09/04/2025
"তিন হৃদয়ের দোলাচল"
এটা এক ভরা গ্রীষ্মের সন্ধ্যা। সুমি, অভি ও রাহুল তিনজনেই বসেছিল একটি চায়ের দোকানে। সুমি আর অভি একে অপরের সাথে কলেজ জীবনের পর থেকে সম্পর্কটা চালিয়ে আসছিল, আর রাহুল তাঁদের জীবনযাত্রায় নতুন এক যোগসূত্র হয়ে এসেছে। প্রথম দিকে, সুমি ও রাহুলের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে সুমির মনে কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করল। সুমি জানতো, সে যখন রাহুলের চোখে তাকাতো, তখন তার মধ্যে এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করতো, যা সে কখনো অভির কাছে পায়নি।
সুমি জানতো, এই সম্পর্ক যদি একেবারে পাল্টে যায়, তবে অভি কতটা কষ্ট পাবে। তাদের সম্পর্কের মধ্যে যে গভীরতা ছিল, তা সহজে ভেঙে পড়বে না। কিন্তু সে জানতো, তার নিজের মনের অনুভূতিগুলোও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
একদিন, সুমি, অভি ও রাহুল একসাথে পাহাড়ের নিচে একটা ছোট্ট কটেজে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। রোমান্টিক বাতাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সব কিছু যেন তাদের মধ্যে এক নতুন প্রেমের সৃষ্টি করছিল। সুমি অনুভব করছিল, রাহুলের কাছে তার অন্তর্গত একটি নতুন অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে। সেই অনুভূতি তার জন্য ছিল এক রহস্য, এক দুঃসাহসিক ভালোবাসার মতো।
রাতের খাবারের পরে তারা তিনজন একে অপরকে গল্প করছিল, কিন্তু সুমি অনুভব করছিল, রাহুলের হাত একটু বেশি নরমভাবে তার হাতের দিকে চলে আসছে। সেই স্পর্শে সুমির সারা শরীর কেঁপে উঠলো। তার মনে এক অজানা আতঙ্ক এবং রোমান্স মিশে যাচ্ছিল। কিন্তু সে বুঝতে পারছিল না, সে কি চাইছে। অভি তাকে কিছু বলছিল, কিন্তু সুমি তখন পুরোপুরি রাহুলের দিকে মনোযোগী ছিল।
এক সময়, রাহুল ধীরে ধীরে সুমির দিকে এগিয়ে এসে, একেবারে কাছে চলে আসে। তার শ্বাসের তীব্রতা সুমির গা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। "সুমি," রাহুলের কণ্ঠে কিছুটা কম্পন ছিল, "তুমি জানো, আমি কতটা তোমাকে চেয়েছি। কখনো কি তুমি নিজে অনুভব করেছো, যে কিছু একটা ভুল হতে চলেছে?"
সুমি জানতো, তার হৃদয়ে কিছু একটা ভেঙে যাচ্ছে। সে ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে বললো, "আমি জানি রাহুল, আমি জানি। কিন্তু আমি অভিকে কখনো ছেড়ে যেতে পারব না। অভি আমার জীবনের অঙ্গ, সে আমাকে যতটা ভালোবাসে, তেমন কেউ কখনো আমাকে ভালোবাসবে না।"
রাহুল গভীরভাবে সুমির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "তাহলে তুমি আমার ভালোবাসা দেখছো না? তুমি যদি জানো, আমি তোমার জন্য কখনো কিছু ছেড়ে যেতে রাজি ছিলাম, তবে কেন তুমি আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছো?"
সুমি কিছুটা কাঁপতে কাঁপতে বললো, "তুমি জানো না, আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি, রাহুল। আমি জানি, আমি অনুভব করছি, কিন্তু আমি অভির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"
রাহুল কিছু বললো না, শুধু সুমির মুখের দিকে তাকিয়ে গালে হালকা একটা চুমু দিয়ে চুপচাপ সরে গেল। সুমি তার চোখে অশ্রু দেখতে পেয়েছিল, কিন্তু সে কিছুই বললো না। সেই রাতে, সুমি একদম একা ছিল। তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত শূন্যতা ছিল, সে জানতো, সে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, কিন্তু কোনটিই সঠিক ছিল না।
পরের দিন সকালে, সুমি একা নদীর কাছে চলে গিয়েছিল। মৃদু বাতাস, প্রাকৃতিক দৃশ্য, সব কিছু যেন তার হৃদয়ের মধ্যে এক অদ্ভুত বিষণ্নতা তৈরি করছিল। তার পক্ষে সব কিছু বিভ্রান্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে জানতো, অভি কখনো তাকে একা ছেড়ে যাবে না, কিন্তু সে যদি রাহুলের প্রতি তার অনুভূতি অস্বীকার না করে, তবে সে অভিকে কতটা কষ্ট দিতে পারবে?
অভি যখন সুমির কাছে এসে দাঁড়ালো, তখন তার চোখে এক ধরনের বেদনা ছিল। "সুমি, তুমি কি জানো, আমি তোমাকে শুধু ভালোবাসিই না, তোমার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত। কিন্তু তুমি যদি কখনো রাহুলের কাছ থেকে সত্যিকারের ভালোবাসা পাও, তবে তুমি আমাকে কী বলবে?"
সুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। তার চোখে অশ্রু, কিন্তু সে কিছু বললো না। অভি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো, সুমি নিজের মধ্যে এক কঠিন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। সেই মুহূর্তে, অভি সুমির দিকে একশেষে এগিয়ে গিয়ে, তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। সুমি জানতো, তাদের মধ্যে কিছু এখন শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু অনুভূতি থেকে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
সেই রাতে, সুমি একাধিক বার নিজেকে প্রশ্ন করেছিল—সে কি আসলেই অভিকে ছেড়ে দিতে পারবে? তার মনের মধ্যে রাহুলের কাছে এক ধ্বংসপ্রাপ্ত ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু তার প্রতিশ্রুতি আর কষ্ট সুমির হৃদয়ে স্রষ্টার মতো এক দংশন তৈরি করছিল।
তিনজনের সম্পর্ক কোনোদিন একইভাবে ফিরে আসেনি। সুমি বুঝতে পারলো, কখনো কখনো ভালোবাসা এমন অদ্ভুত ভাবে আসতে পারে, যা মানুষ নিজের ইচ্ছার বাইরে। সে যেভাবে রাহুলের দিকে ঝুঁকেছিল, সেভাবে অভির প্রতি তার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কখনো ম্লান হয়নি। কিন্তু সম্পর্কের সেই মোড়, সেই কষ্ট... তা আজীবন তার হৃদয়ে রয়ে গিয়েছিল।