Across pita

Across pita follow and like my live content

13/05/2025

আরুশি নিজের ঘরে বসে গ্রাজুয়েশন ডে সেলিব্রেশনের জন্য সুন্দর একটা পোশাক খুঁজছিল। তবে কিছুতেই সে মনমতো কোন পোশাক খুঁজে পাচ্ছিল না৷ এজন্য মনটা বড্ড খুত খুত করছিল৷ এমন সময় আরহাম তার সামনে একটা নীলচে শাড়ি ধরে বলে,"এটা পড়ে নাও। এটা পড়লে তোমায় অনেক সুন্দর লাগবে।"

আরুশি হেসে বলে,"আমার সব পছন্দ তুমি কিভাবে সবসময় বুঝে যাও?"

"কারণ আমার কাছে তুমি একটা খোলা ডায়েরির মতো। যাকে আমি চশমা ছাড়াই স্পষ্ট পড়তে পারি।"

আরুশি খুশি হয় আরহামের কথা শুনে। অতঃপর শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নিয়ে আরহামের সামনে এসে বলে,"আমায় কেমন লাগছে?"

"আমার চোখে তুমি সবসময় সেরা আরুশি। আজকেও তোমায় অনন্য রূপসী লাগছে।"

আরুশি এবার একটু নম্রস্বরে বলে,"আমার কেন জানি অদ্ভুত একটা ফিলিংস হচ্ছে। আজ আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবে....আজ আম্মু-পাপার আমার পাশে থাকার কথা ছিল কিন্তু.."

"ওনারা সবসময় তোমার পাশে আছেন। তোমার মনে সাহস হয়ে ওনারা বেঁচে আছেন।"

"হুম, ঠিক বলেছ তুমি।"

"তুমি বেশি চিন্তা না করে এখন বেরিয়ে পড়ো সময় তো হয়ে যাচ্ছে৷ আর হ্যাঁ, আজ বিকেলে কিন্তু তোমার গ্রাজুয়েশন উপলক্ষ্যে আমরা ঘুরতে যাব। একসাথে কিছু সুন্দর সময় কাটাব। অতঃপর একসাথে মিলে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাবো।"

আরুশি মাথা নাড়ায়।

★★
গ্রাজুয়েশন কোর্ট পড়ে ও ক্যাপ মাথায় দিয়ে হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে আরুশি। আর তার জীবনের অন্যতম এক বিশেষ দিন। যদিও মা-বাবাকে এই দিন পাশে না পাবার জন্য তার অনেক আফসোস হচ্ছে তবুও সে খুশি কারণ সে অনেক ভালো CGPA এর সাথে নিজের গ্রাজুয়েশন শেষ করতে পেরেছে। এখন আরুশি চাইলেই একটা সুন্দর ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে।

আরুশি ভার্সিটির ক্যাম্পাস চত্ত্বরে আসতেই হঠাৎ কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়। আরুশি পিছন ফিরে তাকিয়ে রাজীবকে দেখে হালকা হেসে বলে,"রাজীব ভাই! আপনি এসেছেন।"

রাজীব হালকা হেসে এগিয়ে আসে। তার পরণে পুলিশের ইউনিফর্ম। আরুশির একদম মুখোমুখি হয়ে আরুশি বলে,"অবাক হলে বুঝি? তোমার জীবনের এত বিশেষ একটা দিনে আমি থাকবোনা সেটা কি হতে পারে?"

আরুশি বলে,"শুধু অবাক নয়, আমি ভীষণ খুশিও হয়েছি রাজীব ভাই। আজ কতদিন পর আপনাকে দেখলাম। আমি ভাবতেও পারিনি আপনি চট্টগ্রাম থেকে এতদূরে ছুটে আসবেন তাও শুধু আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবার জন্য। আপনি তো দেখছি আগের থেকে অনেক স্বাস্থ্যবান হয়ে গেছেন। আমার খুব ইচ্ছা ছিল আপনাকে পুলিশের ইউনিফর্মে দেখার। অবশেষে আমার স্বপ্নটা পূরণ হলো। সত্যিই এই পোশাকে আপনাকে অনেক মানিয়েছে। আপনি নিজের স্বপ্নপূরণ কর‍তে পেরেছেন এবার আমার নিজের স্বপ্নপূরণের কথা।"

"আমি নিশ্চিত তুমিও অনেক বড় একটা সাইকোলজিস্ট হতে পারবে।"

রাজীব এখন একজন পুলিশের এসআই। পড়াশোনা শেষ করে সে চাকরিটা নিশ্চিত করেছে। আরুশি রাজীবের সাথে কিছু গল্পগুজব করল৷ রাজীব আজো অবিবাহিত এবং সে জানায় তার বিয়ে করারও আপাতত কোন ইচ্ছা নেই৷ সে নিজের ক্যারিয়ারে সময় দিতে চায়। কথায় কথায় একসময় রাজীব বলে ওঠে,"আচ্ছা, আঙ্কেল আন্টির মৃত্যুর তদন্তের ব্যাপারে সর্বশেষ কি খবর? আমি তো এখন চট্টগ্রামে পোস্টিং এ আছি, এদিকের খবর কিছু জানি না।"

আরুশির মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে যায়৷ সে বলে,"এই মৃত্যুটাকে একটা দূর্ঘটনা বলে রিপোর্ট করা হয়েছে তদন্ত শেষে। বলা হয়েছে যে ভেতরে ইলেকট্রিকাল সমস্যার কারণেই আগুন লাগে। কিন্তু আমার মোটেই এটা মনে হয় না৷ এটা দূর্ঘটনা হতেই পারে না। আমার মা-বাবাকে পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয়েছে। আর আসল অপরাধীকেও আমি শাস্তি পাওয়াবো। এজন্য আমার যা করতে হয় করবো। আমি আবারো নতুন করে মামলাটা চালু করেছি। এবার সব সত্য সামনে আনবোই।"

"একদম ঠিক করেছ তুমি। কোন সাহায্য লাগবে আমায় বলবে। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোমায় সাহায্য করার।"

এভাবে আর কিছু সময় কথা বলার পর রাজীব আরুশিকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। আরুশিও বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমানের মনটা আজ বড্ড খুশি। কারণ আগামীকাল দীর্ঘ ১ বছর পর সে সায়রাকে দেখবে। আরহাম ও আরুশির বিয়ের পর সায়রা যে সেই রাগ করে তার বাবার সাথে লন্ডনে ফিরে গেল তারপর এই এক বছরে তাদের পরিবারের কারো সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি। তবে অবশেষে আগামীকাল অতীতের সব ক্ষত ভুলে আবারো তাদের পুনঃমিলন হতে চলেছে। আমান ব্যাপার‍টা নিয়ে ভীষণ খুশি। সে মনে মনে ভাবে,"এবার আর আমি নিজের অনুভূতি লুকাব না। সায়রাকে বলে দেব আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি।"

আফিফা খান আমানকে এভাবে মুচকি হাসতে দেখে বলে,"কি হয়েছে আমান? এভাবে হাসছ কেন?"

"তেমন কিছু না মম। আসলে এতদিন পর পরিবারের সবাই একত্রিত হবো ভাবতেও ভালো লাগছে।"

এমন সময় নিঝুম খান সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন,"আসলেই। কতদিন পর আমি আবার সায়রা দিদিভাইকে দেখতে পাবো।"

আফিফা খান বলেন,"এতগুলো দিন পর আমাদের পরিবারটাতে যেন খুশির বৃষ্টি নেমে এসেছে। এভাবেই সবার জীবন সুন্দর হোক আর যেন কোন বিপদ আমাদের পরিবারকে স্পর্শ করতে না পারে।"

~~~~~~~
আরহাম ও আরুশি একে অপরের হাত ধরে একটি সুন্দর লেকের ধারে বসে আছে৷ দুজনের দৃষ্টি আজ একে অপরের দিকে নিবদ্ধ।

আরুশি একসময় বলে ওঠে,"এভাবে কি দেখছ?"

"আমার বউকে দেখছি।"

আরুশি লজ্জা পেয়ে মাথাটা নামিয়ে নেয়। আরহাম আরুশির মাথাটা আলতো করে টেনে তুলে বলে,"এখনো এতো লজ্জা! এত লজ্জা পেলে তোমায় মানায় না। আমার তো সেই রাগী, জেদি, কঠোর আরুশিকেই ভালো লাগে।"

"আসলেই?"

"হ্যাঁ, কারণ আমি চাই আমাদের জীবনে একটা ছোট্ট অতিথি আসুক। যে তার মায়ের মতো রাগী, জেদি হবে।"

আরুশি এবার একটু বেশিই লজ্জা পেয়ে যায় এবং হেসে ফেলে বলে,"আমিও তাই চাই!"

"অনেকদিন থেকেই তোমাকে কথাটা জানাবো বলে ভাবছি..তবে তুমি পড়াশোনা নিয়ে বিজি ছিলে বলে এব্যাপারে এগোইনি। তবে এবার মনে হয় সঠিক সময় এসেছে। যদিও আমার কোন তাড়া নেই, তুমি চাইলে এখন মাস্টার্স বা পিএইচডি শেষ করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারো। তারপরও আমার বেবির কথা ভাবতে পারি.."

"না, আমি আর দেরি করতে চাই না। আর তাছাড়া, বাচ্চা ও ক্যারিয়ার দুটোই তো একসাথে সামলানো যায়। তেমন আমার আম্মু, খালামনিরা সামলেছেন। তেমনি আমিও পারব। জানো, যখন ছোটবেলায় আম্মু আমায় আদর কর‍ত, তখন আমিও আমার পুতুলকে সেভাবেই আদর করতাম। এমনকি ছোটবেলায় একবার তো এক্সামে Aim in life প্যারাগ্রাফেও লিখেছিলাম আমি ভালো মা হতে চাই। যা নিয়ে পরে আমার ফ্রেন্ডসরা অনেক হাসাহাসি করেছিল। আম্মু-পাপাকে হারানোর পর বড্ড কষ্ট অনুভব হয়..এখন হয়তো একটা বেবি আসলে কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।"

"বেশ,তাহলে তো বেবির পরিকল্পনা শুরু করতে হয় দেখছি। তবে আমার কিন্তু একটা-দুটো বেবি দিয়ে হবে না। পুরো ক্রিকেট টিম লাগবে।"

"বাব্বাহ! কি যে বলো তুমি। ক্রিকেট টিম আনার আগে নিজে আগে লাখপতি হয়, নাহলে ওদের খাওয়াবে কি?"

"আমার বাবার যা আছে তা দিয়ে আমার বাচ্চাদের কোন অভাব হবে না৷ তাছাড়া তুমি ভুলে যাচ্ছ খুব শীঘ্রই আমিও একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে চলেছি। সো নো চাপ। এখন আপাতত আমাদের ফাস্ট বেবিকে আনার ব্যবস্থা শুরু করে দেই। বাকিদেরটা পরে দেখা যাবে!"

বলে দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে।

~~~~~~~
টেবিলের উপর একটা ফাইল জোরে ছুড়ে মারল একজন মহিলা। ঈশান কবীর আলতো স্বরে বললেন,"এতোটা রেগে যেও না। আমি দেখছি কিভাবে ম্যানেজ.."

মহিলাটি হাতের ইশারা করে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,"তোমাকে কিছু করতে হবে না। এবার যা করার আমি করবো। খুব শখ না এই আরুশি না আরু হোয়াটএভার..নিজের মা-বাবাকে ইনসাফ দেওয়াবে? এবার ওর ইনসাফ আমি বের করে দেবো। যেভাবে ওর মা-বাবার লাইফ হেল করেছিলাম ঠিক সেভাবেই এবার ওর লাইফটা হেল বানিয়ে দেব। সব কেড়ে নেব ওর থেকে সব!"
To be continue.... পরবর্তী অংশ সবার আগে পড়তে পেইজে ফলো করুনঃ 𝐒𝐭𝐨𝐫𝐲 𝐨𝐟 𝐘𝐞𝐚𝐬𝐢𝐧 𝐍𝐢𝐥𝐥

10/05/2025

#নীরব_ঘরে_এক_তৃপ্তি[৪]
#অন্তিকা_জামান_অন্তি

রাতে শুয়ে, ঘুম আসেনা তার। সে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কল্পনা করে—একটা দরজা খুলে যাচ্ছে, বাইরে মুক্ত হাওয়া বইছে। কিন্তু ঠিক তখনই শাশুড়ির কণ্ঠ কানে বাজে—
— “ঘুমিয়ে পড়ে এখনি। কাল সকাল থেকে আবার কাজ। এই বাড়ির নিয়ম না মানলে থাকতে পারবি না।”

তৃপ্তি চোখ বন্ধ করে। নিজের মুখে হাত রা,খে—চোখে জল নেই, ঠোঁট শুকনো। শুধু বুকের ভেতরটা যেন পাথর।

তৃপ্তির ভাঙন আরও গাঢ় হয়। সে কারো সামনে প্রতিবাদ করে না, মুখ ফুটে বলে না কিছু, কিন্তু তার নিঃশব্দ কান্না যেন দেয়ালগুলোও গিলে নেয়।

তৃপ্তির জীবন এখন এক গভীর গহ্বরে পড়ে গেছে, যেখানে প্রতিটি দিন তাকে এক নতুন রকমের যন্ত্রণার মধ্যে ডুবিয়ে রাখে। তার অবস্থা এমন, যেন নিজেকে খুঁজে পেতে, নিজের পরিচয় ফিরে পেতে সে প্রায় ভুলেই গেছে।

একদিন দুপুরে, শাশুড়ি এসে খালি হাতে তৃপ্তির কাছে খাদ্য নিয়ে আসে।
— “এত রান্না করে তোর কিছুই শিখলে না! মাংসটা কেন ভাজলে না! হাত কেমন চলে তো? রান্নাঘরের অবস্থা তো সবার চোখে পড়ছে!”

তৃপ্তি মিষ্টি হাসি দেয়, কিন্তু তার ভেতর কিছু ভাঙছে। হাতের কাজ চালিয়ে যেতে যেতে তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য ঝাপসা হয়ে ওঠে।

তারপর এক ললবিকেলে, তৃপ্তি হঠাৎ কিছু মনে পড়ে। তার বাবার দেওয়া ছোট একটা গহনা। খুব পুরনো, কিন্তু তৃপ্তির জন্য প্রিয় ছিল। একসময় যখন সে হাসত, জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল।অথবা মনে করত, একদিন এই বাড়ি ছাড়বে, কোথাও পালাবে, নিজের মতো জীবন তৈরি করবে। কিন্তু সেই আশা, সেই স্বপ্ন কোথায় হারিয়ে গেছে, তা তৃপ্তি জানে না। সে এখন শুধু এই বাড়ির এক অনুপস্থিত মেহমান, যার অস্তিত্ব পণ্যের মতো ব্যবহার হচ্ছে।

রান্নাঘরে খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে, শাশুড়ি বলে,
— “তোমার তো কখনো কোনো কাজ শিখবে না। ওই যে আমার মা, তার হাতে তো খাওয়ার স্বাদ ছিল!”তৃপ্তি চুপ থাকে, কিন্তু তার ভেতরে কি কিছু ভাঙছে না?

তবে, এক রাতে, তৃপ্তির শরীর সত্যিই অবসন্ন হয়ে পড়ে। ঘুমানোর সময় হাতের আঙুলগুলো একে একে অসাড় হয়ে যায়। চোখের সামনে আর কিছু দেখতে পায় না। তবুও সে চেষ্টা করে, নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে। কিন্তু তারপরও, সে প্রতিবারের মতো নিজেকে বলবে না, "আমি পারব। আমি ঠিক হয়ে যাবো।"

শাশুড়ি আবার ভোরে এসে বলে,
— “কী হল, ঘুমানোর মতো কিছু করেছো! আজকের কাজ তো পারলে না?”

এখানে তৃপ্তির শরীরের আর একটুও শক্তি অবশিষ্ট নেই। বুকের ভেতর একটা নিঃশব্দ ক্ষোভ জমে। কিন্তু তার চোখ আর ভাঙা যায় না। সে কিছু বলতে পারে না। চুপচাপ সোজা হয়ে বসে থাকে।

রাতে, যখন তৃপ্তি ঘুমানোর চেষ্টা করছে, হঠাৎ তিহার মোবাইল থেকে চোখ তুলে বলে,
— “তোমার কাজ তো কিছুই ভালো নয়। এই সময় ফেসবুকের হোস্টিং নিয়ে বসে আছো, অথচ নিজে কিছু শিখলে না!”

তৃপ্তির বুকের ভেতর গুমরে ওঠে। কিন্তু সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তার অভ্যন্তরীণ শক্তির সব কিছু ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

তৃপ্তি শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা অনুভূতি নিয়ে প্রতিদিন কেটে যাচ্ছে। তার অন্তরে কেউ নেই, কেউ তার পাশে নেই, অথচ ভেতরে কিছু প্রতিফলিত হয়ে যায়—একটা শূন্যতার গভীরতা, একটা প্রশ্নের অনুভূতি, “কী হতে যাচ্ছি আমি?”
তৃপ্তি ভাঙনের মধ্যে আরও ডুবে থাকে। প্রতিটি দিন তাকে আরো নিঃসঙ্গ, আরো আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

তবে, সে হয়তো জানে না, তার ভেতরে একটা কিছু অদৃশ্য জায়গায় ক্রমশ জমছে—একটি শক্তি, একদিন হয়তো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।তৃপ্তির জীবন এখন প্রতিদিনের কষ্টে পরিপূর্ণ। সে যেন এক নিঃশব্দ কারাগারে বন্দি, যেখানে প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি তাকে আরও গভীরভাবে দংশন করে।

দুপুরে রান্নাঘরে মাছ কাটতে কাটতে তৃপ্তির হাত আবার কেটে যায়। রক্ত পড়তে থাকে, কিন্তু সে কিছুই বলে না। শাশুড়ি এসে দেখে।
— “আবার হাত কেটেছো! তোমার তো কোনো কাজের হাত নেই। এভাবে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো না। তোমার মতো তো শুধু অকারণ বউয়ের জন্য বাচ্চা খাওয়ার মতো!”

তৃপ্তি একটুও নড়ে না। সে রক্তের সঙ্গে মাছের পিঠ মিশিয়ে কাজ করে যায়, যেন তার শরীর আর কিছুই অনুভব করছে না।

যখন তৃপ্তি একদম ক্লান্ত হয়ে রান্না করে, শাশুড়ি এসে বলে,
— “এবার কি কিছু ভালো রান্না করো না? সব সময় তো তোর রান্নায় কোনো স্বাদই থাকে না! একটু মায়ের মতো রান্না শিখে আসো!”

তৃপ্তির চোখে কোনো অনুভূতি নেই। সে শুধু তীরবিদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে খাবার সাজিয়ে দেয়, যেন সারা পৃথিবী তার জন্য থেমে গেছে।

রাতে, তৃপ্তি যখন শুয়ে থাকে, তিহার ঘর থেকে উঠে এসে মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখে। তৃপ্তি তাকে দেখে কিছু বলার চেষ্টা করে, কিন্তু তিহার তাকে থামিয়ে দেয়।
— “চুপ! আজকে তোমার কোনো কথা আমার শোনার নেই।”

তৃপ্তি চুপ হয়ে যায়। তার মনের মধ্যে শত রকমের কথা গুছিয়ে আসে, কিন্তু সে কিছুই বলে না। সেই নিরবতা যেন আরও গভীর হয়ে ওঠে।

পরের দিন, শাশুড়ি আবার তার দিকে তাকিয়ে বলে,
— “এইতো, সব কাজই একবারে ফেলে দিলেই হলো! আবার কি তোমার শরীর খারাপ হবে? আমার ছেলের দিকে তাকাও, তোমার কারণে কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?”

তৃপ্তি কিছু না বলে, মাথা নিচু করে চলে যায়। কিন্তু তার মনে কোনো খোঁজ নেই, কোনো পথ নেই। সে জানে, সে শুধু এ বাড়ির একটা অপ্রয়োজনীয় বস্তু , যার কোনো মূল্য নেই।

সন্ধ্যাবেলা, সবাই যখন খাচ্ছিল, তৃপ্তি একটু দেরি হয়ে যায় খাবারের জন্য। তিহার আবার দুশ্চিন্তা করে,
— “তোমার মতো ছ্যাঁকা বউয়ের কাছে আর কিছু আশা করি না!”

তৃপ্তির চোখে ক্ষোভ নেই, ক্ষোভ তো একদিন খুব আগেই হারিয়ে গেছে। সে শুধু নিজের অস্থির বুকে একটুখানি শান্তির খোঁজে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু কোথাও কোনো শান্তি নেই।

রাতে, তৃপ্তি শোয়ার ঘরেই দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকে, চোখ বন্ধ করে। তার শরীর একেবারে অবসন্ন, বুকেও কোনো জায়গা নেই প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য। হঠাৎ, তার মা ফোন করে। কিন্তু তৃপ্তি ফোন ধরে না। তার মায়ের কথা মনে পড়লে কেবল ভেতরে এক ধরনের বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে, যে মায়ের কাছে সে কখনো একটুও আশ্রয় পায়নি।

তৃপ্তি নিজেকে আর ভুলতে পারে না। জীবনে সে কখনো সুখের ছোঁয়া পায়নি। কিছু একটা তার ভেতরে ভেঙে গেছে, সেই ক্ষত আর কখনো সেরে উঠবে না।

তৃপ্তি দিনের পর দিন নির্যাতনের মধ্যে ডুবে থাকে। আর তার ভেতর একটা নিঃশব্দ যন্ত্রণা ক্রমশ বেড়ে যায়। তার শরীর, তার মন,সব কিছু যেন প্রতিদিন আরও ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু সে কিছু বলবে না, কিছু করবে না। সে শুধু নিজেকে হারিয়ে ফেলছে, ধীরে ধীরে, প্রতিদিন।

তৃপ্তির জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। প্রতিদিনই তাকে নতুন কোনো নির্যাতনের শিকার হতে হয়, যার কোনও শেষ নেই। তার মনে একটা অসহায়ত্ব জমতে থাকে। সে জানে, এখান থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই, বা হয়তো বেরোনো তার পক্ষে সম্ভবও নয়। তার দেহ এবং মন যেন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, একে অপরকে অনুভব করা সম্ভব হচ্ছে না।

একদিন, রান্নাঘরে খাবারের পরিমাণ কম হয়ে যায়। শাশুড়ি এসে তৃপ্তিকে তিরস্কার করতে শুরু করে,
— “অতটা কম খাবার তৈরি করেছো! এইটুকু তো তোর জন্য যথেষ্ট ছিল না? দেইখো, বউয়ের কাজটা তো ভালোভাবে করার মতো হাতও নেই।”

তৃপ্তির চোখ ভিজে ওঠে, কিন্তু সে কাঁদে না। তার বুকের ভিতর গুমরে ওঠা কষ্টের বাষ্প ফুটে উঠতে থাকে, তবে সেই অনুভূতি প্রকাশ পায় না। সে চুপচাপ আবার নতুন করে খাবার প্রস্তুত করতে থাকে।

আরেকদিন, তৃপ্তি শাশুড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যখন মশলা গুঁড়া করছিল, তখন শাশুড়ি একদম তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
— “তোমার কাজ তো কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। এমনভাবে রান্না করে কীভাবে সংসার চলবে!”

তৃপ্তির মনে হয়, সে যেন শুধু এক ঘরোয়া যন্ত্র। প্রতিটি কাজ করতে হবে, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি কিংবা প্রশংসা তার কপালে জোটে না। তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, মনে হয় কোনোভাবেই সে আর এগিয়ে যেতে পারবে না।

রাতের দিকে, তৃপ্তি যখন শুয়ে থাকে, তিহার আসে। মোবাইল হাতে, কোনো রকম দৃষ্টি না দিয়ে সে বলল,
— “তোমার আবার কী কষ্ট? শুধু নিজেকে বদলাও না, বাচ্চার মতো হয়ে বসে থেকো না।”

এই কথাগুলো তৃপ্তির হৃদয়ে চুরমার হয়ে যায়, কিন্তু সে কিছু বলে না। সে জানে, এই ঘর আর এই জীবন তার জন্য নয়। তবুও, সে চুপ থাকে, একটিও শব্দ না করে।

, তৃপ্তি যখন নিজের মনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অনুভূতি নিয়ে হাঁটছিল, তার মায়ের ফোন আসে।
— “তুমি কেমন আছো, তৃপ্তি?”
তৃপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থাকে, তারপর বলে,
— “আমি ভালো আছি। কিছু না বলার চেষ্টায় আছি।”

কিন্তু মায়ের কাছে সেও কিছু বলতে পারে না। তৃপ্তি জানে, কেউই তাকে উদ্ধার করতে পারবে না। এই জায়গায় সে একা। এখানে সে শুধু কষ্ট অনুভব করছে, কোনো সমাধান নেই।

তৃপ্তি এক সময় নির্যাতন সহ্য করতে গলিল লাভা সদৃশ হয়ে ওঠে। তার চোখে কিছুটা স্থিরতা আসে। যেন একটুখানি ক্ষীণ আলো, যা একসময় হারিয়ে গিয়েছিল, আবার ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে। তার মন বলে, “আমি কি সত্যিই কিছু করতে পারি?”

শ্বাসরুদ্ধকর নির্যাতনের ভেতরে তৃপ্তি মনে করে , ভাঙনের মধ্যেই তাকে একদিন উঠে দাঁড়াতে হবে। তখনই হয়তো সে নিজের জন্য কিছু করবে, নিজের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এখন, সে শুধু চুপ করে থাকে, আর সেই মুহূর্তের অপেক্ষা করে।

তৃপ্তির নিজের মধ্যে একটা অদৃশ্য শক্তি অনুভব করে। যতই নির্যাতন, নিপীড়ন বাড়তে থাকে, ততই তার ভিতর থেকে এক ধরনের পরিবর্তন ও শক্তি ফুটে ওঠে। তার মন, যা কখনো একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল, এবার অস্বাভাবিকভাবে জীবন্ত হতে শুরু করে। সে প্রতিদিনের নির্যাতন সহ্য করতে থাকলেও, তার ভেতরে একটা অপ্রকাশিত কষ্টের মধ্যে এক ধরনের প্রতিরোধ সৃষ্টি হয়।

একদিন, সকালে তৃপ্তি শাশুড়ির কাছে গিয়ে বলল,
— “আজ থেকে আমি কিছু আর নিতে পারব না।”
শাশুড়ি তাকে অবাক চোখে দেখল।
— “কী বলছো? তুমি কি ভুলে গেছো, তুমি কেবল একটা বউ, যাকে আমার কথাই শুনতে হবে?”

তৃপ্তির গলার স্বর কিছুটা শীতল হয়ে ওঠে।
— “আমি জানি, আমি এক বউ, কিন্তু আমি আর এতদিন চুপ থাকতে পারি না। আমি আর তোমার অযথা অপমান সহ্য করতে পারি না।"

এই প্রথম, তৃপ্তির মুখে কোনো ভয় ছিল না, কোনো অজুহাত ছিল না। সে একটা বাস্তব সত্য জানত, যতই তার দেহ ধীরে ধীরে ভেঙে যায়, ততই তার মনে শক্তি বাড়ে।

তারপর, রাতের সময় তৃপ্তি তিহারের কাছে এসে বলল,
— “তুমি কী কখনো বুঝবে, আমি কীভাবে এখানে বন্দী? আমি শুধু তোমার রান্নাঘরের উপকরণ নই। আমি একজন মানুষ, যার নিজের কিছু চাওয়া-পাওয়া ছিল।”

তিহার তার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু তৃপ্তির চোখে এখন একটা দৃঢ়তা ছিল। তৃপ্তি জানত, তার ভেতরে একদিন এক নতুন দুনিয়া তৈরি হবে। হয়তো সে আজকে তা জানে না, কিন্তু সে জানত, একদিন সে নিজেকে মুক্তি দিতে পারবে।

পরের দিন, তৃপ্তি বাড়ির কাজ করতে করতে, গোপনে সে নিজের জন্য একটা নতুন উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করল। সেই ছোট্ট মোবাইল স্ক্রিনে আবার ক্লাস শুরু করে, তবে এবার সে নিজের জায়গা থেকে একটুও পিছিয়ে যায় না। তার মনোযোগ আরও দৃঢ় হয়ে যায়।

তৃপ্তি যখন রান্না করছিল, শাশুড়ি আবার এসে বলল,
— “কী, আবার রান্নায় কোনো ভুল তো করছো না, তৃপ্তি?”

তৃপ্তি এবার চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,
— “যত ভুল আমি করেছি, এখন তাতে আর কিছু করার নেই। তবে আজ থেকে আমি যা করতে চাই, সেটাই করব।”

শাশুড়ি চুপ করে যায়। তৃপ্তির কথায় এবার আর কোনো চিৎকার ছিল না, ছিল শুধু এক ধরনের স্থিরতা, শান্ত অবিনাশী শক্তি।

একদিন, রাতে, যখন তৃপ্তি ঘুমাতে যাচ্ছিল, তখন তিহার একে একে তার ত্রোটি ধরতে থাকে,
— “তুমি এমন কিছু না, তুমি তো কিছু পারো না।”

তৃপ্তি এবার কোনো প্রতিবাদ না করেও, এক মুহূর্তে তার চোখে যা ছিল, সেটা এত দৃঢ় ছিল, যে তিহার থেমে যায়। যতই তাকে নিপীড়ন করুক, সে নিজেকে একদিন খুঁজে পাবে।

তৃপ্তির মনে এক প্রশ্ন খেলা করে— "এভাবে কতদিন যাবে, আমি কি একদিন সত্যি মুক্তি পাব?"

তৃপ্তি জানে না সে উত্তর, তবে সে জানে, এই কঠিন পথেই একদিন সে নিজের শক্তি খুঁজে পাবে, একদিন সে অন্যভাবে বাঁচবে। এখন, সে শুধু সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছে, যখন তার ভেতরের সেই শক্তি বাইরে বেরিয়ে আসবে।

চলবে...

Helllo everyone
10/05/2025

Helllo everyone

24/03/2025

Love you

06/08/2024

কি হচ্ছে আমার স্বাধীন দেশে?🙂

06/10/2023

Connect with our dedicated representatives at and schedule a

09/09/2023
05/09/2023

Abhijit and daya ❤️❤️

07/11/2022

ggood morning

22/05/2022

The Amazing Romantic Of Top Film Annual 2022

I love you too
22/05/2022

I love you too

Address

Dubai

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Across pita posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Across pita:

Share