05/12/2024
https://www.facebook.com/share/p/1BkS4GfEsq/
-"নি*র্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে আর কতকাল আমাদের ঘাড়ে বসে এভাবে খাবে তুমি? লা*জ-ল*জ্জা বলতে কিছু আদো আছে তোমার মাঝে? সেটা যদি থাকতো তাহলে স্বামী ছেড়ে গেছে আজ প্রায় দুই বছর। সেখানে কী করে স্বামী ব্যতীত বেহায়ার মত পরে আছো শশুরবাড়ি!"
কথাটুকু বলে ঐশ্বর্যকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল তার শাশুড়ি অনিমা।
-" কী করছো বৌমা? মেয়েটাকে এভাবে বাড়ি থেকে বের করে কেন দিচ্ছো? মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই।"
-" আর কী দোষের বাকি রেখেছে মা? কেবল এই মেয়েটার জন্যই আমার বুকের মাণিক প্রায় দু বছর আমার থেকে সুদূর প্রবাসে থেকেছে। এমন কী করো সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি। কতটা অভিমান পুষে রেখে আমার ছেলেটা দেশ ছেড়েছিল একবার ও ভাবতে পারছেন মা? এতকিছুর পর ও বলবেন এই মেয়ের কোনো দোষ নেই!
তবে আর না! আমি মা হয়ে আমার ছেলের জীবন আর নষ্ট হতে দিব না। দুই বছর আগে আপনার ছেলের একটা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আমার সোনার মানিক ছেলে যে ভোগান্তি ভুগেছে সেই ভুল আজ আমি একেবারে শুধরে দিব।"
কথাটা বলেই তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঐশ্বর্যকে নিচ থেকে টেনে তুলে শক্ত কণ্ঠে বলল,
-" এখনই বেরিয়ে যাবে তুমি এই বাড়ি থেকে। আজ আমার ছেলে এতগুলো দিন পর দেশে আসছে। আমি চাইনা তোমার এই অপয়া মুখখানা দর্শন করে আমার ছেলেটা আবার আমাদের ছেড়ে যাক।"
কষ্টে চোখ ভিজে এলো ঐশ্বর্য্যর। এই বুঝি ছিল তার ভাগ্যে!
এই দুটো বছর তার নিজের উপর দিয়ে ও তো কম দুর্ভিক্ষ যায়নি। কম কথা তো শুনতে হয়নি তাকে। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, এমনকি শ্বশুরবাড়ির প্রতিটি মানুষ তাকে উঠতে বসতে কথা শুনিয়েছে, খোটা দিয়েছে।
নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে মুখ বুঝে প্রতিটি কথা সহ্য করে গেছে সে এই ভেবে, কোনো একদিন হয়তো মানুষটি ফিরে আসবে তার কাছে। আপন করে নিবে তাকে। বাঁচিয়ে নিবে মানুষের কথার তীর থেকে।কিন্তু হলো উল্টো। মানুষটি ফিরছে ঠিকই। কিন্তু তাকে আপন করে নিতে নয়। বরং নিজের জীবন থেকে তাকে চিরতরে সরিয়ে দিতে। অনিমার ঝাঁঝালো কণ্ঠ কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল ঐশ্বর্য্য। বাম হাতের উলটো পিঠে নেত্র কোণে জমে থাকা অশ্রুটুকু মুছে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো সে। সামনে এগুতে এগুতে পুনরায় পিছন ঘুরে তাকালো। সেই সময়ই তার শাশুড়ি তার মুখের উপর বাড়ির মেইন দরজা বন্ধ করে দিল।
তৎক্ষণাৎ অশ্রু দ্বারা ভিজে উঠল তার চোখ জোড়া। চিরতরের জন্য নিজের হয়েও না হওয়া স্বামীর সংসার ছেড়ে যাচ্ছে সে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে পুনরায় হাটা ধরলো ঐশ্বর্য্য। বাড়ির মেইন গেইট পেরিয়ে রাস্তার একপাশে এসে দাড়ালো । হাত নাড়িয়ে সিএনজি ডেকে তাতে উঠে বসল। সিএনজি চলতেই এক মনে বাহিরের দিকে নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সে। কিছুদূর এগুতেই হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য্য। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পড়লো দুইজন লোক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে গ্যাঞ্জাম করছে। আর অপরপাশেরর মানুষগুলো তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলস্বরূপ সেখানেই বসে থাকতে হলো থাকে।তবে সমস্যা ঘটলো তখনই যখন রাস্তার উড়ে আসা ধুলোর ঝাঁক আর পেট্রোলের ভোটকা গন্ধ নাসারন্ধ্রে পৌঁছালো। সহসা পেট গুলিয়ে আসলো ঐশ্বর্য্যের।
বিরক্তি'তে চোখ মুখ কুঁচকে ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তার বাম পাশে থুথু ফেলতে নিলে অকস্মাৎ চোখ যায় পাশের গাড়িতে অবস্থানরত ব্যক্তিটির দিকে। মুহূর্তে হাত পা বরফের ন্যায় শীতল হয়ে গেল ঐশ্বর্য্যের। অস্বাভাবিক ভাবে কম্পন দিতে লাগল তার সমস্ত সত্তা।
চোখ বেয়ে আপনা-আপনি গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা নোনাজল। ঠিক দেখছে কী-না তা সিউর হতে হাত দিয়ে চোখ কচলে পূনরায় তাকায় ব্যক্তিটির দিকে। হ্যাঁ! ঠিকই দেখছে সে। দীর্ঘ দুইবছরের সাধনার সেই ব্যক্তিটিই। তার স্বামী! যে বিয়ের রাতেই তাকে ফেলে পাড়ি জমিয়েছিল সুদূর প্রবাসে। নিষ্ঠুরের মত হাজারো মানুষের কথার যাতাকলের নিচে তাকে পিষতে দিয়ে চলে গেছিল সে। একবারের জন্য ও ফিরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি নিজের সদ্য বিয়ে করা নাবালিকা স্ত্রীর দিকে। নিষ্ঠুর, পাষাণ বুঝি একই বলে!
যার ফলস্বরূপ দীর্ঘ দুইটা বছর মুখ বুঝে শ্বশুর বাড়ির প্রতিটা মানুষের কটু কথা সহ্য করে এসেছে ঐশ্বর্য্য।
এক দেখায় কিশোরী ঐশ্বর্য্য প্রেমে পড়েছিল এই সুদর্শন পুরুষটির। ভালো ও বসেছিল।
স্বপ্ন সাজিয়েছিল হরেক রকমের। তবে তার সকল স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়ে মাঝ রাস্তায় তার হাত ছেড়ে দিয়েছিল এই নির্দয় পুরুষটি সে। গুমরে গুমরে করতে তাকে ফেলে গেছিল একা।
চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা লম্বা নিশ্বাস নিল সে।
শান্ত করতে চাইলো নিজ গহীন সত্ত্বাকে। কিন্তু পারলো না যখন দেখতে পেল মানুষটির পাশে নিবিড় ভাবে বসে আছে এক নারীমূর্তি। দুনিয়াটাই যেন ঘুরে উঠল ঐশ্বর্য্যের। তাহলে এই কী সেই কারণ ছিল! যার দরুন তাকে স্ত্রী বলে স্বীকৃতি দেয় নি প্রহর চৌধুরী! এই কী সেই নারী! যার জন্য তাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে দিয়ে পাড়ি জমিয়েছিল সুদূর প্রসাসে। মুহূর্তেই দুইহাতে মুখ চেপে ধরে ঠোঁ*ট ভেঙে কেঁদে উঠল ঐশ্বর্য্য। হু হু কর কাঁদতে লাগলো সে। লোকল*জ্জা, ভয় কোনোকিছুই আজ পরোয়া করলো না যেন! দীর্ঘ দুই বছরের দুঃখ যেন আজ উগ্রে বের হতে চাইছে।
বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে গম্ভীর মুখ করে জ্যামে আটকে বসে আছে প্রহর। দীর্ঘ দুই বছর পর নিজ দেশে ফিরছে সে। মন অভিমানের পালা শেষ হওয়ার পূর্বেই খবর আসে তার মা বিছানায় শয্যশয়ী। গুরুতর অসুস্থ সে। সেই তাগিদে সকল মান অভিমান ভুলে দেশে ফিরছে সে। এতক্ষণ যাবত জ্যামে বসে থাকতে থাকতে এখন রাগ লাগছে তার! রাগে, বিরক্তিতে আরো কিছুটা কপাল সংকোচিত করলো সে। তখনই কোথা থেকে নারী কন্ঠের কান্না শুনে হচকিতে গেল যেন। এই মাঝরাস্তায় কে এমন হাউমাউ করে কাঁদছে!
বিষয়টা বেশ অদ্ভুত লাগল তার নিকট। আশেপাশে চোখ বুলাতেই পাশের সিএনজিতে বসে কাউকে কাঁদতে দেখল প্রহর। চেহারার দিকে তাকাতেই তাড়াতাড়ি করে নিজের উড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল হু হু করে কান্না করা মেয়েটি। অচেনা মেয়েটির এমন কান্ডে বেশ অবাক হলো সে। অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকল মেয়েটির দিকে! ঠিক তখনই জ্যাম ছুটে গেল।
কাঁদতে কাঁদতে পুরো রাস্তা পাড় করলো ঐশ্বর্য্য। অবশেষে সিএনজি এসে থামলো তার বাবার বাড়ির সম্মুখে। তৎক্ষণাৎ চোখ মুছে বাইরে বের হলো সে। সিএনজি ওয়ালাকে দাঁড়াতে বলে বাড়ির ভিতরে গেল টাকা আনতে। ওই বাড়ি থেকে আসার পূর্বে নিজের পার্স ব্যাগটা ও নিয়ে পারেনি সে। হঠাৎ করেই যেন সব কিছু ঘটে গেল। কলিং বেল চাপতেই রেশমা বেগম এসে দরজা খুলল। এতদিন পরে মেয়েকে চোখের সামনে দেখে আবেগে প্রফুল্ল হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। কিছুক্ষন ব্যয় হতেই ঐশ্বর্য্য মা'কে তাড়া দিয়ে উঠল,
-" আম্মু টাকা নিয়ে আসো তাড়াতাড়ি গাড়ি ভাড়া দিব।"
সম্বিত ফিরলেই তিনি মাথা নেড়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলেন ভিতরে।
দীর্ঘ দুই বছর পর নিজের বাড়িতে পা রাখলো প্রহর। বাড়ির কাজের মেয়ে হলরুম পরিষ্কার কাজে মগ্ন ছিল। আজকে সন্ধ্যার দিকে তাদের ছোট সাহেব আসবে দেশে। সেই উপলক্ষে ঘর বাড়ি পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছে সবাই। ফ্লোর ঝাড়ু দিতে দিতে পাশে ফিরে তাকাতেই গগন বিদারী এক চিৎকার দিয়ে উঠল বিউটি। তার চিৎকার শুনে বাড়ির মহিলারা সকলে হলরুমে এসে হাজির হয়। অনিমা বেগম এই সময় নিজের কলিজার ধন'কে চোখের সামনে দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। দ্রুত কদমে হেঁটে গিয়ে ছেলের বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। মায়ের এহেন পাগলামি দেখে গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠল,
-" মা এখন আমাকে ছাড়। কা*ন্নাকাটি পরে ও করতে পারবে।এখন ফ্রেশ হতে হবে আমায়।"
ছাড় পেতেই সকলকে উপেক্ষা করে হনহন করে উপরে নিজের কক্ষে গেল প্রহর। পাশেই দাড়িয়ে ছিল নিয়াম চৌধুরী। ছেলে আজ এতদিন পর দেশে আসবে বলে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে সে। তবে বাড়ি ফেরার সাথে সাথেই যে ছেলেকে দেখতে পাবে সে, সে আশা করেননি তিনি। বেশ খুশি হয়েছিলেন ছেলের এই হঠাৎ আগমনে। তবে তাকে দেখে ও ছেলের এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিরব আ*ঘাত হানে তার অন্তঃকোণে। দুই বছর পূর্বের নেওয়া সেই ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই দুটি জীবন নষ্টের দায় আজ তার কাঁধে।গোপনে তপ্ত শ্বাস ফেলে উপরে নিজের রুমের দিকে যান তিনি।
একে একে সকলে নিজেদের কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতেই সকলের কর্ণকুহরে পৌঁছালো অচেনা মেয়ে লোকের কণ্ঠস্বর। তৎক্ষণাৎ সকলে চমকে সেদিকে ঘুরে তাকায় আর..
চলবে।
#প্রিয়_সে_অভিমানে
#পর্ব_১
#বনলতা_নাজ