16/07/2024
গত কোপা আমেরিকা চলাকালীন লিও মেসির জন্মদিন পড়ছিল। রাত বারোটার পর টিমমেটরা সবাই হাত ভরতি উপহার নিয়ে মেসির রুমে হাজির হয়ে গেলেন তাঁর বার্থডে সেলেব্রেট করতে। কিন্তু একজন কোনো উপহার নিলেন না, তিনি হলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এ খবর চলে গেল সাংবাদিকদের কাছেও। পরদিন আর্জেন্টিনার মিডিয়া টিওয়াইসির এক সাংবাদিক মজা করে মার্টিনেজকে বলেই ফেললেন, আপনি সম্ভবত মেসির জন্মদিনে কিছুই উপহার দেননি।
মার্টিনেজ উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তবে আমি মেসিকে কথা দিয়ে রেখেছি, এই শিরোপাটা (কোপার) তাকে উপহার দেবো।
সেবার সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে দুই-দুইটি দুর্দান্ত সেইভ করে কলম্বিয়াকে হারিয়ে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন, এমনকি ফাইনালেও বেশ কয়েকটি টার্গেট অন শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন। ডি-বক্সের ভেতর দু'দুটো শট ঠেকিয়ে মার্টিনেজ ঠিকই শিরোপাটা মেসির হাতে তুলে দিলেন।
এই যে কথা দিয়ে কথা রাখতে পেরেছেন, তারপর থেকে তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বহুগুণ।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদির সাথে অঘটনের পর মেসি যখন হতাশ হয়ে পড়লেন, এমি তখন সাহস দিলেন, ‘চিন্তা করো না মেসি, আমরা তোমার জন্য কাপটা জিতব।’
মেসিও জানেন এমি তাঁর সামর্থ্যের উপর কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন। তাই মেসি প্রথম ম্যাচ হারার পর ভক্তদের উদ্দেশ্য একটি কথাই বলেছেন, ‘বিশ্বাস রাখুন!’
তারপরের গল্পটা আমরা সবাই জানি।
ফাইনালের আগে যখন আর্জেন্টিনাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলতে নানা চুলছেঁড়া আলোচনা চলছিল ফ্রান্স মিডিয়ায়, তখন মেসিকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে এমি বলেছিল, ‘চিন্তা করো না মেসি, ফ্রান্স আমাদের জালে বল পৌঁছাতে হলে আমাকে আগে খু ন করতে হবে।’
এমির এই কথা রাতারাতি মিডিয়া পাড়ায় সয়লাব হয়ে গেল। কিন্তু তখনো ফাইনাল ক্ষণ আসেনি।
গোল স্কোরার লেভেল থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত সময়ের ১২৩তম মিনিটে মুয়ানির আগুয়ান শট অবিশ্বাস্যভাবে ঠেকিয়ে এমি ঠিকই বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছিল, সে মেসির জন্য এই শিরোপা জিততে মরতেও প্রস্তুত ছিলো।
তারপর তো টাইব্রেকারে গিয়ে লিখালেন মহাকাব্য। মেসির হাতে শিরোপা তুলে দিয়ে সে তাঁর কমিটমেন্ট পূরণ করলো।
এবারও কোপা আমেরিকা চলাকালীন মেসির জন্মদিন গেল, টিমমেটরা সবাই মেসিকে কিছু না কিছু উপহার দিলেও বাদ থাকলেন এমি। গতবারের মতো সেইম তিনি কথা দিলেন, কোপার শিরোপাটাই তাকে উপহার দেবেন।
আবারও শিরোপাটা মেসির জন্মদিনে উপহার দিলেন এমি-লাউতারা। কাকতালীয়, ভাগ্য নাকি অসাধ্য চেষ্টার ফল; কীভাবে সংজ্ঞায়িত করব!
গ্রুপ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত নিজের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রেখে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। টাইব্রেকারে যখন প্রতিটি দলের প্লেয়ার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় উদ্বিগ্ন থাকেন, এমি সেখানে চিল করেন। কী অদ্ভূত!
সাংবাদিক বললেন, মেসি আপনাকে বিশ্বসেরা গোলরক্ষক হিসেবে অবহিত করেছেন। এমি উত্তর দেন, মেসিই আমাকে বিশ্বসেরা গোলরক্ষক বানিয়েছেন। কী অসাধারণ বন্ডিং।
এমিলিয়ানো থেকে হয়ত আরও সেরা গোলরক্ষক আছেন, কিন্তু গোলবারে যখন দ্বিধাহীন এমি দু'হাতে বাড়িয়ে ঝাঁপ দেন অন টার্গেট শট কিংবা পেনাল্টি ঠেকাতে, তখন আমরা বলতেই পারি, এমিলিয়ানো তুমিই সনচেয়ে সেরা।
পদার্থ বিজ্ঞানে বাটারফ্লাই ইফেক্টে বলে একটা টার্ম আছে। যার মানে, কোনো ছোটখাটো একটা মিসটিক বা ঘটনার পর থেকে ভিন্ন কিছুতে একের পর এক বড় ঘটনা ঘটতে থাকে। ঠিক এমলিয়ানো মার্টিনেজের জাতীয় দলের উত্থান ছিলো সেরকম। মূল গোলরক্ষকের ইনজুরিতে মাঠে নামার সুযোগ পেলেন। তারপর তো নিজেকে এমনভাবে মেলে ধরেছেন, এখন নিজেই দলের মূল গোলরক্ষক। বিশ্বসেরা গোলরক্ষক।
১০ বছর আগে যখন ক্লাবের দ্বিতীয়/তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে বেঞ্চে বসে সময় কাটাইতেন তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, ‘মাই টাইম উইল কাম।’
এমি, ইউর টাইম ইজ নাও।