03/10/2025
এক সৃষ্টিশীল, সংগ্রামী ও অঙ্গীকারের জীবন যাপন করে বিদায় নিলেন আহমদ রফিক।
ভাষা আন্দোলন করেছেন। বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। এরপর সাংগঠনিক রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে সার্বক্ষণিক লেখালেখি করেছেন। কিন্তু বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শ ত্যাগ করেন নি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক পাস করেও চিকিৎসক হতে পারেননি। ভাষা আন্দোলন ও রাজনীতির কারণে তার ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়। সরকারি রোষের কারণে জীবিকা পরিবর্তন করতে হয়। অবশ্য এ নিয়ে তার কোনো আফসোস ছিল না।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রবন্ধকার ও গবেষক। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।
তার কয়েকটি কবিতার বইয়ের নাম- বাউল মাটিতে মন (১৯৭০); রক্তের নিসর্গে স্বদেশ (১৯৭৯); বিপ্লব ফেরারী, তবু (১৯৮৯) ইত্যাদি। ছোট গল্পের বই অনেক রঙের আকাশ (১৯৬৬)।
অসংখ্য প্রবন্ধ-গবেষণার মধ্যে কয়েকটি হলো- নজরুল কাব্যে জীবনসাধনা (১৯৫৮); রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও বাংলাদেশ (১৯৮৭); ভাষা আন্দোলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য (১৯৯১); এই অস্থির সময় (১৯৯৬); বাংলাদেশ জাতীয়তা ও জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা (২০০০); রবীন্দ্রভাবনায় গ্রাম : কৃষি ও কৃষক (২০০২); ভাষা আন্দোলন : গ্রাম : কৃষি ও কৃষক (২০০২) ইত্যাদি।
চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে লিখেছেন: ঔষুধ, চিকিৎসাসেবা : বৈষম্যের শিকার সাধারণ মানুষ (১৯৯৫)।
অনুবাদের বই জীবন রহস্য (১৯৬৭); অণুর দেশে মানুষ (১৯৬৮) ইত্যাদি।
সম্পাদন করেছেন ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র নাগরিক (১৯৬৩-১৯৭১) কিংবা মেডিকেল জার্নাল দ্য ইস্ট পাকিস্তান মেডিকেল জার্নাল (১৯৬০-৭০) ইত্যাদি।
যতদিন সম্ভব সৃষ্টিশীল থাকবার চেষ্টা করেছেন। সমসাময়িক নানান বিষয়ে সংবাদপত্রে নিয়মিত লিখতেন। ২০১৮ সালে ৯০ বছর বয়সে এক স্বাক্ষাৎকারে তৎকালিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছিলেন- "কথিত উন্নয়নকে গ্রাস করছে সামাজিক-রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও অবক্ষয়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ঘাটতি, গুম-খুন-সন্ত্রাস, দুর্নীতির মতো বহুবিধ ঘটনা।"
দেশের অর্থনৈতিক ও (অ)গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বলেছিলেন- "অর্থনীতিবিদদের বিচার-ব্যাখ্যার নিরিখে অর্থনৈতিক খাতে দেশের অগ্রগতি হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, বাড়ছে ধনী মানুষের সংখ্যাও। কিন্তু শ্রেণিগত বৈষম্যও বেড়েছে অনেক বেশি। অন্যদিকে মননশীলতা, মানবিক চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংকুচিত হচ্ছে। এই বিপরীতমুখী ধারা কোনো দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।"
২০১৯ সাল থেকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করে, আর ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যেতে থাকে। এর মধ্যেই ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনী- দুই মৃত্যুর মাঝে: নান্দনিক একাকিত্বে (২০২১)।
আজীবন সংগ্রামী ও অঙ্গীকারের জীবন যাপন করা এই মানুষটি তাঁর মরদেহ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে দান করে গেছেন।
আহমদ রফিককে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।