Health tips &female tips by Doctor Remi aktter female spshalist C.M.H

  • Home
  • Health tips &female tips by Doctor Remi aktter female spshalist C.M.H

Health tips &female  tips by Doctor Remi aktter female spshalist C.M.H health tips

21/09/2024

বিষয়:সহবাসের নীতিমালা পর্ব পার্ট ওয়ান :
মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সকল নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম একটি নিয়ামত হলো স্বামী-স্ত্রী। একজন স্বামী স্ত্রীর সবচেয়ে আনন্দের মূহুর্ত হলো যৌন মিলন। ইসলাম যৌন মিলন শুধুমাত্র স্বামী স্ত্রীর জন্য বৈধ্য করেছে।
স্বামী স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম আছে যা আমরা অনেকেই জানি না। এছাড়াও সহবাসের পূর্বে এবং পরে কিছু কাজ থাকে যা আমরা করি না। সমাজে স্বামী স্ত্রী সহবাসের কিছু কুসংস্কার আছে। আজকে আমরা স্বামী-স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম সহ সকল বিষয় বিস্তারিত জানবো।
সহবাসের আগে কি কি কাজ করা উচিত?
সহবাস স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। একজন স্বামী-স্ত্রী যৌন মিলনের ফলে চরম সুখ অনুভব করে যা অন্য কোন ভাবে সম্ভব না। কিন্তু সমাজে দেখা যায় নারী পুরুষ উভয়ই ইসলামিক কোন নিয়ম ছাড়াই সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীর সহবাসের ইচ্ছা কমে যাচ্ছে আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের ইচ্ছা বা আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এই সকল সমস্যার অন্যতম কারন হচ্ছে সহবাসের পূর্ব প্রস্তুতি।
স্বামী স্ত্রী ইচ্ছা করলেই সহবাস বা যৌন মিলন করতে পারে। কিন্তু আপনি একটি স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করে দেখেন, একজন পুরুষ সারাদিন বাইরে থাকে। সারাদিনের ঘাম, ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকে তখন যদি স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে স্ত্রীর সহবাসের যে আনন্দ থাকে তা কিন্তু সে পায় না। স্ত্রীর ক্ষেত্রের একই। স্ত্রী সারাদিন ঘরের কাজ করে। হঠাৎ করে যদি সে মিলনে চলে যায় তাহলে তার শরীরের ঘাম, দুর্গন্ধ থাকে তখন স্বামীর যৌন ইচ্ছা কিন্তু অনেকটাই কমে যায়। আর সাধারতন সবাই চায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে।
তাই সহবাসের পূর্বে অবশ্যই ভালবাসে পরিষ্কার পরিছন্ন হয়ে নিবেন দুজনেই। এক্ষেত্রে ছেলেরা এখানে বেশি ভুল করে। সহবাসের আগে ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে আসে না এমনকি তাদের মুখের থেকেও গন্ধ আছে। সহবাসের পূর্বে বগল, নাভি, যৌনাঙ্গের লোম ইত্যাদি পরিষ্কার করে নিবেন। আর শরীরে যদি দূর্গন্ধ থাকে তাহলে পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে কি হবে জানেন, স্বামী স্ত্রী উভয়ের যৌন ইচ্ছা এবং চাহিদা বাড়বে সাথে সাথে যৌন মিলন অনেক আনন্দের হবে। যৌন মিলন কোন বিরক্তের কারন হয়ে দাড়াবে না। এটাও কিন্তু স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম। হযরত আয়িশা (রা) বলেন –
আমি রাসূল (সা) কে মিলনের পূর্বে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম এরপর তিনি তার স্ত্রীদের কাছে গমন করতেন।
আপনার স্ত্রী এখানে তারাহুরার কিছু নেই। যৌন মিলনের পূর্বে আপনি ও আপনার স্ত্রী দুজনেই একদম ফিটফাট হয়ে আসবেন পরে নিজের ইচ্ছেমত সহবাস করতে পারেন। কিছু পুরুষ আছে এরা সহবাসের পূর্বে নিজের দাঁতও পরিষ্কার করে না। কিস করার সময় স্ত্রী দূর্গন্ধ অনুভব করে যার ফলে কিন্তু সহবাসের চরম সুখ পাওয়া যায় না এবং স্ত্রীর একটু বিরক্তবোধ কাজ করে।
স্বামী স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম
মহান আল্লাহ তায়ালা বিয়ের মাধ্যমে নারী পুরুষদের একত্রিত করেছে এবং তারা দুজন স্বামী স্ত্রীতে পরিনত হয়েছে। স্বামী স্ত্রী উভয়ের যৌন মিলনের জন্য অনুমতি দিয়েছে। আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে ইচ্ছে হলেই সহবাস করতে পারবেন। তবে ইসলামে সহবাসের কিছু নিয়ম নীতি বলে দিয়েছে যেটা আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা যদি ইসলামিক নিয়মে সহবাস করি তাহলে যৌন মিলন যেমন মধুর হবে তেমনি যৌন মিলনের ফলে যে সন্তান আসবে তা নেক সন্তান হবে। স্ত্রীর সহবাসের ইসলামিক নিয়ম গুলো আল্লাহ আমাদের মেনে চলার তৌফিক দান করুক আমিন।
স্বামী স্ত্রী সহবাসের পূর্বে এই দোয়াটি পরুন:
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারনঃ ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।’
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি (যৌন মিলন বা সহবাস)। তুমি আমাদের কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এই মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, সে সন্তাকেও শয়তানের আক্রমন থেকে দূরে রাখ।
বিস্তারিত পড়ুন – স্ত্রী সহবাসের দোয়া
এই দোয়াটি পড়ার পরে স্বামী স্ত্রী যৌন মিলন শুরু করতে পারে। পুরুষরা এখানে একটু ভুল করে মিলন মানেই তারা ভাবে যৌনাঙ্গে পুরুসাঙ্গ ঢুকিয়ে দেওয়া। বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। সহবাসে যেমন ইসলামিক নিয়ম আছে তেমনি ডাক্তারাও সহবাসের কিছু নিয়ম বলে দিয়েছে। উপরের দোয়াটি পড়ার পরে আপনি আপনার স্ত্রীকে কিস করুন পাশাপাশি তার সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে দিন। তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে তাকে উত্তেজিত করুন।
সহজ ভাবে বলতে গেলে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ প্রবেশের পূর্বে আপানর স্ত্রীকে উত্তেজিত করে নিবেন। সাধারতন নারীদের উত্তেজিত করার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হচ্ছে তার ঠোটে কিস করা, তার স্তনে কিস করা ও হাত বুলিয়ে দেওয়া, তার সারাসরিলে কিস করে দেওয়া ইত্যাদি। যখন আপনার স্ত্রী অধিক উত্তেজিত হয়ে যাবে তখন বিসমিল্লাহ বলে আপনার স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করুন। স্ত্রীরও উচিত স্বামীর সব জায়গায় হাত বুলানো, শরীরের সহ জায়গায় কিস করা এর ফলে স্বামীও চরম সুখ অনুভব করবে এবং স্ত্রীকেও অধিক সময় আদর করতে ইচ্ছা জাগবে।
সহবাসের পজিশনের ক্ষেত্রে ইসলাম কোন বাধা বা নিষেধ করেন নি।
সূরা বাক্বারা- ২২৩ বলা আছে – তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও।
আপনি আপনার স্ত্রী সাথে যেভাবে খুশি সেভাবেই সহবাস করতে পারেন। আপনি চাইলে শুয়ে, বসে, দাড়িয়ে, স্ত্রীকে আপনার উপরে বা আপনি স্ত্রীর উপরে হয়ে সহবাস করতে পারেন। তবে সহবাসের পথ হবে একটাই যোনিপথ। স্ত্রী মলদ্বারে সহবাস বা যৌনাঙ্গ প্রবেশ করা যাবে না।
আপনার যখন ইচ্ছা আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারেন। তবে আপনার বীর্য বের হয়ে গেলে কিছুটা সময় আপনার স্ত্রীর উপরে শুয়ে থাকতে পারেন এতে আপনার স্ত্রীর ভাল লাগবে। ইসলামে শুধুমাত্র আপনার তৃপ্তিকেই গুরুত্ব দেয় নি আপনার স্ত্রীর তৃপ্তিকেও গুরুত্ব দিয়েছে। তাই শুধুমাত্র আপনার সুখের কথা চিন্তা করলে হবে না আপনার স্ত্রী হ্যাপি কিনা সেটা খেয়াল করতে হবে। বেশিরভাগ পুরুষরাই নারীদের যৌন তৃপ্তির প্রতি নজর দেয় না এর ফলে তাদের বৈবাহিত জীবনের পাশাপাশি যৌন জীবনও সুখ নেই।
স্বামী আনন্দ পাচ্ছে, কিন্তু স্ত্রী সুখ বোধ করছে না, অথবা স্ত্রী সন্তুষ্ট, কিন্তু স্বামী সুখী নয়, এরূপ আসন নির্বাচন করা যাবে না। তাতে দাম্পত্য জীবনে আনন্দের ঘাটতি দেখা দিবে। দুজনকেই দুজনের সুখের কথা চিন্তা করতে হবে। তাহলেই সুখি হওয়া যাবে।
সহবাসের পর করণীয় কি?
সহবাস শেষ হওয়ার পরে স্বামী স্ত্রীর উভয়েই দ্রুত যৌনাঙ্গ ধুয়ে ফেলা উচিত এর ফলে যৌনাঙ্গে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাচঁতে পারবেন। সবচেয়ে ভাল যদি আপনি হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ ধোয়া উচিত না। স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম এর মধ্যে এটি নেই কিন্তু ডাক্তারদের মতে সহবাসের পরে হালকা গরম পানি নিয়ে যৌনাঙ্গ ধুয়ে নেওয়া উত্তম। তাছাড়া আপনারা সাথে সাথে গোসল করে নিতে পারেন আর যদি গোসল করতে ইচ্ছা না করে তাহলে পরে নামাজের আগে গোসল করলেও সমস্যা নেই।
তবে যদি প্রথমবার সহবাস শেষে দ্বিতীয়বার সহবাস করতে ইচ্ছা করে বা আপনি পুনরায় সহবাস করতে চান তাহলে আগে ওষু করে নেওয়া মুস্তাহাব। এই প্রসঙ্গে রাসূল (সা) বলেছেন –
তোমাদের কেউ (স্বামী স্ত্রী) সহবাস করার পরে যদি দ্বিতীয়বার সহবাস করতে চায় তাহলে সে যেন ওযু করে নেয়। এটা তার দ্বিতীয় সহবাসকে স্বাদময় করবে।
ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ গুরুত্বপূর্ন বিষয়
ইসলামিক নিয়ম মেনে সহবাস করলে অনেক সওয়াব হয় এবং আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হয়ে যান। ভুল ভাবে সহবাস করলে গুনাহ হবে। আমরা অনেকেই নিজের অজান্তেই গুনাহের কাজ করে ফেলি। সহবাস করার যেমন ইসলামে কিছু নিয়ম আছে তেমনি কিছু নিষিদ্ধতাও আছে। যা আমাদের জানা জরুরী।
সর্ব প্রথম মাসিক বা পিরিয়ড চলা কলীন সময় সহবাস করা যাবে না। অনেকেই স্ত্রীকে জোর করে মাসিকের সময় সহবাস করে বলে জানা যায়। পিরিয়ডের সময় নারীদের পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। জেনে নিন পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়।
এরপরে পায়ুপথে বা মলদ্বারে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা যাবে না। এটা সম্পূর্ন রুপে নিষেধ করা হয়েছে। আপনার স্ত্রী আপনি যেভাবে খুশি সেভাবেই যৌন মিলন করতে পারেন কিন্তু মলদ্বারে সহবাস বা মিলন করা যাবে না, এতে আপনার অনেক গুনাহ হবে। হাদিসে আছে হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন – যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে মলদ্বারে সঙ্গম করলো আল্লাহ তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকান না। তাই এক্ষেত্রে আমাদের অনেক সতর্ক হতে হবে।
এরপরে সহবাসের সময় নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন স্ত্রীর কথা ভাবা বা কল্পনা করা যাবে না। অনেকে এখানে না জেনেই ভুল করেন। আপনার স্ত্রীর সাথে মিলন করার সময় কখনোই অন্য কোন মেয়ের কথা মাথায়ও আনবেন না।
এরপরে রোজা থাকা অবস্থায় কোন ভাবেই সহবাস বা যৌন কাজ করা যাবে না তাহলে রোজে ভেঙ্গে যাবে।ু তবে স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে কিস করতে পারে কিন্তু কোন ভাবেই যেন যৌন রস বের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রমজান মাসে ইফতারির পরে হতে সেহেরীর আগ পর্যন্ত অনেক সময় আছে তখন আপনি সহবাস করতে পারেন এতে কোন নিষেধ নেই।
এরপরে স্ত্রী অসুস্থ থাকা অবস্থান সহবাস করবেন না। এতে আপনার স্ত্রী আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডাক্তাররাও অসুস্থ অবস্থায় সহবাস করতে নিষেধ করেছেন। স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম আমাদের মেনে চলতে হবে।
এর পরে হজ্জ্ব বা ওমরার ইহরার অবস্থান কোন যৌন কাজ করা যাবে না।
রমজান মাসে সহবাসের ইসলামিক নিয়ম
রমজান মাস চলাকালীন সময় অনেকে ভেবে থাকি এই একমাস সহবাস করা যাবে না। অনেকে আবার ভয় পেয়ে থাকে যে গুনাহ হবে। কিন্তু ইসলামে রমজান মাসেও সহবাস করার অনুমতি দিয়েছে। চলুন জেনে নেই…
শুধুমাত্র রোজা থাকা অবস্থায় আপনি সহবাস করতে পারবেন না বাকি যে কোন সময় সহবাস করতে পারবেন। যেমন ধরেন ইফতারির পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত যে কোন যৌন কাজ আপনি করতে পারেন। তবে যদি রোজা থাকা অবস্থায় স্বামী স্ত্রী জড়িয়ে ধরে ঘুমায়, কিস করেন, স্তনে হাত দেওয়া ইত্যাদি জায়েজ কিন্তু এর ফলে যেন বীর্যপাত না হয়। অনেক সময় রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে থাকলে যৌন ইচ্ছা হয় ফলে বীর্যপাত হতে পারে তাই এদিকে সাবধান থাকতে হবে।
সহবাস নিয়ে কিছু কুসংস্কার ও ভুল ধারনা
সহবাস নিয়ে আমাদের সমাজে কুসংস্কারের আর শেষ নেই। কিছু কিছু এমন সব কথা বলে শুনলে অবাগ হয়ে যায় মানুষ। ইসলামে স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম যেমন আছে তেমন নিষিদ্ধতাও আছে। কিন্তু সেটা না মেনে সমাজের মানুষ ভূল সব জিনিস নিয়ে বসবাস করছে। চলুন সেগুলো জেনে নেই।
– রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে বা দিনের বেলা সহবাস করা যাবে না।
– ফলগাছের নিচে সহবাস করা যাবে না।
– পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে স্ত্রী সাথে সহবাস করা যাবে না।
– স্বপদোষ হলে গোসল না করে সহবাস করা যাবে না।
– বিভিন্ন পজিশনে সহবাস করা যাবে না।
– ভরা পেটে মানে খাবার খেয়ে এর পরে সহবাস করা যাবে না।
– উলঙ্গ হয়ে সহবাস করা যাবে না।
– বিদেশে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করা যাবে না।
– স্ত্রীর যৌনাঙ্গে চেয়ে সহবাস করা যাবে না।
– চন্দ্র মাসের প্রথম ও পনের তারিখ রাতে সহবাস করা যাবে না।
– রবিবার ও বুধবার সহবাস করা যাবে না।
– সহবাসের পরে গোসল না করে কিছু স্পর্শ করা যাবে না।
এসমস্ত ভ্রান্ত ও কুসংস্কার মেনে চলার কোন যুক্তিকতা নেই। যে সকল কথা ইসলামে নেই সে সকল কথা আমরা কেন মানতে যাবো। ইসলামে সকল কিছুর সঠিক সমাধান দিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা সব কিছুই ইসলামিক নিয়মে চালাবো। আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
প্রশ্নঃ রোজা রেখে সহবাস করা যায় কি?
উত্তরঃ না। রোজার পরে মানে রাতে সহবাস করা যাবে।
প্রশ্নঃ গর্ভকালীন বা প্রেগনেন্ট থাকা অবস্থায় সহবাস করা যাবে?
উত্তরঃ জি যাবে কিন্তু সাবধান থাকতে হবে যেন বাচ্চার কোন ক্ষতি না হয়।
প্রশ্নঃ সহবাসের সময় থুথু ব্যবহার করা যাবে কি?
উত্তরঃ যাবে কিন্তু উচিত নয়। এতে বিভিন্ন রোগ হতে পারে।

02/09/2024

বিষয় সঠিক পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি :
নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজনে ও রাত-দিনের পালাক্রমে আগমন ও প্রস্থানে বহু নিদর্শন আছে ঐসব বুদ্ধিমানের জন্য যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ্য করে বলে ওঠে) হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি অনর্থক কাজ থেকে পবিত্র (আলে ইমরান ৩/১৯০-১৯১)।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন আসমান-যমীন, আগুন-পানি, মাটি, বাতাস ইত্যাদি ছাড়াও লাখ লাখ মাখলূক। দুনিয়াতে যা কিছু আমরা মানুষের আবিষ্কার বলে মনে করি সেগুলিও মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলারই সৃষ্টি। কারণ তিনিই একমাত্র স্রষ্টা। তিনি ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তিনিই কালের স্রষ্টা, কালের সব নবাবিষ্কারও তাঁরই সৃষ্টির সহায়তায় সৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيْعًا ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু’ (বাক্বারাহ ২/২৯)। সুতরাং বর্তমান বিশ্বে যত সব আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টিকে কেন্দ্র করেই সৃষ্ট।
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন যে, মানুষ জগতের যা কিছু দ্বারা উপকার লাভ করে তা সবই আল্লাহ তা‘আলার দান। এর প্রত্যেকটি জিনিস আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের নিদর্শন। এতদসত্ত্বেও তার সঙ্গে কুফরী কর্মপন্থা অবলম্বন করা কত বড়ই না অকৃতজ্ঞতা!
এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে গোটা বিশ্বই এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। মুহূর্তের মাঝে এক দেশের খবর চলে আসে অন্য দেশে। হাযার হাযার মাইল দূরে অবস্থানরত মানুষের সাথে কথা বলা যায় অনায়াসে। পৃথিবীর এই তাবৎ আবিষ্কার, প্রযুক্তির এই সব উন্নয়ন সবই ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নে‘মত। যার শুকরিয়া আদায় করা প্রতিটি বান্দার জন্য আবশ্যক। কেননা আল্লাহ বলেন, لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশী বেশী করে দেয়। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)।
শুকরিয়ার সর্বনিম্ন স্তর হ’ল, আল্লাহর নে‘মতকে সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং আল্লাহর নাফরমানিতে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
এমন কোন প্রযুক্তি পণ্য বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নেই, যেটা ইসলামের খেদমতে ব্যবহারযোগ্য নয়। তবে স্মর্তব্য যে, প্রতিটি জিনিসকে ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার মন্দ কাজেও ব্যবহার করা যায়। দোষ কিন্তু জিনিসের বা প্রযুক্তির নয়। বরং এখানে ব্যবহারকারী মূলতঃ দায়ী। যেমন টেলিভিশনের মাধ্যমে মন্দ ছবিও দেখ যায়, আবার সারাদিন ইসলামিক অনুষ্ঠানও দেখা যায়। লক্ষণীয় যে, প্রযুক্তিকে আমরা কোন কাজে ব্যবহার করছি সেটাই বিবেচ্য বিষয়। আমরা যদি প্রযুক্তিকে ইসলাম প্রচারের কাজে লাগাই তাহ’লে সব ধরনের প্রযুক্তিই কল্যাণের মাধ্যম হবে। আর যদি এই কথা বলে পিছিয়ে থাকি যে, এগুলো ব্যবহার করা হারাম। তাহ’লে এগুলোর সুফল থেকে জাতি বঞ্চিত হবে। সব নবী-রাসূলই তাদের যামানায় তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন এবং নিজস্ব ধর্মের প্রচার-প্রসার করেছেন। তাঁরা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করেছেন। আমরাও যদি প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি তাহ’লে তা হবে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি :
ইসলামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا شُيُوخًا وَمِنْكُمْ مَنْ يُتَوَفَّى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوا أَجَلًا مُسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ-
‘তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতঃপর শুক্রবিন্দু হতে, অতঃপর জমাট রক্ত হতে, অতঃপর তোমাদেরকে বের করে দেন শিশুরূপে। অতঃপর তোমরা পৌঁছে যাও যৌবনে। অতঃপর বার্ধক্যে। তোমাদের কারু কারু এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং কেউ কেউ নির্ধারিত আয়ুষ্কাল পর্যন্ত পৌঁছে যাও। যাতে তোমরা অনুধাবন কর।’ (গাফির/মুমিন ৪০/৬৭)।
এই আয়াতটির মধ্যে যে বিপুল পরিমাণের বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং চিন্তার খোরাক আছে তা যদি বাদও দেই, শুধু আয়াতের সমাপ্তিটি ‘যাতে তোমরা অনুধাবন কর’ এটুকু লক্ষ্য করি, তাহ’লে দেখতে পাব যে, কিভাবে মানুষ মাত্র একফোঁটা তরল পানি থেকে পূর্ণাঙ্গ শিশু হয়ে বের হয়ে একসময় বড় হয়ে শক্ত-সমর্থ মানুষে পরিণত হয়, তারপর একদিন বৃদ্ধ হয়ে মারা যায়। ঠিক একইভাবে বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করাটাও মানুষ হবার একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ।
এই আয়াতের মমার্থ উপলব্ধি করে, যুগে যুগে মুসলিম বিজ্ঞানীগণ জ্ঞানের চর্চা করেন এবং সেই মধ্যযুগে জ্ঞানের আলো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে ইউরোপ ছিল অজপাড়াগাঁ। আর মুসলিম স্পেন ছিল প্রযুক্তির
ব্যবহারে শীর্ষে। মুসলিম বিজ্ঞানীগণ ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবক। যেমন রসায়ন, চিকিৎসা, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতির উদ্ভাবক ছিলেন মুসলিম বিজ্ঞানীগণই। রসায়ন বিজ্ঞানের জনক জাবির বিন হাইয়ান, চিকিৎসা বিজ্ঞানে আল-রাযী ও ইবনে সীনা, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানে আল-ফারগানী, সমাজবিজ্ঞানে ইবনে খালদূন প্রমুখের নাম জগদ্বিখ্যাত হয়ে আছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আকল বা বিচার-বুদ্ধি ও ফিকর বা চিন্তা-চেতনার গুরুত্ব অত্যধিক। এ সম্পর্কে আল-কুরআনের নির্দেশনা এসেছে যে, أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ مَا خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى وَإِنَّ كَثِيْرًا مِنَ النَّاسِ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ لَكَافِرُوْنَ- ‘তারা কি তাদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন সত্য সহকারে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য? কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতে অবিশ্বাসী’ (রূম ৩০/৮)।
মানুষ যদি আল্লাহর সৃষ্টির এই নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করে তাহ’লে বুঝতে পারবে যে, গোটা বিশ্ব সৃষ্টি এমনিতেই হয়নি। এর পিছনে এক বিরাট উদ্দেশ্য আছে এবং সবকিছুই একটি চরম পরিণতির দিকে যাচ্ছে। একসময় তাকে আল্লাহর সামনে হাযির হয়ে জবাব দিতেই হবে। যা মানুষকে আল্লাহমুখী করে। এজন্যই আল্লাহ কুরআনে ৪৯ বার ‘আকল’ ও ১৮ বার ‘ফিকর’ উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখতে সারাবিশ্ব পরিভ্রমণের নির্দেশ দিয়ে বলেন,قُلْ سِيْرُوْا فِي الْأَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللهُ يُنْشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ- ‘বল, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর। অতঃপর দেখ কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পরবর্তী সৃষ্টি করবেন’ (আনকাবূত ২৯/২০)।
বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রধান উপায় হ’ল পড়া। ইসলামের প্রথম নির্দেশ হ’ল ‘পড়’। এমনকি সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াতেই মানবসৃষ্টির উপাদান ‘আলাক্ব’-এর মাঝেই বিজ্ঞানের অনেক মর্ম লুকিয়ে আছে। ইসলাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে কখনই নিরুৎসাহিত করে না। বরং এর সঠিক ও সুন্দর ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। মদীনায় নবী করীম (ছাঃ)-এর জীবনে এরকম অনেক প্রযুক্তিগত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আহযাব বা খন্দকের যুদ্ধে যে পারসিক কৌশল ব্যবহার করা হয় তা ছিল আরবদের কাছে অপ্রচলিত প্রযুক্তি। এমনিভাবে অন্য যুদ্ধগুলোতেও সামরিক দিক দিয়ে অনেক উন্নত রণকৌশলের প্রয়োগ দেখা যায়। ইসলামী সমাজের বিভিন্ন নীতিমালা যে কতটা বিজ্ঞানসম্মত তা আজ সুপ্রমাণিত। মহানবী (ছাঃ)-এর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মূলনীতি ছিল সর্বাধুনিক ও সর্বকালীন।
তবে প্রতিটি জিনিসেরই ভালো-খারাপ দিক রয়েছে। মানুষ চাইলে তাকে যে কোন পথে ব্যবহার করতে পারে। প্রযুক্তিও তার ব্যতিক্রম নয়। এটিকে যেমন ইসলামের খেদমতে ব্যবহার করা সম্ভব। তেমনি খারাপ পথেও তা ব্যবহার করা যায়। লক্ষণীয় যে, আমরা প্রযুক্তিকে কোন কাজে ব্যবহার করছি সেটাই বিবেচ্য বিষয়। আমরা যদি প্রযুক্তিকে ইসলাম প্রচারের কাজে লাগাই তাহ’লে সব ধরনের প্রযুক্তিই কল্যাণের মাধ্যম হবে।প্রযুক্তির অপব্যবহার
মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও সাবলীল করেছে। ইসলামের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। তবে বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, ইসলাম চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে সঠিক ব্যবহার ও এর সুফল আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। এর কবল থেকে পরিত্রাণের আশাও অকল্পনীয় বৈ কি। প্রযুক্তির এই নে‘মতগুলো আজ আযাবে পরিণত হচ্ছে। এ বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হ’ল।-
মোবাইল : প্রযুক্তির অন্যতম উপাদান হ’ল মোবাইল যা মানুষের মাঝে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দূরত্বকে জয় করেছে। কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে এখন কথা বলার চেয়ে অপসংস্কৃতির প্রচার, নগ্নতাকে উসকে দেয়া, ব্লাকমেইলিং, অশ্লীল কার্যকলাপ যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যে স্মার্ট ফোন ব্যক্তিকে স্মার্ট করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারত, তা আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম উপকরণ।
মোবাইল সিম কোম্পানীগুলোর লোভনীয় অফার ও এসবের অপব্যবহার তরুণ সমাজকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা ভুলেই যাচ্ছে পরকালে এসব কথা ও কাজের হিসাব হবে এবং এসবের রেকর্ড থাকবে। আল্লাহ বলেন,مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ- ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে’ (ক্বাফ ৫০/১৮)।
ফেইসবুক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে নারী-পুরুষের অবৈধ যোগাযোগ, নারী-পুরুষের অর্ধনগ্ন ছবি বা ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের সামাজিক অবক্ষয়কে ত্বরানিবত করছে। অথচ অশ্লীলতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ يُحِبُّوْنَ أَنْ تَشِيْعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ- ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (নূর ২৪/১৯)।
ইন্টারনেট প্রযুক্তি : এটা বিশ্বকে একই নেটওয়ার্কের মধ্যে এনেছে। এটাও অপব্যবহারের শিকার। ফলে এই প্রযুক্তির কুফলও অধিক। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কিশোররাও সহজেই পর্ণোগ্রাফীতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এর খারাপ প্রভাব পড়ছে কিশোরদের মন-মগজে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীল অডিও, ভিডিও প্রচারের ফলে অশ্লীলতার ব্যাপক ছড়াছড়ি হচ্ছে। ফলে নারীর শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং, এসিড সন্ত্রাস, হত্যা-গুম ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাই প্রযুক্তির অবদানকে খুব কম মানুষই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে। আগে এসব ঈমান বিধ্বংসী বিষয়গুলো বিরল ছিল। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে তা হাতের মুঠোয় এসেছে। কিছুদিন আগের এক জরিপে জানা যায়, বিপুল সংখ্যক স্কুল শিক্ষার্থীরা পর্ণোগ্রাফীর সাথে জড়িত। এছাড়া স্মার্ট ফোনের ওয়াইফাই শেয়ারিং (shareit, anyshare etc.) ও ব্লুটুথের (Bluetooth) মাধ্যমে এক মোবাইল থেকে অন্য মোবাইলে সহজেই তা ছড়িয়ে যাচ্ছে। পরিবারের প্রধানদের যথাযথ মনিটরিং-এর অভাবে এগুলো আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রেডিও : পরিবারের বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে বহু বছর থেকে রেডিও ও টেলিভিশন স্থান দখল করে রেখেছে। মাঝে রেডিওর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেলেও এফ.এম রেডিও-এর মাধ্যমে এটির গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। বর্তমানে এই মাধ্যমে ইসলামিক কোন কিছুই প্রচার হয় না। এটা অনৈসলামী কার্যকলাপের অন্যতম হাতিয়ার। কোন প্রকার তার বা সেট ছাড়া মোবাইলে চালু করা যায় বলে সমাজে এর প্রভাব অনেক বেশী। এগুলোর মাধ্যমে আমাদের ভাষারও বিকৃতি হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।
টেলিভিশন : বাড়ীর চারদেয়ালের মধ্যে বিনোদনের মাধ্যম টেলিভিশন আজকাল ‘শয়তানের বাক্সে’ পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের মহিলারা এখন জাতীয় ও বিজাতীয় সিরিয়ালে আসক্ত। ফলে অপসংস্কৃতির সয়লাব সর্বত্র পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এসব সিরিয়ালের ফলে নারীরা বিজাতীয় পোষাক-পরিচ্ছদ, পূজা-পার্বণ, ভাষা প্রভৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। পরিবারের নারী সদস্যদের দেখে দেখে শিশুরাও এতে আকর্ষিত হচ্ছে। এই মাধ্যমে ভালো কোন ইসলামিক চ্যানেল না থাকায় এগুলোর প্রভাব আরো বেশী ত্বরান্বিত হচ্ছে। অধুনা খ্যাতিমান দাঈ ডা. যাকির নায়েক পিসটিভি চালু করার মাধ্যমে এটার বিপক্ষে একটি সুস্থ-ধারা প্রচলনের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিছুদিন চলার পর অনৈসলামী শক্তির প্রভাবে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এই চ্যানেল ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছিল।
প্রিন্ট মিডিয়া : পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ক্রোড়পত্র প্রভৃতিতেও ইসলামী কোন কিছু তেমন প্রচার হয় না বললেই চলে। প্রতি সপ্তাহে ছোট কলামে ভিতরের লেখা পাঠকের চোখ এড়িয়ে যায়। এছাড়া পত্রিকা খুললেই অর্ধনগ্ন নারী-পুরুষের ছবিতে এতটাই পূর্ণ থাকে যে, এখন সংবাদপত্র পড়ার জো নেই। বাজার-ঘাট, রাস্তার আশেপাশে বিলবোর্ডও সাইনবোর্ডেও অনৈসলামিক বিষয়গুলোর প্রাধান্য চোখে পড়ে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের গুরুত্ব :
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র। এর অবদানকে যেমন অস্বীকার করা যাবে না, তেমনি এটার অপব্যবহারের কথা বলে এটাকে পরিত্যাগ করারও কোন উপায় নেই। বরং আমাদেরকে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বস্ত্ততঃ প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহারই আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।
সব নবী-রাসূলই তাদের যুগে তৎকালীন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছিলেন এবং মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার বিধান প্রচার-প্রসার করেছেন। উম্মতকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখিয়েছেন। মহান আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছিয়েছেন। মূসা (আঃ)-এর সময় জাদুর প্রভাব ছিল অধিক। মূসা (আঃ) সে যুগের প্রেক্ষাপটে আল্লাহ প্রদত্ত মুজেযা ব্যবহার করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ফলে অসংখ্য জাদুকর আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। ঈসা (আঃ)-এর সময়ে চিকিৎসাবিদ্যার প্রচলন ছিল বেশী। তিনি তাই আল্লাহ প্রদত্ত চিকিৎসাবিদ্যার ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত দিয়েছেন। মৃতকে আল্লাহর হুকুমে জীবিত করে দেখানোর মাধ্যমে দাওয়াতী কাজ করেছেন (মায়েদাহ ৫/১১০)।
সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আল্লাহ সারা জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছিলেন। তিনি এ ধরণীতে এসে মুশরিক, ইহুদী সহ সবাইকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। দাওয়াত দানে তিনি তৎকালীন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। ছাফা পাহাড়ে উঠে তিনি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। সে যুগে সাহিত্যের প্রভাব ছিল বেশী। তিনি উচ্চাঙ্গের আরবী সাহিত্যের ব্যবহার করেও মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন।
একটি দেশ উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার প্রধান চালিকাশক্তি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আবিষ্কারে ও ব্যবহারে অগ্রসরতা। যে জাতি যত বেশী উন্নত সে জাতি তত বেশী শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী। ইসলাম প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান চর্চাকে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে প্রযুক্তি শিক্ষালাভ করা যেতে পারে। কিন্তু স্বনির্ভর হওয়ার শক্তি পঙ্গু করে পরজাতির মুখাপেক্ষী থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়নের একমাত্র সোপান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর হওয়া প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আবশ্যক।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের উপায় ও মাধ্যম :
বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প সময়ে, অল্প কষ্টে অসংখ্য মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া যায়। আধুনিক মাধ্যমগুলোতে ইসলামের ছহীহ আক্বীদার মানুষ কম আসায় এক্ষেত্রে সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন ভ্রান্ত দল ও গোষ্ঠী। তাদের থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে আধুনিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সঠিক ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমকে কিভাবে সঠিক পথে পরিচালনা করা যায় এবং কিভাবে ইসলাম প্রচারে ব্যবহার করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হ’ল।-
টেলিভিশন মিডিয়া : ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার একক হ’ল পরিবার। সেই পরিবারের অন্যতম বিনোদন মাধ্যম হ’ল টেলিভিশন। এ মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের গুরুত্ব অপরিসীম। এই মাধ্যমের অপব্যবহারগুলো সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি একে ইসলাম প্রচারের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। ইসলামী বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের একজোট হয়ে কাজ করলে তা সহজ হবে।
রেডিও : হাতের কাছে সর্বক্ষণ সহজলভ্য মোবাইলের কল্যাণে অধুনা এই মাধ্যমের ব্যাপ্তি বেড়েছে। দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, এটি এমন একটি মাধ্যম যেটাতে ইসলামী কোন চ্যানেল নেই। অথচ অন্যান্য মিডিয়ার তুলনায় এটার খরচ কম হ’লেও এর ব্যাপ্তি বা প্রভাব অনেক বেশী। অত্যন্ত কম খরচে অল্প সীমানায় (range) সম্প্রচার করতে চাইলে কমিউনিটি রেডিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে মুসলিমদের ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক উদ্যোগই পারে এ মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলাম প্রচার করতে।
প্রিন্ট মিডিয়া : সমাজের পরিবর্তনে ও সমাজে ভালো কিছু প্রচলনের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা স্থায়ী ভূমিকা রাখতে পারে প্রিন্ট মিডিয়া। উপমহাদেশের মুসলিম সাংবাদিকতার জনক মওলানা আকরম খাঁ হ’লেও তাঁর উত্তরসূরীরা এই মাধ্যমে প্রায় অনুপস্থিত। এ মাধ্যমে এখন বামপন্থী ও সেক্যুলারদের প্রাধান্য। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখে এবং ইসলামের প্রতি সহানুভূতিশীল দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক প্রকাশনা নেই বললেই চলে। এই সুযোগে দেশে বামপন্থী ও সেক্যুলার মতবাদ মানুষের মন-মগজে প্রবেশ করছে। আমাদের মুসলিম শিশুদের মাঝেও এই চিন্তা-ভাবনা প্রবেশ করছে। এর ফলে আমরা শঙ্কিত যে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম মুসলিম থাকবে কি-না! তাই মিডিয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে ইসলামের কাজে লাগাতে চাই সমন্বিত উদ্যোগ। বিত্তবান মুসলিমদের এগিয়ে আসার পাশাপাশি মেধাবীদেরও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে ইসলামের কাজে লাগাতে হবে। সেই সাথে শিশুদের ইসলামমুখী করতে শিশুতোষ পত্রিকা প্রকাশ করাতে হবে এবং তা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।
কম্পিউটার : বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার এমন এক প্রযুক্তির নাম পৃথিবীর সবকিছুতেই যার ছোঁয়া অপরিহার্য। এর অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীর সব যন্ত্রই বর্তমানে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত তথা কম্পিউটারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাহায্যে পরিচালিত। লেখাপড়া, সাহিত্যচর্চা, সাহিত্য-কলা সবকিছুতেই কম্পিউটার প্রসারিত করেছে তার সাহায্যের হাত। উন্নত বিশ্বে কৃষি, বাণিজ্য, চাকরি থেকে নিয়ে হেন কোন পেশা নেই যাতে কম্পিউটারের সাহায্য নেয়া হয় না। এই মাধ্যমকে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অনেক সহজে ও সফলতার সাহায্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কম্পিউটারের মাধ্যমে আজ কুরআন, হাদীছ, বিভিন্ন ইসলামী রেফারেন্স গ্রন্থ পড়া ও সংরক্ষণ করা, ভিডিও দেখা, অডিও শোনা প্রভৃতি অনেক সহজতর হয়েছে। আগে কুরআনের আয়াত বা হাদীছের ইবারত সংগ্রহ করা অনেক কঠিন ছিল। আজ তা অনেক সহজতর হয়েছে। কুরআন-হাদীছ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফটওয়্যার রয়েছে। এগুলোতে সহজেই একটি সূরা থেকে অন্য সূরাতে গমন করা যায়। বিভিন্ন আয়াত বের করা যায় বিভিন্ন শব্দ দিয়েও আয়াত বের করা যায়। হাদীছের ক্ষেত্রেও এরকম সফটওয়্যার বিদ্যমান। বাংলা ভাষায়ও কুরআন-হাদীছের অনেক ওয়েব, সফটওয়্যার, অ্যাপ বিদ্যমান। এগুলোর যথাযথ প্রচার ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য।
কুরআন, হাদীছ ও ইসলামী রেফারেন্স-এর ক্ষেত্রে ‘মাকতাবা শামেলা’ সফটওয়্যার অসাধারণ। এতে বিভিন্ন বিষয়ের হাযার হাযার গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকা মওজুদ রয়েছে। আধুনিক যুগে ইসলামী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এর ব্যবহার জানা আবশ্যক।
ওয়েব মিডিয়া : ওয়েব মিডিয়ায় মুসলমানদের অবস্থান খুব দুর্বল। বিশেষ করে নৈতিকতার চর্চা এখানে খুবই নগণ্য। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, অমুসলিম ও ইহুদীদের সাইট মুসলমানদের সাইটের তুলনায় ১২০০ গুণ বেশী। অশ্লীলতা ও নীল ছবির সয়লাব এত বেশী যে অল্প কিছু মুসলিম সাইটের অবস্থান সে তুলনায় অপ্রতুল। বাংলা ভাষায়ও ইসলামের উপর ওয়েবসাইটের সংখ্যা অতি নগণ্য। যেগুলো রয়েছে তার মানও অনেক কম। অনেক ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট হয় না। ওয়েব মিডিয়ার অন্যতম উপাদান অনলাইন নিউজ-এর ক্ষেত্রে ইসলামী ভাবধারাসম্পন্ন পোর্টাল এর অত্যধিক অভাব পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ইসলাম বিষয়ে বিভিন্ন ব্লগ, ওয়েবসাইট প্রভৃতিরও সংখ্যা অনেক কম। এগুলোর প্রচার-প্রসারে আরো অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ গঠনে এগিয়ে আসার পাশাপাশি নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে।
অনলাইন মিডিয়ায় বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ, মোবি, ইপাব প্রভৃতি প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। যেহেতু অনৈসলামী শক্তি বিভিন্ন সময়ে ওয়েবে ইসলাম প্রচারকারী সাইটকে বন্ধ করে দেয়ার অপপ্রয়াস চালায়, সেক্ষেত্রে সবসময় এগুলোর ব্যাকআপ রেখে কাজ করা আবশ্যক। ওয়েবে শুধু আর্টিকেল প্রকাশই নয়, ইসলামী নীতিমালার বিষয়গুলোর উপর অডিও, ভিডিও, প্রেজেন্টেশন প্রভৃতি প্রকাশ ইসলামী দাওয়াতের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে পারে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর উইকিপিডিয়া একটি মুক্ত গ্রন্থাগার। ইসলামী বিষয়ের উপর আর্টিকেলগুলো এই সাইটে সবচেয়ে অবহেলিত। তরুণ সমাজের উচিত এটিকে সমৃদ্ধকরণে এগিয়ে আসা।
ই-মেইল : ই-মেইলের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কাছে ইসলামের বাণী মুহূর্তেই পৌঁছানো যায়। যত বড় লেখাই হোক না কেন তা লিখে মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া যায়। ই-মেইল এ গ্রুপ সৃষ্টি করার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ মেসেজ আদান-প্রদান করা যায়। জিমেইলের ফাইল হোস্টিং সার্ভিস গুগল ড্রাইভের মাধ্যমে ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি বিভিন্ন ডকুমেন্টকে Ocr করে word ফরম্যাটে রূপ দেয়া যায়।
ফেসবুক সহ অন্যান্য স্যোশাল মিডিয়া : স্যোশাল মিডিয়াগুলো যদিও ওয়েব মিডিয়ার অন্তর্ভুক্ত, তবুও এর গুরুত্ব ও পরিব্যাপ্তি অনেক হওয়ায় তার আলাদা আলোচনা গুরুত্বের দাবী রাখে। বর্তমানে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এ মিডিয়া আসক্ত। এ মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলাম প্রচার অনেক সহজ এবং অনেক দ্রুত গতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারের উদাহরণ অপব্যবহারের তুলনায় অনেক কম। ফেসবুকে লেখা, ছবি, ভিডিও, নোট (বড় লেখা) প্রকাশ করে দ্বীনে হকের দাওয়াতের কাজ করা যায়। এক্ষেত্রে দাওয়াতের পাশাপাশি অনৈসলামী মতবাদকে খন্ডনও করা যায়। তবে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সৌজন্য, শালীনতা, মাধুর্যতা বজায় রাখা আবশ্যক। সবসময় বিরোধিতামূলক বা খন্ডনমূলক প্রচার নয়, বরং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দাওয়াত দেওয়া অনেক বেশী কার্যকর। দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইসলামী মূলনীতি অনুসরণ করে সঠিক তথ্য-প্রমাণসহ আলোচনা দাওয়াতকে বেগবান করবে বলে আশা করা যায়। এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া যেমন টুইটার, বেশতো, উম্মাহল্যান্ড, লিংকডইন, গুগল প্লাস, ইন্সট্রাগ্রামেও ইসলাম বিষয় লেখা, ছবি পোস্ট করা সময়ের দাবী।
ইউটিউব : মানব মনে দাগ কাটার ক্ষেত্রে দেখা ও শোনার প্রভাব বেশী। এজন্যই মাল্টিমিডিয়ার প্রয়োগ অনেক বেশী প্রয়োজন। ভিডিও প্রকাশ করে তা প্রচার করলে দাওয়াতের প্রসার অনেক বৃদ্ধি পায়। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত, তাফসীর, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, ইসলামী হামদ, না‘ত প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এসব রেকর্ড করে ইউটিউব, ডেইলীমোশন, ভিমিও প্রভৃতি সাইটে আপলোড করে প্রচার করা যেতে পারে। বড় বড় ভিডিওর তুলনায় ছোট ছোট প্রশ্নোত্তর বা ভিডিওর প্রভাব অনেক বেশী। শিশুদের আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য অনুমোদনযোগ্য কার্টুনও প্রকাশ করা যেতে পারে। এছাড়া শিশুদের জন্য ছড়া, বিভিন্ন ইসলামী গল্প কথকের মাধ্যমে ভিডিও করে প্রকাশ করলে তা শিশুদের মনোজগতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মোবাইল : আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক নব আবিষ্কার হ’ল মোবাইল ফোন। ধনী-দরিদ্র, রিক্সাচালক-ভ্যানচালক, নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর সকলের হাতেই এখন মোবাইল। মোবাইল ফোন যেন আজকাল জীবনের একটি আবশ্যিক অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এটা মানুষের জীবনকে করেছে গতিময়। আগের যামানায় যে কাজে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হ’ত, বর্তমানে তা মুহূর্তের মধ্যেই হয়ে যায়। এদিকে লক্ষ্য করলে মোবাইল অত্যন্ত যরূরী একটি জিনিস। কিন্তু এর অপব্যবহারও কম নয়! মোবাইল এখন শুধু দূর-আলাপনী যন্ত্রই নয়, এটি এখন মিনি কম্পিউটারের রূপ ধারণ করেছে। ফলে এর বহুমুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মোবাইল সঠিকভাবে ব্যবহার করে এটিকে দাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা যায়। বিশেষ করে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ইসলামের অনেক বিষয় জানা, মেনে চলা সুবিধাজনক।
বর্তমানে অনেক সহজেই কুরআন-হাদীছের বাণীগুলো পড়া ও সার্চ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কুরআন ও হাদীছের এই সংকলনগুলো বাংলায় সহজলভ্য। এখন সহজেই ছালাতের সময়সূচী, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত প্রভৃতি জানা যায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইসলামী লেকচার, গান, টিউটোরিয়াল-এর অডিও-ভিডিও শোনা ও দেখা যায়। একটি মাত্র ছোট্ট মেমোরীতে অসংখ্য বক্তব্য ধারণ করা যায়। সেই সাথে অতি সহজেই তা অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে প্রচার করা যায়। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ইসলাম চর্চা অনেক সহজ হয়েছে। ইসলাম বিষয়ক অ্যাপগুলোতে কুরআনের বিভিন্ন অনুবাদ, হাদীছের গ্রন্থ, ফাতাওয়ার কিতাব, ছালাতের সময়সূচী, দৈনন্দিন জীবনের দো‘আ, তাফসীর, মাসআলা-মাসায়েল প্রভৃতি বিষয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষায় হিসনুল মুসলিম অ্যাপ, হাদীসবিডি অ্যাপ, আই হাদীস, বাংলা কুরআন প্রো প্রভৃতি অন্যতম। এসবের মাধ্যমে ইসলামী জ্ঞানার্জন করা সহজ হয়েছে। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে, ভ্রমণে ও অবসর সময়ে এক ক্লিকেই এসব পড়া যায়। শুধু পড়াই নয়, অডিও ডাউনলোডের মাধ্যমে বিখ্যাত ক্বারীদের তেলাওয়াত শুনা এখন অনেক সহজ হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে পিডিএফ, ইপাব, মোবি প্রভৃতি বিভিন্ন ফরম্যাটের পিডিএফ পড়া যায়। ইসলামের অসংখ্য বিষয়ে বর্তমানে পিডিএফ বিদ্যমান। হাতের কাছেই এসব রয়েছে, অথচ এসব উপকারী বিষয়কে পরিত্যাগ করে আমরা শয়তানী ওয়াসওয়াসায় পড়ে অনৈসলামিক বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছি। ইসলামী বিষয়গুলো অন্যের মাঝে প্রচলনের জন্যে আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এসব ধর্মীয় বই, অডিও, ভিডিও লেকচারগুলো অন্যের মাঝে বিভিন্ন মাধ্যমে (shareit, bluetooth, anyshare) প্রচার করা যায়। এসব সিডি বা ডিভিডিতে কপি করেও প্রচার করা যায়।
নিজেরাও বিভিন্ন দুর্লভ বইগুলো camscanner অ্যাপ দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরাকে কাজে লাগিয়ে স্ক্যান করে পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করতে পারি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের প্রচলন অনেক বেশী। উন্নত বিশ্বে বা আমাদের দেশের বিত্তবানরা আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহার করেন। কিন্তু এই অপারেটিং সিস্টেমে ইসলামিক অ্যাপ-এর সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। প্রযুক্তিবিদদের এই মাধ্যমে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। বাংলা ভাষায় ইসলামিক অ্যাপগুলোর অধিকাংশই তৈরী হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এসব বিষয় সাংগঠনিক বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হ’লে এর গতিময়তা বৃদ্ধি পাবে। আলেম সমাজের এসব ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি সামষ্টিকভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিত্তবানদেরও এসব উদ্যোক্তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা নিজের ঈমানী দায়িত্ব মনে করা উচিত। আইফোনে বই পড়ার অন্যতম ফরম্যাট ইপাব (Epub)। এই ফরম্যাটে কোন বাংলা ইসলামী বই নেই। যা দুঃখজনক। এই ফরম্যাট নিয়ে কাজ করার জন্য তরুণ সমাজের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন : বর্তমানে সব কিছুর বিজ্ঞাপনেই নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন কোন বিজ্ঞাপনে অশ্লীল ছবিও ব্যবহার করা হয়। রাস্তায় বা বাজারে এসব বিলবোর্ডের ব্যবহার আমাদের ইসলামী সংস্কৃতির বিরোধী। এর বিরুদ্ধে আমাদের তেমন পদক্ষেপ নেই।
এক্ষেত্রে ইসলামী কথা সম্বলিত বিলবোর্ড ভাড়া করে বা নিজের বাসাবাড়ীতে অল্প খরচেই স্থাপন করা যেতে পারে। প্রিন্ট মিডিয়াতেও বিজ্ঞাপন হিসাবে ইসলামী মূলনীতির কথাগুলো প্রকাশ করা যেতে পারে। রাস্তার পাশে বা মোড়ে মোড়ে ইসলামের সুমহান বাণী সম্বলিত বিজ্ঞাপন স্থাপন করলে তা দাওয়াতের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখতে পারে। সারাদেশে অসংখ্য মাদরাসা রাস্তার পাশে বিদ্যমান। এগুলোর পাশের রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন ইসলামী বাণীর ব্যানার, বিলবোর্ড স্থাপন করা যেতে পারে। ‘মুসলিম ও কুফরীর মাঝে পার্থক্য হ’ল ছালাত’,[1] ‘একটি আয়াত হ’লেও আমার পক্ষ থেকে প্রচার কর’,[2] ‘মুমিনদের মধ্যেই সেই উত্তম যে স্ত্রীর কাছে উত্তম’[3] প্রভৃতি বাণী সম্বলিত বিলবোর্ড রাস্তায় স্থাপন করা যায়। এছাড়া রাস্তায় রাস্তায় সফরের দো‘আ ও সফরকে উৎসাহিত করার আয়াতগুলো বিলবোর্ডে লেখা যেতে পারে। অশ্লীলতার পরিণাম সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীছগুলো উল্লেখ করে বাজারে বিলবোর্ড স্থাপন করা যায়। এছাড়া স্টীকার, লিফলেট প্রভৃতি মসজিদের দেয়ালে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে প্রভৃতিতে স্থাপন করে দ্বীনী দাওয়াত প্রচার করা যেতে পারে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে আলেমদের ভূমিকা :
তথ্য ও প্রযুক্তি মানুষের জীবন ও তার উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মানুষের জীবন প্রবাহকে বেগবান করেছে। আর ইসলাম মানুষের জন্য যে কোন কল্যাণকর জিনিসের সঠিক ব্যবহার অনুমোদন করে। তাই তথ্য ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে ইসলামের কোন আপত্তি নেই। তথ্য ও প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার হচ্ছে। কোন জিনিসের ভুল ব্যবহার হ’লে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। বরং ভুল ব্যবহার বন্ধ করতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের আলেম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের দায়িত্ব মানুষকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার জবাব আলেমদের পক্ষ থেকেই আসা উচিত। ইসলামের নামে অসংখ্য নতুন নতুন ফিৎনা, বিভ্রান্ত মতবাদের প্রতিবাদ ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রচার করার দায়িত্ব আলেম সমাজের উপরই বর্তায়। সাপ্তাহিক জুম‘আর খুৎবায় প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কি করণীয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা যরূরী। প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে দুর্বল ঈমানদার ব্যক্তি যতটা তৎপর, অধিকতর ঈমানের অধিকারী আলেম সমাজ তার চেয়ে বেশী তৎপর হবেন এটা আমাদের একান্ত কামনা। ইসলামের সঠিক দিক বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরার জন্য ইন্টারনেট, টিভি, ইলেক্ট্রনিক ও অন্যান্য মিডিয়া ব্যবহার করা নাজায়েয বলে ঘোষণা করা ‘মাথা ব্যথা হ’লে মাথা কেটে ফেলার’ নামান্তর।
প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে ইসলাম বিরোধীরা অনলাইনে নির্জলা মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নগ্নতাকে উসকে দিচ্ছে। নাস্তিকতার প্রচার ও ধর্মে অযথা অবিশ্বাস তৈরি করছে। আধুনিক জাহেলিয়াতের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ইসলাম

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Health tips &female tips by Doctor Remi aktter female spshalist C.M.H posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share