13/05/2025
আরুশি নিজের ঘরে বসে গ্রাজুয়েশন ডে সেলিব্রেশনের জন্য সুন্দর একটা পোশাক খুঁজছিল। তবে কিছুতেই সে মনমতো কোন পোশাক খুঁজে পাচ্ছিল না৷ এজন্য মনটা বড্ড খুত খুত করছিল৷ এমন সময় আরহাম তার সামনে একটা নীলচে শাড়ি ধরে বলে,"এটা পড়ে নাও। এটা পড়লে তোমায় অনেক সুন্দর লাগবে।"
আরুশি হেসে বলে,"আমার সব পছন্দ তুমি কিভাবে সবসময় বুঝে যাও?"
"কারণ আমার কাছে তুমি একটা খোলা ডায়েরির মতো। যাকে আমি চশমা ছাড়াই স্পষ্ট পড়তে পারি।"
আরুশি খুশি হয় আরহামের কথা শুনে। অতঃপর শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নিয়ে আরহামের সামনে এসে বলে,"আমায় কেমন লাগছে?"
"আমার চোখে তুমি সবসময় সেরা আরুশি। আজকেও তোমায় অনন্য রূপসী লাগছে।"
আরুশি এবার একটু নম্রস্বরে বলে,"আমার কেন জানি অদ্ভুত একটা ফিলিংস হচ্ছে। আজ আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবে....আজ আম্মু-পাপার আমার পাশে থাকার কথা ছিল কিন্তু.."
"ওনারা সবসময় তোমার পাশে আছেন। তোমার মনে সাহস হয়ে ওনারা বেঁচে আছেন।"
"হুম, ঠিক বলেছ তুমি।"
"তুমি বেশি চিন্তা না করে এখন বেরিয়ে পড়ো সময় তো হয়ে যাচ্ছে৷ আর হ্যাঁ, আজ বিকেলে কিন্তু তোমার গ্রাজুয়েশন উপলক্ষ্যে আমরা ঘুরতে যাব। একসাথে কিছু সুন্দর সময় কাটাব। অতঃপর একসাথে মিলে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাবো।"
আরুশি মাথা নাড়ায়।
★★
গ্রাজুয়েশন কোর্ট পড়ে ও ক্যাপ মাথায় দিয়ে হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে আরুশি। আর তার জীবনের অন্যতম এক বিশেষ দিন। যদিও মা-বাবাকে এই দিন পাশে না পাবার জন্য তার অনেক আফসোস হচ্ছে তবুও সে খুশি কারণ সে অনেক ভালো CGPA এর সাথে নিজের গ্রাজুয়েশন শেষ করতে পেরেছে। এখন আরুশি চাইলেই একটা সুন্দর ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে।
আরুশি ভার্সিটির ক্যাম্পাস চত্ত্বরে আসতেই হঠাৎ কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়। আরুশি পিছন ফিরে তাকিয়ে রাজীবকে দেখে হালকা হেসে বলে,"রাজীব ভাই! আপনি এসেছেন।"
রাজীব হালকা হেসে এগিয়ে আসে। তার পরণে পুলিশের ইউনিফর্ম। আরুশির একদম মুখোমুখি হয়ে আরুশি বলে,"অবাক হলে বুঝি? তোমার জীবনের এত বিশেষ একটা দিনে আমি থাকবোনা সেটা কি হতে পারে?"
আরুশি বলে,"শুধু অবাক নয়, আমি ভীষণ খুশিও হয়েছি রাজীব ভাই। আজ কতদিন পর আপনাকে দেখলাম। আমি ভাবতেও পারিনি আপনি চট্টগ্রাম থেকে এতদূরে ছুটে আসবেন তাও শুধু আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবার জন্য। আপনি তো দেখছি আগের থেকে অনেক স্বাস্থ্যবান হয়ে গেছেন। আমার খুব ইচ্ছা ছিল আপনাকে পুলিশের ইউনিফর্মে দেখার। অবশেষে আমার স্বপ্নটা পূরণ হলো। সত্যিই এই পোশাকে আপনাকে অনেক মানিয়েছে। আপনি নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছেন এবার আমার নিজের স্বপ্নপূরণের কথা।"
"আমি নিশ্চিত তুমিও অনেক বড় একটা সাইকোলজিস্ট হতে পারবে।"
রাজীব এখন একজন পুলিশের এসআই। পড়াশোনা শেষ করে সে চাকরিটা নিশ্চিত করেছে। আরুশি রাজীবের সাথে কিছু গল্পগুজব করল৷ রাজীব আজো অবিবাহিত এবং সে জানায় তার বিয়ে করারও আপাতত কোন ইচ্ছা নেই৷ সে নিজের ক্যারিয়ারে সময় দিতে চায়। কথায় কথায় একসময় রাজীব বলে ওঠে,"আচ্ছা, আঙ্কেল আন্টির মৃত্যুর তদন্তের ব্যাপারে সর্বশেষ কি খবর? আমি তো এখন চট্টগ্রামে পোস্টিং এ আছি, এদিকের খবর কিছু জানি না।"
আরুশির মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে যায়৷ সে বলে,"এই মৃত্যুটাকে একটা দূর্ঘটনা বলে রিপোর্ট করা হয়েছে তদন্ত শেষে। বলা হয়েছে যে ভেতরে ইলেকট্রিকাল সমস্যার কারণেই আগুন লাগে। কিন্তু আমার মোটেই এটা মনে হয় না৷ এটা দূর্ঘটনা হতেই পারে না। আমার মা-বাবাকে পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হয়েছে। আর আসল অপরাধীকেও আমি শাস্তি পাওয়াবো। এজন্য আমার যা করতে হয় করবো। আমি আবারো নতুন করে মামলাটা চালু করেছি। এবার সব সত্য সামনে আনবোই।"
"একদম ঠিক করেছ তুমি। কোন সাহায্য লাগবে আমায় বলবে। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোমায় সাহায্য করার।"
এভাবে আর কিছু সময় কথা বলার পর রাজীব আরুশিকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। আরুশিও বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা হয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমানের মনটা আজ বড্ড খুশি। কারণ আগামীকাল দীর্ঘ ১ বছর পর সে সায়রাকে দেখবে। আরহাম ও আরুশির বিয়ের পর সায়রা যে সেই রাগ করে তার বাবার সাথে লন্ডনে ফিরে গেল তারপর এই এক বছরে তাদের পরিবারের কারো সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি। তবে অবশেষে আগামীকাল অতীতের সব ক্ষত ভুলে আবারো তাদের পুনঃমিলন হতে চলেছে। আমান ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণ খুশি। সে মনে মনে ভাবে,"এবার আর আমি নিজের অনুভূতি লুকাব না। সায়রাকে বলে দেব আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি।"
আফিফা খান আমানকে এভাবে মুচকি হাসতে দেখে বলে,"কি হয়েছে আমান? এভাবে হাসছ কেন?"
"তেমন কিছু না মম। আসলে এতদিন পর পরিবারের সবাই একত্রিত হবো ভাবতেও ভালো লাগছে।"
এমন সময় নিঝুম খান সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন,"আসলেই। কতদিন পর আমি আবার সায়রা দিদিভাইকে দেখতে পাবো।"
আফিফা খান বলেন,"এতগুলো দিন পর আমাদের পরিবারটাতে যেন খুশির বৃষ্টি নেমে এসেছে। এভাবেই সবার জীবন সুন্দর হোক আর যেন কোন বিপদ আমাদের পরিবারকে স্পর্শ করতে না পারে।"
~~~~~~~
আরহাম ও আরুশি একে অপরের হাত ধরে একটি সুন্দর লেকের ধারে বসে আছে৷ দুজনের দৃষ্টি আজ একে অপরের দিকে নিবদ্ধ।
আরুশি একসময় বলে ওঠে,"এভাবে কি দেখছ?"
"আমার বউকে দেখছি।"
আরুশি লজ্জা পেয়ে মাথাটা নামিয়ে নেয়। আরহাম আরুশির মাথাটা আলতো করে টেনে তুলে বলে,"এখনো এতো লজ্জা! এত লজ্জা পেলে তোমায় মানায় না। আমার তো সেই রাগী, জেদি, কঠোর আরুশিকেই ভালো লাগে।"
"আসলেই?"
"হ্যাঁ, কারণ আমি চাই আমাদের জীবনে একটা ছোট্ট অতিথি আসুক। যে তার মায়ের মতো রাগী, জেদি হবে।"
আরুশি এবার একটু বেশিই লজ্জা পেয়ে যায় এবং হেসে ফেলে বলে,"আমিও তাই চাই!"
"অনেকদিন থেকেই তোমাকে কথাটা জানাবো বলে ভাবছি..তবে তুমি পড়াশোনা নিয়ে বিজি ছিলে বলে এব্যাপারে এগোইনি। তবে এবার মনে হয় সঠিক সময় এসেছে। যদিও আমার কোন তাড়া নেই, তুমি চাইলে এখন মাস্টার্স বা পিএইচডি শেষ করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারো। তারপরও আমার বেবির কথা ভাবতে পারি.."
"না, আমি আর দেরি করতে চাই না। আর তাছাড়া, বাচ্চা ও ক্যারিয়ার দুটোই তো একসাথে সামলানো যায়। তেমন আমার আম্মু, খালামনিরা সামলেছেন। তেমনি আমিও পারব। জানো, যখন ছোটবেলায় আম্মু আমায় আদর করত, তখন আমিও আমার পুতুলকে সেভাবেই আদর করতাম। এমনকি ছোটবেলায় একবার তো এক্সামে Aim in life প্যারাগ্রাফেও লিখেছিলাম আমি ভালো মা হতে চাই। যা নিয়ে পরে আমার ফ্রেন্ডসরা অনেক হাসাহাসি করেছিল। আম্মু-পাপাকে হারানোর পর বড্ড কষ্ট অনুভব হয়..এখন হয়তো একটা বেবি আসলে কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।"
"বেশ,তাহলে তো বেবির পরিকল্পনা শুরু করতে হয় দেখছি। তবে আমার কিন্তু একটা-দুটো বেবি দিয়ে হবে না। পুরো ক্রিকেট টিম লাগবে।"
"বাব্বাহ! কি যে বলো তুমি। ক্রিকেট টিম আনার আগে নিজে আগে লাখপতি হয়, নাহলে ওদের খাওয়াবে কি?"
"আমার বাবার যা আছে তা দিয়ে আমার বাচ্চাদের কোন অভাব হবে না৷ তাছাড়া তুমি ভুলে যাচ্ছ খুব শীঘ্রই আমিও একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে চলেছি। সো নো চাপ। এখন আপাতত আমাদের ফাস্ট বেবিকে আনার ব্যবস্থা শুরু করে দেই। বাকিদেরটা পরে দেখা যাবে!"
বলে দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে।
~~~~~~~
টেবিলের উপর একটা ফাইল জোরে ছুড়ে মারল একজন মহিলা। ঈশান কবীর আলতো স্বরে বললেন,"এতোটা রেগে যেও না। আমি দেখছি কিভাবে ম্যানেজ.."
মহিলাটি হাতের ইশারা করে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,"তোমাকে কিছু করতে হবে না। এবার যা করার আমি করবো। খুব শখ না এই আরুশি না আরু হোয়াটএভার..নিজের মা-বাবাকে ইনসাফ দেওয়াবে? এবার ওর ইনসাফ আমি বের করে দেবো। যেভাবে ওর মা-বাবার লাইফ হেল করেছিলাম ঠিক সেভাবেই এবার ওর লাইফটা হেল বানিয়ে দেব। সব কেড়ে নেব ওর থেকে সব!"
To be continue.... পরবর্তী অংশ সবার আগে পড়তে পেইজে ফলো করুনঃ 𝐒𝐭𝐨𝐫𝐲 𝐨𝐟 𝐘𝐞𝐚𝐬𝐢𝐧 𝐍𝐢𝐥𝐥