07/07/2025
চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা!
ভাবুন তো একবার!
আপনার পাড়ার একটা ছেলে পুলিশের চাকরি পেয়েছে।
রোজ সকালে কড়া ইস্ত্রি করা উর্দি পরে, চকচকে বুট পায়ে ডিউটিতে বেরোয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পুলিশের পোশাক পরা ছবিতে লাইক-কমেন্টের বন্যা।
বাবা-মা গর্বিত, প্রতিবেশীরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কি দারুণ ব্যাপার, তাই না?
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার শিমুলপুর চৌরঙ্গী এলাকার গল্পটাও ঠিক এমনই ছিল। গল্পের হিরো পুলিশ অঙ্কিত ঘোষ।
এলাকার সকলের চোখে সে একজন সফল পুলিশ কনস্টেবল। পোস্টিং কোথায়? একেবারে ভিআইপি এলাকা, সল্টলেকের বিকাশ ভবনে!
অঙ্কিতের ভাবসাব, হাঁটাচলা, কথাবার্তায় এমন একটা দাপট ছিল যে, তাকে দেখে সন্দেহ করার কোনো প্রশ্নই উঠত না।
প্রায় একটা বছর ধরে এভাবেই চলছিল তার ‘ডিউটি’।
কিন্তু সিনেমার গল্পে যেমন টুইস্ট আসে,
এই গল্পেও ঠিক সেটাই ঘটল।
গাইঘাটা থানার আসল পুলিশদের কানে খটকা লাগে।
তারা খোঁজ নিতেই বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য,
বিকাশ ভবনে ‘অঙ্কিত ঘোষ’ নামে কোনো কনস্টেবল নেই! মানে এক্সিস্টই করে না।
তাহলে এই ছেলে কে?
সে কি সত্যিই পুলিশ?
নাকি পুলিশের পোশাক পরে অন্য কোনো মতলবে ঘুরছে?
পুলিশের একটা টিম তৈরি হয়।
লক্ষ্য, অঙ্কিতের গতিবিধি।
অঙ্কিত সকালে বাড়ি থেকে বেরোয়, বিকেলে ফেরে,
বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে, সবই খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়া কি এত সহজ?
তারা শুধু ঠিক মুহূর্তটার অপেক্ষা করছিল।
সেই মঙ্গলবার...
ডিউটিতে বেরোনোর জন্য উর্দিটা গায়ে চাপিয়েছে অঙ্কিত।
ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ে আসল পুলিশ।
— “আপনার পরিচয়?” —
— বুক চিতিয়ে জবাব: “আমি কনস্টেবল অঙ্কিত ঘোষ।”
— “আইডি কার্ডটা দেখান।”
ব্যস!
এই একটা প্রশ্নেই যেন সব শেষ।
যে দাপট এতক্ষণ অঙ্কিতের গলায় ছিল,
তা যেন কর্পূরের মতো উবে যেতে থাকে।
তার মুখ ফ্যাকাশে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
আসল পুলিশের সামনে নকল পুলিশের অভিনয় আর কতক্ষণই বা টিকবে?
সিনেমার মতো ক্লাইম্যাক্স এ পরিণত হয় সমস্ত সিন।
অঙ্কিতের বাড়ি থেকে বেরোল,
সারি সারি পুলিশের পোশাক,
নকল ব্যাজ, নেমপ্লেট, আরও কত কী!
জানা গেল,
অঙ্কিত পুলিশের পরীক্ষায় ফেল করেছিল।
কিন্তু বাড়িতে লজ্জার ভয়ে জানায়, চাকরি পেয়ে গেছে।
আর সেই একটা মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণ করতেই
সে এমন নাটকীয় কাণ্ড ঘটায়। মানে ভাবা যায়?
সে হয়তো নিজের হারকে মেনে নিতে পারেনি, শুধু এরকম অঙ্কিত নয় হয়তো হাজার হাজার অঙ্কিত রয়েছে যারা তথ্য প্রচেষ্টা করছে নিজের জীবনে কিছু করবার জন্য,নাম উজ্জ্বল করবার জন্য।
কিন্তু একবারে জয় না আসলে এরকম দুঃসাহসী পদক্ষেপ?
অঙ্কিতের গ্রেফতারের খবরে অনেকেই অবাক, সোশ্যাল মিডিয়াতে গড়ে উঠেছিল এক গোটা ফলোয়ার বেস। তবে বিশেষ করে কিছু অনুরাগী রীতিমতো ভেঙে পড়ে জানান তারা এটা মেনে নিতেই পারছেন না।বেশ হিরো হিরো লাগছিল ছেলেটাকে। 🤦🏻
সত্যিই!
এখন আর ঘাম ঝরিয়ে চাকরি পেতে হয় না,
নকল পোশাক পরলেই আপনি হিরো!
ঝকঝকে দুটো ছবি পোস্ট করলেই
সমাজ স্যালুট এবং কুর্নিশ জানায়।
অভিনয় যদি জাঁকিয়ে বসে মুখে,
তাহলে লাইকের ঢেউ উঠে চোখে মুখে।
আর ধরা পড়ে গেলে?
তখন আপনি মানুষ নন, কন্টেন্ট!
ভাইরাল হন, শেয়ার হন,
মিম হন, মজার পাত্রে পরিণত হন।
সমাজ বলে,
“নাটকটা তো ভালোই করছিল!
শুধু শেষ দৃশ্যে ক্যামেরা ঢুকে পড়ল...”
আর আপনি বুঝতেও পারেন না,
জীবনে আপনি কতটা এগোতে পারতেন,
যদি অভিনয়টা শুধু রিয়েল লাইফে না করে,
শুধু একটু নিজের জীবনের জন্য করতেন।