Israt Jahan Fariya - ইসরাত জাহান ফারিয়া

  • Home
  • Bangladesh
  • Dhaka
  • Israt Jahan Fariya - ইসরাত জাহান ফারিয়া

Israt Jahan Fariya - ইসরাত জাহান ফারিয়া শব্দ বুননের সূক্ষ্ম জাল; অমীমাংসিত, অসম্পূর্ণ তবুও পূর্ণ!

— ইসরাত জাহান ফারিয়া

05/08/2025

পুকি ইজহান পাঠা🎀🎀

ভিডিয়ো: তুশ্মিতা নুসাইবা

#অশ্রুবন্দী

04/08/2025

অবনীর বিয়েটা হয়েছে হসপিটালে। বলা যায় এক্সিডেন্টলি! অবনী ভাবেনি দাদুর সাথে অসুস্থ একজন মানুষকে দেখতে এসে তার এভাবে বিয়ে হয়ে যাবে, জীবনটা আচমকা পালটে যাবে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সে বিশ্বাস করতে পারল না বাইরে করিডোরে চেঁচামেচি করতে থাকা জারিফ নামক লম্বা-ফর্সা, সুদর্শন লোকটা তার বর! এরকমটা সে নাটক-সিনেমায় হতে দেখেছে। কিন্তু ভাবেনি কখনো নিজের জীবনটাই সিনেমাময় হয়ে যাবে। অবনীর কাছে সবটা কেমন অদ্ভুত লাগল।

জারিফ ক্ষুদ্ধ ভঙ্গিতে বসে আছে। মায়ের কাছ
থেকে এইমাত্র সে জানতে পারল, এই বিয়েটা তার দাদুর ইচ্ছেতে নয়। হয়েছে ওর বাবা হাবিব সাহেবের ইচ্ছেতে, ইন্ধনে। সত্যিটা শুনে ওর মাথার ভেতর আগুন জ্বলছে। বন্ধু নিনাদ, জুবায়েরও যা হবার হয়েছে বলে ওকে সবটা মেনে নিতে বলছে। কিন্তু কারো কথায় ওর কানে ঢুকছে না। রাগ কমছে না। এই বিয়েটা হয়েছে সম্পূর্ণই ওর অমতে। বাবা বলেছিল দাদু নাতবউ দেখতে চায়। জারিফ অসুস্থ দাদুর কথা ভেবে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজি হয়েছিল। কিন্তু আদৌ এটা দাদুর ইচ্ছেয় নয়? বাবার ইচ্ছে? বাবা ওকে মিথ্যে বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়েটা দিয়েছেন শুধু নিজের চাওয়া পূরণ করতে? জারিফ যেন বিশ্বাস করতে পারল না। ওর বাবাহাবিব সাহেব চাইতেন জারিফ যাতে সবসময় তার কথামতো চলে, তার কথায় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিক। কিন্তু জারিফের একরোখা স্বভাবের কারণে কখনোই ছেলেকে নিজের মর্জিতে চালাতে পারেননি। নিজের জীবনের সব সিদ্ধান্ত জারিফ সবসময় একাই নিয়েছে। যেটা ভালো মনে হয়েছে, করেছে৷ করে বিপদে পড়লেও সেটা ভালোভাবেই মেনে নিতো, তবুও স্বস্তি পেত যে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সে কিছু করেনি। ছেলের এ স্বভাবের জন্যই হাবিব সাহেব বুঝতে পেরেছিলেন জারিফ কখনো তার কথামতো নিজের জীবন সাজাবে না, সেভাবে চলবে না। সেজন্য তিনি এই কান্ডটা করলেন। মাঝখানে নিজের অসুস্থ বাবাকে শুধু ব্যবহার করেছেন। এটা ভেবেই বাবার প্রতি জারিফের সব বিশ্বাস-ভরসায় ভাটাপড়ল।
এত রাগ জন্মালো জারিফের যে সেই মুহূর্তে ও ঠিক করে ফেলল দাদু শুধু সুস্থ হোক। এরপর মেয়েটাকে সে ডিভোর্স দিয়ে দেবে, দেবেই দেবে। বাবার এ অন্যায়টা সে কিছুতেই মেনে নেবে না।কিন্তু দাদু সুস্থ হলো না। পরদিন ভোরেই পৃথিবীর সব মায়া কাটিয়ে তিনি চিরবিদায় নিলেন৷ প্রিয় মানুষটার এই মৃত্যু জারিফকে অনেকটা ভেঙে দিয়ে গেল।

দাদুর মৃত্যুর একমাস পর অবনীকে ডিভোর্স দেওয়ার কথাটা সে বাড়িতে তুলল। সবাই তো হতভম্ব!
তার বাবা থেকে শুরু করে বড়চাচা, ছোটচাচা সবাই মিলে ওকে অনেক বোঝাল, অনেক কাকুতিমিনতি করল, কিন্তু জারিফ শুনলো না তার কিছুই। সে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল রইল। ছেলের সাথে সাবিনা খানমও তাল মেলালেন।
স্বামীর সিদ্ধান্তের উপর তারও আক্রোশ আছে৷ হাবিব সাহেব তারও অনুমতি নেননি ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার সময়।
তাই তিনি কোনোভাবেই চান না জারিফ ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে অবনীর সঙ্গে সংসার করুক। স্ত্রী-পুত্রের ব্যবহার দেখে একটা সময় হাবিব সাহেবেরও জেদ চেপে গেল মনে। তিনিও সাফসাফ জানিয়ে দিলেন জারিফ যদি অবনীকে ডিভোর্স দেয়, তাহলে তিনিও সাবিনা খানমকে ডিভোর্স দিয়ে দেবেন।

বাবার মুখে এরকম কথা শুনতে জারিফ প্রস্তত ছিল না। সে হতবাক হয়ে গেল। সাবিনা খানমও স্বামীর মুখে এই কথা শুনে 'থ।'এই বয়সে এসে বিচ্ছেদ? কী করে এমন কথা মুখে আনলেন হাবিব সাহেব? কীভাবে এতবড় কথা বলতে পারলেন? সাবিনা খানম পুরোপুরি বোধ শূন্য হয়ে গেলেন। জারিফ দমে গেল। আর যাইহোক, বাবা-মায়ের সংসার ভাঙতে রাজি নয় সে। তবে সেদিনের পর থেকে ওদের বাবা-ছেলের সম্পর্কটা পাল্টে গেল। দু'জনের মধ্যে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। বাবার কাছে হেরে গিয়ে জারিফের মনে তখন অন্য জেদ৷ বাবা ওকে নিজের মর্জিতে চালাতে চাইছে তো? সেটা ও হতে দেবে না। কিছুতেই না। বাবার সব অন্যায় কান্ড সে কিছুতেই বরদাস্ত করবে না। তাই একই বাড়িতে অবনীর সংস্পর্শে সে থাকতে চাচ্ছিল না। যদিও বিয়ের পর একদিনও তারা একত্রে থাকেনি বা কথা হয়নি তবুও সে অবনীকে নিজের আশেপাশে চাইছিল না।
তাই বাড়ি ছেড়ে গিয়ে উঠল বন্ধুদের ফ্ল্যাটে।
এরপর কয়েকমাসের ব্যবধানে সবকিছু ঠিকঠাক করে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেল ইউ.এস.এ। জারিফের ইউ.এস.এ যাওয়ার খবরটা যেদিন বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেল, রাগে-ক্ষোভে সাবিনা খানম ঘর ভর্তি লোকের সামনে অবনীর গালে চড় বসিয়েছিলেন। চড় খেয়ে অবনী বুঝতে পারছিল না নিজের দোষটা কী! কেউ যদি নিজ ইচ্ছেয় পরিবার ছাড়ে, স্ত্রী ছাড়ে, দেশ ছাড়ে তাহলে সেখানে ওর দোষটা কী? অবনী বুঝতে পারছিল না কিছুই। সেসময় অবশ্য শ্বাশুড়ি ছাড়া এ বাড়ির প্রতিটি
মানুষই ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল, আগলে নিয়েছিল।
দিয়েছিল বাড়ির বউয়ের মর্যাদা।
কিন্তু যার কাছে থেকে সবচেয়ে বেশি সম্মান, মর্যাদা, ভালোবাসা পাওয়ার কথা ছিল তার কানাকড়িও পেল না অবনী। শুধু পেয়েছিল মিনিট দশেকের কথোপকথনের এক টুকরো স্মৃতি। বাড়িছাড়ার আগের দিন জারিফ ওর সাথে কথা বলতে এসেছিল। সে কথোপকথনের শুরুতেই জারিফের প্রশ্ন ছিল 'অবনী বিয়ের ব্যাপারটা আগে থেকেই জানতো কিনা?'
অবনীর উত্তর ছিল এরকম,
"আমি শুধু আপনার অসুস্থ দাদুকে দেখতে এসেছিলাম হাসপাতালে। জানতাম না ওখানে বিয়েটিয়ে করিয়ে দেবে।"
"বিয়ের সময় তুমি রাজি ছিলে?"
অবনী মাথা নিচু করে বলল,
"দাদু চেয়েছিল।"
অবনীকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে মাঝপথেই জারিফ বিস্ময় নিয়ে বলল,
"দাদু বলল আর তুমি রাজি হয়ে গেলে?"
অবনী স্মিত কন্ঠে বলল,
"আমার বাবা নেই। মা একটা স্কুলে চাকরি করে আর দাদু তার পেনশনের টাকা দিয়ে আমাদের পরিবারটা চালায়। আংকেল মানে আপনার বাবা আমার বাবার বন্ধু ছিল। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আংকেল আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। দাদুর পেনশনের টাকা আটকে গিয়েছিল সেই সমস্যারও সমাধান করে দেন৷ মাকে স্কুলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। সেদিন আমি আর দাদু হাসপাতালে এসেছিলাম আপনার অসুস্থ দাদুকে দেখতে। এরপর আংকেল সেখানেই দাদুকে খুব অনুরোধ করছিল। দাদু ওনার কথায় না করতে পারেননি আর আমিও দাদুর কথার অবাধ্য হতে পারিনি।"
জারিফ নিজের বাবার কান্ড শুনে বিড়বিড় করে বলল,
"দাদুর কথার অবাধ্য হই না, বড্ড বাধ্য মেয়ে তুমি তাই না? তোমার বাধ্যতা, সহ্যসীমা কতটুকু সেটাও আমি দেখে নেব।"
এরপর নিজেকে সংযত করে বলল,
"এতদিনে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো আমি
এই বিয়েটা মন থেকে মানতে পারিনি?"
অস্বীকার করার উপায় নেই। অবনীর অস্বস্তি হচ্ছিল। শুধু মাথা নাড়ল। জারিফ বলল,
"আর মন না মানলে যে একসাথে লাইফ লিড করা যায় না তা তো বুঝো তুমি? পার্টনারশিপ তখনই হয় যখন দু'দিক থেকেই মনের মিল থাকে। মন সাড়া দেয়। সবকিছু ক্লিয়ার থাকে, লুকোচুরি ব্যাপারটা থাকে না। কিন্তু দেখো, আমাদের বিয়েটাই হয়েছিল সবকিছু লুকিয়ে। অন্তত আমার থেকে লুকিয়ে।
বাবার খেয়ালখুশি মতো। আমি কিন্তু তোমাকে চিনতামও না। তুমিই বলো যাকে কখনো দেখিইনি, কখনো কথা বলিনি, যার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি
না তাকে কী করে নিজের পার্টনার ভাবব? পুরোটা জীবন একসাথে কাটিয়ে দেব? এভাবে হয়? না।"

অবনী অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জারিফের দিকে।
কী বলবে ভেবে পেল না। তাদের বিয়ের মাত্র দেড়মাস পেরিয়েছে। অথচ লোকটা হঠাৎ আজ এসে ওকে এসব বলছে? অবনী নার্ভাসবোধ করল। কপাল
ঘেমে গেল। জারিফ চোখমুখ শক্ত করে বলল,
"তোমার সঙ্গে আমার কিছুই মেলে না, যায় না। আমাদের একসাথে থাকা সম্ভব নয়। আবার তোমাকে ডিভোর্সও দিতে পারব না বাবার জন্য। লাইফটা হেল করে দিলো আমার।"
জারিফ এত রিয়্যাক্ট করছে যেন মহা অন্যায়
হয়ে গেছে ওর সঙ্গে। অবনী বিমূঢ় ভঙ্গিতে বসে রইল। জারিফ চলে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরুতে
গিয়েও আবার ফিরে এলো। কঠিন গলায় বলল,
"আমি যেহেতু তোমার প্রতি দায়বদ্ধ নই, সেজন্য তোমার মুভ অন করার চেষ্টা করো। সেটাই বেটার।"
বলে সটান বেরিয়ে গেল। অবনী প্রত্তুত্তর করার
সুযোগ পেল না৷ "মুভ অন" কথাটাতেই আটকে
গেল। এত সহজ কী মুভ অন করা? জারিফ এত সহজে
কী করে বলে গেল? একমাসে যে লোকটা ওর নাবালিকা মনে ছোট্ট একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, সে লোকটা নিজের মতামতই কেন ওর উপর চাপিয়ে দিল? কেন একবারও বোঝার চেষ্টা করল না অবনীর পক্ষে মুভ
অন করাটা সহজ নয়?

#প্রেমরঞ্জনা

৪২টাকায় পুরোটা পাবেন এই লিংকে: https://link.boitoi.com.bd/PWHU

বইটই অ্যাপে চলছে ই-বুক মেলা ২০২৪। প্রোমোকোড (EBOOKMELA2024) ব্যবহার করলে পাবেন ২৫% অফার। ৫৫টাকার ই-বুক #প্রেমরঞ্জনা পড়তে পারবেন মাত্র ৪২টাকায়। দ্রুত সংগ্রহ করে ফেলুন বইটি।

 #অশ্রুবন্দী #লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া  #পর্ব-৭৬[গ.শেষ] শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হলো না ইজহানের৷ খুব গুরুত্...
02/08/2025

#অশ্রুবন্দী
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭৬[গ.শেষ]

শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হলো না ইজহানের৷ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিংয়ে ডাক পড়লো তার। সিরাজ সাহেবকে ফোন করে বলে দিলো, তারা পরদিন যাবে৷ কিন্তু পরেরদিনও যাওয়া হলো না। আজওয়ার জ্বর হয়ে গেল। আর ইজহান তো তার একটা বাচ্চাকে ছেড়েও শ্বশুরবাড়ি যাবে না। তাই সেদিনও যাওয়া হলো না। এর কয়েকদিন পর হঠাৎ খবর এলো ইস্মির ফুপুর শরীর খারাপ। প্রায় যায় যায় অবস্থা। এই অবস্থায় সে ইস্মিকে দেখতে চেয়েছে। অগত্য কী আর করার! ফুপু শ্বাশুড়ির শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে ইজহান বউকে নিয়ে গেল হাসপাতালে। গিয়ে দেখল তার ফুপু শ্বাশুড়ি রাবেয়া বেগম দিব্যি সুস্থ। তবে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, তার মাথায় চুল নেই। যেটুকু আছে সেটা ছোট্ট একটা ক্লিপ দিয়ে আটকে রাখা। দেখে হাসি পেল ইজহানের। রাবেয়া বেগম ঢোলাঢালা ম্যাক্সি পরিধান করে হাঁটাহাঁটি করছে, পান খাচ্ছে, এর ওর সাথে গল্প করছে। এমনকি আইরাহকে কোলে নিয়ে আদরটাদর পর্যন্ত করল। ইস্মিকে দেখে কতক্ষণ কান্নাকাটি করে হায়-হতাশ করে তার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবার গল্প বলা শুরু করলেন। বহুদিন পর ইস্মিও আগ্রহ নিয়ে সবার খোঁজখবর নিলো। এক কথায়, দেখে মনেই হলো না রাবেয়া বেগম অসুস্থ। একফাঁকে ইস্মি মেয়েকে ওর কাছে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলে ফুপু শ্বাশুড়ি রাবেয়া বেগম ইজহানকে বাঁকা গলায় জিজ্ঞেস করল, “তো তোমার মাইয়ার নাম কি রাখছ?”

”আইরাহ ইজহানজাদী!”
ইজহান শেখের মেয়ের নাম। সুন্দর নামটা রেখে দিয়েছিল এলিজা আর ইহসান। বলা যায়, শোধবোধ আরকি! আযরান-আজওয়া নাম দুটো যেমন সে আর এলিজা মিলে রেখেছিল; তেমনি তার মেয়ের নামও ইহসান আর এলিজা রেখেছে।

তবে এই নাম শুনে রাবেয়া বেগম চোখমুখ কুঁচকে বললেন, “ইতা নাম কেডায় রাখছে? ওর চেহারার লগে তো টুনটুনি পাখির নামডা মিলে।”

ইজহান বিরক্তি নিয়ে বলল, ”এলিজ আর আমার ভাই রেখে দিয়েছে। আপনার দেওয়া বিচ্ছিরি নামের চেয়ে শতগুণ ভালো।”

রাবেয়া বেগম পান চিবুতে চিবুতে বললেন, “কইছে তোমারে! আয়রা না বাইরা। নাম শুইনাই মনে হয় বাইল্লা মাছ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতাছে। জম্মের অপছন্দ আমার বাইল্লা মাছ।”

ইজহানের এত রাগ হলো! সে কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করল, “আপনার না যায় যায় অবস্থা? আপনি তো দিব্যি সুস্থ!”

আঙুলের ডগায় চুন লাগিয়ে রাবেয়া বেগম খ্যাটখ্যাটে গলায় বলল, “আধপাগল জামাই হুনো, তুমি যদি হুনতা আমার ডেঙ্গু জ্বর, তাইলে তো আমার ইস্মিটারে আসতেই দিতা না। তাই ওগো শিখাই দিসি তোমারে কইতে যে, আমার শ্বাস যায় যায় অবস্থা।”

ইজহান রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “আমি আধপাগল?”

জবাবে রাবেয়া বেগম বললেন, “পুরা পাগল। পাবনা ফেরত পাগল।”

“কে বলল এই কথা?”

“তোমার হওর মশাই।”

চোয়াল শক্ত করে ফেলল ইজহান। তাকে পাবনার পাগল বলা? এই শ্বশুরটাকে তো সে দেখে নেবে। ফুপু শ্বাশুড়ি আবারও ওকে বলল, “শুনলাম তুমি নাকি মাইয়াটার পড়াশোনা করতে দেও নাই? মূর্খ বানাই রাখছ? অথচ পড়াশোনায় কত ভালো আছিলো আমার ইস্মি!” বলে ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে আবার বলল, “কোথাও ঘুরতে-টুরতে নিয়েও নাকি যাও না? কেন বাবা, তোমার না কাড়ি কাড়ি ট্যাহাপয়সা? এসব কি কবরে লইয়া যাইবা? যৌবনে যদি স্বামীর লগে মাইয়াটা ঘুরতে যাইতেই না পারে, ওর একটা আফসোস থাইকা যাইব না সারাজীবন? এই পাঠাডা স্বামী না আসামি রে বাবা!”

বিড়বিড় করল রাবেয়া বেগম। সে পাঠা? তাকে টাকাপয়সা নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলা? রেগে উঠে উচিৎ জবাব দিতে গেলে ইস্মি এসে আড়ালে নিয়ে জানাল, তার ফুপু মানসিক সমস্যায় ভুগছে দীর্ঘদিন যাবৎ। যাকে দেখে তাকেই উল্টাপাল্টা বলে। সে যাতে কিছু মনে না করে। অগত্যা চোয়াল শক্ত করে বুড়ির অভিযোগ শুনে গেল। এরপর ঘন্টা তিনেকের মতো সেখানে কাটিয়ে ফুপু শ্বাশুড়ির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে থমথমে চেহারায় বেরিয়ে এলো ইস্মিকে নিয়ে।

ফেরার সময় চিরপরিচিত পথ বাদ দিয়ে গাড়ি ইউটার্ন নিয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে N8 রোড ধরে এগুতে লাগলে ইস্মি ভ্রু কুঁচকে ইজহানের দিকে তাকাল। কিছুই জানে না এমন একটা ভাব করে ইজহান ঠোঁট গোল করে গাল চুলকাতে চুলকাতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। ইস্মি মিজুকেই জিজ্ঞেস করল, “বাড়ির পথ তো অন্যদিকে। আপনি ওদিকে যাচ্ছেন কেন ভাই?”

“স্যার বলছে।”

কোথায় যাচ্ছে, এই প্রশ্নটা ইজহানকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে থেমে গেল সে। ত্যাদড় লোক কিছুই বলবে না তাকে। উল্টো খ্যাঁকিয়ে উঠবে! কিন্তু এদিকওদিক গেলে বাড়ি ফিরবে কখন? সঙ্গে তো বাচ্চা মেয়েটা আছে নাকি? ইস্মি বেশ বিরক্ত হলো।

যানজট খুব একটা ছিল না। তাই দেড় ঘন্টার মধ্যেই মাওয়াঘাটে পৌঁছে গেল ওরা। মিজু ওদের একটা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে গাড়িটা পার্ক করতে চলে গেলেও ইস্মি যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। ইজহান মুখে কিছু না বলে ওর হিজাবটা টেনেটুনে ঠিকঠাক করে মেয়েকে কোলে নিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী সমস্যা?”

ইস্মি অপ্রস্তুত গলায় বলল, “কোনো সমস্যা না।”

“তাহলে দাঁড়ানো কেন? যৌবনে ঘুরাঘুরি করে মনের সাধ পূরণ করিয়ে দিলাম তো। কত লোক দেখ, এইযে তাকিয়ে আছে তোর দিকে। আনন্দ হচ্ছে না?”

ইস্মি বোরকার আড়ালে নিজের হাতদুটো ঢুকিয়ে ফেলল আরো। বিব্রত স্বরে বলল, “না।”

“আমার হাতের থাপ্পড় খেয়ে কোনদিন মরে যাস, পরে তো আফসোস নিয়ে মরবি। তার আগে পরপুরুষের মেলা দেখে যা।”

রাবেয়া বেগমের খোঁচা শুনে যে লোকটা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে সেটা বেশ বুঝল ইস্মি। সে ইজহানের বাহু চেপে ধরল, “এতো সুন্দর বর থাকতে পরপুরুষের দিকে নজর দিতে হবে? তার আগে তো আমার চোখদুটো অন্ধ হয়ে যাবে।”

ইজহান অগ্নিচোখে তাকাল, “উল্টাপাল্টা কথা বলা বন্ধ করো।”

ততক্ষণে গাড়ি পার্ক করে মিজু এসে পড়েছে। তারা যেখানে দাঁড়ানো সে জায়গাটা একদম পদ্মার পাড় ঘেঁষে। একপাশে অসংখ্য খাবারের হোটেল, অন্যপাশে চেয়ার-টেবিল সাজানো। সবগুলো মানুষে ভর্তি। ইজহান নাক সিঁটকাচ্ছে বারবার। স্যাঁতসেঁতে মাটিতে পা ফেলতেও তার গা ঘিনঘিন করছে। তবে এখনো পর্যন্ত সে চুপচাপ আছে। বেশিকিছু বলছে না। মিজু লোক দিয়ে আগেই তুলনামূলক নিরিবিলি, পরিচ্ছন্ন একটা জায়গা বুকিং করে রেখেছিল। সেখানেই নিয়ে গেল তাদের।

রাত তখন ঠিক ৮টা।
ঢাকা-মাওয়া সড়ক ধরে শত শত গাড়ি ছুটে চলছে। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখতে অপার্থিব লাগছে। ইস্মিতারা বসে আছে পদ্মা সেতুর ঠিক নিচে, মাটির ধারে একটুখানি উঁচু জায়গায়। ঘাটের পাশে পুরনো কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে তাদের মতোই ঘুরতে আসা অনেকেই। কেউ পুরো পরিবার নিয়ে এসেছে, কেউ জীবনসঙ্গী বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে আবার কেউবা একা। চায়ের কাপের ধোঁয়া উঠে আসছে ধীর লয়ে। মিষ্টি গন্ধে মেশানো তেলেভাজার ধোঁয়া, মচমচে ইলিশ ভাজা, পোড়া বেগুন আর নুন-মরিচ-মুগডালের ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে এসব কিছুতেই মন নেই ইজহানের। পদ্মার হাওয়ায় কাগজের ঠোঙা উড়ছে, ইজহান পায়ের নিচে চেপে ধরেছে সেটা। গাঢ় বাদামি শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখে, ব্রিজের উপর দিয়ে ছুটে চলা গাড়ি দেখাচ্ছে মেয়েকে। আইরাহ হাসছে খিলখিল করে। তাকে দেখে খুবই আনন্দিত মনে হচ্ছে। চলন্ত গাড়িবহর দেখেও মেয়েমানুষ খুশি হয়, ইজহান শেখ ভেবেই পায় না কীভাবে সম্ভব!

পদ্মা তখন কালো কাচের মতো চকচকে,
সেই কাচে জ্যোৎস্নার আলো পড়ে পড়ে ভেঙে যাচ্ছে ঢেউয়ের ফোঁটায় ফোঁটায়। সেতুর দিক থেকে নেমে আসা আলোগুলো ধীরে ধীরে পানিতে গলে মিশে গেছে৷ লাইটপোস্টের নিচে গাঢ় হলুদ রঙের ঝাপসা আলোয় নেমে এসেছে এক অপার্থিব ঘোর। এখানকার বাতাসটা একটু অসম্ভব সতেজ। গায়ে এসে লাগলেই নদীর শীতল ছোঁয়া টের পাওয়া যাচ্ছে। বহুদিন পর ইস্মিতা মুগ্ধতা মেশানো চোখে সব দেখছে। খুশিতে তার কান্না পাচ্ছে। এত বছরে প্রথম কোনো খোলামেলা জায়গায় তাকে নিয়ে এসেছে ইজহান শেখ, শহরের বাইরে আলো-আঁধারির একাকিত্বে। কতদিন পর সে এভাবে মুক্ত আকাশের নিচে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, ভেবেই চিত্ত শিহরিত হলো৷ মেয়েকে ঝুনঝুনি কিনে দিয়ে সেটক নিয়ে খেলায় মত্ত ইজহানকে বলল, “আমাকে আবার নিয়ে আসবেন এখানে? আমি নদীর জলে একটু পা ভিজিয়ে বসে থাকতে চাই। একা একা।”

ইজহান কঠিন মুখে বলল, “একা হলে আসা যাবে না।”

“আচ্ছা, আপনিও তাহলে পানিতে পা ভেজাতে চান?”

ইজহান অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, আমার বউ তো চায়।”

ইস্মি হাসি আটকে বলল, “বউ তো এটাও চায়, ইজহান শেখ সাথে থাকুক।”

“থাকবে।'’

ইস্মি ওর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজল। আহারে! দিনদিন আবেগী যাচ্ছে ইস্মিতাটা। আগে কোথায় বরকে সামলাতো, এখন তাকেই সামলাতে হচ্ছে। ইজহান আলতো করে ঠোঁট রাখল ইস্মিতার শিফনের হিজাবটার উপর। ইস্মি ওর কাঁধে নাক ঘষে ভার স্বরে বলল, “সর্দি মাখিয়ে দিয়েছি।”

“কোনো ব্যাপার না। বউ থাকলে শার্টের বুকে সর্দি লাগবে এটা তো খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। সাধারণ ব্যাপারে ইজহান শেখ রাগ করে না।”

ইস্মি হাসি আটকে বলল, “তাই?”

“অবশ্যই।”

ঠিক তখনি কমবয়েসী একটা ছেলে মেন্যুকার্ড নিয়ে এসে একটানা বলল, “এ স্যার? চা-দিমু? আমাদের এইখানে সাতরঙা চা ছাড়াও দশ রকমের চা পাওয়া যায়। দুইকাপ অর্ডার করলে এক কাপ ফি-রি!”

ইজহান চোখ গরম করে তাকাল লোকটার দিকে। দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলল, “আমার কি টাকার এতই অভাব যে ফি-রিতে চা খেতে হবে? আর তোর যে দোকান, দেখেই তো পেট গুলিয়ে আসছে। এক কাপে সব মুখ লাগিয়ে খাচ্ছে...”

দোকানি ছেলেটা মেজাজ খারাপ করে বলল, “ওয়ান টাইম কাপ স্যার। এক কাপে মুখ লাগাই খাওনের মানেই নাই।”

“রাখ তোর ওয়ান টাইম। ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনে বড় বড় কথা।”

ইস্মি বুঝল এক্ষুনি একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে দেবে এই লোক। সে ছেলেটাকে ইশারায় যেতে বলে ইজহানের বাহুতে হাত রেখে আমতা-আমতা করে বলল, “আমাকে এখানকার ইলিশ ভাজা খাওয়াবেন না?”

“নোংরা খাবারে এতো ঝোঁক কেন?”

“নোংরা খাবার?”

“পরিবেশ নোংরা বলেছি। নদীর নোংরা পানিতে মাছ ধোয়। শ্যাওলা পড়া জায়গায় রেখে মাছ কাটে। এরপর ইট, বালুর গুড়া মেশানো মশলা দিয়ে মবিলে মাছ ভাজে। ওসব খাওয়ার চেয়ে আত্ম হ ত্যা করা ভালো। আসছে ইলিশভাজা খেতে...”

যেন মনে করলেই বমি পাচ্ছে তার। ইজহান শেখ কতক্ষণ এমনই করল। কিন্তু যা হোক, তা হোক ইস্মি জেদ ধরল তাকে মবিলে ভাজা ইলিশ, বেগুন ভর্তা খাওয়াতেই হবে। মাওয়ায় ঘুরতে এসে যদি অপরিচ্ছন্নতার দোহাই দিয়ে এখানকার বিখ্যাত খাবারই না খায় তাহলে স্মৃতিটা পাকাপোক্ত হবে কীভাবে? স্মৃতি জমানোর ধান্ধায় ওসব অখাদ্য খাওয়ার ধান্ধা! ইজহান ওর কোনো কথা শুনল না।রেগেমেগে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। যার মানে,
এখন ফেরার সময়। আইরাহ ধারালো নখ দিয়ে বারবার তার গায়ে আঘাত করছে। ইজহান একপর্যায়ে মেয়ের হাত মুঠোয় ধরে ছোট ছোট চোখ করে দেখে বলল, “খুব বড় হয়ে গেছে মা, বাড়ি ফিরেই কেটে দেব। মায়ের মতো তুমি এখন আমাকে জ্বালাচ্ছ, ওসব বন্ধ করো। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি না?”

আইরাহ'র তার কথা শুনে ছোট্ট, কোমল হাতটা পাপার মুঠো থেকে বের করে আবার পাপার মুখে আঘাত করল। ইজহান শেখের মনে হলো, ইস্মিতাকে বকা দেওয়ায় তার মেয়ে তাকে পানিশমেন্ট দিচ্ছে। দিক পানিশমেন্ট! তবুও ওসব নোংরা পরিবেশের খাবার সে খেতে দেবে না৷ ঘুরতে নিয়ে এসেছে এটাই বেশি।

এদিকে জেদ করে ইস্মি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও একসময় গাড়িতে উঠে চুপচাপ বসে রইল। এই লোকটা নিজের মর্জিমাফিক সব করে। এক্ষুনি বুকে টেনে এক্ষুণি পায়ে ঠেলে দিয়েছে এমন তো কতবার হয়েছে? এটা সে ভুলে যায় কেন? সামান্য মাছই তো, না খাওয়ালে না খাওয়াক। কতশত সাধ-আহ্লাদই তো সে বাদ দিয়েছে এ লোকটার জন্য! এতে কষ্ট পাওয়ার কি আছে? তবুও ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ক্ষিধে পাওয়ায় আইরাহ কান্নাকাটি শুরু করেছে গাড়িতে বসেই। ইস্মির অসহ্য লাগছিল বিধায় প্রচন্ড জোরে মেয়েকে ধমক দিয়ে বসল। সঙ্গে সঙ্গে আইরাহ ভয়ে কেঁপে উঠে কান্না বন্ধ করে দিলো। সিঁটিয়ে গেল পাপার বুকে। ইজহান রক্তগরম চোখে তাকাল ইস্মির দিকে। ওর চাহনি দেখে টলমল চোখ মুছে দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েকে নিয়ে ব্রেস্টফিড করাতে লাগল ইস্মি।

°

বাইরে উত্তাল বাতাস। গাড়ির গতির সাথে পাল্লা দিয়ে যেন বেগটাও বাড়ছে। ইস্মি রাগ ভুলে জানালা আটকে দিতে বলল ইজহানকে। উইন্ডো ক্লোজ করে দিতেই আইরাহ তিড়িংবিড়িং করে হাত-পা ছুঁড়ে ঘাড় উঁচু করে হেলে বসতে চাইল। ইস্মি ওকে বসিয়ে দিতেই জোর ঠোঁট ভেঙে কেঁদে উঠল। কান্নার কারণ বুঝতে একটু সময় লাগল সকলের। স্ট্রিট লাইটের আলোয় গাড়ির ভেতরটা ঝকমক করছিল এতক্ষণ, উইন্ডো ক্লোজ করে দেওয়ায় সেটা আর হচ্ছে না। মেয়ের কাছে এটা মজার খেলা। তাই সে কাঁদছে। ওকে ধরে রাখতে গিয়ে ইস্মি হাতটাও নাড়াতে পারছে না। এতটুকু একটা বাচ্চার জেদ দেখে ইস্মি অবশ্য হতবাক হলো না। দেখতে হবে তো মেয়েটা কার! ইজহান মেয়ের অসন্তোষ বোঝে জানালাটা হালকা ফাঁকা করে মেয়েকে নিজের উরুর উপর বসাল। ছোট ছোট লাল চেরিফুল ছাপা সাদা জামা আর কপালে হ্যাডব্যান্ড। ডাগরডাগর চোখে বড়ো বড়ো পাপড়ি, ফোলা ফোলা গাল আর লাল দুটো ঠোঁট। দেখলেই আদর করতে হাত নিশপিশ করে। ইজহান আইরাহ'র গাল টেনে দিতেই তাকে বেশ বিরক্ত দেখাল। থাবা দিয়ে হাত সরিয়ে দিলো। তার মেয়ে বসা শিখেনি। ঘাড়টা সোজা রাখতে শিখেছে। এভাবে বসে সে তার পাপার হাতের আঙুল কামড়ায়। এতেই তার দারুণ আনন্দ। ইজহান বেশ জানে। আকস্মিক তার কিছু মনে পড়তেই মুখ কালো করে ইস্মিকে বলল, ”আমার মেয়েকে কিন্তু আমি দূরে যেতে দেব না। কথাটা সবার মাথায় ঢুকিয়ে রাখা হোক।”

ইস্মি অবাক, “মানে? আমার মেয়ে আমি দূরে যেতে দেব কেন? আশ্চর্য!”

ইজহান দাঁত কটমট করে বলল, “তখন ঐ মহিলাটা যখন বলল বড়ো হলে তার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেবে? তুইও তো হি হি করে হাসলি।”

হসপিটালে পাশের বেডের এক মহিলা তার মেয়েকে কোলে নিয়ে আদরটাদর করে মজা করেই বলেছিল কথাটা। অথচ এই লোক শুনে ফেলেছে। সব কথায় কান পেতে রাখে এই লোক। ইস্মি বিরক্তি নিয়ে বলল, “তো মেয়ের বিয়ে দিতে হবে না? সারাজীবন আইবুড়ো করে রাখবেন নাকি?”

”আইবুড়ো করে রাখব কেন? মেয়েকে অবশ্যই বিয়ে দেব। তবে দূরে কোথাও না, কাছে। যাতে সবসময় আমার কাছে, আমার সঙ্গে থাকতে পারে।”

বলে দু’গালে চুমু খেয়ে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলল আইরাহকে। মেয়েটা পাপার বুকে ঢুকে গো গো শব্দ করল যেন পাপার কথায় সে সহমত। সামনে থেকে মিজু আগ্রহ নিয়ে বলল, “ঘরজামাই আনবেন নাকি স্যার?”

মানে লাজলজ্জা নেই নাকি কিছু? ঘরজামাই আনবে কেন সে? ওসব মেরুদণ্ডহীন, কাপুরুষের কাছে তো সে মেয়ে বিয়ে দেবেই না। মিজুটা কীভাবে এই কথা ভাবল? ইজহান খ্যাঁকিয়ে উঠল। মিজু চুপসে গিয়ে বলল, “মেয়েরে দূরেও পাঠাইবেন না, আবার ঘরজামাইও আনবেন না। তাইলে কীভাবে কী স্যার?”

ইজহান আরাম করে দুপা ছড়িয়ে বসে বাঁকা হেসে বলল, “ঘরেই তো আমার মেয়ের জামাই আছে। তো বাইরে থেকে আনব কেন? ঘরের ছেলে, ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকবে।”

ইস্মি অবাক গলায় প্রশ্ন করল, “মানে?”

“ভেড়ার ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে দেব। এটাই সহজ সমাধান।”

ইস্মির কাশি উঠে গেল এই কথা শুনে। মেয়ের বয়স চারমাসে পড়েনি অথচ লোকটা কার কাছে মেয়ের বিয়ে দেবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছে? ইস্মি আমতা-আমতা করে বলল, “আযরান ওর ভাই। ওরা ভাই-বোন।”

“কীসের ভাইবোন? টনা আমার মেয়ের জামাই। আমিতো ওকে সেভাবেই গড়েপিঠে নিচ্ছি। যাতে ভবিষ্যতে আমার মেয়ে অভিযোগ করার সুযোগ না পায়। কিন্তু যা বুঝলাম, বাপের ছায়া অনেক বেশি ওর মধ্যে। নাহ, আরো স্ট্রিক্টলি হ্যান্ডেল করতে হবে বিষয়টা।”

চিন্তিত দেখাল তাকে। ইস্মি বলল, ”সবই বুঝলাম। কিন্তু আপনার শিক্ষা-দীক্ষায় বড় হলে আযরান তো আপনার মতো একটা আধপাগল হবে। আপনি যেমন আমাকে টাইটে রাখেন, আপনার মেয়েকেও তখন কিন্তু সে টাইটে রাখবে। পড়াশোনা বন্ধ করে রান্নাবান্না, কাপড় কাচা আর স্বামী সেবায় লাগিয়ে রাখবে। অবশ্য মেয়েদের কাজই তো এসব।”

তার এইটুকু মেয়ে দিয়ে রান্না করাবে, কাপড় কাচাবে? টনাটার এতো সাহস? শাণিত চোখে তাকাল ইজহান বউয়ের পানে। ইস্মি এমন একটা ভাব করল, যেন সে মহাখুশি। আল্লাহ দিয়েছে মেয়ে, এবার বুঝুক মেয়ের বাপ হওয়া কতটা কঠিন। এদিকে ইজহান দ্বিধান্বিত হয়ে গেল। আসলেই কি, তার শিক্ষায় বড় হলে টনাটা তার মেয়েকে...

আর ভাবতে পারল না। তার আগেই ইস্মি ঠেস মারা কণ্ঠে বলল, “ভাইয়া মতামত দিয়েছে তো? আপনার মেয়েকে তার ছেলের জন্য নিতে আপত্তি নেই তো?”

বিরক্তিসূচক ‘চ’ কারান্ত শব্দ করে বলল ইজহান, “ভেড়ার আবার আপত্তি কীসের? আমার পরীর মতো মেয়ে ওর শুশু করা ছেলেকে বিয়ে করবে এটাই ওর রাজকপাল। তাছাড়া ওর মতের ধার ধারছেটা কে? ছেলে-মেয়ে আমার, ওদের নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা আমিই নেব।”

একরোখা কণ্ঠে কথাগুলো বলে গেল ইজহান।
ইস্মিতা আর মিজু তার কথা শুনে বাক্যহারা হয়ে বসে রইল। কেউই আর কথা বাড়াল না। ভালোমন্দ, ঝগড়া, খুনসুটি মুহূর্তের পরই হঠাৎ অভাবনীয় একটা মুহূর্ত এলো। ঘটনাটা ঘটল গাড়িটা যখন আমিনবাজার হয়ে হেমায়েতপুর পৌঁছাল তখন। মিজুর চোখে পড়ল একটা মালবাহী ভ্যান বহুক্ষণ ধরে তাদের গাড়িকে ফলো করছে। রাত গভীর হচ্ছে, শহরের কোলাহল স্তিমিত হয়ে আসছে, কিন্তু রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা হয়নি এখনো। প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও, ভ্যানটার নাছোড় গতি দেখে মিজুর ভেতরে খচখচে সন্দেহ জাগতে লাগল। সে গতি বাড়ালো। পেছনের ভ্যানটাও বাড়াল গতি। এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন থেকে আচমকা এসে ধাক্কা বসাল ভ্যানটা। একবার না, পরপর দু'বার। শেষবারের ধাক্কায় গাড়িটা রাস্তার পাশে গাদাগাদি করে রাখা মোটা সিমেন্টের থামে গিয়ে ঠোক্কর খেল। প্রচণ্ড শব্দে ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল ট্রাংক ডোর আর টেল লাইট। আচমকা ধাক্কায় ইজহানের উরুতে খেলারত অবস্থায় থাকা আইরাহ ছিটকে গিয়ে পড়ল সামনের সিটের হাতলে। পাশের জানালায় আছড়ে পড়ল ইস্মিতার মাথা। কপালে প্রচন্ড ব্যথা লাগা ইজহান কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়েকে যে কীভাবে কাছে আনলো, আর অন্য হাত দিয়ে ইস্মিকে টেনে আনল নিজের দিকে সে টের পেল না। বিস্ময়ভরা চোখে দেখল, ওপাশের জানালার কাচটা ভেঙে ইস্মিতার গাল কেটে গেছে। তার নিজের হাতেও লেগেছে সেই কাচ, রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

আইরাহ'র কপাল ফুলে গেছে। ঠোঁট কেটে গেছে। মেয়ের অবস্থা দেখে হতভম্ব ইজহান আঙুল দিয়ে কাটা ঠোঁটটা ছুঁতেই সশব্দে কেঁদে উঠল আইরাহ। ইজহানের বোধ ফিরল। চমকে পিছনে তাকাতেই দেখল, মালবাহী ভ্যানটা থেমে গেছে। তবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এগিয়ে আসার। কী হতে যাচ্ছে ভেবে বুক ধকধক করে উঠলেও মাথা ঠান্ডা রাখল ইজহান। এক মুহূর্ত দেরি না করে চিৎকার করে মিজুকে বলে দিল কী করতে হবে। মিজুর মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। ধাক্কায় তার কান দিয়ে রক্ত পড়ছে, একপাশ ফুলে উঠেছে। কিন্তু ইজহানের তার কথা কানে ঢুকল। এবং সেটাই তাকে ফিরিয়ে আনল নিয়ন্ত্রণে। ইঞ্জিন তখনও সচল, গাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বাম হাতে স্টিয়ারিং ধরে মিজু গতি তুলল। সাইড-মিররে এক ঝলক দেখে নিল ভ্যানটাও আবার গতি নিচ্ছে। তখনই সে একটা দ্রুত বাঁক নিল, বাসস্টপ পেরিয়ে রাস্তার ডান পাশের এক সরু গলিতে ঢুকে গেল। পিছু নেওয়া ভ্যানটা আটকে গেল গলির মাথায়ই। রক্তাক্ত এদিকে মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া এতবড়ো দুর্ঘটনা আর মেয়ের অবস্থা দেখে জোরাল শব্দে কেঁদে উঠল ইস্মিতা।

________

[অপেক্ষায় রাখার জন্য খুবই দুঃখিত। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।]

চলবে...

 #অশ্রুবন্দী #লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া  #পর্ব-৭৬ [খ] বাড়িতে আসার পর একদিনও বাইরে বের হয়নি, বলতে গেলে কোথাও যায়ইনি আরস...
29/07/2025

#অশ্রুবন্দী
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৭৬ [খ]

বাড়িতে আসার পর একদিনও বাইরে বের হয়নি, বলতে গেলে কোথাও যায়ইনি আরসালান। যেই অনুভব করল তার আকর্ষণ কেড়ে নেওয়া ফুলটিকে এ বাড়ির বাতাসে আর অনুভব করতে পারছে না; অস্থির হয়ে উঠা সে মকবুলের ঘাড় চেপে ধরে জানতে পেরেছিল, সে তার বাড়িতে ফিরে গেছে। মাথাটা এলোমেলো হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। গায়ে শার্টটা চাপিয়ে কেমিকে নিয়ে বেরুবে, গ্যারেজে এসেই দেখল সে, তার রুবিকনের ব্যাটারি খুলে ভুলভাবে কানেক্ট করে সার্কিট ড্যামেজ করে, ম্যানুয়াল গিয়ারে ক্লাচ পুড়িয়ে, কমপ্রেসড এয়ার ইনটেকে পানি ঢুকিয়ে, এবিএস সেন্সরে কাট করে ইনজান শেখের রুবিকন জীপটাকে অকেজো করে দিয়েছে ইহসান শেখ। বাইক চুরমার করে দেওয়ার প্রতিশোধ হিসেবেই যে কাজটা করেছে কাউকে আর বুঝিয়ে দিতে হলো না৷ ক্রোধে উন্মত্ত ছোটো ছেলেকে দেখে আজিজ শেখ পড়লেন মহাবিপাকে। কয়েক মাস আগে ছেলের আবদার মেটাতে বিশেষভাবে কাস্টোমাইজ করে চড়ামূল্যে টেক্স দিয়ে বিদেশ থেকে গাড়িটি আনিয়েছিলেন তিনি। যেটা এই মুহূর্তে ধ্বংসাবশেষ হয়ে গ্যারেজের এক কোণে পড়ে আছে। ইট মারলে পাটকেল খেতেই হয় এই প্রবাদটাই শুনতে হলো ইনজান শেখকে। এরপর রিহ্যাবে পাঠানোর দু'দিনের মাথায় যখন সে ওখানকার স্টাফদের জখম করে চলে এলো, ইহসান ওর ভালোমন্দের ব্যাপারে ভাবা বন্ধ করে দিলো চিরতরের মতো। পশুকে যেমন মাংস খাওয়া থেকে বিরত রাখা যায় না, তেমনি আরসালান শেখকেও বিরত রাখা গেল না তার স্বভাবগত প্রবৃত্তি থেকে। কিছু কিছু বিষয়ে নির্লিপ্ততা অবলম্বন করে সে ফিরে গেল তার ধ্বংসাত্মক জীবনেই। ইহসানের সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ হলো ঠিক সেদিন থেকেই।

নিদ্রাপুরীতে পরিণত হওয়া শেখ বাড়ির দোতলাতে স্ট্যারী নাইট অঙ্কিত ঘরটা থেকে চতুর শেয়ালের মতো বেরিয়ে এলো আরসালান। ডান পাশের ঘরটার সামনে এসে নিশ্চুপতা অবলম্বন করে দরজাটা খুলে নগ্ন পায়ে ভেতরে ঢুকতেই খা খা শূন্য একটা ঘর পেয়ে ভ্রু দুটো অস্বাভাবিক ক্রোধে কুঁচকে গেল আরসালানের। তীক্ষ্ণ চোখে ঘুরেফিরে ঘর, বারান্দাটা দেখে নিয়ে ধীর কদমে এগিয়ে গিয়ে সাদার উপর নীল রঙের বড়ো বড়ো ছাপাওয়ালা বিছানাটায় হাত-পা মেলে শুয়ে পড়ল সে। হাত বাড়িয়ে বুকের কাছে বালিশ টেনে নিয়ে নাক ঠেকাল সেখানটাতে। একটাতে অচেনা, তেল চিটচিটে গন্ধ পেলেও অন্যটাতে স্বল্প পরিচিত তবুও কামুকতা তুলে দেওয়ার মতো ঘ্রাণ; তার নাসারন্ধ্র ঠিকই চিনে নিলো। বালিশটাকে দু'হাতে পিষে নিজের বুকের নিচে রাখল সে। মুখ গুঁজে রইল অনেকটা সময়। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠল এলিজা রেহমানের পেলব মুখটা।
চট করে চোখদুটো খুলে পকেট থেকে আধা ছেঁড়া স্কেচটা বের করে আঙুল বুলাল সে মেয়েলি অবয়বটার উপর। মেয়েটার ঠোঁট-মুখ এতোটা নিঁখুত, গাল কপালের ঐ দাগটা কিছুতেই এই মুখটাকে ম্লান করে দিতে পারে না। আরসালান ইনজান শেখ পরণের শার্টের দুটো বোতাম খুলে বুকের ভেতর ছবিটাকে রেখে দিয়ে বালিশে নাক চেপে নিদ্রায় ডুবে গেল নিত্যদিনকার মতো।

°

ইজহান শেখ, মানুষটা একরোখা, আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর। নিজের ভালোটা ছাড়া অন্য কার কী ছেঁড়া গেল তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা বরাবরই নেই ওর। এটা সবাই জানে। তবু বেশ কয়েকদিন যাবৎ একটা ব্যাপারে তার মাথাব্যথা হচ্ছে। তার কারণ ইস্মিতার আইবুড়ো ভাই আকাশ। যার বিয়ের বয়স সাগরের ঢেউয়ের মতো উচ্ছলতা প্রকাশ করছে, কিন্তু সে এখনো কোনো ঘরে বাঁধা পড়েনি। ইজহানের মাথাব্যথার কারণ অবশ্য আকাশের সেলিবেসি জীবন নয়। বরং সমস্যা হল ইস্মিতার মুখখানা। সেদিনের ঐ ঘটনার পর থেকেই একটা ভার চাপা পড়েছে সেখানে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রাখার যে নিঃশব্দ সংগ্রাম চালাচ্ছে, তা ইজহানের চোখ এড়ায়নি। সে তাই শঙ্কিত। অতীতে ইস্মিতাকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবার অদৃশ্য চেষ্টায় আকাশ ছিল প্রতিপক্ষ। তাকে ইজহান কথার খোঁচায়, বাঁকা ঠাট্টায়, এমনকি প্রান্তসীমা ছুঁয়ে যাওয়া ধাক্কাধাক্কিতে পর্যদস্ত করার চেষ্টা করেছে মুখোমুখি হলেই। করেছে আকাশ নিজেও। দু'জনেই, সমান তালে। কিন্তু ইচ্ছেকৃত মারধর করা বা থুতু ছোড়ার মতো অপমানজনক কাজও তারা কেউই করেনি। শত রাগের পরেও না। তাদের দ্বন্দ্ব ছিল, কিন্তু তার সীমা ছিল। সবসময়ই আকাশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে নিজের ক্রোধ সংবরণ করে নিতো। সেই আকাশের গায়ে আরসালান থুতু দিয়েছে, টব ফেলেছে, পা মচকে ফেলেছে। বরাবরের মতোই আকাশ নিজেকে সামলে নিয়েছে। কুকুরের কামড়ে নিজেও কুকুর হয়ে যায়নি। একটা প্রতুত্তরও করেনি। সেই দৃশ্যটা ইজহানের ভেতরে এখন ঢেউ তোলে। শত কথা মিথ্যে হলেও এটা মিথ্যে নয় যে, আকাশ সুপুরুষ এবং উদার মনা একজন ব্যক্তি। যার ধৈর্যটাও চোখে লেগে থাকার মতো। বিভিন্ন সাংগঠনিক কমিটির সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুণই হয়তো সে এই স্বভাবটা আয়ত্তে নিতে পেরেছে। তবে সকলের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ভাবে চলার চেষ্টা করলেও আবার ঘাড়ত্যাড়া ব্যক্তির সাথে ঘাড়ত্যাড়ামি সে নিজেও করে। যেমন মচকানো পা নিয়েই সে শেখ বাড়ি থেকে বিদায় নিয়েছিল সেদিন। কারো উদ্বিগ্নতা, বারণ কানেই তুলেনি। ইজহান তার গাড়িতে করে পৌঁছে দিতে চাওয়ায় আকাশ ‘থ্যাংকস’ বলে রিকশা নিয়ে নিজেই চলে গেছিল। ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা ইজহান স্পষ্ট দেখেছিল আকাশের চোখে জমে থাকা অপমান আর ক্রুদ্ধ আগুন।

এদিকে স্বাভাবিক থাকার ভান করে সব কাজকর্ম করলেও ইজহান বেশ বুঝতে পারে ইস্মিতার মনে জমা কালো মেঘের ঘনঘটা। সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করতে কেমন বাঁধছিল তার। তবে সে তো এই দ্বন্দ্বের সঙ্গে আপোষ করার ব্যক্তি নয়, তাই অফিসের ফাইলে নজর বুলানোর ভান করে সে গলা খাকারি দিয়ে আজ প্রশ্নটা করেই ফেলে, “ইস্মিতার ভাইজানের পা’য়ের অবস্থা এখন কেমন? তাকে কি একবার বাড়িতে আসতে বলা যায়?”

কাঁথা ভাঁজ করতে থাকা ইস্মিতার হাত থেমে যায়। ধীর চোখে তাকায় ইজহানের দিকে, তারপর কাঠ হাসি মুখে বলে, “ধন্যবাদ আপনার উদ্বেগের জন্য। কিন্তু আমার ভাই শেখ বাড়িতে আর কোনোদিন পা রাখবে না।”

শব্দগুলো কোমলভাবে বলা হলেও ভেতরে বিষাদের এক সমুদ্র লুকিয়ে আছে। ইজহান বুঝতে পারে।
আন্দাজ করা স্বত্তেও সে জিজ্ঞেস করল, “পা রাখবে না মানে? কেন?”

“যেখানে সম্মান নেই, সেখানে না আসাই তো আত্মসম্মানের।”

ইজহানের মুখ থমথমে হয়ে গেল, “আমার আম্মাজানকেও দেখতে আসবে না?”

”জি, তাকেও দেখতে আসবে না।”

ইজহান থমকে যায়, “কিন্তু কেন?”

পৃথিবীর কোনো বোনই চায় না, তার ভাই অপমানিত হোক, কষ্ট পাক। কিন্তু ইস্মিতা নিজের চোখে দেখেছে আকাশের সেই অপমান। থুতু গায়ে এসে পড়েছিল। সামনাসামনি, নির্লজ্জভাবে। আর সেই অপমানের ঘাতক ইনজান শেখ। যাকে সেও ভাইয়ের আসনে বসিয়েছিল, সৃজার মতোই। তাঁর পাগলামি, অস্থিরতা সব মেনে নিয়ে যতটা সম্ভব খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল, সম্পর্ক মানে কিছু দেওয়া-নেওয়ার বাইরেও কিছু। কিন্তু সেই মানুষটাই আকাশের সঙ্গে এমন আচরণ করল? একটা অদৃশ্য জেদের বশে পশুর মতো ব্যবহার? ইস্মিতা ভুলতে পারছে না ব্যাপারটা। পারবেও না কখনো। তার বুকের ভেতরটা ঠান্ডা, জড় হয়ে জমে গেছে। লজ্জা, ক্ষোভ, হতাশায় মিশে একরকম অর্ধমৃত। এই ঘটনার পর সে আর আকাশের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। নিজেকে তার ভাইয়ের স্থানে ভাবলেই ভেতরটা অস্থিরতায় ছেয়ে যাচ্ছে। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস নীরব বাতাসে মিশিয়ে দিয়ে তারপর কাঠগলায় ইস্মি জবাব দিলো, “সেসব জেনে আপনার আদৌ কোনো লাভ আছে? নেই। আপনি বরং নিজের কাজে মন দিন। হিসাবপত্র দেখুন, ফাইল সাইন করুন। লাভ হবে।”

ইজহান ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে ইস্মিতার দিকে তাকাল। মেয়েটা আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তার দিকে তাকাচ্ছে না। ইজহানের বুকে ধাক্কা লাগল একটা। স্তব্ধ মুখে বলল, “আমি জানতে চাইলে সমস্যা?”

“হ্যাঁ।”

“কীসের সমস্যা?”

“জেনে আপনার তেমন কোনো লাভ হবে না।”

“আমি লাভের জন্য জানতে চাইছি?”

ইস্মি থম ধরা কণ্ঠে অস্পষ্ট জবাব দিলো, “উহুম।”

ইজহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, “পরিষ্কার কথা বলো। আমি সবকিছু নিজের লাভের জন্য করি?”

“দয়া করে কথা প্যাঁচিয়ে এটাকে ঝগড়ার দিকে টেনে নিয়ে যাবেন না। আপনার মেয়ে ভয় পাবে। আমার জন্য না হলেও মেয়ের জন্য একটু কনসিডার করুন। আমি ঝগড়া করতে পারদর্শী না, চাইও না।”

এই কথাটা ইজহানের গায়ে ঘুষির মতো লাগল।
সে সবকিছু নিজের লাভের জন্য করে? হ্যাঁ করে। কিন্তু পাগলের মতো ভালোও তো বাসে। ইস্মিতা কি কখনোই অনুভব করতে পারে না তাকে? ইজহান হাতের ফাইলগুলো ছুঁড়ে মারল মেঝেতে। এরপর কিছু না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। তার কপালে চিন্তার ভাঁজ, চোখে ক্লান্তি, বুকের ভিতর পুড়ে যাচ্ছে এমন অসহনীয় অনুভূতি। সেরাতে আকাশের সাথে যা হয়েছে তা মোটেও উচিৎ হয়নি, অন্যায় হয়েছে। সংকোচ হলেও সেটা চেপে রেখে নিজ থেকে ফোন করে ওর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার কাছে আকাশের পুরোনো কন্ট্র‍্যাক্ট নাম্বার যেটা আছে, সেটা এই মুহূর্তে বন্ধ। নতুন নম্বর আছে ইস্মিতার কাছে। সে ভেবেছিল, একটা সুযোগ করে চেয়ে নেবে নাম্বারটা। কিন্তু ইস্মিতা তার উপরও ভীষণ অভিমান করেছে। অথচ সেই রাতেই সে মন থেকে আকাশকে সরি বলেছে। শুনে আকাশ তীক্ষ্ণ স্বরে বলেছিল, “দাম্ভিক ইজহান শেখ আমাকে সরি বলছে? সরিটুকু না বলে আমার বোন আর ভাগ্নিকে দিয়ে দিন, নরক থেকে নিয়ে যাই!”

এতো বড়ো কথাটা বলার পর প্রতুত্তরে ইজহান শেখ কিছু বলেছে? না৷ কারণ তার বাড়িটা আসলেই একটা নরক আর সে সত্যিই অনুতপ্ত। ইজহান মেজাজ খারাপ করে মিজুকে ফোন দিলো। রিসিভ হতেই হড়বড় করে বলল, “বউ ভীষণ অভিমান করেছে। ওর অভিমান ভাঙাব কীভাবে?”

মিজু আমতাআমতা করতে করতে বলল, “আমি কীভাবে জানব স্যার? ম্যাডামরে জিজ্ঞাসা করেন।”

“আরে! বউ যদি বলতোই তাহলে তোর কাছে মারা খেতে ফোন দিয়েছি আমি? নূন্যতম কমনসেন্স নেই তোর? আমি তো ভাবতেই পারছি না তোর মতো একটা গাধা, মূর্খকে আমি এখনো কাজে রেখেছি।”

মিজুর ইচ্ছে করল মুখের উপর বলে দিতে যে, আপনার মতো আধপাগলের সাথে কাজ করার চেয়ে সারাজীবন বেকার থাকা ভালো। অন্তত রাতে বউকে আদর করার সময় কেউ বাগড়া দিয়ে বলবে না, ‘আম্মাজান ঘুমাচ্ছে, বউটাও। আমি ওদেরকে পাহারা দিচ্ছি। একা একা বোরিং লাগছে। আয় তোর সঙ্গে নতুন ডিলটা নিয়ে ডিসকাস করি।’ বউকে বুকে জড়িয়ে নতুন ডিল নিয়ে ডিসকাস করতে কার ভালো লাগে? মিজুর তো ইচ্ছে করে স্যারের মাথাটাই ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সে অপারগ! তবে সুযোগ যদি হয়, একবার না একবার স্যারকে সে নাকানিচুবানি খাওয়াবেই খাওয়াবে। মনে মনে শেখদের গুষ্ঠি উদ্ধার করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিজু বলল, “মিষ্টি মিষ্টি কথা বইলা দেখেন স্যার। বাবু সোনা ডাকেন, তাইলে যদি রাগ ভাঙে।”

“বাবুসোনা ডাকতে হবে?”

মিজু দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “কেন আপনি আগে ডাকেন নাই স্যার?”

ইজহান কপালে ভাঁজ ফেলে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “না তো।”

মিজু আচমকা ঠাট্টার স্বরে বলেই ফেলল, “কী বিবাহিত জীবন কাটাইলেন স্যার, যদি বউরে আদর কইরা বাবুসোনাই না ডাকেন? ফুল, চকলেট দেন না, ঘুরতে নিয়া যান না, আদর কইরা ডাকেনও না। শাসনের উপরে রাখেন শুধু। আপনার বিবাহিত জীবনের ৬০% ই তো লস।”

“৬০℅ লস?”

“জি স্যার। এইসব আহ্লাদীপনা না দেখাইলে মেয়েমানুষরে বশে রাখা যায় না। আর যদিও যায়, তাইলে ওই ম্যাডামের মতোই হইয়া যায়। নিজের মনে কী চলে তা খুইলা বলতে পারে না। ভিতরে ভিতরে কষ্ট৷ আফসোস, অভিমানের পাহাড় নিয়া একদিন হার্ট-অ্যাটার্ক করে দুনিয়া ত্যাগ করে।”

মিজুর কথাগুলো শুনে ইজহান চিন্তিত হয়ে পড়ল। ফিরে গেল ঘরে। ইস্মি তখন মেঝে থেকে তার ছুঁড়ে ফেলা কাগজপত্র তুলছে। ইজহান ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে ওকে পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল, “রেগে কেন?”

ইস্মি শরীর মুচড়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, “রেগে নেই।”

“তাহলে এতো কঠিন কথা শোনানো হলো কেন?”

“মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। দুঃখিত।”

আহারে! বউটা নির্দোষ হওয়া স্বত্তেও তার সঙ্গে সহজ নয় বলে নিজে থেকে ক্ষমা চাইছে। সে যদি বন্ধুর মতো মিশতো তাহলে এতোটা জটিল হতো না সম্পর্কটা। ইজহান ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে চট করে ওকে সামনের দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে মুখটা দু'হাতে আগলে তৃষ্ণার্তের ন্যায় ওষ্ঠে অধর মিলিয়ে দিয়ে শুষে নিতে চাইল ওর সব রাগাভিমান। ইস্মি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো না। জানে, ছাড়বে না।

ইজহান নিজের বোধ হারাল না। ঠোঁট ছেড়ে ওর কপালে চুমু বসিয়ে ইস্মিকে বুকে টেনে নিয়ে গভীর গলায় বলল, “আকাশ সাহেবের সঙ্গে যা হয়েছে তা উচিৎ হয়নি। আরসালান একদমই ঠিক করেনি, অন্যায় করেছে। আমি ওর হয়ে মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আর কখনো ওমন ভুল হবে না। আমি হতে দেব না। আমার ইস্মিতাকে যেমন এ বাড়ির কেউ অসম্মান করতে পারবে না, তার বাপ-ভাইকেও না। তাদের সবার সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমি ইজহান শেখ, আজ থেকে নিজে নিলাম। আমি ভীষণই অনুতপ্ত ইস্মিতা। তোমার কাছে, তোমার ভাইয়ের কাছেও।”

বলে নোটবুক থেকে আকাশের ফোন নাম্বার জোগাড় করে ইস্মির সামনেই ওকে ফোন দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমা চেয়ে নিলো। সিরাজ সাহেবের সাথেও কথা বলল নিজে থেকেই৷ এটাও বলল যে, সে তার তিন বাচ্চা আর ইস্মিতাকে নিয়ে আজ রাতে তাদের বাড়িতে যাবে। শ্বশুরমশাই যাতে বেগুন ভাজা, ডিম ভুনা আর আচার করে রাখে। সে খিচুড়ি দিয়ে খাবে। দই হলেও ভালো হয়। টনা-মনা আর তার মায়ের জন্যও যাতে বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। একচুল কমতি হলেও সে নিন্দা করতে ছাড়বে না। এদিকে আধপাগল জামাইয়ের মুখ থেকে এসব শুনে ফোনের ওপাশে হতভম্ব সিরাজ সাহেব। তিনি সবকিছুতেই ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ’ জপলেন। ফোন রেখে একপাশে ভেজা চোখে দাঁড়িয়ে চোখের ইস্মির চোখের কার্নিশ বেয়ে পড়া অশ্রুকণা দু'হাতে মুছে দিয়ে ইজহান আবারও বলল, “ইস্মিতা জানে, সে রেগে থাকলে আমার দিন ভালো যায় না।”

ইস্মি হাসলো। পায়ের পাতা উঁচু করে ওর কণ্ঠমণিতে চুমু বসিয়ে দিয়ে বলল, “পাগল। এভাবে কেউ শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলে? হুমকি দেয়?”

“তোমাকে ওরা কম ভালোবাসে তাইতো হুমকি দেই।”

ইস্মি নাক কুঁচকাল, “মোটেও না।”

“মোটেও হ্যাঁ৷”

“সব ভালোবাসা যেন আপনিই আমাকে ভালোবাসেন?”

“সেটা তুমি বুঝো না সোনা?”

ইস্মি লজ্জা পেয়ে গেল হঠাৎ, “ইশ! কথার কী ছিঁড়ি।”

“কী ছিঁড়ি বাবু?”

ইস্মি নাক কুঁচকাল, “আমি বাবু? আমার নিজেরই একটা বাবু আছে। আমাকে বলছে বাবু! যত্তসব ঢং। বুড়ো বয়সে ভিমরতি।”

ইজহান গভীর চোখে দেখল ইস্মির গাল লাল হয়ে গেছে। লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা। তার মানে ঔষধ একটুখানি কাজ করেছে। তবে বুড়ো বলায় সে ইস্মিকে সাবধানী কণ্ঠে বলল, “তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ আমার বয়স পঁচিশ।”

“পঁচিশ না ছাই।”

তাচ্ছিল্য গায়ে না মেখেই ইজহান গম্ভীর স্বরে বলল,
“অফিসের আব্দুল চাচাই তো বলল, আমার বয়স নাকি তোমাকে বিয়ে করার পর থেকে একটুও বাড়েনি।” একজন তো চিরকুটে লিখল, “এভারগ্রীন ইজহান শেখ।”

ইস্মি ভ্রু কুঁচকে তাকাল, “চিরকুট পাঠিয়ে বলল? প্রেরকের নাম কী?”

“মে বি জেরিন।”

ঠোঁট উল্টে দোটানায় ভুগে বলল ইজহান। যেন সে নিশ্চিত নয়। ইস্মির মাথার একটা কুবুদ্ধি খেলে গেল হঠাৎ। বাস্তবতা জানা থাকা স্বত্তেও মেকি রাগ দেখিয়ে ইজহানের গালে আঁচড় কেটে সরে গিয়ে মেয়ের নিকটে অভিযোগ ছুঁড়ল, “তোমার মাম্মাকে বাড়িতে রেখে পাপা অফিসে গিয়ে পরকীয়া করে বেড়ায়, মা।।এজন্যই তো তাকে পড়াশোনা করতে দেয় না, বাড়ি থেকে বেরও হতে দেয় না। যদি সত্যটা সামনে চলে আসে তাহলে তো জানে, আমি তাকে ছেড়ে চলে যাব। নিজের মতো বাঁচব। আমাকে যাতে খোঁড়া করে রাখা যায় সেজন্যই তার এতসব চালবাজি। আজ বুঝেছি আমার জায়গাটা কোথায়!”

খোশমেজাজে থাকা ইজহানের মাথায় যেন বাজ পড়ল। তড়াক করে ইস্মিকে সাফাই দেয়ার মতো করে বলল, “বিলিভ মি, জেরিন নামক কোনো মেয়ে আমার অফিসে নেই। সে বাবার অফিসের এমপ্লয়৷ একটা মিটিংয়েই তার সাথে দেখা। আমার কাছ থেকে পেন নিয়েছিল। দেওয়ার সময় আমার মুখে বিরক্তি ভাবও ছিল। আমি কোনো উস্কানি দিইনি। তারপরেও সে মিটিং শেষ করে এই চিরকুটটা দিয়েছিল। অনেক আগের কথা। আমার তো এর চেহারাও মনে নেই৷ আম্মাজানের সামনে আমার মাথা নিচু করে দিও না ইস্মিতা...”

মুখখানা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল ইজহানের। ইস্মি ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। ইজহান ভাবল বউ হয়তো তার আরো রেগে গেছে সে কলম দিয়েছে বলে, তাই ইস্মিতাকে বোঝানোর জন্য ইহসানকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এলো। শত হলেও তার বউ ভেড়ার কথা মানে৷ এদিকে ইহসান ওর কান্ডকীর্তিতে বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলল, “বউদের মনে একবার সন্দেহ ঢুকলে সহজে বের হতে চায় না। এরচেয়ে জিজ্ঞেস কর ওর কী প্রমাণ লাগবে, কী চায়?
যা চায় তা-ই করতে দিবি। তাহলে অন্তত তোর প্রতি একটু সুনজর থাকবে।”

ইজহান গলা খাকারি দিয়ে ইস্মিকে জিজ্ঞেস করল সে কী চায়, কীভাবে প্রমাণ দিলে বিশ্বাস করবে জেরিন বলে কারো সাথে তার কোনো কাহিনী নেই। শুনে সুযোগ বুঝে ইস্মি বলেও ফেলল, সে আর অন্ধ জগতের বাসিন্দা হয়ে খোঁড়া থাকতে চায় না। স্বাভাবিকভাবে সংসার সামলে পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে চায়।

বউয়ের এতো বড়ো চাওয়ার কথা শুনে ইজহান শেখের মাথা ঘুরে উঠল। অবিশ্বাস্য চাহনিতে থমকে দাঁড়িয়ে রইল সে। ইহসান হাসি চেপে বলল, “কলিজা চায়নি, পড়তে চেয়েছে। মেনে নিলেই জীবন সুন্দর।”

কলিজা চাইলে তাও দিয়ে দিতো ইজহান শেখ,
কিন্তু বাইরে গিয়ে ছেলেপুলেদের সঙ্গে ঢ্যাংঢ্যাং করে পড়াশোনা? স্বপ্নেও আঁৎকে উঠে সে।

[ইজহান, ইজহান করছিলেন, দিলাম ওকে।]

________

[আপনাদের বোরিং লাগবে পর্বগুলো, ভালো করে লিখতে পারছি না। আমার অপারতার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।]

চলবে...

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Israt Jahan Fariya - ইসরাত জাহান ফারিয়া posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share