু থেমে নাজওয়ান আরো বলে উঠলো ঐখানে সন্ধার দিকে বার্বিকিউ করা যায়।সব কিছু রেন্ট এ ওরাই দেয়। জাস্ট বাসার থেকে চিকেন টা মেরিনেট করে নিয়ে যাবো আমরা। আর দুপুরের জন্য বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে যাবো। বার্বিকিও এর জন্য টুকিটাকি জিনিস কেনা লাগবে। সন্ধ্যায় গিয়ে নিয়ে আসবো।
ওকে মামা।মজা হবে অনেক।
এইবার যে যার রুমে যা আমি একটা ন্যাপ নিবো। বলেই শুয়ে পড়ে নাজওয়ান।
ঠিক আছে ঘুমা বলেই নাহিদ জনি আর রাহাত চলে গেলো যে যার রুমে।
সন্ধ্যায় টুকিটাকি জিনিস কিনে ওরা বাসায় এসেই কাল কের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিলো। জনি বিরিয়ানি রান্না করছে আর চিকেন টা নাজওয়ান মেরিনেট করছে। সাথে কর্ন, সসেজ ও নিয়ে যাবে।
রাতে কাজ বাজ শেষ করে এসেই নুজু কে একটা মেসেজ দেয় নাজওয়ান।
ওইদিকে টোকিও স্টেশন থেকে ডিরেক্ট লিসার সাথে দেখা করতে যায় নুজু।সারাদিন ওর সাথেই ছিল রাতে ডিনার করে বাসায় ডুকার সময়ই নাজওয়ানের মেসেজ পায়।
ফ্রেশ হয়ে কল দিচ্ছি রিপ্লাই দিয়েই নুজু আগে শাওয়ারে চলে যায়।
এসেই নাজওয়ান কে কল দেয়। টুকিটাকি কথা হওয়ার পরই নোজোমি নিজের থেকেই রেখে দিতে চায়। নাজওয়ান আবার ও বুঝতে পারে যে নোজোমি ফোনে কথা বলা টায় একটু ও কমফোর্ট না।
বুঝতে পেরে ফোন রেখে দিয়ে সে ও ঘুমিয়ে পড়ে।কারণ কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।
সকাল ৯ টার দিকে রওনা হয় ওরা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগে ওদের"Wakayama beach"পৌছাতে। যদি ও ডিসেম্বর তাও বিচে বেশ মানুষ ছিল। বিচে এসেই নাহিদ একটা গান ধরে।
" Hai apna dil to awara"
"Na jaane kis pe aayega"
"Haseenon ne bulaya"
"Gale se bhi lagaya"
"Bahut samjhaya"
"Yeh hi na samjha"
এইখানে এসে নাজওয়ান, জনি আর রাহাত ও তাল মিলায়
"Ajab hai deewana
"Naa dar naa thikana"
"Zameen se begana"
"Falak se juda"
"Yeh ik toota hua taara"
"Na jaane kis pe aayega
"Gale se bhi lagaya"
যদি ও ঠান্ডা তবে ওরা হালকা পা টা ভিজিয়ে চার জনে বিচেই ফুদবল খেলে। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মাদুর বিছিয়ে সবাই মিলে দুপুরের লাঞ্চ টা করে নেয়। লাঞ্চ করে মোটামুটি সবাই টার্ড তখন। জনি আর রাহাত তো মাদুরের উপর ই ঘুমায় গেছে। আর নাহিদ গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বলতে পারের অনেক টা কাছাকাছি চলে গেছে। হঠাৎ করে নোজোমির কথা মনে পড়ে নাজওয়ানের।সারাদিন ও মেয়েটার একটা খবর নেয়া হয় নি ভেবেই মেসেজে দেয়। নোজোমি অনলাইন নেই হয়তো ব্যস্ত।
সন্ধ্যায় বার্বিকিও করার সব জিনিস পত্র সেট আপ দিচ্ছিলো নাজওয়ান। জনি আর রাহাত ফোনে মুভি দেখছে। নাজওয়ানের কাছাকাছি আসতেই নাহিদ বলে উঠলো "এই দুইটার মাখামাখি দেইখা মন চাইতাছে ওদের ও বার্বিকিও করে ফেলি।শব্দ করে হেঁসে ফেলে নাজওয়ান।
ওদের পিছনে পরে না থেকে কয়লা টা দে। ওদের না জ্বালাইয়া কয়লা জ্বালা।
হ তুই তো ওগো উকিল বাপ লাগোস।তাই তোর এত দরদ।
বলেই কয়লা ধরাতে থাকে নাহিদ।
হঠাৎ করে নাহিদ নাজওয়ান কে বলে উঠে মামা এইভাবেই থাকিস তোর একটা ছবি নেই। শর্ট প্যান্ট এর সাথে জ্যাকেট পড়ে আগুনের সামনে তোরে তো পুরা সানাম পুড়ির মতো লাগতাছে রে।
নাটক করিস না তাড়াতাড়ি কর।বলেই নাজওয়ান চিকেন গুলি বের করে বার্বিকিউ করতে লাগলো।
খাওয়া দাওয়া শেষ করেই সবাই মিলে রওনা হলো।
গন্তব্য এখন নামবা নিউ ইয়ারের কাউন্ট ডাউন দেখা।
১২ টা বাজতে তখন প্রায় ৫ মিনিট এর মত বাকি নাজওয়ান সবার থেকে একটু দূরে গিয়ে চট জলদি নোজোমি কে কল দিলো।কল দেয়ার সাথে সাথেই উঠালো নোজোমি। নাজওয়ান কে নামবা দেখেই বললো কাউন্ট ডাউন দেখতে আসছেন?
হ্যাঁ আপনি কিভাবে বুঝলেন?
31st night এ সবাই এটাই দেখতে আসে নামবা।
আচ্ছা আচ্ছা তাই নাকি। ভিডিও কল দিচ্ছি ধরেন।
তখন প্রায় ১১:৫৯ নাজওয়ান ভিডিও কল টা অন করতে বলেই ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে দিলো।
আসে পাশে সবাই তখন চিৎকার করে বলছে
10,9,8,7,6,5,4,3,2,1
বিড়বিড় করে নাজওয়ান ও বলে উঠলো।"You are not just my today, you are all of my tomorrows. Let’s make this new year the most romantic chapter of our story.!"
হ্যাপি নিউ ইয়ার চেরি ফুল🌸
নোজোমি ঐ পাশ থেকে কিছুই শুনতে পেলো না। আসে পাশের সাউন্ডের জন্য।
তবে ওই পাশ থেকে নোজোমি ও নাজওয়ান কে বললো হ্যাপি নিউ ইয়ার🌸।
চলবে.....