13/06/2025
লন্ডনের এক সকালে, ইতিহাস তারেক রহমানের সাথে এক পৃষ্ঠা উল্টে দিয়েছে
আ স ম মাসুম, লন্ডন
ভোরের আলোও তখনো ঠিকমতো ফোটেনি। কিন্তু সেন্ট্রাল লন্ডনের হোটেল ডরচেস্টারের সামনে তখন ঢল নেমেছে নেতা-কর্মীদের। গা শিউরে ওঠা হিমেল বাতাসের মাঝেও চোখেমুখে জ্বলজ্বল করছে প্রত্যাশা। অনেকে এসেছেন অনেক দূর থেকে, কেউ পাড়ি দিয়েছেন রাতের অন্ধকার, শুধু এক ঝলক তারেক রহমানকে দেখার আশায়। কারও গলায় ছিল নীরব প্রার্থনা, কারও মুখে আশার গান—আজ হয়তো বদলে যাবে বাংলাদেশের ইতিহাসের পথচলা।
ঠিক সকাল ৮টা ৫০। রোদ তখন ঝলমল, যেন প্রকৃতিও প্রস্তুত ছিল এ মাহেন্দ্রক্ষণে। তারেক রহমানকে বহনকারী গাড়িটি ধীরে ধীরে ভিড়ে এল হোটেলটির সামনে। গাড়ির চাকা গড়াতে গড়াতে গতি পায় বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ! গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ইউরোপ সমন্বয়কারী কামাল উদ্দিন, পাশে বসা তারেক রহমান, পেছনে তাঁর বিশ্বস্ত সহচর আব্দুর রহমান সানি।
চারদিক কেঁপে উঠলো করতালিতে, স্লোগানে, হর্ষধ্বনিতে। তারেক রহমান জানালার ফাঁক দিয়ে হাত নাড়ালেন, যেন হাজারো নেতা-কর্মীর হৃদয়ে আলো ছড়িয়ে দিলেন এক নিমিষেই। হোটেলের দরজার কাছাকাছি পৌঁছেই গাড়ি থেকে নেমে আসলেন তিনি। নেতাকর্মীদের দিকে আরও একবার ঘুরে তাকিয়ে আবারও হাত নাড়ালেন, যেন বললেন—“আমি তোমাদের মাঝেই আছি!” এই কয়েক সেকেন্ডেই যেন দেশের কোটি মানুষের হৃদয়ে কেঁপে উঠলো নতুন আশার ঢেউ।
ভেতরে হোটেলের অভ্যর্থনায় অপেক্ষায় ছিলেন আরেক কিংবদন্তি—নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এক যুগান্তকারী মুহূর্তের সূচনা হল একান্ত কুশল বিনিময়ে। এরপর তারেক রহমানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উপদেষ্টা হুমায়ূন কবীর, কামাল উদ্দিন ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সানি’র সাথে। এরপরই শুরু হয় বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক।
এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে প্রতিটি সেকেন্ড যেন গাঁথা হচ্ছিল বাংলাদেশের আগামী পথচিত্রে। বৈঠক শেষে যখন তারেক রহমান আবার বেরিয়ে এলেন, মুখে সেই স্নিগ্ধ হাসি—তখন কেউ একজন ফিসফিসিয়ে বললেন, “ডিল ডান!”
লন্ডনের সেই সকালটা তখন আর শুধু লন্ডনের ছিল না—তা ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকায়, সিলেটে, চট্টগ্রামে, এমনকি গ্রামের মেঠোপথেও।
আলোচনায় নির্বাচনের সময়সীমা, সংস্কার, প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উঠে এলো আশার আরেকটা পরত। তারেক রহমান স্পষ্ট করলেন, আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা জানালেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে—যদি সব কিছু ঠিকঠাক হয়, তাহলে রমজানের আগের সপ্তাহেও সম্ভব। তারেকের সম্মতিসূচক হাসি যেন বাতাসে ভেসে বেড়াল সেদিন।
সংস্কার নিয়ে দৃঢ় অবস্থান জানান আমীর খসরু। বললেন, “যেখানে ঐকমত্য, সেখানেই সিদ্ধান্ত।” এই কথাগুলো যেন স্রেফ রাজনৈতিক বিবৃতি নয়—বরং বহু প্রতীক্ষিত একটা বাস্তবতার দিশারী।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে আমীর খসরু বললেন, “ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।” ছোট্ট উত্তর, কিন্তু অনুরণিত হলো হাজারো মনে—তবে কি ঘরে ফেরার পালাও আসন্ন?
একসাথে সন্তুষ্টির ঘোষণা
সাংবাদিকদের শেষ প্রশ্নটা ছিল সোজাসাপ্টা—“আপনারা কি সন্তুষ্ট?”
উত্তর এল একসাথে, এক কণ্ঠে, আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ—“নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।”
আসলে এ বৈঠক, এ সকাল, এ হাত নাড়ানো—সব মিলিয়ে ছিল একটা প্রহেলিকার মতো আশা। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বাংলার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন সূর্যদয়ের প্রতীক্ষা।
আর তার কেন্দ্রবিন্দুতে—ডরচেস্টারের সিঁড়িতে দাঁড়ানো এক তরুণ নেতার হাসিমাখা মুখ।
লন্ডনের এক সকালে, ইতিহাস তারেক রহমানের সাথে এক পৃষ্ঠা উল্টে দিয়েছে।