আবির

আবির মানুষের জীবনে না বলা কিছু গল্পঃ লুকিয়ে থাকে, যেটি কেবল তার একান্ত ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা

মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি গত মাসে। একমাত্র মেয়ে। ছেলেটা ছোট এখনো কলেজে পড়ে।আজ মেয়ের বাসায় দাওয়াত পরেছে। ইফতারের দাওয়াত। কাল রাত...
19/09/2025

মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি গত মাসে। একমাত্র মেয়ে। ছেলেটা ছোট এখনো কলেজে পড়ে।
আজ মেয়ের বাসায় দাওয়াত পরেছে। ইফতারের দাওয়াত।
কাল রাতেই মেয়েকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলাম - তোর কি কি খেতে মন চায়? কি আনবো?

মেয়ে আমার এক লম্বা লিস্ট ম্যাসেজ করে পাঠালো। কিন্তু লিস্টের কোথাও মেয়ের পছন্দের কোন কিছু দেখলাম না। আমার মিসেস কে বললাম - মেয়ে তো জীবনেও মিষ্টি খায় নাই। আজ এতগুলা পদের মিষ্টি নিতে বলল কেন?
ফলও তো কোনদিন জোর করে খাওয়াতে পারি নাই। তবুও ৬ পদের ফলের নাম লিখে দিছে। আবার লিখছে ১০ কেজি দেশি দুধ আর ৮ টা দেশি মুরগি নিতে। এগুলাও তো তারে খাওয়াইতে পারতাম না এই বাসায় রেখে। এক মাসেই মেয়ের খাবারের রুচি বদলে গেলো? যাক ভালো অভ্যাস হয়েছে।

সে কোন কথার উত্তর দিলো না। যেন তার এতে কোন মাথা ব্যাথা নেই।

সকাল সকাল উঠে ঠাটারি বাজার গিয়ে দেশি মোরগ নিলাম। আগের রাতে একজনকে গোয়ালের দুধ এনে দিতে বলেছিলাম। সেও নিয়ে হাজির।

যাওয়ার পথে ফল আর মিষ্টি কিনে নিবো।

আমি যখন দুপুর বেলা নামাজে পড় রেডি হচ্ছি তখন আমার স্ত্রী মাত্র কুরআন পড়তে বসলো।
তার মেয়ের বাড়িতে যে তার দাওয়াত সেটা সে পাত্তাই দিচ্ছে না।

জোরে এক ধমক দিয়ে বললাম - মেয়েটার বাসায় তাড়াতাড়ি যাবো। দুটো গল্প করবো তা না উনি দেরি করে যাবে।

সে এখানেও কোন কথা না বলে এক পাতা পড়ে উঠে গেলো রেডি হতে।
ছেলেকেও ধমকিয়ে রেডি করলাম।
আমার বাসা থেকে ওর বাসায় যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগে। রাস্তায় জ্যাম থাকলে আরো বেশি সময় লাগে।

এক সিএনজি তে সবার জায়গা হচ্ছে না।
আমি মুরগি দুধ নিয়ে এক সিএনজি তে উঠলাম আর মা ছেলেকে আরেকটায় তুলে দিলাম।
রাস্তা theke ওর লিস্ট করা সব ফল নিলাম।

আমার ভীষণ আনন্দ লাগছে। মেয়েটাকে কত দিন পর দেখবো। কত কথা জমে আছে।
ছেলের চেয়ে মেয়েটাকেই আমার বেশি আপন লাগে। ও জন্মনোর সময় বারবার করে আল্লাহর কাছে বলেছি আল্লাহ একটা জান্নাত দিয়েন আমার ঘরে। মেয়েটার নামও রেখেছি জান্নাত।

ওদের বাসায় গিয়ে দরজায় নক করতেই বেয়াই সাহেব গেট খুলে দিলো। একে একে সবাই আসলো আমাদের স্বাগতম জানাতে। কিন্তু মেয়েটা এলো না।
যা যা এনেছি সব ওদের হাতে তুলে দিচ্ছিলাম কিন্তু কারো মুখে তেমন আনন্দ দেখলাম না।

আমরা বসেছি পরে মেয়েটা দৌড়ে আসলো। আমাকে দেখেই হেসে বললো - তুমি অনেক শুকায় গেছো আব্বা। আমি উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে হাত বাড়িয়ে দিলাম।

তখন আমার জান্নাত বললো - আব্বা আমার গায়ে অনেক ঘাম। তুমি ফ্যানের নিচে বসো। রেস্ট নেও। আমি চুলায় রান্না রেখে আসছি। আমি যাই।

আমার হাত দুইটা ওভাবেই নামিয়ে নিলাম।

সে তার মা আর ভাই এর সাথে কুশল বিনিময় করে রান্না ঘরে চলে গেলো।
আমাদের সাথে ড্রইং রুমে বসে রইলো তার শাশুড়ি, শশুর, জামাই আর দেবর।
রোজা রেখেছি তাই পানি খাওয়া সম্ভব না। আজ যে গরম টা পরেছে একদম মগজ গরম হয়ে যাওয়ার মত।

এই ভাবতে ভাবতে দেখি বেয়াই বললেন - আজ অনেক গরম পরেছে। আমার রুমে এসে বসেন। এসি টা চালিয়ে দেই।
তার রুমের দরজা দিয়ে এসিটা চালিয়ে দিলো।

এরপর সবাই নানা বিষয়ে কথা শুরু করলো।

আমার মনটা এসিতেও ঠান্ডা হচ্ছিলো না।
মেয়েটা আমার তখনও চুলার সামনে দাঁড়িয়ে এই গরমে রান্না করছে।

আসরের নামাজের সময় ওরা সবাই যখন নামাজে অন্য রুমে গেলো,মেয়ে আবার আসলো আমাদের কাছে।
এসে চুপিচুপি বলল - আব্বা তোমাকে না বলছিলাম ৩ রকমের মিষ্টি আনতে? তুমি এক রকমের অনলা কেন? মুরগি গুলাও ছোট। তরমুজটাও বেশি বড় না।

শুনে আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো।
আমার স্ত্রী খুব স্বাভাবিক ভাবেই শুনছে।

আমি বললাম - তুই যে মিষ্টি খাস এটাই তো আমি জানিনা।
- আহা আব্বা আমার জন্য না। ওদের জন্য।

রুমে জামাই ঢুকলো আর মেয়ে আমার বলল - তোমরা বসে গল্প করো আমি রান্না করতে যাই।

ওর পুরা গা ঘামে ভেজা।

এই মেয়েকে কত যত্নে রেখেছি। গরমে যেন কষ্ট না করে তাই ওর রুমে সবার আগে এসি দিয়েছিলাম। এখন সেটা ছেলে ব্যবহার করে।
আর এখন মেয়েটা গরমে কত কষ্ট করছে। বিয়েতে জামাই কেও একটা এসি দিয়েছি। এবার গিয়ে দেখলাম ঐটা ওর শ্বশুরের রুমে লাগিয়েছে।

সবাই একেক করে
ইফতারের আগে দিয়ে সবাই টেবিলে বসলো। জামাই মোবাইলে কি যেন দেখছে আর হাসছে।

মেয়ে তখনও রান্নাঘরে।
একটু পর প্রায় ১০-১২ পদের ইফতার টেবিলে পরিবেশন করলো।
আজান দিলো।
মেয়েটা তখন আমার পাশে বসে একটু ইফতার করল।
ইফতার করা অবস্থায় ওর জামাই বলল - চায়ের পানি বসাও নাই?
জান্নাত চেয়ার থেকে উঠে বলল - আল্লাহ একদম ভুলে গেছি।
এই বলে আবার রান্নাঘরে দৌড় দিলো।

আসার পর থেকে মেয়েটার সাথে একটুও কথা বলার সুযোগ পাই নি।

সবার ইফতার শেষে যে যার মত টেবিলে থালা বাটি রেখে চায়ের কাপ নিয়ে উঠে গেলো আবারো এসি রুমে।
আমাদেরও ডাকলো।
আমি তখন বললাম - আমার অত গরম লাগছে না। আমি সামনের রুমেই বসি।

মন চাইলো না। আমার স্ত্রী ও ছেলে গেলো। কিন্তু আমি গেলাম না।
কারন আমার সামনেই জান্নাত সবার এটো থালা নিচ্ছে ধোয়ার জন্য।
আমি বললাম - তোর বাসায় বুয়া নেই?

মেয়ে একটু হেসে বলল - বুয়া আছে। কিন্তু সে তো তার কাজ করে সকালেই চলে গেছে।

ও রান্নাঘরে সব ধোয়া মাজা করছে।
আওয়াজ পাচ্ছি।
এর মধ্যে সবার চায়ের কাপ নিয়ে জামাই জান্নাতের কাছে এনে বলল - এই নাও কাপগুলো।

জান্নাত এগুলাও ধোয়া শুরু করলো।

সব ধোয়া শেষ করে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে আমার কাছে এসে বলল - আব্বা তুমি এখানে কেন? এই রুমে যে গরম। যাও ঐ রুমে গিয়ে বসে ওদের সাথে গল্প করো।

আমি বললাম - তুই আমার পাশে বস। একটু কথা বলি।

ও আবার হেসে বলল - আরে নাহ। রাতের ডিনার এখনো রান্না হয় নাই। ঐটা বসাতে হবে।

এই বলে উঠে গেলো।
আমি বসেই রইলাম।
কিছু ভালো লাগছে না। ভীষণ রাগ রাগ লাগছে।

রাতের রান্না শেষ করে জান্নাত সবাইকে টেবিলে ডাকলো। সবাই একেক করে বসলো।
আমি বললাম - আমার ক্ষুধা নাই। ইফতার বেশি খেয়ে ফেলছি।
জান্নাত জোর করে বলল - একটু হলেও খাওয়া লাগবে।
বেয়াই বেয়াইনো জোর করলো।
খেতে বসলাম কিন্তু খাওয়া ভেতরে যাচ্ছেনা।
সবাই খেতে বসেছে। সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে আমার মেয়ে। কিন্তু সে বসলো না।
বলল সে সবার শেষে খাবে।
খেয়াল করলাম তার হাতে তেলের ছিটে আসা অনেকগুলো দাগ।
আমি জানি সবার খাওয়া শেষে সে আবারো রান্নাঘরে গিয়ে থালাবাটি ধুবে। হয়ত সব শেষ করে আরো কয়েক ঘন্টা পর খাবে।

তাই হলো। আমাদের খাইয়ে সে রান্নাঘরে গেলো ধোয়ার কাজ করতে।

আমার তখন রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।
আমার স্ত্রীকে বললাম - বাসায় চলো। রাত হইছে।

সেও সম্মতি জানালো।
জান্নাত রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসলো। আর বলল - আরেকটু থাকো তোমরা।

বাকিরাও বলল।

আমি খুব করে বলতে চাচ্ছিলাম যতক্ষন থাকবো তোমাকে শুধু কাজ করতে দেখবো। আমার ভালো লাগবে না।

কিন্তু কিছু না বলে রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে সেই দোহাই দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

পুরা রাস্তায় কেউ কোন কথা বললাম না। এবার এক সিএনজতেই আসলাম।

বাসায় ফিরে আর রাগ ধরে রাখতে পারলাম না।
জান্নাতের মাকে বললাম - আমি মেয়েকে কাল যেয়ে নিয়ে আসবো। মেয়ের অবস্থা দেখছো? ঐ বাসার কেউ মেয়েটাকে একটুও হেল্প করে না। সবাই সুন্দর আরাম করে। জামাইটাও একটা গাধা। বসে বসে মোবাইল টিপে। ননসেন্স ফ্যামিলি। এইখানে আর মেয়েকে রাখবো না। অনেক হইছে। তার উপর উনাদের বাজার পছন্দ হয় নাই বলে মেয়েকে না জানি কি বলেছে আর আমরা আসার পর কি কি যেন আরো শুনাবে। না না এখানে না।
ইডিয়েট একেকটা।

মিসেস খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল - মাথা ঠান্ডা করো।
এই বলে সে কাপড় বদলাতে লাগলো।
আমি বললাম - আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি তোমাকে দেখে। কিভাবে পারছো এগুলা দেখে স্বাভাবিক হতে? মেয়ের জন্য কি মায়া লাগে না?

শাড়ির পিন খুলতে খুলতে সে খাটেতে বসলো।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল - তোমার মেয়ে যা করছে, সেটা আমিও বিয়ের পর থেকে করে আসছি। তোমার কোনদিন মনে হয়নি আমিও কারো মেয়ে। তোমার কোনদিন মনে হয়নি আমারো কষ্ট হয়। তোমার কাছে যেমন সব স্বাভাবিক লেগেছে আমার কাছেও এখন এসব স্বাভাবিক লাগে। আমি আমার বাবার বাড়ি যেতে নিলেই তুমি তোমার মায়ের অসুস্থতায় কে দেখবে তাকে বলে থামিয়ে দিতে। আমার বাবার বাড়ি থেকেও কেউ আসলে তাদের হাতের দিক তাকিয়ে থাকতো সবাই কি এনেছে এই দেখার জন্য। একটু কথা বলারও সুযোগ পেতাম না। নিজের পছন্দ সই খাবার খাই নি কতদিন। এরপর তো ভুলেই গেলাম কি যে আমার পছন্দ। আস্তে আস্তে ধরে নিলাম এটাই স্বাভাবিক জীবন।
আমার জন্য এগুলা নতুন না। তাই আমার কাছে সব স্বাভাবিক ই লেগেছে। যেভাবে আমার মায়ের লেগেছিলো আমার জন্য। শুধু জান্নাতের বাবা হলে হয় না। জান্নাতের স্বামীও হতে হয়। স্ত্রীকে জান্নাতের মত পরিবেশও করে দিতে হয়।

এই বলে সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল - রাতে তো খেয়ে এসেছি। গোসল সেরে আসি। সেহেরির রান্না করা লাগবে।

এই বলে সে উঠে বাথরুমের দিকে গেলো।

আমার মুখে শ' মনের একটা তালা দিয়ে গেলো।
মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না। এতো বছর পর যেন চাপা আগুন বের করলো আজ।

সে একটা কথাও মিথ্যা বলে নাই। স্ত্রীর জন্য যদি সেসময় আমার খারাপ লাগতো আজ হয়ত মেয়ের কপালটাতেও বিবেকবান এক স্বামী জুটতো।

কিছুই ভালো লাগছিলো না আর। উঠে গিয়ে এসি রুম থেকে ছেলেকে ডেকে বের করলাম।
বললাম- তোমার আম্মা এখন রেস্ট করবে।
আসো আমরা সেহেরির রান্নাটা করে ফেলি।

ছেলে বেশ হাসি মুখে আমার সাথে সঙ্গ দিতে চলে আসলো। বুঝতে পারলাম সে আমার মত বিবেকহীন হয় নি।
তার মা গোসল থেকে বেরিয়ে দেখল ছেলে সবজি কাটছে আর আমি চাল ধুয়ে ভাত বসাচ্ছি।

আমি ছেলেকে বলছি - শোন বাবা তোর বৌ যেন তোর মা আর বোনের মত কষ্ট না পায়।

সে দরজার ধারেই দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু বলল না। তার চোখের দিকে তাকানোর সাহস হলো না। তবে মনে হলো তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

©জাকিয়া হোসেন তৃষা

22/08/2025

কোথায় হারিয়ে গেল সেই সময়গুলো?!.... ✨ #2025

04/08/2025

Celebrating my 9th year on Facebook. Thank you for your continuing support. I could never have made it without you. 🙏🤗🎉

07/07/2025

শখের বয়সে যারে মনে ধরলো তারে কপালে ধরলো নাহ..!😅

29/06/2025

তোরা এইটুকু টাচ করে কি স্বর্গীয় সুখ পাশ তা জানি না কিন্তু যেই মেয়েটাকে টাচ করিস তার কেমন লাগে সেটা ভাবিস একবার জানো*য়ার।

26/06/2025

জীবনের পথ সহজ নয়, কিন্তু থেমে গেলে সব শেষ।
প্রতিটি ব্যর্থতা একেকটি শিক্ষার নাম।
আজ না পারলে কাল পারবে —
শুধু লড়াইটা ছেড়ে দিও না।

✊ নিজেকে বিশ্বাস করো।
তুমি পারবে। তুমি জিতবেই।

#মোটিভেশন #বাংলা_উক্তি

23/06/2025

🤣🤣

🔥🔥🫵
23/06/2025

🔥🔥🫵

Bro Cooked কাবিন ব্যাবসায়ী 🤣
19/06/2025

Bro Cooked কাবিন ব্যাবসায়ী 🤣

18/06/2025

🥲

Address

Abu Dhabi
Dubai
3547

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আবির posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to আবির:

Share