02/06/2025
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইসলামপন্থি দলগুলো কী ভাবছে
আগামী ডিসেম্বরে বা ২০২৬ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দল নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। পিছিয়ে নেই ইসলামি দলগুলো। তবে বিএনপি এখনো কোথাও কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
ইসলামি দলগুলো বার বার এক টেবিলে বসছে। তবে এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে মূলত বৈঠকগুলো হচ্ছে। জানি না ভেতরে ভেতরে জামায়াতের সঙ্গে কোনো আলোচনা চলছে কি না। তবে শোনা যায় দুটি ইসলামি দলের আলোচনা চলছে জামায়াতের সঙ্গে। তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে বৈঠকও হচ্ছে।
নির্বাচনি দৌড়ে এ পর্যন্ত জামায়াতকে আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে এগিয়ে। ইতিমধ্যে তারা অধিকাংশ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর পরেই আছে চরমোনাই পির সাহেবের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারাও বিভিন্ন আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করছে।
খেলাফত মজলিস কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। যদিও এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত মেনে হয়েছে কি না, আমি নিশ্চত নই। আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোথাও কারও নাম ঘোষণা করেছে বলে জানতে পারিনি।
এ ছাড়া মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলের নেজাম ইসলাম পার্টি বা খেলাফত আন্দোলন এবং ইসলামী ঐক্যজোটের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
আমরা জানি আগামী নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের শক্তির জানান দেওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ। এবং এটা জরুরিও বটে। কিন্তু তারা কি পারবে তাদের সেই শক্তির জানান দিতে?
বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কোনটা সত্য আর কোনটা অসত্য, সেটা নির্ণয় করা সত্যিই কঠিন। তবে সময়ই বলে দেবে কোনটা সত্য।
এই তথ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, জামায়াতসহ সব ইসলামি দল মিলে নির্বাচনি একটা জোট গঠন করবে।
আরেকটি তথ্য হলো, জামায়াত বাদ দিয়ে বাকি ইসলামি দলগুলো মিলে একটা নির্বাচনি জোট গঠন করবে।
অন্য আরেকটা তথ্য হলো, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন আর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মিলে একটা নির্বাচনি জোট গঠনের আলোচনা চলছে। খেলাফত মজলিস আর জমিয়ত বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করবে।
এ ছাড়াও এনসিপি বা ছোটখাটো আরও কিছু দলের সঙ্গে ইসলামি দলগুলোর জোট গঠনের কথাও মাঝেমধ্যে শোনা যায়।
আমার দৃষ্টিতে ইসলামি দলগুলো দুটি পথের একটি পথ বাছাই করলে তারা ভবিষ্যতে উপকৃত হতে পারবে। একটা হলো, জামায়াতসহ সব ইসলামি দল একটা নির্বাচনি জোট গঠন করবে। এতে আশা করা যায় এই জোট সংসদের ২০-২৫টি আসন লাভ করতে পারবে। এতে তারা প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে।
যদিও এই সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ, কিছু ইসলামি দল জামায়াতকে একদম পছন্দ করে না। বিশেষ করে কওমিভিত্তিক একটি ইসলামি দলের এ ব্যাপারে ঘোরতর আপত্তি আছে। বাকি দলগুলোরও কিছুটা নাক ছিটকানো আছে।
দ্বিতীয় পথ হলো, জামায়াতকে বাদ দিয়ে বাকি ইসলামি দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি জোট গঠন করবে। এ ক্ষেত্রে এই দলগুলো ৮-১০টি আসনে জিততে পারে। যদি বিএনপির সঙ্গে ভালোভাবে বার্গেইনিং করে সম্ভাবনাময়ী কিছু আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারে।
এমন হলে জামায়াত কী করবে? জামায়াত এককভাবে বা আরও কিছু মধ্যপন্থি দলকে সঙ্গে নিয়ে একটা নির্বাচনি জোট করতে পারে। তাতে তারা ১৫-২০টি আসন নিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসতে পারে। জামায়াত তাদের সঙ্গে নিতে পারে এনসিপি, এবি পার্টিকে।
তবে ইসলামি দলগুলো যদি নিজেরা কোনো সমঝোতায় না পৌঁছুয় বা কারও সঙ্গে কোনো জোট না করে, তাহলে জামায়াত বাদে অন্য কোনো দল থেকে আমি দুয়েকজনের বেশি এমপি পাশ করার সম্ভাবনা দেখি না। এই দুয়েকজন পাশ করাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করলেও ১০-১৫টি আসনে অনায়াসে জিতে আসবে বলে ধারণা করি।
Mawlana Abdul Kalam Azad