06/05/2025
একদিন নবী করিম (সাঃ) এক সাহাবির জা*না*জা পড়ানো শেষে উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তোমরা কি জানো, মানুষ মা*রা যাওয়ার পর তাঁর আত্মার কি হয়’? সাহাবাগণ বললেন- ‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল-ই ভালো জানেন’।
নবীজি বললেন- ‘শুনো তবে, যখন মানুষের মৃত্যুর সময় হয়, তখন সে ফেরেস্তাকে দেখে ভ*য় পায়। কিন্তু যে ইমানদার, তাকে মৃ*ত্যু*র ফেরেস্তা হাসিমুখে সালাম দেনI মৃ*তপ্রায় মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলেন- ‘হে পবিত্র আত্মা! তুমি তোমার পালনকর্তার ক্ষমা ও ভালোবাসা গ্রহণ করো এবং এই দেহ থেকে বের হয়ে আসোI মুমিনের আত্মা যখন বের হয়ে আসে এবং সে কোন ধরণের ব্যথা ও বেদনা অনুভব করে না’I
নবীজি উদাহরণ দিয়ে বললেন- ‘মনে করো একটা পানির জগ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর, উপর থেকে এক ফোঁটা পানি যেমন নিঃশব্দে নিচে নেমে আসে, ঠিক তেমনি তার আত্মাও তার দেহ থেকে বের হয়ে আসে’I
সেই সময় অন্য দু’জন ফেরেশতা বেহেস্ত থেকে খুব সুগন্ধি মাখানো একটা নরম সুতার সাদা চাদর নিয়ে আসেন এবং আত্মাটিকে সেই চাদরে আবৃত করে আকাশের দিকে নিয়ে যানI আকাশে পৌঁছলে অন্য ফেরেস্তারা আত্মাটি দেখে বলেন- ‘সুবহানাল্লাহ! কতো সুন্দর আত্মা, কি সুন্দর তার ঘ্রাণ! এই আত্মাটি কার?
উত্তরে আত্মা বহনকারী ফেরেস্তারা বলেন- ‘উনি হলেন,অমুকের সন্তান অমুক’। বাকি ফেরেস্তাগণ তখন আত্মাটিকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করেন- ‘উনার আমল কি ছিল? আত্মায় এতো সুঘ্রাণ কেনো? আত্মা বহনকারী ফেরেশতাগণ তখন বলেন- ‘আমরা শুনেছি মানুষজন নিচে বলাবলি করছে, উনি একজন উত্তম চরিত্রের দয়ালু এবং পরোপকারি মানুষ ছিলেন’I
এতোটুকু বলার পর নবীজি (সাঃ) সবার দিকে ভালো করে দৃষ্টি দিয়ে, উনার কণ্ঠটা একটু বাড়িয়ে বললেন- ‘এই কারণেই বলছি, সাবধান! তোমরা কিন্তু মানুষের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে নাI তুমি মারা যাওয়ার পর মানুষ তোমার সম্পর্কে যা যা বলবে, এই আত্মা বহনকারী ফেরেস্তারাও আকাশে গিয়ে ঠিক একই কথা অন্যদেরকে বলবেন’I
এরপর নবী করিম (সাঃ) আবার বলতে শুরু করলেন- ‘এই সময় মানুষ যখন পৃথিবীতে মৃ*ত দেহকে ক*ব*র দেয়ার জন্য গোসল দিয়ে প্রস্তুত করবে, তখন আল্লাহ তা'আলা আত্মা বহনকারী ফেরেশতাদেরকে বলবেন- ‘যাও, এখন তোমরা আবার এই আত্মাকে তার শরীরে দিয়ে আসো, মানুষকে আমি মাটি থেকে বানিয়েছি, মাটির দেহেই তার আত্মাকে আবার রেখে আসোI সময় হলে তাকে আমি আবার পুনরায় জীবন দিবো’I
তারপর মৃ*তদে*হকে ক*ব*রে রেখে যাওয়ার পর মুনকার ও নাকির নামের দুইজন ফেরেস্তা আসবেনI তারা মৃ*তে*র সৃষ্টিকর্তা, তার ধর্ম ও নবী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেনI মুমিন বান্দা সেসবের যথাযথ জবাব দেওয়ার পর মুনকার নাকির চলে যাবেন।
এরপর আত্মাটি আবার অন্ধকার ক*ব*রে একা হয়ে যাবেI সে এক ধরনের অজানা আ*শং*কায় অপেক্ষা করবে, কোথায় আছে? কি করবে? এসব অনিশ্চয়তা এসে তাকে ঘিরে ধরবেI এমন সময় সে দেখবে, খুব সুন্দর এক লোক তার সাথে দেখা করতে এসেছেনI
তাকে দেখার পর আত্মাটি ভীষণ মুগ্ধ হবেI এতো মায়াবী ও সুন্দর তার চেহারা, সে জীবনে কোন দিন দেখেনিI আত্মাটি তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করবে- ‘তুমি কে? কেনো এসেছো?’ সেই লোকটি বলবে- ‘আমি তোমার জন্য অনেক বড় সুসংবাদ নিয়ে এসেছি, তুমি দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো। তোমার জন্য আল্লাহ তা'আলা জান্নাতের ব্যবস্থা করেছেন, তুমি কি সেটা একটু দেখতে চাও’?
আত্মাটি ভীষণ খুশি হয়ে বলবে- ‘অবশ্যই, আমি দেখতে চাই’I তখন আত্মাটি তার ডানে তাকিয়ে দেখবে, ক*ব*রের দেয়ালটি সেখানে আর নেইI সেই দেয়ালের দরজা দিয়ে অবর্ণনীয় সুন্দর এক বেহেস্ত দেখা যাচ্ছেI এই দৃশ্য দেখেই তার অন্তর জুড়িয়ে যাবে এবং তার মন প্রশান্ত হয়ে যাবেI সেখানে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করবে- ‘আমি সেখানে কখন যাবো? কিভাবে যাবো’?
আগত লোকটি মৃদু হেসে বলবেন- ‘যখন সময় হবে, তখন-ই তুমি সেখানে যাবে ও থাকবেI ভ*য় পেও নাI আমি তোমার সাথেই আছিI তোমাকে আমি শেষ দিবস পর্যন্ত সঙ্গ দিবো’I
আত্মাটি তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করবে- ‘কিন্তু তুমি কে’? তখন লোকটি বলবেন- ‘আমি তোমার এতোদিনের আমল, পৃথিবীতে তোমার সব ভালো কাজের, তোমার সব পুণ্যের রূপ আমি, আজ তুমি আমাকে একজন সঙ্গীর মতো করে দেখছো I আমাকে আল্লাহ তা'আলা তোমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যই এখানে পাঠিয়েছেন’I
এই কথা বলে লোকটি আত্মাটির উপর যত্ন করে হাত বুলিয়ে দিবেন এবং বলবেন- ‘হে পবিত্র আত্মা! এখন তুমি শান্তিতে ঘুমাওI নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নাও’I এই কথা বলার পর, আত্মাটি এক নজরে বেহেস্তের দিকে তাঁকিয়ে থাকবে এবং একসময় এই তাকানো অবস্থায় গভীর প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে’I আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দিন, আমিন। (বুখারী ও মুসনাদের দুটি হাদিস অবলম্বনে)
©️