13/02/2025
ট্রাম্পের বক্তব্য ও গাজা সংকট: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
*১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫*
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংক সংক্রান্ত এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে আমেরিকা গাজা দখল করবে এবং গাজাবাসীদের স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করা হবে। এছাড়াও, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ওয়েস্ট ব্যাংকও একই পরিণতির মুখোমুখি হবে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। এই দেশগুলো ট্রাম্পের প্রস্তাবকে অযৌক্তিক ও মানবতাবিরোধী বলে অভিহিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য বাইডেন প্রশাসনের গোপন পরিকল্পনাগুলোকে প্রকাশ্যে এনেছে, যা বাইডেন ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করতে চাইছিলেন।
**হামাস-ইসরায়েল চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ**
গাজা সংকটের প্রেক্ষাপটে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্তাবলী পূরণ না করার অভিযোগ উঠেছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৫০টি জ্বালানি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করার কথা থাকলেও ইসরায়েল মাত্র কয়েকটি ট্রাক প্রবেশ করতে দিয়েছে। এছাড়াও, ২ লাখ তাবুর পরিবর্তে মাত্র ২০ হাজার তাবু এবং ৬০ হাজার মোবাইল হাউজিংয়ের একটি ইউনিটও গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগের জবাবে হামাস ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আগামী শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব ইসরায়েলি বন্দী মুক্তি না দিলে সমস্ত চুক্তি বাতিল করা হবে এবং হামাসের উপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
**আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান**
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় অংশ নেন। তিনি জানান, জর্ডান শুধুমাত্র ২ হাজার অত্যন্ত অসুস্থ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত ফিলিস্তিনি শিশুদের আশ্রয় দেবে। বাকিদের জন্য মিশরের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বিবেচনা করা হবে। তবে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি হোয়াইট হাউজে আসার কথা থাকলেও তার ভ্রমণ বাতিল করেছেন।
ট্রাম্প জর্ডান ও মিশরকে ২ মিলিয়ন গাজাবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তা না করলে তাদের সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দেশই ট্রাম্পের এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান রিয়াদে আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের এক বৈঠক ডেকেছেন, যেখানে গাজাবাসীদের গাজাতেই রাখার পক্ষে অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
**হামাসের প্রতিক্রিয়া**
হামাস ট্রাম্পের বক্তব্য ও হুমকিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গাজাবাসীদের বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। হামাস জানিয়েছে, গাজাবাসী তাদের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সংগঠনটি ইসরায়েল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
**৭০ বছরের সংঘাত ও ভবিষ্যৎ**
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত গত ৭০ বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখন সময় নষ্ট না করে গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাংকের অবশিষ্ট অংশ দখল করার পরিকল্পনা করছেন। তাদের লক্ষ্য হলো "গ্রেটার ইসরায়েল" গঠন করা।
হামাসের কাছে ইসরায়েল বা আমেরিকার মতো সামরিক শক্তি নেই, কিন্তু তারা তাদের জনগণের স্বাধীনতা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত গাজাবাসীরা অপেক্ষায় থাকবে, এরপর হয়তো তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নির্ধারিত হবে।
এই সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। গাজাবাসীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ©️