
12/05/2025
এডজাস্ট কথাটা কি শুধু মাত্র ছেলের বউদের জন্য প্রযোজ্য? একটা মেয়ে জন্ম থেকে বিয়ের আগের মূহুর্ত পর্যন্ত সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়ে নতুন পরিবেশে আসে।হুট করে এই নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া নতুন মানুষ গুলোকে আপন করে নেওয়াটাও কি এডজাস্ট না!একজন পুরুষ এইরকম ভাবে সব ছেড়ে অন্য বাড়িতে যাওয়া দূরের কথা ভাবতেও পারে না।কারন আমাদের সমাজ সে নিয়ম দেয় নি।যদি কোন পুরুষ বিশেষ কোন কারনে শ্বশুর বাড়িতে থাকে তবে তার নাম হয় ঘরজামাই। (এক্কেবারে নেগেটিভ সেন্স)
একটা মেয়ে বিয়ের পর নতুন পরিবেশে আসে।শ্বশুর বাড়িতে সবাইকে খুশি করে চলার চেষ্টা করে।তার এই নতুন জার্নিতে খুব স্বাভাবিক নিয়মে স্বামীকে পাশে পাওয়ার আশা করে।এই আশা যদি কোনভাবে সত্যি হয়,যদি স্বামী তাকে সাপোর্ট করে তাহলে মা প্লাস আত্মীয়দের কাছে সেই স্বামী হয়ে যায় বউয়ের ভেড়া,বউ পাগলা,বউয়ের আঁচলের তলায় থাকা ছেলে।
একটা মেয়ে শ্বশুর বাড়ি এসে মাত্র বিরূপ আচরণ করে না।বিরূপ আচরণ তখনই করে যখন তার সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়(An exception is not an example)।আর মেয়ে জাতি এমনই, একবার কেউ মন থেকে উঠে গেলে সহজে সেই মনে আর জায়গা দেবে না।শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পর থেকে কয়টা ফ্যামিলি আছে যেখানে বাড়ির প্রত্যেকটা সদস্য নতুন বউকে টেককেয়ার করে,তাকে একটা কম্ফোর্ট জোন দেওয়ার চেষ্টা করে!
খুব হাস্যকর এবং প্রচলিত কথা হলো আমি আমার ছেলের বউকে মেয়ে মনে করি।মেক্সিমাম শ্বাশুড়ি কি তার ছেলের বউকে আসলেই মেয়ে ভাবতে পারে!আমার গন্ডিতে আমি জাস্ট দুইটা শ্বাশুড়ি দেখেছি যাঁরা ছেলের বউকে মেয়ের মতোই দেখে।বাকি সব একই ধাঁচের। আর পলাশের মায়ের মতো শ্বাশুড়িও চোখের সামনে ঘুরে। (পলাশের মায়ের ভিডিও গুলো দেখে নেবেন।আমার ওনার ভিডিও গুলো দিতেও রুচিতে বাঁধছে।)
আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মরা বাড়িতে ৪ দিন চুলা জ্বলে না।সদ্য সন্তানহারা মা এক থালা ভাত খেতে খেতে যখন ছেলের বউয়ের পিন্ডি চটকিয়ে ইন্টারভিউ দেয়, আর বলে ওর আমার ছেলের কাজের লোক হওয়ারও যোগ্যতা নেই তখন বুঝায় যায় উনি ছেলের বউয়ের সাথে কীরূপ আচরণ করতেন।
ছেলে হোক বা মেয়ে প্রত্যেকটা মা বাবা তার সন্তানকে কষ্ট করে মানুষ করে।কিন্তু মেয়েকে বিয়ে দিলে মা বাবার আশা থাকে জামাইটা যেন তার মেয়েকে দেখেশুনে রাখে(মনে মনে আশা করে যেন মেয়ের কথায় উঠাবসা করে এক্কেবারে তাবিজ করার মতো)।একইভাবে ছেলে বিয়ে করানোর সময় তাদের মনের মধ্যে ভয় থাকে, 'আমার ছেলেটা বউয়ের ন্যাউটা যেন না হয়'!এইজন্য যতটা সম্ভব ছেলেকে আগলে রাখার চেষ্টা করে।মেয়ের জামাই যদি ঘরের কাজে হেল্প করে তাহলে মেয়ের মা বাবা খুব খুশি হয়ে গদগদ ভাবে জামাইকে আশীর্বাদ করবে,আর তার ছেলে যদি কোন কাজে বউকে সাহায্য করে তাহলে বিষবাণে জর্জরিত করবে এটাই মেক্সিমাম ঘরের কালচার।এই রূপ মনোভাব নিয়ে ছেলেকে বিয়ে করানোর দরকার কী? একই সাথে দুইটা জীবন নষ্ট করে ভাবছেন আমার ছেলে আমারই আছে। একবার ভাবুন ত আপনাদের থেকে এমন আচরণ পাওয়ার পর ছেলের বউ আপনার অনুগত হয়ে থাকবে এই অসাধারণ ভাবনাটা কীভাবে আশা করেন?
যুগ বদলাচ্ছে,ছেলেমেয়েরাও এখন উন্মুক্ত চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠেছে।আদিকালের মতো সব কিছু মুখ বুজে নেওয়ার মতো তারা না,মেনে নেওয়ার প্রশ্নও আসে না।একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুইদিক থেকেই মানিয়ে নিতে হয়,প্রতিটা সম্পর্কের মাঝে স্পেস দিতে হয়,নতুন সদস্যকে যথাযথ মর্যাদা ও ভালোবাসা দিতে হয়।যুগের হাওয়ায় সব কিছুই বদলাচ্ছে, কিন্তু আজকের দিনে এসেও শ্বশুরবাড়ি নামক আয়নাঘরটার বদল কি আসলেই সম্ভব?