16/12/2024
হিন্দুরা বৌদ্ধধর্ম শুধু নষ্ট করিয়া ছাড়েন নাই, তাঁহারা দুহাতে বৌদ্ধ ভাণ্ডার লুণ্ঠন করিয়া সমস্ত লুণ্ঠিত দ্রব্যের উপর নিজ নিজ নামাঙ্কের ছাপ দিয়া উহা সৰ্ব্বতােভাবে নিজস্ব করিয়াছেন। হিন্দুর পরবর্তী ন্যায়-দর্শন, ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতি সমস্ত বিষয়েই এই লুণ্ঠনের পরিচয় আছে— কোথাও ঋণ স্বীকার নাই। এইভাবে হিন্দুরা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসের বিলােপ সাধন করিয়াছেন। বঙ্গের পশ্চিমােত্তর উপান্তে প্রিয়দর্শী অশােক প্রভৃতি যত বড় বড় রাজা জন্মিয়াছিলেন, কিছুদিন পূর্বে আমাদের নিকট তাহারা নামে মাত্রও পরিচিত ছিলেন না। বঙ্গগৌরবের মধ্যমণি বিক্রমপুরবাসী দীপঙ্করের নাম পৰ্য্যন্ত বিক্রমপুরবাসীরা ভুলিয়া গিয়াছিলেন। নালন্দা, বিক্রমশীলা, ওদন্তপুর ও সুবর্ণ বিহারের নামই বা কে শুনিয়াছিল? কেবল আমরা যুধিষ্ঠি, ভীম প্রভৃতি পঞ্চপাণ্ডবের নাম লইয়া গৰ্ব্ব করিতে শিখিয়াছিলাম কেবল ধ্রুব, প্রদি প্রভৃতির স্বপ্নে বিভাের ছিলাম।…
বৌদ্ধধর্মের প্রতি ব্রাহ্মণেরা এতই বিদ্বিষ্ট হইয়াছিলেন যে, সেই সকল পাপ কথা যেন কেহ না শুনে এই উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণেরা ইচ্ছা করিয়া তাহাদের কীর্তি লােপ করিয়া দিয়াছিলেন। সত্য বটে বুদ্ধ-নিৰ্ব্বাণের প্রায় দেড় হাজার বৎসর পরে জয়দেব কয়েকটি ছত্রে বুদ্ধের বন্দনা করিয়াছেন। আরও দুই এক স্থলে হিন্দুরা এইরূপ উদারতার পরিচয় দিয়াছেন। অগাধ অপ্রমেয় হিন্দুশাস্ত্রের মধ্যে পরবর্তীকালের সেই সকল পঙক্তি ধর্তব্যের মধ্যেই নহে। কি ভীষণ অত্যাচারের সহিত ব্রাহ্মণেরা বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম ভারত হইতে নির্মূল করিতে চেষ্টা পাইয়াছিলেন, তাহা ‘শঙ্কর-বিজয়’ নামক পুস্তকের কথাগুলি পাঠ করিয়া বুঝিতে পারা যায়, ‘দুষ্টমতাবলম্বিনঃ বৌদ্ধান্ জৈনা অসংখ্যাতান্ রাজমুখ্যাননেকবিদ্যা-প্রসঙ্গভেদৈর্নির্জিত তেষাং শিরাংসি পরশুভিক্ষিছত্ত্বা বহুযু উদুখলেষু নিক্ষিপ্য কঠভ্রমণৈশ্চর্ণীকৃত্য চৈবং দুষ্টমতধ্বংসমাচর নির্ভয়াে বৰ্ত্ততে।” জৈনদের প্রতি আরও যে সকল অমানুষী অত্যাচার হইয়াছিল তাহা পরে লিখিত’।
তথ্যসূত্র :- বৃহৎ বঙ্গ, খণ্ড-১, দে’জ পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃ. ৮-৯। ২০. ‘ট্রেভর লিং, বুদ্ধিস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড আফটার’, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত, হিস্টরি অ্যান্ড সােসাইটি, কে. পি. বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ১৯৭৬, পৃ. ৩২০-৩২৩।
PDF link.....
https://bn.wikisource.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%98%E0%A6%A3%E0%A7%8