Monir Bro

Monir Bro প্রয়োজন আইনের তোয়াক্কা করে না।

23/08/2025
১৫_বছর_বয়সী_মাপর্ব- (৫২){রহস্যের শেষপ্রান্তে}“প্রি- নেটাল প্যাটারনিটি টেস্ট করতে এতোদিন লাগে? তুমি কি বুঝতে পারছোনা বাচ্...
23/08/2025

১৫_বছর_বয়সী_মা
পর্ব- (৫২)
{রহস্যের শেষপ্রান্তে}

“প্রি- নেটাল প্যাটারনিটি টেস্ট করতে এতোদিন লাগে? তুমি কি বুঝতে পারছোনা বাচ্চাটার বাবাকে কনফার্ম করাটা কতবেশি আর্জেন্ট? আমি তোমাকে সবকিছু রাশ মুডে করতে বলেছিলাম। তবুও কেনো এতো টাইম লাগছে?”

আলভী থামলো তারপর আবারও বলতে লাগলো,
“আমি তোমাকে যথেষ্ট টাইম দিয়েছি। কালকের মধ্যে সব রেডি রাখবে নইলে আগের এসিস্ট্যান্ট লাবিবের মতো তোমাকে বাদ দিতে বাধ্য হবো।”

কথাটা শুনে অলি দুপা পিছিয়ে গেলো। ঘুরে এসে ধপ করে বিছানার উপর বসে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো সিলিংয়ের দিকে। কিছুক্ষণ সেভাবে বসে থেকে উঠে গিয়ে বেডসাইড থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিলো তারপর ইউটিউবে সার্চ করলো,
—প্রি- নেটাল প্যাটারনিটি টেস্ট মানে কি?

সার্চের রেজাল্ট দেখে সে অবাক হলোনা। যা ধারণা করেছিলো সেটাই, অলির মনে হতে লাগলো তার হৃৎপিন্ডটা কেউ চেপে ধরে টেনে বের করে আনতে চাইছে। সে ছটফট করতে লাগলো কিন্তু রুম সাউন্ডপ্রুফ হওয়াতে তার গোঙানির শব্দ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটি টের পেলোনা। সে হয়তো তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে। অলি টেবিলের উপর রাখা পানিটুকু খেয়ে ধীরপায়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চোখ মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে মনে মনে আওড়ালো,
“সে একজন ডাক্তার। হতে পারে অন্য কারো বিষয় নিয়ে কথা বলছে। হ্যাঁ সেটাই হবে, আমি একটু বেশি বেশিই ভাবছি।”

অলি ওড়না দিয়েই হাত মুখ মুছতে মুছতে রুমে ফিরে এলো। আলভী খাটের উপর বসে ফোন চাপছে। অলিকে দেখেই সে উঠে দাড়ালো,
“একা একাই চলে এলে?”

অলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো,

“তোমাকে কতোবার বলেছি একা একা সিড়ি দিয়ে চলাফেরা করবেনা।”

“চিন্তা করবেন না আমি তো ঠিক আছি।”

“হুম কিন্তু এই অবস্থায় আর কখনো একা একা সিড়ি পার হবেনা বুঝলে?”

অলি মাথা নেড়ে খাটের দিকে এগিয়ে যেতে নেয় কিন্তু কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,
“আপনি আলোকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেন তাইনা?”

অলির এহেন প্রশ্নে আলভী কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। অলি মৃদু হেসে বলল,
“চিন্তা করেন সেই জন্যই তো আমার এতো খেয়াল রাখেন। শত হলেও আলো তো আপনারই অংশ।”

অলির কথাটা শুনে আলভীর চোখজোড়া বড়বড় হয়ে গেলো। এর আগে অলি কক্ষনো এভাবে বলেনি তাকে।
“তুমি হঠাৎ এভাবে বলছো কেনো?”

“কিভাবে বললাম? জানেন আমি অনেক বেশি এক্সাইটেড ওর মুখ দেখার জন্য। ওর নরম ছোট্ট তুলতুলে হাতটা ধরার জন্য। আপনিও অনেক এক্সাইটেড তাইনা? বাচ্চারা তো দু বছর থেকেই আধো আধো কথা বলতে শুরু করে। আচ্ছা যখন আলো আপনাকে বাবা বলে ডাকবে তখন আপনার কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবেন? আহ আমার তো ভাবতেই ভালো লাগছে। যেদিন ও আমাকে প্রথম মা বলে ডাকবে আমি হয়তো খুশিতে পাগলই হয়ে যাবো।”

আলভী স্তব্ধ হয়ে অলির দিকে তাকিয়ে আছে। সে কখনো এসব নিয়ে ভাবেনি। সত্যিই কি বেবিটা তাকে বাবা বলে ডাকবে? ভাবনাটা মাথায় আসতেই আলভী হকচকিয়ে গেলো। এ কেমন অদ্ভুত ভাবনা? বেবিটা তার হলে বাবা বলে না ডেকে কি আলভী তাসনীম মির্জা বলে ডাকবে? কথাটা মনে হতেই তার গলা শুকিয়ে এলো, অলি যদি একবার জানতে পারে সে বেবিটাকে নিয়ে এসব ভাবে তাহলে নিশ্চিত তাকে বাবা ডাক শোনার আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে। আলভীর চেহারা দেখে অলির সন্দেহ আরও নিগূঢ় হলো। মূলত আলভীর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্যই সে এসব বলেছে, অলি এগিয়ে এসে আলভীর বাহু জড়িয়ে ধরলো,
“আচ্ছা আপনি আপনার ছেলেকে পেয়ে আমাকে কম কম ভালোবাসবেন নাতো?”

আলভী বিরবির করে আওড়ালো,
“আমার ছেলে?”

“কি হলো বলুন,”

আলভী মেকি হেসে বলতে লাগলো, “না বউজান আমি তখন আরও বেশি ভালোবাসবো তোমায়। ওকে ভালোবাসার জন্য তো তুমি আছোই তাইনা? কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার জন্য আমি ছাড়া আর কে আছে?”

অলির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। আলভী সবসময় বাচ্চাটাকে ইগনোর করে যেন বাচ্চাটাকে নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। আলভী অলিকে ছাড়িয়ে সামনে আনলো তারপর তার মুখটা হাতের আঁজলায় নিয়ে ঠোঁটে চুমু খেতে চাইলো কিন্তু অলি দুপা পিছিয়ে গেলো। আলভী অবাক চোখে অলির দিকে তাকিয়ে রইলো। সেদিনের পর থেকে অলি কখনোই তাকে বাধা দেয়নি তাহলে হঠাৎ কি হলো?
“হানিবি কি হলো?”

অলি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বেডের উপর বসলো,
“আসলে আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা।”

কথাটা শুনে আলভী ব্যতিব্যস্ত হয়ে অলির সামনে এসে বসলো,
“কি হয়েছে হানিবি? তোমার কোথাও ব্যাথা হচ্ছে?”

অলি নিশ্চুপ, আলভী আরও চিন্তায় পড়ে গেলো। সে অলিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম কন্ঠে বলল,
“হানিবি, বলো কি হয়েছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো। প্লিজ কষ্ট চেপে রেখোনা। তোমার কিছু হয়ে গেলে কিন্তু আমিও ম*রে যাবো। এটা সবসময় মনে রেখো।”

অলির চোখের কোণে পানি জমেছে। সে আলভীর হাতটা নিজের বুকের বা পাশে রেখে বললো,
“আমার এখানে কষ্ট হচ্ছে, আপনি না হার্টের ডাক্তার আমার হার্ট টাকে পরিবর্তন করে দেবেন?”

আলভী হতবিহ্বল হয়ে অলির মুখের দিকে তাকালো। অলি ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে ফলস্বরূপ নাকের পাটা টাও লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
“কি হয়েছে? তোমার মন খারাপ?”

অলি আলভীর চোখে চোখ রাখে আলভীর চোখজোড়া অনুভূতিশূন্য। সে আলভীর হাত ছেড়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমার হার্ট অনেক দূর্বল। একটুতেই ভেঙ্গে যেতে চায়। এতো দূর্বল হার্ট নিয়ে এতো এতো কঠিন পরিস্থিতি সামলানো আমার পক্ষে দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। আপনি কোনোভাবে আমার হার্ট রিপ্লেস করে দিন না।”

আলভী বুঝতে পারলো কোনো একটা অজানা কারণে অলির মন মেজাজ ভালো নেই, তাই সে আলতো হাতে অলিকে নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে ধরলো।
“হার্ট রিপ্লেস করতে হবে কেনো? তোমার তো এমনিতেই দুটো হার্ট, এই যে এখন যেই হৃৎযন্ত্রের ধুকপুকানি শুনতে পাচ্ছো সেটাও যে তোমার। সকল কঠিন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আছি তো আমি। তুমি শুধু আমার বুকের সাথে মিশে থাকো।”

অলি সত্যিই আলভীর বুকের সাথে মিশে রইলো। আর কোনো কথা বললোনা।

রাত দুটো।

চারদিকে নিস্তব্ধতা, ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ ব্যাতিত অন্য কোনো গুঞ্জন নেই। জানালার আধখোলা পর্দার ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকেছে পূর্ণিমার আলো, রূপালি আভা ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো রুমে। বিছানার হলুদ রঙের চাদরে সেই আলো যেন মৃদু ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আলভী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে অলিকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে, আলভীর তপ্ত নিশ্বাস অলির ঘাড়ের ভাজে আছড়ে পড়ছে। অন্যদিন হলে অলিও হয়তো ঘুমে নিমজ্জিত থাকতো। কিন্তু আজকে তার চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছেনা। কিছু একটা বুকের ভেতর খচখচ করছে।
যতক্ষণ না সে সব রহস্যের খোলাসা করতে পারবে ততক্ষণ তার চোখে আর ঘুম নামবে না। সে এসেছিলো আলভীকে ইয়াদের ব্যাপারে জানাতে। ইয়াদকে তার সন্দেহ হচ্ছে। যদিও আলভীর মতে এখন তারা বিপদমুক্ত, একে তো রিফাত বেচে নেই আরেক হলো রূপসার বিষ দাঁত আলভী উপড়ে ফেলেছে। তাই আলভী হয়তো রিল্যাক্স মুডে আছে। কিন্তু অলির কেনো এমন মনে হচ্ছে যে খুব শীঘ্রই খারাপ কিছু হতে চলেছে? সে এইট্টি পার্সেন্ট সিওর যে সেদিন রিফাতের পার্টনার লোকটা ইয়াদই ছিলো। ইয়াদ আলভীর কাজিন না হলে সে একদম হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর হয়ে যেতো।
অলি ভেবেছিলো ইয়াদের বিষয়ে আলভীকে জানিয়ে তারা দুজন মিলে এই রহস্য উন্মোচন করবে। কিন্তু…অলির তো এখন আলভীকে নিয়েও ভয় হচ্ছে। লোকটার মনে ঠিক কি চলছে সে বুঝে উঠতে পারছেনা। অলি আলভীকে বিশ্বাস করলেও আলভী যে আলোকে প্রোটেক্ট করবে সেই বিষয়ে ভরসা করতে পারছেনা। মূলত আলভীর কেয়ারলেস বিহেভিয়ারের জন্যই অলি ভয়ে আছে। অলি নিজের পেটের উপর হাত রেখে মনে মনেই বলল,
“তোর মা থাকতে কেউ তোকে ছুতেও পারবেনা। আমি তোকে রক্ষা করবো আলো।”

আলভী নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। অলি বুঝতে পারলো আলভী সহজে উঠবেনা। অলি আলভীর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলো তারপর খাট থেকে নেমে আলভীর পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে আলভীর ফোনটা হাতে নিলো। সে কখনোই আলভীর ফোন ধরেনা। আলভী অনেক সময়েই অলির ফোন ধরে কিন্তু অলি আলভীর ফোনের পাসওয়ার্ডটাও জানেনা। অলি আবারও নিজের স্থানে এসে ধীরেসুস্থে আলতো করে আলভীর হাতের আঙুলটা নিয়ে গেল ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরে।
“টিক্” শব্দে স্ক্রিন জ্বলে উঠতেই অলির বুকের ভেতর কাঁপন বয়ে গেল। তার ভালো লাগছেনা এভাবে আলভীর পারমিশন ছাড়া তার ফোনে হাত দিতে কিন্তু তাকে আগে আলভীকে নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে হবে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায় তাহলে ধ্বংস নিশ্চিত। অলি ধ্বংস হতে ভয় পায়না কিন্তু আলোকে সে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবে। অন্তত সে বেচে থাকতে আলোকে অশুভ কিছু স্পর্শ করতে পারবেনা।
অলি ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। সেখানে থাকা চেয়ারে বসে সে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো। হাত অস্বাভাবিকভাবে কাপছে মনে হচ্ছে সে চোর ধরতে নয় নিজেই চুরি করতে এসেছে। হোয়াটসঅ্যাপের সবার উপরে রয়েছে রাজিবের নম্বর। অলি জানে রাজিব হচ্ছে আলভীর নতুন ফিজিশিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্ট। লাবিবকে আলভী পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছিলো অলির ছবি তার কাছে সেন্ড করে ঝামেলা সৃষ্টি করার জন্য। এটা অবশ্য আলভীই অলিকে বলেছে। অলি স্ক্রোল করে একেবারে প্রথম থেকে মেসেজ গুলো পড়তে শুরু করলো।
—USA এর ল্যাবে স্যাম্পল পাঠিয়ে দেয়া ডান স্যার।

—সবকিছু রাশ মুডে করবে পেশেন্টের অল্রেডি ৩৭ সপ্তাহ চলছে তার ডেলিভারির আগেই যেন রিপোর্ট পেয়ে যাই।

—স্যার কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করবো?

—হুম?

—পেশেন্ট কি আপনার আত্মীয় হয়? না মানে এতো টাকা খরচ করে সবচেয়ে ভালো ল্যাবে পাঠাতে বললেন তার উপর এসব তো আমাদের কাজের মধ্যেও পড়েনা।

—মাইন্ড ইওর বিজনেস আর ভবিষ্যতে কখনো এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবেনা। শুধু যেটুকু বলবো সেটুকুই করবে।

—ওকে স্যার স্যরি। আর করবোনা।

এরপর আর রাজিবের সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেনি আলভী। শুধু আজকেই এই বিষয়ে আরেকটা ম্যাসেজ দিয়ে বলেছে,
—কালকের মধ্যে রিপোর্ট না পেলে তোমাকে আর কাজে আসতে হবেনা।

অলি আশ্চর্য হয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো। আলভী এসব করেছে সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা। সে ফোনটা রেখে দেয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়াতেই আলভীর হোয়াটসঅ্যাপে দিহানের ম্যাসেজ আসে। অলি আবারও চেয়ারে বসে পড়লো তার এবার ভীষণ ভয় করছে। সে আর কিছু দেখতে চায়না, সাহসে কুলাচ্ছেনা। তবুও সে কম্পিত হস্তে দিহানের ম্যাসেজ ওপেন করলো।
—কিরে কালকে দেশের বাইরে যেতে হবে বলে আমার ঘুম আসছেনা কিন্তু তুই এতো রাতে অনলাইনে কি করিস হুম?

অলি আগের ম্যাসেজগুলো দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু আলভী হয়তো দিহানের আগের ম্যাসেজ গুলো ডিলেট করে ফেলেছে। অলি জানে এই দিহান আলভীর ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে তাই এর থেকেই পুরো ঘটনাটা বের করতে হবে। অলি এবার বুদ্ধি খাটিয়ে আলভী সেজে দিহানকে ম্যাসেজ পাঠালো,
—এখনো রিপোর্ট হাতে পেলাম না তাই চিন্তা হচ্ছে।

কিছুক্ষণ যেতেই দিহান রিপ্লাই দেয়,
—বাচ্চাটার বাবা তুই-ই হবি। শুধু শুধু চিন্তা করিসনা।

অলি এবার কান্না করে দিলো। তার মানে আলভী এতদিন যাবত বাচ্চাটাকে সন্দেহ করতো? অলি চোখ জোড়া মুছে নিজেকে সামলে নিলো। ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। অলি সময় নিয়ে টাইপ করলো,
—আমার মনে হয়না যে বাচ্চাটার বাবা আমি।

দিহান আর রিপ্লাই দিলোনা। অলি বুঝতে পারলোনা কিছুই। সে উঠে গিয়ে ব্যালকনির রেলিঙে হাত রাখলো। চোখের পানিও যেন এবার অভিমান করলো তার সাথে, বুক ফেটে যাচ্ছে তবে চোখ দিয়ে আর পানি বের হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ যেতেই চেয়ারের উপরে রাখা ফোনটায় টুং করে শব্দ হলো। অলি এগিয়ে গিয়ে দেখলো দিহান অনেক বড় একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। হয়তো এটা লিখতেই এতোটা সময় লেগেছে,
—দেখ লাস্ট বারের মতো বলছি এসব নিয়ে ভাবিস না। রিফাত সেদিন ভাবীর সাথে খারাপ কিছু করলে কি ভাবী সেটা তোকে বলতোনা? মানলাম ভাবী হয়তো তোর থেকে লুকিয়েছে কিন্তু ভাবীর সাথে রিফাত কিছু করে থাকলেও সেই জন্য তুই-ই দায়ী। তোর সাথে শত্রুতা করেই রিফাত তেমনটা করেছিলো। আর তুই যে বেবিটাকে দত্তক দিয়ে দিতে চাইছিস। একবার ভেবে দেখেছিস ভবিষ্যতে এই কথাটা ভাবী জানলে সে কতোটা কষ্ট পাবে? ভাবী যখন জানবে তার মৃত বাচ্চা হয়েছে তখন তুই কিন্তু ভাবীকে সামলাতে পারবিনা এভি। প্লিজ এবার এসব বন্ধ কর। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তুই শুধু নিউজটা ধামাচাপা দিতে এসব করছিস কিন্তু এখন বুঝতে পারছি যে তোর মনে এই বিষয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিলো।

অলি পুরো ম্যাসেজটা পড়লো কিন্তু তার একটুও খারাপ লাগলোনা। অলি হয়তো বুঝতেই পারলোনা যে সে খারাপ লাগা অনুভব করার ক্ষমতা ইতোমধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে। সে নিষ্পলক চোখে ম্যাসেজগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে রিপ্লাই দিলো,
—হ্যাঁ নিউজ টার জন্যই আমি এমনটা করেছি।

অলি জানেনা যে দিহান কোন নিউজের কথা বলছে তবে তাকে জানতে হবে সবটা তাই এভাবে বলেছে।
—তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে মাঝরাতে? নাকি ইয়ার্কি করছিস? নিউজের চ্যাপ্টারটা তো একদিনেই ক্লোজড করে দিয়েছিলি সেই জন্য NIPP টেস্ট করার কোনো প্রয়োজনই ছিলোনা। তাছাড়া লাবিবকেও তো তুই নিউজটা ছড়ানোর জন্য নিজের হাতে মে*রে ফেললি।

লাবিবকে আলভী মে*রে ফেলেছে শুনে অলির হয়তো আঁতকে ওঠার কথা ছিলো কিন্তু তার মাঝে কোনো ভাবাবেগ হলোনা সে আবার রিপ্লাই দিলো,
—আমার এখন মনে হচ্ছে নিউজটা হয়তো সঠিক ছিলো।

এদিকে আলভীর উদ্ভট ম্যাসেজগুলো দেখে দিহানের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে রেগেমেগে ম্যাসেজ দিলো,
—ওই সম্বন্ধী, তুই কি ড্রিংকস করেছিস? নিউজে বলা হচ্ছিলো ভাবী একজন ক্যারেক্টরলেস গার্ল সে একদিন তোকে ড্রিংক করিয়ে তোর সাথে ইন্টিমেট হয়েছিলো তারপর তোকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলো। তার উপর অন্য একজনের বাচ্চা তোর বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। আর তুই বলছিস তোর মনে হচ্ছে নিউজটা সঠিক ছিলো?

অলি এবার আর রিপ্লাই দিলোনা। সে সব জেনে গেছে আর বুঝেও গেছে। সে ম্যাসেজগুলো ডিলেট করে ফোনটা আগের জায়গাতে রেখে দিলো। তাকিয়ে দেখলো আলভী এখনো ঘুমে মগ্ন, সে সেদিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। অলির মনে হচ্ছে আকাশের বুকে থাকা চাঁদটাও যেন তার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে। সে হাত দিয়ে নিজের পেট আড়াল করে নিলো, বিরবির করে বলতে লাগলো,
“আলো শুধু আমার ছেলে। আর কারো নয়, একমাত্র আমিই প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করেছি যে ও আমার ছেলে, আমার প্রাণ। ও কারো নয়। ছিহ, আমার ভাবতেও ঘেন্না লাগছে যে উনি তোকে রিফাতের বাচ্চাও ভেবে নিয়েছিলো। ওনার মনে হচ্ছে যে সেদিন শুধু উনিই আমাকে রে/প করেননি। রিফাতও করেছিলো?”

অলির শ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। কান্নাগুলো গলার ভেতর দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। সে কাদতে চাইছে কিন্তু পারছেনা। অলি ঘন্টাখানেক একভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। এখন রাত্রী সাড়ে তিনটা, অলি নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাই নিয়ে নিলো এই এক ঘন্টায়। সে এবার রুমে ঢুকে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো আলভীর দিকে। আলভীর পাশে শুয়ে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরে চোখমুখে একে দিতে লাগলো অজস্র চুমু, অলির ঠোঁটের স্পর্শে ঘুমের ঘোরেই অলিকে নিজের কাছে টেনে নিলো আলভী। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
“আরও আদর করো হানিবি। ভালো লাগছে খুব।”

আলভীর মাতাল কন্ঠে অলি দিশেহারা হয়ে গেলো। সে লেপ্টে রইলো আলভীর বুকের সাথে তারপর আনমনেই গেয়ে উঠলো,
“এমন একটা রাত দেও আল্লাহ দুনিয়ায় উপর
এক নজরে দেখবো তারে কয়েক’শো বছর।”

অলির মুখ থেকে নির্গত গানের বাক্যটা যেন আলভীর সমস্ত সত্তা জাগিয়ে তুললো, সে ফট করে চোখ মেলে তাকায়। গানের সুরেই বলে,
“বাবুই পাখির মতো দুজন বানাইবো ঘড়
আমারে ছেড়ে যাইওনা আসলে কঠিন ঝড়”

অলি মাথা তুলে আলভীর দিকে তাকালো তারপর ম্লান হেসে গানের সুরে বলল,
“যতনে রাখিও তোমারে দিলাম আমার মন।”

চলবে,

অন্তর্লীন_প্রণয়পর্ব-১১অহর্নিশ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ন্তিকার মুখশ্রীর দিকে। নিজেকে মনে মনে শ'খানেক গালি দেয় সে। তাৎক্...
23/08/2025

অন্তর্লীন_প্রণয়
পর্ব-১১

অহর্নিশ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ন্তিকার মুখশ্রীর দিকে। নিজেকে মনে মনে শ'খানেক গালি দেয় সে। তাৎক্ষনিক ভাবে সে নিজেকে আস্বস্ত করে আয়ন্তিকার উদ্দেশ্যে বলল,

-' মেয়েটার স্কেচ করেছি বলে এই না যে সে আমার প্রেমিকা হবে আয়ন্তিকা। এসব নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা করো সারাক্ষণ? '

প্লেটের ভাত প্রায় ফুঁড়িয়ে এসেছে,শেষ লোকমা ভাত আয়ন্তিকা অহর্নিশের মুখে দিয়ে দেয়। তবে এবার আয়ন্তিকা নিজ কথায় অটল থেকে বলল,

-' তাহলে মেয়েটার স্কেচ করেছেন কেনো?'
-' ও বলেছিলো তাই করেছি। '
-' বললেই করতে হবে। '

অহর্নিশ বিরক্তি নিয়ে বলল,

-' আয়ন্তিকা, সাফিয়া আমার ফ্রেন্ড হয়। রিকুয়েষ্ট করেছে তাই করেছি। তো? আর এই বিষয় নিয়ে কথা বলা বন্ধ করো। '

আয়ন্তিকা আর কথা বলল না। তার এই মূর্হতে ইচ্ছে হলো, ইশশ! অহর্নিশ যদি আর্ট না পারতো তবে কত ভালোই না হতো। সাফিয়ার স্কেচ করাতে তার খারাপ লাগছে। বড্ড বেশি খারাপ।

প্লেটের ভাত শেষ হওয়ার পর অহর্নিশের মন বিষন্ন হয়। আর ঠিক কবে সে আয়ন্তিকার হাতে খেতে পারবে কে জানে? এই মেয়ের হাতে যাদু আছে বলে মনে হলো তার। যেখানে মাংশ ছাড়া অন্য কোনো কিছু দিয়ে অহর্নিশ খেতে পারতো না সেখানে আজ সবজি দিয়ে ভাত অনায়েসে খেয়ে ফেললো মুগ্ধ হয়ে। অহর্নিশ আয়ন্তিকার হাতে টেনে এনে আয়ন্তি এর আঙুলে লেগে থাকা অবশ্যিষ্ট খাবার সন্তপর্ণে নিজের অধর যুগলের স্পর্শ করিয়ে গলধ্বিকরণ করে। আয়ন্তিকা শক্ত হয়ে বসে আছে। পরিশেষে সে নিজের ছো মেরে টান দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। অহর্নিশ নিচের ঠোঁট আঁকড়ে নেয় ! বিড়বিড় করে বলল,

-' লজ্জাবতী লাজুকলতা!'

অয়ন আজ প্রথমবারের মতো নামাজ পড়ছে। বাসায় এসেই সে কিছু ইসলামিক বই হতে নামাজ পড়ার নিয়মাবলী এবং সূরা মুখস্থ করে নিয়ে সে যোহরের নামাজ পড়া শেষ করেছে মাত্র। সারা হতভম্ব! তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এটা অয়ন। তবুও অয়ন নামাজ পড়ছে দেখে সে খুশিতে কেঁদে দেয়। অয়ন তা দেখে অস্থির হয়ে বলল,

-' সারা কাঁদছো কেন তুমি? শরীর কি খারাপ লাগছে?'

সারা চোখের কার্নিশ হতে পানি মুছে নিয়ে প্রতুত্তরে বলল,

-' ঠিক আছি আমি। কিছু হয়নি। কান্না করছি তো সুখে। তুমি নামাজ পড়ছো তা দেখে প্রচন্ড খুশি লাগছে। '

অয়ন স্নান হেঁসে সারার কপালে চুমু খায়। তার নিজেরও আজ বড্ড প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে নামাজ পড়ে। নামাজ এমন এক ইবাদত যাতে অংশগ্রহণ করলে যত চিন্তা, ডিপ্রেশন এ থাকুক না কেনো সব নিমিষেই দূর হয়ে যায়। মন ভালো করার অন্যতম উপায় নামাজ পড়া। এতে মন কোমল হয়। শান্তি আসে। সারাকে বুকে টেনে নিয়ে আলত করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় অয়ন। আজ নামাজ পড়ার কারণটা হচ্ছে অহর্নিশ। সে অশ্রুকণা বর্ষণ করিয়ে অহর্নিশের জন্য দোয়া করেছে। যাতে অহর্নিশ ঠিক হয়ে যায়। সময়ের আগেই সে শুধরে যায়।


অহর্নিশ আয়ন্তিকার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আয়ন্তিকার আসার কোনো নাম-গন্ধ নেই। কিন্তু স্কুলের বাকি স্টুডেন্টরা সবাই ইতিমধ্যে বেড়িয়ে গিয়েছে। অহর্নিশের অজান্তেই হটাৎ খুব বেশি চিন্তা এসে জরো হয় মন গহীনে। বারংবার নিভৃত হতে বলছে ' আয়ন্তিকা ঠিক আছে তো?'

অহর্নিশ আর অপেক্ষা করতে পারলো না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। অস্থির অস্থির লাগছে। আয়ন্তি কে যতক্ষণ পর্যন্ত নিজ সামনে সুস্থরূপে না দেখতে পারছে সে ততক্ষণ অব্দি অহর্নিশের ঝড় ওঠা মন শান্ত হবেনা কিছুতেই। দারোয়ান কে পুরো বিষয়টা খুলে বলে অহর্নিশ স্কুলের ভেতরে চলে যায়। আয়ন্তিকার ক্লাসরুম সহ পুরো স্কুল খুঁজে আয়ন্তি কে না পেয়ে অহর্নিশের ব্যাকুল অবস্থা। পরিশেষে সে ঠোঁট চেপে ধরে কান্না দমন করার প্রয়াস চালায়।তার কান্না পাচ্ছে কেনো? এত কষ্ট, বিরহ যন্ত্রণা কিসের কারণে?

পায়ের শব্দফালি কর্ণগোচর হতে অহর্নিশ পিছন ফিরে। আয়ন্তিকা আসছে তার দুইহাত রুমাল দিয়ে মুছে নিয়ে। অহর্নিশ আয়ন্তিকার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কর্কশ কন্ঠে উচ্চস্বরে বলল,

-' কই ছিলা তুমি?'

আয়ন্তিকা নতজানু অবস্থায় ছিলো। উচ্চ কন্ঠস্বর শুনে সে সামনে তাকায়। দেখতে পায় অহর্নিশের বিধ্বস্ত মুখশ্রী। চোখদুটো রক্তিম। ঠোঁটদুটো শুষ্ক অবস্থায় বহমান। দুই হাত সমান তালে কাঁপছে। আয়ন্তিকা চমকায়। প্রথমত অহর্নিশ কে এখানে দেখে এবং দ্বিতীয়য় অহর্নিশের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে। আয়ন্তিকা কোমল কন্ঠে বলল,

-' ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি এখানে যে, আপনার এই অবস্থা কেন? আবার মারামারি করে এসেছেন?'

অহর্নিশ চোখ গরম করে বলল,

-' আমার কাজ মারামারি করা না। বারবার একই কথা বলো কেন ষ্টুপিড? '

পাংশুটে আকার ধারণ করে আয়ন্তিকার মুখশ্রীর গড়ন। সে ঠোঁট বাকিয়ে কিছু বলতে নিয়েও বলল না।এই লোকের সাথে আয়ন্তি আর বলবে না কথা। সবসময় সুচালো কথা বলে আঘাত করে তাকে। কেন, একটু মিষ্টি করে কি কথা বলা যায়না আয়ন্তিকার সাথে? অভিমান হয় তার। তাই সে মৌনতাকে এই সময়টার জন্য বাছাই করে নেয়।

আয়ন্তিকা কে চুপ দেখে দমন করা রাগ তীরতীর করে বেড়ে যায় অহর্নিশের। আয়ন্তিকা কখনোই তার প্রশ্নের জবাব গুলো সঠিক রূপে দেয়না। মাঝ পথে এসে নীরবতা পালন করা শুরু করে। একদম সাইলেন্ট! অহর্নিশের আফসোস হয়, এ কেমন মেয়ে কে বিয়ে করলো সে? পিচ্চি বাচ্চাদের বিয়ে করাটা প্যারা। আসলেই প্যারা! সেদিন তো অহর্নিশ বুক ফুলিয়ে আয়ন্তিকা কে বলেছিল টিনেজার দের বিয়ে করার সুবিধা অনেক। আসলে এদের বিয়ে করার কোনো সুবিধাই নেই। শুধু প্যারা আছে কপালে।

অহর্নিশ আড়ষ্ট হয়ে বলল,

-' নেক্সট যাতে ছুটি হওয়ার পর ওয়াশরুমে যেতে না দেখি মাইন্ড ইট? ওয়াশরুমে যাওয়ার হলে ছুটি হওয়ার আগে যাবে নয়ত না। চলো এখন! অনেক সময় নষ্ট করিয়েছো আমার। '

আয়ন্তিকা সামনের দিক ধরে হাঁটা শুরু করে। অহর্নিশ তার পিছু পিছু ধীর গতিতে হাঁটছে। গহীন হতে বলছে সে আজীবন চায় আয়ন্তিকার পিছন পিছন হাঁটতে। যখন দমকা হাওয়া এসে আয়ন্তির লম্বা চুলগুলো তার মুখে বাড়ি খাবে সেই মূর্হতটায় অহর্নিশ বুক ভরে মনোমুগ্ধকর শ্বাস টেনে নিবে। অহর্নিশ ভেবে পায়না তার এমন উদ্ভট চিন্তাধারার কারণটা। তবে এটা একটুখানি হলেও নিশ্চিত হলো যে সে দিনদিন আয়ন্তিকার প্রতি বিন্দু বিন্দু করে দূর্বল হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হলে তো চলবে না।

গাড়ির সামনে এসে আয়ন্তিকা ফ্রণ্টসিটের দরজা খুলে ধপ করে বসে পড়ে। অতঃপর অহর্নিশ নিজে এসে বসে তার সিটে। আড়চোখে তাকিয়ে সে প্রচন্ড বিরক্তি প্রকাশ করে। অহর্নিশ তিক্ত কন্ঠে বলল,

-' সিটবেল্ট লাগানোর কথাটা কি তোমার চোখের মনিতে ফটোকপি করে লাগিয়ে দিবো আয়ন্তিকা? '

আয়ন্তিকা বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়। পরবর্তীতে চট জলদি সিটবেল্ট লাগিয়ে ক্ষ্যান্ত রূপে বসে। চেপে রাখা কথাগুলো দমন করতে না পেরে সে লম্বা শ্বাস টেনে বলল,

-' আপনি কি একটু ভালোমতো কথা বলতে পারেন না?সবসময় এতো তিতাযুক্ত কথা বলেন কেন? একটু কি সুন্দর ভাবে কথা বলা যায়না?'

অহর্নিশ তার ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে ব্যাবধান সৃষ্টি করে বলল, ' না যায়না! '

________________________

নাহিয়া আহমেদ ছাঁদে উঠেছে আজ প্রায় অনেক বছর পর। তিনি আগে কখনো ছাঁদে উঠতেন না। বিশেষ করে তার স্বামী উসমান যখন থেকে তার সাথে নেই। তবে আজ এসেছে সে এই ছাঁদে। তার প্রাপ্তির কথা বিশাল আকাশটাকে জানাতে।

ছাঁদে দাঁড়িয়ে ছিলোএকজন মধ্য বয়স্ক পুরুষ। নাহিয়া তার দিকেই এগিয়ে যায়। পাশে দাঁড়াতেই সে বলল,

-' কখন আসছস নুহাদ?'
-' একটু আগে আপা। ভালা আছো তুমি?'
-' আমি তো সবসময়ই ভালা থাকি। '

নাহিয়া একগাল হাসলো। নুহিদ তার বোনের হাসি দেখে তৃপ্তি পায়। অবশেষে বলা যায় তার বোনের কপালে সুখের সন্দাহ মিলেছে তবে। শান্তি আসে মনে নুহিদের। পরবর্তীতে সে গদগদ হয়ে বলল,

-' উসমান রে আর কতদিন আঁটকায় রাখতে হবে আপা?'
-' আর বেশিদিন না ধৈর্য ধর। আয়ন্তিকার বাচ্চা হইলেই তারে ছাইড়া দিবি। '
-' কিন্তু এসব কেন করতেছো আপা? আজ আমারে একটু সব খুইলা বলো তো। '

নাহিয়া তপ্তশ্বাস ফেললো। শুভ্র আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে সে বলল,

-' তোর দুলাভাই এর দ্বিতীয় বউ ছিলাম আমি। তার জন্য আমি কখনো তার ভালোবাসা পাই নাই। হেতি তার প্রথম বউরে অনেক ভালোবাসতো। দ্বিতীয় বিয়া করছে তো তার মায়ের চাপে পইরা আর নিজের বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য। আমি সবসময় তার কাছে একটু ভালোবাসা একটু মর্যাদা চাইতাম বাট সে আমারে মারধর করতো। গরুর মতো খাটাতো। মারতে মারতে আমার শরীর শেষ কইরা ফালাইছিলো।যন্ত্রণায় চিৎকার করতাম। কেও আসতো না। এমনেই যায় দিন। আমার রাগ হয়। অভিমান হয়। খারাপ কিছু করার নেশা চাপে।'

নুহিদ অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজ আপার দিকে দৃষ্টি দেয়,
তার বোন এতোটা কষ্ট করেছে এতোটা দিন ধরে অথচ সে তার কিছুই জানতো না।আর জানবেই বা কি করে? দেশের বাহিরে ছিলো সে। একমাত্র বোনের বিয়েতেও আসতে পারেনি। নুহিদ ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল,

-' এসব কথা আগে বলোনাই ক্যান আপা? আমি ঐ উসমান রে মাইরা ফালামু। '

-' ভুলেও না। সবকিছু নষ্ট হইয়া যাইবো তাইলে।'

-' সবকিছু মানে?'

-' কইতাছি! তোর দুলাভাই তার সব সম্পত্তির একটা উইল করে। যেখানে সে তার সব সম্পত্তির ৬০% মালিক অহর্নিশ আর আয়ন্তিকার বাচ্চার নামে কইরা দেয়। অহর্নিশ আর আয়ন্তিকার দুজনের বিয়া হোক এটা সে আগে থেকেই চাইতো। আর অহর্নিশ আর আয়ন্তিকার জীবনের ঝুঁকি যাতে না হয় তাই আগে থেকে এই উইল করে। এতে করে কেও আয়ন্তিকারে মারার সাহস করবো না। আর না অহর্নিশ রে। উইল দেইখা আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ সে আমার নামে দেয়নাই কিছু। যদিও জানতাম এমনটা হবে। এত কষ্ট সহ্য কইরা তার সাথে সংসার করছি সম্পত্তি পামু তার লোভে। আমার মন মতো কিছুই হয়নাই। তারজন্যই তো তোরে কইলাম তারে কিডন্যাপ কইরা উঠায় নে। তারপর সবাইরে কইছি সে মরছে। তার কয়েক বছর পর যখন অহর্নিশ আইলো দেশে তারপর কইলাম উসমান রে কিডন্যপ করার কারণ। বিয়া দিলাম ওদের। এখন বাচ্চা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ছাড়ুম না তারে। '

নুহিদ বাহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নাহিয়ার পানে তাকিয়ে বলল,

-' এরজন্যই বলছিলা তাইলে? তারপর সবার কাছে বিশ্বাস করানো উসমান মরছে। সবসময় এতো মানুষ দিয়ে নজর রাখা জমিদার বাড়ির ওপর যাতে পুলিশে না খবর দিতে পারে। '

-' হ। '

-' বাচ্চা পাইলে কি করবা আপা?'

-' বাচ্চা নিয়া দূরে চলে যাবি তুই। বাচ্চারে বড় করবি। উইল নিয়া যাবি তোর সাথে। উইল আছে আমার কাছে। বাচ্চার ১৮ বছর হইলে উকিল দেখাইয়া বাচ্চার থেকে সই নিয়া আমরা নিয়া যামু সম্পত্তি। '

_________________________

বাসায় আসা মাত্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আয়ন্তিকা গোসলে করতে চলে যায়। নিজের কার্য সমাপ্তি শেষে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দৃশ্যমান হয় তার বেডে টান টান হয়ে শুয়ে আছে অহর্নিশ। দুই হাত কপালের নিচে ভাজ করা।

আয়ন্তিকা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে এগিয়ে গিয়ে বলল,

-' আপনি এখানে কেনো?'

অহর্নিশ আয়ন্তিকার হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে নিজের বক্ষ পিঞ্জরের ওপর ফেলে। পরবর্তীতে সে তার একহাত আয়ন্তিকার গালে কোমল রূপে রেখে দিয়ে বলল,

-' বিকজ আই ওয়ান্ট টু লাভ ইউ। '

চলবে...

প্রিয়_ডাক্তার_সাহেব-সিজন_০২ #পার্ট_২৩"আজ চায়ের প্রয়োজন নেই। মাথা ব্যথা কমাতে, আমার আদরই যথেষ্ট তোর জন্য।"আভা আমতা আমতা ক...
23/08/2025

প্রিয়_ডাক্তার_সাহেব-সিজন_০২
#পার্ট_২৩

"আজ চায়ের প্রয়োজন নেই। মাথা ব্যথা কমাতে, আমার আদরই যথেষ্ট তোর জন্য।"

আভা আমতা আমতা করে বলল,

"আজ নয় প্লিজ..."

"স্বামীর ডাকে স্ত্রীদের সাড়া দিতে হয়।"

"দে'হে'র খা'য়ে'শ মেটালেই সংসার হয়ে যায়? মন থেকে কি আদৌ আমাকে মেনে নিতে পেরেছেন তাশরীফ ভাই?"

আভাকে ছেড়ে দিলো তাশরীফ। এত অবুঝ কোনো মেয়ে হয়? সে এত কিছু করেও নিজেকে বুঝাতে পারলো না আভার কাছে? আভা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

" ইচ্ছের বিরুদ্ধে সাময়িক সুখ হয়তো উপভোগ করা যায়, সংসার করা যায় না।"

রুম থেকে বেরিয়ে গেল আভা। তাশরীফ দাঁড়িয়ে আছে৷ মিনমিন করে বলল,

"তোহা, ফারাবী চলে যাক, তোর ব্যবস্থা আমি করছি। অনেক বেশি বুঝিস তাই না? তাহলে আমার মনটা কেন বুঝলি না?"

(৬৪)

সকাল হয়েছে। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ছোট ছোট করে চোখ মেলে তাকায় তোহা। পাশে ফারাবীকে দেখেই ভেতরটা আঁ'ত'কে উঠে তার। ফারাবী জো'র করে তার সাথে গত রাতে যা করেছে তাতো ভুলার নয়। এই জন্যই তাকে ফারাবী বিয়ে করেছিল? অনেক কিছুই ভাবছিল তোহা। অভিমান নাকি রাগ, সে তা বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে। তোহা কোনোরকমে উঠে পাশ থেকে শাড়িটা আ'ক'ড়ে ধরে। চোখ দুটো ভি'জে উঠছে তার। ফারাবী তোহার উঠে যাওয়া টের পেয়ে তাকায়। ঘুম কন্ঠে বলল,

"আরেকটু পাশে শুয়ে থাকো না জান।"

ক্রোধে এমনিতেই তোহার মাথা গরম। ফারাবীর কথা শুনে আরও বেশি রেগে যায় সে।

"আপনি আমাকে জান ডাকবেন না। ঘৃণা করি আমি আপনাকে।"

"ঘৃণা করো, আর যাইই করো। এখন তোমার দেহের প্রতিটি স্প'র্শ কেবল আমার। ঘৃণা করতে করতে ঠিক একসয়ম ভালোবেসে ফেলবে।"

"আপনাকে আমি কখনো ভালোবাসব না। কখনো না।"

"দেখা যাবে পরে, জলদি গোসলটা করে আসো। রেডি হয়ে নাও। ডেড নিশ্চয়ই এতক্ষণে রেডি হয়ে বসে আছে।"

"রেডি হব মানে? আমি কোথাও যাব না। এই বাড়িতেই থাকব।"

"যেতে হবে। বিয়ের পর, ঘরজামাই থাকার ইচ্ছে কোনো কালেই আমার ছিল না।"

"আপনাকে জামাই হিসেবে মানে কে?"

"তুমি ছাড়া বাড়ির সবাইই মানে। আর তুমি...."

ফারাবী তাকালো তোহার দিকে। তোহা বাকিটা বুঝে বলল,

"আমি মানব না। মানতে হলে মরতে হবে।"

(৬৫)

আভা চোখ মেলতেই, নিজেকে তাশরীফের বু'কে শুয়ে থাকতে দেখে লাফিয়ে উঠে। তারপর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

"এই যা, ৯ টা বেজে গেছে? আর আমি এখনো ঘুমে? বাড়িতে মেহমান আর আমি কিনা শুয়ে আছি?"

জলদি বিছানা থেকে নামলো আভা। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে সে। তাশরীফকে উঠে বসে থাকতে দেখে বলল,

"এত জলদি উঠলেন কেন?"

"তোহা চলে যাবে ভুলে গেছিস?"

মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল আভার। তোহা ছাড়া সে ভীষণ একা। এ বাড়িতে সময় সুন্দরভাবে কাটাতো কেবল তোহার জন্যই। আভা ধীর কন্ঠে বলল,

"অনেক তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না সবটা?"

"না হয়নি, যা হয়েছে ভালো হয়েছে। ফারাবীর মত সুখী, ওকে আর কেউ রাখতে পারবে না। মিলিয়ে নিতে বলিস ওকে। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট রেডি কর। ওদেরকে এয়ারপোর্টে ছেড়ে দিয়ে, আমি হসপিটালে যাব।"

"আজকেও!"

"দায়িত্ব সব জায়গায় সঠিক হওয়া উচিত। ভাই হিসেবে দায়িত্ব পালনতো করবই। সাথে, ডক্টর হিসেবে? আমার পেশেন্টরা ওয়েট করে আমার জন্য।"

"আর আপনার ঘরের স্ত্রী?"

তাশরীফ আভার এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না। সোজা চলে যায় ওয়াশরুমে। আভাকে সে ভালোবাসে, ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু আভা বুঝতে পারছে না এখন। কখন বুঝবে তারও হয়তো কোনো হিসেব নেই। তাই সে আর কথা বাড়াতেই চায়লো না।

(৬৬)

"তোহা, বাচ্চাদের মত কাঁদছিস কেন? আয়নায় দেখ, তোকে আজ কি সুন্দর লাগছে।"

তোহা তাকায় আয়নায়। নিজেকে পরখ করে বলল,

"আমিতো সুন্দর তোহাকে নয় আভা, অসুখী তোহাকে দেখতে পাচ্ছি। যার ঠোঁ/টের কোণে হাসি নেই। চোখে কেবল পানি আছে।"

আভা জড়িয়ে ধরে তোহাকে। ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল তোহা। বাবা-মা কেউ না থাকার ফলেই এমনটা হয়েছে। তাশরীফকে অনেক সময়, অনেক কিছু ভয়ে জানায়নি অবধি। তাশরীফ এলো তোহার রুমে। তোহাকে এইভাবে কাঁদতে দেখে বলল,

"হোয়াটস ইউর প্রবলেম তোহা? বিয়ে সব মেয়েরই হয়। এই যে আভারও হয়েছে। এখন ওহ কি ওদের বাড়িতে? নাকি আমাদের? এইরকম করছিস কেন?"

তোহা চুপসে আছে। নিরবে কেঁদেই যাচ্ছে শুধু। ভাইয়ের কথার জবাবে কিছু বলতে পারলো না সে। আভা বিরক্ত হয়ে বলল,

"আপনি আবার উপরে আসতে গেলেন কেন? আমিতো নিয়েই আসছিলাম ওকে।"

"ওর জন্য কি ফ্লাইট মিস হবে না? ওরা সবাই অপেক্ষা করছে নীচে।"

আভা তোহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,

"চল আভা, কাঁদিস না। দেখবি, সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। মানিয়ে নিতে পারবি।"

"সবসময় মানিয়েই কেন নিতে হবে আভা?"

"এইটাইতো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। যেই সময়টাকে, আমরা ইচ্ছের বিরুদ্ধে হলেও মানিয়ে নিই।"

(৬৭)

প্ল্যানে বসে আছে তোহা আর ফারাবী পাশাপাশি। তোহার কান্না কিছুতেই থামছে না। ফারাবী বিরক্ত। একটা মানুষ কত কাঁদতে পারে? তোহার এত এনার্জি কোথা থেকে আসে, তা সে বুঝতে পারে না। তোহার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলল,

"সবাই এইদিকেই তাকিয়ে আছে তোহা, প্লিজ কান্না থামাও। আর কত কাঁদবে?"

কে শুনে কার কথা? তোহা ফারাবীর কথা তোয়াক্কা করলো না। ফারাবী তখন আবার বলল,

"তোহা, তুমি কি কান্না থামাবে? নাকি..."

তোহা চুপসে গেল। এখন এইখানে তাশরীফ নেই, আভাও নেই। তাই সে কোনোভাবেই আর কিছু বললো না। ওইটা নিজের বাড়ি ছিল বলে, বড় বড় কথা শুনাতো সে ফারাবীকে। এখন? এখনতো সে কিছুতেই কিছু বলতে পারবে না। যদি ফারাবী তাকে মা'রে? ভেতরে ভেতরে ভ'য় পায় তোহা। ফারাবী আর কিছু বললো না। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফেইসবুকে ঢু'কে সে। ফেইসবুক স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ খেয়াল করলো তোহা তার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ -মুখে বিস্ময়ের ছাপ। ফারাবী ভ্রু কুঁচকে বলল,

"কি হয়েছে?"

"আপনার আইডির নাম কি?"

"জায়ান কাব্য।"

চলবে.......

"

নিষিদ্ধ_প্রণয় #পর্বঃ১২"কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে না তো? আমাদের মধ্যে ভাইয়াই সবার বড়ো।"আচমকা নীরবে কথা শুনে অন্তরাত্মা...
23/08/2025

নিষিদ্ধ_প্রণয়
#পর্বঃ১২

"কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে না তো? আমাদের মধ্যে ভাইয়াই সবার বড়ো।"

আচমকা নীরবে কথা শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো তুবার। বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেলো যেনো। অবাধ কান্নার জোয়ার উপচে পড়তে চাইলো চোখ বেয়ে। কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে? তুবার কৌশিক ভাই অন্য কারোর হবে? যে বুকে তুবা পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পায়, সেই বুকে অন্য কারোর জায়গা হবে? কৌশিকের বাহুডোরে অন্য কোনো মেয়ে থাকবে। তারা ঘনিষ্ঠ হবে। যে নিষিদ্ধ সুখ কয়েক মুহুর্তের জন্য পাগল করেছিল তুবাকে, সেই সুখ এবার অন্য কেউ পাবে? ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো তুবার। সন্দেহের তীর সোজা তুবার হৃদপিণ্ডের মাধ্যিখানে ঢুকলো। অসহনীয় ব্যথায় হাসফাস করে উঠলো তুবা। দম আটকে আসছে যেনো। মুহুর্তের মধ্যে জোরে জোরে শ্বাস টানতে শুরু করলো। যেনো অদৃশ্য কোনো হাত তুবার গলা শক্ত চেপে ধরেছে।

আচমকা তুবার চেহারার রঙ পরিবর্তন হতে দেখে চমকে উঠলো রিয়া আর নীরব। তুবার ফর্সা মুখ লালচে রঙ ধারণ করেছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। পুরো শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে। তুবার এমন হঠাৎ পরিবর্তনে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে উঠলো দুই ভাই বোন। রিয়া বেশ বুঝতে পারছে এটা প্যানিক এ্যটাক হওয়ার লক্ষ্মণ। তাই তুবাকে শান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠলো রিয়া। নিচু কন্ঠে চেচিয়ে উঠলো,

"নীরব! গাধার বাচ্চা। কি বললি এটা? পানি আন তাড়াতাড়ি। তুবার প্যানিক এ্যট্যাক হয়েছে।"

নীরব হকচকিয়ে গেলো। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো। রিয়া তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। নীরব আসতেই পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে তুবার মুখের সামনে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্তনার স্বরে বললো,

"তুবা পানি খা। রিল্যাক্স! কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে না পাগলী। নীরব এমনি এমনি বলেছে।"

নীরব বোনের কথায় সম্মতি জানালো। ঘনঘন উপর নিচ মাথা নেড়ে বললো,

"হ্যা হ্যা! রিয়া ঠিক। আমি ভুল। আমি মিথ্যে বলেছি।"

তবুও তুবার মন মানলো না। বহু কষ্টে এক ঢোক পানি খেলো। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। রিয়া তখনও তুবার মাথায় ঘনঘন হাত চালাচ্ছে। তুবার শ্বাস প্রশ্বাস কিছুটা স্বাভাবিক হতেই রিয়া অভিযোগ করে বললো,

"তোর এতো ভয় নিয়ে কি করি বলতো তুবা? মালা গেঁথে কৌশিক ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দেই? তুই এমন কেনো করিস? দুই বছর আগেও বড়মার মুখে রাইমাকে বউ করার কথা শুনে এমন প্যানিক করেছিলি। বেচারা কৌশিক ভাই ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ফেলে ছুটে এসেছিল তোর কাছে। তোর মনের ভয় দূর করতে সেদিনই রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়ে করলো। সাক্ষী হিসেবে আমাদেরকেও কান ধরে টেনে নিয়ে গেছিলো। তোর জন্য তো লোকটা সাধ্য মতো সব করে। কত সেক্রিফাইস করছে তোকে খুশি করতে। তোর মনের ইনসিকিউরিটি দূর করতে কত পাগলামি করে। তুই তবুও এমন বাচ্চামি করিস।"

তুবার শরীর তখনও মৃদু কাঁপছে। রিয়ার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরলো তুবা। কম্পিত গলায় বলল,

"আমার ভয় হয় আপু। খুব ভয় হয়। ওই মানুষটা আমার প্রতিটা লোমের সাথে মিশে গেছে। আমার পুরো দেহে ওনার স্পর্শ গেঁথে আছে। ঘুমের মাঝেও আমি ওনাকে অনুভব করি। উনি আমার একমাত্র শান্তি আপু। যদি পরিবার আমাদের আলাদা করে দেয়? আমি বাঁচবো কিভাবে?"

"তোর মনে হয় কৌশিক ভাই সেটা মেনে নেবে?"

"না মানুক। কিন্তু ঝড় তো উঠবে।"

রিয়া ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

"তোরা দু'জনে কি জানতি না, এই পরিবারে নিজেদের মধ্যে প্রণয় ঘটানো নিষেধ? জেনে বুঝে নিষিদ্ধ প্রণয়ে জড়িয়েছিস দুজন। এখন একটু আকটু ঝড়ের মোকাবেলা তো করতেই হবে।"

মাঝখান থেকে নীরব ফোড়ন কেটে বললো,

"তুই একটু বেশিই ভাবছিস তুবা। আরে, আমি তো এমনিই বলেছিলাম কথাটা। শিওর হয়ে তো বলিনি। হতে পারে রিয়ার বিয়ের কথা হচ্ছে। মৌ আপুর পরে সিরিয়ালে রিয়া আছে। ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে রেখে কি কেউ ছেলের বিয়ের কথা ভাববে? তুই না আসলেই বুদ্ধু।"

নাকমুখ কুঁচকে কথাগুলো বললো নীরব। এই পর্যায়ে তুবা চিন্তায় পড়ে গেলো। আসলে কার বিয়ের কথা হচ্ছে? রিয়ার নাকি কৌশিকের? ভাবতে ভাবতে মাথাটা ঝিম মেরে আসলো। পেটের মধ্যে মুচড়ে উঠছে। অতিরিক্ত চিন্তায় প্রেসার নেমে গেছে হয়তো। পেট গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। তুবা দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো। অবস্থা বেগতিক দেখে কপাল চাপড়ালো রিয়া। তুবাকে ধরে উঠিয়ে দোতলার সিঁড়ি ধরলো। যেতে যেতে নীরবকে বলে গেলো,

"ছোটো মাকে দুটো ডিম সেদ্ধ আর গরম দুধ আনতে বল তো। তুবার মনে হয় প্রেশার ফল করেছে।"

-
-

রিয়ার প্রচেষ্টায় তখন তুবা খানিকটা সুস্থ হলেও মন থেকে সন্দেহ যাচ্ছে না। মনের সন্তুষ্টির জন্য সেই সকাল থেকেই নিজের মায়ের পেছন পেছন ঘুরছে। ঘ্যান ঘ্যান করে জানতে চাইছে কার বিয়ের আলোচনা হলো ঘরে। ময়না বেগম কয়েকবার চোখ রাঙিয়ে তাকালেন মেয়ের দিকে। বড়দের কথা আড়িপেতে শোনার জন্য মেয়েকে কয়েক দফা ধমকও দিলেন। জোর জবরদস্তি কলেজেও পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু নাছোরবান্দা তুবা মায়ের পেছন থেকে এক পাও নড়লো না। সত্যিটা না জানা পর্যন্ত সে ঠিক মতো খেতেও পারছে না।

ঠিক এভাবেই ছটফট করতে করতে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালো। বাড়ির রমনীগণ রান্নাঘরে দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করছেন। তুবা তখনও ময়না বেগমের পেছন পেছন ঘুরছে। ওকে বিড়ালছানার মতো আঁচল ধরে ঘুরতে দেখে আরও এক দফা ধমক দিলেন ময়না বেগম। এরপর তরকারির বাটি নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে চলে গেলেন। কনকচাঁপা বেগম চেয়ার ঠিক করছেন। রান্নাঘরে বর্তমানে আছেন শুধু মেজো চাচি নাইমা বেগম। তুবাকে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি হাত ধরে টেনে তুবাকে কাছে নিলেন। তুবার থুতনিতে আলতো করে হাত রেখে প্রশ্ন করলেন,

"কি হয়েছে আমাদের চড়ুই পাখির? এতো তুড়ুৎ ফুরুৎ করছিস কেনো?"

তুবা যেনো মোক্ষম সুযোগ খুঁজে পেলো। খপ করে নাইমা বেগমের হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,

"ও মেজোমা। বলো না। কার বিয়ের কথা হচ্ছে বাড়িতে? মাকে তখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কিন্তু বলছে না।"

"জানতে চাস?"

"হ্যা খুব চাই। বলো না প্লিজ।"

নাইমা বেগম ঘুরে দাঁড়ালেন। চাকু দিয়ে টমেটো কাটতে কাটতে জবাব দিলেন,

"বলতে পারি। কিন্তু লজ্জা পাবি না তো?"

"আমি কেনো লজ্জা পাবো?"

"ওমা! নিজের বিয়ের কথা শুনে মেয়েরা লজ্জা পায় না বুঝি? তোরই তো বিয়ের কথা চলছে। রামিম ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে গেছিলাম না? সেখানে একজন প্রস্তাব রেখেছে তোর জন্য। ছেলেটা খুব ভালো বুঝলি। তোর সাথে একদম মানানসই। কথাবার্তা মিলে গেলে তোদের আকদ করিয়ে রাখবে। রিয়ার বিয়ের পর তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এমনটাই কথা হচ্ছিল তখন। আর তোর......"

আচমকা ধুপ করে পাশে কিছু পড়ার শব্দে তিনি কাজ বাদ দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। রান্নাঘরের মেঝেতে তুবার জ্ঞানহীন দেহটা লুটিয়ে পড়তে দেখে দুই হাতে মুখ চেপে চিৎকার করে উঠলেন। নাইমা বেগমের গলা ফাটানো চিৎকার শুনে বাড়ির ছোটো বড় সবাই ছুটে এলো রান্নাঘরে।

রান্নাঘরের মেঝেতে জ্ঞানহীন তুবাকে পড়ে থাকতে দেখে আঁকতে উঠলো সবাই। তাওহীদ সাহেব দৌড়ে এসে মেয়েকে টেনে তুললেন। মাথার পেছনে হাত রাখতেই চটচটে আঠালো র**ক্তে ভিজে উঠলো হাত। ইতিমধ্যে ময়না বেগম আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করেছেন। কনকচাঁপা বেগম তাকে নিজের বাহুডে আগলে নিয়েছেন। মেয়ের মাথার পেছনে র**ক্ত দেখে তাওহীদ সাহেব দিশেহারা। কি করবেন না করবেন কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। পেছন থেকে জামাল সাহেব তাড়াহুড়ো কন্ঠে বললেন,

"ওকে ওঠা তাওহীদ। হাসাপাতালে নিতে হবে।"

বড় ভাইয়ের ডাকে যেনো সংবৎ ফিরে পেলেন তাওহীদ সাহেব। পাঞ্জাবির হাতায় চোখ মুছে মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন। এরপর ছুটলেন গাড়ির দিকে। যত দ্রুত সম্ভব মেয়েকে হসপিটালে নেয়া চাই।

-
-

প্রায় আধা ঘন্টার ব্যাবধানে হসপিটালে পৌঁছেছে সকলে। পুরো রাস্তায় একেবারের জন্যও তুবার জ্ঞান ফেরেনি। হসপিটালে পৌঁছানোর পর নীরব কৌশিকের নাম্বারে ফোন লাগালো। দুইবার রিং বাজতেই ফোনটা রিসিভ করলো কৌশিক। তবে নীরবকে কিছু বলতে না দিয়ে কৌশিক ছোট্ট করে বললো,

"মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলছি।"

এটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো। অসহায় নীরব আবারও ফোন লাগালো। বারে বারে ফোন করতে দেখে ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো কৌশিক।

এদিকে ভেতরে তুবার ট্রিটমেন্ট চলছে। বাইরে পরিবারের সবাই অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীরব আর রিয়া সমানতালে কৌশিকের নাম্বারে ডায়াল করছে।

গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হওয়ায় ফোনের দিকে নজর দিলো না কৌশিক। কিন্তু মিনিট দশেক যাওয়ার পর টাইম দেখতে ফোনটা হাতে নিলো। এই দশ মিনিটে নীরবের নব্বই প্লাস এবং রিয়ার আশি প্লাস মিসড কল দেখে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে গেলো কৌশিকের। এমন পাগলের মতো ফোন করার মানে কি? খটকা লাগলো কৌশিকের। সে এক মিনিটের বিরতি নিয়ে বাইরে এসে কল ব্যাক করলো। নীরব যেনো ফোন হাতে নিয়েই ছিলো। রিং বাজতেই সাথে সাথে রিসিভ করলো নীরব। গরম সুরে ঝারি মেরে উঠলো,

"ফোন কেনো উঠাচ্ছো না তুমি?"

"বললাম তো মিটিংয়ে আছি। এতো ফোন দিচ্ছিস কেনো?"

"থাকো তুমি তোমার মিটিং নিয়ে। এদিকে তুবা হসপিটালে। মাথা ফাটিয়ে ম*র*তে বসেছে।"

নীরবের কথা শুনে সহসা চমকে উঠলো কৌশিক। বুকের ভেতর কোনো ভারি বস্তু দ্বারা স্ব জোরে বাড়ি লাগলো যেনো। দিন দুনিয়ার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো কৌশিক। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনোমতে বললো,

"কিহ্! আম... আমি আসছি।"

ব্যাস! এতটুকুই বলার শক্তি পেয়েছে কৌশিক। ফোনটা কোনোমতে পকেটে পুরে উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। ভুলেই বসলো মিটিংয়ে কথা। চাকরি গেলে যাক। তাতে কৌশিকের কিচ্ছু যায় আসে না। তুবার আগে কোনোকিছু নয়। এমনকি কৌশিকের নিজের প্রাণও নয়।

-
-

নীরব ফোন কাটার পরপরই ভেতর থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলেন। পরিবারের সবাই ছুটে গেলো ডাক্তারের কাছে। তাওহীদ সাহেব কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

"ডক্টর! আমার মেয়ে কেমন আছে? ওর বড় কোনো ক্ষতি হয়নি তো?"

ডক্টর মুখ থেকে টান দিয়ে মাস্কটা খুলে ফেললেন। এরপর দুই হাত নাড়িয়ে চাড়িয়ে বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,

"পেসেন্ট এখন ঠিক আছেন। শক্ত কিছুর সাথে লেগে মাথার পেছনে একটু কেটে গেছে মাত্র। তবে ক্ষত খুব বেশি গভীর নয়। দুটো সেলাই দিতে হয়েছে। নাউ, শি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।"

ডাক্তারের সান্ত্বনা বাণী শুনে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো সবাই। তুবা ঠিক আছে শুনে সকলে প্রাণ ভরে শ্বাস টানলো। মাথার ওপর থেকে দুশ্চিন্তার ছায়াও নেমে গেলো। সবাই একে একে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছিল ঠিক তখনই সবার শ্বাস আটকে দিতে ডক্টর বলে উঠলেন,

"ও হ্যা! আরও একটা কথা। পেসেন্টের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। এমন ঘটনা যেনো দ্বিতীয়বার না ঘটে। আপনাদের মেয়ে প্রেগনেন্ট। সুতরাং এমন ঘটনা আবারও ঘটলে বাচ্চা মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভবনা আছে। ওয়েল, পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। আপনারা দেখা করতে পারেন।"

নিজ উদ্যোগে কথাগুলো বলেই চলে গেলেন ডক্টর। রেখে গেলেন পাথর বনে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্য গুলোকে। প্রতিটা সদস্যই যেনো মোমোর মুর্তি বনে গেছে। তুবা প্রেগনেন্ট কথাটা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। হতভম্ব পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে ভুলে গেছে যেনো। অবিবাহিত মেয়ে প্রেগনেন্ট হলো কিভাবে? এটা কি আদৌ সম্ভব?

চলবে?

Address

Khagrachari
Chittagong Division
4400

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Monir Bro posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share