30/10/2025
পারবে?
সত্যিই কি পারবে?
যখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডে ঝলমল করে উঠল ৩৩৮!
তখন কি বিশ্বাস হয়েছিল আপনার?
এই মেয়েরা পারবে?
এই ধুলো-মাটির, ঘাম-ভেজা মেয়েরা?
তাও আবার তাদের বিরুদ্ধে,
সেই অস্ট্রেলিয়া!
যারা কেবল খেলে না,
প্রতিপক্ষের মনোবল ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।
যারা জয়ের আনন্দে হাসে না,
প্রতিপক্ষের কান্না শুনে তৃপ্তি পায়।
আজ সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে,
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে,
আমাদের মেয়েরা মাঠে নেমেছিল।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামার মুহূর্তে
যেন সারা দেশ নিঃশব্দে এক প্রার্থনা করেছিল।
কিন্তু তারপর যা ঘটল,
তা ছিল এক দুঃস্বপ্নের শুরু।
ফোবি লিচফিল্ডের ব্যাটে বজ্রপাত।
এলিস পেরির মোলায়েম স্ট্রোকে মৃ*ত্যু*র মতো নির্ভুলতা।
অ্যাশলে গার্ডনারের প্রতিটি শট যেন তলোয়ারের কোপ।
বল উড়ছে, মাঠ পুড়ছে,
আর ভারতীয় বোলাররা দাঁড়িয়ে শুধু আকাশ দেখছে।
ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের আলো তখনও জ্বলছে,
কিন্তু গ্যালারির মুখগুলো নিস্তব্ধ।
প্রতিটি রান যেন
ভারতের কফিনে পেরেক।
৩৩৮।
ওটা রান ছিল না,
ওটা ছিল এক অভিশাপ,
যেন ভারতের স্বপ্নের ওপর বসা পাথরের শিলালিপি।
অসম্ভব। দুঃসাধ্য। শেষ।
এই তিনটি শব্দ তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল।
কিন্তু কেউ জানত না,
এই নীরবতার ভেতরেই জন্ম নিচ্ছে এক বিপ্লব।
৩৩৯ রানের পাহাড়ে চড়ার সূচনা হলো এভাবে।
শেফালি (১০), স্মৃতি (২৪)
দু’জনেই ফিরে গেলেন।
৫৯ রানে ২ উইকেট।
স্টেডিয়াম হঠাৎ পাথরের মতো নীরব।
চোখে একটাই প্রশ্ন,
আবার কি সেই পুরনো কাহিনি?
আবার কি তীরে এসে তরী ডুববে?
কিন্তু আজ নয়।
আজ মঞ্চে নেমেছেন দুই যোদ্ধা।
একজন, হরমনপ্রীত কৌর,
চোখে আগুন, ব্যাটে বজ্র।
অন্যজন, জেমাইমা রড্রিগেজ!
নরম আলোয় শান্ত এক তলোয়ার,
মুম্বাইয়ের মেয়ে, নিজের মাঠে, নিজের লড়াইয়ে।
তিনি যা করলেন পুরো ইউনিভার্স সাক্ষী থাকলো আজ।
তাদের ব্যাটের সংঘাতে
অস্ট্রেলিয়ার অহংকার কাঁপতে শুরু করল।
প্রতিটি রান যেন চ্যালেঞ্জ,
প্রতিটি বাউন্ডারি যেন জবাব,
“আমরা হারব না।”
হরমনপ্রীতের চোখে আগুন,
জেমাইমার চোখে ধ্যান।
একজন বিস্ফোরণ,
অন্যজন নীরব আগুন।
গ্যালারিতে জেগে উঠল ঢেউ,
“ইন্ডিয়া! ইন্ডিয়া!”
ফিল্ডারদের মুখে ভয়ের রেখা।
অ্যালিসা হিলির গলায় গ্লাভসের ঘাম।
১৬৭ রানের জুটি।
দেশ গর্জে উঠল।
অসম্ভব শব্দটা হঠাৎ মিলিয়ে গেল বাতাসে।
আর ঠিক তখনই,
ভাগ্য আবার নিষ্ঠুর হলো।
হরমনপ্রীত আউট, ৮৯ রানে।
গ্যালারির বুক ফেটে কান্না নামল।
মুহূর্তে নেমে এল মৃত্যুর মতো নীরবতা।
সব চোখ ঘুরে গেল জেমাইমার দিকে।
তিনি একা।
তিনি শান্ত।
তিনি জানেন,
আজ শুধু ম্যাচ নয়,
আজ একশো চল্লিশ কোটির আত্মসম্মান তাঁর ব্যাটে ঝুলছে।
দীপ্তি (২৪), রিচা (২৬),
তারা এলেন, যোদ্ধার মতো আ*ঘা*ত দিলেন, চলে গেলেন।
কিন্তু জেমাইমা ছিলেন অবিচল,
যেন মূর্তি, যেন আগুনের ভেতর ঠান্ডা বরফ।
প্রতিটি বল যেন যুদ্ধ।
প্রতিটি রান যেন দেশমাতার এক টুকরো নিশ্বাস।
অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা মরিয়া,
কিন্তু তিনি টলেন না।
যখন সেঞ্চুরি পূর্ণ হলো,
না, তিনি চিৎকার করলেন না।
না, তিনি ব্যাট ঘুরিয়ে দেখালেন না।
শুধু মাথা তুলে তাকালেন আকাশের দিকে।
চোখে জল, ঠোঁটে নিঃশব্দ কৃতজ্ঞতা।
কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
তারা দাঁতের দাঁত চেপে লড়তে থাকলেন শেষ পর্যন্ত।
বাউন্ডারি আরেকটা বাউন্ডারি, একরান করে করে সেই মুহূর্তে এসে দাঁড়ালো তারা।
আর তারপর...
শেষ মুহূর্ত।
শ্বাসরুদ্ধকর নীরবতা।
আর মাত্র দুটি রান দরকার।
আমানজ্যোত কৌর ব্যাটে বল লাগালেন,
বল গড়িয়ে গেল মাঠের ফাঁকে,
এবং…
ভারত জয়ী!
৪৮.৩ ওভারে ইতিহাস লেখা হয়ে গেল।
স্টেডিয়াম ফেটে পড়ল।
চোখে জল, মুখে চিৎকার, গলায় গর্বের আগুন।
জেমাইমার অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস,
এটা শুধু ইনিংস নয়,
এটা এক জাতির মুক্তি।
একটা যুগের জবাব।
“চোকার”?
না। আজ আমরা চোকার নই।
আজ আমরা ইতিহাসের লেখক।
নক আউটে এটি সবচেয়ে বড় জয় যে কোন টিমের এই পৃথিবীতে।
আজ রাতটা আমাদের মেয়েদের।
আজ রাতটা ভারতের।
আজ এই আকাশ জানে,
রক্ত, ঘাম আর চোখের জলে লেখা এক গর্বের অধ্যায়।
যাকে তারা পরাস্ত করেছে তারা অস্ট্রেলিয়া, পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর টিম। যারা হারতে জানেনা। তাকে বধ করেছে ভারত। বধ করে ফাইনালে প্রবেশ ভারতের।
কিন্তু এখনই লেখার শেষ নয়, এখনো গল্প বাকি রয়েছে! ফাইনাল বাকি রয়েছে।
আমাদের যোদ্ধারা জানে,
যুদ্ধ শেষ হয়নি।
ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষায়।
আজ গর্ব করুন, মানুষের সাথে সেলিব্রেট করুন।
কাল থেকে আবার যুদ্ধের প্রস্তুতি।
কারণ ২রা নভেম্বর,
ইতিহাসের শেষ পাতায়
লিখে রাখতে হবে একটাই কথা,
“আমরাও পারি, আমাদের মেয়েরাও পারে!”