Adity’s Clipboard

Adity’s Clipboard Chasing dreams and making them real🎀

 #পর্ব ১৪ #চেরি ফুল  #অদিতি ভার্সিটির এডমিশন টেস্টের কিছু ফরমালিটিস এর জন্য কালই নোজোমি কে একবার টোকিও যেতে হবে। সকালের ...
10/07/2025

#পর্ব ১৪
#চেরি ফুল
#অদিতি

ভার্সিটির এডমিশন টেস্টের কিছু ফরমালিটিস এর জন্য কালই নোজোমি কে একবার টোকিও যেতে হবে। সকালের ট্রেনের টিকেট বুক করে নিলো সে।

শাওয়ার থেকে বের হয়েই নোজোমির মেসেজ পেলো। মেসেজ টা পরেই হালকা একটু হেসে বের হয়ে গেলো নাজওয়ান।
কি ব্যাপার ম্যাডাম? সকাল সকাল জরুরী তলব??
তলব!!
মনে হচ্ছে এই কঠিন বাংলা শব্দ টা নোজোমি বুঝতে পারে নি। না মানে আসতে বললেন তাই আর কি।
আসলে একটা কথা জানাতে আসতে বলছি। আমি একটু টোকিও (শহরের নাম)যাচ্ছি আগামী কাল কিছু কাজে। নানুপু এখনো পুরো পুরি সুস্থ্য হয় নি। আপনি একটু এই দিক টা খেয়াল রাখবেন প্লিজ। নানুপু প্রতিদিন ই সকালে হাঁটতে বের হয় ৮ টার দিকে আপনি ও ক্লাস করতে উঠেন যদি একটু ব্যালকনি দিয়ে চেক করতেন কয়েকটা দিন যে নানুপু প্রতিদিন বের হচ্ছে কি না।

ওরে এতো কমপ্লিকেটেড করার তো কিছু নেই রে বাবা।দরকার হলে আমি প্রতিদিন গিয়ে দিদুন কে দেখে আসবো।
দিদুন??
না মানে আপনার নানুপু কে আর কি।
"আরিগাতো"
কিন্তু আপনি কয়দিনের জন্য যাচ্ছেন?? আর ফিরবেন কবে??মন খারাপ করে বলে উঠে নাজওয়ান।
সঠিক বলতে পারছি না।তবে তারাতারি ফিরার চেষ্টা করবো।
আচ্ছা।
নুজুর ও বাসায় কিছু কাজ ছিলো আর নাজওয়ান ও ক্লাস করছিলো অনলাইনে তাই খুব একটা সময় না নিয়ে যে যার মতো বাসায় চলে যায়।

নুজু কয়েকটা দিন থাকবে না ভেবেই নাজওয়ানের কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করতে থাকে। এই এক মাসে মেয়ে টা তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
নুজু কে তো জিজ্ঞেশ করতেই ভুলে গেছে যে কাল কখন যাবে তাহলে নাজওয়ান তাঁকে ড্রপ করতে যেতে পারতো।ভেবেই নোজোমি কে একটা ম্যাসেজ দেয়।

"কাল কখন যাচ্ছেন?? If You Don't Mind আমি কাল আপনাকে ড্রপ করে আসি??ট্রেনে যাচ্ছেন নাকি এয়ারে?

সাথেই সাথেই রিপ্লাই দেয় নোজোমি "আমার ডোমেসটিক এয়ারে সমস্যা হয় তাই ট্রেনেই যাবো।
আপনার কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না আমি চলে যেতে পারবো।
আমি কি বলছি আমার কষ্ট হবে?আমি নিজ থেকেই যেতে চাচ্ছি।

আচ্ছা।
নোজোমি কে ট্রেন স্টেশন ছাড়তে আসছে নাজওয়ান। তেমন কিছু নেয় নি জাস্ট ব্যাক প্যাক টা নিয়েই চলে আসছে। নাজওয়ানের কেমন যেনো একটা শূন্যতা কাজ করতে লাগলো।এই পর্যন্ত প্রায় অনেক বার ই জিজ্ঞেষ করে ফেলছে"কবে ফিরছেন"।
প্রতিবারের ই নোজোমির এক ই উত্তর "চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি ফেরার"।

ট্রেন ছাড়ার আর ৫ মিনিট বাকি নোজোমি ও বিদায় নিয়ে ভিতরে চলে গেছে। নাজওয়ান তখনও বাহিরে দাঁড়ায় আছে। হঠাৎ করে নোজোমির কল পেয়ে সাথে সাথে উঠায়।
মন খারাপ করে আবার ও বলে কবে ফিরছেন??

চার দিনের মধ্যেই চলে আসবো। নানুপুর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন! প্লিজ।

রাখবো? আর আমার??
আপনার?
না কিছু না ট্রেন ছাড়ছে?
হুম। ফোন রেখে দিতে হবে পাশে একটা "ওবাচান"(বয়স্ক মহিলা) বসছে। উনি অলরেডি বিরক্ত হওয়া শুরু করে দিসে।

উফফ আচ্ছা বলেই কল রেখে দেয় নাজওয়ান।
নানুপু কে কল দিয়ে জানায় দিয়েই ফোন ব্যাগে রেখে সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।কারণ কাল রাতে ও নুজুর ঘুম হয় নি।

একটু আগে ও এই জায়গা টা নোজোমির সাথে দাঁড়িয়ে ছিলো আর এখন মেয়ে টা প্রায় কয়েক কিলোমিটারদূরে তাঁর থেকে।মন খারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরে আসে নাজওয়ান।

নোজোমি কে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে না তাঁর মানে মেয়ে টা ঘুমাচ্ছে হয়তো।ভেবেই আর মেসেজ দেয় না নাজওয়ান।

ফুরফুরা মন নিয়ে নাজওয়ানের রুমে ডুকে নাহিদ।কি মামা সকাল সকাল কই গেছিলি?? আচ্ছা শুন না সামনেই তো পার্ট টাইম জব শুরু হয়ে যাবে আমাদের।আর এক মাস হয়ে গেলো কোথাও একটু ঘুরতে গেলাম না। চল না কোথাও ঘুরে আসি আমরা সবাই মিলে।এক দমে কথা গুলি বলে ধপ করে নাজওয়ানের খাটে বসে পড়ে নাহিদ।

এই ছেলের এক সমস্যা কথা বলতে নিলে আর থামার নাম নেই। দাড়ি কমা ছাড়া নন স্টপ সব কথা বলেই থামবে।

কোথায় গেছিলো সেই উত্তর না দিয়ে নাজওয়ান বলে উঠলো-কোথায় যেতে চাস? জায়গা বের কর ঘুরে আসি।ওদের ও জিজ্ঞেশ কর কই যেতে চায়।

জনি আর রাহাত কে নিয়ে চাপ নেই মামা ওদের যদি পাহাড়ের গুহায় নিয়ে ও ছেড়ে দেই ঐখানেই ওরা জামাই বৌ জামাই বৌ খেলা শুরু করে দিবো।কিন্তু সমস্যা আমার রূম মেট সিয়াম কে নিয়ে এই শালা একটা জামেলা বাঁধাবেই সেটা মাস্ট।
তাহলে বাদ দে। ও কে নিয়ে গেলে এমনেই আমার মেজাস খারাপ থাকবে।
এইভাবে বাদ তো দেয়া যায় না মামা। আফতার অল একসাথে থাকি।আচ্ছা দাড়া ও রুমেই আছে আমি জিগ্গেস করে আসি।বলেই নাহিদ সিয়াম কে জিজ্ঞেস করতে যায়।

সিয়াম আমরা কোথাও একটা ঘুড়তে যেতে চাচ্ছি।
তো যা। গা ছাড়া ভাব করে সিয়াম উত্তর দেয়।
তুই যাবি না?নাহিদ ব্রু উঠিয়ে আবার ও প্রশ্ন করে।
কই যাবি তোরা? এই আসে পাসের শপিং মলে না হলে বড় জোর ওই নামবা(একটা জায়গার নাম)। কথা গুলি অনেক তাচ্ছিল্য করে বলছিলো সিয়াম।

সিয়ামের কথা শুনেই রাগে ফুঁসতে থাকে নাহিদ।আর আসার সময় বলে আসে হ্যাঁ যেই জায়গায় ই যাই না কেনো নম্র ভদ্র জায়গায় যাবো।তোর মতো নাইট ক্লাব আর বারে গিয়ে পড়ে থাকবো না।

নাজওয়ানের রুমে গিয়েই খাটের উপর ধপ করে বসে নাহিদ।
মনে করে কি ওই শালা নিজে রে??
ল্যাপটপ এর দিকে তাঁকিয়ে ই নাহিদের কথা গুলি শুনতেছিল নাজওয়ান। সে এতক্ষণ রুমে বসে সিয়ামের খোচা দেয়া কথা গুলি সব শুনছে।

ল্যাপটপের দিকে তাঁকিয়েই বলে ওই বাস্টার টা কে কেন বলতে গেলি? ওরে যদি আমাদের সাথে কোথাও নেয়ার প্ল্যান করিস তাহলে সেইখান থেকে আমাকে বাদ দিয়ে নিস।কারণ ক্লাসের ও একটা ব্যাপার আছে। নাজওয়ান যার তাঁর সাথে টুর শেয়ার করে না।

আরেহ না ওরে আর কে অ্যাড করবে কিন্তু মামা আমরা চার জন ই যাবো।তুই বেস্ট একটা প্লেস বের করবি।নাহিদের কথা গুলি নাজওয়ানের কাছে বাচ্চা দের আবদারের মতো মনে হচ্ছিলো।

হালকা করে হেসে উত্তর দিলো আচ্ছা। আমি দেখতেছি কোথায় যাওয়া যায়।

নাজওয়ান অনেক খুঁজে কয়েকটা প্লেস ঠিক করে। সব কিছু ঠিক করে রাতে নিজের রুমে জনি রাহাত আর নাহিদ কে ডাকে।

জনি এসেই বলে মামা খালি মুখে আড্ডা ভালো লাগবো না। দাড়া কিছু নিয়ে আসি বলেই নিজের রুমে গিয়ে দেশ থেকে আনা ঝুড়া পিঠা নিয়ে বসে।

শোন আমরা কাল যাচ্ছি ।যেহুতু ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ সারাদিন আমরা "Wakayama" একটা বিচ এ ঘুরবো ।আর রাতে এসে নামবা তে কাউন্ট ডাউন দেখবো। ডান??

সবাই এক সাথে বলে উঠলো ডান।

একটু থেমে নাজওয়ান আরো বলে উঠলো ঐখানে সন্ধার দিকে বার্বিকিউ করা যায়।সব কিছু রেন্ট এ ওরাই দেয়। জাস্ট বাসার থেকে চিকেন টা মেরিনেট করে নিয়ে যাবো আমরা। আর দুপুরের জন্য বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে যাবো। বার্বিকিও এর জন্য টুকিটাকি জিনিস কেনা লাগবে। সন্ধ্যায় গিয়ে নিয়ে আসবো।

ওকে মামা।মজা হবে অনেক।

এইবার যে যার রুমে যা আমি একটা ন্যাপ নিবো। বলেই শুয়ে পড়ে নাজওয়ান।

ঠিক আছে ঘুমা বলেই নাহিদ জনি আর রাহাত চলে গেলো যে যার রুমে।
সন্ধ্যায় টুকিটাকি জিনিস কিনে ওরা বাসায় এসেই কাল কের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিলো। জনি বিরিয়ানি রান্না করছে আর চিকেন টা নাজওয়ান মেরিনেট করছে। সাথে কর্ন, সসেজ ও নিয়ে যাবে।

রাতে কাজ বাজ শেষ করে এসেই নুজু কে একটা মেসেজ দেয় নাজওয়ান।
ওইদিকে টোকিও স্টেশন থেকে ডিরেক্ট লিসার সাথে দেখা করতে যায় নুজু।সারাদিন ওর সাথেই ছিল রাতে ডিনার করে বাসায় ডুকার সময়ই নাজওয়ানের মেসেজ পায়।

ফ্রেশ হয়ে কল দিচ্ছি রিপ্লাই দিয়েই নুজু আগে শাওয়ারে চলে যায়।
এসেই নাজওয়ান কে কল দেয়। টুকিটাকি কথা হওয়ার পরই নোজোমি নিজের থেকেই রেখে দিতে চায়। নাজওয়ান আবার ও বুঝতে পারে যে নোজোমি ফোনে কথা বলা টায় একটু ও কমফোর্ট না।
বুঝতে পেরে ফোন রেখে দিয়ে সে ও ঘুমিয়ে পড়ে।কারণ কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।

সকাল ৯ টার দিকে রওনা হয় ওরা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগে ওদের"Wakayama beach"পৌছাতে। যদি ও ডিসেম্বর তাও বিচে বেশ মানুষ ছিল। বিচে এসেই নাহিদ একটা গান ধরে।

" Hai apna dil to awara"
"Na jaane kis pe aayega"
"Haseenon ne bulaya"
"Gale se bhi lagaya"
"Bahut samjhaya"
"Yeh hi na samjha"
এইখানে এসে নাজওয়ান, জনি আর রাহাত ও তাল মিলায়
"Ajab hai deewana
"Naa dar naa thikana"
"Zameen se begana"
"Falak se juda"
"Yeh ik toota hua taara"
"Na jaane kis pe aayega
"Gale se bhi lagaya"

যদি ও ঠান্ডা তবে ওরা হালকা পা টা ভিজিয়ে চার জনে বিচেই ফুদবল খেলে। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মাদুর বিছিয়ে সবাই মিলে দুপুরের লাঞ্চ টা করে নেয়। লাঞ্চ করে মোটামুটি সবাই টার্ড তখন। জনি আর রাহাত তো মাদুরের উপর ই ঘুমায় গেছে। আর নাহিদ গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে বলতে পারের অনেক টা কাছাকাছি চলে গেছে। হঠাৎ করে নোজোমির কথা মনে পড়ে নাজওয়ানের।সারাদিন ও মেয়েটার একটা খবর নেয়া হয় নি ভেবেই মেসেজে দেয়। নোজোমি অনলাইন নেই হয়তো ব্যস্ত।

সন্ধ্যায় বার্বিকিও করার সব জিনিস পত্র সেট আপ দিচ্ছিলো নাজওয়ান। জনি আর রাহাত ফোনে মুভি দেখছে। নাজওয়ানের কাছাকাছি আসতেই নাহিদ বলে উঠলো "এই দুইটার মাখামাখি দেইখা মন চাইতাছে ওদের ও বার্বিকিও করে ফেলি।শব্দ করে হেঁসে ফেলে নাজওয়ান।
ওদের পিছনে পরে না থেকে কয়লা টা দে। ওদের না জ্বালাইয়া কয়লা জ্বালা।
হ তুই তো ওগো উকিল বাপ লাগোস।তাই তোর এত দরদ।
বলেই কয়লা ধরাতে থাকে নাহিদ।

হঠাৎ করে নাহিদ নাজওয়ান কে বলে উঠে মামা এইভাবেই থাকিস তোর একটা ছবি নেই। শর্ট প্যান্ট এর সাথে জ্যাকেট পড়ে আগুনের সামনে তোরে তো পুরা সানাম পুড়ির মতো লাগতাছে রে।
নাটক করিস না তাড়াতাড়ি কর।বলেই নাজওয়ান চিকেন গুলি বের করে বার্বিকিউ করতে লাগলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ করেই সবাই মিলে রওনা হলো।
গন্তব্য এখন নামবা নিউ ইয়ারের কাউন্ট ডাউন দেখা।

১২ টা বাজতে তখন প্রায় ৫ মিনিট এর মত বাকি নাজওয়ান সবার থেকে একটু দূরে গিয়ে চট জলদি নোজোমি কে কল দিলো।কল দেয়ার সাথে সাথেই উঠালো নোজোমি। নাজওয়ান কে নামবা দেখেই বললো কাউন্ট ডাউন দেখতে আসছেন?
হ্যাঁ আপনি কিভাবে বুঝলেন?
31st night এ সবাই এটাই দেখতে আসে নামবা।
আচ্ছা আচ্ছা তাই নাকি। ভিডিও কল দিচ্ছি ধরেন।
তখন প্রায় ১১:৫৯ নাজওয়ান ভিডিও কল টা অন করতে বলেই ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে দিলো।

আসে পাশে সবাই তখন চিৎকার করে বলছে
10,9,8,7,6,5,4,3,2,1

বিড়বিড় করে নাজওয়ান ও বলে উঠলো।"You are not just my today, you are all of my tomorrows. Let’s make this new year the most romantic chapter of our story.!"
হ্যাপি নিউ ইয়ার চেরি ফুল🌸

নোজোমি ঐ পাশ থেকে কিছুই শুনতে পেলো না। আসে পাশের সাউন্ডের জন্য।

তবে ওই পাশ থেকে নোজোমি ও নাজওয়ান কে বললো হ্যাপি নিউ ইয়ার🌸।

চলবে.....

জানেন কি??প্রায় ৫০%মানুষ একা একা কথা বলে এবং ঐসব ঘটনা কল্পনা করতে ভালোবাসে যা কখনোই সম্ভব না আর এটা কে"Maladaptive Dayd...
09/07/2025

জানেন কি??
প্রায় ৫০%মানুষ একা একা কথা বলে এবং ঐসব ঘটনা কল্পনা করতে ভালোবাসে যা কখনোই সম্ভব না আর এটা কে"Maladaptive Daydreaming"বলে। এই রোগ মনে হচ্ছে আমার ও আছে।

অনেকেই সেইসব ঘটনা গুছিয়ে লেখে আর আমরা সেইগুলো কেই উপন্যাস বলি।

#চেরি ফুল গল্প টা আমার কল্পনা মাত্র🌸

 #পর্ব ১৩ #চেরি ফুল  #অদিতি নাজওয়ানের এমন কাজে হতবাক হয়ে যায় নুজু। কিছু বুঝে উঠার আগেই হাতে প্রচণ্ড গরম অনুভব করে।এ ক...
09/07/2025

#পর্ব ১৩
#চেরি ফুল
#অদিতি

নাজওয়ানের এমন কাজে হতবাক হয়ে যায় নুজু। কিছু বুঝে উঠার আগেই হাতে প্রচণ্ড গরম অনুভব করে।

এ কি আপনার গা তো পুড়ে যাচ্ছে। আপনার জ্বর হয়েছে নাকি? নাজওয়ানের মুষ্টি থেকে নিজের একটা হাত ছাড়িয়ে নাজওয়ানের কপালে হাত রাখতেই চমকায় উঠে নোজোমি।
অনেক জ্বর আপনার গায়ে। কবে থেকে?

শুধু গা পুড়ছে না চেরি ফুল মন ও পুড়ছে। বিড়বিড় করে বলতে থাকে নাজওয়ান। এইবার নোজোমির পায়ের উপর মাথা দিয়েই বসে পড়ে নাজওয়ান।

এইদিকে নোজোমি নন স্টপ বলেই যাচ্ছে আপনার এই ঠাণ্ডার মধ্যে বাহিরে থাকা ঠিক হচ্ছে না। আপনি বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট করুন।মেডিসিন খেয়েছেন??

মাথা উঠিয়ে ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে নোজোমি কে ইশারা করে নাজওয়ান বলে উঠলো।"হুশ চলে যাবো আমি একটু থাকি এইভাবে"?

অগত্যা নোজোমি আর কথা বাড়ায় না ঐভাবেই বসে থাকে। সে ও প্রায়ই তাঁর মাম্মার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে আর মাম্মা তখন তাঁর চুলে বিলি কেটে দেয়। নোজোমির ও তখন ইচ্ছে করছিলো নাজওয়ানের চুলে বিলি কেটে দেয়ার। কিন্তু কেমন একটা সংকোচ বোধ করছিলো।

সব সংকোচ ঠেলে ঠুলে আলতো করে হাত ডুবিয়ে দেয় নাজওয়ানের চুলের মধ্যে বেশ সিল্কি নাজওয়ানের চুল গুলি। কখনো বিলি কাটতে থাকে আবার কখনো চুল গুলি টেনে দিতে থাকে।

ছোট্ট নোজোমির হাতের স্পর্শ পেয়ে হালকা করে হেসে উঠে নাজওয়ান"কিভাবে বুঝলে চেরি ফুল আমার এইটা প্রয়োজন ছিলো এখন?? যখন আমি অনেক টেনশনে থাকি তখন কেউ মাথায় হাত বুলালে অনেকটা মানুষিক শান্তি পাই আমি"। ভাবতে ভাবতে ঘোর লেগে যাচ্ছিলো নাজওয়ানের। আরো শক্ত করে ধরে বসে সে নোজোমি কে।
ঠিক এইভাবে কতক্ষণ কেটে যায় কেউই বলতে পারে না। কিন্তু হঠাৎ করেই নোজোমি কাঁপতে থাকে কারণ রাত বাড়ার সাথে সাথে ঠাণ্ডা টাও বাড়ছিলো তখন।

নোজোমির ঠান্ডা লাগছে বুঝতে পেরেই ধপ করে উঠে দাঁড়ায় নাজওয়ান। ঘোর লাগা কন্ঠে নোজোমি কে জিগ্যেস করে "ঠান্ডা লাগছে"?
একটু!!
তাহলে বলেন নি কেন? বিলি কেটে এইখানে ই ঘুম পাড়ানোর ইচ্ছা নাকি?
ব্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় নোজোমি।
নিজের গায়ের জ্যাকেট টা খুলে নোজোমি কে পড়ায় দেয় নাজওয়ান।আজ কে আর পড়তে বলে নি সোজা নিজেই পরিয়ে দিয়েছে দেখে নোজোমি কিছু টা অবাক হয়। আর বলতে থাকে আমার লাগবে না আপনি পড়ে নেন আমি তো বাসায় ই চলে যাবো এখন।
পরে থাকেন এখন আগে কফি খাবো তারপর ছাড়বো আপনাকে। চলুন কফি খেয়ে আসি।

ঠিক আছে।কিন্তু আপনার ঠান্ডা লাগছে না?

লাগছে তো। বলেই নোজোমির তাকায় নাজওয়ান।

তাহলে আমাকে ডাবল জ্যাকেট পরিয়ে দিলেন কেন? আমার তো পড়াই ছিল একটা।

এইবার নুজুর দিকে কিছু টা ঝুঁকে নাজওয়ান বলে উঠে"শীতে কাপছিলেন আপনি তাই দিয়েছি", আর আমার শীত একটু কম ই লাগে। চলুন এইবার।

কফি খেয়ে নোজোমি কে বাসায় দিয়ে নিজেও বাসার দিকে যাওয়ার সময় পিছন থেকে নোজোমি ডেকে উঠে।

জ্যাকেট টা নিয়ে যান আমি তো এখন বাসায় ই ডুকে যাচ্ছি।

আচ্ছা।বলেই জ্যাকেট টা নিয়ে বাড়িতে চলে যায় নাজওয়ান।

ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। নোজোমির হাতের স্পর্শ গুলি মনে পড়তেই আনমনেই হেঁসে উঠে নাজওয়ান।

এইদিকে নাজওয়ানের এমন কাজে নোজোমি কিছু টা অবাক হলে ও তাঁর অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। নাজওয়ানের জ্যাকেট পড়ায় তাঁর গায়ে তখনও সেই পরিচিত স্মেল টা পায় যা প্রথম দিন নাজওয়ানওয়ে জ্যাকেট পড়ে পেয়েছিল। নাজওয়ানের জ্যাকেটের স্মেল তাঁর জ্যাকেটে লেপ্টে আছে ভেবেই অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে নুজুর।

কানাডা তে এসেছে আজ প্রায় এক মাস হয়ে যাচ্ছে। কানাডা তে থাকলে ও তার মন পরে আছে মেয়ের কাছেই। তার উপর আবার মা অসুস্থ্য। ছোটো মেয়ে টা আমার একা একা কি করছে কিভাবে করছে কে জানে।ভাবতেই ভাবতেই চচিন্তায় পড়ে যায় লিমা।

আরমুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠেই আদনান ভাইয়ের কল পায় নাজওয়ান। সাথে সাথেই মনে পড়ে যে ওইদিন আপু কি একটা বলতে চাচ্ছিলো।এর মধ্যে এত কিছু হয়ে গেছে যে আপু কে কল ব্যাক করার কথা মাথা থেকেই বের হয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতেই আপুর ফোনে কল দিলো। দুবার বাজার পর ও নিশি কল উঠালো না এক প্রকার রাগ থেকেই।

আদনান কল ব্যাক করলো। নাজওয়ান উঠাতেই বলে উঠলো কি শালা বাবু? ব্যস্ত নাকি??

না না ভাইয়া মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।

তোমার আপু তো সেই রেগে আছে ওইদিন তোমাকে কল দিয়ে কি যেনো বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তুমি কল রেখে দিলা আর ব্যাক ও করলা না। আমার বউয়ের এই অবস্থায় কি তোমার এইগুলা করা উচিৎ হচ্ছে?মামা হিসেবে কি কোনো দায়িত্ব নেই তোমার??

হতবাক হয়ে যায় নাজওয়ান।মামা মানে?? কি বলতেছেন ভাইয়া??আপু??
হ্যাঁ তোমার আপু প্রেগন্যান্ট।

খুশিতে লাফিয়ে উঠে নাজওয়ান। ভাইয়া আপু কি কাছেই আছে??একটু ফোন টা আপুর কাছে দিন না।

এই নাও তোমার ভাই খুশিতে লাফাচ্ছে বলেই নিশীর কাছে ফোন টা দিতে চায় আদনান।

কথা বলবো না আমি ওর সাথে হারামী টা বিমানে উঠেই বেঈমান হয়ে গেছে।

ওই পাশ থেকে বোনের অভিমান বুঝতে পেরে নাজওয়ান আদনান কে ফোন লাউডে দিতে বলে।

কংগ্রেস আপু। এই দুই টা দিন আমি যে কিসের মধ্যে ছিলাম সব কিছু তোমাকে খুলে বললে তুমি আর রাগ করে থাকবে না।

কি এমন হইছে শুনি?? যে দুই দিনে ও আমার কল টা ব্যাক করতে পারিস নি?

কোনো রকম ভনিতা না করেই সব টা খুলে বললো নাজওয়ান। সব শেষে বললো জানিস অসুস্থ্য ওই মহিলা টা কে???

কে???নিশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

আছিয়া দিদুন।

মানে???
হ্যাঁ দাদুর বোন। যাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে আমি সব ছেড়ে ছুঁড়ে জাপান আসছি।

নিশির হাত পা কাপছে তখনো।এতো তাড়াতাড়ি তাঁর ভাই নিজের গন্তব্যে পৌছায় যাবে সে ভাবতে ও পারে নি।
সত্যি বলছিস নাজওয়ান।
হ্যাঁ আপু সত্যি।আর জানিস আছিয়া দিদুন একদম দাদুর কার্বন কপি। তাঁর কথা বলা, বসার স্টাইল সব কিছুর মধ্যে আমি দাদুর ফিমেল ভার্সন খুঁজে পাইছি। দুই টা দিন শুধু ঘোরের মধ্যেই ছিলাম আমি।

এইবার বলো ওইদিন কি এই গুড নিউজ দেয়ার জন্যই কল দিয়েছিলা? সরি আপু আমি তোমার এক্সাইটমেন্ট টা নষ্ট করে দিসি। রিয়েলী সরি।

নাহ্ গুড নিউজ তো কাল কনফার্ম হইছে।আমি তোকে অন্য কিছু জানাতে চাই নাজওয়ান।

সিরিয়াস কিছু?? তারাতারি বলো প্যানিক হচ্ছে।

আমার সাথে লিমা ফুপির কানাডা তে দেখা হইছে কিছুদিন আগে।উনি উনার হাসবেন্ড নিয়ে বিজনেস ট্রিপে আসছিলো। একটা গেট টুগেদারে দেখা হয় আমাদের। হয়তো দুজন দুজন কেই চিনতে পারছি।আমি যেহেতু তার আগের অনেক ছবি ই দেখছিলাম তাই তাঁকে চিনতে আমার কোনো সমস্যা হয় নি।

কি বলছো আপু??লিমা ফুপি? মানে ওই হিটলার মহিলা টা?? যার জন্য এতো গুলি বছর ধরে ২ টা পরিবার বিচ্ছিন্ন??

হুম সেই লিমা সুলতানা।
তাঁর মানে নোজোমির মায়ের সাথেই তোমার দেখা হয়েছে?
নোজোমি কে?

হিটলার ফুপির একমাত্র মেয়ে।
তাই নাকি ।

What a Coincidence.এতো তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে তাঁদের দেখা হয়ে যাবে আমি ভাবতে ও পারি নি। এখন কি করবি ভাবছিস? দিদুন কে পরিচয় দিয়েছিস নিজের?

না আপু আপাদত উনাকে কিছু জানাবো না। হিসাব তো আগে বাবার এক্স এর সাথে হবে।

আহা।বাজে কথা বলিস না তো নাজওয়ান। উনি মোটে ও বাবার এক্স ছিলেন না। বাবা উনাকে কোনোদিন কমিটমেন্ট ই দেয় নি। হ্যাঁ বাবার দোষ ছিলো যে বাবা উনাকে কিছু খুলে ও বলে নি আর শেষ সময়ে এসে বোকামি করে ফেলছে কাও কে কিছু না বলে মা কে বিয়ে করে। তবে লিমা ফুপির এক তরফা ভালোবাসা ছিল বাবার উপর সেটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে প্রতিশোধের আগুন কেউ এতো বছর জ্বালিয়ে রাখে??
প্রায় ২ যুগের ও বেশি হয়ে গেলো ভাবতে পারছিস?

উনার এই প্রতিশোধ প্রতিশোধ গেম শেষ আপু।এইবার আমি খেলবো বলেই বাঁকা হাসে নাজওয়ান।

তোর আর কি অবস্থা বল।
আর কি বিজনেস টা শুরু করতেই এইখানে আসার পেরা চলে আসলো।সামনে ওপেনিং অথচ আমি ই নেই সেখানে। যদি ও তনয় সব সামলে নিবে তারপর ও দেখি কি করা যায়।
তুমি তোমার খেয়াল রেখো। সাবধানে থেকো। বলেই কল রেখে দেয় নাজওয়ান।কেন যেনো অনেকটা হালকা লাগছে । আবার অনেক অনেক চিন্তা এসে ও ভর করছে কিভাবে কি করবে।

এর মধ্যে বাহির থেকে নাহিদ,জনির আর রাহাতের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসতেছে।

বিরক্তি নিয়ে বাহিরে বের হয়েই দেখে নাহিদ চিল্লাচ্ছে।

শুঁটকি কেন খেতে হবে তোদের?এইটা জাপান। এইখানে এমন গন্ধ যুক্ত খাবার রান্না করলে পুলিশ আসবে জানিস না? এজেন্সি থেকে কি বলছে মনে নেই। বলেই নাহিদ রাগে ফুঁসতে থাকে।

আরেহ রাখ তোর এজেন্সি। ওই দালাল শালা গো কথা একদম বলবি না। শুঁটকি কি মানুষ খায় না?? পুলিশ আসার কি আছে? জনি একটু খাইতে চাইছে দেখেই তো রান্না করতাছি। তোর গন্ধ লাগে তুই খাইস না। তাইলেই তো হয়। এমন চিৎকার কেন করতাছস?পুলিশ শুটকির জন্য না আসলে ও তোর চিল্লা চিল্লির জন্য ঠিক ই আসবে দেখিস বলেই খুন্তি নিয়ে হাঁপাতে থাকে রাহাত।

এদের কথা বার্তা শুনে নাজওয়ানের মাথা ধরে গেছে।
এই চুপ থাকবি তোরা? এইটা বাড়ি নাকি মাছের বাজার। আর রাহাত রান্না করতাছিস ভালো কথা ওই উপরের ছোটো ফ্যান টা কি চোখে পড়ে না তোর?? পুরা রুম ধোঁয়ায় ভরে গেছে কাশতে কাশতে বলতে থাকে নাজওয়ান।

একটু থেমেই নাহিদ কে বলতে থাকে আর তোর এমন অবস্থা কেন কথায় কথায় চিল্লাস। হইছে টা কি।শুঁটকি তো আমরা সবাই খাই। রান্না কইরা রুম ফ্রেশনার দিয়ে দিলেই হবে। তুই নিজে ও তো শুঁটকি খাস লাস্ট টাইম কক্স বাজার থেকে বস্তা ভরে শুঁটকি নিয়ে গেছিস তাহলে এখন এমন গন্ধ গন্ধ করে চিল্লাছিস কেন??

দেখ নাজওয়ান এই দুইটার উকিল বাপ সাজতে আসবি না একদম। ওদের বিয়ের সময় সাক্ষী ছিলি তুই?

আস্তাগফিরুল্লাহ বলে নাহিদের মুখ চেপে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যেতে থাকে।কারণ নাজওয়ান বুঝে গেছে নাহিদের আসল সমস্যা আসলে কোথায়। মাথা গরম হয়ে গেলে নাহিদ এমন উলটা পালটা কথা বলতে থাকে।

এইদিকে জনি কিছু একটা বলতে যাবে নাজওয়ান ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ থাকতে বলে।
রুম ফ্রেশনার মার তারাতারি।
নাই তো দোস্ত।কিনে আনি? কাচুমাচু করে বলতে থাকে রাহাত।
আমার রুমে আছে বলেই রাগে কটমট করতে করতে নাহিদ কে নিয়ে বের হয়ে যায় নাজওয়ান।

বাহিরে এসে একের পর এক সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে নাহিদ।

তোর এই ছাই পাশ খাওয়া শেষ হলে বলবি কথা আছে বলেই কিছু টা দূরে গিয়ে দাঁড়ায় নাজওয়ান।এই ছাই পাশ সে নিজে ও গিলে না।আর গন্ধ ও নিতে পারে না।

লাস্টের সিগারেট টা অর্ধেক খেয়েই পায়ে পিষে ফেলে নাহিদ। একটা গাম মুখে দিয়ে নাজওয়ানের সামনে যায়।

কি হইছে বল। ফোনের দিকে তাঁকিয়ে নাহিদ কে প্রশ্ন করে নাজওয়ান।
তন্নী আমাকে ব্লক করছে মামা সব কিছু থেকে। নাহিদের মূখ থেকে মনে হচ্ছে এখন ই কেঁদে ফেলবে ছেলে টা।

হায়রে বা*লের প্রেম। ফোনের দিকে তাঁকিয়ে ই বলে নাজওয়ান।

একটু থেমেই আবার নাহিদ বলতে থাকে। আসার কিছুদিন আগ থেকে তন্নী আমাকে সহ্য ই করতে পারে না। কিছু কইলেই কয় তুমি তো আমার রাইখা গেছো গা আমার খবর নিয়ে কি করবা?তারপর আরো কি কয় জানোস? আমি নাকি পাতায়ের মেয়ে দের দিয়ে বডি ম্যাসাজ করাইতাছি। জাপানে আমি পাতায়ের মেয়ে পামু কই বুঝা আমারে। ভাত খাইতে ভাত পাই না বডি ম্যাসাজ করামু কেমনে?

নাহিদের কথা শুনে জোড়ে হেঁসে ফেলে নাজওয়ান।

হাসিস না শালা আরো শুন কি কয়,যে ওয় নাকি বিয়া কইরা জাপান ঘুরতে আইবো জামাই লইয়া পরে আমারে দেখাইয়া দেখাইয়া আমার সামনেই জামাই লইয়া ঘুরবো। সাহস কত শালির চিন্তা কর। ওর হিটলার ভাইয়ের রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করতে গিয়া বাপের জমি বেইচা জাপান আইছি।যেনো ওরে ভবিষ্যতে ভালো রাখতে পারি।আর এখন আসার পরে ওয় ই আমার চিনে না।আমার লগে যা তা ব্যবহার করতাছে মামা।

আর তাই তুই রাহাত আর জনির সাথে রাগ ঝারবি? ওরা আমাদের কত টা হেল্প করতাছে জানিস?রান্না বান্না বাসার কাজ গুলি বেশিরভাগ ওরাই করে। গ্রাম থেকে আসছে দেখে অনেক কাজ ই ওদের জানা। ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা কি ঠিক?? তন্নীর রাগ ওদের উপর কেন দেখালি??

আমার মাথা ঠিক আছিলো না মামা।
তন্বীর ফোন নাম্বার দে WhatsApp এ কল দিবো। দেখি কি বলে।
নাম্বার সেভ করে কল দিতেই কয়েক বার রিং হওয়ার পর তন্নী কল উঠালো।

কিছু না শুনেই তন্বী বলতে লাগলো,তুমি আবার কল দিছো নাহিদ? কার নাম্বার এইটা ওহ এখন আবার দুই টা সিম ও ইউজ করো?? দুই সিম দিয়ে কি চার টা গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো? রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কথা গুলি বলতে থাকে তন্নী।

নতুন WhatsApp হওয়াতে ছবি অ্যাড করতে ও ভুলে গেছে নাজওয়ান। তাই তন্নী নাহিদ কে ভেবে এতক্ষণ যা নয় তাই বলে ফেলছে নাজওয়ান কে।

"আসসালামু ওয়ালাইকুম"শান্ত কন্ঠে নাজওয়ান সালাম দিতেই চুপ হয়ে যায় তন্নী।

"ওয়ালাইকুম আসসালাম"কে বলছেন?

তো সেটা শুনে তো গালা গালি করবে? আমি তোমার ভাই আর তোমার হবু জামাই দুই জনের ই বন্ধু নাজওয়ান। চিনতে পারছো?যেহেতু ছোট বেলার বন্ধু তনয়ের ছোট বোন তন্নী তাই তুমি বলেই সম্বোধন করলো নাজওয়ান।

হকচকিয়ে যায় তন্নী। একটু ঢোক গিলেই আবার বলতে থাকে সরি ভাইয়া আমি আসলে নাহিদ কে ভেবে নিসিলাম।

কেন? নাহিদ কে কেন ভাববে? মানে তুমি ওকে এতো কিছু বলার পর ও কেন কল দিবে ও তোমাকে? এটা কি ভেবেই নিয়েছো যে যা নয় তাই তুমি ওঁকে বলবে আর বার বার জান জান বলে ও সরি বলবে কিছু না করে ও?

এইবার একটু অনুশোচনা হয় তন্নীর ঠিক ই তো একমাসে সে একবার ও ভালো ব্যবহার করে নি নাহিদের সাথে বরং ছেলে টা তাকে বার বার কল দিয়ে গেছে।

একটু থেমেই নাজওয়ান আবার বলতে থাকে। তোমাদের একটা বেটার ক্যারিয়ারের জন্য নাহিদ নিজে একা এসে এইখানে ফাইট করতেছে তোমার মানুষিক সাপোর্ট এখন সব থেকে বেশি দরকার ওর আর তুমি ই ওঁকে চটায় দিচ্ছ কেন বার বার?

শুনো মেয়ে কাও কেই "Taken For granted" হিসেবে নেয়া ঠিক না। আজ কে নাহিদ তোমাকে বার বার কল দিচ্ছে আর তুমি ইগনোর করছো, তারপর ও আবার কল দিচ্ছে কিন্তু এক সময় কিন্তু ওর তোমার এই ইগনরের প্রতি বিরক্ত ধরে যাবে ওর আর তখন কিন্তু ও আর তোমাকে কল দিবে না। তখন তোমার মনে হবে নাহিদ চেঞ্জড আর ততদিনে কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাবে।

এইবার তন্নীর বুক কেঁপে উঠে ঠিক ই তো বলছে নাজওয়ান ভাই। নাহিদ যদি সত্যি ই বদলায় যায় তাঁর ইগনোর নিতে না পেরে তখন কি হবে??

নাহিদের তোমার সাপোর্ট এইখানে সব চেয়ে বেশি দরকার।ওঁকে ভালো রাখার চেষ্টা করো। একটু আগে রুম মেট দের সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলো।এক কথায় তোমার রাগ ওদের উপর দেখাচ্ছিল।কিন্তু তাও তোমাকে কিছু বলে নি এইবার বুঝো কতটা ভালোবাসে ও তোমাকে। আসা করি নিজের ভুল গুলি বুঝতে পারছো আর সব কিছু ঠিক করে ফেলবে খুব শীঘ্রই।

নিজের ভুল গুলি বুঝতে পেরে খুব লজ্জা পাচ্ছিলো তন্বী।

আর হ্যাঁ যদি এই ঝামেলা না শেষ হয়। তাহলে হয় নাহিদ কে আমি "পাতায়া"পাঠাবো বডি ম্যাসাজ করতে আর না হলে "পাতায়া" থেকে মেয়ে এনে ধরে বিয়ে দিয়ে দিবো।তাহলে সারাদিন ম্যাসাজ নিতে পারবে বুঝলে?

এইবার মনে হয় কেঁদেই ফেলবে তন্বী নাহিদের বিয়ের কথা শুনে।

আর হ্যাঁ এখনো যদি রাগ কিছু টা থেকে থাকে তাহলে তোমাকে একটা কাজ দিচ্ছি "তনয় মানে তোমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের রুমে যাবে ওর ফোন টা উঠাবে তারপর আছার দিয়ে ফোন টা ভেঙে ফেলবে। বেয়াদপ টা কে কাল কে কল দিসিলাম ধরে ও নি ব্যাক ও করে নি।

এইবার হো হো করে হেঁসে উঠল তন্বী আর বললো ঠিক আছে ভাইয়া।

That's Like a Good vabi

ভাবি?
হ্যাঁ নাহিদের সাথে বিয়ে হলে তো আমার ভাবি ই হবে তাই আগে থেকেই প্রাকটিস করতেছি।ঠিক আছে থাকো তাহলে।
সাত সকালে তোমাদের ঝামেলা মিটাতে গিয়ে আমি নাইট ওয়ার পরেই বাহিরে এসে পড়ছি। রাখি বলেই কল কেটে দেয় নাজওয়ান।

তাঁর কিছুক্ষণ পরেই ব্লক খুলে তন্বী কল দেয় নাহিদ কে। কিছু ক্ষণ কথা বলেই নাজওয়ানের রুমে যায় নাহিদ।

কিরে কথা হয়েছে?

হ্যাঁ মামা হইছে।

আগের মতই?

না কিছু টা গলছে কিন্তু মাইয়ার যা তেজ রে মামা ভাঙবো কিন্তু মচকাবে না।

ব্রেড টা মুখে দিতে দিতে নাজওয়ান বলতে থাকে মাইয়া মানুষ একটু তেজ থাকবেই সেটা ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করা জানতে হবে।

কেমনে মামা? পয়েন্টে পয়েন্টে কথা বললে ওর জয়েন্টে জয়েন্টে লাইগা যায়। আমি কি করতাম?

হো হো করে হেঁসে উঠে নাজওয়ান। আর বলে উঠে তোদের কাহিনী দেখে আমার ই জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।

চলবে.....

কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন।

(কপি করা নিষেধ)

 #পর্ব ১২ #চেরি ফুল  #অদিতি✍️সেই কখন থেকে ফোন টা বেজেই চলতাছে । কিন্তু নাজওয়ানের উঠানোর নাম নেই। শুনে ও কেন যেনো উঠাতে ...
08/07/2025

#পর্ব ১২
#চেরি ফুল
#অদিতি✍️

সেই কখন থেকে ফোন টা বেজেই চলতাছে । কিন্তু নাজওয়ানের উঠানোর নাম নেই। শুনে ও কেন যেনো উঠাতে ইচ্ছে করতেছে না। অনিচ্ছা থাকা সত্যেও ফোনের দিকে না তাঁকিয়ে ই কল ধরলো।

একে তো জ্বর তাঁর মধ্যে গলা ব্যথায় ভয়েস ও চেঞ্জ হয়ে গেছে। হ্যালো বলতেই ওই পাশ থেকে আপুর কন্ঠ শুনে উঠে বসে যায় নাজওয়ান।
হ্যালো আপু!বলো ঘুমিয়েছিলাম আমি।
কয়টা বাজে জাপানে? এখনো ঘুমাচ্ছিস। শরীর খারাপ নাকি! তুই কি আবার ঠান্ডা বাঁধাইছিস??

না না তেমন কিছু না নতুন পরিবেশ তাই এডজাস্ট হতে টাইম লাগছে। কেমন আছো বলো। আদনান ভাই কই?

তোর ভাইয়া অফিসে। তোর সাথে আমার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো নাজওয়ান।

ঠিক তখনি নিচ থেকে নাহিদ জোড়ে জোড়ে নাজওয়ান কে ডাকতেছিল। প্রথমে সে ভাবে শুনা না গেলে ও এখন ক্লিয়ালরি শুনা যাচ্ছে যে নাহিদ নাজওয়ান কেই ডাকতেছে। ফোন কানে নিয়েই বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় যায় নাজওয়ান।
কিরে শুনতে পাচ্ছিস।
হুম হুম আপু বলো।কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা।
ওইদিকে নাহিদ জোড়ে জোড়ে বলতেছে নোজোমির বাসায় কার যেনো কি হইছে এম্বুলেন্স আসছে ওই যে নিচে আয় তাড়াতাড়ি।

কিরে উত্তর দিচ্ছিস না কেন??ওইদিক থেকে নিশি কিছু টা রেগে গিয়ে নাজওয়ান কে বললো।

আপু I Will call you Back. বলেই নাজওয়ান কল টা কেটে ফোন টা খাটের উপর ফেলে ওই অবস্থায় ই নিচে যায়। নাজওয়ান নিচে যেতে যেতে যতটুকু দেখতে পায় নুজু এম্বুলেন্সে উঠে কাকে যেনো কি একটা বলছে। আর তারপর ই গাড়ি ছেড়ে দেয়। ঠিক তখনি নাজওয়ান দৌড়ে গিয়ে ওর সাইকেল টা নিয়ে আসে কিন্তু ততক্ষনে এম্বুলেন্স অনেকটাই দূরে চলে গেছে।

কোন হসপিটালে গেছে জানিস??
আরেহ না আমরা তো সামনে গেছিলাম জিজ্ঞেস করতে কিন্তু ডাক্তার রা বললো সরে দাঁড়াইতে। তাই চলে আসছি।

শিট। নুজু তো ঠিক থাক ই ছিলো তাহলে কি ওর নানুপুর কিছু হলো নাকি??

নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন নুজু দের বাড়ির কাছে ঘুর ঘুর করছে নাজওয়ান। কিন্তু কেউ ই আশে নি। সন্ধার কিছু ক্ষণ আগ দিয়ে বাসায় গিয়ে গোসল দিয়ে একটা ব্রেড খেয়ে আবার নুজু দের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। সারাদিন নুজু কে কল দেয়ায় পর ও একটা ফোন ও রিসিভ হয় নি,মেয়ে টা হয়তো ফোন টা নিতে ও ভুলে গেছে।একা একা বাচ্চা একটা মানুষ কি করতেছে হসপিটালে কে জানে। জ্বরের কারণে মাথা ধরে ছিলো নাজওয়ানের নাহঠাৎ করেই নুজু দের বাসার সামনে একটা ট্যাক্সি এসে থামে।

সাথে সাথে ঐখানে চলে যায়। নুজু গাড়ির থেকে বের হয়ে বাসায় ডুকার সময় ই নাজওয়ান কে দেখতে পায়।সারাদিনের সব ক্লান্তি, নানুপু কে নিয়ে টেনশন সব মিলিয়ে যেনো অশ্রু হয়ে গড়ায় মেয়েটার। এই মুহূর্তে সব চেয়ে বেশি আপন মনে হচ্ছিলো নাজওয়ান কে। তাঁকে দেখেই মেয়ে টা ডুকরে কেঁদে ওঠে।

প্লিজ কাদবেন না। কি হয়েছে আপনার নানুর??

জানি না কি হয়েছিলো আমি ঘুম থেকে উঠেই নানুর রুমে যাই সেখানে না পেয়ে রান্না ঘরে গিয়েই দেখি নানু সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। তারপর সাথে সাথে এম্বুলেন্স ডেকে হসপিটালে নিয়ে যাই।
আজ কে নাকি নানুপু কে ঐখানে অবজারভেশনে রাখবে। কিছু জরুরী জিনিস পত্র নিতে এসেছি আমি।

আচ্ছা।আপনি কি আবার এখন হসপিটালে যাবেন?
জ্বি।
আমি সাথে যাই??
না আসলে ঐখানে কাও কেই স্টে করতে দিবে না। নানুপুর জিনিস পত্র গুলি দিয়ে আমি ও বাসায় চলে আসবো।

আপনার সাথে না হয় আমি ও চলে আসবো। বলেই নুজুর উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকে নাজওয়ান।
ঠিক আছে আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি ভিতর থেকে জিনিস গুলি নিয়ে আসি।

আচ্ছা।

হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নাজওয়ান। আর ভাবছে ভাগ্যিস নোজোমি আজ কে ওর নানুপুর বাসায় ছিলো, নয়তো উনাকে রেসকিউ করার জন্য ও কেও ছিলো না। কিভাবে একা একা থাকে উনি। নোজোমি দের সাথে শিফট হয়ে গেলেই তো পারে।

নোজোমি কে আসতে দেখা যাচ্ছে। মেয়ে টা কে দেখেই মনে হচ্ছে সারাদিনে এক ফোঁটা পানি ও হয়তো খায় নি।

আসুন কাজ শেষ। কাল সকালে নানুপু কে রিলিজ দিবে। আমার একদম ই বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে না।কিন্তু এইখানে ও থাকার ওয়ে নাই।

আপনি বাসায় গিয়ে বরং রেস্ট নিন। কাল সকালে আবার আসবেন।

নাজওয়ানের এমন আন্তরিকতা আসলেই ভালো লাগলো নুজুর। তাঁর মাম্মা ঠিক ই বলতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা টা অনেক।

নুজুর বাসার সামনে এসে উবার থামে।
আপনি বাসায় গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিন।আমি একটু পরে কল দিচ্ছি।কল দিলে নিচে নামবেন একটু কষ্ট করে।

কিন্তু কেনো? জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাঁকালো নুজু।
এমনেই।
আচ্ছা বলেই চলে গেলো নুজু।

এইদিকে নাজওয়ান বাসায় এসে তাড়াতাড়ি করে ৩ টা ম্যাগি নুডলস রান্না করে নিলো নুজুর জন্য। বাচ্চা মেয়ে টার উপর সারাদিন অনেক ধকল গেছে। তার উপর না খেয়ে ঘুমালে পরে দেখা যাবে নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়বে। আনমনেই কথা গুলি ভাবলো নাজওয়ান।

লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়েই দেখে নাজওয়ানের অনেক গুলি মিসড কল। ব্যাক করতেই ঐ পাশ থেকে ভাঙ্গা গলায় নাজওয়ান বলতে থাকে।
একটু কষ্ট করে নামবেন??
জ্বি আসছি বলেই নানুপুর একটা শাল গায়ে দিয়ে নিচে যায়।শাল টা থেকে নানুপুর একটা স্মেল আসছিলো। হঠাৎ নানুপুর জন্য ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় আর ভাবতে থাকে আজ কে এইখানে একা কিভাবে থাকবে সে। কারন নুজুর কখনোই একা থাকার অভ্যাস নেই।

নাজওয়ানের হাতে একটা বক্স দেখে জিজ্ঞেশ করে এটা কি??
নুডলস।আমি বানিয়েছি।আপনার তো সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নি।আসলে এত কম সময়ে তেমন কিছু করতে পারি নি।

নাজওয়ানের এমন আন্তরিকতা দেখে বার বার মুগ্ধ হচ্ছে নুজু। সাথে অন্য রকম একটা অনুভুতি হচ্ছে তার। একমাত্র মাম্মাই তাঁর খাওয়া দাওয়ার দিকে এতো খেয়াল লাগতো।মাম্মা নেই আজ কে কতটা দিন হয়ে গেছে। তবে মাম্মার অভাব টা নাজওয়ান বুঝতেই দিচ্ছে না তাঁকে। খুব অল্প দিনে ছেলেটা অনেক টাই আপন করে নিয়েছে আমাকে।

বক্স টা নুজুর দিকে এগিয়ে দিয়েই বললো বাসায় গিয়ে এটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন।ঠিক আছে?

আপনি কিছু খেয়েছেন??আপনাকে দেখে ও তো মনে হচ্ছে যে আপনি ও কিছু খান নি।
না মানে আমি দুপুরে খেয়েছিলাম।
ঠিক আছে এইখানে যা নুডলস আছে শেয়ার করে খাবো। আপনি একটু দাঁড়ান আমি চপস্টিক নিয়ে আসছি।

ফিরে এসে এক জোড়া চপস্টিক নাজওয়ানের হাতে দিয়ে বলে চলুন পার্ক টার দিকে বসা যাক।পার্কে বসে এক ই বক্স থেকে দুজন নুডলস খাচ্ছে। নাজওয়ানের কাছে নুজু কে দেখলে একবার ও মনে হয় না মেয়ে টা জাপানের পরিবেশে বড় হয়েছে।এই যে ঠিক বুঝে ফেলছে যে নাজওয়ান ও কিছু খায় নি আবার এখন তাঁর সাথে এক ই বক্স থেকে শেয়ার করে খাচ্ছে।
মজা হয়েছে। আপনি কিন্তু বেশ ভালো রান্না করতে পারেন।

টুকিটাকি আর কি বলেই হেসে ফেললো নাজওয়ান। দুজন দুজনকে বিদায় দিয়ে বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়েই নুজুর কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ ছিলো। কোনো ভাবেই ঘুম আসছিলো না। হঠাৎ করে নাজওয়ানের মেসেজ পায়। ঘুম???
পাচ্ছে না।
আচ্ছা।তাহলে কল দেই??
আচ্ছা।
নাজওয়ান কল দিয়েই সবার আগে বলে কাল আমি আপনার সাথে হসপিটাল যেতে চাই যদি সমস্যা না থাকে।

ঠিক আছে। আরো কিছুক্ষন কথা বলেই কল রেখে দেয়।

নোজোমির বাসার নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে নাজওয়ান। একটু পর ই নোজোমি কে দেখে বলে উঠলো আমি উবার ঠিক করে ফেলেছি।

হসপিটালে এসেই নুজু সোজা নানুপুর রুমে চলে গেলো। আর নাজওয়ান ওয়েটিং রুমে ওয়েট করতে থাকলো। হঠাৎ একজন স্টাফ কি একটা ফাইলে কিছু কাগজ পত্র নাজওয়ানের হাতে দিয়ে বলে গেলো।এইগুলো আপনার পেশেন্ট এর। যেহেতু নুজু ভিতরে গেছে তাই নাজওয়ান ই সেইগুলো রিসিভ করলো। নাজওয়ানের বিপরীতে একটা বয়স্ক লোক বসে ছিলো দেখতেই মনে হচ্ছে লোক টা রুগ্ন। হঠাৎ করে লোক টা নিচে পরে যাওয়া তে নাজওয়ান উনাকে ধরতে যায় ঠিক সেই সময়েই তার হাতে থাকা নুজুর নানুপুর প্রেসক্রিপশন গুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে যায়। লোক টা কে তুলতে আরো অনেক নার্স রা দৌড়িয়ে আসে। নাজওয়ান সরে এসে নিজের কাগজ গুলি তুলতে থাকে।

সবার লাস্টের কাগজ টায় চোখ আটকে যায় নাজওয়ানের।
ইংরেজিতে "Asiya khatun"নাম টা রেখে হাত কাঁপতে থাকে তাঁর।কারণ দাদুর ভাষ্যমতে উনার বোনের নাম ও আছিয়া খাতুন।
তাহেল কি উনিই। আর ভাবতে পারে ন নাজওয়ান।
বার বার সব গুলি কাগজ চেক করতে থাকে। হঠাৎ নোজোমি এসেই জিজ্ঞেশ করতে থাকে ওহ নানুপুর ফাইল টা দিয়ে দিয়েছে। থ্যাংকস রিসিভ করার জন্য। নানুপুর তো অভিযোগের শেষ নেই। এইখানের খাবার নাকি একদম ই ভালো না। নানুপু তো বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে।

এই মুহূর্তে নুজুর কোনো কথায়ই মনোযোগ নেই নাজওয়ানের।হঠাৎ সে নুজুর সামনে এসে বলে উঠলো "আমি কি একবার আপনার নানুপুর সাথে দেখা করতে পারি"?
হকচকিয়ে যায় নুজু।

মানে এখন ই?
হ্যাঁ জাস্ট ৫ মিনিট?
আচ্ছা বলেই ভিতরে চলে যায় নুজু।
এইদিকে নাজওয়ান ভিতর ভিতরে নিজে কে প্রস্তুত করতে থাকে। কারণ যদি সত্যি ই এটা দাদুর বোন হয়ে থাকে তাহলে আর ভাবতে পারে না সে এর মাঝেই নুজু এসে বলে আসুন ভিতরে।কোনো সমস্যা নেই নানুপু জেগেই আছে।

শীতের মধ্যে ও হালকা ঘামছে নাজওয়ান।কেমন একটা ভয় ও কাজ করছে। কি বলবে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।শুধু মনে মনে ঠিক করলো যে সে নিজের পরিচয় আপাদত দিবে না।

কেবিনের সামনে এসেই নুজু আগে ভিতরে যায় তারপর নাজওয়ান কে আসতে বলে।

"আসসালামু ওয়ালাইকুম" বলেই ভিতরে ঢুকে বেডের উপর হেলান দিয়ে বসে থাকা আছিয়া খাতুনের দিকে তাকায়।

নাজওয়ানের মনে হচ্ছিলো সে যেনো তার দাদার ফিমেইল ভার্সন কাও কে দেখতেছে। ছবি তে দেখা আছিয়া খাতুনের সাথে সামনে বসে থাকা আছিয়া খাতুনের সেইরকম মিল না পেলে ও তার তীক্ষ্ণ চোখ গুলি দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না নাজওয়ানের যে এটাই তাঁর দাদুর বোন।

"ওয়ালাই কুম আসসালাম" আপনি আমার নুজু চানের বন্ধু??

আপনি সম্বোধন করায় আরো একবার চমকায় নাজওয়ান। কারণ ছোটো বড় সবাই কে তাঁর দাদু ও আপনি করে সম্বোধন করেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে শুধু চেহারার মিল ই নয় তাঁদের কথা বার্তার ধরণ বসার ধরণ। সবকিছু তেই মিল খুঁজে পাচ্ছিলো। কিন্তু মনের মিল?? সে তো আরো ২৫ বছর আগেই মরে গেছে ভেবেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় নাজওয়ান।

হ্যাঁ কিছুদিন আগেই পরিচয় হয়েছে। আপনার শরীর কেমন এখন??
আলহামদুলিল্লাহ দাদু ভাই।এখন একটু ভালো।

দাদু ভাই। হ্যাঁ দাদু ভাইই তো দিদুন। আনমনে কথা গুলো নিজের মধ্যে ভাবতে থাকে নাজওয়ান।
এর মধ্যেই নার্স এসে তাঁকে রিলিজ দেয়ার প্রস্তুতি করতে থাকে। নাজওয়ান বাহিরে গিয়ে একটা উবার ঠিক করে তিন জন মিলে বাড়ি চলে আসে। বাড়ির সামনে আসতেই নুজুর দিকে তাঁকিয়ে নাজওয়ান বলে উঠে অনুমতি দিলে আমি তাঁকে একটু ধরে রুম পর্যন্ত দিয়ে আসি??

হ্যাঁ দাদু ভাই তাই করো। আমার নুজু চান টা একা একা পারবে না হয়তো। নাজওয়ানের কাঁধে ভর করেই বাড়িতে প্রবেশ করে আছিয়া খাতুন। তাঁকে তাঁর রুমে নিয়ে খাটে বসিয়ে দেয়। পাশ থেকে নুজু দেখিয়ে দিচ্ছিলো কোথায় কি করতে হবে।
অনেক ধন্যবাদ দাদু ভাই।

কোনো প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় নোজোমি কে দিয়ে জানাবেন আজ কে আসি।যাওয়ার সময় আলতো করে পা ছুঁয়ে দিয়ে বের হয়ে যায় নাজওয়ান। সেই হাত টি ই নিজের মাথায় ছুঁয়ে দোয়া চেয়ে নেয় দিদুনের কাছে।

"দোয়া করবেন দিদুন এই অভিশপ্ত অতীত থেকে যেনো আপনাদের কে আমি বের করতে পারি"।

বাহিরে গিয়ে কিছু ফল কিনে ফিরে এসে নোজোমি কে দিয়ে যায়। নাজওয়ানের এতো আন্তরিকতা এতো ভালোবাসা ছোট্ট নোজোমির মনে এক বিশাল জায়গা করে নেয়।

নাজওয়ানের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন আসতে থাকে সে একবার নোজোমির সাথে কথা বলবে ভেবেই নোজোমি কে মেসেজ দেয় "সন্ধ্যায় একটু বের হতে পারবেন?"

সাথে সাথে রিপ্লাই আসে মনে হচ্ছে সে নাজওয়ানের মেসেজের অপেক্ষায় ই ছিলো।
কয়টায়?!
আপনার সুবিধা মতো।আপনার নানুপু ঘুমিয়ে গেলে আসলেও চলবে।
আচ্ছা। জানাচ্ছি।
আজ কে তিনদিন নাজওয়ানের জ্বর কোনোভাবেই কমছে না।রাত হলে অসুস্থতা গুলি আরো বেশি করে বাসা বাঁধে শরীরে।

রাতের খাবার টা একটু তাড়াতাড়ি খেয়েই মেডিসিন নিয়ে শুয়ে শুয়ে নোজোমির মেসেজের অপেক্ষা করতে থাকে।
নোজোমির মেসেজ পেলেই বের হয়ে যাবে।
ভাবতে ভাবতেই নোজোমি মেসেজ দেয়।"আমি ১০ মিনিট পর আসছি"। নানুপু কে শুয়ে দিয়েই।

একটা বেঞ্চ এর মধ্যে পাশাপাশি নোজোমি আর নাজওয়ান বসে আছে।

কফি খাবেন?সব সময়ের মতো জিজ্ঞেশ করে নোজোমি।

না ইচ্ছে করছে না। একটু থেমেই আবার নাজওয়ান বলতে থাকে। আমি আপনার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই নোজোমি।
কি জানতে চান?অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো নোজোমি।

সব।।আপনার নানুপু, আপনার নানা ভাই,আপনার বাবা,আপনার মা আর আপনার মামা সর্ম্পকে। তারা কেনো বাংলাদেশে যায় না। সব কিছু আমাকে খুলে বলতে পারবেন?

কেন বলুন তো?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে।

আমার নানুপু বাংলাদেশে যায় না কারণ আমার মাম্মা চায় না। নানা ভাই আমার যখন দুবছর তখনই মারা যায় কার এক্সিডেন্ট করে।আমার মাম্মা লিমা সুলতানা, বাবা ওয়াতানাবে সুজুকি। যাঁরা ট্রিপে আছে।আর মামা রবিন হাসান সে ও নাকি মারা গেছে অনেক আগে।

কিভাবে??
কার এক্সিডেন্ট করে। একটু থেমে আবার নুজু বলে উঠে আমি আসলে এতটুক ই জানি। মাম্মা ছোটো থেকে এতটুক ই বলেছে। কিন্তু কেন বলুন তো?? আপনি এত কিছু জানতে চাচ্ছেন??

নোজোমির কথার উত্তর না দিয়ে নাজওয়ান আবার প্রশ্ন করে তাঁকে।"বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মা আপনাকে কি কি বলেছে??"

হালকা একটু হেসে উত্তর দেয় নোজোমি মাম্মা অলওয়েস বলে তাঁর দেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। পরিবারে মধ্যে বন্ডিং অনেক ভালো। তাঁরা জাপানীজ দের মত এত যান্ত্রিক না।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে নাজওয়ান বলে উঠে" নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে মেয়ে টা কে তো পরিবার নিয়ে খুব ভালোই শিক্ষা দিছেন "ফুপি" উরফে রিমা সুলতানা"।

একটু থেমেই আবার নোজোমি বলতে থাকে"আপনি জানেন আমার মা আমাকে কখনো মিথ্যা বলে না সে তাঁর দেশ সম্পর্কে দেশের মানুষের সম্পর্কে যা যা বলেছে সেই সব কিছু আমি আপনার মধ্যে পেয়েছি। আপনি অনেক ভালো, অনেক।

এইবার নাজওয়ান আর নিজে কে ধরে রাখতে পারে না নোজোমির আবেগ মাখানো কথা গুলি তাঁকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। ছোট্ট নোজোমি তো জানে না তাঁর মাম্মা নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে এক অভিশপ্ত অতীত ২৫ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে।

হঠাৎ ই নাজওয়ান নোজোমির মুখোমুখি হয়ে তাঁর পায়ের সামনে এসে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। হাত দুটো নিজের মুষ্টি বদ্ধ করে শান্ত গলায় বলতে থাকে

"যত যাই হয়ে যাক তোমার গায়ে এই অভিশপ্ত অতীতের একটা আঁচ ও আসতে দিবো না চেরি ফুল"। আই প্রমিজ।

চলবে.....

住所

Chiba-shi, Chiba

ウェブサイト

アラート

Adity’s Clipboardがニュースとプロモを投稿した時に最初に知って当社にメールを送信する最初の人になりましょう。あなたのメールアドレスはその他の目的には使用されず、いつでもサブスクリプションを解除することができます。

共有する

カテゴリー