16/07/2025
গোপালগঞ্জে শোডাউন – আমরা কী শিখলাম?
আর্মি-পুলিশ প্রটেকশনের মধ্যেও এনসিপি গোপালগঞ্জের সমাবেশ থেকে ফেরার পথে লীগ কর্মীরা চারদিক থেকে গাড়িবহরে হামলা চালালো। হাসনাত-নাহিদ-তাসনিম জারা পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
- প্রশ্ন হচ্ছে – এই প্রোগ্রামের বুদ্ধিটা আসলো কোথা থেকে?
- ধারণা করি, এটা ‘প্যারিস প্রেসক্রিপশন’। কিন্তু বাস্তবতা বোঝার চেষ্টাটুকু কি ছিল?
মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
আওয়ামী লীগ যে হামলা করবে, এটা তো আগেই জানা ছিল। তাহলে কি প্ল্যান ছিল — “গোপালগঞ্জে ঢুকে দেখাই আমাদের কত শক্তি”? তবে এটা ছিল কি একেবারে ভুল ক্যালকুলেশন ছিলো? এখনই বলার সময় আসেনি। কিন্তু এটা কোনো ‘সিম্বলিক বিজয়’ নাকি নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা জনসমক্ষে এক্সপোজ করা হয়ে গেলো, তা সময়ই বলে দিবে?
গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর — এগুলো আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাটি। জামাত বা এনসিপির এখানে সাংগঠনিক ভিত্তি ছিলোনা, নাই, ভবিষ্যতে হবারও সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে গিয়ে সমাবেশের নামে উস্কানি দিলে যা হওয়ার তাই হয়েছে – দল বেঁধে হামলা, উল্লাস, এবং অপমানজনক পরিণতি।
আওয়ামী ঘরানার পেজ আর আইডিগুলো আজ যেন উৎসবের আমেজে।
ভিডিও শেয়ার করছে, বলে বেড়াচ্ছে – “দেখো, এত প্রটেকশন নিয়েও দাঁড়াইতে পারলো না।” এই ঘটনাটা তাদের জন্য টনিক – তারা মনোবল পেয়েছে, রিগ্রুপ করার মোটিভেশন পাচ্ছে।
মনে রাখুন – আওয়ামী লীগ শুধু একটা দল না, তারা এটাকে অনেকটা ‘ধর্ম’ মনে করে।
আমার ধারণা ২-২.৫ কোটি ফলোয়ার এখনো আছে যারা বিশ্বাস করে হাসিনা নিষ্পাপ। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুতাপ নাই। এই জনগোষ্ঠীকে ‘রিমুভ’ করার প্রেসক্রিপশন বাইরে থেকে যতই আসুক – বাস্তবে কি আদৌ সম্ভব??
এই মুহুর্তে সরাসরি কনফ্রন্টেশনে গেলে হবে শুধু ব্লাডশেড। তারা আরও সংঘবদ্ধ হবে, নিজেদের রি-অর্গানাইজ করবে। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।
ফলাফল? - জানিনা কার প্রেস্ক্রিপশনে কে চলছে। নানা রকম তত্ত্ব মানুষ দিবে৷ কেউ বলবে প্যারিস, কেউ আমেরিকা, আবার কেউবা র/ ভারত। প্রেস্ক্রিপশন যারই হোক, ভুগছে দেশের মানুষ। যারা এসব প্রেস্ক্রিপশন দিচ্ছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল করা।
দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক সমাজের প্রতি কিছু জরুরি কথা:
- স্ট্যাবিলিটি এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকার, সশস্ত্রবাহিনী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঝে নিবিড় সমন্বয় ও আস্থা। রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যেন বাংলাদেশ আবার অস্থিরতার মধ্যে না পড়ে – এটা নিশ্চিত করা জরুরি।
- রাজনীতি হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ। এখানে প্রতিটা ভুল সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী ইফেক্ট থাকে। ইগো দিয়ে না, হিসেব করে পা ফেলুন।
- ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীকে কনফিডেন্স দেওয়া বন্ধ করুন। উল্টা-পাল্টা শোডাউনে গিয়ে নিজেদের দূর্বলতা এক্সপোজ করার দরকার নাই।
- আন্তর্জাতিক প্রেসক্রিপশন বা রেভ্যুলুশনারি ইমেজের ফাঁদে পড়বেন না। বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, এবং বাস্তবতা একেবারে আলাদা। সস্তা ন্যারেটিভ দিয়ে এখানে রাজনীতি চলে না
শেষ কথা:
রাজনীতি কোনো ‘ভিডিও ফুটেজ’ বা ‘মাচো একশন’ না। এটা দীর্ঘমেয়াদী খেলা। যারা পলিটিক্যাল এক্টর হিসেবে কাজ করছেন, তারা যদি স্ট্যাবিলিটির জায়গা থেকে না ভাবেন, তাহলে ক্ষতি হবে দেশের – আপনাদের নয় শুধু। আজকের ভুল পদক্ষেপ কাল আপনাকে আর দেশে নিরাপদ থাকতে দিবে না।